প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-৯
#ফাবিহা_নওশীন
||
ফালাকের কন্ঠস্বর শুনে রুহানি চোখ তুলে তাকাল। ফালাক কিছুটা পিছিয়ে উপরের দিকে তাকাল। কাউকে দেখতে না পেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চেঁচিয়ে বলল,
“এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা? একটা মেয়ের গায়ে পানি ঢেলে দিল। নূন্যতম কমন সেন্স নেই? এটা ভার্সিটি বাড়ি নয়। সামনে পেলে থাপ্পড় মেরে সোজা করে দিতাম।”
ফালাক বিড়বিড় করছে।
রুহানির বন্ধুরা ততক্ষণে ছুটে উপরের দিকে চলে গেছে। ফালাক রুহানির দিকে তাকাল। রুহানি চোখ নামিয়ে নিল। নুশা ওকে ওখান থেকে নিয়ে গেল।
।
নুশা রুহানির চুল মুছে দিচ্ছে। সাথে সাথেই ওর জন্য ড্রেস আনিয়ে নিয়েছে পাশের শপ থেকে। রুহানি চেঞ্জ করে নিয়েছে।
রুহানি চুল থেকে নুশার হাত ছাড়িয়ে বলল,
“আমি বাড়ি যাচ্ছি।”
রুহানি উঠে দাঁড়ালে নুশা বাঁধা দিয়ে বলল,
“কেন?”
রুহানি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“তুই বুঝতে পারছিস না? এই জন্য আমি আসতে চাই নি ভার্সিটিতে।”
রুহানি আশেপাশে বন্ধুদের দিকে আড়চোখে তাকাল তারপর সাউন্ড লো করে বলল,
“তুই যেমন ভাবছিস তেমন তো নাও হতে পারে।”
রুহানি কিছু বলতে যাবে তখনই আরো কিছু বন্ধুরা ঢুকল। তারপর বলল,
“ইশার কাজ। এসব করে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। বলে কি-না ডিম ছুড়েছে তাই আমি পানি মেরেছি।”
নুশা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কিছু বলিস নি তোরা?”
ওরা রুহানির দিকে তাকাল। তারপর তুরানি বলল,
“যা শাস্তি দেওয়ার রুহানি দেবে।”
নুশা রুহানির দিকে তাকাল। রুহানি মুখ গম্ভীর করে নিল। নুশা রুহানির হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেল।
ফালাক ওর আশেপাশেই ছিল। রুহানিকে অন্য ড্রেসে ভেজা চুলে দেখল। ফালাকের মনে হচ্ছে বম ফাটবে। নিশ্চয়ই রুহানি কিছু একটা করবে।
নুশা রুহানির হাত ধরে বলল,
“রুহানি তোকে এভাবে মানায় না।”
রুহানি নুশার দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“আমার আর এসবে মন টানে না।”
“তাই বলে প্রতিবাদ করবি না?”
রুহানি শুকনো হেসে বলল,
“কি বলছিস প্রতিবাদ? এতদিন যা যা হলো, ভাগ্য আমাদের সাথে যে খেলা খেলল তার প্রতিবাদ কার কাছে করব? এ তো ছোট খাটো ব্যাপার।”
“রুহানি, বুঝার চেষ্টা কর। এভাবে হার মেনে নিস না। আজ ছোট ছোট ব্যাপারে হার মেনে নিবি কাল বড় বড় ব্যাপারে হার মানতে এক সেকেন্ড ভাববি না।”
রুহানি রেলিঙে হেলান দিয়ে বলল,
“হার মেনে তো বসেই আছি।”
নুশা রেলিঙ থেকে রুহানিকে সোজা করে দাঁড় করাল।
“যত নরম হবি ততই পায়ে পিষতে ইজি হবে। শক্ত হ যাতে কেউ পায়ে পিষা তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পায়।”
রুহানি বিষন্ন মুখে বলল,
“আমার সে মনোবল নেই রে। আমি ভেঙে গেছি। পুরো তরে ভেঙে গেছি।”
“রুহানি! তোর এই নির্লিপ্ততা আমার সহ্য হচ্ছে না। ইশার ব্যাপার নিয়ে আমি ভাবছি না। আমি ভাবছি তোর ভবিষ্যতে পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে। তখন তুই কি করবি? এভাবে চুপচাপ সব মেনে নিবি? সবাই কি ধনী হয়ে জন্মায়? মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরে কেউ জন্ম নেয় না? তারা কি বাঁচে না? তারা কি অন্যায়কে অন্যায় বলে না? প্রতিবাদ করে না? তাহলে তুই কেন নিজেকে তুচ্ছ মনে করছিস? হীনমন্যতায় ভুগছিস? কেন হারার আগে হার মেনে নিচ্ছিস?”
রুহানি নুশার দিকে তাকাল। তারপর বলল, “চল।”
ফালাক দূর থেকে ওদের কথোপকথনের এক্সপ্রেশন দেখে কনফিউজড। মনে হচ্ছে ওরা কোন গভীর আর সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। সেটা কি রুহানির সাথে?
রুহানিকে ফলো করতে লাগল ফালাক।
ইশা বারান্দার বেঞ্চিতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। সাথে তায়েফও আছে। তায়েফ ইশার দলে ভিড়েছে। এক মাসে এতকিছু বদলে গেছে যা রুহানির ভাবনার বাইরে।
ইশা রুহানিকে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে। শব্দহীন তাচ্ছিল্যের হাসি। রুহানির শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল।
রুহানি সামনে যেতেই ইশা বেঞ্চ থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“আহারে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার।”
রুহানি ওর কথার পিষ্টে প্রশ্ন করল,
“পানি মারলি কেন?”
ইশা ভ্রু প্রসারিত করে বলল,
“তুই ডিম ছুড়েছিলি আমি পানি মেরেছি। সব শোধ।”
রুহানি তায়েফের দিকে তাকাল। তারপর ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখনো শোধ হয় নি।”
বলেই ইশাকে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় মারল। ইশা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে রুহানিকে দেখছে।
রুহানি ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“এখন শোধ হলো। থাপ্পড়টা কেমন লাগল সেটা তায়েফের সাথে শেয়ার করে নিস। কেননা এই থাপ্পড়ের টেস্ট ও অনেক আগেই গ্রহণ করেছে।”
তারপর পেছনে ঘুরে চলে যেতে লাগল। ইশা তেরে আসতে নিলে রুহানি পেছনে ঘুরে ওর গলা চেপে ধরে বলল,
“মেরে দেব। আরেকবার চেষ্টা করলে তোকে জাস্ট মেরে দেব।”
রুহানি তায়েফের দিকে আরেকবার তাকাল। রুহানি ওর বন্ধুদের সাথে চলে এল।
দূর থেকে ফালাক ওর কান্ড কারখানা দেখে দুহাত ভাজ করে মুচকি হাসছে। রুহানির এসব কাজ বরাবরই বিরক্ত লাগলেও আজ বিরক্ত লাগছে না। কারণ এতক্ষণ ধরে এই রুহানিকে মিস করছিল। আর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল রুহানির কিছু হয়েছে কিন্তু এখন সব ক্লিয়ার।
রুহানির বন্ধুরা ওকে বাহবা দিচ্ছে।
রুহানি মুখ গম্ভীর করে বলল,
“ফর দ্যা লাস্ট টাইম। আমি আর এসবে নেই। আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি। আমি আর এসব র্যাগিং ট্যাগিং দিয়ে আর কাউকে বিরক্ত করব না আর কারো চোখের পানির কারণ হয়ে অভিশাপ কুড়াবো না। আমি আমার মতো থাকব। পড়াশোনা করব। বাবা-মায়ের সব কথা মেনে চলব। মোট কথা ভালো মেয়ে হয়ে থাকব। আমার সাথে অন্যায় হলে প্রতিবাদ করব কিন্তু অযথা ঝামেলায় জড়াবো না।”
রুহানির কথা শুনে সবার চোখ কপালে। তুরানি এগিয়ে এসে বলল,
“তুই এসব কি বলছিস রুহানি? এসব তোর মাথায় কে ঢুকিয়েছে? ওই রনক তাই না? আমি জানতাম একদিন এমন কিছু হবে। ও তোর মাথা চিবিয়ে খাবে। তাই তো ওকে আমার পছন্দ নয়।”
“কেউ আমার মাথায় এসব ঢুকায় নি। এগুলো আমার ভাবনা, আমার সিদ্ধান্ত। তোরা আমার বন্ধু ছিলি আর থাকবি। বাট এই সব দলে আমি আর নেই। বেষ্ট অফ লাক।”
রুহানি ফালাকের কোট হাতে নিয়ে ওদের সামনে থেকে চলে গেল। নুশা ছাড়া বাকি সবাই শকডের মধ্যে আছে।
ফালাক, শুভ আর সোহানের সাথে বসে আছে। ওর হাতে একটা বই। বই হাতে কিছু একটা বলছে আর ওরা দুজন মনোযোগ দিয়ে শুনছে। শুভ আর সোহান উঠে চলে যেতেই রুহানি ফালাকের দিকে এগিয়ে গেল। ফালাক বোতল থেকে পানি খাচ্ছে। তখনই রুহানি ওর কোলে কোট ছুড়ে রাখল। হটাৎ করে কোলের উপরে কিছু রাখায় ফালাক চমকে গেল। পানি নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেল। ফালাক কাশতে শুরু করল। রুহানি ভ্রু কুঁচকে ওকে দেখছে। কি এমন হলো যে যক্ষা রোগীর মতো কাশছে।
ফালাক কাশি থামিয়ে বলল,
“এমন ভূতের মতো উদয় হলে কেন? দিলে তো ভয় পাইয়ে। যদি মরে টরে যেতাম?”
রুহানি চোখ উলটে মুখ বাকিয়ে বলল,
“মরে যাবে! হুহ! মরে যাওয়া কি এত সহজ?
যাই হোক ধন্যবাদ।”
ফালাক রুহানির মুখে ধন্যবাদ শব্দটা শুনে টাস্কি খেল। তারপর সেটা দমিয়ে বলল,
“এতদিন কোথায় ছিলে?”
রুহানি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“কেন? মিস করেছো না-কি?”
ফালাক বলল,”সে তো অবশ্যই।”
রুহানি চোখ বড়বড় করে তাকাল। ফালাক নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“ওই যে আমাকে বিরক্ত করতে এসে নিজেই জব্দ হয়ে যাও। তোমাকে অনেক দিন জব্দ করি না।”
রুহানি মুখ ভেংচি কাটল। সেটা দেখে ফালাক হেসে ফেলল। তারপর বলল,
“বললে না তো এতদিন কোথায় ছিলে।”
রুহানি ফালাকের দিকে একটু ঝুঁকে বলল,
“হু আর ইউ? আপনি আমার কে? আপনাকে কেন বলব? সাহায্য করেছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? সাহায্য করেছেন ধন্যবাদ দিয়েছি ব্যাস। পার্সোনাল বিষয়ে ইন্টারেস্ট না দেখালে খুশি হব।”
রুহানির কথা শুনে ফালাকের বেশ মন খারাপ হলো। কিছুটা অপমানিত বোধ হল। মুখটা কালো করে রেখেছে। রুহানিকে একটা প্রশ্ন করেছে তাতে এত কথা শুনানোর কি খুব প্রয়োজন ছিল? ফালাকের রুহানির প্রতি হটাৎ অনেক অভিমান হলো। কোট হাতে নিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে উঠে চলে গেল।
“রেখো আমায় খুব যতনে
কারণে-অকারণে প্রিয় অভিমানে।”
রুহানি সে সবে পাত্তা দিল না। বারবার একি প্রশ্ন কেন করছে। কি দরকার উনার জানার? অনধিকার চর্চা করতে এসেছে।
চলবে……