ভুলে যাবো তোমায়❣
শেষ পর্ব
এ্যাগ্নেস মার্টেল
বিছানা কেঁপে উঠলো জিসান এবার রাগ আর সংযত করতে পারলো না। সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো “ঝুম!!!!!!”
আমিঃ [কানে হাত দিয়ে] ও জামাই! চিৎকার দিয়ে লাভ নাই! 😌আমি আগে থেকেই শ্বশুর আব্বারে বলে রাখসি উনার ছেলে আজ গরিলার মতো চিৎকার দিতে পারে। তাই যেনো কানে তুলো দিয়ে ঘুমায়!
জিসানঃ ওহহহহ অসহ্য!
উনি ঐপাশ ফিরে শুতে গেলে টান দিয়ে আমার দিকে ফিরালাম। উনি রাগে লাল হয়ে গেছেন। গুটিসুটি মেরে উনার বুকের উপর ঘুমিয়ে পরলাম। উনি আমার হুট করা কাজে হতবিহ্বল হয়ে কতোক্ষন চেয়ে থেকে আমাকে ঠেলে উঠাতে লাগলেন।
আমিঃ [রেগে] বিয়ে করসি আপনাকে! তাও আমার কোন অধিকারই চায় না আপনার থেকে জোর করে। তবে এইটাতে আপনি রাজি থাকলেও চাই না থাকলেও চাই! পুরো বিল্ডিং কাঁপিয়ে এমন এক চিৎকার দিবো না এখন সব হম্বিতম্বি চলে যাবে! ড্রেন মার্কা জামাই!
কিছুক্ষন পর পরই উনি উসখুস করছেন আমি তবুও চুপ মেরে পরে আছি। উনার নড়চড়ায় না থাকতে পেরে রেগে তাকালাম আবার।
জিসানঃ [বিরক্ত কণ্ঠে] আমি ঘুমুতে পারছি না। সর বুকের উপর থেকে।
আমিঃ না ঘুমোতে পারলে নির্ঘুম রাত পার করেন তাতে আমার এক আনাও লস যাবে না আর না কিছু যায় আসবে। অভ্যাস করে নেন কয়েকদিনের জন্য! 😏কয়দিনই বা আছি এই পৃথিবীতে! যখন আমার মূল্যটা বুঝবেন তখন আর এই আমাকে ভিখারির মতো বারবার বুক চাপড়ে ফিরে চাইলেও আর পাবেন না।
উনি চুপ মেরে গেলেন হয়তো বোঝার চেষ্টা করছেন লাস্টের কথাগুলো। তার মাদকতাময় ঘ্রানে আস্তে আস্তে ঘুম এসে ভর করতে লাগলো চোখের পাতায়। ভালো উনি নাই বা বাসলেন আমি তো বাসি। ক্ষণিকের সময় আছে আমার হাতে এইটাই বা কম কি পাচ্ছি। উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ ভিজে এসেছে, টুপ টুপ করে কিছু ফোটা পরতে লাগলো অঝোর ধারায়। উনি আলতো করে শুধু মাথাতে হাত রাখলেন। এইটাই আমার বড় পাওয়া। মৃত্যু পর্যন্ত তো বলতে পারবো মানুষটাকে আমি আপন করে পেয়েছি।
।
।
।
।
নিকিতাঃ [চুইংগামে বাবল বানিয়ে] তুই সত্যিই বাসর রাতে ঐভাবে নেচেছিস? স্টেপ বল না একটু! আমিও শিখে রাখি।
উৎসঃ [ধমকে] এই একদম শিখাবি না। এমনিতেই মাথা খায় এই মেয়ে আমার বাসর রাতে পরে তোর স্টেপগুলো শিখে মাইকেল জেকশন হয়ে যাবে।
নিকিতাঃ বেশি করবি না! ছেলে হয়েও যে তুই পাউন্ড করোস ঐটা কিন্তু____
উৎসঃ [আমার হাত টেনে] চল তো এখান থেকে তোর মুড অফ মনে হচ্ছে। ফুচকা চলবে?
উৎস আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কেনটিনে দেখি জিসান ভাই পকেটে হাত রেখে অগ্নিকুন্ডলী পাকিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি ভেবলা বনে উনার দিকে তাকিয়ে আশপাশে তাকালাম। কই কাউকেই তো চোখে পরে না আশপাশে এমন দৃষ্টির মানে কি তাহলে? নিকি রেগে উৎসকে কঠিন কয়েকটা গালি দিতে দিতে আসছে। আজকে হসপিটালে যেতে হবে। উৎসের হাত ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। জিসানকে দেখে উৎসও হাসি মুখে হাত ছেড়ে দাঁড়ালো। জিসানকে কিছুটা মনমরা লাগছে কিন্তু কেন?
আমিঃ [কপালে গালে হাত রেখে] ঠিক আছেন আপনি? মুখটা শুকনো লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে? [হাতঘড়ি দেখে] ইসসস দেড়টা বাজতে চললো খাননি এখনো তাই না? চলেন চলেন আমার দুই বেস্টুর সাথে আজকে খাবেন। ছোট থেকেই ওরা আপনার সাথে মিশার জন্য উসখুস করতো। আজ আপনি আমার হাসবেন্ড দ্যাট মিনস ওদের জিজু! ওয়াও কি কিউট সম্পর্ক। [শার্টের কোনা মুছড়ে] আজকে কিন্তু ফতুর হয়ে যেতে পারেন ওদের যন্ত্রণায়!
জিসান একধ্যানে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি খুশিখুশি হয়ে উনাকে নিকি আর উৎসের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। জিসানের আব্বু আর আমার আব্বু কলিগ হওয়ায় ছোট থেকেই উনাকে চিনি। আমি নাকি ছোট থেকেই জিসানভক্ত ছিলাম। জিসানও খুব আদর করতো আমাকে। দুই তিন বছরে উনার হিয়াকে পেয়ে আমাকে একদমই দেখতে পারেন না। সাথে উৎসকে তো ছোট থেকেই দেখতে পারে না। যার জন্য নিকি ইচ্ছে থাকা সত্তেও কথা বলেনি উনার সাথে। নিকির সাথে পরিচয় কলেজে। প্রথমটায় আমার আর উৎসের সাথে তার না পরলেও এখন আমাদের ছাড়া সে থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ। রেস্টুরেন্টে খেতে বসে জিসান চুটিয়ে গল্প করতে লাগলো আর আমি খাওয়া বাদ দিয়ে উনাকে ড্যাবড্যাব করে দেখে চলেছি। উনার হাসি, উনার কথা বলার ধরন, উনার গালের দুইপাশের টোল মূহূর্তেই সব শরীর দুলিয়ে হো হো করে হেসে উঠা সবই যেনো ব্রেনে স্কেন করে নিচ্ছি। আর কিছুদিন____!!!
জিসানঃ ঝুম আজকে তোর হস্পিটালে যাওয়ার কথা না? চল যায়!
আমিঃ আব আজকে না যাই, অন্য একদিন! আপনি কি করে জানলেন যে আজকে আমার হসপিটালে যাওয়ার ডেট?
জিসানঃ আন্টি বলেছেন। একমাত্র মেয়ে জামাই!
উনি গাড়ি চালাচ্ছেন আমি উনাকে সিটের উপর পা তুলে আরাম করে বসে দেখে চলেছি। উনি নিশ্চুপ হয়ে শুধু গাড়ি চালাচ্ছেন। নীরবতা কখনোই আমার প্রিয় না। তবুও সামনে দেখার মতো এত্তো আকর্ষণীয় সোপিজ থাকতে এই নীরবতাও কেমন ভালো লাগা মিশ্রিত লাগছে।
জিসানঃ [রেগে] ঝুম আমার বিরক্ত লাগছে প্লিজ অন্যদিকে তাকা!
রাগে লাল হয়ে যাওয়া চেহেরাতে কি দারূণ লাগে উনাকে! আচ্ছা আমি যখন থাকবো না উনি কি অন্য কাউকে এভাবে বিরক্ত হয়ে বলবেন অন্যদিকে তাকানোর কথা? আমার জায়গায় অন্য কেউ কি উনাকে এতোটা বিরক্ত করবে? ভিতরটা বিষিয়ে যাচ্ছে। বুকে মনে হচ্ছে কেউ পাথর চাপা দিয়েছে।
জিসানঃ [রাগ নিয়ে] তুই চোখ সরাবি কি সরাবি না? আমি কন্ট্রোল ছাড়া হয়ে________
উনি দ্রুত ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড়া করালেন। আমি আর একটুর জন্য মুখ থুপড়ে নিচে পরি নাই। নিরীহ শিশুর মতো আমিও জিসানের দিকে তাকিয়ে আছি।
জিসানঃ কি করলি তুই এইটা?
আমিঃ [ভ্রু কুচকে] কই কি করলাম?
জিসানঃ [গালে হাত দিয়ে] কিছু করিসনি?
আমিঃ হিহিহিহিহি কিছু করলে কি আমি এইখানে সার্ভাইব করে ঠিকে থাকতে পারতাম মনে হয় আপনার?
উনি গালে হাত রেখেই আবার গাড়ি চালু করলেন। আসলে কিছুক্ষণ আগে উনি যখন রেগে কথা বলছিলেন তখন উনার রাগি মুখটা এত্তোই কিউট লাগছিলো যে টুপ করে উনার গালে কিসসি দিয়ে দিসি। 😁সুযোগ থাকতে সৎ ব্যবহার করতে জানতে হয়! হসপিটালে এসে ডক্টর আঙ্কেল আমাকে কিছু পরিক্ষা নীরিক্ষা দিলেন। বললেন সামনের সপ্তাহে রেজাল্ট দিবেন। সন্ধ্যে হয়ে আসছে উনি আমাকে নিয়ে একটা খোলামেলা জায়গায় এলেন। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। নিজে ঘাসের উপরটায় বসতে বসতে আমাকে বসতে বললেন। এই জায়গাটাই সেই জায়গা যেখানে আমাকে বিশ্রীভাবে অপমান করেছিলেন উনি। উনাকে প্রপোজ করায় ঠিক তারপরই জেনেছিলাম তার গার্লফ্রেন্ড আছে তাও সেই মেয়েটা যার কিনা পরেরদিনই বিয়ে হতে চলেছিলো। ঘটনাটা হুবুহু আমার ব্রেন ধরে রেখেছে। কাহিনিটা কয়েকদিন আগের।
“আমি ভালোবাসার দাবি নিয়ে জিসান ভাইকে প্রপোজ করবো আজ! লজ্জায় আর ভয়ে কিছুটা কুকড়ে আছি। আবারো শিরায় শিরায় এক অঘোষিত বার্তা বলে চলেছে আজকের পর থেকে আমার ভালো লাগার শিহরণগুলো সব উনার নামে হবে। ফুলহাতে চোখ বারবার ঝাপ্টা মেরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। চারপাশ আজকে এতো রঙিন কেনো লাগছে? প্রেমরোগে বুঝি এমন হয়?
নিকিতাঃ হিহিহি ঝুমরানী কবে থেকে এসব হুম? আজ ফুল নিয়ে ডাইরেক্ট আমাদের বললি!
আমিঃ উফফ ভাই এভাবে বলোস কেন! শরম লাগতাসে!
উৎসঃ 🙄ওর আর কাজ কি সবসময় লজ্জা দেওয়া! গতদিন পারলে নিয়াজের প্যান খুলে দেয় ওর গার্লফ্রেন্ডের সামনে ছিঃ ছিঃ বোন হয়েও এমন দেখসোস?
নিকিতাঃ দাঁড়া তোরটাও____ ঐ দৌড় দেস কেন? দাঁড়া দাঁড়া!
নিকি উৎসের পিছনে যেতে নিলে আমি ওকে হাত টেনে ধমক দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলাম। ঘাম ছুটছে এখন। জিসান ভাই যা ত্যাড়া স্বভাবের হয়েছে এখন! কিছু হলেই শুধু ধমকায়।
নিকিতাঃ কুল বেবি কুল! এত্তো ঘামছিস কেন? আমি শিওর জিসান ভাইয়াও তোকে পছন্দ করে! কলেজে দেখিসনি তোকে এক ছেলে টিজ করার জন্য তাকে কি মারটাই না দিয়েছিলো! তারপর ঐ যে ঐদিনই তো, তোকে প্রপোজ করায় কি ধোলাই খেলো সিয়াম ভাইয়া। এমনকি নিজের বেস্টফ্রেন্ডকেও ধমকেছে তোর উপর যাস্ট ক্রাশ খাওয়ার জন্য!
আমিঃ [বিব্রত হয়ে] এসব তো আমাকে ছোট থেকে চেনে তাই করেছে মনে হয়! উনার বোনটা অনেক সুইট! ইসস আমার যদি এমন একটা বোন থাকতো! বেড লাক! কোন ভাই বোনই নেই আমার!
নিকিতাঃ হয়সে আর কনফিউজড হতে হবে না! আমি জানি উনি তোকে ভালোবাসে সো চিল!!!! ঐ যে এসে গেছে!
আমি কপাল আর নাকের ঘামটুকু মুছে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম। সাথে একটা মেয়েকে দেখে খুবই চমকালাম। তবে বন্ধু মনে করে পাত্তা দিলাম না।
জিসানঃ ঝুম, ডেকেছিস কেন?
আমি সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে উনার দিকে ফুল বাড়িয়ে দিলাম। সবাই প্রপোজ করে লাল গোলাপ দিয়ে আর আমি প্রপোজ করে এসেছি একগুচ্ছ তাজা কাঠগোলাপ দিয়ে। কতো কষ্ট করে পেরেছি এগুলো। এমনকি ডালের পাতাগুলোও ফেলিনি।
আমিঃ জি জি জিসান ভা ভাইইইই আ আমি আপ আপনাকে ভা ভালোবাসি!
চোখ বন্ধ করে কথাটা বলে এগিয়ে দিলাম ফুলগুলো! কিছু মূহূর্ত পর গাল গরম হয়ে উঠলো আমার। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় বাসায় কখনোই মার খাইনি আমি। এই প্রথম চড় খেয়ে তাই কান্নাগুলো আটকে গিয়েও বের হয়ে আসতে লাগলো। পাশের মেয়েটা রেগে কিছু বলতে এলে ধমক দিলেন উনি।
জিসানঃ হিয়া মাঝখানে আসবি না! [ফুলগুলো আমার মুখে ছুড়ে মেরে] এখনো ভাই ডাকিস তবুও ভালোবাসিস কোন মুখে আমাকে? লজ্জা হয় না তোর? ছোট থেকে বোন হিসেবে দেখেছি তোকে আর তুই কিনা!!! ছিঃ এইটা আশা করিনি তোর কাছ থেকে। এই যে এই মেয়েটাকে দেখছিস আমার জিএফ ও! তোর থেকেও ফর্সা কি আছে তোর? না আছে গায়ের রঙ না আছে রূপ! [নিকিতার চোয়াল ঝুলে পরার যোগার হলো, উৎস চোখমুখ শক্ত করে এগিয়ে আসতে নিলে নিকিতা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আটকে রাখলো তাকে] তুই তো আমার থেকেও নিচু লেভেলে বিলং করোস! তুই_______
নিকিতাঃ বাস বাস! [আমাকে উঠিয়ে শান্ত কন্ঠে] আপনার এটুকু দয়ার জন্যই আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবো! চল ঝুম!
আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলেও আমি ঐখানেই রয়ে গেলাম। আমার সুপ্ত এক আশা ছিলো জিসান ভাই নিশ্চিত আমাকে ভালোবাসবে! এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। নিকি উৎস রেগে চলে গেছে আমার ভুল ভাঙাতে না পেরে। আমি স্তব্দ হয়ে বটগাছের ছায়ায় বসে আছি। কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে চোখে যা দেখেছি আর শুনেছি তা সত্যি নয়। কিছুক্ষণ পর কিছু কথা কানে ছিটকে আসতে লাগলো।
হিয়াঃ সন্ধ্যা হয়ে আসছে কখন বাসায় যাবা। কালকে আমার বিয়ে আম্মু ওয়েট করছে তো!
জিসানঃ এই যে আরো একটু পাশে বসো। আরো একটু পরই চলে যাবো।
হিয়ার ফোনের রিংটোন হঠাৎ তুমুল শব্দে বেজে উঠলো। ফোন তুলে দেখে তার উডবির কল সে জিসানের দিকে তাকালে সে হেসে মাথা নাড়ে।
হিয়াঃ আমার এখন যেতে হবে! ভালো থেকো, পারলে আমাকে ভুলে যেও আর ভালো কাউকে বিয়ে করো।
জিসানঃ [হেসে] ভুলে যাবো তোমায়!
হিয়া দৌড়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়াতেই একটা গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ালো। ধুলো উড়িয়ে সে চলে গেলো দৃষ্টির বাইরে। হিয়া যেতেই জিসান ভাই চোখের কোনে জমা পানি আলতো হাতে মুছে নিলো। আমিও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম “আমিও ভুলে যাবো তোমায় জিসান ভাই!”
তবে ভাগ্য বোধহয় তা চায়নি। তার কয়েকদিন পরই জানতে পারলাম আমার হার্টে সমস্যা আছে। ডক্টর কি কি জানি আব্বু আম্মুকে বলেছেন আমি শুনিনি কিছু। তবে যা বুঝেছি আমার সময় খুব কম এই পৃথিবীতে। শেষ সময়টুকু খুব স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করলো ভালোবাসা পাবার জন্য। জিসানের সাথে বিয়ে করতে চাওয়ায় প্রথম প্রথম জিসানের বাবা-মা মানা করলেও আব্বু আম্মু কিভাবে জানি উনাদের বুঝিয়ে নিলেন। ঘরোয়াভাবে বিয়েটা আমাদের হয়েই গেলো। উৎস আর নিকিও কেন জানি আমাদের বিয়ের পর জিসান ভাইকে মেনে নিয়েছে রাগ করেনি। ভাবনার মাঝে জিসান ভাই আলতো হাতে আমার হাতটা ধরলেন।
জিসানঃ ঝুম কখনো কখনো আমরা যা দেখি তা কিন্তু সত্যি নয়!
আমিঃ এর জন্যই আজ আমি আপনার বিবাহিতা!
।
।
।
আর একটু পর আমাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হবে। সবাই মনমরা হয়ে আছে। শিফা (জিসানের বোন) এগিয়ে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো। আমি শুধু করিডোরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। জিসান আমাকে এতোই অপছন্দ করে যে বাঁচবো না মরবো এই সিচুয়েশনেও দেখতে আসলো না! খুবই কষ্ট লাগছে এর জন্য! আমি চাই না আজকের অপারেশনটা সাকসেসফুল হোক। হার্ট রিপ্লেসমেন্ট করে নাকি কি কি করবেন ডক্টররা। আফসোস নেই আর। যে স্মৃতিগুলো উনার ব্রেনে ভরে দিয়েছি তাতে উনি না চাইলেও বাধ্য হয়ে মনে রাখবেন আমাকে। আচ্ছা আমার মতো কি কেউ উনাকে উনার রাগে রক্তিম চেহেরায় মুগ্ধ হয়ে গালে হুট করেই কিস দিবে? আমাদের বাসর রাতের সেই কাহিনির মতো কি উনার দ্বিতীয় বিয়ের বাসরের কাহিনিটাও ইন্টারেস্টিং হবে? উনার বুকে জোর করে নিজের ঘুমানোর জায়গা কি আমার মতো করে করতে পারবে? ইস খুব করে জানতে মন চায়ছে এসব! আচ্ছা উনার দ্বিতীয় বউটা কি একদম ধবধবে ফর্সা দেখে বিয়ে করবেন উনি? এসব ভেবে চোখের কোনে পানি এসে চিকচিক করতে লাগলো।
শিফাঃ ভাবি তুমি ভুলটাকে সত্যি ভেবে আসছো আসলে ভা ভাইয়া এখন এখানে নেই কারন______
শিফার কথা মধ্য অবস্থাতেই শেষ হয়ে এলো। একজন নার্স এসে আমাকে নিয়ে গিয়ে অপারেশনের হালকা নীল পোশাকটা পরে নিতে বললো। আমি শিফার হাত চাপড়ে আসস্থ করলাম।
আমিঃ বেঁচে ফিরতে পারলে দেখা হবে। তোমার ভাইয়াকে বলো আমি ওকে অনেক বেশিইই ভালোবাসি। সেই ছোট্ট থেকে।
আমার কথায় শিফা চমকে তাকালো। আমি চোখে পানি নিয়ে আবারো আশপাশে তাকালাম। না উনি নেই।
।
।
।
।
জ্ঞান ফিরার পর অনেকক্ষন নিশ্চুপ হয়ে থাকলাম। চোখে ঝাপসা দেখছি এই মূহূর্তে। চোখ সয়ে আসার পর দেখলাম শিফা কান্নাভেজা চোখে মুখটা হাসি হাসি করে চেয়ে আছে।
আমিঃ তোমার ভাইয়া_______
শিফাঃ আপু এইটা নাও! আমি আসি।
শিফা দৌড়ে রুমটা ত্যাগ করলো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি। মাত্রই তো হাসলো মেয়েটা। দেখি কার জানি ডায়রি দিয়ে গেছে। প্রথম পেজ খুললাম দেখি কোন মেয়ের ব্যাকসাইড থেকে স্কেচ করা। নিচে লেখা “আমার প্রেম”। লেখাটা জিসান ভাইয়ের। ভিতরটা আবারো ধুক করে উঠলো। আমি সইতে পারবো তো উনার অন্য কাউকে নিয়ে লেখা? কাঁপা হাতে পেজ উল্টালাম দেখি খালি! পরের পৃষ্ঠাটাও খালি। এরকম চার পাঁচ পৃষ্ঠা খালি পেয়ে তাড়াতাড়ি উল্টাতে লাগলাম পেজ। ধৈর্য কম বলে এবার লাস্ট পৃষ্ঠায় চলে গেলাম দেখি সেখানেও কিছু নেই। রেগে ডায়রি ঝারা মারলাম, কিছু শুকনো ফুল চ্যাপ্টা কাঠি আর পাতা পরলো। সাথে একটা ইয়া বড় কাগজ। কাগজটাও ফাকা ব্যাপার কি? এবার মধ্যেভাগ করে ডায়রি খুললাম।
“ডায়রিটা আমায় আমার প্রথম প্রেম দিয়েছিলো। ছোট্ট ছোট্ট হাতে আমার স্কুলে ফার্স্ট হওয়ার কথা শুনে কিনে এনে দিয়েছিলো সে। তখন শুধু ভেবেছিলাম এইটা আমি একদম সোপিজ করে রাখবো। কখনোই ব্যবহার করার প্রয়োজন পরবে না এর। কিন্তু আজ বুঝছি ডায়রিটা আমার কত্তো প্রয়োজনের। যে দিয়েছিলো তার নামেই লিখছি। ঝুম! আমি এত্তো কাব্য টাব্য পারি না রে! আমি তোকে অনেক বেশিইইই ভালোবাসি! সেই ছোট্ট থেকে। ব্রেন টিউমার ধরা পরেছে আমার তাই তোর থেকে দূরে দূরে থাকছি। এমন জায়গায় হয়েছে যে ডক্টররাও কিছু বলতে পারছেন না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাই তো তোকে জড়াতে চাই না। ইচ্ছে ছিলো তোকে বিয়ে করবো! ছোট্ট সংসার হবে, সারাদিন রাগা রাগি করে দিনশেষে তুই এই আমার বুকেই ঘুমাবি! তুই তোর বড় বড় কাজল টানা চোখগুলো দিয়ে সবসময় মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকবি আমার দিকে। খিলখিল করে হাসবি। রাত বিরাতে হুট করে ঘুরতে বেরোবার বায়না ধরবি। আমি হেসে তোকে নিয়ে পারি জমাবো রাতের আধারে। সবই পূর্ণ হলো তবে এর সময়সীমা খুব কম রে! তুই কি ভেবেছিলিস তোর হাতে সময় কম এর জন্য বাবা মা আমাকে তোর সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে না? হাহ তোকে তো শিফার থেকেও বেশি ভালোবাসেন উনারা! তবে যখন শুনলেন তোর হার্টের সমস্যা বাঁচা মরার শিওরিটি নেই শেষ সময়ে আমার সাথে থাকতে চেয়েছিস তখন তারা বাধ্য হয়েছে মানতে! আমাকে না বলায় খুব রেগে ছিলাম ঐদিন! আমি চলে গেলে তোর কি হবে এইটা ভেবে? তবে শেষ সময়ে তুই পাশে থাকবি ভেবে কিছুটা সুখীও লাগছিলো নিজেকে। বাসর রাতে তোর লাস্ট কথাটা বুকে গিয়ে বিধেছিলো পুরো। পরেরদিন আন্টির থেকে তোর ব্যাপারটা জানতে চাইলে তিনি অবাক হন প্রচুর! তিনি ভেবেছিলেন আমার বাবা মা হয়তো বলে নিয়েছে আমাকে! তোকে ঠিকমতো বোঝাতেও পারলাম না যে ভালোবাসি তোকে কতোটা। তোর চোখের পানি কতোটা পোড়ায় আমাকে ঐদিন তুই এইটা মনে করে কাঁদছিলি তাই না যে আমার ভালোবাসা পাওয়া হলো না! আমিও কাঁদছিলাম কারন তোর এই ভালোবাসাটা আমার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হলো না। এই তুই কিন্তু নিজেকে অপরাধী ভাববি না! তোর জন্য কিন্তু আমি তোকে আমার হার্ট দেইনি। তোকে সেটা দিয়েছি নিজের স্বার্থেই কারন আমি চায় সবসময় তোর কাছে তোর আশেপাশে থাকতে। কিন্তু আমার সময়সীমা খুব কম। তুই এই যে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ পাচ্ছিস আমি কিন্তু পাচ্ছি না তাই সুযোগটা কাজে লাগালাম। তোর মাঝেই আমি বেঁচে থাকবো। বাঁচাবি না আমায় ঝুম? ঐদিনের জন্য সরি রে! তোর খুব কষ্ট হয়েছিলো বুঝি ঐদিন? আমি সরি তোর যা কষ্ট হয়েছিলো আমারো তার চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছিলো। ভালোবাসি তোকে। আমাকে ভুলে এক নতুন জীবন শুরু করিস। আমি চাই ভালো থাক তুই! তোকে ভালোবাসি খুব!”
পেজগুলো পড়ে চুপ মেরে বসে আছি। পেজটাতে পানির ছোপ পরে আছে। আমি কান্না করতে করতে আলতো করে তাতে ঠোঁট ছোয়ালাম। ডায়রিটা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। কিভাবে ভুলে যাবো তোমায়?
সমাপ্ত_____________❣