ভালোবাসা_সীমাহীন,তৃতীয়_পর্ব

ভালোবাসা_সীমাহীন,তৃতীয়_পর্ব
লেখনীতেঃInsia_Ahmed_Hayat

আমি আমার ইমোশনাল মেসেজ দিয়ে ফোন অফ করে শান্তির ঘুম দিলাম। তখন রাত প্রায় ১১.৩০ বাজে আমার বড় আপু এসেই আমাকে টেনে তুলে দিলো ঝারি।

আপুঃ এই রানী উঠ। কি করেছিস তুই হ্যা দিন দিন তুই এত অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস৷ কি উলটা পালটা কাহিনি করে এখন ঘুমাচ্ছিস। উঠ উঠ( এক প্রকার কিল দিয়ে দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে জাগাচ্ছে)

রানীঃদুলতে দুলতে বলি কি হয়েছে রতনা আপু.(অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাজা ঘুমটাকে বাসি করে দিলো ধ্যাত)

আপুঃ আম্মা আমারে ফোন দিয়েছে তোর ফোন কই আর তুই কি কার্নামা করেছোস৷ ফোন চালু কর তোরে নিয়ে আর পারলাম না। আম্মা বলছে ঝাটা দিয়া পিটাতে।

আমিঃ আরে বলো তো কি হয়েছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।(অবাক হয়ে)

পরে আপু যা বলল আমি শুনে টাস্কি খেয়ে মাটিতে পড়তে পড়তে ফোন চালু করলাম।
এরপর মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখি অনেকগুলো মেসেজ মারিয়াসহ বাকি বান্ধুবিরাও মেসেজে এক প্রকার গালি দিচ্ছে। ওরা না পারে আমাকে ফোন থেকে বের হয়ে ঝাটা পেটা করবে। কাহিনি হলো মারিয়া অনলাইনে এসে আমার মেসেজগুলো পড়ে মারমক অবাক সাথে সাথে কল দিলো আমাকে কিন্তু ফোন বন্ধ। এরপর বাকিদের জানিয়েছে সবাই চিন্তায় পড়লো কেউ আমার বিয়ের কথা জানে না। এমনিতে অনেক বিয়ের প্রস্তাব পাত্রপক্ষ আসা যাওয়া করাই ওরাও হালকা ঘাবড়ে গেলো ওরা ভাবলো আমাকে চুপিচুপি জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এরপর মারিয়া আম্মাকে কল দিলো কাকতালীয় ভাবে আম্মা ও বড় ভাই কেউই ফোন ধরেনি যার কারনে ওরা সিউর হয়েছে যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা কান্নাকাটি করে একাকার এরপর ওইরাতেই সবাই সবার মাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির। ৪ বান্ধুবি ও তাদের মাসহ মোট ৮জনকে দেখে আমার আম্মা অবাক। মারিয়া কান্নাকাটি করে বেহুস হওয়ার উপক্রমে এরপর ওরা জানায় আর ছবিগুলোও দেখায় সব। আম্মুও অবাক সাথে সবাই এরপর বলল আমি বাসায় নেই আপুর বাসায় (এটা আবার ওদের বলিনি হুট করে আপুর বাসায় চলে গেছি সামনে এক্সাম তাই দোয়া নিতে মানে সালামি আরকি আমি কিন্তু লোভি না 😀। তাই বান্ধুবিরা জানতো না)
এরপর সবাই বুঝলো এই নাটকের পরিচালক এর সাথে নায়ক নায়িকাও আমি। অনেক টেনশনে পড়ে গেছিলো ওরা এরপর আর কি ওদেরকে ফোন করে ভার্চুয়ালে ঝাটার বাড়ি খেয়েছি। ওদের সাথে কথা বলার কিছুক্ষন পর আননোন নাম্বার থেকে ইমুতে কল আসে নামটাও অদ্ভুত “মিস কুইন”(একাউন্ট এর নাম) ভাবলাম কোনো মেয়ে টেয়ে হবে বা আত্নীয় স্বজনও হতে পারে তাই রিসিভ করে টাস্কি খেয়ে গেলাম।
ওপাশ থেকে এক সুমধুর পুরুষ কন্ঠ (আহা❤️) ফোন রিসিভ করে কিছু বলার সুযোগই দিলো না,
ওপাশেঃমিস রানী আপনার নাকি বিয়ে হয়ে গিয়েছে তো বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিলেন না যে আচ্ছা আপনার বরের নাম কি? বর কোথায়। আপনার বিয়ে হলে বর কোন রাস্তা দিয়ে আসলো আর আপনাকে নিয়ে গেলো কোন রাস্তা দিয়ে। আপনার বিয়ে হলে এখন অনলাইনে কি করছেন?
একবস্তা প্রশ্ন শুনে হালকা পাতলা ভয় পেয়ে দিলাম মনে মনে খিচ্চা দৌড় মানে ফোন কেটে দিছি আরকি এরপর ব্লক দিবো দেখি মেসেজও দিয়েছে আমি কবে তাকে এড করলাম তাও জানি না তখন এত ধারনা ছিলো না এইসবে।
ওনার একটা মেসেজে আমি আর ব্লক দেইনি।
মেসেজঃ চিন্তা আর ভয়ের কিছুই নেই আমি আপনাকে বিরক্ত করবো না। আর হ্যা নেক্সট টাইম এই ধরনের মজা করবেন না। ভালো থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন আর হ্যা এক্সামের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা ভালো ভাবে এক্সাম দিয়েন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন। যেমন আছেন তেমনি থাকবেন। দৌড়াদৌড়ি কম করবেন। আল্লাজ হাফেজ।
এই মেসেজ পড়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম। আমি ওই মেসেজ না হলে ২৪ বার পড়েছি কেন যেনো মেসেজটা অনেক বেশি আকর্ষণ করতো জানতে ইচ্ছে করতো কে সে। অনেক ভেবেও বুঝতে পারিনি তখন কে কনফিউজড ছিলাম এত এত মানুষের ভিড়ে বুঝার উপায় ছিলো না কে সেই ব্যক্তি। তখন এত সাহসি ছিলাম না যে মেসেজ দিয়ে বলবো কে আপনি।আমি আসলে একটু ভিতু ছিলাম তাইতো খিচ্চা দৌড় দেওয়া আমার প্রধান কাজ ছিলো।
এরপর অনেক ভেবে মেসেজের মানে বুঝলাম যে ছেলেটা আমার বিয়ে নিয়ে ফাজলামির কথাটাই জিজ্ঞেস করেছে বা বলেছে। এরপর আমি আমার বান্ধুবিদের এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম ওরা বলল কাউকে বলেনি। আমিও আর মাথা ঘামাইনি এরপর আর কোনো দিন ওই একাউন্ট থেকে একটা মেসেজও আসেনি।
আমিও ভুলে গেলাম এক্সাম শেষ হলো ভালোভাবে দিলাম। এরপর ঘুরাঘুরি, বেড়ানোর পর সব ফ্রেন্ডরা মিলে দেখা করবো ভাবলাম তাই দেখা করতে একটা রেস্তোরাঁতে যাবো। ওইদিন আমার কপালে সত্যি অনেক দুঃক্ষ ছিলো। প্রথমে বের হওয়ার পর আমার জুতা ছিড়ে যায় এরপর মারিয়াদের বাসায় যাওয়ার পথে এক বাড়ির পানির পাইপ ছুটে যায় আর আমি হালকা ভিজে যাই এরপর মারিয়াকে নিয়ে রিক্সা স্ট্যান্ডে যাবো রাস্তায় দুই লোক মারামারি শুরু করে দেয় আর সেই সময় এক লোক আরেকলোককে ধাক্কা মারে যে ওই লোকটা পড়ে যায় এরপর পাশে একটা ইটের অর্ধেক টুকরো ছিলো ওটা নিয়ে ঢিল মারে কিন্তু টুকরোটা লোকটার গায়ে না লেগে সোজা আমার পায়ের উপর পড়ে আঙ্গুল দুটা থেতলে যায় আর রক্ত পড়ছিলো। মারিয়া তো কান্নাকাটি শুরু করে দেয় আমি আবার রক্ত দেখে অনেক ভয় পাই। নিজের এই অবস্থা সাথে প্রচন্ড গরমে আমার কাপুনি উঠে যায় আর আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাই আশেপাশের মানুষজন তখন তামাশা দেখছিলো যেইলোক দুটো ঝগড়া করছিলো তারা পালিয়েছে কারন জরিমানা দেওয়া লাগবে না এইদিকে মারিয়া একা তার উপর বাকি সবাই পুরুষ কেউ আমাকে ধরতেও চাচ্ছে না একজন এক বোতল পানি আনলো মারিয়া আমার মাথায় পানি ঢাললো কোনো মতে হুস আসলো এইদিকে তারাহুরোর মাঝে ফোন আনিনি মারিয়া আমার বাড়িতে কল দিলো তারা আসতেছে। আসতেও তো সময় লাগে।
মারিয়াকে ধরে ধরে আমি দাড়ালাম আমার আর চলার শক্তি নেই। তখনি ওই রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি আসছিলো। মারিয়া আর আমাকে দেখে গাড়িটা থামালো গাড়ির মধ্যে ছিলো রাসেলের বড় ভাই আর ভাবি ও মা তারা আমাদের দুইজনকে গাড়িতে নেয় ওনারা এক জায়গা থেকে আসছিলো। এরপর এলাকার হাসপাতালে নেওয়া হয় সেখানে আমাকে সেলাইন দেওয়া হলো পা ব্যান্ডেজ করে ঔষধ লিখে দিলো। মারিয়া আমার আম্মুকে খবর দেয় বড় ভাবিকে নিয়ে আম্মু আসে কিন্তু ততক্ষনে হাসপালের বিল সব কিছু করা শেষ। আম্মুদের আসতে দেরি হয় কারন প্রথমে ওই যায়গায় যাওয়ার পর আবার ঘুরে আসতে হলো। আংকেল আন্টি আর রনি ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাই পরপর দুইবার তারা আমাকে সাহায্য করেছে।
ওইদিন আর দেখা করা হলো না। অনেকদিন রেস্ট নিয়ে পা ঠিক হওয়ার পর আবার দেখা করার চিন্তা করলাম।

এবার দেখা করে প্ল্যান করবো যে কোন কলেজে ভর্তি হবো তাই। এবার মারিয়া আমাকে নিতে আসে আমরা বের হলাম। রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম জুস খাচ্ছি আর হাসি ঠাট্টা নিয়ে। কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটু দূরের টেবিলে নজর পড়লো আমি অবাক হয়ে মারিয়াকে বললাম
রানীঃ মারিয়া এই পাশে দেখ ঐটা রাসেল না।
মারিয়াঃ হ্যা তাইতো মনে হচ্ছে।
রানীঃ উনি এখানে কি করে। আমাকে কি দেখে ফেললো নাকি। আমার ভয় করতেছে।
মারিয়াঃ দূর এটা কি তোর ঘরের বাথরুম নাকি যে তুই ছাড়া আর কেউ থাকবেন না এটা রেস্তোরাঁ এখানে আসতেই পারে।আর দেখলে দেখবে তাতে কি।আর সে কি আমাদের ভূগোল স্যার নাকি যে তুই ভয় পাচ্ছিস।চুপচাপ বসে থাক।
মারিয়া আমাকে বকাঝকা করে চুপ করে বসে থাকতে বলল। আমার চোখ বারবার ওইদিকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে সে। আমাকে খেয়াল করেনি। বারবার ওইদিকে তাকানোর ফলে হঠাৎ করে আমাদের চোখাচোখি হয়। আর সে আমাকে দেখে অবাক হয়ে দাড়ালো মানে বুঝতে আর সময় লাগলো না যে সে আমার দিকেই আসছে আমি দুই সেকেন্ড সেইদিকে তাকিয়ে দিলাম খিচ্চা দৌড়।
এক দৌড় দিয়ে বাহিরে বের হয়ে রিক্সায় করে বাসায় চলে এলাম। এই রাসেলের জন্য আমার অর্ডার করা ফুসকা গুলো পেটে গেলো না। আসলে আমি তারে দেখলে কেন যে দৌড় দেই আমি নিজেও জানি না। সে সামনে আসলেই হার্ট বিট বেড়ে আর যখন প্রথম দেখা তখন অনেক জোরে ধমক দিয়েছিলো হালকা পাতলা এইকারনে তাকে ভয় পাই বেশি না একটু।
বাসায় এসে ওইদিন আর বান্ধুবিদের ফোন ধরার সাহস পাইনি।

এরপর রেসাল্ট দিলো কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিলাম সবাই কলেজে ভর্তি হলাম। সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছি এই সুখও কারো সহ্য হলো না আমার ছোট ভাইয়ের শ্বশুরআব্বা আমার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আনলো। আমার মাথায় রাগ উঠে গেলো মাত্রই তো কলেজে ভর্তি হলাম। আর তাও এই সমাজের সহ্য হয় না।
তারা বলেকি বিয়ে দিয়ে দিতে। আমার আব্বা বলল যে এখন আমাকে পড়াবে বিয়ে দিবে না। এরপর তারা বলল যে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়াবে। তারপর অনেক কাহিনি আমি কান্নাকাটি করে বেহুস হয়ে বিয়ে হতে হতে আটকায় ফেলছি। এখন আমার এই কাজে কিছু কিছু মানুষ বলে আমার নাকি রিলেশন আছে তাই এমন করি।
এরপর বড় আপাকে আনানো হলো আপা আমায় বার বার জিজ্ঞেস করলো যে কাউকে পছন্দ করি কি না। আমার এত রাগ হলো আমি রাগে বলেই ফেললাম পছন্দ থাকলে কি হাতে হাত রেখে বসে থাকবো নাকি যার সাথে রিলেশন তাকে সবার সামনে এনে দাড়া করিয়ে ফেলবো। বার বার সন্দেহজনক কথাবার্তা আমার একদম পছন্দ না। লেখনীতেঃইনসিয়া আহমেদ হায়াত।
এরপর বাসায় হালকা রাগারাগি হয়। আমি কথা বলা কমিয়ে দেই। এরপর আবার এক পাত্রপক্ষ আসে আমাকে দেখতে ওনাদের সামনে যাই আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়। যেমনঃ চুল দেখাও, গাল টেনেও দেখছে, আমি চিকন হওয়ায় কিছুকিছু খোচা দেওয়া কথা বলছে। সেই সাথে আরো অনেক কিছু এক পর্যায় আমার বাবা ভাইরাও রেগে যায়। আমাকে নানান ভাবে অপমান সাথে ছোট করছিলো এই ধরনের পাত্রপক্ষ আমি জীবনেও দেখিনি। শেষ দিকে আমাকে বলে হেটে দেখাতাম আমিও হেটে হেটে সোজা নিজের রুমে চলে এসে দরজা আটকে দেই। বাকিটা আমার পরিবার ঠিক করে। এইভাবে এটাও বাদ হয়ে গেলো। বাবা বললো এখন আর দেখাদেখি হবে না রানী পড়তে থাকুক পরেরটা পরে দেখা যাবে।

দিন যাচ্ছিলো ভালোই। এরপর আমার বান্ধুবি মারিয়ার বিয়ে ঠিক হলো সজিব ভাইয়ার সাথে।

আস্তে আস্তে বিয়ের দিন এসে পড়ে প্রথমে গায়ে হলুদ, মেহেদির অনুষ্ঠান হলো তারপর দিন বিয়ে।
আমরা বান্ধুবিরা সকাল সকাল ওদের বাসায় যাই এরপর এক সাথে পার্লারে গিয়ে সেজে মারিয়াকে খাইয়ে আমরাও খেয়ে দেয়ে বর আসার অপেক্ষা করি। এরপর শুনলাম বর এসে গেছে গেট ধরার জন্য গেলাম। মারিয়ার কাজিনরা সব ছোট ছোট পিচ্চি তাই গেট আমাদের ধরতে হলো। আমি শরবতের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় বরপক্ষ আসলো।
আর আমি থ মেরে আছি বরের পাশের জনকে দেখে। মনে মনে খিচ্চা দৌড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here