মানুষ খাওয়া ভূত
Part 4
এরপর মিসির আলি সাহেব যেই লাইব্রেরি থেকে বেড় হতে যাবেন, ঠিক সেই সময়েই জানালা দিয়ে অন্য কারো এই বাড়িতে ঢুকার শব্দ শুনতে পেলেন! মিসির আলি সাহেব পুরো আৎকে উঠলেন! তিনি ভাবলেন, এই বাড়িতেতো এখন আর কারো আসার কথা না! তাহলে এতোরাতে জানালা দিয়ে কে বাড়িতে ঢুকলো?
মিসির আলি সাহেব এই রকম কোনো পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। মিসির আলি সাহেব হঠাৎ করেই বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। এরপর মিসির আলি সাহেব লাইব্রেরির পরিবেশ টাকে স্বাভাবিক বোঝাতে দ্রুত বাকি ডায়েরিগুলো গুছিয়ে সেই বুক সেলফে রেখে দিলো।
নিজের কাছে শুধু রেখে দিলো ডাক্তার ওয়াজেদ আলির হাতে লেখা সেই ৩৯ নং গবেষণা নিয়ে লেখা ডায়েরিটা! এরপর মিসির আলি সাহেব টর্চের আলোটা নিভিয়ে দ্রুত লাইব্রেরির একটি ডেস্কের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লেন!
এরপর শুধু অপেক্ষা করতে লাগলেন এটা দেখতে যে এতরাতে এই বাড়িতে কে ঢুকলো এবং কেনো ঢুকলো?
এরপর মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন, যে মানুষটা মাত্র জানালা দিয়ে এই বাড়িতে ঢুকলো সে টর্চ জালিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে এই লাইব্রেরির দিকেই এগিয়ে আসছে! মিসির আলি সাহেবের হৃদকম্পন যেনো ধীরে ধীরে আরো বেড়ে যাচ্ছিলো। মিসির আলি সাহেব কল্পনাও করতে পারছিলেন না যে এই সময়ে এই বাড়িতে কে ঢুকতে পারেন?
তার কৌতূহলতা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে!
মিসির আলি সাহেব কিছুটা ভয় আর অনেকটা কৌতুহলার সাথেই অপেক্ষা করছিলেন এটা দেখার জন্য যে, কে হঠাৎ এতো রাত্রে এই বাড়িতে প্রবেশ করলো? সে কী চায়? সেও কী তার মতো ডাক্তার ওয়াজেদ আলির মৃত্যুর আগের গবেষণাটা সম্পর্কে জানতে চায়?
কিন্তু সে জানবে কী করে এই গবেষণাটা সম্পর্কে ? কারণ শম্মীর এইরকম আচরণের কথাতো একমাত্র মিসির আলি সাহেব আর আবির সাহেবই জানেন!
এছাড়া ডাক্তার ওয়াজেদ আলির গবেষণাওতো খুব গোপন একটা গবেষণা ছিলো!
এরপর টর্চ লাইটের আলোটা ধীরে ধীরে লাইব্রেরির ভেতরে এসে পড়লো। মিসির আলি সাহেব নিজেকে ডেস্কের আরেকটু ভেতরে নিয়ে গেলেন। ডেস্কের ফাকা জায়গা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন লাইব্রেরিতে কে প্রবেশ করলো?
এরপর মিসির আলি সাহেব দেখতে পেলেন একটা ২২-২৫ বছর বয়সের মেয়ে লাইব্রেরির ভেতর টর্চ হাতে প্রবেশ করেছে! মেয়েটাকে দেখে মিসির আলি সাহেব বেশ অবাক হলেন! ভাবলেন , এই মেয়েটা আবার কে?! এরপর মেয়েটার হাতের টর্চ লাইটের আলোতেই মিসির আলি সাহেব স্পষ্ট ভাবে মেয়েটার চেহারা দেখতে পেলেন!
মেয়েটা মাঝারি উচ্চতার, গায়ের রং শ্যামলা, চোখে মোটা ফ্রেমের একটা চশমা, চেহারার মধ্যে একটা গম্ভীরতার ভাব রয়েছে।
মেয়েটার চেহারা দেখেই যেনো বোঝা যায় যে মেয়েটা কোন একটা রহস্যের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে ছুটছে !
এরপর মেয়েটা লাইব্রেরিতে ঢুকে মিসির আলি সাহেবের মতই বুক সেলফগুলো ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। প্রথম ৩টা বুক সেলফ স্বাভাবিক ভাবেই দেখার পর ৪র্থ বুক সেলফটার ডায়েরি গুলো বেশ ভালো করেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো মেয়েটা।
মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো যে মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমান! মেয়েটা একটা একটা করে ডায়েরি দেখছিলো আর রাগে সেগুলো ছুড়ে ছুড়ে মেঝেতে ফেলছিলো। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে, মেয়েটাও হয়তো একটা নির্দিষ্ট কিছুই খুজঁছে! হয়তো সেই হিংস্র মানুষের গবেষণা নিয়ে লেখা ডায়েরিটা! কিন্তু কেনো? এই গবেষণার সাথে মেয়েটার কী সম্পর্ক? মিসির আলি সাহেব কিছুই বুঝতে পারছিলেন না!
এরপর মেয়েটা একটা একটা করে সবগুলো ডায়েরিই মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিলো। কিছু একটা খুঁজে না পাওয়ার ক্ষোভে মেয়েটা সেই বুক সেলফটার কাঁচে হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকে। নিজের হাতের টর্চ লাইট টা ছুড়ে মারে দেয়ালে। সাথে সাথে পুরো লাইব্রেরিতে অন্ধকার নেমে আসে! এরপর মেয়েটা মেঝেতে বসে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে!
যেনো কিছু একটা না পাওয়ার কষ্ট!
মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারেন যে, এই মেয়েটা কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করেনি। সেও হয়তো তার মত একজন রহস্য পিপাসু। হয়তো তার মতোই ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর গবেষণার পেছনের রহস্যটা খুঁজতে মেয়েটা এই বাড়িতে এসেছে! কিন্তু মেয়েটার এই রহস্য জানার পেছনের কারণটাও একটা রহস্য। কে এই মেয়ে? এই রহস্যটা জানতে হলে অবশ্যই মিসির আলি সাহেবকে আগে মেয়েটার সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলতে হবে!
কিন্তু মেয়েটা কী তার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করবে? মেয়েটা কি তার এখানে আসার পুরো কারণটা তাকে খুলে বলবে? মিসির আলি সাহেব কথাগুলো ভাবতে থাকেন!
এরপর মিসির আলি সাহেব তার মনের ভয়টা কিছুটা কাটিয়ে অনেকটা কৌতূহলতা নিয়ে হঠাৎ করেই তার হাতের টর্চের আলোটা জ্বালিয়ে সেই ৩৯ নাম্বার গবেষণার ডায়েরিটা হাতে নিয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
মেয়েটা কল্পনাও করতে পারেনি যে, সে ছাড়া আর কোন লোক এই বাড়িতে থাকতে পারে! তাই হঠাৎ করে মিসির আলি সাহেবকে দেখে সে পুরো আৎকে উঠলো ! মেয়েটার চোখে-মুখে পুরোই ভয়ের ছাপ দেখতে পেলেন মিসির আলি সাহেব ! এরপর মেয়েটা ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মিসির আলি সাহেবকে প্রশ্ন করলো:
-কে আপনি? এই বাড়িতে কী করছেন? আপনি কী ডাক্তার ওয়াজেদ আলির পুরোনো কোন সহযোগি?
এরপর মিসির আলি সাহেব একটু মুচকি হেসে মেয়েটাকে উত্তর দিলেন:
-না। আমি তেমন ভাবে ডাক্তারকে চিনি না । কিন্তু আপনি কে? আর এতরাত্রে আপনি ইবা এই বাড়িতে কী করছেন?
-সেটা আমি আপনাকে বলতে যাবো কেন? আপনি আগে বলুন আপনি কেনো এই বাড়িতে এসেছেন? এই বাড়িটাতো ৬ বছর ধরে পরিত্যাক্ত অবস্হায় পড়ে রয়েছে! আপনি কী কোন কিছু চুরি করতে এখানে এসেছেন?
(সেই মেয়েটা)
-না। আপনি যেটার জন্য এসেছেন! আমিও ঠিক সেটার জন্যই এসেছি!
অবশ্য আমি আপনার আগেই এসেছি!
-মানে কী? আপনিও কী ডাক্তার ওয়াজেদ আলির মৃত্যুর পুর্বের সেই হিংস্র মানুষ নিয়ে গবেষণার বিষয়টার রহস্য জানতে এখানে এসেছেন?
এরপর মিসির আলি সাহেব টর্চের আলোতে সেই ৩৯ নাম্বার ডায়েরিটা মেয়েটাকে দেখালেন আর বললেন:
-আপনি কী সেলফে এই ডায়েরিটাই
খুঁজছিলেন?
ডায়েরিটা দেখে মেয়েটা বেশ চমকে উঠলো! এরপর বললো:
-এই ডায়েরিটা আপনি পেলেন কোথায়? আপনি ও কী আমার মতো এই গবেষণার পেছনের রহস্যটা খুজঁছেন? আপনি কী জানেন এই গবেষণার ভয়ংকর পরিণতি কী হয়?
মেয়েটার কথা শুনে মিসির আলি সাহেব বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারলেন যে, মেয়েটা হয়তো ডাক্তার ওয়াজেদ আলির এই গবেষণা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। তাই মেয়েটাকে যদি মিসির আলি সাহেব এই গবেষণা সম্পর্কে যতটুকু জানেন সেটা বলেন। তাহলে মেয়েটাও হয়তো এই গবেষণা সম্পর্কে সে কী কী জানে এবং কিভাবে জানে এটা তাকে বলবে!
এরপর মিসির আলি সাহেব তার পুরো ঘটনাটা সেই মেয়েটাকে গুছিয়ে বললেন। সেই শম্মীর জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত শম্মীর নানান হিংস্র আচরণের কথা, আবির সাহেবের সাথে তার দেখা হওয়ার কথা, ডাক্তার ওয়াজেদ আলির শম্মী এবং তার মাকে ভিকটিম বানিয়ে ভেকসিনের নামে মেডিসিন প্রয়োগ করা, পুরো ঘটনাটাই মেয়েটাকে মিসির আলি সাহেব গুছিয়ে বললেন।
মিসির আলি সাহেবের বলা পুরো ঘটনাটাই বেশ মনযোগ দিয়ে শুনছিলো মেয়েটা! ঘটনাটা বলার পর মিসির আলি সাহেব মেয়েটাকে বললেন:
-বুঝলেনতো পুরো ঘটনাটা! আসলে এইসব জানার পেছনে আমার কোন স্বার্থ নেই। আমি একজন রহস্য প্রেমী। যেখানেই রহস্য লুকিয়ে থাকে, সেখানেই আমি যাই। এই শম্মী মেয়েটার এইরকম জানোয়ারের মতো হিংস্র ব্যবহার বেশ অস্বাভাবিক।
তাই আমি তাকে নিয়ে গবেষণা করতে করতে এই ডাক্তার ওয়াজেদ আলি পর্যন্ত এসেছি! এরমধ্যেই আমি অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি এবং এখনো অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। হয়তো এই গবেষণা নিয়ে ডায়েরিটা পড়লে বাকি প্রশ্ন গুলোরও উত্তর পেয়ে যাবো!! কিন্তু আপনি কে? আর আপনি ইবা এই গবেষণাটা সম্পর্কে জানলেন কিভাবে? আমার জানা মতে এটি ডাক্তার ওয়াজেদ আলির একটা গোপণ গবেষণা ছিলো।
শম্মীর রহস্য সম্পর্কে না জানলে আমিও হয়তো এই গবেষণা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতাম না! এই গবেষণাটা সম্পর্কেতো আপনারও জানার কথা না!
তাহলে আপনি কে আর কিভাবে ওয়াজেদ আলি এর এই গবেষণাটা সম্পর্কে জানলেন?!
মিসির আলি সাহেবের প্রশ্নটা শুনে মেয়েটা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। এরপর তার পুরো ঘটনাটা মিসির আলি সাহেবকে বলতে লাগলো:
-আসলে আপনার বলা ঘটনাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। এই গবেষণাটা ডাক্তার ওয়াজেদ আলি একা করেননি। তার সাথে অন্য একজন গবেষকও ছিলেন।
যার নাম, ডাক্তার আসিফুর রহমান। তিনি আমার বাবা হন। অবশ্য এই গবেষণায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না! আসলে আমার নাম ডাক্তার জেরিন আক্তার। আমার যখন ৩ বছর বয়স তখন আমার মা মারা যান। এরপর থেকে আমার বাবাই আমার দেখাশোনা করে আমাকে বড় করেন। ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় ৬-৭ বছর ঘটনা!
আমি তখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশুনা করতাম। আমার বাবা একজন খুব ভালো প্রাণী বিষয়ক গবেষক ছিলেন। তিনি নানান নতুন প্রাণির প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করতেন এবং বেশ কয়েকবার সফলও হয়েছিলেন । আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রি ছিলাম। তাই আমার বাবা তার প্রায় প্রত্যেকটা গবেষণায়ই আমাকে সহযোগি হিসেবে রাখতেন।
এতে অবশ্য আমি অনেক নতুন কিছুই শিখতে পারতাম। আমার বাবা তার প্রত্যেকটা গবেষণা নিয়েই প্রায় আমার সাথে কথা বলতেন। এই সব গবেষণার পরেই আমার বাবার সাথে পরিচয় হয় আরেক প্রাণি বিষয়ক গবেষক ডাক্তার ওয়াজেদ আলির সাথে।
তিনি তার একটা ব্যাক্তিগত গবেষণায় আমার বাবাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রন জানায়।
তার এই গবেষণাটা অনেক গোপন একটা গবেষণা ছিলো! আমার বাবা তার প্রায় সব গবেষণা সম্পর্কে আমাকে বললেও এই অদ্ভুত গবেষণার বিষয়টা আমার থেকেও গোপন রাখেন।
আমি যখন তার কাছে জানতে চাইতাম যে, তিনি ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বাড়িতে কী বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন? তখন তিনি প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতেন, আর বলতেন জীব বৈচিত্রের একটা বড় বিষয় নিয়ে তারা গবেষণা করছেন।
এই গবেষণাটা যদি একবার সফল হয় তাহলে তারা দুজনেই অনেক খ্যাতি লাভ করবেন এবং এই গবেষণাটা পৃথিবীর উন্নয়ণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তিনি তার এই গবেষণার বিষয়টা সম্পর্কে আমাকে কিছুই বলতে চাইতেন না তাই আমিও এই বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাতাম না! আমার বাবা রোজ সকাল বেলা কাজে হাসপাতালে যেতেন এরপর দুপুর বেলা বাড়িতে এসে খেয়ে আবার তার গবেষণার জায়গাতে যেতেন।
কিন্তু একদিন আমার বাবা সকাল বেলা বেড়িয়ে দুপুর বেলা বাড়িতে ফিরলেন না! আমি তার নাম্বারে কল দিয়ে তার নাম্বারটা বন্ধ পেলাম। এরপরে আরো কয়েকবার আমি তাকে কল দিলাম কিন্তু তার মোবাইল আর চালু হয়নি।
আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সারাদিনে আর বাবা আমায় কল দেয়নি। প্রায় সন্ধ্যাঁ ৭টার দিকে আমার মোবাইলে থানা থেকে একটা কল আসলো ! তারা আমাকে থানায় দেখা করতে বললেন। আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম !
এরপর অনেকটা ভয়ে ভয়েই থানায় গেলাম। থানায় গিয়ে আমি যা দেখলাম সেটা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! দেখলাম থানার সামনেই আমার বাবার গাড়িটা ভেঙে-মুচরে পড়ে রয়েছে! গাড়ি পুরোটা ভেজা কাঁদা পানিতে!
এরপর থানার একটু ভেতরেই যেতে দেখলাম সেখানে চাদরে মোড়া একটা লাশ পড়ে রয়েছে! লাশটা দেখে আমার চিনতে বাকি রইলো না যে এটা আমার বাবার লাশ! হঠাৎ বাবার লাশটা এইভাবে দেখে আমি পুরো আৎকে উঠি!
এরপর থানার পুলিশ আমায় জানায় যে তারা বিকাল বেলা বাবার গাড়িটা খাদ থেকে উদ্ধার করেছে! বাবা হয়তো গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে গিয়েছিল! তারা বললো এটা একটা সড়ক দুর্ঘটনা। তখন সাথে সাথেই আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি।
আমার পাশে সেদিন কেউ ছিলো না। এরপর বাবার লাশটা আমি আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর বাবার অনেক বন্ধু, সহযোগিরা আসে আমাদের বাড়িতে বাবার লাশটা দেখতে। তারা আমাকে নানান ভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে! তারা আমার বাবার সম্পর্কে অনেক প্রশংসা করে সেদিন আর বলে, যে কোন প্রয়োজনে তারা আমার পাশে থাকবে ।
সেদিন ডাক্তার ওয়াজেদ আলিও আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন! তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তিনিও যে কোন প্রয়োজনে তার কাছে যাওয়ার জন্য আমাকে বলেন। এরপরে বাবার দাফন কাজ শেষ করে সবাই মিলে। এরপরেও আমি আমার বাবার স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না !
যদিও আমার কাছে আমার বাবার মৃত্যুটা একটা স্বাভাবিক সড়ক দুর্ঘটনাই ছিলো। আমি জানতাম আমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাই তার কোন শত্রু থাকতে পারে না! আমার বাবার মৃত্যুর ৭ দিন পড়ে আমি সেদিন বাড়িতে একা একা বসে ছিলাম।
আমি সাধারণ খুব একটা মোবাইল ব্যবহার করতাম না। তাই মোবাইলের ম্যাসেজগুলোও খুব একটা চেক করতাম না কখনো।সেদিন কী মনে করে যেনো মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে
মোবাইলের ইনবক্সে ঢুকে গেলাম! মোবাইলের ইনবক্সে ঢুকতেই একটা ম্যাসেজ চোখে পড়লো! ম্যাসেজটা এসেছিলো আমার বাবার নাম্বার থেকে।
ম্যাসেজটা বাবা কখন পাঠিয়েছিলো এটা দেখতে গিয়ে আমি পুরো আৎকে উঠলাম! বাবা যেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ম্যাসেজটা ঠিক সেইদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে বাবা আমাকে পাঠিয়েছিলো! ম্যাসেজটাতে লেখাছিলো, “মামনি, তুমি ভালো থেকো। আমি মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাঁচবো না !
ডাক্তার ওয়াজেদ আলি মোটেও ভালো মানুষ না। তিনি আমাকে দিয়ে একটা ভয়ংকর গবেষণা করিয়ে এখন এর পুরো কৃতিত্ব নিজে নিতে চাইছেন। তিনি হয়তো আমাকে আর বাঁচতে দিবে না। আমি তোমাকে কল দিতে পারছি না!
কিন্তু তুমি ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে কখনো বিশ্বাস করবে না। তুমি তার ধারে কাছেও কখনো যাবে না! সব সময় তার থেকে দুরত্ব বজায় রাখবে।”
ম্যাসেজটা আমি কাঁদতে কাঁদতেই সেদিন পড়েছিলাম। তার মানে আমার বাবার মৃত্যুটা কোন দুর্ঘটনা ছিলো না! একটা পরিকল্পিত খুন ছিলো! আর আমার বাবার খুন করেন ডাক্তার ওয়াজেদ আলি!
যদিও আমার বাবা বলেছিলো লোকটা থেকে অনেক দুরে থাকতে! কিন্তু আমি কিছুতেই আমার বাবার খুনটা মেনে নিতে পারছিলাম না! আমি শুধু ভাবছিলাম, যে আমার বাবাকে বাঁচতে দেয়নি, তারও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাই আমি একদিন প্লান করেই ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে খুন করে ফেলি।
সেদিন ডাক্তার ওয়াজেদ আলি তার একটা অপারেশন শেষ করে তার বাড়িতে ফিরছিলো। পথেই আমি তার কাছে লিফট চাই। ডাক্তার ওয়াজেদ আলি আমাকে ভালোভাবেই চিনতেন। তাই অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছিলো সে আমার সাথে সেদিন।
কথাগুলো এমন ভাবে বলছিলো যে, তাকে দেখে মনে হয় সে ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারে না। কিন্তু আমি তার ভেতরের শয়তানি রুপটাকে চিনতে পেরেছিলাম। তাই তাকে হঠাৎ করেই গাড়ি থামাতে বলি। সে কিছুটা অবাক হয়ে গাড়িটা থামায়। এরপর আমি যা করি তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।
হঠাৎ করেই ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে তার হাতে ঢুকিয়ে দেই। সাথে সাথেই তার পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। ইনজেকশনটা দ্রুত মানুষের শরীর অবশ করার ইনজেকশন ছিলো। এরপরে সে আর কিছুই করতে পারে না। যা করার সব আমিই করি! আমি গাড়িটা চালু করে স্ট্যায়ারিংটা তার হাতে ধরিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যাই।
তার পুরো শরীর অবশ ছিলো তাই সে আর কিছু করতে পারে না। গাড়িটা একটু সামনে যেতেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়! সবাই ভাবে ডাক্তার ওয়াজেদ আলি স্বাভাবিক একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ! কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না যে, আমিই তাকে খুন করেছিলাম! আমি আমার বাবার খুনের প্রতিশোধ নিয়েছিলাম!
আমার বাবাকে ডাক্তার ওয়াজেদ আলি যেভাবে খুন করেসি স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছিলো, ঠিক তেমনি ভাবে আমিও তাকে খুন করে স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেই। আমার বাবার মৃত্যু এবং ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর মৃত্যু দুটোকেই সবাই স্বাভাবিক ভাবে নেয় আর তাঁদের সবাই ভুলে যায়!
আমিও এই কয় বছরে বাবাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তার স্মৃতিগুলো যেনো আমাকে ছেড়ে যেতেই চায় না। এরমধ্যে আমিও লেখাপড়া শেষ করে ডাক্তার হই। নানান অদ্ভুত বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে থাকি।
এরই মধ্যে ৬ মাস আগে অ্যামেরিকার একদল গবেষক একটা ইমেইল ফরয়ার্ড করে বিভিন্ন দেশের প্রাণিবিদ্যার গবেষকদের কাছে পাঠায়। সৌভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যক্রমে এই ইমেইলের একটা কপি আমাকেও পাঠানো হয়। ইমেইলটিতে কিছু অদ্ভুত শিশুর বর্ণণা দেওয়া ছিলো। ইমেইলটা পড়ে আমি যা বুঝতে পারি, অ্যামেরিকাতে বর্তমানে কিছু হিংস্র শিশুর জন্ম হচ্ছে! তারা যত বড় হয় তাঁদের হিংস্রতা আরো ততো বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এক পর্যায়ে তারা এতটাই জঙ্গলের হিংস্র প্রাণির মত হিংস্র হয়ে যায় যে, তারা মানুষ হয়ে মানুষের রক্ত, মাংসও খেতেও ধিধা করে না! এই ধরণের শিশুদের সম্পর্কে তারা ব্যাখ্যা জানতে চাইছিলো! আমি এই ইমেইল টা দেখে বেশ অবাক হই। কারণ রোগটা বেশ অদ্ভুত ছিলো! যদিও পরে এই বিষয় নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা করলাম না।
কারণ আমি একজন সাধারণ গবেষক ছিলাম। এ বিষয়ে তেমন একটা ধারণা ছিলো না আমার। এছাড়া এই ইমেইল টা হয়তো আমার মতো আরো হাজারো গবেষকের কাছে পাঠানো হয়েছিলো! ইমেইলটার কথা কয়মাস পর প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে গত ৭ দিন আগে একবার আমি বাবার গবেষণা গাড়ে গিয়েছিলাম।
আমার যখনি বাবার কথা খুব মনে পড়ে তখনি আমি সেই গবেষণা গাড়ে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। সেদিনও গবেষণাগাড়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। এরপর হঠাৎ চোখ গেলো আমার বাবার লেখা কিছু ডায়েরিতে। আমার বাবা ডায়েরি লিখতে খুব পছন্দ করতেন। তিনি দিনে কী কী কাজ করেছেন এবং পরের দিন কী কী কাজ করবেন সব এই ডায়েরি গুলোতে লিখে রাখতেন।
তবে তার অনুমতি ছাড়া কেউ তার ডায়েরি পড়লে সে খুব রেগে যেতো। তাই আমি আগে কখনো তার লেখা ডায়েরিগুলো পড়িনি! তাই সেদিন ভাবলাম, এখনতো বাবা বেঁচে নেই। তার ডায়েরিগুলো পড়লে হয়তো তাকে কিছুটা অনুভব করা যাবে! তাকে আরেকটু গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারবো! এরপর আমি তার লেখা শেষ ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলাম।
ডায়েরিটা পড়ে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম! কারণ ডায়েরিতে বাবা স্পষ্ট লিখে গিয়েছিলো যে বাবার মৃত্যুর পুর্বে সে ডাক্তার ওয়াজেদ আলির সাথে কী বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন! বিষয়টা দেখে তখন আমি পুরো চমকে উঠি! কারণ সেই ডায়েরিতে বাবা নিজেই লিখেছিলো যে তারা মানুষের জিনের ভেতর অন্য কোন হিংস্র প্রাণির জিনের
প্রবেশ ঘটিয়ে একটা হিংস্র প্রাণির মতো মানুষকে তৈরি করতে চায়!
যে প্রাণী দেখতে অবিকল মানুষের মতই হবে! কিন্তু তার আচরণ হবে হিংস্র প্রাণিদের মতো। আমি এতটুকু পড়েই বুঝতে পারলাম যে, অ্যামেরিকা থেকে গবেষক দলটা যে ধরণের শিশুর বর্ণণা দিয়েছিলো সেই শিশুদের সাথে হয়তো এই গবেষণার কোন সম্পর্ক রয়েছে! আমি বাবার ডায়েরিটা পড়ে বুঝতে পারি যে, এই গবেষণার প্রধান গবেষক যেহেতু ডাক্তার ওয়াজেদ আলি ছিলো তাই নিশ্চই এই গবেষণার থিওরিটা তার বাড়িতে গেলেই পাওয়া যাবে এবং ডাক্তার ওয়াজেদ আলি যে তার গবেষণার থিওরি গুলোকে একটা করে ডায়েরিতে নথিভুক্ত করে রাখে এটাও আমার জানা ছিলো।
তাই আমি ভাবলাম এই ধরণের শিশু তৈরির থিওরি যার কাছে আছে! তার কাছে হয়তো এই ধরণের শিশুদের আবার স্বাভাবিক করার থিওরিটাও রয়েছে। তাই অনেক কষ্ট আর চেষ্টা করার পর আজ অবশেষে এই বাড়িতে ঢুকতে পারলাম। তবে ডায়েরিটা প্রথমে খুঁজে না পেয়ে বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে এবার মনে হচ্ছে ডাক্তার ওয়াজেদ আলির হাতের লেখা এই ডায়েরিটা পড়ে এই গবেষণা সম্পর্কে ব্যাখ্যামূলক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ডায়েরিটা আপনি আমাকে দিন! আমাকে দ্রুত ডায়েরিটা পড়তে হবে। তাহলে আপনার ঐ শম্মীর অদ্ভুত আচরণের রহস্যটাও সমাধাণ হবে!
আর আমেরিকার সেই নিষ্পাপ শিশু গুলোও রক্ষা পাবে!
দীর্ঘক্ষণ মেয়েটার কথা
শুনার পর এবার মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারলেন। তার মনে জাগা অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরই সে সহজে খুঁজে পেলেন। সে বুঝতে পারে যে ডায়েরিটাতেই এই গবেষণা সম্পর্কে সবকিছুর ব্যাখ্যা রয়েছে! ডায়েরিটা পড়তে পারলেই হয়তো এই রহস্যের সমাধাণ করা সম্ভব হবে। এরপর মিসির আলি সাহেব সেই মেয়েটার হাতে ডায়েরিটা দিলেন। এরপরে যেই মেয়েটা ডায়েরটা পড়া শুরু করবে হঠাৎ মিসির আলি সাহেবের টর্চ লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো! সাথেসাথেই পুরো লাইব্রেরি আবার অন্ধঁকার হয়ে গেলো। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে তার টর্চের ব্যাটারির চার্জ শেষ!
দীর্ঘক্ষণ মেয়েটার কথা শুনার পর এবার মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারলেন। তার মনে জাগা অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরই সে সহজে খুঁজে পেলেন। সে বুঝতে পারে যে ডায়েরিটাতেই এই গবেষণা সম্পর্কে সবকিছুর ব্যাখ্যা রয়েছে! ডায়েরিটা পড়তে পারলেই হয়তো এই রহস্যের সমাধাণ করা সম্ভব হবে।
এরপর মিসির আলি সাহেব সেই মেয়েটার হাতে ডায়েরিটা দিলেন। এরপরে যেই মেয়েটা ডায়েরটা পড়া শুরু করবে হঠাৎ মিসির আলি সাহেবের টর্চ লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো! সাথেসাথেই পুরো লাইব্রেরি আবার অন্ধঁকার হয়ে গেলো। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে তার টর্চের ব্যাটারির চার্জ শেষ!
তারা বুঝতে পারলো যে এখন আর তাদের এই বাড়িতে থাকা উচিত হবে না। তারাতো এই অদ্ভুত গবেষণা এর রহস্যের ডায়েরিটা পেয়েই গেছে! এখন বাহিরে গিয়ে এটা পড়লেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না! এরপরে অন্ধঁকারের ভেতরেই মিসির আলি সাহেব এবং সেই ডাক্তার মেয়েটা ঠিক যেভাবে এই বাড়িতে ঢুকেছিলো ঠিক সেই ভাবেই জানালা দিয়ে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসলেন!
এরপর তারা দুজনেই ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর বাড়ির পাশের সেই নির্জন রাস্তাটা ধরে হাঁটতে থাকেন। এরই মধ্যে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। তাই রাস্তায় কোন মানুষও ছিলো না। এছাড়াও চারিদিকে বেশ অন্ধঁকার। এই অন্ধকারে কিছুতেই ডায়েরিটা পড়া যাবে না। এরপর মিসির আলি সাহেব এবং সেই মেয়েটা দুরে একটা লেমপোস্ট দেখতে পেলো । লেমপোস্টের নিচে বেশ আলো রয়েছে।
এরপর তারা সেই লেমপোস্টের আলোতে গিয়ে ডায়েরিটা পড়তে শূরু করলেন! সেই ডাক্তার মেয়েটা ডায়েরিটা পড়ছিলেন আর মিসির আলি সাহেব শুনছিলেন। ডায়েরিটা ডাক্তার ওয়াজেদ আলির নিজস্ব ভাষায় লেখা। শুরু থেকে ডায়েরিটাতে যা যা লেখাছিলো:
১. এটা আমার জীবনের ৩৯ নাম্বার গবেষণা। এটা আমার জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাও বটে। এই গবেষণায় সফলতা অর্জনটা আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার এবারের গবেষণার বিষয়টা হলো মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা। এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরির থিওরিটা আমাকে দিয়েছিলো আমেরিকার একটা বড় প্রাণী বিষয়ক গবেষক দল । তারা চাইছিলো তাদের দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলতে। তাই তারা আমাকে অনেক টাকার অফার করে এই ভয়ংকর গবেষণাটা করার জন্য । তারা আরো বলে আমি যদি এই গবেষণায় সফল হই তাহলে তাদের দেশে তাদের সাথে আমি গবেষণার কাজ করতে পারবো। তখন আমার খ্যাতি আরো বাড়বে। আমি তাই সিদ্ধান্ত নেই যে এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করার মেডিসিন তৈরি করবো। যার মাধ্যমে সৃষ্ট একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে খেতেও দ্বিধা করবে না। তারা আমাকে গবেষণাটা সম্পর্কে কাউকে কিছু না জানাতে বলে। তাই এখন থেকে আমি এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরির গবেষণা নিজের বাড়িতে একা একাই শুরু করবো।
২. গবেষণাটা আসলেই অনেক জটিল একটা গবেষণা! এই ধরণের গবেষণা এর আগে আমি কখনোই করিনি। তাই অনেক কষ্ট করে মানুষ খেকো মানুষ তৈরির একটি তত্ত্ব তৈরি করলাম।
আসলে মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্য রুচি ইত্যাদি অনেকটা ডি.এন.এ থেকে পাওয়া। একটা শিশুর সেই ডি.এন.এ এর সহযাত আচরণে পুরোপুরি প্রভাব পড়তে প্রায় ৯ মাস সময় লাখে যখন সে তার মায়ের গর্ভে থাকে ! তাই সেই সময়টাতে শিশু ভ্রুন অবস্হায় থাকার সময় থেকে যদি তার শরীর অন্যকোন হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ ঘটানো হয়, তাহলে হয়তো জন্মের পর থেকে সেই শিশুটি দেখতে অবিকল মানুষের মতো হলেও তার আচরণ হবে জঙ্গলের হিংস্র প্রাণিদের মতো!
৩. আমার তত্ত্বটি সঠিক কিনা এটা জানার জন্য গত কয়েকদিন যাবত একটা পরীক্ষা চালাচ্ছিলাম। পরীক্ষাটি শুনতে হাস্যকর হলেও এতে আমার পরীক্ষার সফলতা নিশ্চিত হয় । আমি একটা সদ্য গর্ভবতী ইদুরের শরীরে একটা টিকটিকির জিনের প্রবেশ ঘটাই। এরপর সেই ইদুঁরটিকে একটি কাঁচের জারে আটকে রাখি। এরপর যখন ইদুঁরটার বাচ্চা হলো, তখন বেশ কিছুদিন তারা স্বাভাবিক ইদুর ছানার মতোই আচরণ করলেও এরপর থেকে তারা দেয়ালে দেয়ালে টিকটিকির মতো ঘুরে ঘুরে মশা আর মাছি খেতে থাকে। তাই আমি বুঝতে পারি আমার তত্ত্বটি ভুল নয়!.
৪.মানুষের শরীরের ভেতর কোন হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ করানো বেশ মুশকিল একটা কাজ হবে। কোন হিংস্র প্রাণির শরীর থেকে তার জিন আলাদা করাও বেশ কঠিন! তাও মানুষখেকো মানুষ তৈরির জন্য বেশ কিছু প্রাণির জিনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমতো জোকের জিনের প্রয়োজন। কারণ মানুষ যদি তার শরীরে জোকের মতো সহজাত আচরণ পায় তাহলে সে খুব সহজেই অন্য একটা মানুষের চামড়ার উপর দিয়ে তার রক্ত চুষে চুষে খেতে পারবে। এছাড়াও একটা হিংস্র প্রাণির জিনকে যদি মানুষের শরীরে ভেতরে ঢুকানো হয় তাহলে মানুষ স্বভাবতই অন্য প্রাণির কাঁচা মাংস খেতে পারবে। কারণ জঙ্গলের হিংস্র প্রাণিরা কাঁচা মাংসই খেয়ে থাকে। এইভাবে দুটো জিনের মধ্যে ক্রস ঘটিয়ে সেই জিনটা যদি কোন গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলেই হয়তো মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা সম্ভব!
৫. অনেকটা জটিলতার মধ্যে দিয়েই জোঁক, একটা হিংস্র প্রাণি এবং আরো কিছু সাধারণ বন্য প্রাণির জিনের মিশ্রন ঘটিয়ে নতুন এক ধরণের মেডিসিন তৈরি করলাম। এই মেডিসিনটাই ইনজকশনের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রতি মাসে একবার করে দিলেই হয়তো সেই গর্ভবতী মহিলার যে সন্তান হবে সে হবে হিংস্র, অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক একটা শিশু। সে সাধারণ খাবার পছন্দ করবে না। সে যখন ছোট থাকবে তখন রক্ত, ছোটখাটো প্রাণির কাঁচা মাংস ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করবে। এবং এক পর্যায়ে সে মানুষ হয়ে মানুষের মাংস খেতেও দ্বিধা করবে না!
৬. মেডিসিন পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু আসলেই কী এই মেডিসিনের সাহায্যে মানুষের শরীরে হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ করিয়ে মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা সম্ভব? এর জন্য অবশ্যই একটা নিশ্চিত পরীক্ষা করার প্রয়োজন। কিন্তু কোন গর্ভবতী মহিলা পাবো কোথায় এই গবেষণাটা করার জন্য? আর পেলেও তার শরীরেই বা এই মেডিসিন কিভাবে প্রবেশ করাবো ? আমাদের দেশে এই ধরনের পরীক্ষা নিষিদ্ধ! এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এরপরেই আমার বন্ধু আবির চৌধুরী আমার জন্য একটা সুখবর নিয়ে আসে। সে বলে তার স্ত্রী নাকি অন্তঃস্বত্তা। আবির আমাকে অনেক বিশ্বাস করে তাই তার এই বিশ্বাসের সুযোগটাই আমি কাজে লাগাই। তার স্ত্রীকে ভেকসিনের নাম করে প্রতিমাসে আমি তার শরীরে এই মেডিসিন প্রয়োগ করতাম। আর এইভাবেই আমার পরীক্ষাটি চালু থাকে! এরই মধ্যে এই মেডিসিনের কয়েকটা কপি আমি অ্যামেরিকার সেই গোপন গবেষক দলের কাছে পাঠিয়ে দেই। যাতে তারাও এই মেডিসিন নিয়ে পরীক্ষা করতে পারে
৭. যেকোন মেডিসিন তৈরির পর তার পরীক্ষা করার আগে তার প্রতিষেধক তৈরি করাটা আবশ্যক। কারণ পরীক্ষাটির ভয়াবহতা বেড়ে গেলে তাহলে প্রতিষেধক ব্যবহার করে পরীক্ষাটি বন্ধ করা যায়। তাই আমিও এই পরীক্ষাটির প্রতিষেধক তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোন থিওরি বা তত্ত্বই আমার মাথায় আসছিলো না!
তাই আমি গোপনে আরেক জন প্রাণি বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক ডাক্তার আসিফুর রহমান কেও এই গবেষণায় যুক্ত করি।
আসিফুর প্রথমে এই গবেষণায় যোগ দিতে চায়নি। কিন্তু পরে অর্থ আর আমেরিকার গবেষকদের কাছে খ্যাতির লোভে সেও আমার সাথে এই গবেষনার কাজে সহায়তা করেন। যেহেতু আমি আগেই এই গবেষণার মেডিসিন তৈরি করে ফেলেছিলাম তাই তার একমাত্র কাজ ছিলো শুধু এই গবেষণার প্রতিশেধক তৈরি করা। তবে এই নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডাক্তার আসিফুর রহমান আমাকে নতুন দুটি তত্ত্ব দিয়েছিলো। একটি তত্ত্ব হলো এই গবেষণায় যে শিশুটি ভিকটিম হবে সেই শিশুটি সারা জীবনের জন্য হিংস্র মানুষ অর্থাৎ মানুষ খেকো মানুষ থাকবে না।
এমন ক্ষমতা এই জিন দ্বারা তৈরি মেডিসিনে নেই! এমনকি একটা পুরো দিনও সে তার হিংস্র আচরণ প্রকাশ করবে না! দিনের অর্ধেকটা সময় সে স্বাভাবিক থাকবে বাকি অর্ধেকটা সময় সে এই মেডিসিনের প্রভাবে হিংস্র আচরণ করবে। অপর তত্ত্বটি পুরোই অন্যরকম একটি তত্ত্ব। এই ভিকটিমের শিশুটি যদি পৃথিবীতে আসার পর জোকের মতো করে কোন মানুষের শরীরের রক্ত পান করার পর তাকে খুন নাও করে তাও সেই মানুষটা বেশিদিন বাঁচবে না। খুব দ্রুতই সে মারা যাবে। কারণ এই ধরণের শিশুদের ঠোটে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ এসে জমা হবে। যা কোন মানুষের রক্ত খাওয়ার সাথে সাথে তার শরীরের ভেতর চলে যাবে এবং সেই রাসায়নিক পদার্থটা তার মস্তিস্কে গিয়ে তাকে নানান ধরণের চাপ প্রয়োগ করবে এবং এক পর্যায়ে সে বাধ্য হয়ে আত্মাহত্যা করে মারা যাবে!
৮. আমাদের গবেষণাটা বেশ ভালো ভাবেই চলছিলো। আমেরেকির সেই গবেষক দলও আমার বেশ প্রশংসা করছিলেন এবং তারাও বেশ কিছু গর্ভবতী মহিলাদের এ গবেষণা সম্পর্কে কিছু না জানিয়েই ভেকসিনের কথা বলে তাদের শরীরে এই মেডিসিন প্রয়োগ করে এর পরীক্ষা করছিলো! এইদিকে ডাক্তার আসিফুর রহমানের প্রতিষেধক তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে।
৯. ডাক্তার আসিফুর রহমান আমার সাথে বেঈমানি করলো। এই গবেষণার প্রতিষেধক সে ঠিকই তৈরি করেছে কিন্তু সে আমায় সেটা দিচ্ছে না। সে চাইছে
এই প্রতিষেধকটার পুরো কৃতিত্ব নিজের নামেই নিতে। এই মেডিসিনের রোগটা যখন পুরো আমেরিকায় মহামারি আকার লাভ করবে তখন সে নাকি এই প্রতিষেধকটা সেখানে রপ্তানি করবে। এতে সে আরো অনেক অর্থ আর খ্যাতি অর্জন করতে পারবে।
আর এই ভয়ংকর গবেষণাটার পুরো দোষ এসে পড়বে আমার ঘারে। আমি এই গবেষণাটা কিছুতেই এইভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত একটা গবেষণা এবং এর কৃতিত্ব শুধু মাত্র আমার। ডাক্তার আসিফুর রহমান একটা বড়
চলবে