#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ১০,১১
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ১০
–আচ্ছা মায়া তুই কি তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস.? সত্যি করে বল তো আমায়।
ভার্সিটিতে আসার পথে জান্নাত মায়াকে রাস্তার মধ্যে পেয়ে যায় সেই থেকে তাঁরা দুজন একসাথে ভার্সিটির দিকে আসতে লাগলো। রাস্তার মধ্যে মায়া অনেক্ষণ ধরে নীরবে কি যেন ভেবে চলছে, এটা জান্নাত অনেক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছে তাই সে হুট করেই মায়ার দিকে তাকিয়ে উপরের কথাটা বলে উঠলো। হঠাৎ জান্নাতের এমন প্রশ্ন করাতে মায়া কিছুটা চমকে উঠলো আর ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বললো…
মায়াঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন.?
জান্নাতঃ কারণ যেদিন থেকে তুই তামিম ভাইয়ার সাথে উনার ওই কাজিনকে দেখেছিস সেদিন থেকেই তুই সারাক্ষণ কি নিয়ে যেন ভেবে চলছিস, এটা আমি প্রায়ই লক্ষ্য করছি। তারপর আরেকদিন তামিম ভাইয়াকে কোনো একটা কারণে ফোন দিয়েছিলি কিন্তু ওইদিন উনার বদলে ফোনটা উনার কাজিন রিছিভ করেছে আর তোকে বলেছে ওর সাথে তামিম ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। আর এটা সত্যি কি না সেটা জানার জন্য ওই রাতেই তুই আমাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলি এই ব্যাপারে। উনার সাথে তোর প্রথম দেখা হয় আমার এনগেজমেন্টের দিনে, আর ওইখান থেকেই তোদের পরিচয়। আর এখন ভার্সিটিতেও উনার সাথে তোর প্রতিদিন দেখা হয় আর তোদের মধ্যে ভালো-মন্দ কথাও হয়। তোদের এই কথা বলাটা যে কোন পর্যায়ে আছে বা গিয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে ইদানীং তুই উনার বিষয় নিয়ে অনেক ভাবছিস। তাই জানার ইচ্ছা হলো তুই উনাকে ভালোবাসিস নাকি। কারণ কেউ কাউকে ভালো না বাসলে তাকে নিয়ে এতোটা ভাবে না।
জান্নাতের কথাগুলো শুনে মায়া কিছুই বললো না শুধু মনে মনে এটাই ভাবতে লাগলো যে, জান্নাত তো ঠিকই বলেছে, কেউ কাউকে ভালো না বাসলে তো তাকে নিয়ে এতোটা ভাবে না বা ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তাহলে আমি কেন উনাকে নিয়ে এতোটা ভাবছি.? আমি কি তাহলে উনাকে ভালোবেসে ফেললাম.?
জান্নাতঃ কিরে চুপ করে আছিস যে।
মায়াঃ তো কি বলবো.?
জান্নাতঃ আমার প্রশ্নের উত্তর দে.?
মায়াঃ কোন প্রশ্ন.?
জান্নাতঃ তুই কি তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস.?
মায়াঃ জানি নাহ।
জান্নাতঃ জানি না মানে.?
মায়াঃ আমি নিজেও বুঝতে পারছি না যে আমি উনাকে ভালোবাসি কি না। আর এটাও বুঝতে পারছি না যে ইদানীং উনাকে নিয়ে আমি এতোটা ভাবছি কেন। তবে উনার সাথে ওইদিন উনার ওই কাজিনকে দেখে আমার মনে কেমন যেন লাগছিল আর অন্যদিন আবার মার্কেটে উনাকে ২ টা মেয়ের সাথে দেখেও আমার মনে কেমন যেন লাগছিল, তার মধ্যে একটা মেয়ে উনার ওই কাজিন ছিল আরেকটা মেয়ে উনার ছোট বোন ছিল। এটা আমি উনাকে পরেরদিন জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি।
জান্নাতঃ কিন্তু আমার মনে হয় তুই উনাকে ভালোবেসে ফেলেছিস তা না হলে তুই উনাকে নিয়ে এতোটা ভাবতি না।
মায়া কিছু বললো না।
কিছুক্ষণ পর তাঁরা ভার্সিটিতে এসে তাদের ক্লাসে চলে গেল। ক্লাস করতে করতে যখন টিফিন টাইম হয়ে গেল তখন তাঁরা দুজনে নাস্তা করতে কেন্টিনে চলে গেল। নাস্তা করা শেষে তাঁরা আবার ক্লাসে চলে আসলো। তারপর বাকি ক্লাসগুলো করে মায়া আর জান্নাত যার যার বাসায় চলে গেল।
এইভাবেই কেটে গেল ১ সপ্তাহ। এই ১ সপ্তাহ ধরে মায়া অনেক ভেবেছে যে সে সত্যিই তামিমকে ভালোবাসে নাকি। কিন্তু মায়া কিছুতেই তাঁর মনের খবর বুঝে উঠতে পারে নি। মায়া ইদানীং ক্লাসেও সারাক্ষণ কি যেন ভাবে জান্নাত এটা প্রায়ই লক্ষ্য করছে। জান্নাত ভালো করেই বুঝে গেছে যে মায়া তামিমকে মনে মনে পছন্দ করে কিন্তু সেটা তাকে বলতে পারছে না তাই সে একটা প্লেন বানিয়েছে এর জন্য তাকে তামিমের হেল্প লাগবে তাই সে একদিন রাতে তামিমের নাম্বারে কল দিল।
তামিমঃ হে জান্নাত বল এতো রাতে হঠাৎ কল দিলি যে কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি.? (কল রিছিভ করে)
জান্নাতঃ সমস্যা আজকে হয়েছে নাকি, সেটা তো অনেক আগেই হয়েছে।
তামিমঃ মানে.?
জান্নাতঃ মানে হলো আমার বান্ধবী মায়া তাকে তো চিন ই, সে তোমায় ভালোবাসে।
তামিমঃ তো এইখানে সমস্যার কি আছে.? What মায়া আমাকে ভালোবাসে মানে.! (অনেকটা অবাক হয়ে)
জান্নাতঃ হে এটা সত্যিই যে মায়া তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু সেটা তোমায় কোনো এক কারণে বলতে পারছে না।
তামিমঃ তুই কি আমার সাথে মজা করার জন্য এতো রাতে কল দিয়েছিস.?
জান্নাতঃ জানতাম তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না তাই আমি আগেই একটা প্লেন ঠিক করে রেখেছি।
তামিমঃ কি প্লেন.?
জান্নাতঃ শুন (তারপর জান্নাত সেই প্লেনটা তামিমকে বললো)।
তামিমঃ ওকে তুই যেহেতু বলছিস তাহলে দেখবো নে ট্রাই করে।
জান্নাতঃ আচ্ছা এখন তাহলে রাখি আর যা যা বললাম মনে থাকে যেন (বলেই কল কেটে দিল)।
-মেয়েটা আমায় ভালোবাসে অথচ আমি জানিই না.! জানব ই বা কি করে সে তো আর কখনো আমায় বলেনি যে সে আমায় ভালোবাসে। আর জান্নাতও মিথ্যা বলার মতো মেয়ে নয়। কালকেই আসল সত্যিটা বের হয়ে যাবে তখন ভাবা যাবে এই বিষয়ে, এখন আপাতত ঘুমিয়ে পরি।
পরেরদিন ভার্সিটিতে…
টিফিন টাইমে মায়া আর জান্নাত প্রতিদিনের মতো নাস্তা খেতে ভার্সিটির কেন্টিনে চলে আসলো। প্রায় কিছুক্ষণ পর তামিমও কেন্টিনে এসে ঢুকলো আর এদিক সেদিক তাকিয়ে মায়া আর জান্নাত যেই টেবিলে বসে আছে ওইখানে এসে জান্নাতের পাশের সিটে বসে পরল।
তামিমঃ কি অবস্থা তোমাদের.?
জান্নাতঃ এইতো ভাইয়া ভালো তোমার.?
তামিমঃ উম মুটামুটি ভালো।
জান্নাতঃ মুটামুটি কেন.?
তামিমঃ আর বলিস না, একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
জান্নাতঃ কি ঝামেলা.?
তামিমঃ গতকাল রাতে খাবার খাওয়ার সময় আম্মু বললো উনি নাকি আমার বিয়ে করাতে চান।
জান্নাতঃ বল কি সত্যি নাকি.? এ তো খুশির খবর এইখানে ঝামেলার কি আছে.?
তামিমঃ আরে এখনো তো পড়াশোনা ই কমপ্লিট করি নি তাই বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই নেই কিন্তু আম্মু বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে।
জান্নাতঃ আন্টি যেহেতু বলছে তাহলে করে ফেল সমস্যা কি.?
তামিমঃ হে করবো অবশ্যই কিন্তু এখন না পড়াশোনা কমপ্লিট হলে। আপাতত কিছুদিনের মধ্যে এনগেজমেন্ট করিয়ে ফেলা হবে ওর সাথে।
জান্নাতঃ এই ও টা আবার কে.?
তামিমঃ নীলা, যার সাথে আম্মু আমায় বিয়ে দিতে চাচ্ছেন।
জান্নাতঃ ওই যে তোমার কাজিন উনি.?
তামিমঃ হুম।
জান্নাতঃ মেয়েটা কি তোমায় বিয়ে করবে.? মানে ও কি রাজি.?
তামিমঃ আরে ও তো আমায় ভালোবাসে তাইতো আম্মু ওর সাথে আমার বিয়েটা করাতে চাচ্ছেন।
তামিমের এই কথাটা শুনে মায়ার হাতে থাকা চামচটা নিচে পরে গেল। মায়ার চেহারায় একটা চিন্তার চাপ ভেসে উঠলো যেটা তামিম আর জান্নাত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
জান্নাতঃ কিরে তোর আবার কি হলো.? তোর চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন.?
মায়াঃ না কই কেমন দেখাচ্ছে, ঠিক আছি তো আমি। তা আপনাদের এনগেজমেন্ট কবে হবে.? (তামিমের দিকে তাকিয়ে)
তামিমঃ মেবি সামনের শুক্রবারে হবে, আপনি আর জান্নাত কিন্তু অবশ্যই আসবেন আমার এনগেজমেন্টের দিন।
মায়াঃ জান্নাত তুই উনার সাথে কথা বল আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি (কথাটা বলেই বসা থেকে উঠে কেন্টিন থেকে বেরিয়ে গেল)।
মায়া চলে যাওয়ার পর জান্নাত হাসতে আরম্ভ করলো। কিছুক্ষণ হেসে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো…
জান্নাতঃ কি বুঝলে এবার.?
তামিমঃ তোর কথাটাই ঠিক মনে হচ্ছে।
জান্নাতঃ তো এখন কি করবা.?
তামিমঃ কিছুই নাহ, কারণ ও যেহেতু আমায় ভালোবাসে তাহলে ও এসে আমায় ওর ভালোবাসার কথা বলুক তারপর ভেবে দেখবো কি করা যায়।
জান্নাতঃ আচ্ছা আমি দেখি ওকে বুঝিয়ে কিছু করা যায় কি না। আমার খাওয়া শেষ আমি যাই এখন (বলেই উঠে চলে গেল)।
রাতেরবেলা…
তামিম ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল নীলা তার ফোন নিয়ে কি যেন করছে। তামিম একটু চেহারায় রাগী ভাব এনে বললো…
তামিমঃ কি করছ আমার ফোনে.?
নীলাঃ গতকাল রাতে যে আপনাকে একটা মেয়ে ফোন দিয়েছিল তার নাম কি জান্নাত.?
তামিমঃ হে কেন.? আর তুমি কিভাবে জানলে যে ও আমাকে গতকাল ফোন দিয়েছে.?
নীলাঃ তখন আমি আপনার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই আপনাদের কথা শুনতে পেয়েছি। আচ্ছা এই জান্নাত কে আপনার গার্লফ্রেন্ড.?
তামিমঃ নাহ আমার বন্ধুর বোন।
নীলাঃ তাহলে মায়া কে.?
তামিমঃ জান্নাতের বান্ধবী।
নীলাঃ ও কি আপনাকে ভালোবাসে.?
তামিমঃ হ্যাঁ।
নীলাঃ আপনিও কি ওকে ভালোবাসেন.?
তামিমঃ তুমি এতোকিছু জিজ্ঞেস করছ কেন.? এইসব জেনে তুমি কি করবা.?
নীলাঃ যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দেন।
তামিমঃ ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এখনো সেটা আমায় বলেনি, যদি বলে তাহলে
নীলাঃ তাহলে ওকে মানা করে দিবেন।
তামিমঃ কেন.?
নীলাঃ কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনি শুধু আমার আর কারও না। ও যদি আপনাকে ওর ভালোবাসার কথা বলেও তাহলে আপনি রাজি হবেন না। কথাটা যেন মনে থাকে এই নেন আপনার ফোন বলেই ফোনটা বিছানায় ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
.
.
Loading…….
#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ১১
,,
,,
,,
,,
নীলা তামিমের রুম থেকে চলে যাওয়ার পর তামিম বসে বসে ভাবতে লাগলো, নীলা আবার কবে থেকে আমায় ভালোবাসে.? ওর সাথে তো আমার অনেক বছর পর দেখা হলো। ছোটবেলায় যখন একবার ওদের বাসায় গিয়েছিলাম তখন তো ও ক্লাস থ্রী তে পড়ত। তারপর একবার আম্মুর সাথে গিয়েছিলাম খালাদের বাসায় তখন ও ৯ এ পড়ত মেবি, আর তো কখনো ওর সাথে আমার দেখা হয়নি তাহলে ও কিভাবে আমায় ভালোবেসে ফেললো.? মেয়েটা কি আমায় সত্যিই ভালোবাসে নাকি এমনিই বলেছে কথাগুলো.? আবার এটা তার আবেগও হতে পারে, কিছুদিন ইগনোর করলে এমনিতেই বুঝে যাবে। আপাতত এইসব নিয়ে এখন আর না ভাবাই ভালো।
মিলিঃ কোথায় গেছিলে তুমি আপু.?
নীলা তড়িঘড়ি করে রুমে এসে ঢুকতেই মায়া তাকে কথাটা জিজ্ঞেস করল।
নীলাঃ গেছিলাম একটু খালা মণির কাছে।
মিলিঃ ওহ আচ্ছা
নীলাঃ হুম।
–––––––
এদিকে মায়া তার রুমে বসে বসে ভাবছে, সত্যিই কি ওই মেয়েটার সাথে উনার বিয়ে হয়ে যাবে.? সত্যি না হলে তো উনি জান্নাতকে এইসব কথা বলতেন না। কিন্তু এটা শুনে আমার এতো খারাপ লাগছে কেন.? আমি কি তাহলে নিজের অজান্তেই উনাকে ভালোবেসে ফেললাম.? হে আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি নাহলে উনার বিয়ের কথা শুনে আমি এতো কষ্ট পেতাম না। কিন্তু এখন আমি কি করবো.? উনাকে নিজের মনের কথাটা জানাব কি.? জানিয়ে কি লাভ হবে.? ওই মেয়েটা যেহেতু উনাকে ভালোবাসে আর উনার আম্মুও ওই মেয়েটার সাথে উনার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন তাহলে উনি কি আর এতে অমত পোষণ করবেন.? তা ছাড়া উনি তো আমায় ভালোবাসেন না তাহলে আমার মনের কথাগুলো উনাকে বললে উনি যে বিয়েটা ভেঙে দিবেন তার কি নিশ্চয়তা আছে.?
মায়ার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো। মায়া ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখল জান্নাত কল দিয়েছে। মায়া কলটা রিছিভ করে কানে লাগালো।
মায়াঃ হে জান্নাত বল.?
জান্নাতঃ কিরে তুই কেন্টিনে থাকতে বলে গেলি ওয়াশরুম থেকে আসছি কিন্তু গেলি যে আর আসলি না৷ তারপর আমি খাওয়া শেষে তোকে ক্লাসে গিয়ে খুজলাম কিন্তু পেলাম না ভাবলাম হয়তো ওয়াশরুমেই আছিস। কিন্তু ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেল কিন্তু তোর কোনো দেখাই পেলাম না। আমায় না বলেই বাসায় চলে আসলি কেন.?
মায়াঃ আরে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই হঠাৎ প্রচন্ড জোরে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছিল তারপর আর থাকতে না পেরে একটা রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি তাই আর তোকে বলতে পারি নি।
জান্নাতঃ আমার তো মনে হচ্ছে তুই মিথ্যা বলছিস, কারণ তোর মাথা ব্যাথা উঠেছিল বলে আমার মনে হয়না। সত্যি করে বল তো বিষয়টা কি.?
মায়াঃ আরে এটাই সত্যি।
জান্নাতঃ বুঝেছি তুই তামিম ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনে ওইখান থেকে বাসায় চলে এসেছিস।
মায়াঃ আমার বাসায় চলে আসাতে উনার বিয়ের কথার কি সম্পর্ক.?
জান্নাতঃ সম্পর্ক ভালোবাসার।
মায়াঃ মানে.?
জান্নাতঃ মানে তুই তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাই উনার বিয়ের কথা শুনে তোর খারাপ লেগেছে এর জন্য তুই ওইখান থেকে বাসায় চলে এসেছিস।
মায়াঃ আরে তুই যেমনটা ভাবছিস
জান্নাতঃ ব্যস অনেক হয়েছে আর না মায়া। আমি একটা মেয়ে হয়ে যদি অপর একটা মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে না পারি তাহলে আমি কেমন মেয়ে.? তুই নিজেও জানিস তুই তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে কেন এই কথাটা তুই উনাকে বলছিস না বল আমায়.?
মায়াঃ নিশ্চুপ।
জান্নাতঃ কি হলো কথা বলছিস না কেন বল.?
মায়াঃ জানি না আমি কিছু, আর এখন বলেও বা কি লাভ উনি তো কিছুদিন পর অন্য কারও হতে চলেছেন (কিছুটা কান্না মাখা কণ্ঠে বললো কথাটা)।
জান্নাতঃ আচ্ছা তুই তামিম ভাইয়াকে সত্যিই ভালোবাসিস.? হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর দে।
মায়াঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, হ্যাঁ উনাকে আমি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি।
জান্নাতঃ আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পর কাল ভার্সিটিতে আসলে এ বিষয়ে কথা হবে, রাখি এখন (বলেই কল কেটে দিল)।
মায়াও আর কিছু না ভেবে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
জান্নাত মায়ার সাথে কথা বলে তামিমকে মেসেঞ্জারে একটা ভয়েজ পাঠিয়ে দিয়ে বললো ভয়েজটা শুনতে। তামিম তখন ডাটা অফ করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই তাঁর মেসেঞ্জারে জান্নাতের মেসেজটা চলে আসে। মেসেজটা অপেন করতেই দেখল জান্নাত একটা ভয়েজ পাঠিয়েছে। তামিম মনোযোগ দিয়ে ভয়েজটা শুনতে লাগলো। ভয়েজটা শুনে তামিম বেশ অবাক হলো। সে ভেবে পাচ্ছে না একটা মেয়ে তাকে এতোটা ভালোবাসে অথচ তাকে এই কথাটা বলছে না কেন.? (জান্নাত মায়ার সাথে কথা বলার সময় তাদের কথাগুলো ফোনে রেকর্ড করে নেয় অতঃপর সেই ভয়েজটাই তামিমের মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়।
তামিমঃ তো এখন কি করণীয়.? (জান্নাতকে মেসেজ দিয়ে বললো)
জান্নাতঃ ভাইয়া মায়া খুব ভালো আর শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। ও যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে এটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি কিন্তু কেন যে এই কথাটা তোমায় বলছে না সেটা বুঝতে পারছি না। তোমায় মনে যদি মায়ার জন্য কোনো ভালোবাসা বা এমন কিছু থাকে তাহলে আমি বলবো ওর ভালোবাসাটা গ্রহণ করে নাও।
তামিমঃ আমি তো বললামই উনি আগে উনার ভালোবাসার কথাটা আমায় এসে বলুক তারপর ভেবে দেখবো।
জান্নাতঃ কিন্তু ও নিজ থেকে বলবে বলে আমার মনে হয়না।
তামিমঃ তাহলে তো এইখানে আমার আর কিছু করার নেই।
জান্নাতঃ আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়।
তামিম আর মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ডাটা অফ করে অফলাইন হয়ে গেল। অতঃপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরল।
এইভাবেই কেটে গেল আরও ২ দিন। এই ২ দিনে জান্নাত মায়াকে অনেক বুঝিয়েছে সে যেন একবার তামিমকে নিজের মনের কথাটা বলে তার যা হবার দেখা যাবে। কিন্তু মায়া জান্নাতের কথায় কিছুতেই রাজি হয়নি। তার একটাই ভাবনা, বললেও তামিম এখন রাজি হবে না আর হলেও তাকে বিয়ে করবে না কারণ তার বিয়ে তো ওর কাজিনের সাথে ঠিক হয়ে গেছে।
এদিকে নীলাও এই ২ দিন তামিমকে অনেক বুঝিয়েছে যে সে তাকে ভালোবাসে কিন্তু তামিম এতে পাত্তা দেয়নি। প্রতিবারই সে নীলাকে এড়িয়ে গেছে। নীলাও এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরে আর একদিন রাতে তার আম্মুকে ফোন করে এইখানে চলে আসতে বলে।
–––––––
ভার্সিটি শেষে তামিম বাসায় এসে ঢুকতেই দেখল ড্রয়িংরুমে নীলার মা-বাবা মানে তার খালা আর খালু বসে আছেন। তাদের পাশে তামিমের আম্মু আব্বুও বসে আছেন আর কি নিয়ে যেন কথা বলছেন।
তামিমঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম, খালা খালু আপনারা কেমন আছেন.? (ভিতরে ঢুকে)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম, এইতো বাবা ভালো তুমি কেমন আছ.?
তামিমঃ আল্লাহর রহমতে ভালোই। তা হঠাৎ করে আমাদের এইখানে কিভাবে এলেন.?
–এসেছি একটা জরুরি কাজে (তামিমের খালা বললো কথাটা)।
তামিমঃ ওহ আচ্ছা, তাহলে থাকবেন তো কিছুদিন এইখানে.?
–হ্যাঁ থাকব।
তামিমঃ ঠিক আছে তাহলে আপনারা কথা বলেন আমি রুমে গেলাম (বলেই সেখান থেকে তার রুমে চলে আসলো)।
রুমে এসে তামিম ফ্রেশ হয়ে বসে আছে এমন সময় তার আম্মু এসে তাকে খাবারের জন্য ডেকে গেলেন। তামিমও নিচে এসে সবার সাথে বসে খাবার খেয়ে নিল। খাওয়া দাওয়া শেষে তামিমের আম্মু-আব্বু আর তার খালা খালু আবার ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলেন সাথে তামিম আর নীলাকেও সেখানে আসতে বললেন। তামিম সেখানে যেতেই তার খালা তাকে টেনে উনার পাশে বসালেন আর বললেন…
–তোমার আম্মু আর আমি অনেক আগে ঠিক করেছিলাম তুমি আর নীলা বড় হলে আমরা তোমাদের বিয়ে দিব। এটা তুমি ছাড়া সবাই-ই জানে, নীলাও জানে। আর একদিন রাতে নীলা আমায় ফোন করে বললো সে নাকি তোমায় ভালোবাসে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে, এর জন্যই আমাদের এইখানে আসা। এখন তোমার কি নীলাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে.?
তামিম তার খালার কথাগুলো শুনে অনেকটাই অবাক হলো আর বললো…
তামিমঃ নীলাকে আমি সবসময় নিজের বোনের মতো দেখেছি। তাই ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় খালা।
তামিমের এমন কথা শুনে কেউ কিছুই বললো না তবে নীলার এতে ভিষণ খারাপ লাগলো তবুও সে চুপ করে রইলো।
–এটা তোমার আম্মুরও ইচ্ছা যে নীলার সাথে তোমার বিয়ে হোক, তুমি তো কখনো তোমার আম্মুর কথার অমত কর না। তোমার আম্মুর জন্য কি তুমি নীলাকে বিয়ে করতে পারবা না.?
তামিমঃ আম্মু এতোদিন আমায় যা বলে এসেছেন তা রাখার মতো ছিল কিন্তু উনার এই ইচ্ছাটা যে রাখার মতো না খালা।
এবার কেউ কিছু বলার আগে নীলা বলে উঠলো…
নীলাঃ আচ্ছা আপনি আমার সাথে একটু পারসোনাল ভাবে কথা বলবেন প্লিজ আপনাকে কিছু বলার ছিল।
তামিমঃ যা বলার এইখানে বল।
নীলাঃ এইখানে বলা যাবে না।
তামিম এবার বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো, আচ্ছা তাহলে আমার রুমে আস আমি আছি ওইখানে (বলেই তার রুমে চলে গেল)।
তারপর নীলাও ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে তামিমের রুমে চলে আসলো।
তামিমঃ বল তাহলে কি বলবা.?
নীলাঃ আপনার মেবি মনে হচ্ছে এইটা আমার আবেগ, ভালোবাসা নয়। তবে এটা মিথ্যা। কারণ আমি আপনাকে সেই ক্লাস নাইন থেকেই ভালোবাসি যেদিন আপনাকে প্রথম আমাদের বাসায় দেখেছিলাম সেদিন থেকেই আপনাকে আমার ভালো লেগে যায়। তাই আমি আজ পর্যন্ত কারও সাথে প্রেম করি নি কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই। আর আপনার ফোনে যে কয়েকদিন একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসতো সেই মেসেজটা আমিই আপনাকে দিতাম। বিশ্বাস করেন আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি। প্লিজ আপনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান।
তামিমঃ কিন্তু তুমি আমার কাজিন তাই তোমাকে আমি সবসময়ই বোনের মতোই ভেবে এসেছি তাই আমার পক্ষে তোমায় বিয়ে করা সম্ভব নয়।
নীলাঃ প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন (তামিমের কাছে এসে)।
তামিমঃ এক কথা আমি দুইবার বলতে পছন্দ করি না।
নীলাঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচব না বিশ্বাস করেন (বলেই তামিমকে জড়িয়ে ধরলো)।
তামিমঃ আরে করছ কি ছাড় বলছি কেউ চলে আসবে তো (ছাড়ানোর চেষ্টা করে)।
নীলাঃ আসলে আসুক আমি ছাড়বো না।
তামিম এবার জোর করে অনেক কষ্টে নীলাকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নীলার গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিল। নীলা গালে হাত দিয়ে বললো…
নীলাঃ আজ পর্যন্ত আমার আম্মু আব্বুও আমায় মারার সাহস পায়নি আর আপনি আমায় মারলেন.! দাড়ান দেখাচ্ছি আমাকে মারার পরিণাম কি বলেই রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নিজের কাপড় ছিড়তে শুরু করলো। কিছুটা কাপড় ছিড়া হলে হাতের নক দিয়ে হাতে আর মুখে হালকা আছড় কাটার মতো দাগ বানিয়ে ফেললো অতঃপর তামিমকে জড়িয়ে ধরে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিল্লাতে শুরু করলো।
নীলার চিৎকার শুনে তার আম্মু-আব্বু আর তামিমের আম্মু-আব্বু ড্রয়িংরুম থেকে তামিমের রুমের কাছে চলে আসলেন আর বাহির থেকে দরজায় ধাক্কাতে লাগলেন দরজা খোলার জন্য। নীলা তার আম্মু-আব্বুর উপস্থিতি টের পেয়ে তামিমকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল আর তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।
–কি হয়েছে মা তোর এই অবস্থা কেন.? (নীলার আম্মু)
নীলাঃ আম্মু আমি যখন উনাকে বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করছিলাম তখন উনি বললেন আগে আমায় উনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে তাহলেই উনি আমায় বিয়ে করবেন। কিন্তু আমি উনার কথায় রাজি হইনি বলে উনি আমার সাথে জোরজবরদস্তি করতে লাগলেন (বলেই তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে মিথ্যা কান্না শুরু করে দিল)।
নীলার এমন কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল কিন্তু তামিমের মধ্যে তার বিপরীত অবস্থা দেখা গেল। সে তার এক হাত আরেক হাতের উপর ভাজ করে রেখে একটা নায়কীয় ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থেকে নীলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হাসছে যেই হাসিতে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা সে ছাড়া আর কেউ জানে না.!
.
.
.
.
.
Loading…….
বিঃদ্রঃ তো বন্ধুরা কেইসা লাগা আজকা পর্ব.? প্রতিটা গল্পের মতো এই গল্পতেও একটা কমন বিষয় এড করতে হলো কিন্তু শেষে একটা রহস্য রেখে দিলাম কালকের জন্য যাতে সবাই নেক্সট পর্বের জন্য এক্সাইটেড থাকেন।