ভুলে যাবো তোমায়❣ পর্ব ০১

ভুলে যাবো তোমায়❣
পর্ব ০১
এ্যাগ্নেস মার্টেল

কিছু অনুভুতি একান্তই নিজের হয় যাতে আমাদের কোন হাত থাকে না মি. জিসান! আমি জোর করবো না আপনাকে! যেদিন মন চাইবে সেদিনই ভালোবেসেন আমায়। ততোদিন আপনার সাথে আছি এই অনেক। আমার অনুভুতিগুলো আমি এইভাবেই অনুভব করতে পারবো। কিন্তু ডিভোর্স? হাহ, আমি মরার পরও কোর্ট কাছারিতে গেলে পাবেন না। আপনি অন্য কাউকে চান এইটা আমি মেনে নিবো, ভালোবাসেন অন্য কাউকে তাও মেনে নিবো। কিন্তু মানুষটা সবসময় আপনি আমারই থাকবেন অন্য কারোর হতে চাইলে তা মেনে নিবো না। আপনার মনে এই এতোটুকু [আঙুল দিয়ে দেখিয়ে] জায়গা না পেলেও আমার আফসোস নেই। তবে আপনাকে হারাতে পারবো না। উপরওয়ালা যখন আমাদের বেধেই দিসে এক সম্পর্কে তখন আমি নিশ্চিত বিষয়টা আপনার কাছে অবিশ্বাস্য হলেও আমরা একে অপরের জন্যই তৈরি। চান তো ভুলে যাই আপনাকে? হাহাহা ঠিক আছে “ভুলে যাবো তোমায়” ভিতরের খবর কোনদিনও জানতে চাননি। তাই সত্যিই মন থেকে ভুলেছি কিনা তা জিজ্ঞেস করা হবে না আশা করি। কথাগুলো বলে উনার দিকে তাকালাম উনি উনার চমৎকার চোখ দুটো গোল গোল করে চেয়ে আছেন। হয়তো রীতিনীতি অনুসারে গল্পের নায়ক নায়িকাদের মতো আমাকে বলতে চেয়েছিলেন “নাহহহহহহহহ ঝুম আমি এই বিয়ে মানি না! ছয় মাস বা এক বছর পর ডিভোর্স দিয়ে দিবো!” উনার স্বপ্নে বুড়ো আঙুল দেখাতে তো ভারী মজা!

আমিঃ পাশে ঘুমুতে এলার্জি হবে কি আপনার?

জিসানঃ [বিরক্ত হয়ে] তুই না তুমি করে বলোস আপনি টাপনির কি ভং ধরলি!

আমি বিছানায় আয়েশ করে বসে গহনা খুলতে লাগলাম। এর বিরক্তিটাও ভাল্লাগছে। এই ছেলেটাকে আমি এখন যখন চাইবো তখনই দেখতে পাওয়ার যেকোন বাহানা বানাতে পারবো ভাবতেই সুখ সুখ লাগছে। এই অধিকার অন্তত আমায় আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন এইটাতেই লাখ লাখ কি পুরো ইউনিভার্স সমান শুকরিয়া উনার কাছে।

আমিঃ আমার বদ্ধ মনটা জানেন খুবই বেহায়া! ঐ যে ঐদিন আপনি আমায় কতো অপমান করলেন একটুকও লাগলো না। বরংচ মনে হয়েছে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা এইটা! হিহিহি সরেন সামনে থেকে আপনাকে সামনে দেখতে পেলেই আমার কথাগুলো লিমিট ছাড়া হয়ে যায়! আর শেরওয়ানিতে যা লাগছে না, যাস্ট হিরো আলম ফেইল!

জিসান রেগে পাগড়ি ছুড়ে চলে গেলো। তাকে কথা বলতে সুযোগ না দেওয়ায় হয়তো রেগে গেছে। তাতে আমার কি? এর রাগটাও কি সুন্দর! আও এর রাগ দেখলেও আমার প্রেম প্রেম পায়! হিহিহি আই থিংক আমি আল্ট্রা ক্রাশখোর হয়ে গেসি। উনি ওয়াশরুমে ঢুকেও বেরিয়ে এলেন। কাপড় নিয়ে আবারো দড়জা শব্দ করে ঢুকে গেলেন আমি হাসছি। ইস কতো খারাপ ভাগ্য উনার! যাকে চান না উনি তাকেই পেতে হলো জীবন সঙ্গী হিসেবে। হুহ! আমিও ঝুম আমার ভোলার স্টাইল আলাদা নাহলে চলে? এমনভাবে ভুলবো আপনাকে যে আপনি মনে মনে সেই হিয়াকে ভুলে যাবো বলতেও ভুলে যাবেন মি. হাই লেভেলের ক্রাশ! উনি বের হতেই আমি মুচকি মুচকি হেসে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। বেটা তোর জীবনটাই যদি ঝুমময় করে না দিসি! বের হয়ে দেখি উনি সটান হয়ে সুয়ে আছেন বিছানায়।

আমিঃ [গলা খাকারি দিয়ে] কি গো প্রানপতি, ডায়লগ দিবেন না? আমি যে খুবই আশান্বিত হয়ে আপনার ডায়লগের জন্য অপেক্ষা করছি!

জিসানঃ [বিরবির করে] আস্তো একটা প্যারা! বাবা যে কোন দিক বিবেচনায় এনে একে আমার বউ বানায় দিলো কে জানে!

আমিঃ [দাঁত বের করে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে] দাঁড়ান কিছু স্মরণীয় ডায়লগ দেই যা এই মূহূর্তে আপনি ভুলে গেছেন।
১/দেখো ঝুম আমি তোমার সাথে এক বিছানায় ঘুমুতে পারবো না!
২/আমার মনে শুধু হিয়ার বসবাস!
৩/তুই অনেক গন্ধ তোর সাথে আমি একি বেডে থাকতে পারবো না!

জিসানঃ ওয়েট এই ৩ নাম্বারটা আবার কেমন ডায়লগ!

আমিঃ এইটা মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট ডায়লগ যা গল্পে আর টিভি সিনেমাতে দেওয়া হয় না! তবে এইটা দিতে হবে! কারন ঐসব ডায়লগের চেয়ে এইটা বেশি এফেক্টিভ!

জিসানঃ [চরম বিরক্তি ফুটিয়ে] তোর ডায়লগ তোর কাছেই রাখ প্যাচাল পারতে হলে বারান্দায় যেতে পারিস! আমার কান পঁচানোর কোন রাইট তোর নাই!

আমিঃ আপনি অনেক আনরোমান্টিক বুঝেছেন মি. শাফি? মেটার না আজকে বাসর রাত বলে কথা! তাও আমার! ইউনিক নাহলে চলে বলেন!

জিসান বিরক্তি আর রাগ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে যেতে নিলে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আমিঃ [ভ্রু নাচিয়ে] ভয় পেলেন মি. জিসান? হিহিহিহি ভয় পেলেও কি করার বলেন? চলেন ভিটওয়ালা গানগুলোতে এ উড়াধুড়া নাচি! এই ধরেন “দিলবার, সাকি সাকি, লাট লাগ গায়ি!” হ্যা হ্যা “লাট লাগ গায়ি” এইটা জোস হবে। আপনি নাচবেন হি__ সরি আমার সাথে বিয়ের শোকে! আমি নাচবো আনন্দে!

বলতে বলতে গান ছেড়ে দিলাম। বান্ধবীদের জানাতে হবে না? আমি কেমন ম্যামোরেবলভাবে বাসর রাত কাটিয়েছি! গান ছেড়েই আমাকে আর পায় কে নাচ না পারলেও গড়িলার মতো লাফাচ্ছি! জিসান ভাই আমার কাজে রাগ ভুলে হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছেন। ঘড়ি দেখলেন রাত দুইটা ছুই ছুই! হয়তো ভাবছেন বিয়ের ক্লান্তি আমাকে ছুতে পারেনি। কিন্তু উনাকে কে বলবে আমি সারাদিনই ঘুমিয়ে আসছি বাসা থেকে। আম্মু-আব্বুও ডাকেনি আমি শোকে আছি ভেবে। আর যে ঘরোয়াভাবে বিয়ে হলো!

আমিঃ [লাফাতে লাফাতে] আরে আরে নাচেন না কেন? আমিও তো নাচ পারি না। তাতে কি লাফাতে তো সমস্যা নাই। [হাত টেনে ধরে] লাফান লাফান!

জিসানের হাত ধরে লাফাতে শুরু করলাম। জিসান হাত ঝারা মেরে ছেড়ে বিছায়ায় চোখ বুজে সুয়ে পরলো। আমি আরো ঝাকানাকা গান ছেড়ে এর চোখের সামনে গিয়ে নাচছি উড়াধুড়া। একবার চোখ টেনে জিজ্ঞেস করলাম নাচবে কিনা! সে উল্টো ঘুরে কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো। আমি তবুও পিঠে চিমটি দিয়ে দুরে সরে লাফাচ্ছি! সে রেগে তাকালো। রাগ সংযত হচ্ছে না বোধহয় আর! আমি দূরে সরে ঢেই ঢেই করে নাচছি আরো।

জিসানঃ [মুখ ঢেকে] পুরাই পাগল, আগে যাও ভালো ছিলো বিয়ের পর দেখি তাও গেছে।

লাফাতে লাফাতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। উফফ অনেক সেলিব্রেশন করলাম। আরো মনের সুখে লাফালে নিশ্চিত পাগলা গারদে নিবে এই ছেলে আমাকে টেনে! ক্লান্ত হয়ে বিছানা কাপিয়ে ধুপ করে জিসান ভাইয়ের পাশে পরলাম। বিছানা কেঁপে উঠলো জিসান এবার রাগ আর সংযত করতে পারলো না। সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো “ঝুম!!!!!!”

চলবে___________❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here