#মেঘ রৌদ্দুরের গল্প,পর্বঃ ২য় শেষ পর্ব
লেখাঃরাইসার আব্বু.
মেয়েটার কোমড়ের কাছে একটা হাত আমার। আরেকটা হাত মেয়েটার এলোকেশে। আমি মেয়েটার অনেক কাছে চলে এসেছি । এখন মেয়েটার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। মেয়েটা ভাবছে মেয়েটাকে লিপ কিস করবো, মেয়েটার ঠোঁট জোড়াও কাপঁছে , চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আমি খপ করে মেয়েটার শাড়ির আচল’টা ধরে ফেললাম।
মেয়েটার চোখ থেকে টুপ-টুপ করে পানি পড়তে লাগল।অামি শাড়ির আচল’টা টান দিয়ে মেয়েটার মাথায় তুলে দিলাম।
ঘোমটাতে মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখলাম ”
.
পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে হয়তো মেয়েদের বাঁকা ঠোঁটের হাসি।
.
আমি জিসান আহম্মেদ রাজ! আচ্ছা আপনাকে কি আমি নাম ধরে ঢাকতে পারি?( আমি)
.
হুম,আজকে রাতের জন্য আমি শুধু আপনার। আমার শরীরের প্রতিটা অংশের ন্যায্য দাবিদার আপনি! যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন!
.হঠাৎ,ঘরের কাঁটা জানান দিল, রাত ১২ বাজে। কথা বলল” রাত আর বেশি নেই, আমাকে ভোরে চলে যেতে হবে, এখনো আপনিতো কিছুই করলেন না! প্লিজ আর সময় নষ্ট না করে আপনি যে কাজের জন্য এখানে এনেছেন, সে কাজটা পূর্ণ করেন। সময় হয়তো বেশি নেই!( কথা)
.
ক্ষমা করবেন, আমি পুরুষ তবে কাপুরুষ নই! আপনি ঘুমান আমি আসি!
.
আজকে রাতের জন্য আমি শুধু আপনার!কথাটা বলে বুকের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে ফেলল।আমার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসল। আমি বুঝতে পারছি, এক অসহায় মেয়ে তাঁর মূল্যবান সম্পর্দ নিজ হাতে আমাকে তুলে দেওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছে । এদিকে কথা আমার কাছে এসেই আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট জোড়া মিলানোর আগেই ধাক্বা দিয়ে ফেলে দিলাম।
.
আপনাকে না বললাম আপনার সাথে কিছু করতে পারবো না।
.
আপনি তো আমাকে কন্টাক্ট করেছেন এক রাতের জন্য। আচ্ছা, আমার সাথে কন্টাক্ট করার টাকা’টা তো দিবেন?টাকা টা না হলে মায়ের কিছু একটা হয়ে যাবে। প্লিজ আপনি আমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে এসেছেন সে কাজ করেন, তবুও আমার টাকা’টা দেন। ( করুণস্বরে বলল)
.
বুঝতে পারলাম মেয়েটা, টাকার জন্য এসব করছে। হায়রে পৃথিবী কেউ টাকার জন্য, এসব করে, আবার কেউ আধুনিকতার জন্য।
.
আমি পকেট থেকে দশ হাজার টাকার ফাইলটা বের করে দিয়ে বললাম” এই নেন টাকা আর ভয় পাইতে হবে না”! আপনাকে একটা কথা বলবো?
.
পতিতাদের কাছে অনুমতি চাইতে হয় না! বলেন কি বলবেন?
.
আপনি কি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকতে পারবেন?
.
একি বলছেন, এ কথা মুখে নেয়াও পাপ! পতিতারা ভোগের পাএী, যত পারেন তাদের ভোগ করেন। তাঁরপর টিস্যুর মতো ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেনন ডাস্টবিনে। পতিতাদের সংসার করার স্বপ্ন তো দূরের কথা কাউকে ভালবাসাও অন্যায়। আমাদেরও ইচ্ছে করে, কাউকে ভালবাসতে। কারো কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের জোৎস্না দেখতে। মাঝরাতে গাঁ ঘেষে বসে পুকুরের পানিতে আলতা রাঙা পাঁ ডুবিয়ে প্রিয় মানুষটার মুখে, ভালবাসার গল্প শুনতে। মন চাই একটা ছোট্ট সংসার করত যে সংসারে সবকিছুর অভাব থাকলেও থাকবে না কোন ভালবাসার অভাব। কিন্তু এসব স্বপ্ন দেখি নিছক বোকামী। আমার ছোটবোন, কি বলেছিল শুনছেন” আমার ছোট বোনটাকে নাকি তার টিচার স্কুল থেকে করে দিয়েছে! কেন জানেন? সেই স্কুলের শিক্ষিকা হচ্ছেন সজিব আঙ্কেলের স্ত্রী! আর সজীব আঙ্কেল সেই দিনের ঘটনা উল্টা করে বলেছিল তাঁর স্ত্রীকে। নিশি আন্টি জানে যে আমি তাঁর স্বামীর সাথে অশ্লীল কাজ করতে চেয়েছিলাম। শুনেন আপনার যদি মন চাই আমাকে ভোগ করার যা ইচ্ছা করতে পারেন।যেভাবে ইচ্ছা নিজের কামতারণা মেটাতে পারেন আজকের রাতে।আমি চাইনা আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে আপনাকে জড়াতে। জানেন আজ আমি পতিতা না হয়েও এ অন্ধ সমাজের কাছে কলগার্ল! আল্লাহর কসম, আমার জীবনের আপনিই প্রথম পুরুষ যায় ঠোঁটের ছোঁয়া আমার ঠোঁঠে প্রথম স্পর্শ করেছে। যে আমার শারীরীক গঠন কিছুটা দেখেছে। কিন্তু এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না, অসুস্থ মা আর বোনকে বাঁচাতে নিজেকে কুরবাণী দেওয়া ছাড়া।আপনার নামটা আর ছবিটা হৃদয়ে অঙ্কিত করে নিলাম। কাল থেকে হয়তো অন্য কারো বিছানায় নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে সর্পে দিতে হবে। আচ্ছা বাদ দেন, আপনি কাঁদছেন কেন ছেলে মানুষের কাঁদতে হয় না ( কথা)
.
আমি না হয় কাঁদছি তুমিও তো কাঁদছো। জানো ছোটবেলায় মা মরে যায়! কোটিপতি বাবার এক ঘন্টা সময় হয়নি দিনে আমার সাথে কাঁটাবার। আমার বয়স যখন পাঁচবছর তখন বাবা আরেকটা বিয়ে করে নিয়ে আসে। আমি পেলাম নতুন মা। নতুন মা টা অনেক ভালো ছিল যে, কথায় কথায় আমাকে বলতো তোর মা’টা নষ্টামি করে তোর মতো কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছে। তখন বয়স ৭ বছর একটু বুঝতে শিখেছি। বাবার সাথে কোন কথা বলতাম না। ১১ বছর বয়সে লন্ডনে চলে যায়।পড়ালেখায় সুযোগে, কণা নামের একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। সেখান থেকে ভালোলাগা তাঁরপর ভালবাসা! মনে করেছিলাম, তাঁকে আকড়ে ধরেই নিজের কষ্ট ভুলে থাকবো, কিন্তু না, সে আমাকে ব্যবহার করেছিল,। আজ তাঁর বিয়ে, আজকের রাতেই ফুলশর্য্যা।জানেন তাকে এতটা ভালোবাসতাম তার জন্য কত মেয়েকে ইগনোর করেছি, কখনো কারো দিকে তাকাতাম না! কিন্তু সে কি করলো, অন্য ছেলেকে বিয়ে করে নিলো।
.
তাই মনের ক্ষুভে ভেবেছিলাম ” যদি আজকের রাতটা কারো সাথে কাটানো যায় কষ্টটা যদি লাঘব হয়। তাই আপনার সাথে দেখার, এবং এ পর্যন্ত আসা। কি হলো কাঁদছেন কেন। তবে আপনার মতো, আমিও জীবনের প্রথম আপনার ঊষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম। আচ্ছা আপনি কি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকবেন?( আমি)
.
মেয়েটা চোখের পানি মুছে বললো” হুম পারি একশর্তে তা হলো, আমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে হবে “।
আমি কিছু না বলে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মনে হচ্ছে এ পাওয়া পরম সুখের পাওয়া, পরম সৌভাগ্যের পাওয়া। দৈহিক মিলনের মাঝে সুখ অাছে, আছে কামতারণা মেটানোর প্রয়াস কিন্তু আত্নিক মিলনের মাঝে আছে পরম শান্তি। যা সকল ভালবাসার উর্ধ্বে। আলতো করে কথার কপালে চুমু একে দিলাম! কথা খুব কাঁদছে আমার শার্টটা তাঁরর চোখের সমুদ্রে নোনা জলে ভিঁজে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি পেয়েছি, তাঁকে, যাকে কবি জীবনান্দ দাশ না দেখে তাঁর সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছিল। দেখতে দেখতে জীবনের শ্রেষ্ঠ রাতটি পার করে দিলাম। পরের দিন সকালে, কথাদের বাসায় গিয়ে কথার মায়ের চিকিৎসা এবং জান্নাতের চিকিৎসার সবকিছু ব্যবস্থা করলাম।
.
ইনশা-আল্লাহ্ ছয়মাস পর সবকিছু ঠিক-ঠাক। জান্নাত আর কথার মা পুরোপুরি সুস্থ। মোটামুটি খুব জমকালো ভাবেই বিয়েটা হয়ে গেল। আজ আমাদের বাসর রাত। কথার লাল বেনারশি পড়ার কথা থাকলেও, আমার পছন্দমতো নীলশাড়িতে নিজেকে আবৃত্ত করে। নীল চুড়ি, চোখে কাজল সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে নীল পরী। আমি বিছানায় বসতেই আমার পায়ে সালাম করলো। আমি কথাকে নিজের বুকে টেনে নিলাম। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আলতো করে কপালে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম। আস্তে আস্তে কথার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম।
.
দিনগুলি ভালোই কাটছিল। কথা অন্তঃসত্ত্বা, খবরটা শুনে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি মনে হয়েছিল। দেখতে দেখতে নয়মাস পার হয়ে দশমাস চলছে! কথা বললো আজ তাঁর শরীরটা “খারাপ লাগতেছে, আমি যেন অফিস না যায়!
.
বিকালে কথাকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার বললো, অপরাশেন করতে হবে। রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল। অপরেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে কথা শক্ত করে হাঁতটা চেঁপে ধরেছে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট ছোট্ট করে বলছে” জানো রাজ, আমার না তোমাকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না, আমার খুব ভয় হচ্ছে, আচ্ছা রাজ আমি যদি মরে যায় তাহলে কি তুমি আরেকটা বিয়ে করবে? আমি ভালবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিয়ে দিবে? আমার ভালবাসার ভাগ আমি হারিয়ে গেলে কাউকে দিয়ো না! কথা দাও আমি হারিয়ে গেলে নতুন কাউকে বিয়ে করলেও, তাঁকে কলিজার টুকরা বলে ডাকবে না! কেমন? আমি মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো! এই কাঁদছো কেন তুমি। আমি মরে গেলেও আমার আত্মাটা তোমায় সবসময় ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রাখবে।( কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললো কথা)
.
এই কলিজার টুকরা, তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারি না, তোমার কিছুই হবে না। তুমি এমন বাজে কথা বলবে না! এদিকে ডাক্তার’রা কথাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চলে গেল।
.
আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে পাঁয়চারী করছি, হঠাৎ ডাক্তার দরজা খুলতেই দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম! ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো, সরি মিঃ রাজ সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না। আপনার স্ত্রী মরার আগে ওয়াদা করিয়ে দিয়েছিল, তাঁর জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁদের সন্তানকে বাঁচাতে। কারণ তিনি আর মা হতে পারবেন না। সরি, আমাদের কিছু করার ছিল না।
.
ডাক্তারের কথাটা শুনে পায়ের নিঁচের মাটি সরে যেতে লাগল। মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা করছে। দৌঁড়ে গেলাম কথার বেডে। বাচ্চাটা কথার পাশে রাখা। বাচ্চাটা কাঁদছে, কথার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা। কাপড়’টা তুলতেই চোখ থেকে টপ-টপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।কি সুন্দর মাযাবি মুখখানা মলিন হয়ে পড়ে আছে। কাজল কালো চোখদুটি দিয়ে আর কখনো তাকাবে না আমার দিকে। হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠছে স্মৃতির পাতায়।বাচ্চাটা কাঁদছে, হঠাৎ মনে হলো, কথা বলতেছে” আমাদের দুজনের কলিজার টুকরাটাকে বুকে নিবে না! বাচ্চাটার দিকে তাকাতেই দুচোখ ভরে গেল জলে, কি ভাগ্য নিয়ে এসেছিস জন্মের পর মায়ের দুধটুকুও খেতে পারলি না।
.
আর কাঁদিস না আজ থেকে তোর নাম রৌদ্দুর! তুই যে আমার আষাড়ো ঘনবরষায় বেঁচে থাকার আশার আলো। মেঘের মাঝে তুই যে রোদ্দুর হয়ে আসলি। এই বলে আমাদের দুজনের কলিজার টুকরা ছেলেটাকে গালে মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
সমাপ্ত
ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।