গল্পঃকালো_পাথর,পর্বঃতিন

গল্পঃকালো_পাথর,পর্বঃতিন
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

হঠাৎ কারো গোঙ্গানির মতো আওয়াজ পেয়ে সিয়াম অনাহিতার ঠোঁট ছেড়ে দিলো।সিয়াম অনাহিতার দিকে তাকালো তার মানে সেও শুনতে পেয়েছে।সিয়াম বলল
->এখানে আমরা বাদে আর কেউ কি আছে?
->আর তো কেউ নেই।আমরা দুইজনই তো এখানে।
এমন সময় আবার সেই গোঙ্গানির আওয়াজ হয়ে উঠলো।তবে মনে হলো এবার আওয়াজটা বেশ কাছে থেকে আসছে।সিয়াম উঠে পড়লো বিছানা থেকে দেখার জন্য যে কে এমন আওয়াজ করছে।অনাহিতাও সিয়ামের সাথে উঠে গেলো।সিয়াম জানালা দিয়ে বাইরে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না।তাই সে দরজা খুলে বাইরে আসলো।আর তখনি দেখলো ওদের ডান সাইডে মানুষের মতো কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।আর তার শরীর হতে পঁচা গন্ধ আসছে।যার কারনে সেখানে দাড়িয়ে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।সে কিছুক্ষণ পর পর এই রকম আওয়াজ করছে।সিয়াম বলল
->কে আপনি আর এই বাড়ির ভিতরে আসলেন কি করে?
সিয়ামের কথার কোনো জবাব এলো না।অনাহিতা তখন সেখানকার সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে দিলো আর তখন সে লোকটির ভয়ানক চেহারা ওদের চোখে পড়লো।তার পুরো শরীর একদম পচে গলে যাওয়া।চোখ উল্টে বের হয়ে আছে,ঠোঁট পঁচে খসে পড়েছে।এমন বিভৎস চেহারা দেখে অনাহিতা ভয়ে আৎকে উঠলো।সামনে থাকা ওই বিভৎস লোকটি ওদের ধরার জন্য এগিয়ে আসছে।সিয়াম উপায় না দেখে অনাহিতার হাত ধরে ওকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো।সেই বিভৎস লোকটি খোড়াতে খোড়াতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।অনাহিতা যে রুমে থাকতো দুইজনে সেই রুমে চলে গেলো।অনাহিতা একটা বাক্স হতে হিরার মতো দেখতে কালো রংয়ের পাথর বের করলো।সিয়াম বলল
->এটা কি?
->এটাই তো সেই জিনিস যেটা আমাদের টেলি পোর্ট করে এখানে নিয়ে এসেছে।আর এটা কি করে ব্যবহনর করতে হয় সেটা একমাত্র তুমি জানতে পেরেছিলে।
->ও।
সিয়াম অনাহিতার হাত থেকে পাথরটি নিয়ে নিলো।এমন সময় দরজা কেউ আঘাত করলো।দরজা দিকে তাকিয়ে দেখলো সেই বিভৎস লোক দরজার মধ্যে দিয়ে ওর হাত ঢুকিয়ে দরজা খানিকটা ভেঙ্গে ফেলেছে।সিয়াম অনাহিতাকে নিয়ে সেখানকার এক আলমারির ভিতরে উঠে পড়লো।অনাহিতা সিয়ামকে চুপিচুপি বলতে লাগলো
->তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো নয়তো আমরা দুইজন ওই বেটার হাতে মারা যাবো।
সিয়াম পাথরটা নাড়াচাড়া করতে লাগলো কিন্তু কিছু করতে পারছে না।আর তখন সে বিভৎস লোকটা দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়েছে।সিয়াম কি করবে বুঝে উঠে পারছে না।ওই বিভৎস লোকটা আলমারির দিকে এগিয়ে আসছে আর তখনি হঠাৎ দুইজন উধাও হয়ে গেলো সেখান থেকে।
সিয়াম আর অনাহিতা দুইজন হঠাৎ অন্য একটা জায়গায় নিজেদের দেখতে পেলো।এখন ওরা একদম জঙ্গলের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে।অনাহিতা বলল
->এটা আবার আমরা কোথায় চলে এলাম?
->মনে হচ্ছে ভুলে আমরা জঙ্গলে চলে এসেছি।
->হ্যাঁ।
->আমি এখনি অন্য জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
অনাহিতা সিয়ামের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।তার মানে সিয়ামের সব মনে পড়ে গেছে।অনাহিতা বলল
->তার মানে তোমার সব মনে পড়ে গেছে।
তখন সিয়াম অনাহিতার দিকে তাকালো আর বলল
->হুম।এই পাথরের ভুল ব্যবহার আমাদের অন্য জায়গায় টেলিপোর্ট করেছে সেই সাথে আমার স্মৃতি শক্তিতে বিরুপ প্রভাব ফেলেছিলো।এখন আমি ঠিক আছি।
অনাহিতা তখন হেসে উঠে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরলো।সিয়াম অনাহিতার কপালে একটা চুমু দিলো।তারপর বলল
->আমরা এখন ঠিক কোথায় আছি সেটা জানি না।আর এই মুহুর্তে আমাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরত যাওয়া ঠিক হবে না।তাহলে আবার ওরা আমাদের পিছু করবে।তাই আমরা এখন এই জঙ্গল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি চলো।
->এই পাথরের সাহায্যে কিন্তু খুব সহজে বের হতে পারবো।এটার ব্যবহার করো?
->এটার ব্যবহার কয়েক ঘন্টা পর পর করতে হয় নয়তো আবার এটার বিরুপ প্রভাব পড়বে।
->আমার বান্ধবীরা এখন কোথায় আছে কে জানে?ওদের যদি কিছু হয় তাহলে আমরা ওদের মা-বাবাকে কি জবাব দিবো?
->চিন্তা করো না ওদের সাথে তো আমার বন্ধুরাও আছে।আমার মন বলছে আমাদের খুজে না পাওয়া পর্যন্ত ওদের কেউ কিছু করবে না।
->হুমম।
সিয়াম অনাহিতাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।সবে সকাল হতে শুরু করেছে।অনাহিতা সিয়ামকে বলল
->আমাদের এতটা কষ্ট না করে উচিত হবে এই পাথর ওদের হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে বাঁচানো।
->অনি এই পাথর ওরা হাতে পেলে এমন সব কাজ করবে এতে করে শেষে মানুষের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
->হুমম তবে আমাদের রাত হবার আগে এখান থেকে বের হতে হবে নয়তো ওরা আবার আমাদের পিছু পড়বে।
->হুমম।

ঘটনাটা শুরু হয় আজ থেকে কয়েকমাস আগে।সিয়ামের ছোটবেলা থেকে রহস্যময় জিনিস,জায়গা এসব ব্যাপারে জানার আগ্রহ অনেক বেশি ছিলো।সেটা দেখে ওর এক আত্মীয় খুরশেদ হোসেন সিয়াম নিজের সাথে কাজে নেন।উনি এসব নিয়ে কাজ করতেন।খুরশেদ কিছুদিন আগে এক প্রাচীন মমির খোঁজ পান যেটা বিদেশ থেকে আনতে হয়।আর এয়ারপোর্টে থেকে সেটা আনার দায়িত্ব পড়ে সিয়ামের ওপর।মমি এনে যেখানে রাখা হয় সিয়াম সেখানে যায়।সিয়াম সেই মমি দেখার আগ্রহ ধরে রাখতে না পেরে সেটার ঢাকনা খুলে ফেলে।মমিটা ছিলো হাজার বছরের পুরোনো।মমির দিকে তাকিয়ে সে বেশ অবাক হয়ে যায় এটা না তো কোনো মানুষের মমি না কোনো প্রাণীর মমি।যেটা ছিলো একদম অদ্ভুত।চেহারা শিয়ালের মতো কিন্তু গলা হতে কোমড়ের আগ পর্যন্ত মানুষের মতো।আর পা অনেকটা ঘোড়ার পায়ের মতো।সিয়াম মমিটা দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়।আর তখন সেই মমির বাক্সের মধ্যে আরো একটা ছোটো বাক্স খুজে পায়।সেই বাক্স খুলতে বেরিয়ে আসে একটা কালো রংয়ের পাথর সাথে একটা কাগজ।সিয়াম কাগজ খুলে পড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় কারন লেখা গুলো ছিলো একদম অন্য ধরনের।এমন সময় সেখানকার অফিসের সহকারি সিয়ামকে দেখে বলে
->একি!তুমি স্যারের পারমিশন ছাড়া এই মমিতে হাত দিয়েছো কোন সাহসে?
এই কথা শুনতেই সিয়ামের হাত থেকে সেই পাথর মমির ভিতরে পড়ে গেলো।তখন সিয়াম বলল
->আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
->তাড়াতাড়ি আসেন।
সিয়াম তখন পাথর আর ওই কাগজ হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলেন আসলো।সিয়াম চলে যাওয়ার একটু বাদে মমির মধ্যে বেগুনি রংয়ের রশ্মি বের হতে লাগলো।যে রশ্মি থেকে তৈরি হলো আরো কয়েকজনের অবয়ব।
সিয়াম বাসায় এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো।অনেক ঘাটাঘাটি করে সেই লেখাটি ট্রান্সলেশন করতে সফল হলো।ওই কাগজটিতে পাথরের সম্পর্কে লেখা।এখানে লেখা পাথরের ক্ষমতা সম্পর্কে।সিয়াম পাথরের ক্ষমতা সম্পর্কে পড়ে আশ্চর্য হয়ে গেলো।এমন সময় সিয়ামের ফোন এলো।সিয়াম ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অনাহিতা ফোন করেছে।সিয়াম ফোন রিসিভ করতে অনাহিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল
->সিয়াম তুমি আমায় বাঁচাও প্লিজ।আমার মা-বাবা আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।তুমি প্লিজ কিছু একটা করো।কালই বিয়ে পড়িয়ে দিবে।আমি তুমি ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।
অনাহিতার কথা শুনে সিয়াম চমকে যায় এখন কি করবে সে?সিয়াম বলে
->চিন্তা করো না আমি ব্যবস্থা করছি।
সিয়াম ফোন রেখে দিয়ে তাড়াতাড়ি ওর মা-বাবাকে বিষয়টা জানায়।তখন সিয়ামের বাবা রাজি থাকলেও সিয়ামের মা রাজি হয়না।তাই সিয়ামের বাবা সিয়ামের বন্ধুদের সাথে নিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়।সিয়ামের দুইজন বন্ধু জাহিদ,আর রাকিব।আর অনাহিতার বান্ধবি ইসরাত আর লিমা উপস্থিত থেকে সেদিন দুইজনের বিয়ে পড়িয়ে দেয়।আর অনাহিতার বাবা-মা যেন কোনো সমস্যা করতে না পারে সেজন্য সিয়ামের বাবা ওদের দুইজনকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।সবকিছু ঠান্ডা হলে ফিরে আসতে বলে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here