পদ্মিনী,পর্বঃ৮,৯

পদ্মিনী,পর্বঃ৮,৯
আবির হাসান নিলয়
পর্বঃ৮

একাকী বসে আছি তখন দেখলাম বন্ধুরা
আসছে।আমাকে দেখে সোজা আমার পাশে
এসে বসলো।
জয়ঃকাল আসলি না কেনো?
আমিঃবাসায় গেছিলাম।
জয়ঃমজা নিস?
আমিঃসত্যি
রাফিঃতোর বাসা থেকে সবাই জানে?
আমিঃহ্যা,এটার জন্য উৎসাহ দেয়😇
রাফিঃওহ
আমিঃআমার মনে হয় তোদের মাঝে আর
বেশি দিন থাকা হবে না।
জয়ঃকেনো?
আমিঃজান্নাতকে নিয়ে যাবো
রাফিঃরাজি হয়েছে?
আমিঃনা
রাফিঃতাহলে?
আমিঃকিডন্যাপ করবো।😎
জয়ঃপাগল সালা
আমিঃকিন্তু করতে হবে
রাফিঃমজা নেয়া বাদ দে
আমিঃমজা না,আমার পুরো নাম
আবির হাসান নিলয়।তোদের হয়তো অনেক
মিথ্যা বলছি তবে আর বলতে চাই না।মাঝে
মাঝে ভার্সিটিতে কালো ড্রেস পড়া মানুষজন
আসে তারা আমার গার্ড।
জয়ঃকিন্তু তুই এমন ভাবে পড়ে আছিস কেন?
আমিঃজান্নাত সাধারণ জীবন পছন্দ করে তাই।
জয়ঃওহ
রাফিঃস্যার তোকে কাল খুঁজলেন
আমিঃকেনো?
রাফিঃসেটা জানিনা।
আমিঃওহ

দুজনের সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলাম।
আর লুকিয়ে লাভ হবে না।অনেক তো হলো
দুটো বন্ধুর কাছে নিজেক্র গোপন রেখে।
তবে ওরা দুজন সত্যিকারের বন্ধু।একটা
অসহায় ছেলেকে কতোটা ঘনিষ্ঠ করে নিয়েছে।
অনেকটা সময় কথা বলার পর জান্নাত
নিজেও চলে আসলো।আজকেও শাড়ি
পড়েছে। তবে মনটা উদাসীন,বসে না থেকে
জান্নাতের কাছে গিয়ে বসলাম।
আমিঃহাই
সুমুঃহাই
আমিঃআজ কি মনের প্রশান্তি হারিয়ে গেছে?
জান্নাতঃমনের প্রশান্তি কখনো হারিয়ে যায়
না।সেটা কিছু সময়ের জন্য খারাপ হয়।
আমিঃসেটা ঠিক,কিন্তু সেই খারাপের কারণ
যদি মনের প্রশান্তির উপর পরে সেটা তখন
হারিয়েই যেতে চায়।
জান্নাতঃহয়তো
আমিঃআজ এতো উদাসীনতা দেখাচ্ছে কেনো?
জান্নাতঃঅন্যদিন কি আমাকে অন্যরকম দেখায়?
আমিঃঅন্যদিন তুমি তোমার মনের মতো
করে সাজলেও তোমার ঠোঁটের কোণে এক
চিলতে হাসি ফুটে থাকে।কিন্তু আজ প্রিয়
শাড়ি পরেও হাসিটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
জান্নাতঃতোরা একটু আমাদের একা ছেরে দে
রাত্রিঃঠিক আছে

দুজন বসে না থেকে উঠে গেলো।
আমিঃমন খারাপ?
জান্নাতঃতোমার কাছে কোনো ঔষধ আছে
যেটা করলে বাসার সবাই আমার সাথে
ভালো করে কথা বলবে?আর নিতে পারছি
না এসব।প্রতিদিন সবাই উল্টাপাল্টা কথা
শোনাবে,আমাকে বিয়ের জন্য জোর করবে,
এসব থেকে চলে যেতে চাই(মাথা নিচু করে)
আমিঃআজ আমার সাথে ভার্সিটি শেষ
করে হাটতে বের হবে?
জান্নাতঃবাসা থেকে মানবে না।
আমিঃজানি তুমি আমাকে বিশ্বাস পাও না
কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার বাসার সবাইকে
আমি বোঝাবো।
জান্নাতঃকিন্তু…
আমিঃতোমার প্রিয় স্যারের সাথেও যাবো
জান্নাতঃহাবিব স্যার আমাদের সাথে যাবে?
আমিঃতুমি চাইলে নিয়ে যাবো
জান্নাতঃঠিক আছে,কিন্তু স্যার তো তোমাকে
রবীন্দ্রনাথ বলে।সেটার.?
আমিঃস্যার আমার আসল নাম জানতে
চায়না।হয়তো রবীন্দ্রনাথেই উনার ভালো লাগে।
জান্নাতঃআমারো ভালো লাগে,,,হিহিহি
আমিঃআমি চাই তোমার মুখে এরকম
হাসি থাকুক সারাজীবন।
জান্নাতঃরাখতে পারি না হাসিটাকে।
আমিঃকখনো চেষ্টা করেছো?
জান্নাতঃসাপোর্ট করার মানুষ নেই।
আমিঃতোমার পাশে থাকবো সব সময়।
জান্নাতঃকিন্তু বাসায় তো থাকতে পাড়বে না।
আমিঃতুমি চাইলে তোমার বাসাতেও যাবো।
জান্নাতঃনা বাবা,সেটার দরকার নেই।
আমিঃচলো কিছু খাই
জান্নাতঃআমি তো খেয়ে আসছি
আমিঃআমি খাইনি
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃভেবেছিলাম তোমার সাথে খাবো।
ঠিক আছে এখন চলো ক্লাসে যায়।
জান্নাতঃফুসকা খাও?
আমিঃখুব একটা না।
জান্নাতঃচলো ফুসকা খাবো
আমিঃঠিক আছে।

বসে না থেকে উঠে জান্নাতের হাত ধরে
জান্নাতকে উঠিয়ে ভার্সিটির বাইরে এক
ফুসকা মামার দোকানে গেলাম।
—জান্নাত মামা যে
আমিঃতুমি উনাকে চেনো?
জান্নাতঃচিনবো না কেনো?
আমিঃতোমাকে তো সবাই চেনে দেখছি।
জান্নাতঃজ্বি,মামা দু- প্লেট ফুসকা দাও।
আমিঃআমাকে একটু ঝাল কমিয়ে।
জান্নাতঃনা মামা,আমার মতো করেই
বানিয়ে দাও।
—ছেলেটা এতো ঝাল খেতে পাড়বে?
জান্নাতঃসেটা না হয় দেখাই যাবে।
খেতে পাড়বে না?
আমিঃতোমার জন্য সবটাই করতে রাজি।

দুজনের কথা মাঝে ফুসকার প্লেট দিলো।
জান্নাত আমাকে ইশারা করে নিজে খেতে
শুরু করলো।আমিও একটা মুখে নিতেই
কান দিয়ে ধোয়া বের হতে শুরু করলো।
এই মেয়ে এতো ঝাল কিভাবে খায়।
জান্নাত আমাকে দেখে মুচকি মুচকি
হাসলেও আমার চোখ দিয়ে জল বের
হওয়া ছাড়া কিচ্ছু হবে না।
জান্নাতঃকেমন হয়েছে?
আমিঃ…(মাথা নেড়ে ভালো বললাম)
আমার ৩টা খাওয়ার মাঝেই দেখলাম
জান্নাতের সব শেষ। প্লেটটা জান্নাতের
দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,,
আমিঃএগুলো নাও
জান্নাতঃআমি আর পাড়বো না।পেট
একদম ভরে গেছে।
আমিঃপ্লিজ
আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে
প্লেটটা নিজের কাছে নিলো।
আমিঃমামা জল হবে?
—হ্যা,এটাই আছে
দেরি না করে গ্লাসে করে জল ভরে
খেতে শুরু করলাম।চোখ এখনো
লাল হয়ে আছে।এই মেয়ের সাথে জীবনেও
ফুসকা খাওয়া যাবে না।পানি খাওয়া শেষ
করে জান্নাতের দিকে ঘুরে দেখলাম হাসছে।
আমিঃএতো হাসতে হবে না।
জান্নাতঃঠিক আছে চলো এখন।
আমিঃদাড়াও টাকা দেয়।
জান্নাতঃআমি দিয়ে দেবো।
আমিঃআমার সাথে আসছো,তাই এটা
আমি নিজেই দেবো।

মামাকে টাকা দিয়ে দুজন ভার্সিটিতে
এসে সোজা ক্লাসে গেলাম।কারণ স্যার
ক্লাসে অলরেডি চলে গেছেন।বাইরে
দাঁড়িয়ে বললাম,,,
আমিঃস্যার আসবো..?
স্যারঃহ্যা আসো,কাল আসলে না যে?
আমিঃএকটু কাজ ছিলো স্যার।
স্যারঃআজ ভার্সিটি শেষ করে আমার
সাথে বাসায় যাবে।
আমিঃস্যার জান্নাত আমাদের সাথে
গেলে কি কোনো সমস্যা হবে?
স্যারঃনা,তবে কোথাও যাবে নাকি দুজন?
আমিঃদুজন ঘুরতে যাবো তেপান্তরের মাঠে।
জান্নাতঃনা স্যার,এমনি দুজন হাটতে বের হবো।
স্যারঃসমসা নেই,এখন দুজন বসো
জান্নাতঃজ্বি স্যার।

ক্লাসে আর কোনো কথা বললাম না।জান্নাত
ক্লাসে বলতে গেলে শুধুমাত্র টিচারদের সাথে
কথা বলে সেটাও শুধুমাত্র পড়া বিষয়ক। তাই
আমিও অন্য সবার সাথে কথা না বলে ক্লাসে
মনোযোগ দিলাম।হাবিবুল্লাহ স্যারের ক্লাস শেষ
হতেই জয় বলল,,
জয়ঃদুজন কই গেছিলি?
আমিঃফুসকা খাইতে
রাফিঃঢপ মারিস?
আমিঃহোপ
রাফিঃসত্যি জান্নাত গেছিলো?
আমিঃহ্যা
জয়ঃকি কথা বললি দুজন?
আমিঃতেমন কিছু না,ভার্সিটি শেষ করে
ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছিলাম।
রাফিঃরাজি হয়েছে?
আমিঃহ্যা তবে একটা কন্ডিশন দিয়ে
জয়ঃসেটা কি?
আমিঃতোদের কাউকে নেয়া যাবে না,আর
তাছাড়া তোদের এমনিতেও আমি নিতাম না।😁
রাফিঃসালা

সবগুলো ক্লাস শেষ করে জান্নাতের কাছে
যেতেই একটা হাসি দিয়ে বলল,,,
জান্নাতঃচলো
দুজন হাটতে হাটতে বাইরে এসে স্যারের
জন্য অপেক্ষা করছিলাম ইতিমধ্যে স্যার
আসলেন।
আমিঃবিনা দাওয়াতে আপনার বাসায়
দাওয়াত খেতে যাচ্ছি।
স্যারঃগত সপ্তাহেই তো দাওয়াত পেয়েছো
আমিঃকিন্তু আমার সাথে যে আছে সে
ফ্রিতে যাচ্ছে।
জান্নাতঃউল্টাপাল্টা কথা বললে কিন্তু যাবো না।
আমিঃআরে মজা করছি।
স্যারঃযাওয়া যাক?
আমিঃজ্বি স্যার।

দাঁড়িয়ে না থেকে স্যারের সাথে উনার বাসায়
গেলাম।অন্যান্য বাসার থেকে এই বাসাকে
কেমন একটা নিরিবিলি লাগছিলো।কাউকে
কোথাও পেলাম না।স্যার নিজেও কলিংবেল
না বাজিয়ে উনার কাছে থাক চাবি দিয়ে
দরজা খুলে বাসার ভিতরে গেলেন।স্যারের
সাথে সাথে জান্নাত নিজেও গেলেন।
এদিক সেদিক চোখ ফিরিয়ে তাদের পিছু
পিছু বাসার ভিতরে গেলাম।
স্যারঃতোমরা এখানে বসো আমি আসছি
জান্নাতঃঠিক আছে স্যার।

স্যার একটা রুমের ভিতর যেতেই জান্নাত
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
জান্নাতঃতুমি আগে কখনো স্যারের সাথে
এই বাসায় আসছো?
আমিঃআমি কিভাবে আসবো
জান্নাতঃবাসা অনেক ফাকা লাগছে,ম্যাম
শুভা কাউকেই দেখছি না।
আমিঃশুভা কে?
জান্নাতঃস্যারের মেয়ে।
আমিঃওহ
—হেল্প,প্লিজ আমাকে বাঁচাও(চিৎকার করে)

আচমকা এমন চিৎকার শুনে দৌড়ে
ভিতরে গেলাম।স্যারের বাসায় একটা
মেয়ের হেল্প চাওয়া শুনে কেমন একটা
ঘাবড়ে গেলাম।যে রুম থেকে আওয়াজ
এসেছে সেটার কাছে যেতেই দেখলাম
লক করা।
আমিঃকে?
—প্লিজ আমাকে বাঁচাও,এরা আমাকে
মেরে ফেলবে।
জান্নাতঃতুমি কে?
—প্লিজ দরজা খুলো,আমি সব বলবো।
ধরজা ধাক্কাধাক্কি করার পরেও কোনোভাবেই
দরজা খুলতে পারছিলাম না।ইতিমধ্যে
স্যার এসে দাঁড়ালো।
জান্নাতঃস্যার এসব কি?
স্যারঃতোমরা বসো আমি সব বলছি
জান্নাতঃএকদমই না,আপনি এই মুহূর্তে
লক খুলুন।
স্যারঃজান্নাত শান্ত হও
জান্নাতঃআপনি প্লিজ লক খুলুন,আপনাকে
অনেক শ্রদ্ধা করতাম।কিন্তু আপনি একটা
মেয়েকে এভাবে রুমের মধ্যে লক করে
রেখেছেন।যেটা ভাবতেও আমার কষ্ট হচ্ছে।
আমিঃজান্নাত তুমি আমার সাথে আসো
জান্নাতঃনা,আমি কোথাও যাবো না।
আমিঃপ্লিজ

অনেক কষ্টে জান্নাতকে ধরে সোফার
উপরে বসিয়ে বাহুডোরে ধরে রাখলাম।
স্যারঃপানি খেয়ে নাও
আমিঃধন্যবাদ স্যার,কিছু মনে না করলে
একটা কথা জিজ্ঞাস করি?
স্যারঃঐ রুমের বিষয়ে?
জান্নাতঃহ্যা
আমিঃনা স্যার,আমি বলতে চাইছি ম্যাম
এবং শুভা কোথায়?
জান্নাতঃঐ রুমে একটা মেয়ে বন্ধী আছে।
তুমি সেটা জিজ্ঞাস না করে এসব জিজ্ঞাস
করছো কিভাবে?
আমিঃতুমি প্লিজ একটু শান্ত হও,আমি
স্যারকে খুব ভালো করেই জানি।
জান্নাতঃনিলয়…!
আমিঃপ্লিজ
জান্নাতঃহুম
আমিঃস্যার আপনি বলুন
স্যারঃতোমাদের ম্যাডাম রুমে আছেন।
সে তোমাদের দেখে লজ্জা পাবে বলে
রুম থেকে বের হচ্ছে না।
আমিঃমানে?
স্যারঃযে মেয়ে চিৎকার করে হেল্প চাইছে
সেটা আমার মেয়ে শুভা।
জান্নাতঃহোয়াট?
স্যারঃহ্যা,জানিনা মেয়েটার কি থেকে
কি হয়েছে।ও এখন নেশা ছাড়া কিছুই
বোঝে না।তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ করে রেখেছি।
জান্নাতঃস্যার আমি ওর সাথে কথা বলবো।
স্যারঃতবে প্লিজ রুম থেকে বের করো না।
(রুমের চাবি দিয়ে)
আমিঃসাবধানে
জান্নাতঃওকে

জান্নাত আমাদের থেকে যেতেই স্যার
মাথা নিচু করে বলতে শুরু করলেন….
স্যারঃহয়তো তুমি আমাকে বদরাগী বাবা
ছাড়া কিছুই ভাববে না।কিন্তু আমারই কি
করার আছে…!একটা মাত্র মেয়ে।সেই নিজেও
ড্রাগ নেয়,সমাজে সম্মান যেটা ছিলো সেটা
তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলছি।দিন
দিন এখন অপমানিত হতে হচ্ছে।জানিনা
নিজেকে এবং আমার স্ত্রী-র উপর আর
কি হবে কিন্তু মেয়েকে তো মেরেও ফেলতে
পাড়ছি না।শুধুমাত্র আফসোস আর
চোখেরজল ফেলা ছাড়া আমার বা আমার
স্ত্রী-র কিছুই করার নেই।
আমিঃস্যার,ম্যামের সাথে কি দেখা করা যাবে?
স্যারঃহ্যা
আমিঃআপনিও চলুন

স্যার কিছু না বলে উঠে আমার সাথে
রুমে গেলো।আমাকে দেখে কেমন একটা
নার্ভাস দেখাচ্ছিলো।স্যারকে ম্যাডামের
পাশে বসিয়ে তাদের দুজনের সামনে
হাটু গেড়ে বসলাম।
আমিঃজানিনা মা আপনি কেনো আমাকে
দেখে লজ্জা পাচ্ছেন। কিন্তু মা ছেলের
কাছে লজ্জা বা ভিতি পেতে হয়না।
হয়তো শুভা কোনো সমস্যার জন্য এমন
পথ বেছে নিয়েছে।কিন্তু আমি চেষ্টা করবো
এসবের থেকে বাইরে আনতে।
স্যারঃপারবে না রবীন্দ্রনাথ
আমিঃমা একবার দোয়া করলেই পাড়বো।
করবে না মা দোয়া?

কিছু না বলে উঠে জড়িয়ে ধরে কান্না
করে দিলো।কিছু সময় পর স্বাভাবিক
হয়ে শুভার রুমে নিয়ে গেলো।জান্নাতকে
অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে শুভা।
চুলগুলো এলোমেলো,চোখের নিচে কালো
দাগ,হাতের অনেক জায়গাই কাটা দাগ।
ম্যাডামঃশুভা উঠে বস
শুভাঃকেনো শুনবো তোমাদের কথা হু?
আমিঃকারণ তারা তোমার মা বাবা।
শুভাঃযে বাবা মা মেয়ের সুখ দেখতে পারে না।
আমিঃকেমন সুখ পেতে চাও..!যেটা দিলে
মেয়ে নিজেই মৃত্যুর দিকে চলে যাবে।
চুপচাপ খাটের উপর বস।
শুভাঃবসবো না
আমিঃজান্নাত তুমি ওর থেকে সরো
জান্নাতঃও ভয় পাচ্ছে।
আমিঃতুমি উঠো,আর শুভা বোন উপরে বস প্লিজ
শুভাঃবসবো না বলছি না,বাট যদি আমাকে
এক প্যাক ড্রা…
আমিঃচুপচাপ ওখানে বস
শুভাঃতুই আমাকে ধমক দেয়ার কে 😤
আমিঃআমি কেউ না,কিন্তু তোর মধ্যে যদি
সামান্যতম ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে
এই দুজনের জন্য ওখানে বসে আমার কথা
শোন,তারপর তোর ইচ্ছা।
শুভাঃওক্কে,বসছি এখন হয়ছে?
আমিঃহুম

শুভাকে বসিয়ে দেয়ার পর স্যার ম্যাম
এবং জান্নাতের দিকে একবার তাকিয়ে বললাম,,,
আমিঃযদি আমার সব কথার সঠিক উত্তর
দিস তাহলে এক প্যাক আমি এনে দেবো।
শুভাঃপ্রমিজ?
আমিঃপ্রমিজ,এখন বল।প্রথম কি খাওয়া
শুরু করছিলি আর কার সাথে?
শুভাঃশিহাবের সাথে প্রথমে টুকটাক সিগারেট
খাইতাম।কিন্তু দিন যাওয়ার পর পর বাসায়
লুকিয়ে খাইতে শুরু করতাম।তার ৫/৬ মাস
যাওয়ার পর ইয়াসমিন পাউডার নেয়ার কথা
বলল।আমিও এক্সাইটেড হয়ে ওর সাথে সেসব
শুরু করলাম।শিহাব বারণ করছিলো।কিন্তু
একটা নেশ আর আমার প্যাশন হয়ে গেছিলো।
আমিঃকখনো উনাদের কথা মনে পড়েনি?
শুভাঃউনারাও খায় নাকি?যে উনাদের বলবো?
আমিঃতুই উনাদের একটামাত্র মেয়ে,তোর
ভালোর জন্য সব করেছে।কিন্তু তুই একটু
ভেবে দেখ।তুই উনাদের জন্য কি করছিস।
শুভাঃ……(চুপ)
আমিঃইয়াসমিন আর শিহাব কে?
শুভাঃকেনো?
আমিঃএমনি,বল
শুভাঃআমার ক্লাসমেট
আমিঃঠিক আছে,আমি কাল তোকে নিতে
আসবো বিকেলে।রেডি হয়ে থাকিস।
শুভাঃকিন্তু আমার এক প্যাকেট?
আমিঃকাল। আর খাবার ঠিকভাবে খাবি
শুভাঃঠিক আছে
আমিঃবাই
শুভাঃমনে করে এনো ভাই

কোনো উত্তর না দিয়ে স্যার ম্যাডামের সাথে
বাইরে আসলাম।ম্যাডাম কান্না করছেন।
আমিঃমা আপনি কান্না কইরেন না।আর
দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
ম্যাডামঃওর জন্য আমি স্কুলের জবটাও
ছেড়ে দিছি তবুও ভালো হচ্ছে না।
আমিঃআপনি আবারো জবে ফিরবেন,
স্যার এখন আমরা আসি।
স্যারঃকিছু খেয়ে যাও
আমিঃকাল তো আসবোই আবার।তখন
না হয়ে খেয়ে নেবো।আর সাথে পেটুক
আছে।সে একাই আমার সব খেয়ে ফেলবে।
স্যারঃহাহা,সাবধানে যেও জান্নাত।
জান্নাতঃস্যার আমাকে ক্ষমা করবেন।
স্যারঃসমস্যা নেই।
জান্নাতঃআসছি স্যার।

আর না থেকে জান্নাতকে নিয়ে বাইরে আসলাম।
জান্নাতঃতুমি আমারে পেটুক বললে কেন?
আমিঃপেটুককে পেটুক না বলে কি বলবো😒

চলবে………….

পদ্মিনী
পর্বঃ৯
#আবির হাসান নিলয়

জান্নাতঃতুমি আমারে পেটুক বললে কেন?
আমিঃপেটুককে পেটুক না বলে কি বলবো?
জান্নাতঃনিলয়😞
আমিঃআরে মজা করছিলাম,দুজন বাইরে
খাবো তাই স্যারকে এমন বলছি।
জান্নাতঃবাইরে মানে?
আমিঃদুজন ঘুরবো ভুলে গেছো?
জান্নাতঃনা,কিন্তু এমন ঘটনা হওয়ার পর
দুজন ঘুরতে যাবো?
আমিঃহ্যা,কেনো?
জান্নাতঃনা কিছুনা
আমিঃএখন চলো হাটি
জান্নাতঃযাবো কোথায়?
আমিঃলেকের পাড় যাওয়া যাক?
জান্নাতঃলেকের পাড় হেটে যাবো এখন?
আমিঃহ্যা
জান্নাতঃএতো পথ হাটতে পারবো না।
দুজন গাড়ি করে যাবো।
আমিঃসেটা তোমার ইচ্ছা।তবে ভাড়া কিন্তু
দুজন সমান সমান।
জান্নাতঃআমারটা আমিই দেবো
আমিঃতাহলে সমস্যা নেই।
জান্নাতঃরিক্সা যাচ্ছে উনাকে বলো।
আমিঃএই মামা যাবেন?
—কই যাবেন?
আমিঃলেকের পাড়
—আপনারা কি প্রেমিক প্রেমিকা?
জান্নাতঃকি বলেন মামা এসব?
আমিঃমামা আমরা দুজন বন্ধু,দুজন
স্যারের বাসায় আসছিলাম।আপনার
যদি সমস্যা হয় তাহলে আমরা অন্য কোনো
রিক্সা নিয়ে যেতে পাড়বো।
—মামা আমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু
আজ যা হয়েছে তার জন্য মন খারাপ।
আমিঃতাহলে যাবেন কি?
—হো ওঠেন।

দাঁড়িয়ে না থেকে রিক্সায় উঠতে যাবো
তখনি দেখলাম কিছু ফুল পরে আছে।
সিট থেকে ফুলগুলো হাতে নিয়ে জান্নাতকে
রিক্সায় তুলতেই মামা রিক্সা চালাতে শুরু
করলো।কিন্তু এই ফুল দেখে কেমন একটা
হাসি পাচ্ছিলো।মামা উনার স্ত্রীর জন্য
ফুলগুলো নিয়ে যাচ্ছে নাকি…
আমি কিছু জিজ্ঞাস করবো তার আগেই
জান্নাত বলল…
জান্নাতঃফুলগুলো মামির জন্য নিয়ে
যাবেন নাকি বাসায়?
—না মামা,এই ফুলগুলো আমার না।
জান্নাতঃতাহলে কোথায় পেলেন?
—দুটো ছেলে মেয়ে রেখে গেছে।
জান্নাতঃতারা তোমার গাড়িতে কেনো রাখবে?
—কারণ আজকেই তাদের শেষ দেখা ছিলো।
জান্নাতঃকি বলেন এসব।
আমিঃজান্নাত এসব তাদের ব্যাপার।
এসব নিয়ে আমাদের কথা না বলাই ভালো।
—হাচা কইছেন মামা
জান্নাতঃকিন্তু আমি জানতে চায়।
আমিঃতুমি জেনে কি করবে?
জান্নাতঃএকটা শিক্ষা নেয়া যাবে।
আমিঃতুমি এমনিতেই শিক্ষিত ম্যাডাম।
জান্নাতঃচুপ,মামা আপনি বলেন।

রিক্সাওয়ালা মামা একটু চুপ হয়ে বলতে
শুরু করলো।
—সকাল ১১টার দিক একটা পোলা এসে
কিছু সময়ের জন্য আমাকে ভারা নিয়ে
রিক্সায় উঠলো।রিক্সা চালানোর পর
একটা কলেজে যেতে বলল।আমিও
তার কথামতো কলেজে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কিছু সময় পর একটা মেয়ে আসতেই
রিক্সায় উঠে বসলো।তারপর ছেলেটা
চিতুলিয়ার রাস্তায় যেতে বলল।
জান্নাতঃসবুজ চিতুলিয়াতে?
—হো
জান্নাতঃতারপর?
—মেয়েটা অনেকবার বলছিলো কি
হয়েছে।কিন্তু ছেলেটা বেশি কথা
বলছিলো না।যখন চিতুলিয়াতে
গেলাম তখন ছেলেটার কথা শুনে
বেশ অবাক হলাম।ছেলেটা সরাসরি
মেয়ের মুখের উপর বলল,তাকে নিয়ে
সে খুশি নেয়।মেয়েটা তখন কথা বলতে
পারছিলো না।থতমত হয়ে কিছু বলার
চেষ্টা করছিলো।কিন্তু তখন ছেলেটা বলে,
ছেলেঃতোমাকে আমার পরিবার মানবে না,
আর তুমি আমার যোগ্য না।তাই আমার
মনে হয় আমাদের সব শেষ করাই ভালো।
মেয়েঃতুমি মজা করছো তাই না ফারাবি?
ছেলেঃআমি মোটেও মজা করছি না।
অনেকদিন ধরেই ভাবছি তোমাকে এসব
বলবো।কিন্তু বলে উঠতে পারছিলাম না।
মেয়েঃআমার সাথে রিলেশন করার সময়
তোমার এই ফ্যামিলি,যোগ্যতা কোথায় ছিলো?
ছেলেঃ…..
মেয়েঃকি হলো কথা বলছো না কেনো?
ছেলেঃজানো তোমাকে আমার কেমন লাগে?
একটা অসহ্য মেয়ে,যাকে সহ্য করা যায় না।
সব সময় আমাকে প্যাড়া দাও।
মেয়েঃআমি ভাবতেও পাড়ছি না তুমি
এমন হয়ে যাবে।
ছেলেঃআমি আগে থেকেই এমন

তারা দুজন অনেক সময় কথা বলছিলো।
মেয়েটা অনেক কান্না করছিলো কিন্তু
ছেলেটার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না।
আমাকে রিক্সা ঘুরাতে বলে ছেলেটা আরো
অনেক কথা শোনাচ্ছিলো।মেয়েটা কান্না
করার জন্য ঠিকভাবে কথাও বলতে
পারছিলো না।কিন্তু বার বার বলছিলো,
আমাকে ছেড়ে যেওনা।কিন্তু ছেলেটার
মন অনেক কঠিন। রিক্সা থেকে নামার
আগ মুহূর্ত অবধি মেয়েটা ছেলেটার
হাত ধরে কান্না করছিলো।কিন্তু ছেলেটা
অনেক উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে রিক্সা
থেকে নামিয়ে দিলো।রিক্সা থেকে নামতেই
আমাকে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসতে
বলে।
জান্নাতঃছেলেরা এমনই হয়।
আমিঃতোমাকে বলছে😒
জান্নাতঃমামার থেকে শুনলে না।কতো
ভালোবাসতাও মেয়েটা,কিন্তু বিনিময়ে
সে কি পেলো?
আমিঃতাই বলে সব ছেলে এক না
জান্নাতঃকিন্তু যাকে বিশ্বাস করবো সে
নিজেই যদি এমন হয়?
আমিঃ……
জান্নাতঃএখন উত্তর দাও

আমাকে চুপ থাকতে দেখে জান্নাত বলল,,,
জান্নাতঃমামা আপনি এটা নিয়ে ভাবছেন?
—না
জান্নাতঃতাহলে?
—ছেলেটার এমন ব্যবহার দেখে তাকে
কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে বলল,,,,
ছেলেঃমামা এই পৃথিবী এতো নিষ্ঠুর কেনো?
—আপনার থেকে নিষ্ঠুর না।
ছেলেঃহাহা,যদি বলি আমার থেকেও..!
—মেয়েটা আপনাকে কতো ভালোবাসে
কিন্তু আপনি তাকে ছেড়ে দিলেন।কতো
কাকুতিমিনতি করছিলো আপনার কাছে
শুধুমাত্র ভালোবাসার পাওয়ার জন্য।
ছেলেঃযদি আমি নিজেই না থাকি ওকে
ভালোবাসবে কে বলতো?
—মানে?
ছেলেঃমামা আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।
যেখানে অপারেশন করলে বাচার সম্ভাবনা
নেই বললেই চলে।
—কিন্তু মেয়েটাকে এমন বললেন কেনো?
ছেলেঃও আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমার
এমন অবস্থা ও কখনো মেনে নিতে পাড়বে না।
আমার জন্য নিজের ক্যারিয়ার লাইফ সব
শেষ করে দিবে।মামা আমি বললাম না
ও আমার যোগ্য না।আসলে আমি নিজেই
ওর যোগ্য না।আমার হাতের ঘড়ি দেখছো
এটা ও নিজেই কিনে দিয়েছে।ওর কোনো
অভাব নেই,কিন্তু আমার জন্য সব সময়
অভাবী জীবন যাপন করে।নিজের হাত
খরচের টাকা আমাকে দিয়ে দেয়।জানো
মামা ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি,
চেয়েছিলাম দুজন একসাথে থাকবো।কিন্তু
এই নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাদের এক হতে দিলো
না।আমি কি অনেক বড় পাপ করেছিলাম
যার জন্য আমাকে এতো বড় ত্যাগ করতে
হলো…?মামা আমি মরণকে অনেক ভয়
পায়,আমি আরো অনেকদিন বাচতে চাই।

—ছেলেটাকে তখন আমি কিছু বলতে পারিনি।
অনেক কান্না করছিলো।এক সময় রিক্সা
থামাতে বলে আমাকে টাকা দিয়ে চলে
যাবে তখন সিটে থাকা ফুলটা নিয়ে যেতে
বলি।কিন্তু ছেলেটা বলছিলো,,,
ছেলেঃএই ফুল নিয়ে গেলে আমি শুধু ওর
কান্না জড়িত মুখ ছাড়া কিছুই দেখবো না।
তাই তুমি নিয়ে যাও,যদি সুখী একটা
প্রেমিক-প্রেমিকাকে দেখো তাহলে এটা দিও।

—ছেলেটার কথা শুনে অনেক কষ্ট লাগছিলো,
না চাইতেও চোখের কোণঘেঁষে দুফোটা
জল গড়িয়ে পড়েছিলো।
আমিঃমামা ফুলটা আমি নিই?
—নিতে পারেন,কিন্তু সঠিক মানুষটার হাতে
দিয়েন।যাকে ছাড়া থাকতে ভয় পান।
আমিঃহুম,কিছু বলছো না কেনো?
জান্নাতঃকিছু বলার নেই আমার
আমিঃসবার ভাগ্যে ভালোবাসা থাকে না।
তাদের হয়তো মিলন লেখাই ছিলো না।
এসব ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই।
জান্নাতঃহুম

লেকের পাড় এসে রিক্সা থেকে নেমে
ভাড়া দেয়ার পর দুজন সামনের দিকে
হাটতে শুরু করলাম।
আমিঃপাশে একটা হোটেল আছে খাবে?
জান্নাতঃনা
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃএকটা কথা বলি?
আমিঃবলো
জান্নাতঃতুমি আমার থেকে কি চাও?
আমিঃএকটু ভালোবাসা
জান্নাতঃমজা নিও না
আমিঃসত্যি বলছি।আমাকে এই পাগল
সন্নেসী বেশ দেখছো না,এটাও তোমার জন্য।
জান্নাতঃআমি কি এমন সন্নেসী হতে বলেছি?
আমিঃবলোনি,কিন্তু তোমার নাকি সাধারণ
জীবন ভালো লাগে।তাই সব ছেড়ে এমন
করে এখানে পরে আছি।
জান্নাতঃঢং
আমিঃএকবার বলেই দেখো
জান্নাতঃতুমি এটা বলো,তোমার পরিচয় কি?
আমিঃআরিয়ান গ্রুপ অফ কোম্পানির(কাল্পনিক)
এমডির ছেলে নিলয়।বাবা মা আর একটা
বোন মিলেই আমার পরিবার।
জান্নাতঃএতো বড় কোম্পানির মালিকের
ছেলে এমন সন্নেসী ফকির…!
আমিঃশুধুমাত্র পদ্মিনীর জন্য।
জান্নাতঃকিন্তু আমি তোমার জন্য না।
আমিঃসেটা না হয় আমার করে নেবো
জান্নাতঃএতে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে।
আমিঃকথার শুরুটা তো তুমিই করছো
জান্নাতঃওকে আমি সরি
আমিঃযাও বৎস ক্ষমা করলাম।

দুজন কথা বলতে বলতে সামনের দিকে
গিয়ে বসলাম।
আমিঃফুলটা তোমার কাছে রেখে দাও।
জান্নাতঃআমি এসব ভালোবাসা বিশ্বাসী না।
আমিঃভালোবাসা সবাই বিশ্বাস করে।
জান্নাতঃকিন্তু আমি না।
আমিঃতুমি প্রেমকে বিশ্বাস করো না।কিন্তু
ভালোবাসাকে ঠিকিই বিশ্বাস করো।
জান্নাতঃপ্রেম আর ভালোবাসা আলাদা?
আমিঃতোমার কাছে কি মনে হয়?
জান্নাতঃভিন্নতা দেখাও
আমিঃপ্রেম সাময়িক,ক্ষণস্থায়ী। ১২ বছরের
ছেলে হয়েও ২০ বছরের মেয়ের প্রতি তার
একটা প্রেম বা মোহ ছাড়া কিছুই না।
প্রেম সবার জীবনেই হয়।কিন্তু যখন দুটো
মানুষের আত্মার সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সেটা
হয় ভালোবাসা।যা চাইলেও বিচ্ছিন্ন করা
যায় না।প্রেমিকাকে তুমি অনেক নাম দিতে
পারো কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে একটা
ভালোবাসা নাম দিলেই অনেক।সেই জন্যই
তো হুমায়ূন নিজের ভালোবাসাকে “ময়ূরাক্ষী”
বলে প্রকাশ করেছেন।তোমার আর রুপার
মধ্যে একটা গভীর মিল আছে।রুপা যেমন
“ময়ূরাক্ষী”নামটাকে পছন্দ করতো না তেমনি
তুমিও পদ্মিনী নামটা পছন্দ করো না।
আমার দাদু তোমাকে দেখে পদ্মাবতী
বলেছিলো।উনার সাথে কথা বলে তোমার
নাম পদ্মাবতী থেকে পদ্মিনী রাখি।উনার
অনেক ইচ্ছা ছিলো আমাদের দুজনকে
একসাথে দেখে যাবে।কিন্তু তিনি এখন
উপরে চলে গেছে দাদার কাছে।
জান্নাতঃআবেগময় কথা অনেক সাজিয়ে
বলতে পারো।
আমিঃতোমার থেকেই শেখা।
জান্নাতঃনিলয় আমার মনে হয় তোমার
এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো হবে।
কারণ আমি এসব বিশ্বাস করি না।
আর আমি আমার পরিবারের বিরুদ্ধে
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।
আমিঃআচ্ছা এসব বাদ দাও।কাল
থেকে আমাকে একটু সময় দিও।
শুভাকে জেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে পারি।
জান্নাতঃএকটা বন্ধ হয়ে সারাজীবন তোমার
পাশে থাকবো,তবে ভালোবাসা নিয়ে না।
আমিঃজান্নাত প্লিজ,আমি এসব বলতে
বারণ করলাম।তবুও তুমি একই কথা।
জান্নাতঃতোমাকে জানিয়ে দিলাম।
আমি;হুম আমি জেনে নিয়েছি।এখন
ক্ষুধা লেগেছে চলো খায়।
জান্নাতঃফুসকা খাবে?
আমিঃনা,ভাত খাবো হোটেল থেকে।
জান্নাতঃবিল কিন্তু আমি দেবো
আমিঃবড়লোক মানুষ আপনি,তাই
আপনি দিলে খুশি হবো।
জান্নাতঃসবাই খুব ভালো করেই জানে
কার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো।
আমিঃআপনার পরিবারের।
জান্নাতঃমিথ্যুক
আমিঃসেটা আমি জানি প্রিয়
জান্নাতঃচলো আমারো ক্ষুধা পেয়েছে।

একজন আরেকজনকে রাগাতে রাগাতে
হোটেলের সামনে আসলাম।হোটেলে
ঢুকে ফ্রেস হয়ে খাবার অর্ডার দিতেই
খাবার নিয়ে আসলো।দুজন কথা বলার
পাশাপাশি খাবার খেতে লাগলাম।

খাবার শেষ করে দুজন আরো কিছু
সময় বাইরে ঘুরাঘুরি করে বাসার
উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আমার বাসার
অনেকটা পরে জান্নাতের বাসা।আমাকে
নামিয়ে দিয়ে জান্নাত রিক্সা নিয়ে চলে
গেলো।দিনটা অনেক সুন্দর ছিলো,হয়তো
জান্নাতের থেকে আমি এর চাইতেও বেশি
কিছু পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছি।
কিন্তু আজকের দিন কিছুটা তৃষ্ণা পূরণ
করেছে।বাড়ির ভিতরে আসতেই দেখলাম
রেজাউলের সাথে জান্নাতের খালাম্মা
বসে আছে।
আমিঃআপনি এখানে?
খালাম্মাঃতোমাকে এলার্ট করতে আসলাম।
আমিঃকি ব্যাপারে?
খালাম্মঃআগামী মাসের ১৫ তারিখে
জান্নাতের বিয়ে।
আমিঃএখনো অনেক দেরি
খালাম্মাঃমাত্র ১৯ দিন
আমিঃহুম,কিন্তু জান্নাত তো কিছু বললো না।
খালাম্মাঃজান্নাত আর তুমি একসাথে ছিলে?
আমিঃহুম,দুজন ঘুরতে গেছিলাম।
খালাম্মাঃতারমানে তোমাদের মাঝে…
আমিঃশুধু মাত্র ভালো বন্ধু
খালাম্মাঃজান্নাত ওর পরিবারের বাইরে
কিছুই করবে না।
আমিঃবাসার সবাই রাজি?
খালাম্মাঃনা,ওর চাচাতো ভাই মামুন
ছাড়া সবাই রাজি।
আমিঃএই মামুনের ক্যারেক্টার কি?কখনো
আমাকে মারতে চায় কখনো জান্নাতের
ভালো চায়।
খালাম্মাঃজান্নাতকে কেউ বিরক্তি করুক
সেটা ও কখনো চায় না।আর মামুন কিন্তু
বাসা ছেড়ে দিয়েছে।
আমিঃকেনো?
খালাম্মাঃঐ বাসায় জান্নাতের বাবা আর
চাচার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে হয়তো
তাকে শাস্তি পেতে হবে না হলে বাসা থেকে
বের করে দেয়া হয়।
আমিঃওহ,আপনি চিন্তা করবেন না।আমি
সব ঠিক করে নেবো।
খালাম্মাঃঠিক আছে,এখন আমি আসছি
আমিঃসাবধানে যাবেন।

জান্নাতের খালাম্মা চলে যাওয়ার পর
রেজাউলকে বললাম,,,,
আমিঃকখন আসছিস?
রেজাউলঃ১২টার দিকে,উনাকে ঠিক
চিনলাম না।
আমিঃপুলিশ কমিশনারের স্ত্রী আমার
হবু খালাম্মা শাশুড়ি।
রেজাউলঃতুই যে মেয়ের কথা বললি তার
পরিবার মোটেও সুবিধার না।
আমিঃতুই জান্নাতকে চিনিস?
রেজাউলঃকম বেশি সবাই ওকে চেনে।
আমিঃওহ,কিছু খাইছিস?
রেজাউলঃহুম,আর ভিতরে প্যাকেটে
দেখ তোর জন্য খাবার আছে।খেয়ে নে।
আমিঃবাইরে থেকে খেয়ে আছি।তুই
আসবি জানলে খেতাম না।
রেজাউলঃহুম,নিলয় তুই জান্নাতকে নিয়ে
রাখবি কোথায়?এখানে আনলে ওর
ফ্যামিলি সহজেই ধরে ফেলবে।
আমিঃহুম সেটা তো বটেই।
রেজাউলঃআমার গ্রামের বাড়ি নিয়ে
যেতে পাড়িস। ওখানে কেউ তোদের
পরিচয় জানবে না।
আমিঃআরে পাগলা আমার সব ঠিক
করাই আছে।ওকে আমার সাথে বাসায়
নিয়ে যাবো।
রেজাউলঃকার বাসায়?
আমিঃআমার
রেজাউলঃতোর বাসা আছে?
আমিঃহুম,তবে তোকে সময় হলে সাথে
নিয়ে যাবো।
রেজাউলঃওকে
দুজন আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম।

পরেরদিন,,,,,,,,,,,
ভার্সিটিতে বসে আছি রানা আসলো।
আমিঃকিরে মন খারাপ নাকি?
রানাঃভাই মা অসুস্থ,হাতে কোনো টাকা
পয়সা নাই।কি করমু কিছু বুঝতেছি না।
আমিঃকোথায় আছে এখন?
রানাঃবাড়িতেই,মহল্লার অনেকের কাছে
হাত পেতেছি কিন্তু কেউ তেমন সাহায্য
করেনি।
আমিঃতোকে যদি একটা ঠিকানা দেয়
সেখানে যেতে পাড়বি?
রানাঃহ্যা পারবো
আমিঃঅনেক দূরে কিন্তু।তবে ওখানে
গেলে তোকে টাকার ব্যবস্থা করে দিবে।
রানাঃআমি যেতে পারবো,তুমি শুধু
ঠিকানা দেও আর কি বলতে হবে সেটা বলো।
আমিঃকিন্তু এসব কথা জেনো কেউ জানতে
না পারে।জানলে কিন্তু সমস্যা হবে।
রানাঃকেউ জানবে না।
আমিঃতাহলে শোন…….।

রানাকে ঠিকানা বুঝিয়ে দিলাম সাথে
একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দিলাম।
যদি সমস্যা হয় সে জন্য।রানা উঠে চলে
যেতেই জান্নাতের সাথে রানার দেখা।
তারা কিছু কথা বলে রানা চলে গেলো।
জান্নাত এবং ওর বান্ধুবীরা যেখানে নিয়মিত
আড্ডা দেয় সেখানে বসলো।এদিকে জয়
রাহুলও চলে আসছে।
আমিঃতোর ফোন দেতো
রাহুলঃকল দিবি?
আমিঃহুম
রাহুলঃ২নাম্বার দিয়ে দিস
আমিঃওকে

ওদের থেকে উঠে এসে আড়ালে গিয়ে
নিলুকে কল দিলাম।কয়েকবার রিং
হওয়ার পর রিসিভ করলো।
আমিঃকুত্তী কই ছিলি?
নিলুঃতুই কেডাই?
আমিঃলাথি মারবো,আমি নিলয়।

চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here