তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৫,১৬

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৫,১৬
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৫ : #বিয়ে!!

আজ বিয়ে কথাটা শুনেই টয়ার পিলে চমকে উঠলো। মানে কি বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বিয়ে? সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কিচেনে গিয়ে ইয়াদের মায়ের সাথে তার মায়ের আলাপ কানে আসতেই টয়া যেনো আকাশ থেকে পড়লো। কাল রাতে যা শুনেছিল সব তাহলে সত্যি কেউ কাল এই ব্যাপারে কোনো কথা বলে নি তাই টয়া ভেবেছিলো তার হয়তো সব বোঝার ভুল কিন্তু এবার তো স্পষ্ট শুনেছে সে। টয়া স্ট্যাচুর মত সেখানে দাড়িয়ে রইলো। মিলি আক্তার আর টয়ার মা এই নিয়ে টয়ার সাথেই কথা বলবেন বলে যাচ্ছিল টয়াকে এখানে পেয়ে তাদের ভালোই হলো।
টয়া যা শুনেছে সেটা নিয়ে সে কল্পনাও করতে পারছেনা। টয়াকে এনে দুজনের সামনে বসালেন। টয়ার সামনে মিলি আক্তার আর তার মা।
টয়ার মা আর দেরী না করে বললেন,” শোন ইয়াদ ছেলেটাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। ওর পরিবার তোকে কতো যত্ন করে রেখেছে বলতো। তোর বাবা আর ওনারা মিলে আজই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চান। ইয়াদের বাবা আবার তোর বাবার পরিচিত আগের।”
” আর আমার ইচ্ছে? তার বুঝি কোনো মূল্য নেই? আমি এখণ এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না।” জোর গলায় বললো টয়া।

” টয়া তোমাকে এসবের মধ্যে এখন জড়াতে কেউ বলছেনা। আমাদের এখন বয়স হয়েছে এভাবে শহরে এসে থাকতে পারিনা। তোমরা একা একা থাকো কখন কার কি বিপদ হয়ে যায় সে চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কাটাতে হয়। আমরা চাই শুধু তোমরা একে অপরের খেয়াল রাখো। তাহলে আমরা একটু চিন্তামুক্ত হই। এক্ষুণি সংসার করতে কেউ বলছেন না তোমায়। শুধু হাতে কলমে রেজিস্ট্রি করা হবে। তোমার ভাইয়েরা আছে তারা আসবে আমদের আত্মীয় স্বজন তারা আসবে ধুমধাম করে তখন বিয়ে হবে। এখন এ বিয়ের কথা কাউকে জানাবারও প্রয়োজন নেই।”মিলি আক্তারের কথাগুলোয় টয়া চুপ করে ছিলো। তার মাথায় একটাই কথা ইয়াদকে সে বিয়ে করবে না।

টয়ার মা সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,” তোর কি পছন্দের কেউ আছে?” এই প্রশ্নের উত্তর শুনার জন্য ইয়াদের মা আগ্রহ নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া মাথা নিচু করে না সূচক মাথা নাড়ল। মিলি আক্তার যেনো শান্তি পেলেন।
” কাউকে পছন্দ না করলে এই বিয়েতে সমস্যা কি তোর?” মায়ের প্রশ্নে টয়া চুপ করে আছে। যে ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে সে ছেলেই আসল সমস্যা। টয়ার নিরবতা দেখে ইয়াদের মা বললো,” আমাদের বুঝি ভালোলাগেনি তোমার?”
টয়া ইয়াদের মাকে কষ্ট দিতে চায় না উনি অনেক আলাদা একজন মানুষ যাকে বন্ধুর মতো সব বলা যায়। টয়া মাথা তুলে নিচু স্বরে বললো,” আণ্টি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি সেটা বলিনি।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টয়া আরো বললো,” ঠিক আছে তোমরা যা আমার জন্য ভালো মনে করেছো আমি সেটা মেনে নিচ্ছি তবে ওই ছেলের সাথে আমি একঘরে থাকবো না।”
টয়ার এমন আযুক্তিক কথা শুনে টয়ার মা ধমক দিতে যাবেন এমন সময় মিলি আক্তার তাকে থামিয়ে বললেন,” টয়া তো ঠিকই বলেছে এখন একসাথে থাকতে যাবে কেনো? সবে তো মাত্র রেজিস্ট্রি হবে। তোমরা আলাদা থেকো সমস্যা নেই।”
যাক একটা বিপদ থেকে বাঁচার অনুমতি পেয়েছে ভেবে বিয়ের ভয়টা একটু কমেছে টয়ার তবে ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না।
এদিকে ইয়াদ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না হঠাৎ তার মা এসে বললো,” তোর টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে। দেখছিস আমি বলেছিলাম না?”
“টয়া বিয়েতে রাজি হয়েছে! হতেই পারে না”, নিশ্চয়তার সাথে বললো ইয়াদ
” রাজি হয়েছে তবে বলেছে তোর সাথে একঘরে থাকবে না। যাক সেটা বিয়ের পর তোদের পার্সোনাল ব্যাপার। সেটা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই। তোর বউ তুই বুঝে নিস।”
ইয়াদ বিস্ময় নিয়ে বললো,” আসলেই রাজি হয়েছে? কীভাবে সম্ভব?”
” মা থাকতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এবার তোরা বিয়ের পর মারামারি কর কিংবা চুলোচুলি কিন্তু একসাথেই থাক। ”

বিয়ের পেপার এ ওরা সহজেই সাইন করে ফেললো। বিয়ে বিয়ে কোনো অনুভুতি কেউ পেলো না। টয়া সন্ধ্যে বেলা নিজের রুমে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় তার মা হাতে একটা শাড়ি হাতে ঘরে এলো। যা চেয়েছিল সব তো করেই দিয়েছে আবার এ কোন আপদ সঙ্গে করে নিয়ে আসছে তার মা। এবার কি শাড়ি পড়তে হবে। মায়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে টয়া। টয়ার মা শাড়ি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বললো,”এভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। শাড়ি পড়ে বাহিরে এসো।”টয়া নানা অজুহাত দেখিয়ে বাঁচার চেস্টা করলো কিন্তু তাকে আজ শাড়ি পড়তে হবে। সবার সামনে শাড়ি পড়ে যেতে হবে কতটা embarrassing একটা কাজ। টয়া কোনো মতে শাড়িটা পরে বের হয়ে এলো। বাহিরে এসে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ইয়াদ, ইয়াদের মা বাবা সবাই বসে আছে। টয়া এদের দেখে আবার রূমে চলে যেতে চাইলো টয়ার মা টয়াকে জোর করে এনে ইয়াদের পাশে বসিয়ে দিলো। ইয়াদ টয়ার থেকে চোখ সরাতে পারছে না। বেগুনি রঙের শাড়িটাতে টয়াকে অপরূপা লাগছে। চুল গুলো খোলা রাখার তাকে যেনো আরো সুন্দর লাগছে। ইয়াদ সোফার এক পাশের উপরিভাগে এক হাত মেলে বসে ছিলো।নেভিব্লু রঙের শার্ট আর জিন্স প্যান্ট তাকেও মানিয়েছে।
টয়ার মা টয়ার মাথায় শাড়ির আঁচলটা তুলে দিলেন। টয়া সেভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে এগুলো কি শুরু হয়েছে তার সাথে।

একসাথে কিছুক্ষণ থাকার জন্য বড়রা ওদের ছাদে পাঠিয়ে দিল। টয়া আসতেই চাইছিলো না ইয়াদের সাথে টয়ার মা ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিলেন। টয়া ইয়াদের থেকে দশ হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ইয়াদের এখনো টয়ার বিয়েতে রাজি হওয়াটা অস্বাভাবিক লাগছে। ইয়াদ এক দৃষ্টিতে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া সেটা ভালোই বুঝতে পারছে কিন্তু সে তাকাচ্ছে না। কতক্ষণ এইখানে থাকতে হবে কে জানে? এই ছেলের সাথে আবার নাকি বিয়েও হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” গাল ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?”
টয়া আড় চোখে তাকালো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না কথা বললেই কথা বাড়ে।
” বিয়ের শোকে কি কথা বন্ধ হয়েগেছে?”, ইয়াদ কাটা ঘায়ে একটু নুনের ছিটে দিয়ে দিলো আর কি!
” আপনার সমস্যা কি বলুন তো? আপনিই এইসব করেছেন তাই না। সব আপনার প্ল্যান, এবার আমি সব বুঝতে পারছি।”, কড়া গলায় বলল টয়া।
ইয়াদ তাচ্ছিল্য করে বললো,” তুমি নিজেকে কি ভাবো বলোতো ? তোমাকে বিয়ে করতে এতো ঝামেলায় কেনো পড়তে যাবো আমি। মেয়ের কি অভাব পড়েছে?”
” তাহলে এ বিয়েতে রাজি হলেন কীভাবে? আপনার যাকে পছন্দ আমার থেকে ভালো better তাকেই বিয়ে করতেন।” তেজ দেখিয়ে বললো টয়া।
” হুম, ইচ্ছে তো এমনটাই ছিলো। কিন্তু কি করার বলো মা বাবার কথা তো ফেলতে পারি না।”, বলে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো টয়ার রাগী মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মুখে তো এতো কথা বলে তাহলে এখন অন্য মেয়ের কথা শুনে মুখ ফ্যাকাশে করেছে কেনো?
” ও আচ্ছা, বাবা মার চাপে বিয়েটা করেছেন!” , শান্ত গলায় বলল টয়া। টয়ার ভিতরটা কেমন জানি করে উঠলো ইয়াদের কথায়। তাহলে কি তার অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ।
” হুম , কেনো তুমি কি ভেবেছিলে?”, বলে ইয়াদ টয়ার দিকে ঝুঁকে এগিয়ে আসতেই টয়া মুখ সরিয়ে সামনের রেলিং ধরে দাড়িয়ে বললো,” কিছু ভাবিবি”, শান্ত ভঙ্গিতে বললো টয়া।
” তা তুমি কেনো রাজি হয়েছো? তুমিও কি বাবা মার চাপে?”ইয়াদের এমন প্রশ্নে টয়া শুধু হা সূচক মাথা নাড়ল টয়ার দৃষ্টি সামনে স্থির। বাতাসে টয়ার চুলগুলো উড়ছে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা ঘোরের মধ্যে চলেগেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,” তোমার পছন্দের কেউ নেই?”
” নিজের পছন্দের উপর থেকে আস্থা অনেক আগেই উঠে গেছে আমার।”, ইয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো টয়া। ইয়াদ নিজেকে সামলে নিলো।
টয়ার আর থাকতে ভালো লাগছে না। টয়া চলে যেতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে ফেললো। টয়া জোর গলায় বললো,” আমার হাত ছাড়ুন। আপনাকে আমি বারণ করেছি না আমার হাত ধরবেন না।”

টয়ার কথায় ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো। টয়া ইয়াদের এভাবে তাকে কাছে নিয়ে আসায় চমকে গেলো। টয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” কি জানি বলছিলে একটু আগে? আমাকে যেনো তোমার হাত না ধরি? শুনলাম না তোমার কথা। কি করবে তুমি শুনি?”
ইয়াদের হটাৎ এমন আচরণে ভেবাছেকা খেয়ে গেলো। কি বলছে এইসব! টয়া নিজেকে সামলে বললো,” আমি চিৎকার করবো। ”
বাতাসে টয়ার সামনের চুল গুলো চোখে এসে পড়ছে ইয়াদ চুল গুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে ঠোঁটে বাকা হাসি রেখে বললো,” তাই বুঝি। চিৎকার বন্ধ করার ওষুধও আমার জানা আছে।”
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” মানে?” ইয়াদ টয়ার কথায় ঝুকে এসে টয়ার ঠোটের দিকে তাকাতেই টয়ার কাছে চিৎকার বন্ধের ওষুধের মানে পরিষ্কার হয়ে গেলো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাগে বলে উঠলো,” আপনি…” বলেই থেমে গেলো।
” কি হলো থেমে গেলে যে বলো আপনি আমার বর।”, টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো ইয়াদ। টয়া তেজ দেখিয়ে বললো,” বলবো না। ছাড়ুন আমাকে।”
ইয়াদ টয়াকে আরো কাছে এনে বললো,” তাহলে আমিও ছাড়ছি না।”
টয়া ইয়াদকে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্ত কোনো লাভ হলো না। ইয়াদ বললো,” আচ্ছা তুমি যদি তিনবার জোরে জোরে বলো ইয়াদ আরফিন আমার বর তাহলে ছেড়ে দিবো।”
” আবার জোরে জোড়ে কেনো বলতে হবে? জীবনেও বলবো না।”, কড়া গলায় বলল টয়া।
” আমিও ছাড়বো না।”, কথার পিঠে কথা বললো ইয়াদ।
ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে টয়া এতে বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। এভাবে আর থাকা যাবে না, কোনো না কোনো বুদ্ধি বের করতেই হবে টয়াকে। টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” একটু এদিকে আসুন একটা কথা বলবো।”
ইয়াদ একটু ঝুকে এলো টয়া বললো,” কানে কানে বলি।”
টয়ার কথা শুনে ইয়াদের মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাবার উপক্রম হলো। টয়া ইয়াদের বুকে হাত রেখে কানের কাছে গিয়ে বলল,” ইয়াদ আরফিন ” খুব সুন্দর করে এতটুকু তো বললো তারপরে যা হলো সেটার জন্য ইয়াদ প্রস্তুত ছিলো না। টয়া সজোরে ইয়াদের কানের কাছে হিটলার বলেই ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে সফল হয়েই পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৬ : #Bye
লেখিকা :#নবনী_নীলা
টয়া পালিয়ে যাবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলে। আবার সেই হিটলারের হাতে পড়তে হলো টয়ার, শাড়িটা অনেক কষ্টে পরেছে সে। এবার যদি কোনো অঘটন ঘটে তখন। টয়া শাড়ির আঁচলটার অগ্রভাগ শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ আস্তে আস্তে আঁচলটা নিজের হাতের মুঠোয় পেচিয়ে নিতেই টয়ার বাধ্য হয়েই কাছে আসতে হচ্ছে। টয়া বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো,” দেখুন আমি অনেক কস্ট করে এই শাড়িটা পড়েছি। ছাড়ুন আঁচলটা না হলে আমি সামলাতে পারবো না।”

ইয়াদ টয়ার শাড়ির আঁচলটা হেচকা টান দিতেই টয়া একদম ইয়াদের কাছে চলে এলো। ইয়াদ হাতে পেঁচিয়ে রাখা আঁচলটা খুলে সেটা দিয়ে টয়াকে জরিয়ে দিয়ে বললো,” তোমার শাড়ি আর তোমাকে সামলানোর জন্য আমি তো আছি।”
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসতেই টয়া হকচকিয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার শাড়ির কুচি গুলোর ভাজটা ঠিক করে দিচ্ছে। টয়া সরে যেতে নিলেই ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে দাড় করিয়ে রাখাল। টয়ার অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করছে। ইয়াদ মনোযোগ দিয়ে টয়ার শাড়ির কুচিগুলো ভাজ করছে। টয়ার সাত বছর পর আবার সেই অপলক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের কোণে যেনো পুরনো সেই অনুভুতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠেছে। ইয়াদ কুচি ভাজ শেষে টয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,” শাড়িটাও তো ঠিকমতন পড়তে জানো না।”
ইয়াদের কথায় টয়া ইয়াদের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে বললো,” ভাবছি শাড়ি কীভাবে পড়ায় সেটা শিখে রাখবো। ভালো হবে না?”

টয়া বিরক্ত হয়ে বলল,” অনেক ভালো হবে। নিজের বউকে শাড়ি পড়াইয়েন।”
টয়ার মনে যা আসে সে সেটাই বলে ফেলে কিন্তু সে নিজেই যে এখন ইয়াদের বউ, এ কিছুক্ষনের জন্যে সেটা তার মাথায়ই ছিলো না। ইয়াদ ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া ভ্রু কুঁচকে পিছাতে গিয়ে রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ টয়ার এক পাশের রেলিং এ হাত রেখে বলল,” তা বউ যখন নিজেই চাইছে আমি যেনো তাকে শাড়ি পরিয়ে দি তাহলে তো হলোই। তুমি একদম আমার মনের ইচ্ছাটা বলে দিয়েছো।”
টয়া কিছুক্ষন হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে থাকতেই টয়ার মনে পড়লো সে তার নিজেই এখন ইয়াদের বউ। টয়ার মুখ হা হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এসো শাড়িটা পড়িয়ে দেই।”বলেই ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই টয়া লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। টয়া এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো তারপর নিচু স্বরে তেজী গলায় বলল,”এগুলো বলতে আপনার লজ্জা করছে না।”
ইয়াদ সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট করে বললো,” না, একদমই না। আমার বউকে আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতেই পারি এতে লজ্জার কি আছে? আর নেক্সট টাইম থেকে আমি পড়িয়ে দিবো বুঝলে?”
ইয়াদের কথায় লজ্জায় এখান থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছে টয়ার। এতো সাবলীলভাবে এসব বলছে যেনো পান্তা ভাত আর পিয়াজ। টয়া লজ্জায় কথাও বলতে পারছেনা তাও মাথা নিচু রেখে শাসিয়ে বললো,” কোনদিন না। আমি আর জীবনে কোনোদিন শাড়ি পড়বো না। ”
“সে তোমার আর পড়তে হবে না আমিই পড়িয়ে দিবো।”,ইয়াদ ইচ্ছে করে কথাগুলো বলছে।
টয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে যদি সত্যিই এমন কিছু করে ফেলে। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা দরকার, দিন দিন অধঃপতন হচ্ছে এই ছেলের। এই বিয়েটা করে কি যে বিপদে পড়েছে কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা সে। টয়া মনে মনে বির বির করছে আর রাগে ফুলছে।
ইয়াদ উপহাস করে বললো,” যা বলার বলে ফেলো। মনে মনে নিজেকে বলে তো কোনো লাভ নেই।”
টয়া রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইল। টয়ার অবস্থা দেখে ইয়াদ হেসে ফেললো।
” আমি নীচে যাবো। সরুন তো। অসহ্য আপনি।”, বিরক্তি নিয়ে বললো টয়া।
” আচ্ছা ঠিক আছে।”, বলে ইয়াদ টয়ার হাত ধরলো।
” এতো দেখি মহা জ্বালা, আবার হাত ধরেছেন কেনো?”, বলে হাত ছড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে টয়া।
” একসাথে যাবো তাই।”,বলে টয়াকে নিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো।
” ছাড়ুন, ছাড়ুন।”, বলতে থাকলো টয়া। ইয়াদ সেটা কানে নিচ্ছে না। দরজার সামনে এসে টয়া আরো অস্থির হয়ে গেছে হাত ছাড়ানোর জন্য। ইয়াদ বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিলো বেশি জোর করতে গেলে টয়া ব্যাথা পেতো। টয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে নিজের রূমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পা তুলে খাটের উপর বসে পড়ল। আজ যা হয়েছে তা মনে পড়লেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে।


বাবা মা আজ চলে গেছে টয়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছিল সকাল সকাল কলিং বেলে টয়ার ঘুম ভাঙলো। পুরো মেজাজটাই বিগড়ে গেলো তার। এতো সকালে নিশ্চই ইয়াদ বিরক্ত করতে এসে গেছে। আজ ভার্সিটি নেই তাই কোথায় ভেবেছে একটু শান্তিতে ঘুমাবে সবকিছুতে পানি ঢেলে দিয়েছে। টয়া উঠে যেতে চাইছে না তাই অন্য দিকে ফিরে শুয়ে রইলো। কিন্তু বার বার কলিং বেল বাজায় টয়ার মেজাজ হারিয়ে উঠে বসলো। অনেক জ্বালিয়েছে এই লোকটা আজ একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। আজ এমন ভয় দেখাবো জীবনে তাকে আর বিরক্ত করার সাহস ইয়াদ পাবে না। টয়া রান্না ঘর থেকে ছুরি হাতে নিয়ে দরজা খুলেই ছুরি দেখায় তবে মজার ব্যাপার হলো টয়ার সামনে রিতু দাড়িয়ে। রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। টয়া ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো,” এই বেয়াদব তোর কাছে ফ্ল্যাটের চাবি নেই। সকাল সকাল আমার ঘুম নষ্ট করলি কেন? ইচ্ছে করছে তোকে … অসভ্য।”
আচমকা এমন কিছু দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে রিতু বললো,” বইন তোরে কি জ্বীনে ধরসে? এমন করতেছিস কেন? ”
” না তোকে তো মিষ্টি খাইয়ে, ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাগতম জানাবো। এতো দিন যে লাপাত্তা ছিলা তার বেলায়? আসছিস কেনো বান্দরবনের একটা বাঁদর ধরে ওখানেই থেকে যেটি।”, বলে গম গম করে হেটে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো টয়া।

” আরে মাইয়াডার মাথা দেখি পুরা গেছে।”, বলে ভিতরে ঢুকলো রিতু তারপর বললো,” তুই কি আজকাল বিছানার পাশে ছুরি নিয়ে ঘুমাস?”
রিতুর প্রশ্নে টয়া কটমট করে তাকাতেই রিতু বললো,” আচ্ছা বইন তুই ঘুমা। কথায় কথায় চেইত্যা যায় খালি।”

সকাল দশটা টয়া এখনও ঘুমাচ্ছে টয়া।এদিকে রিতু গোসল সেরে বেরিয়ে এসে পাউরুটি টোস্ট করছিলো। এমন সময় আবার কলিং বেল বাজলো। কলিংবেেল বাজার সাথে সাথে রিতু আতকে উঠলো। মানুষ হুট করে এভাবে কলিংবেল বাজায় কেনো? ভাগ্যিস টয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নি। রিতু গিয়ে দরজা খুলে হা করে রইলো রিতুর সামনে ইয়াদ দাড়িয়ে। ইয়াদকে মেরুন রঙের শার্টটায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,” কাকে চাই?”
এ মেয়েটা কে? ইয়াদ বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ বুকের কাছে দুই হাত গুজে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কে? ”
” আরে মশাই আপনি কি চান?”, চেঁচিয়ে বললো রিতু।
” টয়া কোথায়?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
“, আপনি টয়াকে চিনেন! আপনি কে বলুন তো?”, একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো রিতু।
ইয়াদের এতো প্রশ্ন শুনতে বিরক্ত লাগছে তাই সে ভিতরে চলে এলো। এভাবে ভিতরে চলে আসায় রিতু চমকে উঠলো।
” আরে আরে! যাচ্ছেন কোথায়?”রিতু বলতে বলতে ইয়াদের পিছু পিছু গেলো।
ইয়াদ টয়াকে সোফায় শুইয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রিতুর দিকে তাকালো। ইয়াদ রিতুকে বললো,” টয়া সোফায় ঘুমাচ্ছে কেনো?”
” ওর ইচ্ছা ওয় ঘুমাইসে আপনার কি সমস্যা? আপনি ভিতরে চলে এলেন কেনো?”, রিতু রাগ দেখিয়ে বললো।
ইয়াদ রিতুর কথায় কান না দিয়ে টয়ার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। টয়া হাত একপাশে রেখে পা আরেকপাশে দিয়ে পা ছুড়ে ঘুমিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার অবস্থা দেখে একটা নিশ্বাস ছেড়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। এটা দেখে রিতু হতবাক হয়ে গেলো।
” আপনি নিশ্চই নারী পাচারকারি তাই না। দাড়ান আমি এক্ষুনি পুলিশ এ কল দিচ্ছি।”, বলেই রিতু লাফালাফি করতে লাগলো।
ইয়াদ রিতুর দিকে রাগী চোখে তাকাতেই রিতু ভয় পেয়ে গেল। এদিকে রিতুর লাফালাফিতে টয়ার ঘুম অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে।
ইয়াদ টয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিতেই টয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে ইয়াদকে দেখতেই টয়া লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই ইয়াদের চেহারা দেখতে হবে এটা কল্পনাও করেনি।
” আ~আপনি এ~ খানে?”, কাপা কাপা গলায় বলল টয়া।
” হুম, তুমি সোফায় ঘুমাচ্ছিলে কেনো?”, ইয়াদ নরম গলায় বলল।
” আপনি এখানে কেনো?” টয়ার আবার এক প্রশ্ন।
রিতু একপাশে দাড়িয়ে হা করে ওদের দেখছে।
ইয়াদ টয়ার সামনে বসে বললো,” আমি ক্লিনিকে যাচ্ছি।”
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তো!” সে ক্লিনিকে যাচ্ছে যাক সেটার
সাথে এখানে আসার সম্পর্ক কি?
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু ভুত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here