প্রাইভেট_টিচার😍,পর্ব_২
লেখক_Ananta Sanny
-না শোনেন আপনার আগে ইন্টারভিউ নিবো তারপর পরবো (ইকরা)
-না আমি গেলাম(অনন্ত)
-তুই এক পা এগিয়ে দেখ কি করি
-কি করবেন??(ভয় পেয়ে)
-এক পা এগিয়ে দেখ আগে
-না
-এখন না করিস কেন??
-এভাবে কথা বলছেন কেনো??
-কথা শুনলে আমার কথা এই রকমই হবে
-ওকে নেন পড়ান
১ ঘন্টা পর….
-স্যার আজকে এই পর্যন্তই (ইকরা)
-আচ্ছা। ভালভাবে পইড়েন(অনন্ত)
-হ্যা সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না আর হ্যা বসেন
-কেনো??
-কিছু খাবেন না??
-না আমি অন্যের বাড়ির কিছু খাই না
-এগুলা কোন ধরনের কথা?
-আমি এইরকমই থাকে যাই
-এই না শোনেন।
(অনন্গ কিছু শুনলোই না হন হন করে চলে গেলো)
পরের দিন….
অনন্ত এসে বলল
-পড়া বের করেন(অনন্ত)
-কাল ওভাবে চলে গেলেন কেনো?(ইকরা)
-আমি কাল ই তো বললাম
-এই যে নেন(কিছু ফলমূল দিয়ে বলল)
-কি করবো?
-খাবেন
-না আমি কিভাবে যে বুঝাবো?? আমহ অন্য কারও…
-এটা তোর শ্বশুর বাড়ি এখন তো খাবি তাই না (ধমক দিয়ে)
-…………
-খাচ্ছেন না কেনো?
-খা খা খাচ্ছি তো
-হুমম এখন পড়ানো শুরু করেন
ইকরা পড়ার সময় তেমন কোনো কথা বলে না। শুধু তার কথা না শুনলেই সে রেগে যায়। সেদিন পড়া শেষে হঠাৎ করে বলল
-স্যার আমি যে আপনাকে মাঝে মাঝে তুই করে বলি রাগ করেন??(ইকরা)
-হুমমমম (অনন্ত)
-তাহলে আমি যা বলি তাই শুনবেন। তাহলে বকা খাবেন না আপনার রাগ ও হবে না
-আচ্ছা ঠিক আছে আসি তাহলে
-হুমম দেখে যায়েন আর সময় মতো আসবেন
-হুমমম
এইভাবেই চলল কয়েক মাস। ইকরার পাগলামো গুলো এখন অনেক বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু পড়ার সময় কিছু বলে না। পড়ার আগে আর পরে। তো একদিন ইকরা….
-এই শোনো না (ইকরা)
-জ্বি বলেন (অনন্ত)
-তুমি আমাকে আপনি না তুমি করেই বলবা
-নাহ আমি আপনি করেই বলব
-যদি তুমি করে না বলো তাহলে আম্মুকে বলে দিবো তুমি আমায় জোড় করে কিস করেছো
-না না পড় তুমি।
-এই তো গুড
-হুমম
-না স্যার আপনি করেই বলবেন আমি তো একটু অভিনয় করলাম
-………..
-ও স্যার
-আমি তোমাকে পড়াবো না পাড়লে যা ইচ্ছা করো।
অনন্ত রাগ করে বাসা থেকে বের হলো। অনন্তর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে। অনন্ত মাথা ধরে হাটছে। আর এক সময় রাস্তায় পড়ে যায়। যখন তার জ্ঞান ফেরে দেখে হাসপাতালের একটা বেডে। ডাক্তার এসে তার সাথে কথা বলল
-হে কেমন আছো এখন?? (ডাক্তার)
-হ্যা ভালো। আচ্ছা আমি তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম তাহলে আমার হাত পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো??(অনন্ত)
-কয়েকটা লোক এসে বলল আপনি একটা কার এর সাথে এক্সিডেন্ট করছেন
-না আমি প্রথমে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তারপর তো আমি কিছু জানি না
-আচ্ছা। মাথা কি আগে থেকেই ব্যাথা করছে
-হ্যা ব্যাথা টা অনেক আগের। শুধু ব্যাথায় ঔষধ খেয়ে কমিয়ে রাখছি
-তাহলে তো একটা পরীক্ষা করতে হয়
-হুমম
-আর তোমার ডান হাতে কেটে গেছে আর ডান পা টা ভেঙ্গে গেছে। কোনো চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
তো একদিন পর অনন্তর মাথা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। টাকা না থাকায় অপারেশন করাতে পারে না। অনন্ত কিছুদিন হাসপাতালে থেকে হোষ্টেলে ফিরে আসে। অনন্ত টাকার জন্য তার বাবার (অনন্ত তার কাকা কে বাবা বলে চিনে) কাছে ফোন দেয়
-হ্যালো বাবা(অনন্ত)
-হ্যা বল। কেমন আছিস?? (বাবা)
-হ্যা ভালো। তোমরা সবাই কেমন আছো???
-ভালো তবে একটু সমস্যায় আছি রে
-কি সমস্যা?
-তোর বড় বোনের বিয়ে ঠিক হওয়ার মধ্যে, ছেলে পক্ষ ৫ লাখ টাকা যৌতুক চাইছে। ছেলে ভালো চাকরি করে। এখন চেষ্টা করছি টাকা টা জোগাড় করার জন্য।
-ওহহহ (অনন্ত তার কথা আর বলল না)
-তা তুই আসবি কবে??
-আপুর বিয়ে ঠিক হোক তারপর। আর আপুর বিয়ে এটা তো আগে বললে না
-ভাবছিলা একদম ঠিক করে তারপর বলব
-ওহহ ঠিক আছে বাবা রাখি এখন
-আচ্ছা ভালো থাকিস।(ওপাশ থেকে ফোন কেটে যাওয়ার আগে শব্দ আসে যত্তসব)
অনন্ত এখন যানে যাকে সে বাবা বলে সে তার বাবা না। কিন্তু ছোট বেলা থেকে তাকেই বাবা বলে আসছে। চোখের কণায় তার একটু পানি আসে। কারন বাড়ি থেকে তো একটা টাকাও চাওয়া যাবে না। তাহলে অপারেশন! হঠাৎ ই অনন্তর ফোনটা বেজে উঠে। অনন্ত দেখে ইকরা কল দিয়েছে….
-হ্যালো স্যার আপনি পড়াতে আসবেন না?? আমি আর ওমন করবো না আসেন। মা বাবা আপনাকে খুঁজছে। আপনি খুব ভালো । আসেন প্লিজ।
-……(অনন্ত কিছু না বলে ফোনটা কেটে অফ করে রেখে দেয়)
বিকেল বেলা কি ভেবে অনন্ত ইকরাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। আর অনন্ত এখন একটা স্টিক এর উপর ভর করে হাটে। ইকরার দের বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই ইকরার মা দরজা খুলে দেয়। ইকরার মা দেখে বলে
-কি হইছে তোমার??(মা)
-এই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে এমন হইছে (শুভ)
-এখন কেমন আছো
-এইতো একটু ভালো
-হুমম। ইকরা তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ও প্রতিদিন ই তোমার পড়ানোর টাইমে বসে থাকে। কিন্তু তুমি আসো না
-তাহলে ও কি এখন রুমেই আছে??
-হ্যা ও রুমেই আছে যাও
অনন্ত ইকরার রুমের কাছে গিয়ে দেখে দরজা আটকানো। অনন্ত ইকরাকে ডেকে বলল
-এই ইরা (অনন্ত)
ইকরা ভেতরে থেকে বুলেট এর গতিতে দরজা খুলে দিলো।সে কন্ঠ বুঝতে পারছিলো যে কে তাকে ডাকছে। আর চিনবেনাই বা কেনো। পাঁচটা বছর ভালবসাছে তাও অনেক দূর থেকে। আর ইকরার এত তাড়াতাড়ি দরজা খোলা দেখায় অনন্ত অবাক। আর অনন্ত কে দেখে ইকরা অবাক…..
-কি হইছে তোমার(ইকরা)
-ভেতরে চলেন বলছি (অনন্ত)
-কি হইছে বলেন এখন
-সেদিন এখান থেকে যাওয়ার পর এক্সিডেন্ট হয়। আর তার থেকে এ অবস্থা….
-……..(ইকরা কান্না করছে)
-ওই কান্না করছেন কেনো??
-এমনি তোমাকে কিছু কথা বলব
-পড়বেন না??
-না আগে কথা গুলো বলে নেই
-হ্যা বলেন
-তুমি তো জানো পাঁচবছর হলো তোমাকে আমি চিনি
-হ্যা
-আর আমি তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকেই ভালো বাসি। তোমার এই কয়েকবছর যাওয়া আসা। সবকিছুই দেখছি।
-……….
-আর তোমাকে কাছে থেকে দেখার জন্য আর ভালবাসি কথাটা বলার জন্য স্যার হিসেবে রেখে দেই।(ইকরা কান্না করছে)
-আচ্ছা কান্না থামান।
-হুমমম
-আপনি এখন কি চান??
-ভালবাসতে
-আচ্ছা আমি যদি কিছু বলি সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন আর সবকিছুই স্বভাবিক ভাবে নেবেন ঠিক আছে
-হ্যা কিন্তু আমিও বলে রাখি আপনি এটা মানা করতে পারবেন না
-আচ্ছা কথা টা শোনেন আগে
-হুমম বলেন
-আমি প্রথমে এক্সিডেন্ট করি নি। মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ডাক্তার কে একথা বলার পর উনি আমার মাথার একটা পরীক্ষা করেন। আর সেখানে ব্রেইন টিউমার ধরা পরে।
-……..(ইকরা একটু জোড়েই কান্না করছে)
-এই যে কান্না কইরেন না থামেন এখন কথা টা বলতে দেন।
-হুমম বলা শেষ করেন
-এখন আমি আমার এ অবস্থা পরিবারকে জানতে চাইছিলাম কিন্তু
-কি??
-আমি বাবা কে ফোন দেওয়ার পর বলে(আগের কথা গুলো বলল। আর তার যে ওইটা কাকা তাও বলল।)
-হুমমম
-তো আমি বাঁচি কি মরি সেটারই ঠিক নাই। এর মধ্যে আপনি যেসব বলছেন। মনে হচ্ছে এখনই প্রানটা যাবে।
(ইকরা কথাটা শুনে অনন্তর মুখে আঙ্গুল ঠেকালো আর বলল)
– আমি আছি তো
-না আপনি বু…(অনন্তকে আর বলতে না দিয়ে বলল)
-পাঁচটা বছর হলো ভালবাসি এমনি এমনি না। তুমি ৩০ মিনিট এর মতো এখানে বসে থা..না শুয়ে থাকো। আমি আসছি
-কই যাবেন??
-নিচে
-কেনো?? আমি তো চলে যাবো
-প্লিজ ৩০ মিনিট সময়
-আচ্ছা ঠিক আছে
ইকরা আবার অনন্তর গাল ধরে বলল
-কোনো চিন্তা করো না আত্মাপাখি আমি আছি তো (এটা বলে ইকরা অনন্তর গালে একটা কিস করলো)
অনন্ত ভালভাবেই টের পাচ্ছে যে ইকরা তাকে কত্ত ভালবেসে ফেলেছে….
চলবে