মানুষ খাওয়া ভূত,End part

মানুষ খাওয়া ভূত
End part

আর এই ভয়ংকর গবেষণাটার পুরো দোষ এসে পড়বে আমার ঘারে। আমি এই গবেষণাটা কিছুতেই এইভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত একটা গবেষণা এবং এর কৃতিত্ব শুধু মাত্র আমার। ডাক্তার আসিফুর রহমান একটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে এর জন্য অবশ্যই প্রস্তানো উচিত। তার আর এই পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকা উচিত না। আমার চাই না এই গবেষণার কোন প্রতিষেধক!”
.

.

এতটুকু কথাই লেখাছিলো এই ডায়েরিটাতে। এরপর পুরোটা ফাঁকা পৃষ্ঠা। অনেক খুঁজেও এই ডায়েরিটা থেকে এই গবেষণা সম্পর্কে আর কোন তথ্য পায় না মিসির আলি সাহেব আর ডাক্তার জেরিন আক্তার। তবে ডায়েরির শুরুর দিকে একটা গবেষণা ইন্সটিটিউটের নাম লেখা ছিলো। ডাক্তার জেরিন আক্তার বুঝতে পারলেন এটাই হয়তো সেই আমেরিকার সেই গোপন গবেষক দলের গবেষণাগাড় যারা ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে এই ভয়ংকর গবেষণার থিউরি টা দেয়।

তবে এখন মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তারের কাছে এই তথ্যটা বেশি গুরুত্বপুর্ণ না ।
তারা যেটার জন্য এতদূর ছুটে এসেছিলো, সেই প্রশ্নের উত্তরটা এখন খুঁজে পেয়েছে। এই হিংস্র মানুষের হিংস্রতা দুর করার জন্য যে একটা প্রতিশেধক রয়েছে এটা তারা জানতে পেরেছে! মিসির আলি সাহেবও এবার শম্মীর এই অস্বাভাবিক ব্যবহারের পুরো রহস্যটা বুঝতে পারেন এবং সমাধাণের পথটাও দেখতে পারছিলেন।

ডায়েরি পড়ে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এই রোগের প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমানই তৈরি করেছিলেন। যদিও এরপর সেই প্রতিষেধকটা লুকিয়ে রাখেন। কাউকে দেখান না! এই কয় বছরে তাদের এই গবেষণা সম্পর্কে কেউই কিছু জানতে পারে নি। তাই এর প্রতিষেধকও কেউ খুঁজেনি। হয়তো ডাক্তার আসিফুর রহমান এর গবেষণা গাড়ে গিয়ে ভালোমতো খুঁজলেই সেই প্রতিষেধকটা পাওয়া যেতে পারে!!

এরপর মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তার দুজনে মিলেই ডাক্তার আসিফুর রহমানের গবেষণাগাড়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে প্রায় পুরো গবেষণাগাড়টাই তার খুঁজলো। কিন্তু কোথাও এইরকম হিংস্র মানুষ নিয়ে গবেষণার প্রতিষেধক তারা খুঁজে পায় না। এরমধ্যে মিসির আলি সাহেব এবং সেই ডাক্তার মেয়েটা, ডাক্তার আসিফুর রহমানের এই গবেষণার সময়ের বেশ কয়েকটা ডায়েরি পড়ে ফেলেন।

কিন্তু কোন ডায়েরিতেই এই গবেষণার প্রতিষেধক তৈরির প্রসঙ্গে ডাক্তার আসিফুর রহমান কিছুই লিখেন নি! তারা দুজনেই বেশ চিন্তায়
পড়ে যান। এরপর মিসির আলি সাহেব ভাবেন, যেহেতু এই প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমানের জন্য একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিলো! তাই হয়তো সে ভেবেছিলো প্রতিষেধকটা এই গবেষণাগাড়ে রাখলে,যে কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে পারে!

তাই হয়তো এই প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমান কোন গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলো। এরপর মিসির আলি সাহেব ডাক্তার আসিফুর রহমানের বেডরুমে যান। তার গবেষণা গাড় থেকে বেশ কিছুটা দূরেই তার বেডরুম। বেডরুমটা অনেকদিন ধরেই পরিত্যাক্ত অবস্হায় পড়েছিলো। ডাক্তার আসিফুর রহমানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে বর্তমান ডাক্তার জেরিন আক্তারও খুব একটা তার ঘরে যায় না।

এরপর তারা পুরো ঘর ভালো করে খুঁজতে থাকে সেই প্রতিষেধকটার জন্য। কিন্তু এখানেও তারা এই প্রতিষেধকটা খুঁজে পায় না! এরপর অনেকটা হতাশ হয়েই মিসির আলি সাহেব খাটে বসে পড়েন। হঠাৎ তার পা গিয়ে লাগে খাটের নিচের একটা ষ্টিলের বাক্সে! এরপর খাটের নিচ থেকে বাক্সটা নিতেই মিসির আলি সাহেব দেখলেন বাক্সটাতে তালা দেওয়া

এখন তাদের পক্ষে এই তালার চাবি খোঁজা প্রায় অসম্ভব ! তাই আর কোন উপায় না দেখে তার ট্রাংকের তালাটা ভেঙে ফেলেন। এরপর তারা তাঁদের বহু আকাঙ্খিত সেই প্রতিষেধকটা দেখতে পেলেন। প্রতিষেধকটা একটা কাঁচের শিশিতে সংরক্ষণ করা ছিলো।
শিশি টার উপরের লেভেলেই লেখা ছিলো যে এটা কিসের প্রতিষেধক । কাঁচের শিশিটার পাশেই একটা ডায়েরি রাখা ছিলো।

ডায়েরিটা হাতে নিয়ে ডাক্তার জেরিন আক্তার বুঝতে পারলেন যে, এই ডায়েরিতেই তার বাবা এইরকম হিংস্র মানুষ খেকো মানুষের জন্য প্রতিষেধক তৈরির ফর্মুলা লিখে রেখে গিয়ে ছিলেন। এই ফর্মুলার সাহায্যে এখন ডাক্তার জেরিন আক্তার নিজেও নতুন করে এই রোগের প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবেন। হয়তো এই ফর্মুলার কপি আমেরিকার সেই ইমেইল পাঠানো গবেষকদের কাছে পাঠালে তারা নিজেরাই প্রতিষেধক তৈরি করে তাদের দেশের এই সমস্যাটার সমাধান করতে পারবেন!

কিন্তু এখন এই প্রতিষেধক যতটুকু তৈরি করেছিলেন ডাক্তার আসিফুর রহমান সেটুকুই ইনজেকশনের মাধ্যমে শম্মীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে আগে তাঁকে সুস্হ্য করতে হবে!

এরপরে দ্রুতই মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তার আবির সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন। ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর গবেষণার মেডিসিনের পরীক্ষাটিতো সফল হয়েছিলোই। এইবার দেখার পালা ডাক্তার আসিফুর রহমানের গবেষণার প্রতিষেধক তৈরির পরীক্ষাটি সফল হয় কি না ?

তারা যতক্ষণে আবির সাহেবের বাড়িতে পৌছালেন ততক্ষণে শম্মীয়র ৩ নাম্বার খুনটা করা হয়ে গিয়েছিলো। শম্মী আজ আরেকটা শিশুকে খুন করেছে! কিন্তু মিসির আলি সাহেবের বিশ্বাস ছিলো, এটাই হয়তো শম্মীর শেষ হিংস্র খুন ছিলো! এরপর থেকে মেয়েটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শুধু দিনের অর্ধেকটা সময় না, সারাটা জীবনের জন্যই হয়তো এখন মেয়েটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এরপর আবির সাহেবকে মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা খুলে বলেন। আবির সাহেব বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তার বন্ধু তার সাথে এমন কাজ করতে পারে?!!

এরপর ডাক্তার জেরিন আক্তারকে আবির সাহেব শম্মীর ঘরে নিয়ে যান। শম্মী তখন ঘুমাচ্ছিলো। এরপর ডাক্তার জেরিন আক্তার সেই প্রতিষেধকের শিশি থেকে বেশ কিছুটা প্রতিষেধক ইনজেকশনে ভরে সেটা শম্মীর শরীরে প্রবেশ করান। শম্মী ঘুমের ভেতর শুধু একটু নড়ে উঠলো! এর বেশি কোন প্রতিক্রিয়াই করলো না।

এরপর আবির সাহেব, ডাক্তার জেরিন আক্তার এবং মিসির আলি সাহেব নতুন একটা দিনের অপেক্ষায় রইলেন। তারা এটাই জানতে চায় যে, শম্মী সুস্হ্য হয়েছে কি না?

এরপর সকাল হতেই শম্মী আবার স্বাভাবিক ব্যবহার করা শুরু করে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাঁ হয়ে যায়। তাও শম্মীর ভেতরে আর কোন অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায় না। এরপর টানা ৭ দিন কেটে গেলো। শম্মী এখন পুরোপুরি সুস্হ্য। সে এখন বাকি ৮-১০ টা মেয়ের মতই স্বাভাবিক আচরণ করে। তার ভেতর আর কখনো হিংস্রতা জেগে উঠেনি। এই ব্যাপারটা নিয়ে আবির সাহেব মিসির আলি সাহেবের প্রতি চিরো কৃতজ্ঞ হয়ে রইলেন।

এইদিকে ডাক্তার জেরিন আক্তারও সেই প্রতিশেধকের ফর্মুলার এক কপি সেই গবেষণা সংস্হাকে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো যারা তাকে কয়েক দিন আগে ইমেইল করেছিলো! তারা সেই ফর্মুলায় প্রতিষেধক তৈরি করে আমেরিকান সেই হিংস্র শিশুদের উপর প্রয়োগ করে এবং সেই শিশু গুলোও আবার সেই হিংস্রতা ভরা অভিশপ্ত জীবন থেকে চিরোমুক্তি পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।

এরপর জেরিন আক্তার সেই ভয়ংকর থিওরি যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে দিয়েছিলো সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামও সেই আমেরিকান গবেষকদের কাছে প্রকাশ করে দেয়। এরপর সেখানে তাঁদের এই ভয়ংকর গবেষণার জন্য তাঁদের কঠোর ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়! আর এই ফর্মুলাটার জন্য সাথে সাথেই ডাক্তার জেরিন আক্তারের নাম এবং খ্যাতি হয়ে যায় পুরো বিশ্বে।

মিসির আলি সাহেব খুব একটা খ্যাতি পছন্দ করেন না। তাই তিনি আড়ালেই রয়ে গেলেন। তিনি রহস্য পিপাসু। শম্মীর এই অদ্ভুত হিংস্র আচরণের রহস্যটা তিনি ভেদ করতে পেরেছেন, এটা ভেবেই তিনি বেশ স্বস্তি পাচ্ছেন! রহস্যের পেছনে ছুটাটা মিসির আলি সাহেবের একটা বড় নেশা। তাই তিনি এখন পরবর্তী রহস্যে ঘেরা একটা কেসের অপেক্ষায়!

* * * * * সমাপ্ত * * * * *

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here