#স্বামীর_অধিকার
#পর্ব_০৯,১০ শেষ
#সোহানুর_রহমান_সোহান
পর্ব_০৯
সেদিন সকালে দুজনেই রেডি হতে ব্যস্ত।আজকে নিশিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।হটাৎ নিশি ডেকে উঠলো,,
—ওগো শুনছো?
—হ্যা বলো?
—আমার কাপরের কুচিটা একটু ঠিক করে দিবে?
কথাটা শুনেই সোহান দৌড়ে এসে নিশির সামনে দাড়িয়ে পড়লো।
—নাও শাড়িটার কুচি ঠিক করে দাও?
—তোমার পেছনে গিয়ে ঠিক করে দিই?(হাসি দিয়ে)
—একদম না।পিছনে গেলেই দুষ্টামি শুরু করবে।সামনে থেকেই ঠিক করে দাও।দেখছো না হাতে মেহেদী লাগিয়েছি।(চোখ বাকা করে)
নিশির কথার ধরন দেখে সোহান হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে কোমরে হাতটা গুজিয়ে দিয়ে নিশির দিকে তাকালো।
—এভাবে আমাকে পটানো এতো সোজা না।তাই তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নাও।
সোহান কুচিটা ঠিক করে দিয়ে চলে গেলো।নিশি আবারো আয়নার সামনে বসে পড়লো।আজকে তাকে খুব ভালোভাবে সাজতে হবে।আজকে অভিকে হসপিতাল থেকে আনা হবে তাও আবার একদম সুস্থ।তাই তাকে খুব সুন্দর করে সেজে অভির সামনে যেতে হবে।
এদিকে সোহানের মুখে কোনো মলিনতার ছাপ নেই।কারন সে নিশিকে যতোটুকু পেরেছে ততোটুকুই ভালোবাসা দিয়েছে।এখন ভাগ্য তাকে নির্ধারন করে দিবে নিশিকে সে পাবে নাকি অভি।তাই সে বেশীকিছু না ভেবে রেডি হয়ে নিলো।
দুজনেই খাবার খেয়ে বাসা থেকে রওনা দিলো অভিকে আনার জন্য।হসপিতালে পৌছানোর পর সোহান নিশিকে নামিয়ে দিয়ে,,
—তুমি অভির কাছে যাও।আমি অফিস থেকে একটা কাজ সেরেই তোমাদেরকে নিয়ে যাবো।
সোহান একটা দির্ঘ নিষ্শাষ নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।এদিকে নিশি হাসিমুখে হসপিতালে চলে গেলো।অভির রুমে ঢুকেই নিশির সাথে অভির দেখা হয়ে গেলো।অভির পাশে গিয়ে নিশি বসে তার হাতটা ধরতেই অভি কেপে উঠলো।অভির ভিতরে একটা ভয় কাজ করতে লাগলো।নিশির হাতটা তার হাতে কখনোই যেতে পারেনা।যদি সোহান এটা দেখতে পারে তাহলে সে আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে।কিন্তু সোহানের সাথে তো তার এমন কথা ছিলোনা।তাহলে কি ও নিশিকে কিছুই জানাইনি?
নিশির হাতে হাত রাখতেই অভি বেশ অস্থিরতা ভোগ করতে লাগলো।
— কি ব্যাপার অভি তুমি কথা বলছো না কেন?আমাকে দেখে খুশি হওনি?
—না মানে ইয়ে হ্যা হ্যা অবশ্যই খুশি হয়েছি।সো সোহান কো কোথাই?
—ও একটু অফিসের কাজে বাইরে রয়েছে।বিকেল হলেই চলে আসবে।
—তোমাকে সোহান কিছু বলেনাই?
—হ্যা বলেছো তো।
—কি বলেছে?
—জানো অভি সোহান আমাদের ভালোবাসাটাকে মেনে নিয়েছে।ও আমাদেরকে নিজেই এক করে দিতে চেয়েছে আর সময় হলে ডিবোর্স পেপারটাও সই করে দিবে।
এবারের কথাটা শুনে অভি ভয়ে কেপে উঠলো।সে ভাবতেই পারছে না নিশির সাথে এতোদিন সোহান কিভাবে ভদ্র থাকার অভিনয়টা চালিয়ে গিয়েছে।
নিশি অভির মাথাই হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
—নিশি তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
—তোমার জন্যই তো সেজেছি।(হেসে ফেলে)
—এতোদিন সোহানের সাথে থেকে নিশ্চয় ও কে ভালোবেসে ফেলেছো।
—ও কে আমার বেশ ভালো লাগে আর ওর আর তোমার মাঝে অনেক মিল রয়েছে।কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি আর তোমাকে ভালোবাসবো।
—আচ্ছা এখন আমরা কোথাই যাবো?
—এখন আমরা সোজা আমাদের বাসায় গিয়ে উঠবো।সেখানে তুমি থাকবে কিছুদিন।তারপর যখন ডিবোর্স পেপারটা হাতে পেয়ে যাবো তখনি দুজনেই নিজেদের মতো আলাদা হয়ে যাবো।তারপর আমরা আমাদের সুন্দর লাইফটা একসাথে কাটিয়ে দিবো।
নিশির কথা দিকে অভির একটুও নজর নেই।কারন অভি জানে সোহানের রাগের কাছে বন্দুত্ব নামক জিনিসটির কোনো দাম নেই।অভির মন চাইছিলো এখান থেকে পালিয়ে যেতে আর নিশিকে সবকিছু বলে দিতে।কিন্তু কেন যেন কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারছিলো না।নিশির চোখে সে তার ভালোবাসাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।কেন যে সে মিথ্যা কথা বলে নিশির সাথে সেদিন দেখা করেছিল?যদি নিশি সবকিছু এখন জানতে না পারে তাহলে পরে সে কি ভাববে?
কিন্তু নিশি তাকে ছাড়তেই চাইছে না।নিশি অভির সাথে কথা বলতে বলতে অভির বুকে ঘুমিয়ে পড়লো।অভি না চাইতেও নিশির মাথাই হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
.
এদিকে সোহানের কিছুতেই অফিসের কাজে মন বসতে চাইছে না।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।চশমাটা খুলে আছাড় মেরে ফেলে দিলো।বিকেল হতেই সে হসপিতালে পৌছে গেলো।ওদিকে নিশি ঘুম থেকে উঠে অভির দিকে তাকিয়ে থাকলো।সোহান রুমের সামনে এসে হটাৎ করে দাড়িয়ে পড়লো।অভি নিশিকে দেখে কিছুটা মোহে পড়ে গেলো আর নিশি ধীরে ধীরে অভির দিকে এগোতে লাগলো।অভি নিশির কাধে হাত রাখতেই সোহানের চোখদুটো রাগে লাল হয়ে গেলো।অভির সাহস দেখে সে অবাক হয়ে গিয়েছে।কিছু হবার আগেই সোহান পাশ থেকে ছুরিটা নিয়ে নিশিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।অভিকে টান দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।বুকের উপর পাড়া দিয়ে ছুরিটা সজোড়ে হাতের উপর দিয়ে চালিয়ে দিলো।অভি কিছু বলার আগেই মুখটা চেপে ধরে সজোরে আঘাত করতে লাগলো তার বুকে।ওদিকে নিশি পড়ে যেতেই প্রচন্ড আঘাত পেয়ে উঠেই অভির উপর আক্রমন দেখে রেগে গেলো।এতো বড় সাহস অভিকে আঘাত করছে?আশেপাশে তাকিয়ে পাশ থেকে একটা রড দেখেই রডটা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।সোহান অভির উপর আরেকবার ছুরি চালাতে যেতেই হটাৎ করে কিছু একটা আঘাতে ছিটকে ফ্লোরে
পড়ে গেলো।এক আঘাতেই সোহান খেয়াল করলো তার মাথা থেকে রক্ত বের হতে শুরু করেছে।কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বলতে পারছে না।শুধু খেয়াল করলো নিশির হাতে একটা রড।সে ভাবতেও পারছে না নিশি তাকে আঘাত করেছে।বেশীকিছু বলার আর সময় পেলোনা।ওভাবেই চোখটা বন্ধ করে লুটিয়ে পড়লো।শুধু ছোখ থেকে কিছু জল বের হয়ে এলো।সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কেউ বুঝতেই পারছে কি হচ্ছে এখানে?
.
নিশি ধপ করে পড়ে গেলো।সে ভাবতেও পারছে না সে করেছে?হটাৎ করেই তার চোখ থেকে পানি বের হয়ে এলো।অভি সবকিছু বুঝতেই চিৎকার দিয়ে ডাক্তারকে ডাকতে লাগলো।সোহানকে টান দিয়ে উঠিয়ে দৌড়ে অপারেশন রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকলো।তার জীবনে তার মায়ের থেকেও সে সোহানকে বেশী ভালোবাসে।ছোট থেকেই সে তার সাথেই বেড়ে উঠেছে।যদি কেউ তার বাবা মায়ের কষ্টতা বুঝতো তাহলে সে শুধু সোহানই ছিল।তাড়াতাড়ি করে সে সোহানকে অপারেশন রুমে পাঠিয়ে দিলো।নিশি বাইরে এসে বুঝতে পারলো না অভি কেন এতো নার্ভাস ছিলো।পাশে গিয়ে হাত দিতেই রেগে গিয়ে অভি নিশির হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে দিলো।এক থাপ্পড়ে নিশিকে ফেলে দিলো।হাতটা টান দিয়ে হসপিতালের একটা ফাকা জাইগাই নিয়ে দাড় করিয়ে দিলো,,
—নিশি তুমি কি জানো তুমি কী করেছো?(রেগে গিয়ে)
—ও তোমাকে আঘাত করছিলো তাই তোমাকে বাচাতে…
—কাকে বাচাতে চেয়েছো?আমাকে?আমাকে কি তুমি চিনো?
—এমন কেন করছো অভি?
—আজ তোমার কিছু কথা জানা প্রয়োজন সেটা হলো,,
তুমি যাকে অভি ভাবো আসলে অভি না।আমি অভি ঠিকই কিন্তু তুমি যে অভিকে ভালোবাসো সেটা আমি না।
অভির কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে গেলো।
—তুমি এসব কি বলছো?সেদিন তো তুমিই আমার সাথে দেখা করেছিলে।
—হ্যা সেটাই আমার ভুল ছিলো।সোহান দেখতে চেয়েছিলো তুমি তাকে চিনতে পারো কি না?তাই সে তার জাইগাই আমাকে পাঠিয়েছিলো।সোহান এই হলো তোমার সেই অভি যাকে তুমি ৩ বছর না দেখেই ভালোবেসেছো।ও শুধু তোমাকে যাচাই করার জন্যই এসব করেছে।
.
কথাটা শোনামাত্র নিশি ধপ করে পড়ে গেলো।
.
চলবে,,
#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_১০_(_শেষ_)
.
#writter_সোহানু_রহমান_সোহান
.
সে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলো না।সে বিষ্শাশ করতে পারছে না এতোদিন একসাথে থেকেও সে সোহানকে চিনতে পারেনি।দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কান্না করতে লাগলো।এখন কিভাবে সে সোহানকে তার মুখ দেখাবে?কিছুতেই তার চোখ থেকে জল থামাতে পারছিলো না।এতো কাছে থেকেও সে চিনতেই পারলো না তাকে।নিজের হাতে সে তাকে কত কষ্ট দিয়েছে অথচো একদিন সেই বলতো,,
—এই হাতটা সবসময় তার বুকে থাকবে।
কতো কষ্ট দিয়েছে কখনো সামির অধিকার টুকুও দেইনি।নিশিকে অভি এক পলকের জন্য ও দেখছে না।নিশি কি করবে এটাই ভেবে পাচ্ছে না।
হটাৎ চেয়ার থেকে উঠে পড়লো।হসপিতাল থেকে বেরিয়ে সোজা বেড়িয়ে এলো।গাড়ি নিয়ে রাস্তাই কিভাবে চালাচ্ছিলো এটাও তার চোখে পড়ছিলো না।বাসাই এসে কারো সাথে দেখা না করেই রুমে গিয়ে রুমটা আটকে দিলো।তার বেচে থেকে কি হবে?নিজের হাতদুটোকে তার দেখতেও লজ্জা হচ্ছিলো।সে ঠিক করে নিয়েছে তাকে এখন কি করতে হবে?বিছানাই উঠে পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে ফ্যানের সাথে বাধার জন্য এগ্রসর হলো।সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে, তার জিবনটা সে আর রাখবে না।পাখার সাথে ওড়নাটা বেধে গলাই বাধার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো।চোখের পানিটা মুছে একবার রূমটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে নিলো।
এই রুমেই সে সোহানকে আছাড় মেরেছিলো।কতো কষ্টই না পেতে হয়েছিলো তার জন্য।তাই সে আর তাকে কষ্ট দিতে চাইনা।চিরদিন তার থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার কথাই ভেবেছে।তার ইচ্ছে হচ্ছিলো একবার সোহানকে বলতে,,
—ওগো শুনছো আমিতো আর থাকবো না।তোমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে যাবো।তুমি কি একটু তোমার বুকে আমাকে জাইগা দিবে?একটু ঘুমাবো।
কিন্তু সে কিভাবে কথাটা বলবে?সে তো তার থেকে অনেক দুরে রয়েছে।তার খুব কান্না পাচ্ছে দমগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ওড়নাটা গলাই পেচিয়ে নিলো।চোখটা বুজে নিলো কিন্তু কেন যেন চোখটা বুজেও সে সোহানকে তার সামনে দেখতে পাচ্ছিলো।কোনমতেই সে পায়ের তলা থেকে চেয়ারটা সরাতে পারছিলো না।
.
হটাৎ করেই তার চোখটা আলমারির উপরে নজর পড়ে গেলো।সেখানে সে একটা ডাইরির মতো কিছূ একটা দেখতে পেলো।ডাইরিটা দেখে তার বুকটা কেপে উঠলো।তার মনের ভিতর বারবার বলছিলো ডাইরিটা খুলে দেখতে।হটাৎ করেই ওড়নাটা তার গলা থেকে খসে পড়ে গেলো।হইতো তাকে কোনো ছায়া ডাইরির দিকে টানছে।বিছানা থেকে নেমে সে ডাইরির দিকে এগোতে লাগলো।আলমারিটার উপরে হাত দিয়ে সে ডাইরিটা পাড়তেই আলমারি খুলে কিছু কাগজ নিচে পড়ে গেলো।নিমিষেই কাগজগুলো তার চোখদুটি বড় বড় করে তুললো।
একি এই কাগজগুলো এখানে কিভাবে এলো?কাগজগুলো তুলে ভাবতে থাকলো তাহলে কি সোহান অনেক আগেই আমাকে দেখেছিলো?এই কাগজগুলোতো অনেক আগের।
ডাইরিটা তাড়াতাড়ি করে খুলে ফেললো,,
ডাইরিটা খুলেই সে অবাক হয়ে গেলো।একি এতো ঠিক 3 বছর আগের আমার ছবি।ডাইরিটা ঠিক তিন বছর আগে থেকেই লেখা শুরু হয়েছে।সেগুলো দেখে সে ডাইরিটার একদম শেষ পৃষ্ঠাই চলে গেলো।লেখাগুলো দেখে সে বুঝতেই পারলো না কিভাবে সোহান তার মনের কথাগুলো না এখানে লিখে রেখেছে।
ডাইরিটে সে স্পষ্ট দেখতে পারছে,,
সে যে ঠিক আজকেই ভুল বুঝতে পারবে এটাও লেখা রয়েছে এমনকি নিজেকে শেষ করে দিতে পারে এটাও এখানে লিখা রয়েছে।শেষের লেখাটুকু দেখে সে ডাইরিটা বন্ধ করে দিলো।মনের ভিতর তার একটা খুশির আবহাওয়া বইতে থাকলো।ভাবতেই পারছে না সোহান এটা লিখলো কিভাবে?
চোখমুখ মুছে সে নিজেকে বোঝাতেই পারছে না সে কিভাবে শেষ বিজয়ী হতে পেরেছে।
মুখটা ধুয়ে সে রুমের বাইরে বেড়িয়ে আবার হসপিতালে পৌছে গেলো।অপারেশন রুমের সামনে গিয়ে সে সোহানকে দেখতে লাগলো।চোখটা আবারো ভিজে গেলো তার।কিন্তু এখন তার চোখে আর কষ্টের কান্না দেখাচ্ছে না বরং খুশিতে তার চোখটা ভিজে যাচ্ছে।খেয়াল করলো সোহান তার দিকেই খেয়াল করে আছে।নিমিষেই চোখটা নামিয়ে পাশ থেকে সরে
পড়লো সেখান থেকে।
.
ধীরে ধীরে কেটে গেলো প্রাই ১ সপ্তাহ।এতোদিনে সোহান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছে।নিশি তার পুরো খেয়াল রেখেছে।
আজকে সোহান বাসাই শিফট হবে।পাশে শুধু রয়েছে অভি।চারপাশে খেয়াল করে নিশিকে দেখতে পেলোনা।ভাবলো হইতো নিশি অভির কাছে ফিরে গিয়েছে।সে অভির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে অভির হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে পড়লো।মাথাই এখনো ব্যান্ডেজ করা রয়েছে।ডাক্তারের কথা অনুযায়ী এখনো সুস্থ হতে তার কিছুদিন সময় লাগবে।কাচের বাইরে মুখ বের করে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।বাসাই ফিরতে ফিরতে তাদের রাত হয়ে গেলো।বাসাই এসে সবাই সোহানকে তার রুমে রেখে গেলো।অভি তাকে কিছু একটা বলতে চেয়েছে তবে তাকে ছাদে যেতে বারন করেছে।একলা রুমে সোহানের কেমন যেন একটা অসস্থিভোদ লাগছিলো।বিছানাই গিয়ে মাথাটা বালিশের উপর রাখলো।এতক্ষন হইতো নিশি অভির বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে।সোহান ভাবতেও পারেনি নিশি তাকে এভাবে আঘাত করতে পারলো।ভাবতেও তার কষ্ট হচ্ছিলো এখন তাকে একা একাই কাটিয়ে দিতে হবে এই রাতটা।সে আর দেরি করলো না।ভাবলো এখানেই তাদের কাহীনিটা শেষ করে দেওয়া উচিত।বিছানা থেকে উঠে সে ডাইরিটা নিতে গিয়ে দেখলো সেখানে ডাইরিটা নেই।চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুজেও কোথাও পেলোনা ডাইরিটা।
আলমারিটা খুলে খেয়াল কর দেখে সেখানেও তার সেই পুরনো কাগজগুলো নেই।তাহলে সেটা গেলো কোথাই?নাকি সেটা অভি সরিয়ে রেখেছে?কিন্তু অভি আমাকে ছাদে যেতে বারন করলো কেন?ডাইরির চিন্তাই তাড়াতাড়ি করে সে ছাদের দিকে রওনা দিলো।ছাদে গিয়ে সে কিছুটা অবাক হয়ে গেলো।পাশে গিয়েই সে লুকিয়ে পড়লো।চোখটা একটু বের করে দেখে নিশি আর অভি সেখানে বসে রয়েছে।সোহান স্পষ্ট খেয়াল করেছে ডাইরিটা নিশির কাছেই রয়েছে।তাহলে কি নিশি সব জেনে গিয়েছে?পাশ থেকে সে তাকিয়ে তাদের দৃশ্য দেখতে লাগলো,,
—অভি আমি এখন কিভাবে সোহানের সামনে যাবো?
—আমার মতে তোমার সোহানকে এক্ষুনি সব বলে দেওয়া উচিত।কারন সোহানকে তুমি অনেক কষ্ট দিয়েছো।
—কিন্তু সোহান যদি আমাকে মেনে না নেই?(চোখ থেকে জল পড়ছে)
—জানিনা ও তোমাকে মেনে নিবে কি না।তবে তোমাকে পারতেই হবে।
—আমি ও কে ছাড়া থাকতে পারবো না।ও ও আমাকে কখনোই ভুলতে পারেনা।ও ও আমাকে মেনে না নিলে আমি আমাকে মেরে ফেলবো।
.
কথাটা শুনেই সোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে নিশির চোখের পানি দেখে একটা হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।আর দেরি নয় তার মন বলছে নিশি এক্ষুনি তার কাছে আসবে।
রুমে গিয়ে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়তেই।অভি বলে উঠলো সোহানের অবস্থা খুব খারাপ।কথাটা শুনেই নিশি দাড়িয়ে পড়লো।দৌড়ে সে নিচে নামতে থাকলো।চোখদুটো তার ভিজে একাকার।দৌড়ে রুমে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।পিছনে দাড়াতেই,,
—আমি কাউকে ভালোবাসি নি আর বাসবো ও না।কাউকেই লাগবে না আমার।
কথাটা বলে সোহান পিছনে ফিরতেই নিশি দৌড়ে গিয়ে সোহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।সোহান নিশিকে বুকে আগলে ধরলো।কেন যেন সোহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।চোখ থেকে তার জল বেরিয়ে পড়লো।নিশির কান্নাতে তার বুকটা ভিজে যাচ্ছে।নিশির ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্নাটা সে বুকে নিয়ে শুনতে লাগলো।কাদুক না একটু কাদলে কি হয়?এতোদিনের ভালোবাসাটা না হয় একটু চোখের পানি দিয়েই মিটিয়ে নিক।
.
.
গভির রাতে সোহান একটু পাশ কাটতেই,,
—কেউ আমাকে একটু পাশে রাখেনা।সবাই আমাকে পর ভাবে।
বিছানাটা ভিজিয়ে একাকার করে দিয়েছে।এখনো কান্নাটা থামাইনি।সোহানের অসহ্য লাগছিলো।শীতের ভিতর এভাবে ভেজা শরীর নিয়ে ঘুমানো যাই?নিশিকে আবার বুকে টেনে জড়িয়ে ধরলো।আর ভাবতে থাকলো এই মেয়েটা নির্ঘাত আমাকে প্রতি রাতে এই রকম ভিজিয়ে মারবে।
আবার ভাবলো একটু ভিজলে এমন কি হবে?লক্ষিটি তো তারই বউ।সামী হিসেবে এটুকু তো সহ্য করতেই হবে।
নিশিকে বুকে নিয়ে তাদের কাহীনি সে সেখানেই শেষ করে দিলো।রাতের এই সুন্দর দৃশ্যটা এই ঘরটাকে আলোই ফুটিয়ে তুলেছে।বাইরে থেকে আজকেও ঠিক ওই সুরটাই আসছে,,
আমি এমন একটা তুমি চাই,,
এমন একটা তুমি চাই,,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেহ নাই,,
টু টু টু টু টু টু,,
.
সমাপ্ত