#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ০৮,৯
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
পর্বঃ০৮
ফুল দিয়ে সাজানো স্টেজে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনকেই পাশাপাশি অপূর্ব লাগছে আজকে তিথি একটা গর্জিয়াস শাড়ি পড়েছে,দু’হাত ভর্তি ভাড়ি চুড়ি,মাথায় টিকলি,কোমড়ে বিছে, মুখে ভাড়ি মেকাপ দিয়ে অসাধারণ লাগছে তাঁকে। আর অন্যদিকে আকাশও সেজেছে আজকে কালো সেরোয়ানি পড়েছে সে সাথে কালো জুতো, হাতে কালো ওয়াচ, কালো রঙেই সজ্জিত সে। পাশাপাশি আকাশ তিথিকে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনেই প্রেস মিডিয়ার লোকেরা ঘিরে ফটোশুট করছে৷ তিথির এতসব কিছু একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল। সত্যি বলতে আকাশও জানতো না তাঁর গ্র্যান্ডমা এতকিছু করবে কতশত মানুষ জেনে গেল আকাশের বউ তিথি। আপাতত সেসব বিষয় নিয়ে ভাবলো না তিথি। মুচকি হেঁসে সবকিছুই সাদরে গ্রহণ করছে সে।’
এরই মধ্যে হঠাৎ একজন মিডিয়ার মেয়ে বলে উঠল আকাশকে,
‘ কিছু প্রশ্ন করতে পারি স্যার?’
মিডিয়ার মেয়েটির কথা শুনে আকাশও মুচকি হেঁসে বলে উঠল,
‘ ইয়া শিওর।’
‘ না স্যার আপনাদের তো লাভ ম্যারেজ তাই না?’
মিডিয়ার মেয়েটির কথা শুনে তিথি তাকালো আকাশের দিকে, আকাশ বেশি কিছু না ভেবেই খুশি মনে বলে উঠল,
‘ হুম।’
‘ আপনাদের প্রথম দেখা কিভাবে হলো স্যার?’
এবারের প্রশ্ন শুনে তিথির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম না জানি এখন আকাশ কি বলে এমনিতেও তাদের প্রথম আলাপ তো ঝগড়া দিয়ে হয়েছিল তাহলে কি এখন ওসব বলবে নাকি।এসব ভেবে আবারো তাকালো তিথি আকাশের দিকে। আর আকাশ সে এবারও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
‘ সত্যি বলতে আমাদের প্রথম দেখা ঝগড়া দিয়ে হয়েছিল।’সেদিন এই বলে অনেক বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে লাগলো আকাশ মিডিয়ার লোকেদের। আর তিথি জাস্ট চোখ বড় বড় করে শুনতে লাগলো।’
এমন সময় হাতে ফুলের তোঁড়া নিয়ে আকাশ তিথির সামনে আসলো হৃদ। হৃদকে দেখেই খুশি হয়ে যায় আকাশ খুশি মনে জড়িয়ে ধরে সে হৃদকে আর হৃদও ধরে আকাশকে। এরপর হৃদ চলে যায় তিথির সামনে হাতের তোড়াটা খুশি মনে এগিয়ে দিয়ে বলে সে,
‘ কেমন আছো তিথি?’
‘ জ্বী ভাইয়া ভালো আপনি?’
‘ হুম আমিও ভালো।’
এতটুকু বলে আশেপাশে তাকাতেই সোফায় এক কোনায় গ্র্যান্ডমাকে বসে থাকতে দেখে বলে উঠল সে,
‘ গ্র্যান্ডমার সব ঔষধগুলো ঠিক মতো খাওয়াচ্ছিস তো আকাশ?’
হৃদের কথা শুনে আকাশ হৃদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,
‘ হুম।’
উওরে হৃদ আর কিছু না বলে এগিয়ে যায় গ্র্যান্ডমার দিকে হৃদের সাথে সাথে তিথি আকাশও যায়।’
সোফায় এক কোনায় বসে আছে গ্র্যান্ডমা আজ সে খুব খুশি অবশেষে সে তার নাতির বিয়েটা দিতে পেরেছে। সাথে অনেকটা নিশ্চিত সে ভেবেই জোরে নিঃশ্বাস ফেললো সে।’
‘ কেমন আছো গ্র্যান্ডমা?’
হঠাৎই হৃদের কন্ঠ কানে আসতেই গ্র্যান্ডমা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলেন সামনেই হৃদকে দেখে খুশি মনে বললেন উনি,
‘ তুমি এসেছো হৃদ কিন্তু এত দেরি করে কেন এলে?’
‘ আসলে গ্র্যান্ডমা হসপিটালে একটু বিজি ছিলাম।’
বলেই গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে বসে পড়ে হৃদ। তারপর বলে,
‘ তারপর বলো গ্র্যান্ডমা তুমি কেমন আছো শরীরে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
‘ ধুর! রাখো তো শরীর আমি একদম ঠিক আছি হৃদ।
অবশেষে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা পর বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে সব আত্মীয় স্বজনকে বিদায় দিল আকাশ তিথিরা। আজকে তিথির মা বোনরাও এসেছিল। কতক্ষণ আগেই চলে গেলেন ওনারা। এরই মধ্যে হৃদও বলে উঠল,
‘ এবার আমাকেও যেতে হবে আকাশ।’
‘ ওকে,আজ গ্র্যান্ডমা অনেক খুশি ছিল তাই না হৃদ?’
‘ হুম,তবে একটা কথা মাথায় রাখিস আকাশ গ্র্যান্ডমাকে বাহির থেকে তেমনি লাগুক না কেন ভিতর থেকে কিন্তু ধীরে ধীরে ডেমেজ হয়ে যাচ্ছে তাই খেয়াল রাখিস ভালো মতো।’
‘ হুম।’
‘ ওকে ভালো থাক তুই আর তিথি দুজনে।
এতটুকু বলে হৃদ গ্র্যান্ডমার সামনে বসে হাত ধরে বললো,
‘ আজ তাহলে আসি গ্র্যান্ডমা আবার পরে আসবো আর এছাড়া তোমার কোনো সমস্যা হলেই বা শরীর খারাপ লাগলেই আমায় ফোন করো আমি চলে আসবো গ্র্যান্ডমা।’
হৃদের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা হৃদের দু’গাল চেপে ধরে বললো,
‘ হুম ঠিক আছে।’
‘ আজ তবে আসি গ্র্যান্ডমা?’
‘ ওকে ভালো থেকো।’
‘ ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা।’
বলেই আকাশকে বাই জানিয়ে চলে যায় হৃদ। হঠাৎ আকাশ কিছু একটা ভেবে চলে যায় হৃদের পিছন পিছন।’
_____
রাত_৮ঃ০০টা…
নিজের ব্যাগ থেকে জামাকাপড়সহ টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র আলমারিতে গুছিয়ে রাখলো তিথি। যতই হোক একবছরের জন্য সে থাকবে এখানে তাই সেই সুবাদে সবকিছু গোছাগোছ করে রাখলো তিথি। অবশেষে সব গুছিয়ে নিজের ব্যাগটাকে ধরে আলমারির উপরে রাখতে নিলো তিথি কিন্তু সেটা তার থেকে অনেক উঁচু হওয়ায় ব্যর্থ হলো সে। ব্যর্থ হয়ে এদিক ওদিক তাকালো তিথি। হঠাৎই তার চোখ গেল একটা চেয়ারের দিকে। তিথি বেশি কিছু না ভেবেই জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল সে চেয়ারটার কাছে তারপর চেয়ারটা টেনে এনে রাখলো আলমারির মাঝ বরাবর। তারপর আস্তে আস্তে আগে চেয়ারের উপরে দাঁড়ালো কিন্তু তারপরও তার থেকে কিছুটা উঁচুতে হলো আলমারির উপরটা। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে তিথি এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই কাজগুলো আজ না করলেই ভালো হতো সবই শেষ শুধু এই ব্যাগটা রাখা ছাড়া। তিথি আর বেশি না ভেবে চটজলদি ব্যাগটা ধরে আলমারির উপরে রাখতে নিলো।
অন্যদিকে,,
সেই মুহূর্তে রুমে ঢুকলো আকাশ তিথিকে উপরে কিছু রাখতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তুমি ওখানে কি করছো তিথি?’
আচমকা আকাশের কন্ঠ শুনে পিছন ঘুরে তাকাতে নেয় তিথি সাথে চেয়ার উল্টে পড়ে যেতে নেয় সে। তিথিকে পড়ে যেতে আকাশ দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললো তিথিকে। কিছুক্ষনের জন্য সবকিছু যেন থমকে গেল। আকাশ তিথি তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে তিথির তো ঘাবড়ে গিয়ে আকাশের শার্টের হাতা ঘামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে তৎক্ষনাৎ।
‘ ২ মিনিট পর ‘
হঠাৎই আকাশ তিথির দিকে তাকিয়ে থেকেই ললো,
‘ ভয় পাওয়া শেষ হয়ে গেলে এখন চোখ খুলতে পারো?’
আচমকা আকাশের কন্ঠ কানে আসতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো তিথি সামনেই আকাশের মুখটা দেখে সাথে কিছুক্ষন আগে কি ঘটলো এসব ভেবে শুকনো ঢোক গিললো সে। তারপর মিনমিন কন্ঠে বললো,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি আসলে?’
তিথিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আকাশ তিথির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
‘ হুস! নো এক্সকিউজ আই নো এই মাত্র কি হলো আর কিভাবে হলো।’
আকাশের কাজে তিথি আরো চমকে উঠলো সাথে বুকের ভিতর এক অস্থিরতা ফিল হলো তাঁর। আকাশ চটজলদি তিথিকে সোজা করে চেয়ার থেকে নামালো তারপর বললো,
‘ এবার বলো ওখানে কি করছিলে?’
আকাশের কথা শুনে তিথি হাত কচলাতে কচলাতে বলে উঠল,
‘ আসলে ওই ব্যাগটা আলমারির উপরে রাখতে চেয়েছিলাম।’
তিথির কথা শুনে আকাশ আলমারির ওপর সাথে ব্যাগ দুটোর দিকেই তাকালো তারপর বললো,
‘ তুমি যখন দেখেছো তোমার সাইট ওপর পর্যন্ত যাচ্ছে না তাহলে ট্রাই কেন করছিলে?’
‘ না মানে?’
‘ হয়েছে তোমার না মানে।’
এতটুকু বলে আকাশ নিজেই ব্যাগটা রাখলো উপরে। তারপর বললো,
‘ যেটা করতে পারবে না তাতে বেশি জোর দিবে না,এইমাত্রই তো কোমড় ভেঙে বিছানায় শুয়ে থাকা লাগতো।’
উওরে আর কিছু বলে না তিথি মাথা নিচু করে রয় সে। তিথিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে আকাশ বলে উঠল,
‘ হয়েছে আর মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। একচুলি তোমায় কিছু বলার জন্যই রুমে আসলাম।’
আকাশের কথা শুনে তিথি অতিআগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি কথা স্যার?’
‘ হুম বলছি, কথাটা হলো তোমায় নিয়ে নয় তেমার মাকে নিয়ে।’
‘ জ্বী বলুন স্যার।’
‘ তোমার মায়ের অপারেশনের সব ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি আর কালকেই ওনার অপারেশন হবে তিথি। আমার ফ্রেন্ড হৃদই তোমার মায়ের অপারেশন করবে তাই কাল ফিজিকালি আর মেন্টালি দুইদিক থেকেই তৈরি থেকো তিথি।’ কাল রাত ৯ঃ০০টায় অপারেশন।’
এতটুকু বলে চলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আকাশ। আকাশ যেতেই মায়ের কথা মনে করে মনটা খারাপ হয়ে যায় তিথির। মন খারাপ করেই বসে সে বিছানার ওপর।’
____
ভোর_৫ঃ৩০টা…
হঠাৎ কারো কান্নার শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় আকাশের। কিছুটা অবাক হয়ে আশেপাশে তাকালো আকাশ সামনেই সোফায় ওপর তিথিকে না দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় সে। চটজলদি শোয়া থেকে উঠে বসলো আকাশ সামনেই তিথিকে জায়নামাজে বসে মোনাজাত নিতে সাথে কান্না করতে দেখে আকাশের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না এতক্ষণ কার কান্নার শব্দ আসছিল। আকাশের ইচ্ছে করছে তিথির কাছে গিয়ে একটু সান্ত্বনা দিতে এমনিতেও এই কষ্টের অনুভূতি তো সেও ফিল করেছে অবশ্য ফিল করেছে বললে ভুল হবে এখনও ফিল করছে। নানা কিছু ভেবে একবার ভাবলো যাবে সে তিথির কাছে কিন্তু আবার ভাবলো না থাক।’ শেষমেশ মনের সাথে যুদ্ধ করে বিছানায় নীরবে শুয়ে পড়লো আকাশ।’
সকাল_৯ঃ০০টা…
হসপিটালের যাওয়ার জন্য সাথী তৈরি করছে তার মাকে। সেই নিয়ে যাবে তার মাকে হসপিটালে আর তিথিও সোজা হসপিটালে যাবে। প্রচন্ড ভয় সাথে কষ্ট হচ্ছে সাথীর না জানি কি হবে সামনে?’
!
!
#চলবে…..
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ০৯
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে তিথির মা। পাশেই সাথী চুপচাপ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার কিন্তু আপাতত তার কষ্টটাকে বাহিরে বের করছে না সাথী। সাথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল সাথীর মা,
‘ আচ্ছা আমায় একটা কথা বলতো আমরা যে আজ হসপিটালে আসবো এটা তুই আমায় কাল বলিস নি কেন?’
মায়ের কথা শুনে সাথী বলে উঠল,
‘ জানলে তুমি কি করতে?’
‘ কি আর করতাম কিছুই করতাম না তারপরও এইভাবে হুট করে হসপিটালে আসাটা কেমন বেমানান লাগছে না।’
‘ উফ্ মা! কিসব যে বলো তুমি হসপিটালে আসতে আবার কিসের বেমানান?’
‘ তুই কিছু বুঝিস না,তিথিটার বিয়ের আজ মাত্র তিন’দিন হলো পুরো বাড়িঘর অগোছালো পড়ে আছে তার ভিতর তুই আবার হসপিটালে নিয়ে আসলি। কত করে বললাম আজ যাওয়া লাগবে না কাল যাবো তাও শুনলি না তুই। আর প্রত্যেক বার তো আমরা বাহিরে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করি আজ হঠাৎ কেভিনে কেন সাথী?’
মায়ের কথা শুনে সাথী কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো,
‘ মা তুমি না বড্ড কথা বলো,ওগুলো পড়েও করা যাবে তাই তুমি একটু চুপচাপ বসো তো আপু এখনি চলে আসবে হয়তো?’
সাথীর কথা শুনে সাথীর মা কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ ওকে আবার আসতে বললি কেন?’ সবেমাত্র মেয়েটা শশুর বাড়ি গেল তার ভিতর..
সাথীর মা আর কিছু বলার আগেই তিথি কেভিনের ভিতর ঢুকে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,
‘ মেয়ে শশুর বাড়ি গেছে তাতে কি হইছে মা?’
আচমকা কথার মাঝখানে তিথির কন্ঠ কানে আসতেই সামনে তাকালো তিথির মা চোখের সামনে তিথিকে দেখে খুশি হয়ে বললেন উনি,
‘ তুই?’
মায়ের কথা শুনে তিথি ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর বললো,
‘ হুম আমি,কেমন আছো মা?’
‘ হুম ভালো তই?’
‘ ভালো।’
বলতে বলতে কেঁদে উঠলো তিথি। তিথিকে কাঁদতে দেখে সাথীও আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সেও মাকে আর তিথিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। দুই মেয়েকে এইভাবে একসাথে কাঁদতে দেখে কিছুটা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আরে তোরা দুজন কাঁদছিস কেন?’
উওরে তিথি সাথী দুজনেই চুপ।’
____
কিছুটা মন খারাপ নিয়ে অফিসে বসে আছে আকাশ। সকালের তিথির সেই কান্নার শব্দ যেন এখনো বাজছে আকাশের কানে। ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আকাশ। সবকিছু কেমন যেন এলেমেলো লাগছে তাঁর।’
এমন সময় হাতে একটা ফাইল নিয়ে আকাশের রুমে ঢুকলো একটা মেয়ে। দরজা পর্যন্ত এসে বললো সে,
‘ মে আই কাম ইন স্যার?’
মেয়েটির কথা শুনে আনমনেই বলে উঠল আকাশ,
‘ কাম।’
আকাশের কথা শুনে মেয়েটিও আর বেশি কিছু না ভেবে ঢুকে পড়লো ভিতরে তারপর তার হাতে থাকা ফাইলটাকে টেবিলের উপর রেখে বললো,
‘ এই ফাইলে আপনার একটা সাইন লাগবে স্যার?’
উওরে আকাশ কিছু বললো না চুপচাপ নিজের কিছু ভাবনা নিয়ে মগ্ন হয়ে বসে রইলো। আকাশকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটি আবারো বলে উঠল,
‘ স্যার।’
হঠাৎই কারো কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আকাশ। সামনেই নীরা (মেয়েটির নাম) ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,
‘ হুম কি বলছিলে তুমি?’
আকাশের এবারের কথা শুনে হাল্কা অবাক হয়েই বললো নীরা,
‘ না মানে আপনার সাইন লাগতো স্যার?’
‘ ওহ সাইন লাগবে।’
বলেই সামনের ফাইলটাকে হাতে নিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে সাইন করে দিল আকাশ। আকাশের সাইন করা হয়ে যেতেই নীরা তার ফাইনটা হাতে নিয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ স্যার।’
‘ হুম ওকে।’
উওরে নীরা আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সে বুঝতে পেরেছে আজ স্যারের মুড ঠিক নেই।’
____
রাত_৮ঃ৩০টা…
অপারেশন থিয়েটারের যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তিথির মা। সকালেই জেনেছে সে তাঁরা আসলে এখানে কি কারনে এসেছে তবে ভেঙে পড়ে নিয়ে মেয়েদের কান্না দেখে তাঁরও কষ্ট হচ্ছিল তারপরও সেটা বাহিরে বের করে নি তিথির মা। কারন সে বিশ্বাস করে, বিপদের সময় বা কষ্টের সময় খুব বেশি ভেঙে পড়তে নেই যা ভাগ্যে আছে সেটাই হবে। তাই নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে রেখেছেন উনি। এমন সময় কেভিনের ভিতর ঢুকলো আকাশ আর হৃদ। আকাশকে দেখে হাল্কা হাসলেন তিথির মা তারপর বললো,
‘ আকাশ তুমি এসেছো, বাবা?
তিথির মায়ের কথা শুনে আকাশ এগিয়ে আসলো তিথির মায়ের সামনে তারপর বেডের পাশে বসে বললো,
‘ হুম, টেনশন নিবেন না একদম সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আকাশের কথা শুনে মুচকি হাসলেন তিথির মা। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল ওনার কিন্তু কিছুই বললেন না উনি। এরই মধ্যে হৃদ তার হাতের ঘড়িটাকে একবার দেখে বলে উঠল,
‘ এখনই ওনার অপারেশন শুরু করতে হবে তিথি,বেশি ভেবো না আমরা আমাদের বেস্ট দিবো ইনশাআল্লাহ। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনাকে নেওয়ার জন্য লোক আসবে তোমরা তৈরি থেকো।’
এতটুকু বলে রুম থেকে বের হয় হৃদ। খুব সম্ভবত এই সময় সে আসতো না এখানে কিন্তু আকাশের জন্য আসা লাগলো। হৃদ যেতেই তিথি তার মায়ের হাত ধরে বললো,
‘ বেশি ভেবো না মা,দেখবে সবটা খুব ভালোভাবে হয়ে যাবে।’
উওরে মাথা নাড়ায় শর্মিলা বেগম। এরপর তাকালেন উনি সাথীর দিকে। ওর চোখ তো ছলছল করছে মা কিছু বললেই হয়তো কেঁদে ফেলবে। শর্মিলা বেগম কিছু বলার আগেই সাথী তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। মেয়েকে কাঁদতে দেখে শর্মিলা বেগম সাথীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
‘ আর কাঁদিস না পাগলী, দেখবি আমি খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন সেরে চলে আসবো।’
উওরে সাথী কিছু বলে না।’এর মধ্যে দুজন লোক আসলো তিথির মাকে নিতে। ওদের দেখে তিথি গিয়ে ধরলো সাথীকে।
____
অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছে আকাশ, তিথি আর সাথী। চোখে মুখে তিনজনেরই দুশ্চিন্তার ছাপ। কিছুক্ষন আগেই তিথির মায়ের অপারেশন শুরু করা হয়েছে। চুপচাপ বসে আছে তিনজনই। এমন সময় বাজলো আকাশের ফোন উপরে গ্র্যান্ডমার নাম্বার দেখে ফোনটা তুলে একটু সাইডে চলে আসে আকাশ তারপর বলে,
‘ হ্যালো গ্র্যান্ডমা।’
আকাশ আর কিছু বলার আগেই ওপর পাশে গ্র্যান্ডমা চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ ওখানে সব ঠিক আছে তো আকাশ,তিথির মা কেমন আছে?’
‘ সব ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা। তুমি টেনশন নিও না একটু আগেই ওনাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে তুমি টেনশন নিও না সব ঠিক হয়ে যাবে।
‘ ওহ।’
‘ হুম গ্র্যান্ডমা আর শোনো তোমার রাতের ঔষধগুলো ঠিক মতো খেয়ে নিও কিন্তু,আমি আর তিথি আজ রাতে নাও আসতে পারি?’
‘ হুম ঠিক আছে। আর ঔষধ খাওয়া নিয়ে তুমি টেনশন করো না আমি খেয়ে নিবো, আর শোনো তিথিকে সামলে রেখো?’
‘ ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা।’
‘ হুম! আমাকে অপারেশনের শেষে ফোন করে জানিও কিন্তু?’
‘ হুম জানাবো গ্র্যান্ডমা তুমি বেশি টেনশন নিও না।’
এতটুকু বলে ফোন কাঁটে আকাশ। গ্র্যান্ডমাও আজকে আসতে চেয়েছিলো হসপিটালে কিন্তু আকাশ বারন করে তাই আর আসে নি।
ফোনটা কেটে কিছু একটা ভেবে ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আকাশ।’ এরপর চললো সে তিথিদের কাছে।’ এরই মধ্যে সেখানে হাজির হলো তিথির মামা মামি। ওনাদের দেখেই সাথী গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলো তার মামিকে। ওনারও সকালে জেনেছে তিথির মায়ের অপারেশনের কথা। সব জেনেই এসেছেন ওনারা। তাঁরা তো জানতোই না তিথির মায়ের এত বড় রোগ হয়েছে। তিথি ওনাদের জানতেই দেয় নি। এর জন্য একটু রেগেও আছে তিথির মামা তিথির ওপর।
প্রায় দু’ ঘন্টার কাছাকাছি সময় কাটানোর পর প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তিথি। তারপর হেঁটে চললো সে করিডোরের কাছে প্রচন্ড খারাপ লাগছে তার সাথে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে তিথির। তিথিকে চলে যেতে দেখে আকাশও বেশি কিছু না ভেবে পা বাড়ালো সেদিকে।’
___
রাত তখন কম হলেও ১১ঃ০০টার কাছাকাছি পুরো শহরটাই তখন যার যার কাজে ব্যস্ত। পাঁচতলার উঁচুতে একটা করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিথি। কিছুটা দূরে নিচেতে তার সামনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছে একের পর এক যানবাহন। তিথি নীরবেই সেদিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎই চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তিথির। এবার তিথি নিচ থেকে চোখ দুটো উপরে করলো কালচে সাদা রঙের আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন হয়তো মনে মনে হাজারটা কথা বলছে সে। মায়ের মুখটার কথা ভাবলেই চোখ দুটো পানিতে ভরে যাচ্ছে তিথির।’
এরই মাঝে সেখানে হাজির হলো আকাশ, তিথিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো আকাশ,
‘ মন খারাপ করো না তিথি, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আচমকা আকাশের কন্ঠ শুনে তিথি আকাশের দিকে নীরবে তাকালো চোখ ছলছল করছে তাঁর। তিথির চোখ ছলছল দেখে আবারো বলে উঠল আকাশ,
‘ ডোন্ট ওয়ারি।’
আকাশ আর কিছু বলার আগেই তিথি তার ইমোশনকে আর ধরে রাখতে না পেরে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো আকাশকে।’
হঠাৎ তিথির এমন কাজে চমকে উঠলো আকাশ পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো সে। অন্যদিকে তিথি আকাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল,
‘ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে স্যার,প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে যতবারই মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসছে ততবারই যেন সবকিছু ধোঁয়াশা লাগছে। মা ঠিক হয়ে যাবে তো স্যার?’
!
!
!
#চলবে…..