নাগিন_কন্যা ৬ষ্ঠ পর্ব

#নাগিন_কন্যা
৬ষ্ঠ পর্ব

চন্দ্র এখন পুরোপুরি একটা সাপ হয়ে গেছে। মাথা কিছুটা ঘুরিয়ে নিজের লেজ ওয়ালা শরীরটা দেখে নিল। অদ্ভুত রূপ পেয়েছে তার সর্পাকৃতি শরীরটা। ডোরা কাটা লাল , নীল , আর সবুজ রঙের চামড়া। শঙ্খচূড় দুটো তাদের মতো ছুটে চলেছে। সেও তাল মিলিয়ে তাদের পিছু পিছু ছুটছে। চন্দ্র অবশ্য মাঝেমধ্যে মাথা উঁচু করে চারপাশের পরিবেশ দেখে নিচ্ছে। যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। চারপাশে উঁচু – নিচু মাটি , ঝোপ , গাছের ডাল যেদিকেই সে তাকালো সাপ আর সাপ। নানান রকমের সাপ , অনেক গুলো তার পরিচিত জাত , বাকিগুলো অপরিচিত। সাপেদের তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি থাকে না। কিন্তু চন্দ্রের দূরের কিছু দেখতেও কষ্ট হচ্ছে না তেমন।

সে অনুধাবন করলো তার ছুটে চলা মোটামুটি সব সাপকেই আকৃষ্ট করছে। ওগুলোর দিকে সে যেমন তাকাচ্ছে , ওগুলোও তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে যাচ্ছে কোথায়? সে সাপেদের ভাষা বুঝতে পারলেও সাপ গুলোও কী তার ভাষা বোঝে! সে ওতো এখন ওদের একজন। ছোটা বন্ধ করে দিল সে। সামনের বড় দুটো শঙ্খচূড়ও ছোটা বন্ধ করে ঘুরে তার দিকে এগিয়ে আসলো। চন্দ্র বলতে চাইলো , আমাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? মনে প্রশ্নটা এনেই লেজ দিয়ে মাটিতে আঘাত করে একটা মৃদু কম্পন তুললো সে। সামনের শঙ্খচূড় সাপ দুটোও মাটিতে আঘাত করে একটা কম্পন সৃষ্টি করলো। চন্দ্র স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলো ওরা বলছে , আমরা তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। নিজের মতো সৃষ্ট হওয়া সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের অনুসরণ করো। তুমি চাইলে তোমাকে আবার তোমার ঘরে পাঠিয়ে দিতে পারি এখনই।

অভিভূত হয়ে পড়লো চন্দ্র যে তার প্রশ্নটা ওরা বুঝতে পেরেছে এটা দেখে। এই প্রথম চন্দ্র নিজের ভেতরে থাকা স্পষ্ট একটা শক্তির অস্তিত্ব অনুভব করলো। সে বুঝতে পারলো সে চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে , যা আগে তার ভাবনায়ও ছিল না। সে এই মুহূর্তে চাইলে নিজ ইচ্ছায় চোখের পলকে তার ঘরের বিছানায় চলে যেতে পারে। সে চাইলেই এখন সাপ থেকে মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ওদের অনুসরণ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শঙ্খচূড় দুটো আবার চলতে শুরু করলে সেও তাদের অনুসরণ করে চলতে শুরু করলো।

উঁচু-নিচু মাটি , ঘাস , ঝোপ-ঝার , গাছের শিকড় , মাটির ঢিবি পার হয়ে ছুটছে তো ছুটছেই।

অবশেষে একটা বড় গাছের শিকড়ের মাঝখানে একটা গর্ত মুখ চোখে পড়লো চন্দ্রের। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো শঙ্খচূড় দুটো নেই। মানে এই গর্তে ঢুকে গেছে। কেমন যেন একটু ভয় দানা বাধলো মনে। ঢুকে পড়লো গর্ত দিয়ে। মাথা ঢুকিয়েই বুঝতে পারলো ভুল একটা হয়ে গেছে। গর্তটা সমতল ভাবে সুড়ঙ্গের মতো এগিয়েছে ভেবেছিল সে। কিন্তু ওটা একটা কুয়ার মতো , মাথা ঢুকাতেই অদৃশ্য কিছুর টান অনুভব করলো নিচ থেকে। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে। ঝাপসা চোখে শুধুই আঁধার আর আধার দেখলো।

একটা ঝাঁকি খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লো , প্রচণ্ড আলোর ধাক্কায় চোখ দিয়ে প্রথমে কিছু দেখলো না। আলো সয়ে এতেই বিস্মিত দৃষ্টিতে চারদিকে তাকালো। এ কোথায় চলে এসেছে সে! যেন কোনো রাজ দরবার! সারি সারি বসার জায়গা গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি , কেমন অদ্ভুত নকশা আঁকা। নিজের শরীর স্পর্শ করে বুঝলো সে আবার মানুষ রূপে ফিরে এসেছে , পরনে রাতের কাপড়। দুই সারি বসার জায়গার মাঝখান দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চন্দ্র।

হঠাৎ খেয়াল করলো গাছের গুড়ির মতো দেখতে বসার জায়গা গুলোর ভেতর থেকে অনেক গুলো সাপের মাথা নড়াচড়া করছে। সবগুলো বসার জায়গায় তাকিয়ে একই রকম দেখলো সে। জ্বল জ্বল করে অনেকগুলো চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে। এরপর ভালো করে তাকিয়ে বুঝলো গাছের গুড়ির রঙের অনেকগুলো জীবিত সাপ একটা আরেকটাকে পেঁচিয়ে এমন ভাবে বসার জায়গা করেছে! মুগ্ধ হয়ে ওগুলো দেখতে দেখতে সামনে এগোচ্ছে চন্দ্র।

দরবারের একদম সামনে এসে দেখলো সিংহাসন আকৃতির দুটো চেয়ার পাশাপাশি রাখা। রাজা-রানীর জন্যই যেন। এগুলোও কাঠের নয় , জীবিত সাপেরা একসাথে তাদের শরীর জড়িয়ে এগুলো তৈরি করেছে। খুব ভালো করে তাকালেই কেবল তাদের কিলবিল করা শরীরগুলো দেখা যায়।

রাজ সিংহাসন দুটোতে ঝমকালো পোশাক পরা দুটো বামুন মানুষাকৃতি নর-নারী বসে আছে। পরনে জমকালো পোশাক , মাথায় অদ্ভুত রকমের একটা মুকুট। মুকুটের উপরের পাথর দুটো চিনতে পারলো চন্দ্র। অদ্ভুত আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ওদের চোখগুলো অস্বাভাবিক বড় , নাক খাড়া , কানগুলো আর ঠোঁটগুলো ছোট। পুরো শরীরটাই সাপের খোলসের মতো ফ্যাকাশে। এরাই সেই শঙ্খচূড়, যারা ওকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে! দুজনের চেহারারয়ই রাজকীয় ভাব।

সৌখিন পোশাক পরিহিত নারী বামুন চেয়ার থেকে নেমে এলো চন্দ্রের কাছে। শুদ্ধ মানুষের ভাষায় জানতে চাইলো :

তোমার কী ভয় লাগছে?

না।

তোমার কাছে কী মনে হচ্ছে চারপাশে যা কিছু দেখছো সবই মায়া , অবাস্তব ?

না।

তুমি কী বিশ্বাস করো এই মুহূর্তে আমরা মানুষের জগতের বাইরে অন্য এক জগতে আছি। এখানে শুধুই সাপের বসবাস। অন্য কোনো প্রাণীই এই জগতে আসতে পারে না। এবং তুমি আমাদেরই একজন।

চন্দ্র নীরব। কোনো উত্তর দিতে পারলো না। ওর সামনের নারী তার কোমর সমান লম্বা। তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে রইলো শুধু। ঠোঁট কাঁপছে তার।

তোমার বয়স ১৯ বছর না হলে তুমি পুরোপুরি আমাদের হতে পারবে না। এখনো তুমি অভিশপ্ত , মানুষের জগতের একজন, পুরোপুরি নাগিন নও। তুমি অর্ধেক সাপ আর অর্ধেক মানুষ। এই সর্পপুরীর রাজকন্যা এবং মানুষের জগতের এক কৃষকের কন্যা। তুমি এমন একজন ক্ষমতাবান কিশোরী যে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমরা অবশ্য চাইওনি তুমি জানতে পারো নিজের ক্ষমতার কথা সময়ের আগে। জানলে হয়তো ক্ষমতার অধিক ব্যবহার তোমার জীবনটাকে আরো জটিল , বিপদ জনক করে দিত। অবশ্য এর কিছু লক্ষণ এরমধ্যেই উপলব্ধি করেছ তুমি। তুমি কী এখন বিশ্বাস করো , তুমি একজন নাগিন কন্যা?

আমি বুঝতে পারছি না!

শোনো তাহলে , তুমি এখন দাঁড়িয়ে আছো সমস্ত দুনিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ সাম্রাজ্যে , যা তোমাদের দুনিয়া থেকে পৃথক। তোমাদের জগতের সাপ এবং এই জগতের সাপের মধ্যে একটা যোগসূত্র থাকলেও আমরা একে অন্যের জগতে মাতব্বরি তথা প্রবেশ করি না। আমাদের রয়েছে আলাদা একটা সাম্রাজ্য , ক্ষমতাবান অসংখ্য ইচ্ছাধারী নাগ-নাগিন বাস করে কেবল এই সাম্রাজ্যে। যারা কিনা চাইলেই সাপ থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে সাপ হয়ে যেতে পারে। আমাদের জগতের সবচেয়ে বড় পাপ হলো মানুষের রূপ ধরে মানুষের জগতে গিয়ে বসবাস করা। মানুষের উপকার কিংবা ক্ষতি করে নিজের খ্যাতি বাড়ানো। যারা এটা করে দুই জগতের শান্তি বিনষ্ট করে আমরা তাদের কঠিন শাস্তি দেই।

তাই এই দুই জগতের মাঝে একটা বড় দেয়াল আমরা তৈরি করে রেখেছি। এই জগতের যেকোনো সাধারণ সাপ কিংবা প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ইচ্ছাধারী নাগ-নাগিন কেউই চাইলেই মানুষের জগতে চলে যেতে পারবে না। মানুষের জগৎ থেকেও কেউ এই জগতে আসতে পারবে না। তবে এই দেয়ালেরও একটা দরজা আছে যা কিনা কেবল এই সাম্রাজ্যের প্রধান কিছু মানুষের জানা আছে। এরমধ্যে অবশ্যই আমি এবং তোমার পিতা আছি।

এবার চমকে উঠলো চন্দ্র। কথাটা কানে ঢুকে সেখানেই যেন বারি খেয়ে যাচ্ছে আর মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকতে পারছে না। সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, ‘আপনারা আমার পিতা-মাতা? এটা কিছুতেই হতে পারে না! ‘

হ্যা , এই ব্যাপারে কিছুটা ঠিক তুমি। আমরা দুইজনেই এখন নারী রূপে আছি। অথচ আমাদের রূপে কত প্রভেদ! তুমি উজ্জ্বল , আমি ফ্যাকাশে। তুমি লম্বা আমি খাটো। আমরা তোমার অর্ধেক পিতা-মাতা , বাকি অর্ধেক পিতা-মা তোমার পৃথিবীর , যাদের তুমি পিতা-মাতা হিসেবে চেন।

কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না চন্দ্র। এই প্রথম তার মনে হলো সে এক রূপকথার জগতে আছে। তার আশেপাশে যা কিছু আছে , ঘটছে সব স্বপ্নে। কী মানে এসব কথার!

এবার পুরুষ মানুষটি চেয়ার ছেড়ে নেমে এলো। সেও তার কোমরের কাছাকাছি উচ্চতার। চন্দ্রকে তার জীবন কাহিনী শোনাতে লাগলো।

‘আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগের কথা। নাগিন রানী লুপ গর্ভে সন্তানের উপস্থিতি টের পান। অন্যান্য সাপেরা এখানে স্বাভাবিক পৃথিবীর সাপের মতোই যৌনক্রিয়া , প্রজনন করলেও নাগ-নাগিনের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা নিয়ম আছে। কোনো নাগিন গর্ভবতী হলে সে কেবল একটি সন্তান জন্ম দিতে পারে এবং যতদিন ভ্রূণটি গর্ভে অবস্থান করবে ততদিন সে নাগিন থেকে সাপের রূপে ফিরে যেতে পারবে না। একজন মানুষ শিশুর মতোই জন্ম হয় তার বাচ্চার। এক্ষেত্রে নাগিনের গর্ভে একটা মানব ভ্রূণ এবং সাপের ভ্রূণ পাশাপাশি বড় হয়। পৃথিবীর হিসেবে ১৯ মাস গর্ভে থাকার পর জরায়ু থেকে প্রথমে সাপের সন্তান এবং পরবর্তীতে মানুষের সন্তান বেরিয়ে আসে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে। মানব শিশুটি বেরিয়ে আসলেই , সাপ শিশুটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ওটার উপর। শরীরের সব বিষ ঢেলে হত্যা করে ওটাকে।

মানব শিশু মারা গেলে মানুষের সমস্ত ক্ষমতা লাভ করে নাগ বা নাগিন সাপটি। জন্মের ১৯ বছর ( সময়ের গতি মানব জগতের মতোই) পর্যন্ত অবশ্য তাকে সাপের শরীর নিয়ে থাকতে হয়। মানুষের শরীরের কোনো সুবিধা তারা পায় না। ইচ্ছাধারী ক্ষমতা পায় উনিশ বছর কাটলে। তখন যেকোনো রূপে ফিরে যেতে পারে তারা। এই সাম্রাজ্যের রাজরানী নাগিন তখন ১৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ভয়ানক এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এই সাম্রাজ্যে রাজ নাগ এবং নাগিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। সেই ফাঁদে তারা পাও দেন। ফল স্বরূপ খুব কাছের কিছু মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করেন তাদের সাথে। ক্ষেপে উঠে ওদের বিরুদ্ধে হাজার নাগ-নাগিন এবং সাধারণ সাপ। ক্ষমতা থেকে নেমে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন ওরা বন জঙ্গলে। বুঝতে পারে , আর বেশি সময় নেই। এই সাপ সাম্রাজ্যে থাকলে ওদের খুঁজে পাওয়া কোনো বিষয়ই না। পেলেই খুন করা হবে ওদের।

তখন শুধু মাথায় আসে নিজেরা মরলেও তাদের সন্তানকে এই সাম্রাজ্য , সভ্যতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। আর কোনো উপায় না দেখে পৃথিবীর দরজা ব্যবহার করতে বাধ্য হন তারা। পৃথিবীতে প্রবেশ করেই একজন নারীর দেখা পান। অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে বুঝতে পারেন মেয়েটা বন্ধ্যা। যদিও নাগিনেরা গর্ভাবস্থায় মানুষ থেকে সাপ রূপ ধারণ করতে পারে না। তবুও এই দুনিয়ায় সেটা করতে পারলো রানী নাগিন। দুজনেই তখন সাপের রূপে তারা, আক্রমণ করেন নারীর উপরে। কামড়ে দেন শরীরের বিভিন্ন স্থানে। কোনো বিষ ঢুকিয়ে দেননি , নিজেদের সর্বোচ্চ অলৌকিক মণির ক্ষমতা ব্যবহার করে নারীর গর্ভে নাগিনের সন্তানের ভ্রূণ দুটো ঢুকিয়ে দেন। এবং এই আক্রমণের সব স্মৃতিই ভুলিয়ে দেন মেয়েটার। যাতে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে নেয় মেয়েটা।

এই কাজটা করার সময়েই রাজ নাগ আর নাগিন জানতেন মানুষের গর্ভ থেকে জন্মানো তাদের সন্তান তাদের মতো স্বাভাবিক নাগ বা নাগিন হবে না। বিশাল এক পরিবর্তিত মানুষ আর নাগিনের মিশ্রণ হবে। কিন্তু এছাড়া আর উপায় ছিল না। নিজ সাম্রাজ্যের বাইরে কোনো নাগিন জীবিত সন্তান প্রসব করতে পারে না। এবং মৃত সন্তান জন্ম দেয়ার সাথে সাথেই রাজ নাগিনকেও মরতে হতো।

তার এক মাস পরেই সেই নারী অর্থাৎ চন্দ্রের গর্ভ মা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান। কিন্তু একজন সন্তানের দুটো বাবা-মা থাকতে পারে না। তাই অভিশপ্ত হয়ে যান চন্দ্রের মানুষ বাবা এবং মা । বাবা মারা যান সাপের কামড়ে আর মা চন্দ্রকে জন্ম দিতে গিয়ে। কিন্তু পৃথিবীর নিয়মে সবকিছুই গণ্ডগোল হয়ে যায়। সেই নারীর গর্ভ থেকে প্রথমে বের হয় এক সাপ পরে একটা মানব শিশু। সাপটা মানব শিশুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ওকে হত্যা করতে চায় নিয়ম মতো কিন্তু সে নিজেই শিশুটির ভেতরে থাকা বিষের প্রভাবে মারা যায় এবং শূন্যে মিলিয়ে যায়। সাপের সব শক্তি চলে আসে চন্দ্রের ভেতরে।

উল্টো নিয়মে চন্দ্র বড় হতে থাকে মানব সমাজে মানুষ রূপে। ওকে রক্ষা করার দায়িত্ব , বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আড়াল থেকে সবই করেছে এই রাজ নাগ-নাগিন অর্থাৎ সর্প নর-নারী। সাথে নিজেদের সাম্রাজ্যে গিয়ে বিদ্রোহ করেছে নিজেদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য। দল করেছে ভারী।

চন্দ্রের ১৯ বছর হতে আর দুই বছর বাকি। তখন সে সম্পূর্ণ ইচ্ছাধারী নাগিনে রূপান্তরিত হবে। পুরোপুরি চলে আসতে হবে তাকে এই সাপের সাম্রাজ্যে। সাম্রাজ্যের অধিকাংশই এখনো শত্রুদের হাতে। যুদ্ধে পাশে থাকতে হবে ওদের। এখন যেমন সাপ তাকে রক্ষা করে ঐ জগতে , ইচ্ছাধারী শক্তি পাওয়া মাত্রই মানব জগতের সব সাপ ওর শত্রু হয়ে উঠবে। হত্যা করতে চাইবে তাকে। সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। তাই ওই স্বল্প স্থায়ী জগতের মায়া তাকে কাটাতেই হবে এই দুই বছরের মধ্যে। এক জাদুকরের প্রবেশ ঘটেছে ওদের ওয়ালিপুর গ্রামে। ওর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ওকে হবে নিজেকে।’

সব কেমন এলোমেলো লাগছে চন্দ্রের কাছে। কীসব আজগুবি কথা বলছে এরা! এর কতটুকুই বা সত্যি, বাস্তব! ভাবনার সুযোগ পেল না বেশি। মাথা কেঁপে উঠে চন্দ্রের। বামুন নর-নারী মুহূর্তেই আবার সাপে রূপান্তরিত হয়ে গেল। সেও চেষ্টা করে, কিন্তু নিজের ইচ্ছায় মানুষ থেকে সাপ , সাপ থেকে মানুষ হওয়ার ক্ষমতা এখনো পায়নি সে। মুহূর্তেই শূন্যে মিলিয়ে গেল সাপ দুটি। চন্দ্র অবাক হয়ে দেখলো , সিংহাসন এর সাপগুলো সব নীচে নেমে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। পেছন থেকে ঝড়ের শব্দের মতো শুনে আৎকে ঘুরে দাঁড়ালো সে , সাপের শরীরের তৈরি বসার আসনগুলো ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে যেন , কিলবিল করতে করতে শত শত সাপ সামনে পেছন থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। বুক ফেটে যাবে যেন তার আতঙ্কে। ওগুলো যেন কিছু যায় তার কাছ থেকে। কী চায়!

বড় ধাক্কা খেল একটা চন্দ্র। নিচে পড়ে যাচ্ছে । অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে আবার সবকিছু। কিসের আঘাতে জানে না জ্ঞান হারালো সে। চোখ মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো নিজের ঘরে, বিছানায়। বাইরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। তার পাশে বসে আছে তার প্রিয় শাঁখামুটি সাপটা। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে সে। কোন জগৎ থেকে ফিরলো সে ! বাস্তব , স্বপ্ন নাকি কল্পনা! নিজের নিয়তি ভেবেই গা গুলিয়ে উঠছে। …………………………
.
.
. . . চলবে . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here