গল্পঃকালো পাথর,পর্বঃএক
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)
মুখের ওপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ায় সিয়ামের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।সিয়াম চোখ খুলতেই দেখলো একটা মেয়ে ওর মুখোমুখি হয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।এই মেয়েটির নিঃশ্বাস ওর মুখের ওপর পড়ছে।সিয়াম আচমকা ওর পাশে একটা অপরিচিত মেয়েকে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লো।সিয়াম উঠে পড়ে বলতে লাগলো,”এই মেয়ে কে আপনি?।সিয়ামের কথা শুনে মেয়েটি চোখ খুললো তারপর হাই ফেলতে ফেলতে উঠে বসলো।তারপর বলল
->আপনার এখানে বসে থাকতে থাকতে আমি হঠাৎই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
->কিন্তু আপনি কে?
->আমার নাম অনাহিতা।আমি আপনাকে উদ্ধার করেছি।
->উদ্ধার করেছেন মানে?
তারপর সিয়াম চারদিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখন একটা অপরিচিত রুমে শুয়ে আছে।সিয়াম বুঝতে পারছে না সে এখন কোথায় আছে।সিয়ামের কানে পানির শব্দ আসছে,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ যেমন হয় ঠিক তেমন।সিয়ামকে চুপ থাকতে দেখে অনাহিতা ওর কাঁধে স্পর্শ করে বলল
->আপনি ঠিক আছেন তো?
অনাহিতার কথায় সিয়াম চমকে উঠলো তারপর বলল
->হ্যাঁ ঠিক আছি।
->আপনার নাম কি?
->সিয়াম।
->আপনার বাসা কোথায়?
সিয়াম বলতে যাবে কিন্তু সে আর বলতে পারছে না কারন তার মনেই আসছে না,সে এখানে কি করে আসলো,সে কে আর তার বাসায় বা কোথায়?নামটা মনে আছে এছাড়া আর বাকি কিছু মনে নেই ওর।সিয়াম অনেক ভাবার চেষ্টা করলো কিন্তু মনে করতে ব্যর্থ হলো।তারপর বলল
->আমার কিছু মনে আসছে না।
->আচ্ছা ঠিক আছে আপনি বিশ্রাম নিন।
সিয়াম আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো।সিয়ামের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ছাদে এক ধরনের নকশা করা।রুমের ভিতরটাও বেশ সুন্দর।রুমের একটা বিছানা,আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল রয়েছে।সব কয়টা কাঠের তৈরি।কাঠের ডিজাইন গুলো একটু পুরোনো দিনের মতো।সিয়াম ভাবছে,সে আসলে কে আর এখানে আসলো কি করে?কিছু মনে আসছে না কেন?আর হঠাৎ সবকিছু সে ভুলে গেলো কি করে?এসব ভাবতে ভাবতে সিয়ামের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো।সিয়াম আবার ঘুমিয়ে পড়ে।যখন সিয়ামের ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখলো ওর সামনে টেবিলের ওপর খাবারের প্লেট রাখা।সিয়াম ভাবতে লাগলো খাবার গুলো কে রেখে দিলো।এমন সময় অনাহিতা মেয়েটি এসে বলল
->আপনি উঠে পড়েছেন?আমি একটু আগে খাবার রেখে গেলাম।খেয়ে নিন।
->একটু ফ্রেশ হতে হবে।ওয়াশরুম কোথা বলে দিলে ভালো হতো।
->আচ্ছা আসুন।
অনাহিতা সিয়ামকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেলো।তারপর সিয়াম বাইরে এসে দাড়িয়ে চারদিকে তাকিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।চারদিকে সমুদ্র চোখে পড়ছে।সমুদ্রের মাঝখানে একটা দ্বীপ আর সেই দ্বীপের ওপরে একটা দুইতলা বাংলো টাইপের বিশাল বাড়ি।সেখানে সিয়াম রয়েছে।সিয়াম যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখান থেকে বেশ কিছুটা নিচে সমুদ্র।সিয়াম দাড়িয়ে আছে এমন সময় অনাহিতা মেয়েটি এসে ওর পাশে দাড়ালো।সিয়াম ওর দিকে এখন ভালো করে ওর দিকে তাকালো।মেয়েটি দেখতে উজ্জ্বল ফর্সা চেহারা।মুখে হাসি হাসি ভাব।চুল গুলো খোলা রেখেছে।খোলা চুল গুলো ঠান্ডা বাতাসে এলোমেলো হয়ে উড়ছে।আর মেয়েটি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সমুদ্র পানে চেয়ে রয়েছে।সিয়ামের ইচ্ছা করছিলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুল গুলো এক জায়গায় করে ওর কানে গুজে দিতে।কিন্তু একজন অপরিচিত মেয়ের ক্ষেত্রে এমন করাটা মোটেও সভা পাবে না।
সিয়াম মেয়েটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল
->এখানে আর কোনো বাড়িঘর দেখছি না যে?
অনাহিতা তখন সিয়ামের দিকে তাকিয়ে ওর চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে বলল
->না এখানে এই একটা মাত্র বাড়ি।আর কোনো বাড়ি ঘর নেই এখানে।
এমন কথা শুনে সিয়াম একটু নয় বেশ অবাক হলো।সিয়াম অবাক হয়ে মেয়েটিকে বলল
->তো এখানে কে কে থাকেন?
->আমি একা।
সিয়াম এবার আরো অবাক হয়ে যায়।একটা মেয়ে এই নির্জন দ্বীপে একা থাকে কি করে?আবার সে খাবারই বা পায় কোথায়?সিয়াম এসব ভাবছিলো তখন মেয়েটি নিজে থেকে বলে উঠে
->সপ্তাহে একদিন এখানে একটা জাহাজ এসে থামে আর আমি সেখান থেকে আমার যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিই।আর আমার কাছে একা জীবনটায় অনেক ভালো বুঝতে পেরেছেন।
সিয়াম ভাবছে মেয়েটি ওর মনের কথা জানলো কি করে?তারপর সিয়াম বলল
->ও তাহলে ভয় করে না আপনার?
->না তো ভয় করবে কেন?আমি কোনো ভয় পাইনা।
বেলা পেরিয়ে রাত নেমে এলো।চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।মাঝে মধ্যে বিশাল সমুদ্রের ঢেউ আছরে পড়ার শব্দ আসছে।রুমের ভিতর ছোট একটা লাইট জ্বলছে।সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যাটারি দিয়ে রাতে কাজ চালায় দিনে তেমন বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন পড়েনা।সিয়াম তার কথা মনে করার চেষ্টা করছে।সে আসলে কে?কিন্তু কিছুতেই সিয়ামের কিছু মনে আসছে না।এমন সময় অনাহিতা ওর রুমে এসে বলল
->কি করছেন একা একা বসে থেকে?
->এই তো ভাবছি যে আমি আসলে কে?আর আমার কোনো কিছু মনে নেই কেন?
->ও আচ্ছা।
->আপনি আমায় নাকি উদ্ধার করেছিলেন?আমায় কোথায় পেয়েছেন?
->আপনি সমুদ্রের ধারে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন।আমি সকালে হাঁটতে গিয়ে আপনাকে দেখতে পারি আর এখানে নিয়ে আসি।
->বুঝলাম।
সিয়াম কিছু সময় চুপ করে থাকলো তারপর অনাহিতাকে জিজ্ঞেস করে বসলো
->আমি তো ওজনে অনেক ভারি।একটা মেয়ে হয়ে আপনি আমায় এতদুর নিয়ে আসলেন কি করে?
সিয়ামের প্রশ্ন শুনে অনাহিতা বেশ থতমতর মধ্যে পড়ে গেলো।তারপর হেসে উঠে বলল
->মেয়ে বলে কি আমার গায়ে জোর নেই নাকি?কি মনে করেন আমায় হুম।আমারো গায়ে অনেক শক্তি আছে দেখতে চান আপনি?
->না না থাক দেখাতে হবে না।
->আচ্ছা তাহলে চলুন দুইজনে ডিনার করে শুয়ে পড়ি।আমার বেশ ক্ষিদে পেয়েছে।
সিয়াম কিছু না বলে অনাহিতার সাথে খেতে বসলো।রাতের খাবারের মেনুতে মাংস ভুনা আর রুটি রাখা।অনাহিতা বেশ কয়েকটা রুটি সহ মাংস ভুনা সিয়ামকে তুলে দিলো।সিয়াম খাবার সময় ভাবছে,ওর কেন জানি মনে হচ্ছে যে সে রুটি আর মাংস ভুনা খুব পছন্দ করে।আগেও সে অনেক খেয়েছে কিন্তু কোথায় খেয়েছে এটা মনে করতে পারছে না।সিয়ামের মাথায় আরেকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।সিয়াম জিজ্ঞেস করলো
->আমায় যখন পেয়েছিলেন তখন আমার গায়ে এখন যেটা পড়ে আছি সেটা ছিলো নাকি অন্য কাপড় ছিলো?
->অন্য পোশাক ছিলো।সেগুলো ভেজা ছিলো বলে আমি এই পোশাক পড়িয়ে দিয়েছি।
সিয়াম এই কথা শুনে চমকে উঠলো।তারপর সে বলল
->হায়রে,আমার সব শেষ।না জানি কি কি করছেন আপনি আমার সাথে?
তখন অনাহিতা ভ্রু কুচকে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বেশ রাগী গলায় বলল
->আমরা আপনাদের পুরুষদের মতো না যে সুযোগ পেয়ে কিছু করে বসবো।আর আপনি কেমন ছেলে একটা মেয়েকে এসব জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করলো না।আপনার শরীর ভেজা ছিলো তাই ঠান্ডা লেগে যাবে ভেবে পোশাক বদলে দিয়েছি।
সিয়াম মনে মনে ভাবলো মেয়েটাকে এসব জিজ্ঞেস করাটা উচিত হয়নি।তখন সিয়াম বলল
->আপনার এখানে নাকি আর কেউ থাকেনা তাহলে অন্য কারো পোশাক কোথায় পেলেন?
->এই যে মিস্টার শুনেন আপনি যে শার্ট-প্যান্ট পড়ে আছে এসব আমারই পোশাক বুঝেছেন।
সিয়াম ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।সেটা দেখে অনাহিতা বলল
->ওভাবে চোখ বড় করে তাকালে চোখ উপড়ে ফেলবো।এবার চুপচাপ খেয়ে নিন।
সিয়াম আর কোনো কথা না বলে খেতে লাগলো।খাওয়া শেষে সিয়াম শুয়ে আছে।অনাহিতা অন্যরুমে শুয়ে আছে।সিয়াম শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে।হঠাৎ কিছু একটার শব্দে সিয়ামের ঘুম ভেঙ্গে যায়।সিয়াম উঠে বসে পড়ে।তখন আওয়াজ আবার এলো।আওয়াজ অনেক কড়মড় করে কামড়ানোর মতো।অনেক সময় হাড় কামড়ালে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম আওয়াজ আসছে।সিয়াম একটু একটু ভয় পেলো।ক্রমশ সেই আওয়াজ যেন বেড়েই চলেছে।সিয়াম ভাবলো একবার গিয়ে দেখা যাক কিসের আওয়াজ হচ্ছে।সিয়াম দরজা খুলে বাইরে আসতেই সেই আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো।আর কোনো আওয়াজ ওর কানে আসছে না।সিয়াম ফিরে আসছিলো আর তখন পিছন থেকে অনাহিতা বলল
->কি ব্যাপার কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
সিয়াম তাকিয়ে দেখলো অনাহিতা ওর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।সিয়াম বলল
->না কিছু হয়নি।
->বুঝেছি আপনি ভয় পাচ্ছেন।কিছু মনে না করলে আমি আপনার সাথে থাকতে পারি।
->না থাক আমি থাকতে পারবো।
->আচ্ছা যান তাহলে।কোনো সমস্যা হলে ডাকবেন।
->হুম।
সিয়াম আবার এসে শুয়ে পড়লো।জানালা বরাবর বিছানা।সিয়াম জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।এমন সময় একটা মানুষের মতো কি যেন সরে গেলো।সিয়াম ভয় পেয়ে উঠে বসলো।একবার মনে হলো এটা ওর মনের ভুল।তাই সে উঠে জানালার সামনে যেতে দেখলো বাইরে শূন্যের ওপর দাড়িয়ে আছে এক মানুষ যার চোখ আর মুখ দিয়ে গলগল করে তাজা রক্ত বের হচ্ছে।চাঁদের আলোয় সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
চলবে,,,,,।