তোমাকে,শেষ পর্ব শেষ অংশ
চোখ খুলে মুনির হতভম্ব হয়ে গেল I অনিমা ঝুঁকে আছে ওর উপর I ওর ঠোঁটে হাসি , খোলা চুল পরনে সেই নীল শাড়ি টা I এইরূপে অনিমা কে অনেকবার স্বপ্নে দেখেছে মুনির I স্বপ্নই দেখছে বোধহয়, এই ভেবে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল I অনিমা হাসলো তারপর আস্তে করে ওর কপালে হাত রেখে বলল
– মুনির এবার উঠে পড়ো , সাড়ে ছয়টা বাজে I আমাদের রওনা দিতে হবে
মুনির ধর মর করে উঠে বসলো I অনিমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে I মুনির এর এখনো মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে I অনিমা পেছন ফিরে বলল
– তোমার ড্রেস বের করে রেখেছি I কি দেখছো ?
– কিছু না I আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
-হাসিবের ওখানে
– ও
অনিমা ওর খুব কাছে এসে দাঁড়ালো তারপর নরম গলায় বলল
– কি হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ?
মুনির চোখ তুলে অনিমার দিকে তাকালো I অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে I মুনির কল্পনাতেও ওকে এত সুন্দর রূপ এ দেখেনি I
– না যাচ্ছি
ওরা যখন পৌছালো ততক্ষণে পার্টি জমে উঠেছে I হাসির বিশাল আয়োজন করেছে I এই বাড়িতে অনেকবার এসেছে মুনির I ছাদে প্রায়ই ওদের আড্ডা হত I পুরো ছয়তলা বিল্ডিংটাই ওদের I উপরের দুটো ফ্লোর নিয়ে ওরা থাকে I আজকের অনুষ্ঠান হচ্ছে নিচের পার্টি হলে I হাসিব প্রায়ই পার্টি দেয় এখানে I পুরনো বন্ধুদের ডাকে I ভালোই লাগে I মুনির অবশ্য এড়িয়ে যেতে চায় I ওদের ব্যাচের বেশিরভাগই দেশের বাইরে I জুনিয়র যারা আসে তাদের বেশিরভাগই মুনির এর ছাত্র-ছাত্রী I একটু অস্বস্তি হয় ওর I আজ ভেতরে ঢুকে একটু অবাক হয়ে গেল মুনির I অন্যদিনের চাইতে ও বড় আয়োজন করেছে আজ I বুফে পার্টি , একপাশে খাবারের আয়োজন I সারি সারি টেবিলে এখন স্ন্যাকস সার্ভ করা হচ্ছে I স্টেজ করে গানের আয়োজন করা হয়েছে I কিছু ছেলে মেয়েরা গিটার বাজিয়ে গান করছে I ওদেরকে দেখে হাসিব হাসিমুখে এগিয়ে এল I মুনির এর সঙ্গে কোলাকুলি করে ওকে অভিনন্দন জানালো I তারপর অনিমার দিকে ফিরে বললI
– ওয়াও I অনিমা তোমাকে কি এখন ভাবি বলতে হবে ?
-একেবারেই না
– আমি কিন্তু আগেও তোমাকে ভাবি বলতাম
-কী বলছো ? অনিমা অবাক হয়ে বলল I
আরো কিছু পুরনো বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে দেখা হল I সুমন এসে মুনির কে জড়িয়ে ধরল
– আমি যে কি খুশি হয়েছি দোস্ত বলে বোঝাতে পারবো না
মুনির একটু হাসল I
আশেপাশে প্রচুর জুনিয়র ছেলে মেয়ে I মনিরের একটু অস্বস্তি হচ্ছিল তাই ও একটু পাশে সরে কোনার দিকে একটা পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো I অনিমাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন ? মনির এদিক ওদিক তাকিয়ে অনিমাকে খুঁজতে লাগলো I
আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য হাসিব স্টেজে উঠলো I মাইক হাতে নিয়ে বলল
উপস্থিত বন্ধুগণ , আজকের অনুষ্ঠানটা আমার অতি প্রিয় দুইজন বন্ধুর জন্য I আজ তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে আমার চেয়ে বেশি খুশি মনে হয় আর কেউ হয়নি I আমরা অনুষ্ঠান শুরু করব ওদেরই একজনের গান দিয়ে I প্লিজ ওয়েলকাম অনিমা হাসান
অনিমা কে স্টেজে দেখে মুনির চমকে গেল I অনিমা আজ গান গাইবে ?
অনিমা অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিতে মাইক হাতে নিল I তারপর বলল
-আজ প্রায় 10 বছর পর স্টেজ এ গাইছি I চর্চা নেই বহু বছর I যদিও তাতে কিছু যায় আসে না I আজকের গানটা গাইব শুধু একজনের জন্য I আই উড লাইক টু ডেডিকেট দা সং টু মাই বিলাভড হাসবেন্ড মুনির আহমেদ চৌধুরী
হঠাৎ করে করে স্পটলাইটটা মুনির এর উপর এসে পড়ায় ও একেবারে হকচকিয়ে গেল I উপস্থিত সকলে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল I
অনিমা গান শুরু করেছে
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মুনির বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে I অনিমা কি সত্যি সত্যি গানটা ওর জন্য গাইছে ? এই গানটা আগে কখনো শুনেনি মুনির I তবুও কেন যেন গানের কথাগুলো খুব চেনা লাগছে I
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুইফোঁটা যেন আরও ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারেবারে
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।
পথ চেয়ে রই, দেরি করোনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মুনির এর বিশ্বাস হচ্ছে না I এগুলো কি সত্যি সত্যি হচ্ছে I নাকি পুরোটাই একটা স্বপ্ন I অনিমা ওর দিকে তাকিয়ে আছে I হাসছে মিটিমিটি I অনেক বছর পর মনে হল আজ ও খুশিতে ঝলমল করছে I
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।
মুনির যেন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হল I হঠাৎ করেই ওর মনে পড়ল , এই লাইনগুলি তো লেখা ছিল ওই বইটার মধ্যে I এটা তাহলে কবিতা নয় , একটা গান I অনিমা বলেছিল এটা ওর হাতের লেখা I মুনির এর মাথা ঝিমঝিম করছেI এই বইটা তো সেদিন ছিল যেদিন ও মুনির কে টিএসসিতে নিয়ে গেছিল কিছু বলবে বলে I তার মানে কি ও সেদিন মুনির কে এটা দিতে চেয়েছিল ? বলতে চেয়েছিল যে ও ……….
হ্যাঁ প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
আর দুটি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মুনির এর মাথা কাজ করছে না I অনিমা যদি সেদিন এই কথাই বলতে চেয়েছিল তাও কেন বলল না ? কেন সেদিন ফোনে মুনির ওকে ভালোবাসি বলার পরও ও আসলো না ? মুনির কে সবটা জানতেই হবে I মুনির তাকিয়ে দেখল অনিমা স্টেজ থেকে নেমে এসেছে I জুনিয়ররা সব ওকে ঘিরে ধরেছে
– আপু আপনি এত সুন্দর গান করেন I
– স্যার ইস সো লাকি
দূর থেকেই রকমের কথাই ভেসে আসতে লাগলো I হাসিব খাবারের এনাউন্সমেন্ট করছে I সবাই অনিমা কে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে গেল I অনিমা এদিক ওদিক তাকিয়ে মুনির কে খুঁজতে লাগলো I মুনির সকাল থেকে কিছুই খাইনি I অনিমার একটু চিন্তা হচ্ছে I কোথায় চলে গেল ? আবার ওর গান শুনে পালিয়ে গেল নাকি ? অনিমা মনিরের জন্য খাবার নিতে নিতে টেবিলের এক প্রান্ত থেকে এগিয়ে যেতে লাগলো I মুনির টেবিলের অন্য প্রান্ত থেকে অনিমার দিকে এগিয়ে এলো I ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় এসে দাঁড়ালো দুজন I অনিমা ভেবেছিল মুনির ওর গান নিয়ে কিছু বলবে I কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মুনির বলল
– তুমি হাসির দের ছাদটা দেখেছো ?
– না
– চলো দেখিয়ে আনি
– এখন ? তোমার জন্য খাবার নিলাম তো
– রাখ পরে এসে খাবো
মুনির প্লেটটা টেবিলে রেখে অনিমার হাত ধরলো
মুনির রীতিমতো দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে I শাড়ি সামলে অনিমা পেরে উঠছেনা ওর সঙ্গে I
ছাদে উঠে দুজনেই হাঁপিয়ে গেল I অনিমা বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে I তারপর সামনে তাকিয়ে ছাদটা ভালো করে দেখল I বহু বছর পর ছাদে উঠেছে ও I হাসিবদের ছাদটা অসম্ভব সুন্দর I পুরোটাই মোজাইক করা I চার কোণায় চারটা বড় বড় লাইট কিন্তু সবগুলোই বাইরের দিকে মুখ করা I যার ফলে পুরো ছাদে জুড়ে একটা নরম আলো I বেলি ফুলের সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে I অনিমা তাকিয়ে দেখল একপাশে অনেক ফুলের গাছ I মুনির ওকে সেইদিকে নিলোনা I হাত ধরে অন্য পাশে নিয়ে গেল I এই দিকটা আরো সুন্দর I কোনার দিকে একটা বড় হাসনাহেনার ঝাড় I তার পাশে অনেকটা জায়গা টাইলস করা I বোঝা যায় এখানে আড্ডার আসর জমে I মুনির ওকে সেখানেই নিয়ে গেল তারপর আস্তে করে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে বলল
– তুমি এই গানটা কার জন্য গাইলে অনিমা ?
অনিমা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর বলল
-আমি অ্যানাউন্সমেন্ট এ বলেছি কার জন্য গাইছি
-তুমি এই গানটা আমার জন্য গাইলে ?
– হু
– এই গানটাই তো লেখা ছিল তাই না, ওই বইটার মধ্যে ?
-হ্যাঁ
– তারমানে সেদিন আমি চলে না গেলে তুমি বই টা আমাকে দিতে ?
-হু
– এতো ভালোবাসতে আমাকে ? মুনির আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলে
– কেন তুমি বুঝতে পারতে না ?
– পারতাম I কিন্তু বিশ্বাস করতে পারতাম না
– কেন ?
-তুমি আমার মত একজনকে কেন ভালবাসবে ?
– তোমার মতন মানে ?
-মানে আমার তো তোমাকে দেওয়ার মতো কিছু ছিল না
– কিছুই ছিল না ? অনিমা বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল
– মানে, আমি তোমাকে খুব ভালবাসতাম কিন্তু এর বেশি আমার কিছু ছিল না
– এর বেশি তো আমি কিছু চাইতাম না
মুনির দুই হাতের করতলে অনিমার মুখটা ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বললো
– তাহলে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে ?
অনিমার দুই চোখ বেয়ে বড় বড় ফোটায় জল গড়িয়ে পরলো
– আমি তোমাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখতে পারতাম না I তোমাদের দুজনের মাঝখানে আসতে চাইনি আমি
– তোমার আমার মাঝখানে তো কেউ কখনো ছিল না I
– আমি তোমার কাছ থেকে পালাতে চেয়েছিলাম
– কিন্তু কেন ?
– আমি ভেবেছিলাম তুমি নীলাকে ভালোবাসো
-তুমি এটা কেন ভাবলে ? আমি শুধু তোমাকে ভালবেসেছি , শুধু তোমাকে
অনিমা দুই হাত দিয়ে মুনির এর গলা জড়িয়ে ধরলো I তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল
– আমি যদি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে কখনোই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না
মুনির দুই হাত দিয়ে অনিমা কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল তারপর বলল
– আমি আর কোনদিনও তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবোনা I কোনদিনও না
অনিমা অনেকক্ষণ কাঁদলো মুনির এর ঘাড়ে মুখ গুঁজে I তারপর এক সময় চোখ মুছে বলল
-মুনির, এবার ছাড়ো কেউ চলে আসবে
– আসুক
– তোমার কোন স্টুডেন্ট চলে আসবে
– আসুক
– তাহলে চলো পালাই
– কি ? মুনির হেসে ফেলল
– চলো একসঙ্গে পালাই
ওরা দু’জন যখন হাসতে হাসতে হাত ধরাধরি করে ছাদ থেকে নিচে নামতে গেল তখন হাসিব কে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসতে দেখা গেল I হাসিব বলল
– কিরে তোরা দুজনে এখানে , আমি তোদের সারা পার্টি তে খুঁজছি
– তোমার একটা ট্রিট পাওনা রইল হাসিব I অনিমা বলল
– কেন ?
– এই যে তুমি এতগুলো বছর ধরে ওকে এত দেখে রেখেছো
– এসব বইলো না I আমাদের বন্ধুত্ব তোমাদের প্রেমের চেয়েও পুরনো I
অনিমা হেসে ফেললো I বলল
-সে তো নিশ্চয়ই I আজকে একটা ফেভার চাইবো I আজকের মত ওকে ছেড়ে দাও I আমি তো কদিন পরেই চলে যাবো I তখন তো তোমাদের কাছেই থাকবে I আজকের দিনটা আমাদের জন্য খুব স্পেশাল
– আচ্ছা যাও I তোমরা ও কি মনে রাখবা যে হাসিব বইলাএকজন ছিল
হাসিব মুনিরের পিঠ চাপড়ে বলল
– যারে ব্যাটা I তোর ডার্লিং রে নিয়া যা
*******
অনিমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাবধানে ও শাড়ির পিনগুলো খুলছে I খোপার কাটা টা খুলে চুলটা ছেড়ে দিল ও I আয়নার ভেতর দিয়েই দেখল মুনির ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এসেছে I ওর পরনের ব্রাউন টি-শার্ট আর চেক ট্রাউজার I সারা মুখ ভেজাI ভেজা চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দেয়া I অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে I অনিমা তাকিয়ে থাকতে পারল না I চোখ সরিয়ে নিল ওর চোখে জল এসে যাচ্ছে I
অনিমা বলল
– তোমার হয়ে গেছে I আমি চেঞ্জ করে আসছি
মুনির এর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ও অনিমার একটা হাত ধরে থামিয়ে দিল তারপর ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল
– চেঞ্জ করতে হবে না
– মানে কি ? এ শাড়ি পড়ে আমি ঘুমাতেই পারবো না
মুনির ওকে আরো কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপালে ঠেকিয়ে বললো
– আজকে রাতে আমি তোমাকে ঘুমাতেই দেবো না I তোমার জন্য অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি I এবার তোমার পালা I
পরিশিষ্ট
ওদের গাড়িটা যখন হোটেল সায়মন এর সামনে এসে দাড়ালো তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে I ঠিক হলো সবাই এখন যে যার মতো বিশ্রাম নেবে সন্ধ্যার আগে আগে সী বিচে যাওয়া হবে সূর্যাস্ত দেখতে I পাশাপাশি তিনটা সী ভিউ রুম নেয়া হয়েছে I প্রথমটা সুইট রুম কারণ বাচ্চারা সবাই একসঙ্গে থাকতে চায় I এই রুমে নাজমা, রেহানা বেগম আর বাচ্চারা থাকছে I নাজমার হাসব্যান্ড আসতে পারেননি I অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যেতে হয়েছে I মাঝের রুমটাতে অনিমা আর মুনির আর শেষের টা তে হাসিব ওর স্ত্রী কেয়া আর ওদের চার বছরের মেয়ে হিয়া থাকছে I রুমে ঢুকে অনিমা বলল
– এখন খাবে ?
– না আগে শাওয়ার করব I খুব টায়ার্ড লাগছে
অনিমা রুম সার্ভিসে ফোন দিয়ে খাবার অর্ডার করল তারপর হাত মুখ ধুয়ে চেঞ্জ করে নিল I আজ অনিমা আবার মুনিরএর দেয়া নীল শাড়িটা পড়েছে I ওর খুব ইচ্ছা এই শাড়িটা পড়ে ও সমুদ্র দেখতে যাবে I অনিমা যত্ন করে কাজল দিল I ও সাধারনত টিপ পরেনা আজ একটা নীল টিপ পরল I তারপর বারান্দায় গিয়ে বসলো I সামনে যতদূর চোখ যায় আদিগন্ত নীল সমুদ্র I বিকেলের রোদে ঝিলমিল করছে I অনিমা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল I
মুনির বারান্দায় এসে দেখল অনিমা মুগ্ধ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে I মুনির এর চোখ আটকে গেল I নীল সমুদ্রের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে অনিমা কে I মুনির প্রথমে অনিমার পাশে বসলো তারপর ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল I অনিমা হাসলো , ওর চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
– খাবে চলো I তুমি সারাদিন কিছু খাওনি
– খাব I আগে একটা গান শোনাও
তখনই ডানদিকের বারান্দা থেকে শব্দ ভেসে এল
– একটু জোরে শোনালে আমরাও শুনতে পারি
এরপর বামদিকের বারান্দা থেকে নাজমা বলল
– আমরাও আছি
মুনিরএর প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল I ও প্রথমে উঠে দাঁড়ালো তারপর দুই হাতে অনিমাকে তুলে নিয়ে জোর গলায় বলল
– আমার বউয়ের গান শুধু আমি শুনবো আর কেউ না
তারপর ঘরে ঢুকে দরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল
– দেখলি, দেখলি নাজমা তোর ভাই কি রকম জেলাস I যাক, কুছ পরোয়া নেহিI এই হাসিবুল হোসেন কাউকে পরোয়া করে না I আজ আমি তোদের গান শোনাবো I
-ইয়ে, হাসিব ভাইয়া, আমার না বাচ্চাদের গোসল করাতে হবে I তুমি ভাবিকে শোনাও আমরা আছি পাশেই
কেয়া বলল
– নাজমা, আমি শ্যাম্পু আনতে ভুলে গেছি একটু তোমার ওখানে আসি ? হিয়া কে ও গোসল দিতে হবে I হাসিব তুমি শুরু করো
ততক্ষণে বন্ধ দরজা ভেদ করে অনিমার কিন্নরকন্ঠ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে
এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায়,
স্বপ্ন মধুর মোহে,
এই জীবনে যে কটি দিন পাবো,
তোমায় আমায় হেসে খেলে
কাটিয়ে যাব দোঁহে,
স্বপ্ন মধুর মোহে।।
কাটবে প্রহর
তোমার সাথে তোমার সাথে
কাটবে প্রহর তোমার সাথে
হাতের পরশ রইবে হাতে
রইবো জেগে মুখোমুখি
মিলন আগ্রহে
স্বপ্ন মধুর মোহে।
এই বনেরই মিষ্টি মধুর
শান্ত ছায়া ঘিরে,
মৌমাছিরা আসর তার
জমিয়ে দেবে জানি,
গুঞ্জরনে নীড়ে আসর
জমিয়ে দেবে জানি,
অভিসারের অভিলাসে
রইবে তুমি আমার পাশে
জীবন মোদের যাবে ভরে
রঙের সমারোহে
স্বপ্ন মধুর মোহে।
এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায়
স্বপ্ন মধুর মোহে,
এই জীবনে যে কটা দিন পাবো,
তোমায় আমায় হেসে খেলে,
কাটিয়ে যাবো দোঁহে,
স্বপ্ন মধুর মোহে।।
সমাপ্ত
লেখনীতে
অনিমা হাসান