ভালোবাসা_সীমাহীন,দ্বিতীয়_পর্ব
লেখনীতেঃInsia_Ahmed_Hayat
জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমি একটা রুমে আমার মা আর বড় ভাবিও আছে আর তার সাথেই আরেকজন মহিলা বসে আছে। আমি ভ্রু কুচকে ভাবছি এটা আবার কে আর আমাদের বাড়ি এমন হলো কবে। আমার চেহারা দেখে মহিলাটা বলল
“কেমন আছো মা, এখন কি ভালো লাগছে নাকি না”
আমি মাথা নাড়ালাম মানে ভালো আছি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবছি “সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন আমি যে কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে বেহুস হয়ে গেছি সেটা কি সবাই জেনে গেলো নাকি। জানলে তো মান সম্মান আর একটাও থাকবে না।”
আমার আম্মা যেই যদি শোনে কুকুরের দৌড়ানি খাইছি ওমনি নানীর বাড়ির চৌদ্দ গুষ্টির কাছে ফোন দিয়ে বলবে” ভাইজান/খালাম্মা/আম্মা/ভাবি/মামী/আপা (মানে সবাইকে কল দিবে) সাবধানে থাকবেন রানীরে কিন্তু কুত্তায় দৌড়ানি দিছে। কুত্তার জালায় বাচি না গো। রানী তো দৌড়ানি খাইয়াই বেহুস হয়ে গেছে পোলাপানদের সাবধানে থাকতে বলবেন এই সময় কিন্তু কুত্তা পাগল হয়ে মানুষের পেছনে পড়ে যায়”
ব্যস ইনিই আমার মা যিনি সবাইকে এই কথা বলে বলে আমার মান সম্মান ডুবাবে। আরেকবারের কথা আমি আর আমাদের বিল্ডিং এর বাচ্চাকাচ্চাদের সাথে লুকোচুরি খেলতে গিয়েছিলাম রাতে আরকি তখন আমি অনেক ছোট তো খেলার মাঝে আমি চোর আমি সবাইকে খুজতে খুজতে ছাদে যাই আর পাশের বিল্ডিং এর ছাদে সাদা রঙের কি যেনো উড়তেছিলো সেটা দেখে ভুত বলে বেহুস হয়ে যাই🙂। এরপর আর কি পড়ে যানতে পারি সাদা রঙের উড়ন্ত ভুতটা আর কিছু না লুঙ্গি ছিলো। এই কাহিনি আম্মা শুনে তার চৌদ্দ গুষ্টিকে বলছে ” বাচ্চাকাচ্চাদের সাহসিকতা শিখাতে ভুত আসলেও যেনো ভয় না পায় নইলে রানীর মতো লুঙ্গি দেখে বেহুস হয়ে যাবে যদি সাহস না থাকে “৷ এরপর আর কি ওইকাহিনির পর যেই আমাকে দেখে সেই বলে “আরে রানী লুঙ্গি দেখে কি কেউ ভয় পায় নাকি”
এমনকি এই কাহিনির ফলে আমার খালাতো ভাই আমার বার্থডেতে সাদা রঙের লুঙ্গিও গিফট করেছিলো।
তো এবার বুঝতেই পারছেন আমি কোন চিপায় আটকায় গেছি। এরপর আমি কাহিনি বানানোর চেষ্টা করছিলাম যে কিভাবে কি বলা যায়। আম্মা আবার জিজ্ঞেস করলো আমি এখানে কিভাবে কি আমি কাহিনি বানিয়ে কিছু বলবো তার আগেই একজন মেয়ে শরবত হাতে নিয়ে আসলো। ব্যস বড় বাচা বাচলাম। শরবত আমাকে দিলো এরপর আপুটা একটা লাইন বলল আর আমার আম্মা তারে রচনা শোনায় দিলো।
আপুঃ তুমি এত চিকন কেনো গো রানী। চিকন তাই শরির দুর্বলের কারনে হয়তো বেহুস হয়ে গেছো।
আম্মুঃ আর বইলো না মা এই রানীকে কতবার বলি খেতে। ওরে খেতে বললেই মাথা গরম। যতসব হাবিজাবি খাবে। এত বড় মেয়েকে এখনো ঝারুর সামনে বসিয়ে খাওয়াতে হয়।…
আরো অনেক কথা আর নাই বললাম মান সম্মান এর বিষয় 😀।এরপর আমি কিছু বলিনি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ওই রুম থেকে বের হয়ে ড্রইংরুমে এসে চোখ আমার কপালে” এমা এই ছেলে এখানে কি করে মানে রাসেল এখানে😱”
আমার চেহারা দেখে রাসেল আর শরবত ওলা আপু(রাসেলের ভাবি) মিটিমিটি হাসছে। আমি অবাক হওয়া চেহারা নিয়ে বাসায় আসলাম এরপর জানতে পারি যে আমি যেই গাড়ির পাশে বেহুস ছিলাম সেটা রাসেলের বড় ভাই রনির গাড়ি ওনি আমাকে বেহুস দেখে ওনার মা ও স্ত্রীকে খবর দেয় এরপর ওনারা আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায় । ঘরে নেওয়ার সময় রাসেল আমাকে দেখে অবাক হয় এরপর সে জানতে পারে যে আমি বেহুস আমার মা ও ভাবিকে খবর দেওয়া হয়। তারা আসে আর আমায় নিয়ে গেলো। ওইদিন আমার অনেক জ্বর আসে।
এই নিয়ে রাসেলের সাথে আমার তৃতীয় বারের মতো দেখা (রাস্তা ঘাটের দেখা হলো হয়তো সে আমাকে দেখে নয়তো আমি তাকে দেখি ভালোভাবে হঠাৎ দেখা আরকি) এভাবেই আমাদের হুটহাট দেখা হয়ে যেতো ওইদিন ওদের বাড়িও আমি চিনে ফেললাম। এখন কথা হলো ওদের বাড়ি যেখানে তার সামনে দিয়েই যেতে হবে স্কুলে। আর স্কুলে যাওয়ার দুইটা রাস্তা কিন্তু দুটো রাস্তা দিয়ে গেলেও তাদের বাড়ি পড়বেই।
এভাবে দিন যাচ্ছে সময় ভালোই কাটছিলো। রাসেলকে খুব একটা দেখা যেতো না পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।
তো আমি পরপর অনেকবার বেহুস হওয়ায় সবাই আমাকে অনেক আদর করতো আর আমি হতাম বড়লোক্স 😎। সবার থেকে টাকা নিতাম গিফট নিতাম সাথে অনেক ভালোবাসা।
লেখনীতেঃইনসিয়া আহমেদ হায়াত
দেখতে দেখতে রোজার ঈদ শেষ হলো বড় ভাবি ছোট ভাবি তারা তাদের বাবার বাড়িতে বেড়াতে চলে গেলো। তো
একদিন মা নেই খালার বাসায় গিয়েছে। আমি অনেক খুশি আম্মা নেই তাই আমি কি করলাম আম্মার আলমারি খুলে তার বিয়ের শাড়ি নিয়া পরে ফেললাম এই শাড়ির দিকে আমার অনেক আগে থেকেই নজর ছিল। এরপর আর কি শাড়ি পড়ে পুরা বাড়ি ঘুরতেছি কারন আম্মা নেই বাড়ি আমার। আব্বাও বাসায় নাই বড় ভাই অফিসে ছোট ভাই ঘুমাই আর বড় আপা তো তার জামাই এর বাড়িতে। তো প্রথমেই করলাম কি আম্মা তো তার সুকেশ কখনো ধরতে দেয় না আমি একে একে তার সব গুলো থালা বাসনে হাত ভুলাচ্ছি আজ সব গুলোতে নিজের হাতে ছাপ দিমু। ড্যাং ড্যাং করে ধরতে ধরতে হঠাৎ টুস করে আম্মার প্রিয় চায়ের কাপ পড়ে গেলো। এমন সময় ছোট ভাই দৌড় দিয়ে আসে সাথে কলিং বেল বাজলো। ছোট ভাই ডাকলেও সে আমার থেকে বড় মানে বাড়িতে আমিই ছোট । ভাই ৩৮ দাত বের করে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকায় আছে বুঝলাম হেতে আমার থেকে ঘুষ নিতে চায়। এরমাঝে কলিং বেলের আওয়াজে আমার মাথা কাজ করতাছে না। ভাই বলতাছে তারে আমার নতুন চকচকা ৫০০ টাকা দিয়ে দিতাম যেটা আমার বড় ভাই দিছিলো। ইয়ে মানে আমিই নিছিলাম চালাকি করে ভাইকে ফাদে ফেলে।
এরপর ভাইরে বুঝামু ভাই দিছে দৌড় আর খুলে দিছে দরজা। বিশ্বাস করো হায়াত আপু দরজা দিয়া মহারাজা আর মহারানী ভাবসাব নিয়ে ঢুকে আমাকে এইভাবে দেখে হা হয়ে আছে তাদের পেছনে তাদের দুই রাজপুত্রও হাজির আর আমি এক অবলা আসামী ভাবছি কিভাবে বাচবো সাতপাচ ভাবতে ভাবতে যেইনা আম্মায় কিছু বলব(আম্মাও ভাবতাছে আমারে ধোলাই শাড়ির জন্য দিবো নাকি চায়ের কাপের জন্য)
আম্মা কিছু বলার আগেই আমি ধপাস করে পড়ে গেছি মানে বেহুস আরকি। এরপর আর কি এই বেহুসের কারনে আমি আজ বেচে আছি। আসলে সেটা আমার এক্টিং ছিলো। বেহুসের কারনে প্রচুর আরাম সাথে বড় ভাই আমাকে আইসক্রিম খাওয়াইছে,ছোট ভাইয়ের থেকে ফুসকা খাইছি আর আম্মার বকুনি থেকে আব্বা বাচিয়েছে।
এভাবেই দিন পার করছিলা। ঈদের সময়ই রাসেলকে বেশি দেখা যেতো।
রোজার ঈদ শেষ হয়ে কোরবানির ঈদ শেষ আমাদের টেস্ট এক্সাম শেষ হলো তো আমি আমার বড় বোনের বাড়িতে গেলাম কিছুদিনের জন্য। তো আমার আবার বড় আপুর বিয়ের শাড়ি পড়ার খুব সখ। বাড়িতে আপা আর দুলাভাই তাদের বাচ্চা ছাড়া কেউ নাই তাই আপুরে বলে তার শাড়িটা পড়েছিলাম শাড়ি পড়ে অনেক গুলো ছবি তুললাম। ভাবলাম বেস্টুরে ছবি পাঠামু যেইভাবা সেই কাজ পাঠানোর আগে একবার কল দিয়েছি ধরে নাই ২ বার দিয়েছি ধরে নাই। জিদের ঠেলায় মাথায় সয়তানি বুদ্ধি এলো শাড়ি পড়ে সাজুগুজু করে কান্না কান্না ভাব নিয়ে অনেক গুলো ছবি তুললাম আর মেসেঞ্জারে দিলাম পাঠিয়ে। আর সাথে ইমোশনাল মেসেজ
” যখন তোমার কেউ ছিলো না তখন ছিলো রানী এখন তোমার সজিব আছে দেইখা আমি হলাম পানি।
সজিবকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো খুব তো বড় বড় কথা বলছিলা আমার বিয়েতে এই করবা সেই করবা যাও আজই চলে যাচ্ছি শ্বশুরবাড়ি দেখিস আমার জামাই এর ছবিও পাবি না তুই। সজিবকে নিয়া ভালো থাকিস আমি তো আর আপন না পর হয়ে গেছি🥺। আজ রাতে ওরা আমাকে নিয়ে যাবে ভাবলাম তুই আমার পাশে থাকবি কিন্তু তা আর হলো কোথায় আমার এত শত ফোন তুই ধরলি না ছি মারিয়া ছি এই ছিলো এতবছরের বন্ধুত্ব”
বিশাল বড় মেসেজ পাঠিয়ে ফোন অফ করে ফ্রেশ হয়ে দিলাম ঘুম আহা শান্তি লাগতাছে। আমার কল ধরো নাই এইবার বুঝো ঠেলা।
আমি আরামে দিলাম ঘুম শান্তি শান্তি ভাব নিয়ে
মারিয়া থাকো তুমি টেনশনে।
চলবে