সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি #পর্বঃ১১,১২

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১১,১২
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি
পর্বঃ১১

“তো আপনি কি ভেবেছিলেন আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি?”

জুনইদ অস্বস্তিতে চোখের পলক ঝাপটালো।নিজেকে সামলে ফিচেল হেসে বললো,”কই আমি এরম কিছু ভাবি নি তো”

“ওহ রিয়েলি কিছুই ভাবেন নি আপনি।ঠোঁট কামড়ে হাসলো অনিলা।”

অনিলাকে হাসতে দেখে জুনইদ ও নৈঃশ্যব্দে হাসলো।আড়ষ্ট ভাব এনে বলে উঠলো,”ইয়াহ আমি কিছুই ভাবি নি।এভাবে হাসার কি হলো বুঝলাম না?”

নাহ মানে আমার তো মনে হয়েছিলো আপনি অন্য কিছু ভাবছিলেন মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।

জুনইদ কপট রেগে গেলো।আক্ষেপের সহিতে বলে, “এই তুমি আমাকে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট একদম বলবে না।আমার কত্তো সুন্দর একটা নাম আছে বুঝেছো!এই আইমান জুনইদ কে কেউ এভাবে ট্রীট করে নি জানো তুমি।”

অনিলা গলায় তিরস্কার স্বর এনে টেনে টেনে ঠোঁট গোল করে বলে, “ওওওও হো হো আপনি যখন আমাকে মিস সুনামি বলেন তার বেলা,তখন কিছু হয় না তাই না।আমি বললেই দোষ তাই না।”আমার ও একটা সুন্দর নাম আছে ইশতেহার অনিলা!”

জুনইদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে তেছড়া ভাবে বলে উঠলো,”আমি বলবো কিন্তু আপনি বলবেন না।”

অনিলা চোখ সরু করে জুনইদের দিকে হালকা একটু ঝুকে ব’লে,”উহু মগের মুল্লুক নাকি,সখ কত।আপনি ডাকলে আমিও ডাকবো।তার আগে সত্যি করে বলুন তো আপনি কি ভাবছিলেন আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি?”

জুনইদ বলে উঠলো,”কিছুই ভাবিনি আমি ওকে।আমার বয়েই গেছে তোমাকে নিয়ে ভাবতে।”বাই দ্যা ওয়ে এটা রেস্টুরেন্ট এখানে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই দুরো সরো?

অনিলা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই ওদের এভাবে দেখে হাসছে মিটমিটিয়ে,অনিলা সরে এসে দমে যাওয়া গলায় বললো, “আপনি যত যায় বলুন আমি জানি আপনি অন্য কিছু ভেবেছিলেন হুহ্।”

জুনইদ ও একরোখা ভাবে বলে উঠলো, “তাহলে ধরে নেও ভাবছিলাম মিস সু….।”

অনিলা কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে, “ভাবছিলেন ই যখন তাহলে মিথ্যা কথা বললেন কেন?”

জুনইদ স্বগতোক্তি করলো,”জানি না”

জুনইদ কে কথার প্যাঁচে ফেলতে পেরে বেশ আনন্দ হচ্ছে অনিলার সে বলে উঠলো,
“তাহলে সত্যিটা শিকার করতে শিখুন।”

জুনইদ খানিকটা বিরক্ত বোধ করে বললো,
“এই এমন জেরা করছো কেন তুমি উকিলের মতো হ্যাঁহ?”

অনিলাও গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ”
প্রথমেই শিকার করলে তো আর এত্তো জিজ্ঞেস করতাম না তাই না।”

জুনইদ বিরবির করে বললো,”মনে হচ্ছে যেনো ঝগড়ার উপর পিএইচডি করেছে মেয়েটা।কথায় পারা যায় না।”

কিছু বললেন মিস্টার ল্যাম্প,

“না না কিছু বলিনি তো।জুনইদ হরবর করে উত্তর দিলো অনিলার কথা শেষ না হতেই।”এবার এই কথা শুনে আবার আরেকদফা ঝগড়া বাধিয়ে ছাড়বে এই মেয়ে।

অনিলা খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বললো,
‘আমি আসাতে কি আপনি বিরক্ত বোধ করছেন নাকি মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট?

জুনইদ ভ্রু কুচকে অনিলার পানে তাকিয়ে বলে, “আরে এটা আবার কখন বললাম আমি।আজিব মেয়েরে বাবা।”

অনিলা মিইয়ে গিয়ে অনুদ্ধত কন্ঠে বলে,”তাহলে বিরবির করছেন কেন?”

না মানে একেবারে খালি হাতে না এসে এক গুচ্ছ ফুল আনতাম আর কি তাই।জুনইদ কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠলো।

ওহ আচ্ছা।মুখে এই কথা বলে মনে মনে ভাবলো, এক গুচ্ছ ফুলের থেকে আপনাকে দেখে আমি এতো খুশি হয়েছি সেটা আমি আপনাকে কি করে বুঝায় বলুন তো।

হ্যাঁ যায় হোক এখন তো কিছু করার নেই কি খাবে বলো?

এখনি অর্ডার করতে হবে না নিশা আসুক না তারপর না হয় দিয়েন অর্ডার।

নিশা এখন আসবে না আমার হয় না আসবে বলে এখন।তাছাড়া ও এলে পছন্দ মতো অর্ডার করে দেবে।কি আছে তাতে।তোমার জন্য কি অর্ডার করবো সেটা বলো।

আপনার যা ইচ্ছে।

শুধু আমার ইচ্ছে হবে কেন।তুমি বলো?

ওকে।কোল্ড কফি অর্ডার করুন।আসলে গরম লাগছে তো তাই।

শুধু কফি আর কিছু না।

না আমার আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।

ওকে,বলেই জুনইদ ওয়েটারকে ডেকে অনিলার জন্য কোল্ড কফি আর ওর জন্য কোকাকোলা অর্ডার দিতে গেলে অনিলা বাধা দিয়ে বলে,

আপনি খাবেন না কোকা-কোলা।

কেন?

আমি বলছি তাই।

ওকে খাবো না।আপনি দুটো কোল্ড কফিই নিয়ে আসুন।এয়েটার কে উদ্দেশ্য করে বললো জুনইদ।

তা না ওটা খেতে দেওয়ার কারন টা কি শুনি?

হুম অবশ্যই।ওটাতে ক্যালরি বেশি।ফিটনেস মেইনটেইন করতে হলে ওটা না খাওয়াই ভালো।তাছাড়া ওটা আমাদের ইসলাম শরিয়তেও নিষিদ্ধ আছে।

ওহ থ্যাংকস।তারপর মনে মনে ভাবলো, আমার জন্য এখনি এতো চিন্তা যাক ভালো লাগলো।

এভাবেই কথা বলতে বলতে কফি চলে এলো। কফিতে চুমুক দিতে দিতে অনিলা বলে,

“তা নিশা এখনো আসছে না কেন বলুন তো?”

“কোনো কিছু নিয়ে ডিসকাস করছে হইতো বান্ধুবীর সঙ্গে।এসে যাবে।জুনইদ কফি খেতে খেতে বলে উঠলো।”

মুখে বললেও জুনইদ ভালোই জানে যে ওর বোন এখন আসবে না।পাকা মেয়েটা চাইছে ওদের কে একটু প্রাইভেসি দিতে।কফি খেতে খেতে জুনইদ অনিলার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে বার বার।চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে অনিলা।জুনইদের দিকে সরাসরি ভুলেও তাকাচ্ছে না।জুনইদ চেয়েছিলো এরপর যখন অনিলার সামনে যাবে তখন এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে অনিলার কাছে নিজের আবেগ গুলো উজাড় করে দেবে।তার মনের কথা জানাতে।একটু আগেও মেয়েটার সঙ্গে ঝগড়া করছিলো আর এখনি যেনো অস্বস্তিতে মুড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে।আচ্ছা অনিলার মনেও কি তার জন্য কোনো অনুভূতি তৈরি হয়েছে তার যেমন টা হয়েছে নাকি শুধুই বান্ধুবীর ভাই হিসেবেই ভাবে এর বাইরে অন্য কোনো অনুভূতি তৈরি হয়নি।জুনইদ এক মনে অনিলার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কফিতে চুমুক দেওয়া দেখছে।এসব ভাবতে ভাবতেই নিশা চলে আসলো।মিথ্যা গলা খাকারি দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো নিশা।

“টাইম আপ, টাইম আপ।আমি এসে গেছি।বাকি যা আলাপ চারিতা আছে সেগুলো আপাতত তুলে রাখো।”

কথা টা শেষ করতে না করতে নিশা খেয়াল করলো জুনইদ তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।ব্যস নিশা চুপ।কারণ ভালোই জানে জুনইদ এমনিতে খুব ভালো হলেও রেগে গেলে ব্যাপার টা খুব খারাপ হয়ে যাবে।

অনিলা সন্দিহান চোখে জুনইদ আর নিশার দিকে তাকালো।অপ্রসন্ন গলায় বললো,”কিসের টাইম আপ? বাই দ্যা ওয়ে তোর নোটস কালেক্ট করা হয়েছে?”

নিশা চুপসে যাওয়া গলায় বললো,”হ্যাঁ হয়ে গেছে।তুই ও নিয়ে নিস।”

জুনইদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিশাকে বলে উঠলো, “ওকে নিশা তুই তোর পছন্দ মতো অর্ডার করে ফেল এবার”

নিশা বলে উঠলো, আমি কফি খেয়েছি।বাট তুমি যখন ট্রিট দিচ্ছো তখন আমি তো খাবোই।এনি-ওয়ে ভাইয়া তোমার কাছ থেকে আমার একটা থ্যাংকস কিন্তু প্রাপ্য।

জুনইদ নিশার ইঙ্গিত বুঝেও কথা ঘুরিয়ে বলে,

জুনইদ সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো,”আমিই ট্রিট দেবো আবার থ্যাংকস ও আমিই দেবো।এটা কোন দেশের নিয়ম রে।”

“থাক ভাইয়া আর তোকে থ্যাংকস জানাতে হবে না।নিশা অপ্রাকৃতস্থ ভাবে বলে উঠলো”

এভাবেই সবাই মজা করতে করতে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো।যদিও অনিলা আর কিছু খেতে চাইছিলো না তাও নিশা জোর করেই খাওয়ালো।তারপর গাড়িতে যেতে যেতে নিশা আর অনিলা অনেক গল্প করলো।জুনইদ বেচারা নিরব দর্শকের মতো আড় চোখে বার বার অনিলাকে দেখে যাচ্ছিলো।আর কোনো কথায় বলতে পারলো না।এরপর অনিলা কে ওর ফ্ল্যাট নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের বাড়িতে।


অনিলা রুম আনলক করে সাইড ব্যাগ টা বেড এ রেখে স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে গেলো।যদিও ক্লান্ত লাগছে তার।তাও রান্না ঘর থেকে ফল নিয়ে এসে স্ট্রুয়ার্ট কে খাওয়াতে লাগলো।স্ট্রুয়ার্ট ও আপন মনে খেতে লাগলো।অনিলা মাঝে মাঝে কথা বলছিলো।কাল কে বাসায় যেতে হবে।বাবার আদেশ কিভাবে অমান্য করবে সে।তাই প্যাকিং ও বাকি অনেক।অনিল স্ট্রুয়ার্ট কে খাইয়ে প্যাকিং করে নিলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসলো।ঘড়িতে তখন নয় টা বাজে।সবে নয় টা বাজে?ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বাড়িতে ফোন দেওয়ার কথা ভাবতেই ওর ফোন বেজে উঠলো।দেখলো ওর বুবু মায়াবী ফোন করেছে।অনিলা মিষ্টি হেসে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে মায়াবী এমন কিছু বললো যা শুনে অনিলা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো।চোখে মুখে নেমে এলো অন্ধকার।চোখ ধোঁয়াসা হয়ে এলো সাথে সাথেই।চোখ দিয়ে অনর্গল জল গড়িয়ে পরলো।গলা দিয়ে শব্দ বেরোয় না যেনো,

আমি এক্ষুনি আসছি বুবু।বলেই ফোন টা কেটে দিলো।

ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু না সময় নেই হাতে তাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে।অনিলা তারাতাড়ি স্ট্রুয়ার্ট কে নিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পরল।স্ট্রুয়ার্ট অনিলাকে কাদতে দেখে ছটফট করতে লাগলো।সে যেনো বুঝতে পারছিলো কোনো অজানা ঝড় এসেছে যার কারণে তার মালিক এমন করছে।ফোন থেকে ক্যাব বুক করে নিলো তারাতাড়ি।এক হাতে ব্যাগ আর এক হাতে স্ট্রুয়ার্টের খাচা।ক্যাব আসতেই সে উঠে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে অনিলা।সারা টা রাস্তায় কাদতে কাদতে তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো।কন্ঠ নালী আটকে আসছে।কোনো কথায় যেনো বের হতে চাচ্ছে না।তবুও কষ্ট করে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,

“ভাইয়া তারাতাড়ি চলুন প্লিজ আমার একটু তাড়া আছে.”একটা হসপিটালের নাম বলে সেখানে নিয়ে যেতে বললো প্রথমেই!”

#চলবে।

আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি

অনিলা হসপিটালের ভেতর প্রায় দৌঁড়ে ঢুকলো।এখন রাত সারে এগারো টা ছুই ছুই।হসপিটালে ঢুকেই রিসিপশনের দিকে গিয়ে তার বাবার নাম জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে ভেতরে গেলো।গিয়েই দেখলো ওর বুবু আর মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।অনিলা কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে গেলো ওর বুবু মায়ের কাছে।এটুকু পথ যেনো শেষ হতে চাচ্ছে না,
পা চলছে না কিন্তু এক হাতে স্ট্রুয়ার্টের খাঁচা আর আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে এলো।মা বুবুর মুখের দিকে চোখ যেতেই বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।কোনো রকম খাচা ব্যাগ রেখেই ভাঙা গলায় ডেকে উঠলো,

“বুবু!”

অতি পরিচিত কন্ঠে মাথা উপর করে তুললো মায়াবী আর মিসেস মনিরা।অনিলা কে দেখেই মায়াবী আর ওর মা জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঙে পরলো।মিসেস মনিরা এর মধ্যেই দুইবার অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন।অতি শোকে কাতর হয়ে গেছেন তিনি।মায়াবী কে মিসেস মনিরা অনিলার কাছে তার বাবার খবর টা দিতে না করেছিলো কিন্তু মায়াবী অনিলা কে না জানিয়ে থাকতে পারে নি।বাবার এতো বড় একটা আঘাতের কথা কিভাবে না জানিয়ে থাকতো সে।অনিলা মা বোন কিভাবে সামলাবে ভেবে পেলো না।ভেতর টা হুহু করে উঠলো তার।স্ট্রুয়ার্ট ও যেনো কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।অনিলা হাহুতাশ করে জিজ্ঞেস করলো,

“মা বাবার কি হয়েছে?”বাবা কি করে অসুস্থ হলো বলো মা।কালই বাবা সুস্থ ছিলো আমাকে দেখতে গেছিলো আর এখন কিনা বাবা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।

মিসেস মনিরার কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেলো মেয়ের প্রশ্ন শুনে।তিনি কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিতে পারলেন না।মায়াবী করুন চোখে তাকালো অনিলার পানে।তখন মায়াবী অনিলাকে ফোন করে বলে ওর বাবা কে হসপিটাল ভর্তি করা হয়েছে।কিন্তু কেন ওর বাবা কে হসপিটালে এনেছে তা বলে নি শুধু হসপিটালের ঠিকানা টা দিয়েছে।মায়াবী চোখের পানি মুছে ভাঙা গলায় বলে উঠলো,

“আমি বলছি বোন।”

“হ্যাঁ বলো বুবু বাবার কি হয়েছে?”উত্তরের আশায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো অনিলা তার বুবুর পানে।

মায়াবীর বড্ড কষ্ট হচ্ছে তা সত্তেও বোনকে বলতে উদ্যত হলো।দম নিয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো,”বাবার বুকের ডান দিকে গুলি লেগেছে বোন!”

বাবার গুলি লেগেছে শুনেই অনিলার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।আঁতকে উঠে সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।অনিলা ওর বুবুর দিকে রোষানল দৃষ্টিতে তাকিয়ে অবসন্ন কন্ঠে বলে,” এসব তুমি কি বলছো বুবু?”পাগল হয়ে গেছো তুমি তোমার জন্য মানে।”

রক্তলাল চোখে তাকালো মায়াবী অনিলার দিকে।মিসেস মনিরা নির্বাক নিরর্থক ভাবে স্থীর চিত্তে নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন।মায়াবী মাকে দেখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।চোখের কোণের অশ্রু টুকু গড়িয়ে পরলো চোখ থেকে।সে ভেজা কন্ঠে বললো,

হুম আমি ঠিকই বলছি বোন।আমার চোখের সামনে হয়েছে সব টা।আর আমি কিছুই করতে পারিনি।আমার জন্যই বাবার আজ এই অবস্থা।আমি বাবাকে বলছিলাম আজকে না যেতে কিন্তু বাবা শুনেনি।তারপর এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি জোর করেই বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম।কিন্তু পথিমধ্যে আসার সময় যে আমাদের জন্য এরকম ভয়ংকর একটা বিপদ অপেক্ষা করছে সেটা তো জানতাম না।সেই মুহুর্তের কথা ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠছে আমার।কি ভয়ংকর সেই দৃশ্য।বলেই মায়াবী কান্নায় ভেঙে পরলো।ধপ করে বসে পরলো একটা চেয়ারে।তার পর দম নিয়ে আবার বলে,

“আজ বাবা আর আমি ব্যাংকে গেছিলেন টাকা তুলতে আমার বিয়ের জন্য।আর আসার পথে কয়েকজন লোক আমাদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পরে।আর বাবা গাড়ি থামিয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে দেই।কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই বাবাকে আর গাড়ি আঁটকে ফেলে।রাত হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা কম ছিলো তুলনায় ।যে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে ছিলো হইতো।আর সেই সুযোগে তিন চারজন লোক বাবার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে আর বাবার বুকের কাছে বন্দুক ঠেকিয়ে ভয় দেখাই যাতে না চেঁচায়।আমি ভয়ে ডুকরে কেদে উঠতেই একজন ছিচকে লোক আমাকে বাজে ভাবে দেখতে থাকেন।আর এগিয়ে আসেন আমার দিকে।আর বলে চেঁচালেই গুলি করে দেবে ওরা।সব টাকা পয়সা গুলো নিতে চাই ওই লোক গুলো।বাবা দিতে চাই না কিছুতেই।এদিকে একটা লোক আমাকে বার বার বাজে ভাবে স্পর্শ করতে থাকে।আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকি।বাবা ওঁদের কে বাধা দিতে চাইলেই এক পর্যায়ে বাবার সঙ্গে ওই লোক গুলো ধস্তাধস্তি জবরদস্তি করতে থাকে।একজন লোক টাকা নিতে চাইলেও পারে না।ধস্তাধস্তি করতেই গুলি বেরিয়ে বাবার বুকে লাগে আর বন্দুকের আওয়াজ আর আমার চেচানো শুনে লোকজন জড়ো হয়।আর লোক জড়ো হতে দেখেই ওই লোক গুলোকে ধরার আগেই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।মুখে মাস্ক থাকাই কারোর মুখ দেখা যায়নি।

অনিলা সব টা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। মানুষ টাকার জন্য একটা মানুষের জীবন নিতেও একটা বার ভাবে না।হাই আল্লাহ এটা কি হয়ে গেলো তার পরিবার এর সাথে।অনিলা বিদ্ধস্ত হয়ে বসে পরলো মাটিতে।বজ্রপাতের ন্যায় বিকট ভাবে তার কর্নকুহরে বাবার গায়ে গুলি লাগার কথা টা বাজতে লাগলো।মায়াবী এগিয়ে গিয়ে বোনকে তুলে ধরলো।দাঁড় করিয়ে দুই কাধে হাত রাখলো।মায়াবী চোখের জল মুছে আবার বললো,

ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যে লোকজন আসতে আসতে ততক্ষণে বাবার গুলি লেগে অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়।গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পরছিলো।আমি এগিয়ে গিয়ে বাবাকে ধরি।আমার কোলে তুলে ধরি।বাবার গোঙ্গানোর শব্দ হচ্ছিলো পরক্ষনেই বাবার মাথা আমার কোলে লুটিয়ে পরে।সেই সময় পুলিশ কেস ভেবে কেউ এগিয়ে আসছিলো না।বাবা কে হসপিটালে আনবো কিন্তু আমি তো গাড়িও চালাতে পারি না।সেই সময় একটা ছেলে ভীর ঠেলে এগিয়ে আসেন আমাদের দিকে।আমি চিৎকার কাদছিলাম আর সাহায্য চাইছিলাম কেউ আসেনি এগিয়ে।সেই ছেলেটা ছাড়া।আর উনিই পুলিশ কে খবর দিয়েছেন আর বাবাকে হসপিটাল এনেছেন।এদিকে মা ফোন করেই যাচ্ছে সমানে।মা আমার গলা শুনেই বুঝে যায় কিছু একটা হয়েছে। বাধ্য হয় মাকে জানাতে সব টা।তারপর হাসান কাকা মাকে নিয়ে আসেন।আমি মাকে সামলানোর আপ্রান চেষ্টা করছিলাম আমি কিন্তু পারছিলাম না।

সব টা শুনে অনিলা অস্থির হয়ে গেলো।মাথাটা ঘুরছে যেনো।শরীর যেনো অসাড় হয়ে আসছে।মন মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এক্ষুনি সে পরে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে একটা শক্ত বলিষ্ঠ হাত এসে ওর কমোড় পেচিয়ে ধরলো।ততক্ষণে অনিলার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে।অনিলাকে দেখেই জুনইদ যেনো স্তব্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না।সে অস্ফুটে বলে উঠলো,

“মিস সুনামি কি হয়েছে তোমার?”

মায়াবী আড়ষ্ট হয়ে চেচিয়ে বোন বলে ডেকে উঠলো।মায়াবী চমকে উঠে ব্যস্ত হয়ে পরলো অনিলাকে নিয়ে।এদিকে মিসেস মনিরার ও অবস্থা বেগতিক।নিজের ছোট মেয়েকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখে তিনি আরও ভেঙে পরলেন।

মায়াবী তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেটা যে তার বাবাকে হসপিটালে এনেছেন।ছেলেটার নাম টা যে কি এতো কিছুর মধ্যে জানা হয়নি।উনি না থাকলে হইতো আজকে তার বাবাকে বাঁচানোই যেতো না।মায়াবীর অস্থিরতা বেড়ে গেলো সে চেচিয়ে উঠলো নার্স নার্স বলে।নার্স এগিয়ে আসলেন সাথে সাথে।ছেলেটা অনিলাকে নিয়ে গিয়ে হসপিটালের একটা বেডে শুইয়ে দিলো।পিছনে মায়াবী আর মিসেস মনিরাও গেলেন।

একজন নার্স বলে উঠলো,আপনারা সরে দাড়ান একটু আমি দেখছি।আমাকে দেখতে দিন উনাকে।নার্স অনিলার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছেন।

মায়াবীর চোখ পরলো সেই ছেলেটার দিকে।ওর কেন যেনো মনে হচ্ছে ছেলেটা যেনো তার বোনকে চেনে।এতটা অস্থিরতা কেন ছেলেটার চোখে মুখে।চিন্তার ভাজ স্পষ্ট ছেলেটার মুখে।ছটফট করছে কেমন যেনো।আর উনি তখন অনি কে কি একটা অদ্ভুত নামে ডাকলেন।

এদিকে জুনইদ অনিলাকে দেখেই অবাকে আশ্চর্য হয়ে গেছে।সে ভাবছে অনিলা এখানে কি করছে।সে একটু আগেই ডক্টর এর বলা একটা ইনজেকশন আনতে গেছিলো ভদ্রলোক টার জন্য।আর এসেই দেখে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পরে যাচ্ছে।কোনো কিছু না ভেবে ছুটে এসে ধরে ফেলে কোনো রকমে এক হাত দিয়ে।কিন্তু মেয়েটা যে অনিলা সে পেছন থেকে দেখতে পায়নি।আর যখন দেখলো ওর বক্ষস্থল যেনো ভারী হয়ে গেলো।আর সাথে একরাশ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।

আপনি কি চেনেন আমার বোনকে।

জুনইদ মায়াবীর কন্ঠে সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে উঠলো,

“অনিলা আপনার বোন?”.

মায়াবী ভরাট কন্ঠে বললো,

“হ্যাঁ আমার বোন। কিন্তু আপনি ওঁকে চিনলেন কিভাবে।”

জুনইদ ছোট করে জবাব দিলো,

আমার ছোট বোনের ক্লাসম্যাট সেই হিসেবেই আমি চিনি ওঁকে।

মায়াবী আর কিছু বললো না।শুধু ও বলেই ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।
জুনইদ কিভাবে শান্তনা দেবে ভেবে পেলো না।তার মানে ভদ্রলোক টাই অনিলার বাবা।তখন নিশাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই তার বাবা তাকে ব্যাংকে পাঠায়।ওই ব্যাংক নাকি তার কোনো বন্ধু একটা ফাইল নিয়ে আসবেন।ব্যবসার জন্য ব্যাংক ম্যানেজারের সাইন নিয়ে ফাইল টা ওদেরকে দেবে।ফাইল টা দরকারি হওয়ায় তাকে তখনই আসতেই হয় সেই ব্যাংক।আর ব্যাংক থেকে ফাইল নিয়ে ফেরার সময় রাস্তায় গন্ডগোল দেখে গাড়ি থামিয়ে এগিয়ে যায়।আর তখনই দেখে একটা মেয়ে অসহায় হয়ে সাহায্য চাইছে বাবাকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না।ঘটনা বুঝেই সে সাহস করে এই হসপিটাল নিয়ে আসে।কিন্তু এই ভদ্রলোক যে অনিলার বাবা হবে কে জানতো।

কিছুক্ষন পর অনিলার জ্ঞান ফিরতেই অনিলা অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো, “বাবা”

জুনইদ অনিলার কন্ঠ এক প্রকার ছুটেই গেলো।অস্থির হয়ে বলে উঠলো, “আর ইউ ওকে মিস সুনামি?”

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here