পদ্মিনী,পর্বঃ৫
আবির হাসান নিলয়
আমিঃBecause we are friend.
জান্নাতঃআমি কারো সাথে বন্ধুত্ব করিনা।
আমিঃকরোনা নাকি শুধু আমার সাথেই
করতে চাইছো না?
জান্নাতঃআপনি সব সময় দুলাইন
বেশি বোঝেন।আমি কোনো ছেলের
সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছি?
আমিঃআমি কি করে বলবো?তবে
যারা চুপচাপ থাকে তারাই বেশি
বদজাত হয়ে থাকে।
জান্নাতঃতারমানে আমি বদজাত ?
আমিঃতোমার নাম বলেছি একবারো?
জান্নাতঃউদ্দেশ্য তো আমাকেই ছিলো।
আমিঃবউ হলে তোমাকেই বলতাম।
জান্নাতঃরানা তুই যা।
রানাঃআইচ্ছা আপু
আমিঃতোকে না বলছি ভালো করে
সবার সাথে কথা বলতে।
জান্নাতঃএকদম বলবি না।তুই
যেভাবে কথা বলিস সেভাবেই
শুনতে ভালো লাগে।
আমিঃতুই যা এখন।
রানাঃআচ্ছা ভাই।
রানা চলে যেতেই আমাকে দাঁড়াতে বললো।
জান্নাতঃআমার সাথে চলেন।
আমিঃকোলে নাও
জান্নাতঃন্যাকামো করেন?
আমিঃঅনেক মারছে।আমার জায়গা
থাকলে বুঝতে কেমন লাগতো।
জান্নাতঃআপনি আসবেন আমার সাথে?
আমিঃকোথায় যাবো?
জান্নাতঃহাসপাতালে চলেন
আমিঃটাকা নেই
জান্নাতঃআমি দেবো
আমিঃতুমি কেনো দিবে?
জান্নাতঃকারণ আমরা বন্ধু
আমিঃতাহলে বন্ধু বলে শিকার করলে
জান্নাতঃনা করলে আপনি যাবেন
না।তাই করলাম।
আমিঃতাহলে কি শুধুমাত্র এইটুকু সময়?
জান্নাতঃধুর,আমি সব সময় আপনার
বন্ধু, ঠিক আছে?
আমিঃহুম ঠিক আছে।
জান্নাতঃএখন চলুন
আমিঃআরেকটা কথা
জান্নাতঃধুর বাল
আমিঃকি বললা?
জান্নাতঃসরি মুখ ফসকে বের হয়েছে
আমিঃওহ
জান্নাতঃচলেন তো এখন
আমিঃঠিক আছে চলো।
জান্নাতের সাথে ভার্সিটির বাইরে
এসে একটা রিক্সায় উঠলাম।
আমিঃসকালে কিছু খাইনি
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃবললাম না টাকা নেই
জান্নাতঃতাহলে রানা দিলেন কেনো?
আমিঃকারণ ঐ টাকা দিয়ে ওর সংসার
চলবে।
জান্নাতঃআর আপনি?
আমিঃআমি থাকলেও কি না থাকলেও
কি..!কিন্তু ওর আছে।তাই ওকে
দিলাম জেনো মা ছেলে একটু হলেও
ভালো কিছু খেতে পারে।
জান্নাতঃওহ..(মাথা নিচু করে)
আমিঃমন খারাপ?
জান্নাতঃকই না তো।একটা কথা বলি?
আমিঃহুম
জান্নাতঃআপনি এখানে কেনো আসছেন?
আমিঃতোমার জন্য।
জান্নাতঃমজা নেন?
আমিঃসত্যি বললাম
জান্নাতঃবাদ দেন। হাসপাতাল চলে
আসছি প্রায়।
আমিঃওকে
আর কোনো কথা বললাম না।
হাসপাতালে আসতেই মধ্যবয়স্ক
একজন মুরুব্বী কাছে আসলো।
—জান্নাত মা তুই এখানে?
জান্নাতঃওকে সাথে নিয়ে আসছি চাচা।
—ছেলেটা কে?
জান্নাতঃআমার বন্ধু
—এটা হলো কি করে?
আমিঃজান্নাতের চাচাতো… (থামিয়ে)
জান্নাতঃভার্সিটি যাওয়ার পথে
এক্সিডেন্ট করেছে।
—ওহহ
জান্নাতঃচাচা আমার সাথে ওকে
একটু ধরবে প্লিজ।
—হ্যা অবশ্যই
আমিঃসেটার দরকার নেই।আমি
একাই পাড়বো।
জান্নাতঃএক্সিডেন্ট করেও জেদ কমেনি।
আমিঃমাইর খাবে?
জান্নাতঃকথ না বলে চলো এখন।
আর কোনো কথা না বলে হাসপাতালে
এমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলো।কেবিনে
ঢুকার পর আমাকে শুইয়ে দেয়ার
পর ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করতে
লাগলো।হঠাৎ করে মাথায় কি
জানি আসতে ডাক্তারকে মুখের
কাছে আসতে বললাম।
আমিঃস্যার শুনুন
—হ্যা বলো
আমিঃএটা আমি বলছি সেটা কাউকে
বলবেন না।
—কি এমন কথা?
আমিঃআপনি মেয়েটাকে বলবেন
আমাকে সেবা করার জন্য এখন
একজন প্রয়োজন।যে প্রতিদিন
আমার সেবা করবে।
—কিন্তু তুমি আজকেই ঠিক হয়ে
যাবে।অন্যের সেবা দিয়ে কি হবে?
আমিঃপ্লিজ স্যার এটুকু করেন।
—ঠিক আছে
ডাক্তার আরো কিছু সময়
চেক করার পর চেয়ারে গিয়ে
বসতেই জান্নাত উঠে উনার
সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
জান্নাতঃআঙ্কেল,ওর কি অবস্থা?
—এমনিতে সব ঠিক আছে।কিন্তু
এই হাল করেছে কারা?
জান্নাতঃএক্সিডেন্ট
—ওহ,সে যাই হোক।ওর এখন
একটা নার্স বা অন্য কাউকে
দরকার যে ওর সেবা করবে।
জান্নাতঃঠিক আছে।আর ঔষধ
লিখে দেন।
—হুম
প্রেসক্রিপশনে কয়েকটা ঔষধ
লিখে দিলো।যদিও এসব আমার
মোটেও প্রয়োজন পড়বে না।কিন্তু
জান্নাতকে দেখানোর জন্য সব
করতে হবে।বড্ড ভালোবাসি মেয়েটাকে।
জান্নাতের সাথে বাইরে এসে
হাসপাতালের বাইরের মেডিসিন হল
থেকে লিখে দেওয়া ঔষধ নিলো।
আমিঃবলছিলাম হাসপাতালে
আসার দরকার নেই।এখন দেখলে?
জান্নাতঃকি?
আমিঃসেবা করার জন্য কাকে
পাবো আমি এই অচেনা শহরে..!
জান্নাতঃআপনার এতো জানতে হবে না।
আমিঃচাচার সাথে তো তুমি করে
সম্বোধন করছিলে।
জান্নাতঃনা করলে চাচা সন্দেহ করতো।
আমিঃমানে তুমি আমাকে…(থামিয়ে দিয়ে)
জান্নাতঃআমি সত্যি বন্ধু ভাবি।
কিন্তু প্রথমেই তো তুমি করে
বলতে পাড়বো না।
আমিঃওহহ আচ্ছা।😔
ঔষধ নিয়ে জান্নাত নিজেই বিল
পেমেন্ট করে আমাকে নিয়ে
রিক্সায় উঠলো।
জান্নাতঃভার্সিটি থেকে আপনার
বাসা কতোদূরে?
আমিঃ২০মিনিট লাগে হেটে যেতে
জান্নাতঃরিক্সা নিয়ে গেলে ৫মিনিট
লাগবে তাহলে।
আমিঃহুম
আর কোনো কথা বললো না।
কিন্তু চুপচাপ থাকতেও ভালো
লাগছে না।তাই কিছু বলার
জন্য অগ্রসর হলাম।
আমিঃপদ্মিনী তোমার পছন্দ কি?
জান্নাতঃকি পছন্দ?
আমিঃকোন ফুল তোমার সব
চাইতে বেশি ভালো লাগে?
জান্নাতঃসব
আমিঃকম বেশি নেই?
জান্নাতঃনা,কারণ ফুলগুলো তো
ইচ্ছা করে সুন্দর এবং অসুন্দর হয়নি।
প্রভু যা তৈরি করছেন সেটাই হয়েছে।
আর সব ন্যাচারাল বিউটিফুল।
আমিঃতোমার বাসায় কে কে আছে?
জান্নাতঃসবাই আছে।আপনার?
আমিঃযেখানে থাকি সেখানে কেউ
থাকে না।যদিও একটা ছেলে থাকতো
কিন্তু কিছুদিনের জন্য নিজ গ্রামে
গেছে পরিবারের কাছে।
জান্নাতঃওহ,মামা রেস্টুরেন্টের
পাশে একটু থামিও।
—আচ্ছা
জান্নাতের দিকে লক্ষ্য করতেই
দেখলাম এক হাতের নক দিয়ে
অন্য হাতের নকের সাথে কিছু
একটা করে শব্দ করছে।
আমিঃপদ্মিনী?
জান্নাতঃআবার পদ্মিনী?
আমিঃঠিক আছে জান্নাত,তুমি
এমন করছো কেনো?
জান্নাতঃজানিনা,টেনশন করলে
আমার এমন হয়।
আমিঃকি নিয়ে টেনশন করছো?
জান্নাতঃআপনার না জানলেও চলবে
আমিঃহুম,আমি তো আর কেউ না।
তাই আমাকে বলার কোনো মানেই
হয়না😏
একটা রেস্টুরেন্টের পাশে রিক্সা
থামাতেই জান্নাত আমাকে রিক্সায়
রেখে ভিতরে চলে গেলো।মিনিট
৫ পরে হাতে একটা থলে নিয়ে
গাড়িতে উঠলো।
জান্নাতঃআপনার বাসার ঠিকানা
দেন এখন।
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃদিবেন আপনি?😤
আমিঃকুঠির বাড়ি এলাকাতে।
জান্নাতঃমামা ওখানে চলেন।
—ঠিক আছে।
প্রায় ১৫ মিনিট যাওয়ার পর
এলাকাতে পোঁছালাম। এখান
থেকে মাত্র ১ মিনিট ভিতরে
গেলেই সেই টিনের বাসাটা।
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে
আমার এক হাত জান্নাতের
কাদে নিলো।বন্ধুত্বেই এতোটা
যত্ন,ভালোবাসলে না জানি
কতোটা যত্ন নিবে।সেই টিনের
বাসার মধ্যে আসতেই জান্নাত
আমাকে বসিয়ে দিয়ে লম্বা
একটা শ্বাস নিয়ে একদম চুপ
হয়ে গেলো।হয়তো কিছু অনুভব
করার চেষ্টা করছে।
কিছু সময় পর জান্নাত বললো,,,
জান্নাতঃএতো সুন্দর বাসার
খোজ আপনি কি করে পেলেন?
আমিঃএকটা ছেলে থাকে।
ওর সাথেই আমি থাকি।
জান্নাতঃআপনি অনেক লাকি
আমিঃতুইও।
জান্নাতঃতুই করে বললেন কেনো?
আমিঃতুই আপনি করে বলিস কেন?
জান্নাতঃআমার ইচ্ছা
আমিঃএটাও আমার ইচ্ছা।
জান্নাতঃআপনি কি জানেন,সব
থেকে ঘাড়ত্যাড়া মানুষ আপনি..!
আমিঃজানিনা
জান্নাতঃনা জানাই ভালো।এখন
এই ঔষধটা খেয়ে খাবার খেয়ে নেন।
আমিঃ….(কিছু না বলে হাত দেখালাম)
জান্নাতঃএখানে কি দিয়ে মারছে?
আমিঃহাতুড় দিয়ে(ডাহা মিথ্যা)
জান্নাতঃআজ বাসায় গিয়ে সত্যি
কুত্তাটাকে বাসা থেকে বের করে দেবো।
আমিঃতোর সাহস আছে?
জান্নাতঃকি মনে হয়?আর আপনি
তুই করে বলা বন্ধ করবেন?
আমিঃকরবো
জান্নাতঃকরলে করেন না করলে
নাই।আর এই ঔষধটা খান আমি
খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।
ঔষধটা খাওয়ার পর জান্নাত
হাত ধুয়ে খাবার খাইয়ে দিতে
লাগলো।
আমিঃভালোবাসো আমাকে?
জান্নাতঃনা
আমিঃতাহলে যত্ন নিচ্ছো কেনো?
জান্নাতঃআমার জন্য এসব হয়েছে তাই
আমিঃআমি যে তোমাকে বিরক্তি
করি।সেই জন্যই তো হয়েছে।
জান্নাতঃআপনি আহামরি তেমন
ভাবে বিরক্তি করেন না যেটা করলে
সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টের কাতারে
পড়বে।
আমিঃএতো কিছু কিভাবে জানো?
জান্নাতঃখালুজানের থেকে শুনেছি।
আমিঃওহ,তুমি নিজেও আমার সাথে
খাও।তোমারও হয়তো ক্ষুধা পেয়েছে।
জান্নাতঃনা আমি বাসা থেকে খেয়ে আসছি।
আমিঃওহ😨
জান্নাতঃএমন করেন কেনো,আচ্ছা নেন
আমিও খাচ্ছি হ্যাপী এবার?
আমিঃহুম😁
জান্নাত আমাকে খাইয়ে দেয়ার মাঝে
মাঝে সে নিজেও খাচ্ছে।এতোদিনের
কষ্ট আর চেষ্টা একটু একটু করে
সফলের দিকে হাটছে।খাওয়া
দাওয়া শেষ করে ঔষধ খাইয়ে
দিয়ে দুটি চেয়ার বারান্দায়
নিয়ে আসলো।একটাতে আমাকে
বসিয়ে দিয়ে অন্যটাতে জান্নাত
বসলো।
আমিঃতুমি বাসায় যাবে না পদ্মিনী?
জান্নাতঃএই শান্তির স্থান থেকে
এমটু শান্তি নিয়েই বাসায় যাবো।
আমিঃএখানে কি শান্তি আছে?
জান্নাতঃআপনি পাবেন না।চোখ
বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে
পাখির আওয়াজ শুনুন তারপর
চোখটা খুলে ঐ পুকুরপাড়ে নিজেকে
আবিষ্কার করুণ,দেখবেন অন্যতম
সুখ এবং প্রশান্তি খুঁজে পাবেন।
আমিঃএসব জানো কি করে?
জান্নাতঃজানি কোনোভাবে।
আমিঃতুমি জানো কেনো তোমাকে
পদ্মিনী বলি?
জান্নাতঃজানতে চায় না।আমার
এই নামটা পছন্দ না।
আমিঃতবে আমি পদ্মিনী বলবোই।
জান্নাতঃযা ইচ্ছা বলেন আমার
কিছু যায় আসে না।
আমিঃহুম
অনেকটা সময় দুজন বসে থাকার
পর জান্নাত বললো…
জান্নাতঃআপনার কাছে ফোন আছে?
আমিঃনা
জান্নাতঃএটা রাখুন
আমিঃআমার এসব লাগবে না।
জান্নাতঃকেনো লাগবে না?
আমিঃএমনি,তুমি তোমার নাম্বার
দিয়ে যাও।যখন প্রয়োজন হবে
তখন কল দেবো।
জান্নাতঃওকে।
একটা কাগজে জান্নাতের নাম্বার
লিখে দিলো।
জান্নাতঃদুপুর গড়িয়ে পড়েছে
আপনি খেয়ে নেন।
আমিঃএখন আর খাবো না।
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃ১১টার পরে খেয়েছি এখন
কি ক্ষুধা পায়?
জান্নাতঃওহ
আমিঃতুমি বাসায় যাও
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃএতো সময় একটা পরিত্যক্ত
বাসায় একটা ছেলে এবং একটা
মেয়ে থাকাকে তোমাদের সমাজ
ভালো চোখে দেখে না।
জান্নাতঃসমাজকে নিজের মতো
পরিচালনা করেন।
আমিঃহুম করতে যায় আর তোমার
চাচাতো ভাইয়ের মতো লোকজন
আমাকে এসে মেরে হাসপাতালে
ভর্তি করাক তাই না।
জান্নাতঃসরি বললাম তো।আর
আগামীকাল সকাল হতেই আমি
আর খালাম্মা দেখতে আসবো।
আমিঃঠিক আছে।
জান্নাতঃবাই
আমিঃশুনো
জান্নাতঃকি?
আমিঃঅনেক বেশিই ভালোবাসি তোমাকে পদ্মিনী
জান্নাতঃঢং😏
চলবে………………