পদ্মিনী,পর্বঃ১০,১১
আবির হাসান নিলয়
পর্বঃ১০
আমিঃকুত্তী কই ছিলি?
নিলুঃতুই কেডাই?
আমিঃলাথি মারবো,আমি নিলয়।
নিলুঃতো আগে পরিচিয় দিতে কি হয়
আমিঃতুই আমার ভয়েজ চিনিস না?
নিলুঃবাদ দে,বল কি হয়ছে?
আমিঃএকটা ছেলে যাবে বাসায়।
নিলুঃকেনো?
আমিঃওর পরিবার বলতে ওর মা ছাড়া
কেউ নেই।কিন্তু ওর মা অনেক অসুস্থ।
ওর মহল্লার সবার কাছে হেল্প চাইলেও
কেউ হেল্প করিনি।
নিলুঃনাম কি?
আমিঃরানা,ও একা যাবে।
নিলুঃকুত্তা ঐটুকু ছেলে একা কিভাবে
এতোদূরে আসবে?
আমিঃও পারবে।আর মায়ের প্রতি
ভালোবাসার জন্য এটুকু করতেই হবে।
নিলুঃতুই আর তোর আজগুবি কথা।
আমিঃআম্মুকে বলে টাকার ব্যবস্থা করিস।
নিলুঃওকে,আর শোন
আমিঃকি
নিলুঃআব্বু পরশু বাসায় আসবে।হয়তো
তোর সাথে দেখা করার জন্য তোর কলেজে
যাবে।আর সাথে চাচ্চুও যাবে।
আমিঃমিথ্যা বলা মহাপাপ বোনু।
নিলুঃআরে সত্যি
আমিঃকিহ,চাচ্চু আসবে কেনো😴
নিলুঃআমি কি জানি।আগে থেকে জানিয়ে
দিলাম বড় বোন হিসাবে।
আমিঃতোর বড় তোর কাছেই রাখ।এখন
রাখছি যেটা বললাম সেটা করিস।
নিলুঃওকে বাই
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে কল কেটে
দিয়ে বন্ধুদের কাছে আসলাম।
জয়ঃকার সাথে কথা বললি?
আমিঃএকটা ফ্রেন্ডের সাথে।
জয়ঃতোর বাসার ঐদিকে…!
আমিঃহ্যা কেনো?
রাহুলঃআমরা ছাড়া এখানে তো কেউ
নাই।তাই হয়তো আগের ফ্রেন্ড।
আমিঃকিছু জরুরি কাজ ছিলো আরকি।
টুকটাক কথা বলছি তখন জান্নাত এবং
ওর বান্ধুবীরা এসে দাঁড়ালো।
জান্নাতঃহাই
আমিঃবসো এখানে
জান্নাতঃনা এমনিতেই ঠিক আছি।
আমিঃআরে বসো।
জান্নাতঃহুম(সবাই বসলো)
আমিঃতা কি মনে করে আমাদের গ্রুপে?
জান্নাতঃআসলে গতকাল স্যারের সাথে
আমি অনেক খারাপ করেছি।
আমিঃসরি তো বলছো
জান্নাতঃতবুও কেমন একটা খারাপ লাগছে।
আমিঃসেটার জন্য তুমি স্যারের সাথে
একাকী কথা বলতে পারো।
জান্নাতঃতুমি থাকবে সাথে?
আমিঃনাহ
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃআমি ক্লাস করবো না,শুধুমাত্র
তোমাকে দেখার জন্য আসছিলাম।
জান্নাতঃনিলয় প্লিজ এসব বাদ দাও,
আমরা শুধুমাত্র বন্ধু তাই না।
আমিঃঅন্য কেউ জিজ্ঞাস করলে মিথ্যা
বলতে পারতাম কিন্তু তোমাকে মিথ্যা
বলতে পারবোনা।
জান্নাতঃতো যাবে কোথায়?
আমিঃশুভার সাথে দেখা করতে।
জান্নাতঃক্লাস করে দুজন একসাথে যাবো।
আমিঃক্লাস করলে ওকে সময় দেয়ার মতো
সময় পাওয়া যাবে না।আর তাছাড়া আমার
ক্লাস না করলেও চলবে।
জান্নাতঃহু,সব সময় নিজেরটাই ভাবো।
রাহুলঃআমরা কিন্তু অন্যেরটাও ভাবি।
আমিঃযেমন?
রাহুলঃভালোবাসার মানুষটা কি পছন্দ
করে,কি করলে খুশি হবে এসব।
সুমুঃতোদের প্রেমিকাও আছে?
রাহুলঃএখন নেই,তবে হতে দেরি কই?
রাত্রিঃকনফিডেন্স দারুণ।
আমিঃওকে বন্ধুগণ তোমরা আড্ডা দাও
আমাকে যেতে হবে।বাই পদ্মিনী🌸
জয়ঃসবধানে যাস
*******জান্নাতের কথা*********
নিলয় চলে যাওয়ার পরেই রাহুল বলল,,,
রাহুলঃও যাবে কোথায়?
জান্নাতঃতোমাদের বলেনি?
রাহুলঃওর জীবনে আমাদের শুধুমাত্র
একটা সত্যি কথা বলছে।আর যেসব
বলে সেটার একটারো আগা মাথা নেই।
রাত্রিঃকি সত্যি বলছে?
রাহুলঃএই যে ও জান্নাতকে ভালোবাসে।
সুমুঃআজাইরা
জয়ঃহোপ,ও এখানেই পরেই আছে ওর জন্য।
সুমুঃতোরা কিভাবে জানিস?
জয়ঃনিলয়কে যে কেউ জান্নাতের বিষয়ে
কিছু প্রশ্ন করলে একদম ঠিকঠাক জবাব
দিবে।কিন্তু তখনি যদি ওর বিষয় কিংবা
আমাদের দুজনের কথাও জিজ্ঞাস করে
সালা হয়তো বলবে জানিনা না হলে ভুলভাল
বুঝিয়ে তাকে ভাগিয়ে দিবে।
রাত্রিঃযেমন বস তেমন তার সাগরেদ।
কিন্তু পাগলটা গেলো কোথায়?
জান্নাতঃসেটা না হয় ওর থেকেই শুনিস।
রাহুলঃজান্নাত একটা কথা বলি তোকে?
জান্নাতঃবলো
রাহুলঃতুই কি ওকে পছন্দ করিস?
জান্নাতঃহ্যা,তবে শুধুমাত্র বন্ধু হিসাবে।
রাহুলঃভালোবাসা না?
জান্নাতঃজানিনা,কারণ সবার আগে আমার
ফ্যামিলি। আর তোমরা সবাই জানো আমার
ফ্যামিলি কেমন।তাই নিলয় কেনো,অন্য
কেউ হলেও আমি তাকে মানতে পারবো না।
রাহুলঃহুম
জয়ঃআচ্ছা চল এখন ক্লাসে যায়।
সবাইঃহ্যা চল
সেখানে আর বসে না থেকে সবাই ক্লাসে
গেলো।কিছু সময় যেতেই ক্লাসে স্যার
চলে আসলো।গতকাল স্যার কিছু
এসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন। সেগুলো
জমা নেয়ার পর বলল….
স্যারঃআজ রবীন্দ্রনাথকে দেখছি না যে
রাহুলঃআসছিলো কিন্তু চলে গেছে।
স্যারঃকেনো?
রাহুলঃঠিকভাবে বলেনি,শুধু বললো
শুভাকে সময় দিতে হবে।তবে স্যার
আমাদের থেকে জান্নাত ভালো বলতে
পাড়বে।
স্যারঃওহ,ঠিক আছে।আমি জান্নাতের
সাথে ক্লাস শেষ করে কথা বলবো।
ক্লাসে এই বিষয়ে আর কোনো কথা হলো
না।সবাই স্যারের ক্লাসের প্রতি মনোযোগী
হয়ে ক্লাস করলো।এতোগুলো স্টুডেন্টদের
মাঝে একজনের মন খারাপ,সেটা জান্নাত।
না নিলয়ের জন্য মন খারাপ না।গতকাল
স্যারের প্রতি যেমন আচরণ করেছে সেটা
নিয়ে সে অনেক আপসেট।প্রিয় স্যারকে
এসব উল্টাপাল্টা কথা শোনালে সবারই
খারাপ লাগবে।তবে জান্নাতেরও দোষ
কোথায়…!ওর জায়গা অন্য যেকোনো মেয়ে
থাকলেও এমনটাই করতো।হয়তো স্যার
কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলো।
তবুও ক্লাসে এসব না বলে ক্লাসে মনোযোগ
দিয়ে সবাইকে বিষয় বুঝিয়ে দেয়ার
পর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,,
স্যারঃআগামী ৭ তারিখ ভার্সিটি থেকে ট্যুরে
যাওয়ার জন্য দিন ফিক্সড করছে।
তোমাদের মাঝে যারা যেতে ইচ্ছুক
সবাই কাল আমাকে বলবে।
—স্যার এবার যাচ্ছি কোথায়?
স্যারঃসুন্দরবন
—থ্যাংক ইউ স্যার।
সবার সাথে ট্যুর নিয়ে কথা বলে ক্লাস
শেষ করলো।
ক্লাস শেষ হতেই স্যারের সাথে জান্নাত
নিজেও ক্লাস থেকে বের হলো।স্যারের
পিছু পিছু আসলেও স্যারকে সাহসের
অভাবে কিছু বলতে পাড়ছে না।পেছনে
ঘুরে যখন স্যার দেখলেন জান্নাত তখন
স্যার নিজেই বললেন…
স্যারঃকিছু বলবে?
জান্নাতঃস্যার আমি মনের শান্তি খুঁজে
পাচ্ছি না।গতকাল ঐসব স্টুপিড কথাগুলো
বলার সময় আমার মাথা কাজ করছিলো
না।কিন্তু যখন আপনি সত্যিটা বললেন
তখন বুঝতে পেড়েছে।
স্যারঃআমি ওসবের জন্য কিছু মনে করিনি।
জান্নাতঃতাহলে আমার মাঝে ভয় আর
আপনার সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছে
কেনো?আগে তো এমন হয়নি।
স্যারঃমানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক,
কিন্তু পরে তুমি বুঝতে পারছো এটাই
অনেক।আর আমি সত্যি তোমাকে ক্ষমা
করে দিছি।
জান্নাতঃমন থেকে বলছেন?
স্যারঃহ্যা মন থেকে।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তো
আমাকে কিছু বললো না।
জান্নাতঃআমাকেও কিছু বলেনি।আজ
হুট করে এসেই বললো শুভাকে সময়
দিতে হবে।আমি বললাম ক্লাস শেষ
করে দুজন একসাথে যাবো কিন্তু শুনলো না।
স্যারঃঠিক আছে,এখন তুমি ক্লাসে যাও।
জান্নাতঃআপনি কি বাসায় যাবেন?
স্যারঃনা
জান্নাতঃওকে
আর কোনো কথা না বলে জান্নাত
ক্লাসে এসে অন্যান্য ক্লাস করতে
লাগলো।
*********নিলয়ের কথা********
স্যারের বাসার সামনে এসে কলিংবেল
দেয়ার পর ম্যাডাম দরজা খুলে দিলো।
(ম্যাডামকে আন্টি বলে সম্মোধন করলাম)
আন্টিঃকেমন আছো বাবা?
আমিঃএইতো আন্টি
আন্টিঃভিতরে আসো।
আমিঃজ্বি
আন্টিঃতুমি বসো আমি তোমার জন্য
খবারের ব্যবস্থা করছি।
আমিঃআন্টি খাবার খাইয়ে আমাকে
বাসা থেকে বের করে দিবে?
আন্টিঃছি: ছি: বের করে দেবো কেনো?
আমিঃখাবার সময় অনেক পাবো।আগে
বোনটাকে সুস্থ করি।আমি ওর রুমে যাচ্ছি।
আন্টিঃআমি তোমার সাথে আসছি চলো।
আমিঃআপনি শুভার একটা ছবি আর
একটা আয়না নিয়ে আসুন
আন্টিঃঠিক আছে।
আন্টিকে এটুকু বলে আমি রুমে গেলাম।
জানালা ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দরজা খুলার শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।
আমিঃকেমন আছিস পাগলি?
শুভাঃএনেছো আমার জন্য?
আমিঃআমার কথার উত্তর দে আগে।
শুভাঃভালো নেই,আমাকে ওটা দিলে
ভালো থাকবো।
আমিঃতোর জন্যই তো এনেছি।
শুভাঃতাহলে দে
আমিঃআন্টি আসুক তারপর
শুভাঃহ্যা আসছে,এখন দাও।(কাছে এসে)
আমিঃএগুলো কিভাবে খায়?
শুভাঃটেবিলে বসে আমি খাই,তুমি দেখো।
আমিঃওকে নে
আন্টিঃনিলয়,কি কর….
শুভাঃতুই চুপ কর বুড়ি
আমিঃউনাকে সরি বল
শুভাঃআগে তুমি দাও
আমিঃনা বললে এখনি চলে যাবো
শুভাঃসরি,এখন দাও প্লিজ
আমিঃহুম
শুভাকে হাতে দিয়ে আন্টিকে আশ্বাস
দিলাম কিছুই হবে না।শুভা অনেকটা
পাগলের মতো করে টেবিলের কাছে
গিয়ে প্যাকেট ছিরতেই আমার দিকে
রাগি চেহারা নিয়ে তাকালো।মুহূর্তের
মাঝে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার
মুখে ছুরে মারলো।আসলে এটা ড্রাগ না।
বাজার থেকে গুড়া দুধের প্যাকেট থেকে
দুধ বের করে করে ড্রাগের মতো করে
সাজিয়েছিলাম।
শুভাঃআমাকে পাগল মনে হয় তোর?
তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম আর
তুই আমার বিশ্বাসটাই নষ্ট করে দিলি।
এসব তোর জন্য হয়েছে বুড়ি তোকে
তো আমি….
আন্টির দিকে এগিয়ে যেতেই হাত ধরে
কষে একটা থাপ্পড় মেরে চুপ করে দাঁড়াতে
বললাম।গালে হাত দিয়ে রক্তবর্ণ চোখ
নিয়ে আমাদের দিকে তাকালো।
আমিঃতোর কি মনে হয়েছিলো তুই ড্রাগ
চাইবি আর আমি তোকে সেটা এনে দেবো?
অনেকটা হাস্যকর হয়ে গেলো না।একটা
নেশাখোর মেয়ের জন্য একটা মায়ের
কাছে দোষী হতে পাড়বো না।তোকে যারা
এসব পথে এনেছে সবাইকে জেলে ধরে
দিয়েছি।এখন সবাই টয়লেট ক্লিন করবে
জেলে থেকে।তুই চাইলে তোকেও ওদের
সাথে নিয়ে যেতে পারি।যাবি আমার সাথে?
শুভাঃ….(চুপ করে আছে)
আমিঃআর কি বলেছিলি,তোকে পাগল
মনে হয়? আরে তুই অলরেডি পাগল হয়ে
গেছিস। নিজের চেহারা একবারো দেখেছিস?
আন্টি ছবি আর আয়নাটা দাও।এটা দেখে
বল এটা কার ছবি?
শুভাঃ…..(চুপ করে আছে)
আমিঃঠাসসস বল এটা কার ছবি?
শুভাঃআমার ছবি
আমিঃনিজের ছবি সাথে এখনকার শুভাকে
মিলিয়ে দেখ।(সামনে আয়না ধরে)
অনেকটা সময় শুভার সামনে আয়না
ধরে রাখার পর আয়না আর ছবি পাশে
রেখে দিয়ে ওকে বসতে বললাম।কিছু
না বলে বাধ্য মেয়ের মতো চুপ করে
বসলো।
আমিঃসকালে কিছু খেয়েছিস?
শুভাঃনা
আমিঃখাবি?
শুভাঃ…(মাথা নেড়ে হ্যা বলল)
আন্টিঃআমি নিয়ে আসছি।(চলে গেলো)
আমিঃউনাদের অনেক ইচ্ছা ছিলো তোকে
অনেক বড় করবে।কিন্তু তারা কখনো
ভাবতেও পারেনি তোর জন্য তারা সবার
কাছে ছোট হয়ে যাবে।জানিস স্যার এখন
হাসে না।আন্টি বাসা থেকে বের হয় না।
কেনো জানিস?
শুভাঃকেনো?
আমিঃতোর জন্য,যদি বাইরে কেউ তোর
কথা জিজ্ঞাস করে সেই ভয়ে।কিন্তু তুই
নিজেই চাস তোর বাবা মা সবার কাছে
ছোট হয়ে থাক।আসলে কি জানিস তোকে
জন্ম দেয়াই তাদের ভুল হয়েছে।তোকে
জন্ম না দিলে হয়তো সমাজের কাছে
মাথা উঁচু করে চলতে পারতো।আমি
নিজেও তো সিগারেট খাই,কিন্তু তোর
মতো এরকম কখনো হয়নি।কোন ক্লাস
থেকে সিগারেট খাস?
শুভাঃকাল তো বললাম।
আমিঃআমি কব থেকে খায় জানিস?
শুভাঃনা বললে জানবো কি করে?
আমিঃসেটাও ঠিক,আমি ক্লাস ৯ থেকে
খাওয়া শুরু করি।তবে দিনে শুধুমাত্র
একটা করে।(সাজানো কথা)
শুভাঃপিচ্চি বয়সে সিগারেট খোর
আমিঃহ্যা,তবে তোর মতো মা বাবার
মাথা নিচু করি নাই।তো….
আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই
আন্টি খাবার নিয়ে আসলো।
আমিঃখাবার খেয়ে নে।
শুভাঃহুম
আন্টিঃআমি খাইয়ে দেয় মা?
শুভা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে।
আন্টি আমার দিকে তাকাতেই মাথা
নেড়ে হ্যা বললা।শুভা হয়তো নেশা
করে বাজে হয়ে গেছে।তবে একদম
নষ্ট হয়ে যায়নি।প্রতিটা মানুষকেই বোঝানোর
জন্য একবার সুযোগ দিতে হয়।স্যার
আন্টি তাদের জব করার জন্য হয়তো
শুভা সুযোগ পেতো এমন ভয়ানক পথে
যেতে।শুভা খাওয়ার পাশাপাশি চোখ
দিয়ে জল গড়িয়ে পরছিলো।হয়তো
নিজের ভুলগুলো সামনে আসছিলো।
খাবার খাওয়া শেষ হতেই আন্টি প্লেট
নিয়ে বাইরে যেতেই শুভা বলল,,,
শুভাঃভাই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা
আমিঃকেনো?
শুভাঃআমি উনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।
যখন আমি ভালো হবো তখন আসবো।।
আমিঃতোর মাঝে কিছু ভালো এখনো
বেচে আছে।তোর কি করতে ভালো লাগে?
শুভাঃঘুরতে এবং প্রকৃতির ছবি তুলতে।
আমিঃতোর ক্যামেরা আছে?
কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলো।
আমিঃকি হলো বল
শুভাঃবিক্রি করে দিছি
আমিঃকেনো?
শুভাঃড্রাগ নেয়ার জন্য।
আমিঃওহ
আন্টিঃতুই চাইলে আরেকটা কিনে দেবো।
শুভাঃআমি আমাকে বিশ্বাস পাই না।
যদি আবারো এসবের পথে যায়।
আমিঃসেটা ঠিক।
শুভাঃভাইয়া তুমি আব্বুকে বলবে আমাকে
নিয়ে জেনো ঘুরতে যায়।
আমিঃযদি সেখান থেকে পালিয়ে যাস।
শুভাঃতুমিও থেকো সেখানে।
আমিঃউনাকে বলতে হবে আগে।
শুভাঃহুম
আমিঃআচ্ছা তুই শাওয়ার নে,আমার
অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।
শুভাঃআম্মা তুমি ভাইয়াকে খাবার দাও
আন্টিঃহ্যা মা দিচ্ছি।
আন্টিকে সাথে নিয়ে বাইরে আসতেই
আন্টি খাবার বেড়ে দিলো।
আন্টিঃমেয়েটা এতো তাড়াতাড়ি ভালো
হয়ে যাবে বুঝতেও পারিনি।
আমিঃতোমার কি মনে হয়,ও ভালো
হয়ে গেছে?
আন্টিঃভালো করেই তো কথা বলছে।
আমিঃকিন্তু ওকে এখনো বিশ্বাস করা
ঠিক হবে না।কারণ ড্রাগ নেয়া মানুষ
এতো তাড়াতাড়ি ভালো হয়না।
আন্টিঃওহ
আমিঃতুমি চিন্তা করো না আন্টি।ও
ভালো না হওয়া অবধি আছি।
আন্টিঃআচ্ছা বাবা,এখন তুমি খেয়ে নাও।
চলবে……….
পদ্মিনী
পর্বঃ১১
#আবির হাসান নিলয়
দুজন বাইরে বসে কথা বলছি তখন
শুভা শাওয়ার নিয়ে বাইরে আসলো।
শুভাকে বাইরে দেখে আন্টি দাঁড়িয়ে
গিয়ে শুভার দিকে এগিয়ে গেলো।
আন্টিঃকেমন লাগছে মা এখন?
শুভাঃহালকা লাগছে।
আমিঃকোথাও যাবি?
শুভাঃগার্ডেনে গেলে যাওয়া যায়।
আমিঃকোন গার্ডেন?
শুভাঃবোটানিক্যাল গার্ডেন।
আমিঃসেটা যেতে তো অনেকটা সময় লাগবে।
শুভাঃযদি এখন রওনা দেয় তাহলে
৪৫ মিনিট লাগবে,তবে সেটা সিএনজি করে।
আমিঃআগে কতোবার গেছিস?
আন্টিঃও প্রায় ওখানে যেতো।
আমিঃতাহলে দেরি কেনো চল।
আন্টিঃকিন্তু ওর আব্বু?
আমিঃযাওয়ার পথে নিয়ে যাবো
আন্টিঃঠিক আছে।তোরা বস আমি
এখনি আসছি।
আন্টি রুমে যাওয়ার পর শুভা বলল,,,,
শুভাঃআমাকে বিশ্বাস করো না তাই না..!
আমিঃহ্যা,কারণ কখনো এমন মানুষকে
এতো তাড়াতাড়ি ভালো হতে দেখিনি।
শুভাঃপ্রায় ১মাস হলো সিগারেট অবধিও
আমাকে ছুতে দেয়নি।
আমিঃকিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া
কোনো মানুষের ক্ষেত্রে সম্ভব না।
শুভাঃসেটার জন্য চেষ্টা করবো।তবে ভাইয়া
তোমাকে ওয়াদা করছি,আমার জন্য নতুন
করে আব্বু আম্মা কারো কাছে মাথা নিচু
করতে হবে না।
আমিঃসেটা তুই নিজের কাছেই ওয়াদা কর।
সবার আগে নিজের মনকে কন্ট্রোল কর।
শুভাঃদোয়া করো ভাই।
আমিঃএকটা কথা বলবো তোকে?
শুভাঃহ্যা বলো
আমিঃআমা…
আন্টিঃহ্যা আমি রেডি।
শুভাঃপ্রেমিকের সাথে ঘুরতে যাবে নাকি
যার জন্য এতো সাজগোজ 😳
আন্টিঃভার্সিটি থেকে তাকে সাথে নিয়ে
ডেটিং-এ যাবো তাই।
শুভাঃহু,আমিও বিএফ বানাবো।
আমিঃদেরি হয়ে যাচ্ছে চলো।
সবাই নিয়ে বাসার বাইরে আসার পর
আন্টি বাইরে থেকে বাসা লক করে
রাস্তায় আসলাম।রাস্তায় রিক্সা ছাড়া
তেমন কিছু নেয়।কারণ এটা মেইন
রাস্তা না।সামনের দিকে একটু হাটতেই
একজন মধ্যবয়সী মহিলার সাথে দেখা…
—কিগো শুভার মা,মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের
কাছে যাচ্ছো নাকি?
আন্টিঃ….(কিছু বলল না)
—গেলেও কাজ হবে না,এটা বাবা মায়ের
জন্য হয়েছে।আপনারা সময় দেন নাই,
আর এখন চিকিৎসা করিয়ে কি হবে?
শুভাঃআন্টি আপনি কি আপনার বাসার
খোজ রাখেন?
—আমার বাসার খোজ আমি রাখবো না?
শুভাঃআপনার স্বামী যে তার অফিসের
কলিগের সাথে ঘুরে বেড়াই সেটা জানেন?
আর জানবেন কি করে আপনি নিজেই
অন্যদের কথা নিয়ে থাকেন তাই হয়তো
নিজের বাসার কথা ভাবার সময় পান না।
আগে নিজের বাসায় খোজ নিন যত্তোসব।
শুভার এমন কথা শুনে মহিলাটার মুখ
একদম কালো হয়ে গেছে।নিজের হাসি
ধরে না রাখতে পেরে ফিক করে হেসে
দিলাম।আন্টি শুভাকে ধরে ওখান থেকে
নিয়ে আসলো।
আন্টিঃএসব কথা বলার কি দরকার
ছিলো?উনি তোর থেকে বয়সে বড়।
শুভাঃউনার থেকে তো তুমিও বড়।কই
উনি তো তোমাকে সম্মান দেয়নি।
আন্টিঃসেটা আমি আর সে বুঝবো।
শুভাঃতাহলে আমাকে নিয়ে কেনো বলবে?
আমিঃএকদম রাইট। মানুষের পেছনে না
বরং যেটা বলবি সেটা সামনাসামনি।
আন্টিঃথাক আর সাহস দেখাতে হবে না।
এখন চল এখান থেকে।
আন্টি আমাদের দুজনের হাত ধরে
মেইন রাস্তায় এসে একটা সিএনজি নিলো।
স্যারকে নেয়ার জন্য ভার্সিটিতে এসে
সিএনজি থামানো হলো।আন্টি স্যারকে
কল দিবে তখন আমি গাড়ি থেকে
নামলাম।আমাকে নামা দেখে শুভা বলল,,,
শুভাঃকি হলো ভাইয়া?
আমিঃএকজনের সাথে দেখা করে আসি।
শুভাঃগার্লফ্রেন্ড?
আমিঃসেটার থেকেও বেশি।
শুভাঃঠিক আছে।
দাঁড়িয়ে না থেকে ডিপার্টমেন্টের দিকে
এগিয়ে গেলাম।রহমত স্যার ক্লাস
নিচ্ছেন,আমাকে বাইরে দেখে এগিয়ে
এসে বলল…
—আজ আসোনি?
আমিঃনা স্যার
—তা এখানে কি মনে করে?
আমিঃজান্নাতকে নিতে আসছি।
—কেনো?
আমিঃএকটু দরকার ছিলো।
—ঠিক আছে।
স্যার ক্লাসে গিয়ে জান্নাতকে বাইরে
পাঠিয়ে দেয়ার পর জান্নাতকে সাথে
নিয়ে গাড়ির কাছে আসলাম।
জান্নাতঃকোথায় যাবে?
আমিঃঘুরতে
জান্নাতঃকোথায়?
আমিঃবোটানিক্যাল গার্ডেন।
জান্নাতঃএই অবস্থায়?
আমিঃহ্যা,কেনো?
জান্নাতঃফ্রেশটাও হওয়া যাবে না।
আমিঃতোমাকে এমনিতেই সুন্দর লাগছে।
জান্নাতঃতাই বলে এভাবে?
শুভাঃমল থেকে তোমার জন্য না হয়
কিছু কেনাকাটা করবো।
জান্নাতঃশুভা,তুই এখানে?
শুভাঃআমার জন্যই যাচ্ছি আপু।
জান্নাতঃঅবাক না হয়ে পারছি না।
এতোদিন পর আমার কিউট বোনটাকে
বাইরে দেখছি।
দুজন কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলো।
এদিকে স্যার নিজেও এখানে এসে বেশ
অবাক হয়ে গেছেন।দেখে অনেক হ্যাপী
মনে হলেও কিছু প্রকাশ করছে না।
সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে আমি আর
স্যার সামনে বসে তাদের পেছনে বসতে
বসলাম।আর সবাই জানেন মিনি সিএনজিতে
কিভাবে বসে।সবাই টুকটাক কথাবার্তা
বলতে বলতে গার্ডেনে চলে আসলাম।
ভাড়া দিয়ে সবাই ভিতরে গিয়ে শুভা
একটা বড় শ্বাস নিলো।জান্নাতের সাথে
শুভা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেছে।
স্যার আর আন্টিকে কথা বলার জন্য
ছেড়ে দিয়ে পরে গেলাম আমি একা।
ভেবেছিলাম জান্নাতের সাথে একটু
সময় পার করবো কিন্তু এখানে এসে
উল্টো আমাকে বোরিং করে চলে গেলো।
একটা বেঞ্চে বসে মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়ে
চোখ বন্ধ করে পাখির কিচিরমিচির শব্দ
শুনতে ব্যস্ত হলাম।প্রকৃতির মতো গভীর
সুখ কোথায় আছে জানিনা।
একাকী বসে থাকার পর স্যারের আওয়াজ
পেয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসলাম।
স্যারঃকি করছো এখানে একা?
আমিঃসঙ্গী না থাকলে তো একাকী বসে
থাকতে হয়।
স্যারঃআমি ভেবেছিলাম তুমি ওদের
সাথে আছো।
আমিঃআমার মনে হয় স্যার আপনার
শুভাকে সময় দেয়া উচিৎ। আমরা না
হয় পরে কথা বলবো।কিন্তু এখন শুভাকে
সময় দিয়ে স্বাভাবিক করতে হবে।
স্যারঃকিন্তু তুমি একা একা…
আমিঃআমার সাথে এই প্রকৃতি আছে।
স্যারঃতবুও আমি তোমার সাথে থাকি।
আমিঃস্যার আমাকে বিশ্বাস করলে যেটা
বললাম সেটা করেন।
স্যারঃঠিক আছে।
স্যার চলে যাওয়ার সময় উনার ফোন
আমার কাছে রেখে গেলো।হয়তো
খুঁজে না পেলে কল দিয়ে খুঁজে বের
করার জন্য।স্যার চলে যাওয়ার পর
ফোনটা পকেটে তুলে হাটতে শুরু করলাম।
প্রকৃতিকে অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম।
নতুন কোনো তিক্ততা গ্রাস না করে নেয়
সে জন্যও পদ্মিনীর কথাটাও মনে মনে
উচ্চারণ করছিলাম।অনেকটা সময়
হাটার পর পেছন থেকে পদ্মিনীর কথার
আওয়াজ শুনে দাঁড়ালাম।
পদ্মিনীঃসেই কখন থেকে ডাকছি,ধ্যান
ধারণা কোথায় তোমার?
আমিঃপদ্মিনীর খোঁজে।
পদ্মিনীঃ……(চুপ হয়ে গেলো)
আমিঃকিছু বলার জন্য আসছিলে?
পদ্মিনীঃতোমার জন্য থাকার জন্য আসছি
আমিঃসারাজীবন?
পদ্মিনীঃচুপ,স্যার বললো তুমি একা
আছো তাই তোমার কাছে আসলাম।
আমিঃদয়া দেখানোর জন্য?
পদ্মিনীঃনিলয়..!
আমিঃঠিকিই তো বললাম,স্যার বলার
আগে আসলে না কেনো?যখন সবাই এক
হয়েছো তখন হঠাৎ করে আমার কথা
মনে হলো আর এখন দয়া দেখাতে
চলে আসছো।
পদ্মিনীঃউল্টাপাল্টা কথা বলবে না।
আমিঃতুমি খুব ভালো করেই অনুমান
করতে পেরেছিলে তোমাকে এনেছিলাম
আমাকে সময় দেয়ার জন্য।কিন্তু তুমি
না,তুমি নিজেও উনাদের সাথে সময়
কাটাতে ব্যস্ত।আমি একাকী ভালো আছি।
পদ্মিনীঃকি হয়েছে বলবে একটু?
আমিঃআমার কি হবে?
পদ্মিনীঃতাহলে এসব উল্টাপাল্টা কি
বলছো?শুভাকে দেখে আমি অনেক
এক্সাইটেড তাই ওর সাথে ছিলাম।
আমিঃতো এখন আসছো কেনো?
পদ্মিনীঃবললাম তো, তুমি একা আছো তাই।
আমিঃযদি আমার সাথে স্যার থাকতো
তাহলে আসতে না?
পদ্মিনীঃতবুও আসতাম।
আমিঃকেনো আসতে?
পদ্মিনীঃতোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য।
আমিঃআমাকে ভালোবাসো?
পদ্মিনীঃ…….(চুপ)
পদ্মিনীর এমন চুপ করা দেখে একটু
মন খারাপ হলেও পরে বললাম।
আমিঃযদি আমাকে ভালো না বাসো
তাহলে চলে যাও।প্রমিজ করছি আর
কখনো তোমার সামনেও আসবো না।
আমাকে কোনো উত্তর না দিয়ে বাম
হাতটা শক্ত করে ধরে সামনের দিকে
হাটতে শুরু করলো।কিছু সময় হাটতেই
একটা বেঞ্চে নিজে বসে আমাকে দাঁড়
করিয়ে রাখলো।আমিও কিছু না বলে
দাড়িয়েই রইলাম।
পদ্মিনীঃবসার জন্য বলতে হবে?
আমিঃনা…(পাশে বসলাম)
পদ্মিনীঃতোমার উত্তর আমার কাছে
নেই,তবে আমাকে তোমার করার জন্য
আমার ফ্যামিলিকে রাজি করাতে হবে।
আমিঃযদি তোমার ফ্যামিলি রাজি না হয়?
পদ্মিনীঃকেনো পাড়বে না?
আমিঃপারবো না।
পদ্মিনীঃতাহলে আমাকে কিভাবে করলে?
আমিঃতোমাকে তো রাজি করিনি, তুমি
নিজেই রাজি হয়ে গেছো।
পদ্মিনীঃতুমি খুব ভালো করেই জানো
আমার দূর্বলতা কোথায়।
আমিঃনিজেকে অনেক দূর্বল লাগছে।
এটুকু বলেই পদ্মিনীর কাদে মাথাটা
রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম।জানিনা
পদ্মিনী আমাকে ভালোবাসে নাকি
আমার প্রতি তার একটা ভালো লাগা
কাজ করে।আর আজ ওকে উল্টাপাল্টা
বলার জন্য নিজেরও খারাপ লাগছে।
আমিঃপদ্মিনী আমি দুঃখিত আজেবাজে
কথা বলার জন্য।
পদ্মিনীঃআমার পদ্মিনী নাম পছন্দ না।
আমিঃপদ্মাবতী রাখি?
পদ্মিনীঃএকদম না,তোমার এইসব নামের
জন্য বাসা থেকে অনেক কটুকথা শুনতে
হয়।অন্য কেউ কল দিলেও সবাই ভাবে
তুমি কল দিছো,আর বাসায় আমি একটা
মেয়ে।তাই সবাই আমাকেই কথা শোনা।
আমিঃতো ল্যান্ডলাইন কেটে দিচ্ছে না কেন?
পদ্মিনীঃওটা আমার দাদু রেখে গেছেন
আমিঃওহ
পদ্মিনীঃদাদু সবার থেকে বেশি ভালোবাসতো
তিনি নিজেই শিখিয়েছে পরিবারের সাথে
কিভাবে থাকতে হয়।পরিবারের সব গুরু
জনদের প্রতি ভালোবাসা।
আমিঃতাহলে তোমার বাবা,চাচা এমন কেন?
পদ্মিনীঃজানিনা
আমিঃহয়তো আমার দুএকদিন বাইরে
থাকতে হবে।
পদ্মিনীঃকেনো?
আমিঃকিছু পিছুটান
পদ্মিনীঃআমাকে বলা যাবে না?
আমিঃআমার চাচ্চু আসবে দেশে,উনাকে
একটু সময় দিতে হবে।
পদ্মিনীঃকিন্তু ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যাবে।
সেখানে যাবে না?
আমিঃহয়তো যাওয়া হবে না।তবে একটা
কাজ করতে পারো।
পদ্মিনীঃকি?
আমিঃওখানে শুভাকে সাথে নিয়ে যাবে।
পদ্মিনীঃআমিও যাবো না।
কথাটা শুনে পদ্মিনীর কাদ থেকে মাথা
তুলে ওর দিকে তাকাতেই বলল,,,,
পদ্মিনীঃকি হলো?
আমিঃযাবে না কেনো?
পদ্মিনীঃইচ্ছা নেই
আমিঃকিন্তু যেতে হবে
পদ্মিনীঃতাহলে তুমিও চলো।
আমিঃআমার তো সমস্যা।
পদ্মিনীঃআমি যাওয়ার আগ মুহূর্ত অবধি
তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
আমিঃগেলে কি পাবো?
পদ্মিনীঃকি লাগবে?
আমিঃবিশ্বাস করতে হবে।
পদ্মিনীঃসেটা এখনো আছে
আমিঃএর চাইতেও গভীর বিশ্বাস তবে
অন্ধবিশ্বাস না।
পদ্মিনীঃঠিক আছে।চলো হাটি এখন।
আমিঃকোলে নাও
পদ্মিনীঃহু,আমি তোমাকে তুলতেই পারবোনা।
আমিঃকি খাও,যে শক্তি নাই।
পদ্মিনীঃহিহিহি,চলো।
ওর হাসিটায় আলাদা একটা মায়া আছে।
একদকম ব্যাকুলিত করে তোলে সব কিছু।
পদ্মিনী নিজের ইচ্ছামতো কথা বলছিলো
আর চুপ করে ওর কথাগুলো শুনছিলাম।
হঠাৎ পদ্মিনীর ফোন কল আসলে রিসিভ
করে কথা বলতে লাগলো।
পদ্মিনীঃখালাম্মা,কেমন আছো?
—…………….
বুঝতে পারলাম খালাম্মা কল
দিয়েছেন। আমি এখনো উনাদের
মন বুঝতে পারিনি।আসলে উনারা
কি করাতে চায়।এতোই যদি ভালোবাসে
তাহলে ওর বাসায় গিয়ে কথা বলে না
কেনো।আর পদ্মিনীর বাসায় তো কেউ
পদ্মিনীকে ভালোবাসে না।তাহলে তারা
সহজেই মেনে নিতো।কিন্তু তারা বাসায়
না গিয়ে আমাকে দিয়ে তাদের কাজ
করাচ্ছে।
পদ্মিনীঃতোমার সাথে কথা বলবে।
আমিঃহ্যালো(আমি নিয়ে)
আন্টিঃওকে নিয়ে যাওয়ার সময় একটা
বার আমাকে বলা যেতো না?
আমিঃতোমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে উনাদের
থেকে পারমিশন নিতে হয়?
পদ্মিনীঃনা,কেনো?
আমিঃখালাম্মা,জান্নাত তো বললো ওকে
নিয়ে ঘুরার জন্য কারো থেকে পারমিশন
নেয়ার দরকার হয় না।
আন্টিঃআমি পারমিশনের কথা বলিনি,
আমাকে একটু বলতে পারতে।তাহলে
আমিও যেতাম তোমাদের সাথে।
আমিঃআমাদের সাথে একটা ফ্যামিলি
আছে।তাই অন্য কাউকে বলিনি।
আন্টিঃসাবধানে এসো
আমিঃজ্বি
কথা না বাড়িয়ে কল কেটে দিয়ে
জান্নাতের কাছে ফোন দিয়ে দুজন
কথা বলার পাশাপাশি হাটতে লাগলাম।
অনেকটা হাটাহাটি করার পর জান্নাত
কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলো।কিন্তু
কেনো জানি বার বার আমার দিকে ফিরে
চুপ করে যাচ্ছে।বেশ ভালোই লাগছে এমন
দেখতে।প্রতিবার লজ্জা পেয়ে ঠোঁটে কামড়
দিয়ে মাথা নিচু করে নিচ্ছে।
আমিঃকিছু বলার থাকলে বলো
জান্নাতঃএখন না।
আমিঃতাহলে পাগলিদের মতো করছো কেন?
জান্নাতঃকারণ আমি পাগলি তাই
আমিঃঢঙ্গী
জান্নাতঃহু
স্যারঃরবীন্দ্রনাথ…!
স্যারের ডাক শুনে দুজন পেছনে ফিরে
দেখলাম উনারা দাঁড়িয়ে আছে।দাঁড়িয়ে
না থেকে উনাদের কাছে যেতেই স্যার
ঝাপটে জড়িয়ে নিলো।শুভা সাথে থাকার
জন্য হয়তো কিছু বললো না।তবে এটাতে
অনেক সুখ পাচ্ছিলাম।অনেকটা সময়
পর স্যার ছেড়ে দেয়ার পর স্বাভাবিক হয়ে
সবাই মিলে ঘাসের উপর গোল হয়ে বসলাম।
আমিঃএগুলো কোথায় পেলেন?(খাবার)
শুভাঃআম্মার আর আমি বাইরে থেকে
নিয়ে আসছি।
আমিঃওহ,স্যার যায়নি তোদের সাথে?
শুভাঃবলছিলাম বাট যায়নি
আমিঃকেনো?
স্যারঃআমি নিজেই ওদের পাঠিয়েছিলাম।
আমিঃতাহলে সমস্যা নেই।
খাবার বলতে সবার জন্য বার্গার এনেছে।
শুভা সবাইকে দেয়ার পর নিজের জন্য
একটা রেখে দিলো।কেমন একটা সন্দেহ
হচ্ছিলো,যদিও দেখে সব ঠিকই মনে হচ্ছিলো
তবে মন মানছিলো না।জান্নাতের বার্গার
শুভাকে দিয়ে শুভারটা আমি নিলাম আর
আমারটা জান্নাতকে দিলাম।আমার এমন
আচরণ শুভা একটু আচ করতে পারলেও
অন্যরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো…
—কি হলো?
এটার উত্তর আমার কাছে জানা নেই।হয়তো
মনের কথাটা বললে শুভার মন খারাপ
হয়ে যাবে।তাই চুপ করে রইলাম।
শুভাঃআমাকে বিশ্বাস করতে পারো ভাইয়া।
আমিঃহুম,আর আমি একটা কাজের জন্য
কিছুদিন বাইরে থাকবো।তুই নতুন করে
পড়াশোনায় মনোযোগ দে।আর সময় দেয়ার
জন্য জান্নাত,স্যার,আন্টি তো আছেই।
স্যারঃকোথায় যাবে?
আমিঃএকটা ফ্রেন্ডের বিয়ে
জান্নাতঃকোন ফ্রেন্ড?
আমিঃতখন তো তোমাকে বললাম
জান্নাতঃওহ
স্যারঃঠিক আছে সমস্যা নেই।
খাবার শেষ করে সবাই আরো কিছু
সময় আড্ডা দেয়ার পর উঠলাম।
চলবে…………