গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্ব:৭,৮
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ৭ :#৭_বছর_পর
” তোর কাছে মেয়েদের এই ঘড়ি কেনো ইয়াদ?”, মায়ের এমন প্রশ্নে ইয়াদ অবাক হয়ে তাকালো। ইয়াদের মায়ের হাতে সেই ঘড়িটা। ইয়াদ কি বলবে বুঝতে পারছেনা তাই সে চুপ করে নিজের ব্যাগ গুছাতে লাগল।
” বিয়ে করবি না, পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না সবের পিছে কি? এই কারণ।”, গম্ভীর গলায় ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো।
ইয়াদ ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে বললো,” সবসময় বিয়ে বিয়ে করো কেনো মা?”
ইয়াদের প্রশ্নে ইয়াদের মা বললেন,” আমার বয়স হচ্ছে আমার ছেলের বউ, নাতি নাতনী দেখতে ইচ্ছে করছে না বুঝি। সারাদিন বাসায় একা একা ভালো লাগেনা।”
ইয়াদ নিজের কাপড় আবার গুছিয়ে নিচ্ছে। ইয়াদ বললো,” একা কোথায় বাবা তো এখন রিটায়ার্ড করেছে। তোমার সাথেই তো থাকে।”
” তোর বাবার মতো বেরসিক মানুষের সাথে আবার কিসের কথা। আর তুই কথা ঘুরাবি না এই ঘড়ি কার সেটা বল। এতো বছর এতো যত্নে রেখেছিস। তুই কি ভেবেছিস আমি জানি না, খালি প্রশ্ন করে উঠতে পারি নি।”
ইয়াদ মায়ের কাছ থেকে ঘড়িটা হাতে নিয়ে ব্যাগ এ রাখতে গিয়ে বললো,” ঘড়ির মালিককে পেলে নিয়ে আসবো তোমার কাছে।” বলে ইয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো।
ইয়াদের মা বললেন,” খুঁজে পেলে মানে? মেয়েটা কোথায়?”
ইয়াদ ব্যাগের চেইন লাগাতে গিয়ে একটু থমকে গিয়ে বললো,” হারিয়ে ফেলেছি মা।”
” কি বলছিস এসব? আর যাচ্ছিস বা কোথায়?”, মায়ের প্রশ্নের উত্তরে ইয়াদ বললো,” তোমাকে না বললাম এখান থেকে একটা এনজিও এর সাহায্যে একটা গ্রামে যাবো সেখানে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দিবো তারপর কাল রাতে ঢাকায় যাবো।”
” তুই নাকি নতুন শহরের হসপিটালে অ্যাটেন্ড করবি?”, ইয়াদ মায়ের প্রশ্নে না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” নতুন না মা আমার খুব চেনা এক শহর।” তখনই ইয়াদের ফোন বেজে উঠল। ইয়াদ ফোনটা টেবিল থেকে তুলে রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে বললো,” স্যার, আমি গাড়ী নিয়ে আপনার বাসার সামনে এসেগেছি।”
” আচ্ছা, আমার সব গোছানো হয়ে গেছে আমি বের হচ্ছি।”, বলে ইয়াদ ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে বললো,” মা ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার এক্ষুণি বের হতে হবে।”
ইয়াদ সব কিছু রেডি করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে গেলো। ইয়াদের মা আবার প্রশ্ন করলো,” বিয়েটা কি তাহলে করছিস না?”
ইয়াদ নিজের মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” করবো তো, যেদিন ঘড়ির মালিকে খুজে পাবো।” ইয়াদের মা আর কিছু বললেন না আজ এতো বছর ধরে একটা ঘড়ি আগলে রেখেছে তার ছেলে। তিনি নিজেও চান সেই মেয়ের সাথেই ইয়াদের বিয়ে হোক যাকে সে এতোটা ভালোবাসে।
ইয়াদ মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করায় ইয়াদ বেশি দেরি করলো না গাড়িতে উঠে রওনা হলো।
গ্রামটায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।
গ্রামের ভিতরের কোন জমিদার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এদিকে নাকি হোটেলের ব্যবস্থা অনেক দূরে। ইয়াদকে যে লোকেশন এ আসতে বলা হয়েছে সেখানে সে এসে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণ হলো। গ্রামের পরিবেশটা ভালোই লাগছে তার। এর মাঝেই ইফতি চলে এসেছে ইয়াদকে নিতে। ইফতি এই এনজিওর একজন সহযোগী।
” আপনার কোনো সমস্যা হয় নি তো?”, ইফতি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো।
ইয়াদ হেসে না সূচক মাথা নাড়ল। ইফতি ইয়াদের ব্যাগ হাতে নিতে চাইলো ইয়াদ তা দিলো না।
” আরে আরফিন সাহেব দিন ব্যাগটা এতক্ষন আসতে অসুবিধা হয় নি এবার হবে। বিশ মিনিট হাঁটার পর খাল পেরিয়ে বড় রাস্তায় গাড়ী পাবো বুঝলেন?”, বলে ব্যাগ ধরতেই ইয়াদ বললো,” it’s ok, আমি পারবো।”
ইয়াদ ড্রাইভারকে গাড়ী নিয়ে আশেপাশের কোনো গ্যারেজে বা কোনো খালি ঘরে রাখার ব্যাবস্থা করতে বলে ইফতির সাথে হাটা ধরলো।
ইফতি কথা বলতে বলতে হাটছে,” আরফিন সাহেব আর বইলেন না কেও এই গ্রামে এসে সাহায্য করতে ইচ্ছুক না। আমরা বলেছি টাকা দিবো সেটাতেও কেও রাজি না। আর আপনি তো ফ্রী ট্রিমেন্ট দিতে রাজি হয়ে গেলেন। অনেক কষ্টে তিন জন ডক্টরের ব্যাবস্থা করতে পারলাম।”
কথা বলতে বলতে ইয়াদ আর ইফতি বড় রাস্তায় পৌঁছে একটা রিক্সা ভাড়া করলেন। তবে এইগুলো একটু অন্য রকম অনেক জায়গা আছে আর একটু নিচু। ইয়াদ জমিদার বাড়িতে এসে একটু অবাক হলো। বাড়িটা পুরনো লাগছে তবে ভিতরে যে পরিমাণ হাসাহাসি কথা শুনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে জমিদারের নাতি নাতনী আনন্দ করতে এসেছে।
ভিতরে নয় দশ জনের মতো রয়েছে দেখে সবাইকে ভার্সিটির স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে। ইফতি বললো,” এরাই হল সব। আমাদের দৌড় তো এনজিও খোলা পর্যন্তই ছিলো। সব ধরনের সাহায্য এরাই করে থাকে বাকি দুজন ডক্টর এরাই ম্যানেজ করে আর এই জমিদার বাড়ির সাথে এদের কারোর যোগসূত্র থাকায় সুবিধা হয়েছে।” কথা বলতে বলতে ইফতি খেয়াল করলো ইয়াদকে ক্লান্ত লাগছে।
ইফতি ম্যাডাম বলে একজনকে ডাকলো। মধ্য বয়সী এক মহিলা এগিয়ে আসলেন।” ম্যাডাম ওনাকে ওনার ঘরটা দেখিয়ে দিন।” মহিলা চলুন বলে ইয়াদকে ওর ঘর দেখিয়ে দিলো।
ইয়াদ যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলো এতো খারাপ না যথেষ্ট ভালো ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ইয়াদ ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে মাকে ফোন করলো। তারপর নিচে নেমে এলো।
এদের দেখে মনে হচ্ছে কোনো এনজিও না এরা পিকনিক করতে এসেছে। এনজিওর লোকজন একপাশে বসে আছে কিন্তু অল্প বয়সী ছেলমেয়েরা একজন মহিলাকে এনে তাকে দিয়ে চিতই পিঠা আর পাটিসাপটা বানাচ্ছে।
ইয়াদের ভিতরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না সে বাহিরে বের হয়ে এলো। বাড়ির পেছনের নারিকেল বাগান টা খুব সুন্দর লাগছে।
ইয়াদ হেঁটে হেঁটে দেখছিল হটাৎ কেউ তাকে পিছন থেকে হাত টেনে সরিয়ে নিলো। ইয়াদ যখন পিছনে ফিরলো তখন চোখে চশমা পড়া মাথায় লম্বা চুলের একটা মেয়ে তার হাত ধরে সরিয়ে এনেছে। ইয়াদ হাতের দিকে তাকাতেই মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে হাত সরিয়ে নিলো। উপর থেকে জোড়ে কোনো কিছু পড়ার শব্দে ইয়াদ পিছে ফিরলো। গাছ থেকে ডাব পাড়া হচ্ছিলো, মেয়েটা না সড়িয়ে আনলে ডাবটা ইয়াদের মাথায় পড়তো। ইয়াদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,” thanks you so much”
” ঠিক আছে সমস্যা নেই। আপনি কি সেই নতুন ডক্টর?”মেয়েটা বললো।
ইয়াদ মাথা নাড়ল তবে কিছু বলার আগে একটা মেয়ে অর্নীহা বলে ডাকলো। নামটা শুনে ইয়াদ অবাক হয়ে গেলো। যেই মেয়েটা অর্নিহ বলে ডাকলো সে চশমা পড়া মেয়েটির পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,” মাগরিবের আজানের পর জমিদার বাড়ির বাহিরে বের হতে বারণ করেছে চল যাই আর থাকা ঠিক হবে না। ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল,” স্যার আপনিও চলুন।” বলে মেয়ে দুইটা বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
চুপ করে আছে কারণ টয়ার নাম ছিল অর্ণিহা তাবাসসুম। এই মেয়ে কি কোনো ভাবে টয়া?
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৮ : #শেষ_থেকে_শুরু
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“ডক্টর আরফিন আপনি একটা গান শুনান না।”, সিনিয়র একজনের কথা ইয়াদ ফেলতে পারলো না। ছোট বড় সবাই একসাথে মোমবাতি আর চাঁদের আলোয় বসে আড্ডা দিচ্ছে।
টয়াও বসে আছে সে মনোযোগ দিয়ে একটা জোনাকি পোকা দেখছে। হ্যা টয়া যাকে সবাই অর্নীহা বলে ডাকে। সার্টিফিকেট থেকে টয়া নামটা বাদ পড়ে যাওয়ায় টয়া নামে শুধূ কাছের মানুষরাই তাকে চেনে। ইয়াদকে টয়ার চেনার কথা না কারণ সাত বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। টয়া নিজেও বদলেছে।
ইয়াদ গান ধরলো গানের নাম ” তুমি চাইলে ”
গানটার লাইন গুলো এমন,
তুমি চাইলে আমি তোমার
না চাইলেও তুমি আমার।
তুমি বসে থাকলেই আমি
আমি আবেগে উড়ে যায়।
তুমি চলে গেলেই যেনো
আমি আর আমি নেই।
সব গান রেখে এই গান গাওয়ার পিছনে ইয়াদের একটা কারন ছিলো। টয়ার অনেক প্রিয় একটা গান ছিলো এইটা প্রায় কাগজে গানের কিছু লাইন লিখে ইয়াদের বারান্দায় ছুঁড়ে মারতো। অনেকবার টয়াকে গুন গুন করে গাইতেও শুনেছে। ইয়াদের দৃষ্টি ছিল অর্নিহা নামের সেই মেয়ের দিকে সে যদি টয়া হয় তাহলে এই গানে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন আচরণ করবে।
সেটাই হলো টয়া একটু অবাক হয়ে তাকালো এই লোকটাকে দেখে তার মোটেও তার রোমান্টিক মনে হয় নি যে এমন একটা গান গাইবে।
দেখে তো গম্ভীর মেজাজের মানুষ মনে হয়।
টয়া আজ আবার পুরোনো কথাগুলো মনে পড়লো, এই গানটা সে গুনগুন করে একজনের জন্য গাইত।
গান শেষে সবাই ইয়াদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এর মাঝে ইয়াদ খেয়াল করলো অর্নীহা মানে টয়া উঠে এক কোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইয়াদের অনুমান অনেকটা সঠিক বলে মনে হচ্ছে তার।কিন্তু এত পরিবর্তন টয়ার মাঝে যে মেয়ে নিজের চুল বাঁধতে পারে না সে চুল লম্বা করেছে আবার চোখে চশমা।
টয়ার চেহারার মায়াবতী ভাবটা চলে গেছে রূপবতী একটা ভাব এসেছে। ইয়াদ যেনো আবার এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে।
টয়া রাতে মোমবাতি নিয়ে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছিলো। এতো বড়ো জমিদার হয়ে লাভ হয়েছে কি যদি ঘরে বিদ্যুতের ব্যাবস্থা না থাকে। টয়া বির বির করতে করতে হাটছে। শুধু নামের জমিদার হয়েছে কাজের কাজ কিছুই করে নি। টয়ার ঘর দোতলার গলির শেষের মাথায়, রুম গুলো সারি আকারে একের পর এক।গলি দিয়ে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে যেতেই মনে হচ্ছে কোনো ভুতের মুভির সিন করছে। মোমবাতি হাতে এবার তার রাক্ষসদের সাথে লড়াই করতে হবে।
বাতাসে মোমবাতির আলোর নিভো নীভো অবস্থা হাত দিয়ে সামলানো যাচ্ছে না। হুট করে আসা বাতাসে মোমবাতি নিভে গেলো নিজের রুমে ফোন নিতে যাচ্ছিলো টয়া মোমবাতি নিভে যাওয়ায় সে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
নিজেকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেও উপায় হলো না চাঁদের আলোর কারণে আরো ভয় লাগছে। পুরনো জায়গায় কোথায় কি বাসা বেধে আছে কে জানে। যেদিকে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেও এসে তাকে গিলে খাবে। নিজের জায়গা থেকে এক পাও বাড়াতে পারছে না টয়া, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। এমন সময় কারোর হাঁটার শব্দে বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো আত্মাটা মনে হচ্ছে এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে।
টয়া আর কিছু না বলে একটা চিৎকার দিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিতেই ইয়াদের বুকে এসে ধাক্কা খেল। ধাক্কা খেয়ে আরো জোরে চিৎকার করতেই ইয়াদ হাতের ফোনের টর্চটা অন করলো। ইয়াদ বুঝতে পারছে না টয়ার চিৎকারের কারন কি? ইয়াদ কে ভুত ভেবে থাকলে ভূতকে জড়িয়ে কেনো চিৎকার করছে। টর্চের আলোয় টয়া ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে সরে আসলো তবে ইয়াদের শার্টের হাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। টয়া ভয়ে এমন দৌড় দিয়েছে চশমাটা হারিয়ে ফেলেছে। ইয়াদের বুঝতে বাকি নেই এই মেয়েই টয়া কারণ চশমা পরে থাকায় টয়ার চোঁখ স্পষ্ট দেখা যায়নি, মেয়েটার চোখ আর ভ্রুয়ের কাছে দুইটা ছোটো তিল বলে দিচ্ছে এই মেয়ে টয়া।
ইয়াদ আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভয়ার্ত টয়াকে প্রশ্ন করলো,” তোমার পুরো নাম কি?” এমনিতে ভয়ে টয়ার হাত পা কাপছে তার মাঝে কি হয়ছে? ভয় পেয়েছো কেনো? না জিজ্ঞেস করে এই লোক পুরো নাম জানতে চাইছে। এর কোনো বিবেক বোধ নেই?
কাপা কাপা গলায় অর্নীহা তাবাসসুম বললো এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে টয়া। নাম শুনে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। টয়া খালি এদিকে ওদিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ একটু বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন করলো,” এতো বড়ো নামে ডাকা যায় নাকি? ডাকনাম বলো।”
টয়া এই লোকটার হাব ভাব বুঝতে পারছে না। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও টয়া বললো সে।
ইয়াদের চোখে মুখে যেনো অন্য রকম খুশি। ইয়াদ একটু হেসে বলল,” চিৎকার করছিলে কেনো?”টয়া যেনো এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিল সে গর গর করে বলতে লাগলো। ইয়াদ মুগ্ধ হয়ে টয়ার কথা শুনছে সব পাল্টালেও টয়ার কথা বলার ভঙ্গি এক রকম আছে।ইয়াদ টয়াকে আসস্ত করে বললো সে যেটা শুনেছে সেটা ইয়াদের পায়ের আওয়াজ ছিলো নীচে অনেক গন্ডগোল তাই সে উপরে নিজের রুমে যাচ্ছিলো।
নিচে গন্ডগোল তাই টয়ার চিৎকারের শব্দ কারো কানে পৌঁছায় নি।
ইয়াদ আবার প্রশ্ন করলো,” তুমি যাচ্ছিলে কোথায়?” প্রশ্নে টয়া ফোন আনতে যাওয়ার কথা বললো। ইয়াদ টর্চের আলো বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” যাও তাহলে এবার তো জানতে পেরেছো যে ওটা আমি ছিলাম।” টয়া কাদো কাদো চেহারা করে বললো,” আপনি একটু আমার রুম পর্যন্ত যাবেন? একা একা যেতে ভয় লাগছে।”
টয়ার বাচ্চাদের মতন আবদার শুনে ইয়াদ একটু হেসে বলল,” আচ্ছা চলো।”
ইয়াদ টয়াকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিলো টয়া এমন ভাবে হাঁটছে যেনো পিছন থেকে এক্ষুণি ভুত এসে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। রুমে পৌছে টয়া বললো,” আপনি একটু লাইটা ধরে দাড়াবেন? আমি ফোনটা নিয়েই বেরিয়ে আসবো।”
ইয়াদ হা সূচক মাথা নাড়ল। টয়া ট্রেনের বেগে গিয়ে ফোনটা নিয়ে এলো। তারপর ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,” আপনি এখন কি নিচে যাবেন?” ইয়াদ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” ঠিক বুঝতে পারছি না।”
টয়া হাসো হাসো করে বললো,” তাহলে চলুন নিচে যাই। আমিও নিচে যাবো, পরে আপনি আবার একা একা কিভাবে নিচে যাবেন?” বলেই একটা ঢোক গিললো টয়া। ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে টয়ার দিকে তাকালো নিজের ভয়টা ইয়াদের ঘাড়ে দিয়ে দিচ্ছে টয়া।
নিজের যে একা একা নিচে যেতে ভয় লাগছে এইটা বলতে পারছে না। ইয়াদ বেঙ্গ করে বললো,” আসলেই একা একা যেতে গেলে যদি কারোর পায়ের আওয়াজ পাই তখন ভয় লাগবে, চলো একসাথেই যাই।”
টয়া আর কিছু বললো না। টয়া পা বাড়াতেই চশমার উপরে পা দিয়ে চশমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। চশমাটা হাতে নিয়ে মুখ কালো করে হাঁটতে লাগলো।
ইয়াদ টয়ার কাণ্ডে বেশ মজাই পাচ্ছে।
নিচে চারিদিকে মোম আর হারিকেন জ্বালানো টয়ার মনে হচ্ছে সে আফগানিস্তানের কেনো জঙ্গলে আছে। রাতের বেলা জমিদার বাড়ির বাহিরে চোখ গেলেই শুধু চাঁদের আলো তবে আশে পাশে মানুষ কম।
ভয় পেয়ে তিনটা মোমবাতি আর দুইটা হারিকেন সাথে নিয়ে বসে আছে। টয়ার ফ্রেন্ডরা বিষয়টা নিয়ে হাসাহাসি করছে তবে এতে টয়ার মাথা ব্যাথা নেই, হাসুক ওরা। যত হাসি ততো কান্না।
ইয়াদ টয়ার থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না।আচ্ছা টয়ার কি ইয়াদকে মনে আছে ?
[ চলবে ]