আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন ,২৪ (অন্তিম পর্ব)

আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন
২৪ (অন্তিম পর্ব)

অন্তরা কোনো জবাব না দিয়ে ম্লান মুখে চুপচাপ বসে রইল। জিসান চলে গেল হাত ধুতে। অন্তরা পশ্চিমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। একটি টলটলে দীঘি দেখা যাচ্ছে। পাড়ে কয়েকটি হাঁস বসা। তারা বুঝি রোদ পোহাচ্ছে? না-কি সাঁতার কেটে ভীষণ ক্লান্ত, তাই খানিক জিরিয়ে নিচ্ছে? সাদা হাঁসটি নেমে গেল জলে। আরেকটি হাঁস পিছু নিল ওর। দীঘির টলটলে পানি এখন মৃদু মৃদু কাঁপছে। সাদা হাঁস “প্যাকপ্যাক” করে পালাচ্ছে। মাঝখানের বাঁশটাতে আহারের অপেক্ষায় থাকা মাছরাঙাটি বোধহয় বিরক্ত, সে আচমকা উড়াল দিল।
জিসান ফিরে এসে আবার বলল, ‘তুমি তো হাত ধুতেও গেলে না, তুলে খাওয়াবো কি-না কিছু তো বলো?’

অন্তরা চোখ তুলে তাকাল জিসানের মুখে। এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে৷ জিসানের আনন্দের মুহূর্তগুলো বোধহয় সে অযথা নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষটার খুশিতে সারাক্ষণ চোখমুখ ঝলমল করছে। তাকে খেয়ে ফেলতে পারলেই যেন বাঁচে৷ অন্তরা মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আচ্ছা।’

জিসান পাশের চেয়ারটিতে বসে বলল,

— ‘তাহলে পেছনে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরে খাওয়াই?’

— ‘কেউ চলে আসবে না?’

— ‘আসুক, আমার বউকে আমি যা ইচ্ছে করবো মানুষের বাপের কি?’

— ‘আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি।’

— ‘সে তো কাগজ কলমে হয়নি৷ আমাদের দু’টি হৃদয়ের মিল কবে হয়ে গেছে। আসল বিয়ে তো মনের সঙ্গে মনের মিল। বাকি সব সামাজিকতা। সভ্য সমাজের তৈরি নিয়মকানুন।’

— ‘সেগুলো মানতে হয়।’

— ‘আচ্ছা মানবো৷ কিন্তু একটু আদর করে খাইয়ে দিতে পারবো না?’

— ‘আচ্ছা ঠিকাছে।’

জিসান আলগোছে পিঠের দিকে হাত নিয়ে আরেকটু কাছে গেল। ভাত মাখিয়ে খাওয়াতে লাগল। অন্তরার কেমন অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। সে ভাবতে পারেনি পুরুষ মানুষ এতো ছেলেমানুষী করতে পারে। ধারণা ছিল এগুলো মেয়েদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ পুরুষদের এসবে মানায় না। তাদের চেহারায় কাঠিন্য ভাব সেঁটে থাকবে৷ ছোটখাটো ব্যাপারে উদাসীন হবে। আবার মনে হলো জিসানও বোধহয় কিছুদিন পর পাল্টে যাবে। প্রথম প্রথম হয়তো সকল পুরুষেরই প্রেম-ভালোবাসা একটু বেশি থাকে। ভাবতে ভাবতে অন্তরা আচমকা বিষম খেল৷ জিসান তাড়াতাড়ি গ্লাসে পানি ঢেলে হাতে দেয়। অন্তরা এক চুমুক খেল।
— ‘ঠিক আছো তো?’

— ‘হ্যাঁ।’

— ‘এবার আমার দিকে তাকাও তো। কি এতো ভাবছো তুমি?’

— ‘কিছু না।’

— ‘মিথ্যে বলবা না আমার সঙ্গে। মাথার তার ছিঁড়া আমার এক লেখক বন্ধু আছে বলেছিলাম না? সে ক’দিন আগে ফেইসবুকে পোস্ট দিছে দেখলাম, ‘কিছু কিছু সম্পর্ক থাকতে হয় খোলসহীন, ভানহীন কিংবা খোলা বইয়ের মতো। কি ভেবেছিলে বলে ফেল। সমস্যা নাই। আমরা খোলা বই।’

অন্তরা আমতা-আমতা করে বলল, –‘আপনাকে দেখে মনে হয় না ভাত মাখিয়ে খাওয়াবেন। এতো আদর করবেন। মানে আমি বুঝিয়ে বলতে পারছি না। ওইরকম বাচ্চামু করবে বুঝা যায় না।’

জিসান আরেক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে বলল, ‘তোমার মন খারাপ। তাই একটা মজার গল্প বলি। আমাদের এক বন্ধু ছিল খুবই দুষ্ট। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। যৌন বিষয়ে নতুন শিখছি সব। এই বিষয়ে কথা বলতে আমাদের অসীম আগ্রহ। তো দুষ্ট বন্ধুটা মাঝে মাঝে বইয়ের কবি-সাহিত্যিকদের ছবি দেখিয়ে কিংবা কোনো বড় ইসলামী বক্তা, পীর ফকিরদের নাম ধরে বলতো আচ্ছা এরা কি বউয়ের সঙ্গে ওসব করে? কত ভদ্রলোক লাগে দেখতে এরা করবে বলে মনে হয় না। আমরা সবাই হু হু করে হেঁসে উঠতাম। আসলে আমরা তখন চেহারার সঙ্গে ঠিক মেলাতে পারতাম না। আমাদের ওদিকে একজন পীর সাহেব ছিলেন। সব সময় চোখবুঁজে থাকতেন। সাদা দাড়ি, সুন্দর চেহারা। দেখলেই মনে হয় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। বন্ধুটা কসম করে বলতো দোস্ত এই লোকটা বউয়ের সঙ্গে ওসব লজ্জার কাজ করতেই পারে না৷ আমরা সবাই হু হু করে হাসতাম। একটা গোপন আনন্দ। তবে সত্যি আমরা চেহার সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্বাস করতে পারতাম না৷ কিন্তু খবর নিয়ে জানলাম উনার সাতটা বউ আছে। হা হা হা।’

অন্তরার হাসি পেলেও হাসলো না। জিসান এতো বাজে একটা গল্প তাকে শুনাবে ভাবতেও পারেনি। আবার বলতে শুরু করলো,
— ‘আসলে সব পুরুষ মানুষই ব্যক্তিত্বের, কাঠিন্যের, গাম্ভীর্যের আড়ালে ভেতরে ভেতরে অনেক রোমান্টিক। সবার প্রকাশ ভঙ্গি হয়তো আলাদা। তবে নারীর কাছে গেলে সব কাঠিন্য ভাব খসে পড়ে মোমের মতন গলে যায়৷ কারণ প্রকৃতি চায় মানব জাতির বংশ বিস্তার হোক।’

— ‘আপনি এতো কথা বলেন কেন? আমি আর খাব না। এখন নিজের খাবারটা তাড়াতাড়ি খেয়ে শেষ করুন। সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’

— ‘সে তো খেতেই হবে ম্যাডাম। আমাকে তো আর কেউ তুলে খাওয়াবে না।’

— ‘খাওয়ালে বাসায় খাওয়াবো, রেস্টুরেন্টে না।’

— ‘আমার তো কিছুই চোখে লাগছে না। সব জায়গাকেই আজ রোমান্টিক পরিবেশ মনে হচ্ছে। এই যে দেখো। বাসের টিকেট এখনও কাটিনি। শান্তিমতো গল্পগুজব করে খাচ্ছি। এসব মুহূর্তের পর মরে গেলেও দুঃখ থাকে না। দুনিয়া গোল্লায় যাক।’

— ‘কি সব কথা বলেন। আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।’

— ‘তোমারও মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে অন্তরা। একবার ‘আপনি’ আরেকবার ‘তুমি’ বলছো।’

— ‘একবারই মুখ ফসকে তুমি বলেছি। আর সব সময় আপনি বলি।’

— ‘দোয়া করি সারাজীবন এভাবে মুখ ফসকাতে থাকুক।’

অন্তরা ফিক করে হেঁসে বলল, ‘এবার খান তো।’

— ‘ভাত খেতে গেলে তো তোমার দিকে মনযোগ দিতে পারবো না এটাই সমস্যা।’ কথাটি বলে একটু তাড়াতাড়ি খেতে লাগল জিসান। অন্তরা বুকে হাত বেঁধে খাওয়ার দৃশ্য দেখছে আর ভাবছে, কি আশ্চর্য, আল্লাহ পাক সকল নারীর জন্যেই একজন ব্যক্তিগত পুরুষ দিয়েছেন। বাংলা রিডিং পড়া শেখার পর একদিন অর্থ সহ আর-রাহমান সূরা পড়েছিল৷ কারণ “ফাবি আইয়্যি আ-লা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান” পড়তে তার সব সময় ভালো লাগে।
অজিফায় এর অর্থ দেখেছে, “অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?”
এই মুহূর্তে অন্তরার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া তার সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে জিসান।

বাস চলতে শুরু করেছে মৃদু কেঁপে কেঁপে। অন্তরা মুগ্ধ হয়ে দেখছে রাতের শহর। কৃত্রিম আলো। কি সুন্দর পৃথিবী। এগুলো সে কখনও দেখেছে বলে মনে করতে পারে না। হালকা শীত পড়েছে। জিসান বাসে উঠার আগে বড় একটা চাদর কিনেছে। দু’জন গায়ে জড়িয়ে বসেছে মাঝখানের সীটে। রাত বাড়ছে। বাসের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকজন চোখবুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। জিসানের চোখে ঘুম নেই। ক্লান্তি নেই। তার পাশে আস্ত একটা নারী। ভালোবাসার মানুষ। অন্তরা চাদরের ওম পেয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরে এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে৷ অন্তরার মুখে হাত দিয়ে আদর করছে। গালে হাত রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে অন্তরার চোখের নিচে আলতো ঘষছে। চুল নাড়াচাড়া করছে। রাস্তার পাশের বাতিতে বাসে সর্বক্ষণই আবছা আলো লেগে আছে। সেই ধার করা আবছা আলোয় অন্তরার মুখের দিকে নেশার মতন তাকিয়ে আছে। মোবাইল অফ হয়ে গেছে করিমগঞ্জ থাকতেই। অন্তরার মোবাইল অবশ্য ব্যাগে আছে। মা’কে একবার ফোন করে বলবে কালই সে বিয়ে করতে চায়। আত্মীয়-স্বজন আর অনুষ্ঠানের ঝামেলা কিছুই হবে না৷ পারলে পড়ে করা যাবে। তার আর ভালো লাগছে না। অন্তরা তো আর বিয়ে ছাড়া নিজেকে মন থেকে পুরোপুরি তার কাছে সপে দেবে না। সুতরাং কালই বিয়ে করবে। অবশ্য মা-বাবা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবেন। এতোদিন বলে এসেছে কোনোদিন বিয়ে করবে না। এখন বিয়ের জন্য পাগল। তবুও তার কিছু করার নেই। যে যাই বলুক। সে এখন অন্য রকম লোক। অন্তরার মুখের দিকে আবার তাকাল। বাচ্চাদের মতো ঘুমোচ্ছে৷ আলতো করে চোখের পাতায় একটা চুমু খেল।

ভোর পাঁচটার দিকেই তারা ঢাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। অন্তরা বড় বড় চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে। এই ভোরেও কত মানুষ। কত গাড়ি। উঁচু উঁচু দালান। সাইরেন। টুংটাং। জিসান অন্তরার মোবাইল দিয়ে মা’কে ফোন দিল। রিং হচ্ছে।
— ‘হ্যালো, কিরে এতো ভোরে তুই ফোন দিলি।’

— ‘তুমি ঘুমে ছিলে না-কি মা?’

— ‘না, তোমরা বাপ-ছেলের মতো আমি আল্লাহ-খোদা ছেড়ে দেইনি৷ নামাজ পড়তে উঠলাম।’

— ‘মা এরকম কথা বলবা না তো আজ। এখন থেকে আমি পুরো অন্য জিসান হয়ে যাব। তোমার কথামতো চলবো৷ কারণ তোমার মতোই বিশ্বাসী এক মেয়েকে নিয়ে আসছি। এখন তোমরা দু’জন মিলে আমাকে শাসন করবে। বাবা একা। তাড়াতাড়ি গাড়ি পাঠাও।’

— ‘কি বললি? কাকে নিয়ে এসেছিস?’

— ‘মা গাড়ি পাঠাও আগে বাস স্টেশনে। এলেই দেখতে পাবে।’

— ‘আচ্ছা পাঠাচ্ছি।’

বাস স্টেশনে এসে থেমেছে। অন্তরার জন্য কিছু কাপড়-চোপড় কেনা-কাটার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শপিংমল এখনও বন্ধ। অন্তরা ঘন ঘন হাই তুলছে৷ তার এখনও ঘুম পাচ্ছে। মিনিট তিশেক বাদেই তাদের ড্রাইভার এসে কল দিল। ভোরে জ্যামজট না থাকায় তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। অন্তরাকে নিয়ে এসে গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভার অবাক চোখে তাকাচ্ছে৷ পোশাক-আশাক দেখে সে কোনোভাবে কিছু মেলাতে পারছে না। অন্তরা বিব্রতবোধ করছে। নিজেকে কেমন তুচ্ছ লাগছে৷ কিন্তু জিসান এসব বিষয়ে আজ উদাসীন৷ সে গাড়িতে উঠেই জড়িয়ে ধরে অন্তরার মাথা তার দিকে হেলে দিল৷ খানিক বাদে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল অন্তরা। গাড়ি গেইটের সামনে এসে থেমেছে। জিসান আলগোছে অন্তরাকে পাঁজাকোলা করে কোলে নিয়ে নামে। ফাতেমা বেগম গেইটে দাঁড়িয়ে আছেন। জিসান না দেখার ভান করে নিজের রুমে চলে গেল। ছেলের করুণ অবস্থা দেখে তিনি মিটমিট করে হাসছেন। জিসান আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দিল অন্তরাকে। বাইরে বের হতেই ফাতেমা বেগম তেড়ে গেলেন।
— ‘তুই এটা কি করলি? কোত্থেকে একটা মেয়ে নিয়ে এসে নিজের রুমে ঘুম পারাচ্ছিস?’

— ‘মা ওকে আমি আজই বিয়ে করবো। প্লিজ তুমি সব ব্যবস্থা করো। শুধু বিয়ে আর কোনো ঝামেলা না৷ কেউকে বলাবলিরও দরকার নাই। পারলে বাবাকেও না বলো। শুধু বিয়েটা। কথা বলেই সে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল।’

ফাতেমা বেগম তাড়াতাড়ি ছেলের হাত ধরে আঁটকে বললেন, ‘তুই এদিকে যাচ্ছিস কেন?’

— ‘সারা রাত ঘুমাইনি৷ ঘুমোতে হবে।’

— ‘অন্য রুমে যা। একটা যুবতী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ছাড়া ছি ছি।’

— ‘মা, তোমার পায়ে পড়ি। তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করো। জানো আমার জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না এতোদিন। আগুনে পুড়ে মরা থেকেও বেঁচে ফিরেছি। এখন তোমার কাছেও যদি শান্তি না পাই, কোথায় যাব বলো মা?’

— ‘এখানে অশান্তির কি? অন্য রুমে ঘুমাবি অশান্তির কি?’

— ‘মা ওকে ছাড়া কোথাও যেতে ভালো লাগছে না, কী করবো এখন?’
কথাটি বলেই সে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো।

— ‘তোর দেখছি লজ্জা-শরম একেবারে চলে গেছে জিসান। ছি ছি।’

জিসান এসব না শুনেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ফাতেমা বেগম জিভে কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। জিসান আবার দরজা খুলে বলল, ‘মা, এখন থেকে আমি তোমার কথা মতো চলবো। প্লিজ তাড়াতাড়ি কাজী ডাকো।’

— ‘তাহলে অন্য রুমে যা। এই কথাটা শোন।’

জিসান নিজের কান ধরে মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করে দরজা বন্ধ আঁটকে দিল। ফাতেমা বেগম মাথায় হাত দিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়লেন। পৃথিবীর কোনো ছেলে মায়ের সামনে এমন নির্লজ্জ কাণ্ড করতে পারে জানা ছিল না। কেয়ামত অতি সন্নিকটে। আল্লাহ পাক ক্ষমা করুক। তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে৷

জিসান পা ভেঙে মেঝেতে বসে অন্তরার মাথায় হাত রেখে কপালে চুমু খেল। সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেলল অন্তরা। বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কোথায়?’

— ‘বাসায় ফিরে এসেছি। তুমি এখন আমার রুমে আছো।’

অন্তরা আঁতকে উঠে বলল,
— ‘বাড়িতে আর কেউ নাই?’

— ‘মা, আছেন।’

— ‘আশ্চর্য, মা আছেন আর তুমি দরজা বন্ধ করে এই রুমে চলে এলে?’

— ‘সমস্যা নেই।’

— ‘কি সমস্যা নাই? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে দরজা খোলে দাও।’

জিসান অবাক হয়ে তাকাল। দরজা খুলে দিল।
— ‘মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দাও। উনি যে রুমে দেবেন সেখানে থাকবো বিয়ের আগ পর্যন্ত।’

জিসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মা’কে খুঁজতে গেল। তিনি ড্রয়িং রুমে বসে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। জিসানকে দেখে ফোনে বললেন, ‘আচ্ছা ব্যবস্থা করো, পরে কথা বলছি।’
তারপর ফোন রেখে জিসানকে বললেন, ‘কি হলো?’

— ‘কি আর হবে। জেগে ওঠায় আমাকে রুম থেকে বের করে দিছে। বিয়ের আগে এক রুমে থাকবে না।’

ফাতেমা বেগম হা-হা-হা করে হেঁসে বললেন, -‘এবার বাপ বেটার নাস্তিকি ছুটিয়ে ফেলবো বউ শ্বাশুড়ি মিলে।’

তিনি জিসানের রুমের দিকে ছুটে গেলেন। অন্তরা তাড়াতাড়ি উঠে পা ছুঁয়ে সালাম করলো।
— ‘আসো মা, তুমি আমার সঙ্গে আসো।’

ছেলেকে বললেন,
— ‘এই নাস্তিকের বাচ্চা নাস্তিক, একলা ঘুমা গিয়ে, যা।’

অন্তরা কিছুই বুঝতে পারলো না। জিসান অসহায় বনী আদমের মতো নিজের রুমে চলে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দিল। খানিক বাদেই চোখের পাতা বুঁজে এসে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

ফাতেমা বেগম সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছেন অন্তরাকে। পোশাক-আশাক দেখে বুঝতেই পারছেন সাধারণ কোনো মেয়ে। তার এই উগ্র ছেলেটি কীভাবে প্রেমে পড়েছে ঠিক মেলাতে পারছেন না। মেয়ে অবশ্য মায়াবতী। এটাই তো একমাত্র কারণ হতে পারে না।
— ‘তোমার নাম জানি কি বললে মা?’

— ‘অন্তরা।’

— ‘তোমার সেলোয়ারে কাদা লাগলো কীভাবে?’

— ‘আসলে আমি হাওর দিয়ে হেঁটেছি তো। তখন লেগেছিল।’

— ‘জিসান তো একটা গ্রামে ছিল। সেখানেই তোমার বাড়ি? পালিয়ে এসেছো মনে হচ্ছে?’

অন্তরা মাথা নীচু করে বলল, ‘আমার এছাড়া উপায় ছিল না মা।’

— ‘উপায় ছিল না মানে?’

অন্তরা সবকিছু খুলে বলল। এবার ছেলের প্রতিও ভালো লাগা কাজ করছে ফাতেমা বেগমের।
— ‘মা, আমি গোসল করবো। নামাজ পড়ছি না কাল থেকে।’

— ‘বাহ, জিসান কি জানে তুমি নামাজ পড়ো?’

— ‘হ্যাঁ।’

— ‘বলো কি ইন্টারেসটিং তো। বুঝতে পারছি অবসরে সবকিছু শুনতে হবে তোমার কাছ থেকে। এখন গোসল করো। শাড়ি দিচ্ছি।’

ফাতেমা বেগমের সঙ্গে অন্তরার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল৷ পুরো মা-মেয়ের সম্পর্ক। উনারও কোনো মেয়ে নেই৷ স্বামী আর ছেলের সঙ্গে বিশ্বাসের মিল নেই। যেন সবাই থাকার পরও একাকী নিঃসঙ্গ ছিলেন। এবার সঙ্গী পেলেন।

সন্ধ্যার আগেই জিসানের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।
শুধু ফাতেমা বেগম স্বামী ইকবালকে ফোন করে বাড়িয়ে বললেন, ‘আরে জানো না-কি? আমার জিসান তো এখন নামাজ পড়ে৷ আর একটা নামাজি মেয়েও নিয়ে এসেছে৷ তাদেরকে আজই বিয়ে দেবো । তুমি আসবে না-কি? না এলে অবশ্য সমস্যা নাই।’

তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ছেলেরা পড়ালেখা করে মানুষ হয়। আর তোমার কারণে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেল। আজকাল সে নামাজ ধরেছে। এই মূর্খের বিয়েতে আমি নাই।’

— ‘হা-হা-হা কেউ বলছে না আসতে।’

শেষমেশ ইকবাল সাহেব এলেন। গম্ভীরমুখে বসে রইলেন। বিয়ে পড়ানো হলো। জিসান বাপ-মায়ের রাজনীতিতে নেই। সে এখন প্রেমিক।

এশার আজান এখনও পড়েনি। জিসান আর অন্তরা বাসর ঘরে বসে আছে। অন্তরার হঠাৎ মনে পড়ায় প্রশ্ন করল, ‘মা তোমাকে আজকে একবার নাস্তিকের বাচ্চা গালি দিলেন কেন? নাস্তিক কি?’

জিসান কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। সেও কি বাবার মতো প্রথমে গোপন করবে বিষয়টি? হঠাৎ মনে হলো পরে ভাবা যাবে।

— ‘হ্যাঁ বলবো পরে একবার৷ পিয়াস আর সিক্তাকে আমাদের বিয়ের কথা জানানো দরকার। এখনও কথা হয়নি।’

— ‘হ্যাঁ তাইতো। কল দাও।’

— ‘কিন্তু আমি দেখো পুরাই পাগল হয়ে গেছি। মোবাইল ব্যাগে যেভাবে ছিল সেরকম আছে। করিমগঞ্জ থাকতেই অফ হয়ে গিয়েছিল। আসার পর স্মরণ করে আর চার্জে লাগাইনি। পিয়াসের নাম্বারও মুখস্থ নাই৷’

— ‘আসলেই তুমি একটা পাগল।’

— ‘তুমিও পাগল। এখন আবার তুমি করে বলছো আমাকে।’

অন্তরা ফিক করে হেঁসে বলল,
– ‘যাও তো মোবাইল চার্জে লাগাও।

জিসান মোবাইল চার্জে লাগালো। ফাতেমা বেগম অন্তরাকে ডেকে বাইরে নিলেন। মিনিট বিশেক পর মোবাইল অন হতেই কল দিল পিয়াসকে। রিং হচ্ছে। কিন্তু জিসানকে অবাক করে ফোন ধরেই পিয়াস কান্নাকাটি জুড়ে দিল।

— ‘স্যার, আপনাকে কত কল দিয়েছি। ফোন অফ দেখায়। এদিকে সিক্তাকে খুঁজে পাচ্ছি না স্যার। সিক্তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

— ‘বলো কি! এখনও খুঁজে পাচ্ছ না? থানায় ডায়েরি করেছো?’

— ‘হ্যাঁ, করেছি। এজাজ চাচা আর উকিলের পরামর্শে মোবাইল রেকর্ড নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম।’

— ‘তারপর কি হলো?’

— ‘চেয়ারম্যান আর আখলাছুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তল্লাশি করে সিক্তাকে কোথাও পায়নি।’

জিসানের পুরো শরীর কাঁপছে। সিক্তার আবার কিছু হয়ে গেল না তো!

পিয়াস আবার বলল
— ‘স্যার রাখছি এখন। খোঁজাখুঁজিতে আছি। দোয়া করবেন।’

— ‘পিয়াস আমাকে আপডেট জানাবে।’

ফোন কেটে গেল। জিসান মুখ ঢেকে পালঙ্কে বসে আছে৷ তার পুরো শরীর কাঁপছে। সিক্তার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে। এশার আজান শোনা যাচ্ছে। অন্তরা রুমে এলো। বাথরুমে গিয়ে অযু করে নামাজে দাঁড়ানোর আগে বলল, ‘ফোন করেছিলে?’

— ‘হ্যাঁ।’

— ‘কিন্তু তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’

— ‘কিছু না, তুমি নামাজ পড়ো।’

অন্তরা নামাজে দাঁড়াল। পিয়াস একটা সিগারেট বের করে ঘন ঘন টানছে। তার আচমকা মনে হলো। এই বোকাসোকা মানুষগুলোই ভালো, বিপদে-আপদে একজনের কাছে প্রার্থনা করতে পারে। ভরসা করতে পারে। তাদের জগত-সংসারের কোনো কিছু নিয়ে আলাদা ভাবনা নেই। প্রশ্ন নেই। সংশয় নেই। সবকিছুতেই অগাধ বিশ্বাস।

অন্তরা নামাজ শেষ করে জিসানের পাশে এসে বলল, ‘নামাজ পড়ো না কেন?’

— ‘পড়বো, কাল থেকে পড়বো।’

পুরো রাত অন্তরা জিসানের কাছ থেকে কোনো সাড়া পেল না। আট-দশটা রাতের মতোই কেটে যাচ্ছে বাসর রাত। বারবার জিজ্ঞেস করেছে, ‘তোমার কি মন খারাপ জিসান?’

প্রতিবারই উত্তর এসেছে, ‘না। তুমি ঘুমাও।’

খানিক পর পর বিছানা থেকে উঠে বেলকনি আর রুমে পায়চারী করছে। ঘন ঘন সিগারেট টানছে। অন্তরা আবার জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে বলো তো? এতো অস্থির লাগছে কেন?’

জিসান ধমক দিল, – ‘বললাম না ঘুমিয়ে যেতে।’

অন্তরা পাশ ফিরে চুপচাপ ঘুমিয়ে গেল।
জিসানের ঘুম পেল রাত তিনটায়। আবার ফজরের আজানে জেগে গেল। অন্তরা এখনও ঘুমোচ্ছে৷ হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। সিক্তার জন্য দুশ্চিন্তায় কাল ধমক দিয়েছে। মাথায় হাত রাখলো অন্তরার। আস্তে করে ডাক দিল।
— ‘অন্তরা।’
এক ডাকেই চোখ মেলে তাকাল। আবার চোখবুঁজে নিল।
— ‘ফজরের আজান হয়ে গেছে, নামাজ পড়বে না?’
অন্তরা কোনো কথা না বলে হাই তুলে উঠে বসলো। জিসানের দিকে না তাকিয়ে অযু করতে গেল। মুচকি হাসল জিসান। মলিন মুখের মুচকি হাসি। অন্তরা রেগে আছে বুঝতে পারছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে জায়নামাজে দাঁড়ানোর আগেই জিসান বলল, ‘আমাকে কেউ নামাজের কথা বলছে না যে।’
অন্তরা মাথা ঘুরে তাকাল। তারপর জিসানের পাশে বসে বলল, ‘জিসান রাতে কি হয়েছিল বলো। আজ আমাদের বিশেষ একটা রাত ছিল।’

— ‘বললে তোমার মন খারাপ হবে তাই বলিনি।’

— ‘কালই তুমি বলেছিল আমরা একটা খোলা বই।’

— ‘ওইটা তার ছিঁড়া বন্ধুর কথা।’

— ‘আচ্ছা যাই হোক। যেকোনো কারণে তুমি দুশ্চিন্তা করছিলে। এখন চিন্তা দূর হলো কীভাবে?’

— ‘মানুষ বেশিক্ষণ দুশ্চিন্তায় বা শোকাতুর থাকতে পারে না। কেউ মারা গেলে আমরা কান্নাকাটি করি। কিন্তু সময় ঠিকিই আবার আমাদেরকে আগের মতো হাসায়-কাঁদায়।

— ‘তোমার মাথায় সমস্যা আছে। নামাজ পড়বে অযু করে আসো। মনে শান্তি আসবে। তোমাকে স্বাভাবিক লাগছে না।’

— ‘আমারও আজকাল ইচ্ছা করে নামাজ পড়তে। কিন্তু পারি না।’

— ‘কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো?’

জিসান খানিক্ষণ কি ভেবে অন্তরার হাত ধরে বলল, ‘অন্তরা আমি তওবা করে নতুন করে ইমান আনতে হবে।’

— ‘মানে?’

— ‘মা আমাকে নাস্তিক বলেছিলেন না? আসলে আমি নাস্তিক না। আমি কি সেটা মাঝে মাঝে নিজেই সংসজ্ঞায়িত করতে পারি না।’

— ‘আশ্চর্য এসব কি বলো। কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।’

— ‘হা হা হা। মজা করেছি। যাও নামাজ পড়ো। আমিও আসছি অযু করে।’

জিসান অযু করে এসে নামাজে দাঁড়াল। পৃথিবীতে ৪,৩০০ ধর্ম আছে। সব ধর্ম সম্পর্কে তার আবছা ধারণাও নেই। শুরুতে বৃহৎ ধর্মগুলো সম্পর্কে বাবার কাছ থেকেই জেনেছে। বিশ্বাস হারিয়েছে তখন থেকেই।
তবে পুরোপুরি নাস্তিকও হতে পারেনি। মাঝেমাঝে মনে হয় এই রহস্যময় পৃথিবী অবশ্যই কারো সৃষ্টি। বিজ্ঞানের থিউরি-ফিউরি কিছু না। কেউ একজন আছে। সে আল্লাহ, ভগবান, গড কিংবা যে নামই হোক। কেউ একজন আছে। এই ধরণের দোদুল্যমান লোকদের নাস্তিক বা আস্তিক বলা যায় না৷ তাদের অবস্থাকে বোধহয় ইংরেজিতে Skepticism বলা হয়। বাংলায় যারা সংশয়বাদী৷ ধর্ম নিয়ে এমন সংশয়ের প্রধান কারণ অবশ্য তার মা-বাবা। এখানেই জিসানের সঙ্গে অন্তরার জীবনের গল্পের খানিকটা মিল আছে। জিসানের কাছে প্রায়ই মনে হয় এমন অসংখ্য ছোট ছোট রহস্য আছে, যা উপর থেকে কেউ খেলার ছলে ঘটায়৷ সে বোধহয় বড়ই রহস্যপ্রিয়। না হলে অন্তরার সঙ্গে তার পরিচয় হবে কেন?
জিসানের মা একজন সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারের মেয়ে। বাবাও মুসলিম পরিবারের ছেলে ছিলেন। নামের শেষে এখনও আহমদ সেঁটে আছে। তবুও একটা সময় নাস্তিক হয়ে গেছেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে সবচেয়ে বেশি শুনেছে ধর্ম বিদ্বেষী আলাপ। ধর্ম নিয়ে হাসি-তামাশা৷ প্রতিটা ধর্মের অসংখ্য ভুল আর মিথ্যে প্রমাণ করার অসংখ্য থিউরি৷ সৃষ্টা যে নেই সেটা নিয়ে বিশাল গবেষণা। সব সময়ই মায়ের থেকে বেশি বাবার কথা সে গ্রহণ করেছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম, স্রষ্টা এরকম নানান বিষয় নিয়ে নিজের ভেতরের অসংখ্য জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে, সবকিছু ছড়িয়ে দিয়েছিল ব্লগে ব্লগে। প্রতিটি ধর্মের ত্রুটি বের করে প্রচার করেছে। সংঘর্ষ আর অস্থিরতা শুরু হয়েছিল ইসলাম নিয়ে মুক্তভাবে লেখালেখির কারণে। বহু আলেম ওয়াজ মাহফিলে মুরতাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল। বাংলাদেশে তখন ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হাতে অহরহ বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, ব্লগার, নাস্তিক হত্যা হচ্ছে। জিসানকে তার বাবা বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে যায়নি। বন্ধুর পরামর্শ এবং সহযোগিতায় গিয়েছিল ইলাশপুর গ্রামে। সেখানে গিয়ে তার ভেতর থেকে ধীরে ধীরে ধর্মীয় বিদ্ধেষ যেন কীভাবে চলে গেল। তার মা অবশ্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন৷ বেচারি বিয়ের আগে জানতেনই না স্বামী ইসলাম ধর্ম থেকে বিশ্বাস হারিয়ে বসে আছে। বিয়ের পরেও যে পুরোপুরি জেনেছেন তাও না। বুড়ো কালে স্বামী প্রকাশ্যে এসব ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে৷ তারপর থেকেই স্বামী সঙ্গ ত্যাগ করে একা থাকেন। নানান ঝামেলা হয় সংসারে। জিসান এখন প্রায়ই ভয়ে থাকে অন্তরার সঙ্গেও তার একই ঝামেলা হয়ে যায় কি-না।

পরিশিষ্টঃ সায়মা বাড়ির পেছনের কবরস্থানে কিসের গন্ধ পেয়ে উঁকি দিতেই দেখে একটি মেয়ের নিথর দেহ। লোকজন ডেকে দেখালো। থানা থেকে পুলিশ এলো। আইনি প্রক্রিয়ায় সবকিছু বেরিয়ে এসেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলা টিপে মেরেছ। তারপর সাময়িক সময়ের জন্য কবরে ফেলে আসে লাশ। পরে কোথাও সরিয়ে ফেলার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তার আর সময় পায়নি। অগোচরে আগের খুনের মোবাইল রেকর্ড পুলিশের কাছে চলে যাওয়ায় গ্রেফতার হয়ে যায়। স্ব-সম্মানে মুক্তি পান ময়নুল সাহেব।

জিসান অন্তরার সঙ্গে ভালো মানুষের মতো ধর্মীয় সবকিছুতে যোগ দিয়ে চোখে ধূলো দিলেও, ফাতেমা বেগমকে পারেনি।
কারণ উনার সঙ্গে ইকবালও এমন করেছিল। ফাতেমা বেগম অন্তরাকে বুঝিয়ে জিসানকে একটু টাইট দিলেন। পরিচিত মাওলানা একজন আনিয়ে তাওবা করিয়ে কলিমা পড়ালেন।
জিসানকে কোনোপ্রকার জোড়াজুড়ি করতে হলো না। তাদের কথামতোই সে সবকিছু আগ্রহ নিয়ে করতে দেখা গেল৷ এখন নিয়মিত না পারলেও নামাজ-কালাম পড়ে। পত্র-পত্রিকায়ও নিউজ হয়েছে ব্লগার নাস্তিক জিসান খান ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। বিয়ে করেছেন এক সাধারণ মুসলিম মেয়েকে।
কিন্তু জিসান মন থেকেই ইসলামে ফিরে এসেছে কি-না তা বুঝা মুশকিল।
তবে প্রতি শুক্রবার ভোরে অন্তরার কোরআন তেলাওয়াত শুনে তার চোখ জলে ভরে যায়৷ কি করুণ সুরে তেলাওয়াত করে। তার অস্তিত্বে যেন নাড়া দিয়ে যায়।

—সমাপ্ত—

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here