মিথ্যে_মায়ার_শহর,#পর্ব_২

#মিথ্যে_মায়ার_শহর,#পর্ব_২
#কাব্য_চৌধুরী_নীল

সকালে শরীরটা খুব দুর্বল উঠতে কস্ট হয়। আম্মুকে ডাক দিলাম আম্মু দরজার সামনে এসে বললো কি হয়েছে আমি বললাম আমার শরীরটা খুব খারাব একটু ধরে উঠিয়ে ওয়াসরুমে দিয়ে এসো তখন অাম্মু যা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ….

মা বললো

আম্মুঃ মরে যা তুই দরকার নেই তোর মতো সন্তানের আমার ভাবতেও ঘৃনা হয় তুই আমার সন্তান

বলে চলে গেলো। যতটুকু শক্তি ছিলো তাও শেষ, মায়ের কথা শুনে। কিছু টাকা ছিলো ওসুধ খেলাম সুস্থ হলাম আস্তে আস্তে। তারপর থেকে আর একটেবিলে খাওয়া হয়নি। এমন কি লেখাপড়ার খরচ দেয়াটাও বন্ধ করে দিয়েছিলো আর বলছিলো থাকা খাওয়া বাদে কিছুই দিতে পারবে না। অনেক কস্টে টিউশন করে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতিনি। তারপর আর দেখা হইনি সামনা সামনি রোজার সাথে তবে দুর থেকে একটা ছেলের সাথে রিক্সায় ঘুরতে দেখেছি। তখন আমার একটু মুচকি হাসি আসছিলো মনটা বলছিলো হায়রে ভালোবাসা।

রহিম কাকার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম আমি বললাম কি হয়েছে কাকা। কাক বললো সেই কখন থেকে বসে আছি তুমি খেতে আসছো না সেজন্য দেখতে আসলাম।

আমি হাসলাম,, মনে মনে ভাবলাম কাকা তুমি দেখতে আসছো আর আমি যদি মরে পরেও থাকি পচা গন্ধ নাকে যাওয়ার আগে টের পাবে না। দুপরে খেয়ে বিকালে পার্কে গেলাম দেখা করতে ইভার সাথে। গিয়ে দেখলাম ইভা দারিয়ে আছে তারতারি করে গেলাম আর বললাম সরি লেট করে ফেলেছি।
চলো বসি বসার পর দেখলাম ইভা নাক সিটকাচ্ছে আমি বললাম

মুন্নাঃ তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে ইভাঃ ঘামের গন্ধ আসছে আমি

মাথা নিচু করে বললাম
মুন্নাঃ হেটে এসেছি তো।

মুন্নাঃ যার জন্য আসা সেটা বলি, বিয়ে করবে আমাকে?. ইভা রেগে বললো

ইভাঃ এগুলা বলার জন্য ডাকছো কাল আমার বিয়ে আজ এসব কি আমি চলে যাচ্চি।

আমি অনুরোধ করলাম যে বসো একটু।

মুন্নাঃ আমাকে তো তুমি ভালোবাসো তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?
ইভাঃ কি আছে তোমার বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা ভালো চাকরি। করেছো তো কোনোরকম অনার্সটা। আমাকে পাবার কোনো যোগ্যতাই তোমার নেই।
মুন্নাঃ তুমি তো বলেছিলে আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না.?
ইভাঃ হ্যা বলেছিলাম কিন্তু আবিরের সাথে কয়েকটা দিন কাটিয়ে বুঝতে পারছি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো । সত্যি তোমার কথা তেমন মনেই পরে নি আমার।আমি এসব নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাইনা আর আমি যাবো এখন নয়তো বাবা টেনশন করবে বলেই উঠে দারালো আর বললো পারলে ক্ষমা করে দিয়ো আর ভালো থেকো বলেই।

হাটা শুরু করলো। তাকিয়ে আছি আমি তার পানে। ভেবেছিলাম ফিরে তাকাবে না তাকায়নি হেটে গিয়ে রিক্সায় উঠলো গোধুলীর আলো তার মুখে পরতেই মুখটা জ্বল জ্বল করছে এ যেনো মুখে লাল আভা ফুটে উঠেছে এখন দেখে মনে হয় আমার ভাবনাটা ভুল নয় সে সত্যিই আগুন সুন্দরী।

রাতে ঘুম হলো না ইভার কথা ভেবে। বাবসায় মেহমান ভরপুর লোকসমাগম খুব। বাড়িটাকে সাজানো হয়েছে, খুব সুন্দর লাগতেছে বাড়িটাকে। যে যার কাজে ব্যস্ত সবাই রেডি হচ্ছে বউ আনতে যাবে। আমাকেও একটা পানজাবি দিয়েগেলো আম্মু রেডি থাকতে বলেছে বউ আনতে যেতে হবে কিন্তু আম্মু তো জানেনা যে আমার জীবনের একটা অংশ হারাচ্ছি আমি। সবার অবহেলায় চাপা পরে থাকে আমার অভিমান গুলো। কেউ বোঝেই না হয়তো বুঝবে কিন্তু সময় শেষে।
সবার সাথে রেডি হয়ে গেলাম বিয়েতে। দুর থেকে দেখলাম রোজাও এসেছে। আমার দিকে তাকিয়েছিলো কিছুক্ষন হয়তো ভাবছে এতো চালাক চঞ্চল প্রাণবন্ত মানুষটা এতো চুপচাপ কেনো তাও নিজের ভাইয়ের বিয়েতে।
প্রথমে বরকে তিনবার কবুল বলানো হলো এবার কনের পালা আমিও গেলাম দেখতে খুব ইচ্ছা ইভাকে বিয়ের সাজে দেখবো। পরীর মতো লাগছে ইভাকে ওর বর হওয়ার কথা আনমার ছিলো নিয়তির কাছে হার মানলো ভালোবাসা।

ইভা যখন প্রথম বার কবুল বললো আমার বুকে একটা চাপ অনুভব করলাম সাথে সাথে চোখ বন্ধ করলাম টুক করে একফোটা অশ্রু পরলো। সামলে নিলাম নিজেকে। বিয়ের কাজ শেষ করে ইভা কে নিয়ে বাসায় আসা হলো সবাই নতুন বউ নিয়ে ব্যস্ত আর আমি ব্যস্ত বেলকোনিতে দারিয়ে আকাশ দেখতে আর পুরোনো স্মৃতিচারন করতে।
আকাশটা একটুও মেঘলা না চাদ জ্বল জ্বল করছে কোটি কোটি তারা। আকাশে দেখলাম একটা তারা একা একজায়গায় আশেপাশে কোনো তারা নাই ভাবলাম ও হয়তো আমার মতো অবহেলিতো । অনেক কথা ভেবে মনে অভিমানের পাহার তৈরি করছি অথছো অভিমান ভাঙার মতো কেউ নেই। চোখ দিয়ে পানি পরছে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে ইচ্ছা করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদি কিছুক্ষন।

নাহ কাঁদবো কেনো পুরুষ মানুষের তো কাদতে নেই। পুরুষদের পাষান হতে হয় শক্ত হতে হয় কিন্তু আমি পারছিনা কেনো হয়তো স্পর্শকাতর জাযগায় আঘাতটা এসেছে সেজন্য।

কেটে গেলে সপ্তাহ খানেক ইভা মানিয়ে নিয়েছে খুব। বলতে হবে মেয়েটা খুব মিশুক। তাকে নাম ধরে বলাটাও ঠিক হচ্ছেন না আবার ভাবিও বলছি না। সকালে বের হচ্ছি একটা ইন্টার্ভিউ র জন্য ইভা ভাইয়া বলে ডাক দিলো খেতে। অসস্থিকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। হঠাৎ বাবা বললো হয়তো তারা আছে যেতে দাও।

নাহ চাকরিটা হলো না। কিন্তু কতদিন বসে বসে অন্যের ঘারের ওপর বসে খাবো। ছাদে যাবো সিগারেট খেতে,, দরজা খুলতেই দেখলাম দোলনায় বসে আছে ভাইয়া ইভা আমি চলে যেতে চাইলে ভাইয়া বলে থেকে যেতে আমারো দরকার ছিলো সিগারেট খাওয়ার তাই থাকলাম। খুব হিংসা হয় ভাইয়াকে ওর মতো ভাগ্য নিয়ে কেনো জন্মালাম না।সিগারেট খাওয়া শেষ করে চলে আসলাম। দিন দিন সিগারেট খাওয়ার মাত্রাটা বাড়ছে টিউশনের টাকার অর্ধেকের বেশি যায় সিগারেটে।

প্রায়ই দেখতাম ইভা আর ভাইয়াকে ছাদে আর বেলকোনিতে দেখি আর জ্বলি। যে ইভাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে সহ্য করতে পারতাম না সে আজ অন্যের বুকে ঘুমায়।

কেটে গেলো তিনমাস। মেহমান আসছে বাসায় ইভার আব্বু আস্মু। দুপুরে খেয়ে চলে যাবে। সবাই একসাথে কত আনন্দে খাচ্ছে আমি দুর থেকে দেখছি। কিছুক্ষন পর রহিম কাকা ডাক দিলো খেতে। আমিও গেলাম খেতে অনেক দিন হলো তেমন ভালো কিছু খাওয়া হইনি। খেতে বসলাম কাকা দিলো ইলিশের লেজ আর ডাল। কাকাকে বললাম কাকা আজ তো গরুর মাংশ রান্না করলাম আমাকে দিবা না। চাচা এমন একটা উত্তর দিবে কখনো আশা করিনি।

#চলবে????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here