আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন,২য় পর্ব,০৩
লেখা: জবরুল ইসলাম
২য় পর্ব
বৃষ্টি থেমে গেছে। কাদায় মাখামাখি রাস্তা।
লঞ্চ থেকে নেমে যাত্রীরা জুতো খুলে প্যান্ট গুটাচ্ছে। এখান থেকে মাইল দুয়েক উত্তরে ইলাশপুর গ্রাম।
বক্কর আলী বলল,
–‘মাস্টার সাব রাস্তায় কাদা আছে প্যান্ট ভাঁজ করে জুতা হাতে লউক্কা।’
জিসান আমতা-আমতা করে জুতো হাতে নেয়। সাবধানে বক্কর আলীর পেছনে হাঁটতে থাকে। পা বারংবার পিছলে যাচ্ছে তার। অথচ ব্যবসায়ীরা কাঁধে মাল নিয়ে রীতিমতো দৌড়াচ্ছে। মহিলারা কোলে বাচ্চা নিয়ে পা টিপে টিপে হাঁটছে। সামনে একটা বাচ্চা পা পিছলে পড়ায় কান্নাকাটি করে হুলস্থুল কারবার। বাবা এক হাতে বাজার-সাদাই আর অন্য হাতে ছেলেকে টেনে কোলে তুলে নিলেন।
সবকিছু দেখে জিসান জিজ্ঞেস করল,
— ‘বক্কর সাহেব, আমি ভেবে পাচ্ছি না এই অঞ্চলের প্রেগন্যান্ট মহিলা কিংবা হঠাৎ অসুস্থ হওয়া রুগীদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে কীভাবে যায়? এলাকায় কি সেরকম কোনো ডাক্তার-ফাক্তার আছে?’
– ‘হা-হা-হা কিতা কইন মাস্টার সাব। আমরার পীর সাবের ছেলে আছইন না। অবশ্য আগের পীর ছিলা বেশি গরম। ফুঁ দিলে সব রোগ শেফা। আর পোয়াতি মহিলাদের লাগি ধইন্যা বেটি আছে তারা কাম খালাস করিলায়।’
– ‘বলেন কি? ডাক্তারি ছাড়া সবকিছু পীর সাহেব দ্বারা হয়ে যায়?’
– ‘আমরা ছোট থাকতে দেখতাম কেউ ডাক্তারে যায় না। ডাক্তার বিশ্বাসই করতো না। তখন কেউ কেউ পীর মানে না তারা পালকী কইরা লঞ্চ ঘাটে রোগী নিয়া সিলেটে বড় ডাক্তার দেখায়।’
জিসান ভেতরে ভেতরে বিস্মিত হয়ে বলল,
–‘মানে পীর সাহেবের কাছে গেলেই রোগ ভালো হয়ে যায়?’
– ‘একজন পীরের গেছে ভালা না অইলে আরেকজনের গেছে যাইন। চাইরোবায়দি সব গ্রামেই আছইন পীর। আল্লাহ পাক চাইলে ভালা অয় না অইলে হাজার পীরের কাছে গেলেও ভালা অয় না।’
– ‘ধরেন কোনো একজন রুগী পীর সাহেবদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই মারা গেল তখন পীরকে কিছু বলে না?’
– ‘কেন বলতো? ডাক্তারে নিলে কিতা সব রুগী ভালা অইযায়নি?’
জিসানের আর কথা চালাতে ভালো লাগছে না৷ খুবই সতর্কভাবে পা ফেলতে হচ্ছে। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ। পথ যেন শেষই হচ্ছে না। সে কি অনন্তকাল ধরে এই পথ ধরে হাঁটছে?
—-
চেয়ারম্যান ইমরাজ উল্লাহ উঠোনের মাথায় খাটে বসে আছেন। একজন চুল-দাঁড়ি কেটে দিচ্ছে। তিনি ডাকলেন
– ‘অন্তরা কই?’
পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি কন্ঠে অন্তরা বলল,
-‘জ্বী চাচাজি কওক্কা।’
– ‘বক্কর আলী গেছে মাস্টার সাবরে আনতে। দোতলার ঘর ঝাড়ু-টারু দিয়া পরিষ্কার কইরা বিছনা করো।’
– ‘আইচ্ছা চাচাজি।’
অন্তরা তাড়াতাড়ি দোতলার রুমটি বসবাস যোগ্য করতে চলে গেল। বছর দুয়েক আগে ছাদে কেবল একটি লাকড়ি ঘর বানানো হয়েছিল। বাকি পুরোটা ছাদ ছিল খালি। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের ইদানীং মনে হচ্ছে মাদ্রাসার একজন শিক্ষক লজিং না দিলে ইজ্জত থাকছে না। তাই বক্করকে দিয়ে লাকড়ি বের করে ঘরটি ঠিকঠাক করা হয়েছে।
ইলাশপুরে একটি প্রাইমারি স্কুল আছে। হাইস্কুল নেই। তিন ঘন্টা হেঁটে করিমগঞ্জে গেলে অবশ্য একটা হাইস্কুল আছে। চেয়ারম্যান সাহেবের একমাত্র মেয়ে সায়মা পড়ে সেই স্কুলের ক্লাস নাইনে। ইংলিশ স্যার লজিং দেওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে সায়মার পড়াশোনার কাজে আসবে।
সায়মা রুম থেকে বের হয়ে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে দেখল ভাত দেয়া হয়নি। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল৷
-‘অন্তরা, এই অন্তরা।’
কোনো জবাব না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখতে পেল অন্তরা মাথা নুইয়ে ঘরদোর ঝাড়ু দিচ্ছে। টানটান মাঝপিঠে দুম করে একটা কিল মেরে বলল,
–‘খানকির ঘরের খানকি তরে কোন সময় কইছি ভাত দিতে?’
অন্তরা কোনো কথা বলতে পারলো না। দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। উল্টো হাতে পিঠ চেপে কিছুক্ষণ মেঝেতে পড়ে রইল।
– ‘অইছে আর ভঙ্গি ধরা লাগতো নায় ভাত দিবায় হাঁটো। তুমি তো জানো আমি পেটবুক সহ্য করতাম পারিনা।’
অন্তরা চুপচাপ উঠে রান্নাঘরে গেল। সায়মার থেকে সে বছর চারেক বড় হবে। তবুও এমন আচরণে কোনোদিন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
সন্ধ্যার পর সায়মা রুমে ঢুকে দেখল অন্তরা কাপড় সেলাই করছে। হাত বাড়িয়ে কাপড় সরিয়ে বলল,
–‘মাথাত বেদনা করের আপা, টিইপা দেও।’
তারপর ফিক করে হেঁসে বলল,
–‘আজকে ইস্কুলো কিতা অইছে জানোনি অন্তরা আপা। একটা ছেলের কথা কইচলাম মনে আছে?’
তখনই বাইরে থেকে বক্কর আলীর ডাক শোনা গেল,
– ‘চেয়ারম্যান চাচা, ও চেয়ারম্যান চাচা।’
গৃহবন্দী অন্তরার বাইরের সবকিছুর প্রতি সীমাহীন আগ্রহ। সে চট করে কোল থেকে সায়মার মাথা সরিয়ে জানালা দিয়ে উঠোনে তাকাল। সৌর বিদ্যুতের বাতির আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেল এক সুদর্শন যুবককে।
প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত তোলা। সাদা ধবধবে পায়ে পাতলা কালো লোম। বক্কর আলী বালতি থেকে পানি ঢেলে দিচ্ছে৷
আচমকা জানালার গ্রিলের সঙ্গে কপাল লাগায় ‘উফ’ করে পেছন ফিরে তাকাল অন্তরা। অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকিয়ে আছে সায়মা৷
– ‘ছিলানের ঘরের ছিলান বাইরে কিতা তর জামাই আইছেনি? হর ইকান থাকি৷’
অন্তরা প্রথমে বুঝতে পারেনি৷ এখন মনে হচ্ছে কপাল যেন ফেটে গেছে।
সায়মা বাইরে তাকিয়ে মাস্টারকে দেখে বলল,
-‘ওমাগো মাস্টার তো পুরাই নায়ক গো আপা।”
তারপর নিজেই অন্তরাকে টেনে বলল,
– ‘দেখো আফা দেখো উফ কি সুন্দর।’
অন্তরা কপাল চেপে ধরেছে। তর্জনীর আগা রক্তে ভেজা। ব্যথা নিয়েই সে তাকাল। ছেলেটি এবার মুখ ধুচ্ছে। ফরসা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। সামনের আধো ভেজা সিল্কি কালো চুল কপালে এসে পড়ছে৷ অন্তরার কেমন যেন লাগল। খুব অচেনা এক অনূভুতি।
পেছন থেকে সায়মা টানছে। অন্তরার যেন চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না। চোখের বড় তৃষ্ণা। তাকিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করছে। বক্কর আলী মাস্টারকে নিয়ে উপরে গেল। ঠিক তখনই মনে হলো প্রচন্ড জলের পিপাসা পেয়েছে। অন্তরা জানালার কাছ থেকে সরে ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে জল খেতে গেল। কপালে ভীষণ ব্যথা। আয়নার সামনে গিয়ে দেখতে হবে কতটুকু ফেটেছে।
এদিকে টানাটানি করে জানালা থেকে সরাতে না পারায় রাগে সায়মার চোখ থেকে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরোচ্ছে। ধেয়ে গেল অন্তরাকে মারতে।
–চলবে—
লেখা: জবরুল ইসলাম
আরাধনায় বিহঙ্গ জীবন
.
৩য় পর্ব
.
ছাদের চারপাশে আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য সুপারি আর নারিকেল গাছ। জিসানের মনে হচ্ছে সে এখন দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলের মধ্যখানে। চিলেকোঠার পাশে ছোট্ট একটি পাকা ঘর। উপরে টিনের চাল। সৌর বিদ্যুতের বাতি আছে। ইলাশ পুর গ্রামটিতে এখনও কারেন্ট আসেনি। কেবল অতি ধনবান দু-চারটি বাড়িতে সৌর বিদ্যুত এসেছে।
– ‘মাস্টার সাব হাগা-মুতার লাগি ফুস্কোন্ডির পারও টয়লেট আছে।’
বক্কর আলীর পরিচয় ইতোমধ্যে জিসানের বোধগম্য হয়েছে।
সে ভুরু কুঁচকে বলল,
-‘ফুস্কোন্ডি মানে?’
– ‘ফুকুর মাস্টার সাব। ওউ ফুকুরো গোসলও খরবা আফনে।’
– ‘আচ্ছা ঠিকাছে। তোমাদের গ্রামের নামটা কি যেন?’
– ‘ইলাশপুর।’
– ‘তুমি কি শুদ্ধ করে কথা বলতে পার?
– ‘তোরা তোরা ফারি।’
– ‘তাহলে এই ‘তোরা তোরা’ শুদ্ধ করেই আমার সঙ্গে কথা বলবেন। ঠিকাছে বক্কর ভাই?’
– ‘আইচ্ছা এক্কন থাইক্কা সেষ্টা করিব।’
বক্কর আলীর শুদ্ধ কথার ধরন দেখে জিসানের হাসি পাচ্ছিল। তবুও মুখে সেটা প্রকাশ পেতে দিল না।
পরের এক সপ্তাহ নতুন জায়গায় বেশ ভালোভাবেই কেটে গেল। দশটা থেকে সাড়ে তিনটা অবধি মাদ্রাসায় থাকে। বিকেলে বক্কর আলীর সঙ্গে এলাকা ঘুরে দেখে।
সন্ধ্যায় পড়তে আসে সায়মা। মেয়েটিকে পড়াতে তার ভালোই লাগে। তবে এখানকার মানুষজনের কথাবার্তা বুঝতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। গতকাল বক্কর আলীর মতো সায়মাকেও বলে দিয়েছে তার সঙ্গে শুদ্ধ করে কথা বলার চেষ্টা করতে। দিনরাত এখন সেই চেষ্টাই অব্যাহত রাখে সায়মা। বক্কর আলী পুরোপুরি আয়ত্ত্ব করতে না পারলেও সায়মা ভালোই আয়ত্ত্ব করেছে। বাড়ির সবার সঙ্গে এখন শুদ্ধ করে কথা বলে সে। সায়মার মেজাজও আজকাল বেশ ফুরফুরে থাকে।
তবে সামান্য খারাপ হয় সন্ধ্যা বেলায়। এক ঘন্টা আগে থেকেই অন্তরার জীবন অতিষ্ঠ করে ছাড়ে সে। নানান ড্রেস পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অতি জরুরী ভঙ্গিতে ডাকবে,
– ‘অন্তরা আফা এদিকে আসো ত এখটু।’
অন্তরা রান্নাঘরে রাজ্যের কাজে ব্যস্ত থাকে। তবুও কাজ ফেলে সামনে এসে দাঁড়ায়।
– ‘আপা দেখতো কেমন লাগছে আমায়।’
অন্তরা খানিক তাকিয়ে বলে,
-‘ভালা অউ লাগের।’
– ‘সত্য বলিছো? না আরখটা ড্রেস ফিন্তাম।’
– ‘ফিন্দো।’ (কাপড় পরা)
সায়মা আবার আরেকটা ড্রেস পরে। এটাও ভালো লাগে না তার। ঠোঁটে আরেকটু লিপস্টিক দেয়। আচঁড়ানো চুল আরেকটু আচঁড়ে নেয়। আয়নার সামনে বসে ভাবে কালই বাবাকে বলবে সিলেট খালার বাসায় নিয়ে যেতে৷ তারপর নিপা আপুকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরে শপিং করে আসবে৷
জিসানের সঙ্গে ইমরাজ সাহেবেরও বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে। তিনি প্রতিদিন এশার বাদে জিসানের রুমে গিয়ে গল্পগুজব করেন। নানান বিষয়ে গল্প হয়। ভূতের গল্প থেকে শুরু করে রাজনৈতিক। মাস্টারকে ইমরাজ সাহেবের ভীষণ পছন্দ হয়েছে৷
—
বক্কর আলী দুপুরে জিসানের রুমে গিয়ে প্রথমে হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে খানিক্ষণ শুয়ে রইল। এখানে শুতে তার বেশ আরামই লাগে। সায়মা বাবাকে বলে স্যারের জন্য জাজিম এবং নতুন বিছানা চাদরের ব্যবস্থা করিয়েছে।
বক্কার আলী জাজিম বিছানায় আরাম পর্ব চুকিয়ে উঠে দাঁড়াল। টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে পারফিউম নিয়ে কায়দা করে বগলে দিল। তারপর সতর্কভাবে চারদিকে উঁকি দিয়ে তাকায়৷ পারফিউমটি আলগোছে ঢুকিয়ে নেয় নিজের পাঞ্জাবীর পকেটে। বিছানার নিচ এবং সমস্ত প্যান্টের পকেট খুঁজে দু’টা একশো টাকার নোট পাওয়া গেছে। একটা নোট যথাস্থানে রেখে একটি চকচকে একশো টাকার নোট নিজের পকেটে পুরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।
সামান্য হেঁটে মজনু মিয়ার টং দোকানে যায়।
-‘এখটা চা দেউ।’
(সবার সঙ্গে শুদ্ধ করে কথা বলার চেষ্টা চলছে।)
মজনু মিয়ার এখানে আয়েশ করে চা খেয়ে একটা পান আর সিগারেট নিয়ে পনেরো টাকা দিয়ে হাঁটা ধরে। আকাশে ঝকঝকে রোদ। তার গায়ে ছাই রঙা পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা আর মাথার মাঝখানে টুপি। আয়েশ করে পান চিবুচ্ছে আর সিগারেট টেনে টেনে হাঁটছে। নিজেকে কেমন এ দেশের বাদশা বাদশা লাগছে বক্কর আলীর। সামনের আহমদ পুর বাজার থেকে দশ টাকায় দশটা বরই আচার আর একটা মজা বিস্কুট নিল। হাঁটতে হাঁটতে এলো লঞ্চঘাট। তারপর নদীর পাড় দিয়ে ঘন্টা খানেক হেঁটে একটা বাড়ির সামনে গিয়ে চারদিকে সতর্ক চোখে তাকায়। বাড়ির উঠোনে উঁকি দিয়ে প্রথমে দেখে নিচু স্বরে ডাকল,
–‘জমিলা আছোনি বাড়িত?’
জমিলা দরজা খুলে বক্কর আলীকে দেখে বলল,
–‘বক্কর ভাইনি। আও ভিতরে আও।’
–‘তোমার আম্মা কুয়াই?’
– ‘আম্মা গেছইন গরু ডুলানিত মাঠও।’
– ‘ও আচ্ছা ভালা।’
– ‘তুমি ইলাখান মাতো কিতা বক্কর ভাই। ডাখ হুইন্না আমি চিনছি না। ( তুমি এরকম কথা বলছো কেন বক্কর ভাই। প্রথম দরজায় ডাক শুনেও বুঝিনি কে আসছে)
–‘শুদ্ধ খইরা কথা বলিবার সিকরাম জমিলা। খারণ আছে। সুসংবাদ দেওয়ার লাগি অউ আইলাম। আমি তো ব্যাংকও ম্যানেজারির চাকুরী ফাইলাইছি শহরও। এরলাগি শুদ্ধ কথা সিকরাম।’
-‘হাচা? কিলা ফাইলায়? সিক্কিত লোক ছাড়া ব্যাংকও চাকরি ফাওয়া যায়নি?’
– ‘কিতা খইলায় জমিলা। আমি সিক্কিত নায়নি? আমি ডিগ্রি পাস। আমার সালটিফেক্ট হারিয়ে ফেলেছিলাম খরি এতদিন চাকরি ফাইনি।’
– ‘হাচা খইরায়নি?’
বক্কর আলী এবার একটু রোমান্টিক হয়ে জমিলার হাত ধরে খানিকটা কাছে গেল। তারপর আধো শুদ্ধ বাংলায় আবার বলল,
–‘জমিলা তোমার খতা সব সময় আমার বড় বেশি মনে ফড়ে। ফ্রতিদিন সফনে তোমারে দেখি। ব্যাংকও চাকরিত গেলেগি তোমার লগে খতদিন দেখা অইত নায়। একমাস চাকরির ফরে আমারে সরকারি বাসা দিলাইব আমি তোমারে তকন কিন্তুক বিয়া খইরা শহরো নিমুগি।’
জমিলা লজ্জায় মাথা নীচু করে বলল, –‘জানরাম মিচা খতা খইরায়। শহরো গেলেগি বুলিযাইবায় আমারে।’
বক্কর আলী এবার সুযোগ পেয়ে জমিলাকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
–‘খখনো না জমিলা। আমি খখনো তোমারে বুলতাম নায়। আর শোন। আজকে রাইত আমি তোমার লগে থাখমু। খাইল ওউ শহরে চলে যাব। আর যকন আসব এখেবারে বিয়া খইরা তোমারে লইয়া শহরও যাইমুগি।’
কথাটি শেষে রহস্য করে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
–‘আমার ফগেটে কিতা আছে বল তো জমিলা।’
– ‘কিতা ফগেটো দেকি?’
– ‘ফগেটো গরান আছে জমিলা, গরান। তোমার লাগি শহর থাকি গরান আইনচি।’
কথাটি বলে জমিলার গায়ে পারফিউম দিয়ে বলল,
–‘দেখছোনি কিজাত গরান জমিলা। অউ নেউ বিস্কুট আর বরই আচারও তোমার লাগি আইনচি।’
জমিলা খুশিতে আত্মহারা। আজ বক্কর আলীকে থাকতে দেবে সে। মানুষটাকে তার খারাপ লাগে না। বক্কর আলী তাকে বড়ই ভালোবাসে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জমিলার চোখ পানিতে ভরে এলো।
–চলবে–