সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি #পর্বঃ৪

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

পরিবেশ মোহিত জ্যোৎস্নাতের আবেশে।প্রগাঢ় জ্যোৎস্না আলো ছড়িয়েছে পড়ন্ত সাঁঝের কয়েক প্রহর পূর্বে।এখন রাত ন’টা।কিছুতেই রান্না করতে মন চাইছে না অনিলার।আইলসার মতো শুয়ে আছে।রান্নায় তার মন নেই।সে জন্য ফুড পান্ডা থেকে খাবার অর্ডার করে দিলো।মন মস্তিষ্ক জুড়ে যদি একটা ঘটনাই ঘুরে তাহলে কি আর কিছু ভালো লাগে।অনিলা চাইছে কালকের বিষয় টা ভুলে যেতে কিন্তু বার বার একটাই বিষয় মস্তিষ্কে নাড়া দিচ্ছে।কিন্তু সে তো নিজের জায়গায় ঠিকই ছিলো।জুনইদ যদি ওতো হেয়ালি না করে বলে দিতো আগেই তাহলে তো আর তাকে সে চড় মারতো না।সে আর ভাবতে পারছে না।কিযে আছে কপালে।সে যায় হোক অনিলা ঠিক করলো সে আর একবার ই চেষ্টা করবে জুনইদ কে স্যরি বলার।এরপর আর চেষ্টাও করবে না।

তাই সে ফোন টা হাতে নিয়ে কল লাগালো।সে ঠিক করলো রিসিভ হতেই স্যরি বলবে সে।অনিলা ভাবলো বাব্বাহ আনব্লক ও করেছে। তার নাম্বার টা কাল ব্লক করা ছিলো তাহলে কি জুনইদ ও চাইছিলেন আমি উনাকে ফোন করি।একবার রিং হতেই ফোন টা রিসিভ হলো।

অনিলা হ্যালো বলার আগেই জুনইদ বলে,

কেন ফোন করেছেন মিস সুনামি।

অনিলা চোখ ঝাপটালো।রাশভারি গলায় বললো, হোয়াট মিস সুনামি কে?

কেন আপনি।আপনিই তো মিস সুনামি।ঝড়ের গতিতে মানুষকে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেন।এবার বলুন আমাকে ফোন করার কারণ টা কি।

আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারছেন না আমি কেন ফোন করেছি।

এক মিনিট,এক মিনিট মিস সুনামি, আপনি সত্যি সত্যিই আমার প্রেমে পরে যান নি তো।বার বার কল করছেন যে আমাকে।

অনিলা মনে মনে ভাবছে,এই লোকটা ইচ্ছে করে এমন করছে।যাতে আমি রেগে যায়। কিন্তু আমার তো এখন রাগা চলবে না।যে করেই হোক স্যরি টা আমাকে বলতেই হবে।

আমি কেন আপনার প্রেমে পরতে যাবো।দেখুন আমি আপনাকে স্যরি বলার জন্য ফোন দিয়েছি।

থাক আপনাকে আর বাহানা বানাতে হবে না।এই নিয়ে আপনি একশো দশ নম্বর মহিলা সবার একই ছুতো প্রেম করার।বাট আপনাকে নিয়ে ভাব্বার মতো টাইম আমার নেই।তাই প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করুন।

দেখুন স্যরি বলার জন্য ফোন করেছি আপনাকে ইম্প্রেস করার জন্য নয়।আমারও না টাইম নেই আপনাকে নিয়ে ভাব্বার।কাল কের জন্য স্যরি।আর হ্যাঁ আমি তো একটা থাপ্পড় দিয়েছি অন্য কেউ হলে আপনার বোকামীর জন্য লোক জড় করে দিতো দু চার ঘা।এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলেই ঘ্যাচাং করে ফোন টা কেটে দিলো অনিলা।এবার ক্ষমা করলেই বা কি না করলেই বা কি।সে তো নিজের মতো স্যরি ব’লেই দিয়েছে।মস্ত বড় বোঝা যেনো ঘাড় থেকে নেমে গেলো।ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো অনিলা।সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।মনে হয় তার খাবার চলে এসেছে।


এদিকে জুনইদ ভাবছে কি চীজ রে বাবা এই মেয়ে স্যরি বললো সেটাও যেনো ঝড়ের বেগে।স্ট্রেঞ্জ গার্ল।নিজের মতো স্যরি বলেই ফোন টা কেটে দিলো।সে একদম পার্ফেক্ট নাম দিয়েছে মিস সুনামি।আসলে নাম্বার টা আনব্লক করাই উচিত হয়নি তার।কিন্তু কেন যে আনব্লক করলো সে নিজেই জানে না।

তুমি কি ভেবেছো মিস সুনামি।তুমি ফোন করে আমাকে স্যরি বলবে আর আমি সব কিছু ভুলে যাবো।নো নেভার।ইউ স্ল্যাপড মি।এন্ড ইউ হ্যাভ টু প্যে ফোর দিস মিস সুনামি।দ্যান হাউ ক্যান আই লিভ ইউ।

জুনইদ রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে ঘরে চলে এলো।বিছানায় শুয়ে শুয়ে জুনইদ ভাবছ, “এতো কিছুর মধ্যেও যেনো অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে তার।দিন টা কেমন যেনো স্বপ্নের মতো কেটেছে।কিন্তু শুধু ওই মেয়েটির কথায় কেন মনে পরছে তার।হলো টা কি।

নারীদের উপর পুরুষের একটা প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয় কোনো কারণ ছাড়াই।পৃথিবীর পঞ্চাশ পার্সেন্ট পুরুষের বিপর্যয়ের কারণ নাকি নারী।কিন্তু তারপর ও কি আমরা পুরুষরা এই নারী ছাড়া থাকতে পারি।আর মিস সুনামি এমনই একটি সম্মোহনী মেয়ে যাকে না চাইতেও আমার মনে পরে যাচ্ছে।কালকের জুনইদ আর আজকের জুনইদের মধ্যে সত্যিই কি কোনো পরিবর্তন এসেছে।নাকি কাল কের দিন টা আজকের মতো ছিলো না।এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই জুনইদের চোখে ঘুম লেগে এলো।

সে নিজেকেই নিজে বলে, আব ওর নেহি জুনইদ।চল স্যো যাহ।গুড নাইট।


অনিলার খাবার চলে এলে সে খাবার খেয়ে শুয়ে আছে।সে চোখ বন্ধ করতেই জুনইদের রাগী চেহারাটা ভেসে উঠে।

আচ্ছা জুনইদ ছেলেটা কেমন। ভালো নাকি খারাপ।কাল তো ওর কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। আমার পিঠের চেইন টা খোলা থাকার পরেও কোনো খারাপ মন্তব্য ও করে নি।আবার নিজের জ্যাকেট টাও খুলে দিয়েছিলো।সেদিক থেকে ভালোই বলা চলে।ধুর আমি এসব কেন ভাবছি।এবার আমার ঘুমানো উচিত।নইলে কাল ভার্সিটির জন্য বেরোতে লেট হয়ে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতেই সেও ঘুমিয়ে গেলো।


পর দিন সকালে উঠতে দেরি হয়েছে অনিলার।সে প্রায় দৌড়ে ভার্সিটির গেটের কাছে যেতেই ধরাম করে কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলো।

অনিলা মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে বলে,

উফফ বাবারে এই গেটের সামনে আবার ল্যাম্পপোস্ট টা কে তুলেছে রে।মনে হচ্ছে মাথার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে গেলো।

তাই তো বলি মিস সুনামি ছাড়া তো এভাবে সুনামির মতো ঝড়ের বেগে কেউ দৌড়াবে না।

পরিচিত কন্ঠ শুনে অনিলা চোখ তুলে তাকালো মানুষ টার দিকে।সে চোখ ছোট ছোট করে বলে,

জুনইদ আপনি,এই আপনি মিস সুনামি টা কাকে বলছেন শুনি।

কেন এইতো তুমিই মিস সুনামি।সুনামির মতো আমার উপর পড়ে আমার ভেতর টা বড্ডই বেসামাল করে দিয়েছো।তাই তো তুমি আমার কাছে মিস সুনামি।

এই আপনার সমস্যা টা কি।আপনি আবার আমাকে মিস সুনামি বলছেন।আশ্চর্য তো।এমন ভাবে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে তো ধাক্কা খাবেন ই।বাই দ্যা ওয়ে আপনি আজও ও আমার ভার্সিটিতে।কারণ টা কি বলুন তো।

জুনইদ প্রগাঢ় অভিলাষ গলায় বললো,

এটা শুধু তোমার একার ভার্সিটি নয় ওকে। তাছাড়া আমি নিশা কে ছাড়তে এসেছি।তোমার মুখ দর্শন করতে নয়।

অনিলা মুখ ভেংচি কেটে বলে, হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।আমি যতটা জানি আপনি নিশাকে এর আগে কখনোই ওঁকে ভার্সিটিতে ছাড়তে চান নি।নিশা বার বার বায়না করতো কিন্তু আপনি পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে ওঁকে রেখে যেতেন না।তা হঠাৎ এতো পরিবর্তন এর কারণ?

জুনইদ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো, এখন আমি ডিসিশন চেঞ্জ করেছি।এখন আমি রোজ ই নিশা কে ভার্সিটি ছেড়ে আমার ভার্সিটিতে যাবো।তোমার কোনো সমস্যা নাকি।

আমার কি সমস্যা থাকবে।সরুন তো আমার লেট হয়ে গেছে।আজাইরা কাউ কাউ করার সময় আমার নাই।কথা শেষ করেই অনিলা এগোতে নিলে জুনইদ পিছু ডেকে উঠলো।

এই যে মিস সুনামি শুনুন।

অনিলা চোখ সরু করে কপট রাগ দেখিয়ে তেড়ে গেলো,

আপনি আবার আমাকে মিস সুনামি বলছেন।আপনাকে তো আমি,

কি করবে শুনি?একটু বেশিই কাছে চলে এলে মনে হয়।এতোটা কাছে আসছো কেন সবাই তো তাকিয়ে আছে দেখো।

অনিলা দমে যাওয়া গলায় বললো,দেখুন আমার একটা সুন্দর নাম আছে সেটাই ডাকবেন।দয়া করে এমন উদ্ভট মার্কা নামে আর ডাকবেন না।

আমি নাম ধরে ডাকতে পারবো না।তাহলে কি ডাকা যায় বলো তো।মিস তেলাপোকা ডাকি।
এটাও দারুন নাম কি বলো।এর থেকে সুন্দর নাম তোমার মুখ টা দেখলে আসে না।ঠিক তেলাপোকার মতো দেখতে।হাসতে হাসতে জুনইদ পারলে সেখানেই গড়াগড়ি খাবে।অনিলা কে জব্দ করতে বেশ মজা লাগছে তার।জুনইদ এবার একটু ঝুকে ব’লে,

তোমাকে না মুখ ভেংচি কাটলেও সম্মোহনী লাগে দেখতে।

অনিলা রাগে কটমট করে তাকালো হাত মুঠো করে হাত দুটো জুনইদের গলার দিকে এগিয়ে নিয়ে আবার ফিরিয়ে আনলো।ইষৎ রক্তিমা লাল আভা ছড়ালে ওর চিবুক বেয়ে।

ইউ অ্যার জাষ্ট ইম্পসিবল!বলেই অনিলা সেখান থেকে চলে গেলো।

আর জুনইদ শব্দ করে হেসে দিলো।তাকিয়ে রইলো অনিলার যাওয়ার পানে।কাউকে ভেংচি কাটলেও যে এতোটা স্নিগ্ধ আর সম্মোহনী লাগে এটা তো জানা ছিলো না।মিস সুনামির আরও একটা ভালো নাম দেওয়াই যায়।যার প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্দর তাকে সম্মোহনী মেয়ে বলে আখ্যায়িত করাই যায়। না না এটা মিলছে না।শুধু সম্মোহনী নয়।সম্মোহনী সেই মেয়েটি।যাকে দেখলে ফুলেরাও লজ্জা পাবে।এই ভালো নাম টা সে শুধু স্পেশাল সময়েই ডাকবে না হয়।যদি কোনো দিন এমন দিন আসে তখন জানাবে না হয় এই সুন্দর নাম টা।আনমনে হেসে জুনইদ সেখান থেকে প্রস্থান করলো।

এদিকে নিশা অপেক্ষা করছে অনিলার জন্য।সে বিরবির করে বলে,

এই মেয়েটা নিশ্চয়ই আজকেও লেট করে ঘুম থেকে উঠেছে।এটাই মেয়েটার বদ অভ্যাস।হইতো ঘুম থেকে উঠতেই পারে নি।নিশ্চিত কুম্ভকুর্ণের দূরসম্পর্কের বোন হয়।

অনিলা নিশাকে দেখেই বুঝতে পারছে আজকে নিশা ফায়ার হয়ে আছে।এদিকে যে ওরই ল্যাম্পপোস্ট ভাইয়ের জন্য দেরি হলো ঢুকতে সেটা তো দেখবে না।দোষ তো সব তার হবে।

অনিলা কে দেখে নিশা তো যেনো গিলে ফেলবে পারলে।ক্রধান্বিত গলায় বললো,

এত্তো দেরি করে কেউ আসে।নিশ্চয়ই ঘুম থেকে উঠতে আজকেও লেট করছিস তাই না।

আরে আর বলিস না।কাল ঘুমিয়েছিই দেরিতে।তাই লেট হয়েছে।

তাহলে না আসলেই তো পারতিস।নিশা মুখ গোমড়া করে অন্য দিকে ফিরলো।

আরে নিশা রাগ করছিস কেন।আমি তো আরও আগেই এসেছিলাম।পথিমধ্যে তোর ল্যাম্পপোস্ট ভাই ই তো, এটুকু ব’লেই থামলো অনিলা।

নিশা অনিলার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো, ভাইয়া কে কোথায় পেলেই।নিশা আরও কিছু বলতে যাবে তখনই স্যার ক্লাসে আসলো।দুজনেই ক্লাসে মনোযোগ দিলো।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here