আমি_তোমার_গল্প_হবো,পর্ব: ০৪,০৫
জাহান আরা
পর্ব: ০৪
রাহেলা বানু নাতনীদের স্কুলে নেয়ার রেডি হয়ে বের হয়ে এলেন,ড্রয়িং রুমে এসে অশ্রু,বিন্দু বলে ডাক দিতেই দুই বোন হুড়মুড় করে ছুটে এলো।নানীর হাতে স্কুল ব্যাগ দেখে একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো।তারপর আবার চিৎকার করে বললো,”আজ আমাদের স্কুল বন্ধ,আজ আমাদের আনন্দ নানী।”
“কে বললো স্কুল বন্ধ? ”
“শ্রাবণ মামা বলেছে আজকে বন্ধ,আমরা আজকে যাবো না।”
রাহেলা বানু হা করে তাকিয়ে রইলেন।দুই বোন তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার দৌড় লাগালো নিজেদের রুমের দিকে।
শ্রাবণ প্যান্ট শার্ট পড়ে,গায়ে বডি স্প্রে মেখে রুম থেকে বের হতেই রাহেলা বানুর মুখোমুখি হয়ে যায়।
“তুই নাকি বলেছিস আজকে স্কুল বন্ধ?”
গাল চুলকাতে চুলকাতে শ্রাবণ বলে,”আসলে হয়েছে কি খালা,আমি এরকম কিছু বলতে চাই নাই,কিন্তু কেমনে জানি আমার মুখ দিয়ে বের হইয়া গেছে।আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেও ভেবে পাচ্ছি না কেমনে এই কথা বললাম আমি ওদের।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাহেলা বানু বললো,”শ্রাবইন্না,চাপা একটু কম মারিস বাপ,আর বলিস না মিথ্যা কথা।”
একগাল হেসে শ্রাবণ খালার দিকে তাকায়।শ্রাবণ জানে হাসি দেখলে খালা আর কিছু বলতে পারবে না।
শ্রাবণের পকেটে ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে শ্রাবণীর নাম।রিসিভ করবে নাকি করবে না ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেলো।শ্রাবণী শ্রাবণের ছোট বোন,ভীষণ জেদি মেয়ে,অসম্ভব মেধাবী ও বটে।
শ্রাবণের ভাবনাচিন্তার মধ্যেই আবারও ফোন দিলো শ্রাবণী।
ফোন রিসিভ করতেই শ্রাবণ শুনতে পেলো ওপাশ থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে,নিরাপদ দূরত্ব রেখে ফোন কানের কাছে নিতেই শুনতে পেলো,”শ্রাবইন্নার বাইচ্চা,তিন কোনাইচ্চা,তুই আবারও আমার পার্স থেকে টাকা নিছস?
বুইড়া দামড়া পোলা,তোর শরম করে না?
তোর কি টাকার অভাব পড়ছে রে উল্লুক,এতো অভাব হইলে তুই তিন রাস্তার মোড়ে গিয়া বস বাটি নিয়া,ছ্যাচড়া কোনাহানের,এই তুই কেমনে টিচার হইছস বল তো আমারে,এখনো যে পোলা ছোট বোনের পার্সের টাকা চুরি করে সে আর স্টুডেন্ট কে কি শিক্ষা দেয় আল্লাহ জানে,তুই বাসায় আসিস আজকে,আব্বা তোর জন্য শলার ঝাড়ু রেডি রাখছে।”
শ্রাবণীর সব কথা শোনার পর শ্রাবণ একটা হাই তুললো তারপর গলা যথেষ্ট খাদে নামিয়ে বললো,”আমি এখন খালার বাসায় আছি বুঝলি ফ্যাচফ্যাচানি,খালা কইলো শুনলাম প্রলয়রে নাকি বিয়া করাইবো….”
প্রলয়ের নাম শুনতেই শ্রাবণী চুপসে গেলো।মিনমিন করে বললো,”প্রলয় ভাই….আমার কি তাতে?”
“তুই কি ভাবছস আমি বুঝি না কিছু,বইখাতা সব কিছুতে যে P+S লিখে রাখছস,তা কি এমনি এমনি?
যাই হোক,আমার কাছে একটা ডায়েরি ও আছে তোর,আমি ভাবছি আজকে বাড়ি গেলে সসম্মানে সেটা আম্মার হাতে তুলে দিবো,ধর বেলুন,মোমবাতি,তারাবাতি হাবিজাবি যা আছে তা দিয়ে বাসাটা সাজাইলাম,তারপর একটা অনুষ্ঠানের মতো করে ডায়েরিটা আম্মার হাতে তুলে দিলাম। আম্মা ডায়েরি মোড়ক উন্মোচন করবে,আমরা সবাই হাত তালি দিবো।আম্মার এক পাশে থাকবে বেত,অন্যপাশে থাকবে ডালঘুটনি।একপাতা করে আম্মা পড়বে,আমি হাত তালি দিবো।তোর কি হাল হবে তা আর না বলি,সাক্ষাতে সেটা বলা হবে।হাজার হোক আম্মা ঘরের কর্ত্রী।এরকম একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ আম্মা অতি উৎসাহের সহিত করবে।
আর এতে হয়তো প্রলয়ের আমাদের বাসায় আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে,যাকগা,আমার কি!
তোর টাকা দিয়ে দিবো আজকেই বাসায় এসে।”
শ্রাবণী ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,”ভাই,ভাই,ভাই না আমার,তোর বিকাশ একাউন্ট আছে না,আমি এখনই আরো ১৫০০ টাকা পাঠাচ্ছি ভাইয়া,আমরা ভাইবোন,আমাদের প্রব্লেম আমরা সলভ করবো,আব্বা আম্মা কেনো আসবে এসবের মাঝে বল?”
শার্টের কলার উঁচু করতে করতে শ্রাবণ বললো,”তাইলে আরো ৫০০ লাগবে।”
“ঠিক আছে ভাইয়া দিচ্ছি।”
“সাথে বিকাশ চার্জ ও লাগবে।”
দাঁত কিড়মিড়িয়ে শ্রাবণী বলে উঠলো,”তাও দিবো রে মীরজাফর ভাই আমার,মনে রাখিস এই দিন তো দিন না,আরো দিন আছে,এই দিনরে লইয়া যাইবো সেই দিনের কাছে।”
শ্রাবণ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খটাস করে শ্রাবণী ফোন কেটে দিলো।শ্রাবণ বসে মুচকি হাসতে লাগলো।
খালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শ্রাবণ চলে গেলো,ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে তার।যাবার আগে ভেবেছিলো একবার শবনমের কাছে যাবে কিন্তু লজ্জায় যেতে পারে নি।
শবনম কে অশ্রু বিন্দুর কাছে রেখে রাহেলা বানু মর্জিনাকে নিয়ে শপিংয়ে বের হলেন।
সোফায় বসে শবনম নখের শেইপ ঠিক করছে নেইল কাটার দিয়ে।
কলিং বেল বেজে উঠতেই শবনম গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
গলায় মাফলার পেঁচিয়ে হাতে বক্স,পেঁটরা নিয়ে,টকটকে লাল পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলে প্রবেশ করলো বাসায়।শবনম কিছুটা অবাক হলো এরকম বেশভূষা দেখে ছেলেটার।এই প্রচন্ড শীতেও ছেলেটা একটা পাঞ্জাবি পরে আছে,আর গলায় একটা মাফলার।মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। মাথার চুল লম্বা হতে হতে ঘাড় বেয়ে নেমে গেছে।অনেকটা বনমানুষের মতো লাগছে ছেলেটাকে।
মনে মনে শংকিত হয়ে উঠলো শবনম,এই লোক কে?
বলা নেই,কওয়া নেই,হুট করে বাসায় ঢুকে গেলো।ঢুকলো তো ঢুকলো,একেবারে সোফায় বসে গেছে গিয়ে!
শহরে বদ লোকের অভাব নেই,কে জানে কি মতলব এই লোকের।
শবনম কিছু বলার আগে ছেলেটা বললো,”নতুন বুয়া না-কি?
যাও তো,কড়া লিকারের এক কাপ চা খাওয়াও আমাকে।আমি একটু আরাম করে বসি এখানে।”
লোকটার কথা শুনে শবনমের চক্ষু চড়কগাছ!
বলে কি লোকটা?
তাকে বুয়া বলছে!
আবার চা বানিয়ে খাওয়ানোর ফরমায়েস ও দিচ্ছে?
রাগে শবনমের গা জ্বলতে লাগলো।কিন্তু কিচ্ছু না বলে কিচেনের দিকে গেলো।আর যাই হোক শবনম বুঝতে পেরেছে ছেলেটা এই বাসার কেউ অথবা এদের আত্মীয় কেউ।আদা দিয়ে চমৎকার এক কাপ চা বানিয়ে এনে শবনম টেবিলের উপর রাখলো।একটু জোরে শব্দ করেই পিরিচটা রাখলো।
প্রলয়ের হালকা চোখ লেগে এসেছে,ঠাস করে শব্দ শুনে চমকে উঠে সোফায় বসলো প্রলয়।তারপর শবনমের দিকে তাকিয়ে বললো,”ভেরি ব্যাড,নেক্সট টাইম এরকম করবে না আর।আমার ঘুমের সময় কোনো শব্দ না,পিনপতন নিরবতা চাই আমার।মা কী তোমাকে এসব আগে বলে দেয় নি?”
শবনমের ইচ্ছে করছে কাপের সবটুকু চা লোকটার গায়ে ঢেলে দিতে,দাঁত কামড়ে ধরে রাগ সামলায় শবনম।
চা’য়ে চুমুক দিয়ে প্রলয় শবনমের দিকে তাকায়।তারপর বলে,”চা ভালো হয়েছে।শুধুমাত্র এই কারণে তোমার আজকের ভুল ক্ষমা করে দিলাম আমি বুয়া।
রাগে শবনমের গাল,কান লাল হয়ে উঠলো। এই অপমানের প্রতিশোধ নিবেই নিবে শবনম।
চলবে….?
#আমি_তোমার_গল্প_হবো
পর্ব:০৫
জাহান আরা
চা’য়ের পর্ব শেষ করে প্রলয় কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।মাথায় একটা ভোঁতা যন্ত্রণা অনুভব করছে।ইচ্ছে করছে মাথার চুল সব ছিঁড়ে ফেলতে প্রলয়ের।
ঔষধ খেতে হবে উঠে,কিন্ত অলসতার জন্য উঠতে ইচ্ছে করছে না তার।
অগত্যা আবারও চিৎকার করতে লাগলো বুয়া বুয়া বলে।
শবনম নিজের রুমে গিয়ে সবে মাত্র বসেছে।ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে সে।
বাহিরে প্রলয়ের বুয়া বুয়া বলে চিৎকার শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো শবনম। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে লক্ষ্য করলো কোন এঙ্গেল থেকে তাকে বুয়া বলে মনে হয়।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কিছু প্রসাধনী নিয়ে মুখে লাগালো।তারপর একটা পিংক কালার লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগালো।এতে যদি প্রলয়ের মনে হয় সে বুয়া না। প্রলয়ের ষাঁড়ের মতো চেঁচানো শুনে আর থাকতে পারলো না শবনম।
প্রলয়ের সামনে এসে দাঁড়াতেই প্রলয় বললো,”কাজ ফাঁকি দিয়ে কি করছো বুয়া?
ও আচ্ছা,সাজগোজ করছো রুমে গিয়ে না?
আচ্ছা,তোমরা মেয়েরা কিভাবে পারো বলো তো বুয়া,মুখে ৩ ইঞ্চি মেকাপের আস্তরণ দেওয়া এমনিতেই তোমার,তার উপর ঠোঁট ভর্তি লিপস্টিক লাগিয়েছো।
মাথাব্যথাটা বাঁড়িয়ে দিলে তুমি আমার এরকম উদ্ভট মেকাপ করে।
যাও আমাকে একটা প্যারাসিটামল দিয়ে যাও। ”
প্রলয়ের মুখে এসব কথা শুনে শবনমের মাথা ভোঁভোঁ করতে ঘুরতে লাগলো। কি বলছে এই ছেলে এসব?
৩ ইঞ্চি মেকাপের আস্তরণ লাগিয়েছে মানে কী?
প্রলয় কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে সোফা থেকে উঠিয়ে নিলো।তারপর বেসিনের সামনে গিয়ে মুখে সাবান ঘষতে লাগলো।প্রলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে শবনমের কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো।
অনেকক্ষণ ধরে মুখ ঘষার পর শবনম মুখ ধুয়ে প্রলয়ের দিকে তাকালো,তারপর বললো,”হয়েছে এবার?
দেখেছেন এবার আমি মুখে কতো ইঞ্চি মেকাপের আস্তরণ লাগিয়েছি?
আর শুনে রাখুন,আমি কোনো বুয়া না,আমি শবনম,অশ্রু-বিন্দুর টিচার,নেক্সট টাইম বুয়া বুয়া করবেন না আমাকে,কল মি শবনম।আর কোথায় ঔষধ রাখা আছে আমি তা জানি না।নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজে খুঁজে নিন,ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
একটুখানি যাওয়ার পর শবনম পিছন ফিরে তাকালো আবার,তারপর প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”এক্সকিউজ মি,আপনি যে আধপাগলা একজন মানুষ এর আগে কি কেউ আপনাকে জানায় নি বিষয়টা?
ইউ নিড প্রোপার ট্রিটমেন্ট,ইউ গো টু আ সাইক্রিয়াটিস্ট”
কথাটা বলেই গটগট করে রুমের দিকে চলে গেলো শবনম। প্রলয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আপনাআপনি বলে উঠলো,”আশ্চর্য,মেয়েটা এতো রাগ করলো কেনো?
এতো রাগের কি আছে?”
কোথাও ঔষধ খুঁজে না পেয়ে প্রলয় অশ্রু আর বিন্দুকে ডাকতে শুরু করলো।দুই বোন জড়াজড়ি করে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।
বোনের মেয়েদের বিছানার পাশে বসে প্রলয় দুজনের কপালে চুমু খেলো।তারপর অপলক তাকিয়ে দেখতে লাগলো দুজনকে।
দেখতে দেখতে প্রলয়ের দুচোখ ভিজে এলো,বুকের ভিতর বাঁধভাঙা কান্নারা মিছিল তুলেছে বের হয়ে আসার জন্য।আচমকা প্রলয়ের যেনো কি হয়ে গেলো।অশ্রু,বিন্দুর পাগুলো জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো সে।
কান্নার শব্দ শুনে শবনম কিছুটা আশ্চর্য হলো।বাসায় সে আর বাচ্চা দুটো একা,আর আধপগলা একটা লোক বসে আছে সোফায়,তবে কাঁদছে কে?
সেই আধাপাগলা লোকটা নয়তো?
কিন্তু কেনো কাঁদছে?
তবে কি শবনমের ধারণা ঠিক?
লোকটি সত্যি পাগল?
পা টিপে টিপে শবনম কান্নার উৎসস্থলের দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর দেয়ালের সাথে মিশে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো অশ্রু-বিন্দুর রুমের দিকে।যেই দৃশ্য দেখলো তাতে শবনমের মন খারাপ হয়ে গেলো। আধপাগলা লোকটা কাঁদছে বাচ্চা দুটোর পা জড়িয়ে ধরে,ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে লোকটা।
শবনম অবাক হলো।মানুষের কতো রূপ।
এই লোকটাকেই কিছুক্ষণ আগে শবনমের মনে হয়েছে আধ-পাগলা অথচ সেই আধ পাগলা লোকটাই পরম ভালোবেসে বাচ্চা দুটোমে জড়িয়ে কাঁদছে।
কি অদ্ভুত!
শবনম যেভাবে এসেছে সেভাবে আবার পা টিপে টিপে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
.
রাহেলা বানু আর মর্জিনা বাসায় ফিরে কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে গেলো।রাহেলা বানু হা করে রইলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে তাকিয়ে।
প্রলয় লজ্জা পেয়ে বললো,”মা এভাবে দেখছো কেনো দূর,আমার লজ্জা লাগছে তো!”
কথাটা শুনে শবনমের হাসি পেয়ে গেলো।হেসে ফেলে বললো,”ইশ,ন্যাকামি!”
রাহেলা বানু ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,”এতোদিন পর মনে পড়লো তোর মার কথা,বাসার কথা?”
প্রলয় কিছু না বলে মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মা ছেলের মিলন পর্ব শেষ হতেই রাহেলা শবনম কে ডাক দিলেন,তারপর প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,”প্রলয়,ও শবনম,বাবুদের টিচার,আর শবনম,এ আমার ছেলে,আমার একমাত্র সন্তান প্রলয়।”
বিড়বিড় করে শবনম বললো,”খালা একটা উপযুক্ত নামই রেখেছেন ছেলের জন্য,এতোক্ষণ আমার সাথে যা করেছে তা আমার জন্য একপ্রকার প্রলয়-ই বলা চলে।”
শবনম কে বিড়বিড় করতে দেখে প্রলয় বললো,”উনি টিচার?
মা আমি ভেবেছি উনি মে বি আমাদের নতুন বুয়া হবে,যাইহোক মা আমি কিন্তু ওনাকে বুয়া বলেই ডাকবো।”
রাহেলা বানু চোখ বড় করে ছেলের দিকে তাকালেন।প্রলয় হাহা করে হাসতে হাসতে নিজের রুমের দিকে গেলো।
শবনমের দিকে তাকিয়ে রাহেলা বললেন,”কিছু মনে করো না মা,আমার ছেলেটা একটু বেশি দুষ্ট,সবাইকে এভাবে ক্ষ্যাপায় সারাক্ষণ। ওর ব্যবহারে কষ্ট পেও না মা।ভিতরে ভিতরে আমার প্রলয় ভীষণ নরম মনের মানুষ। ”
মুচকি হেসে শবনম রুমের দিকে চলে গেলো কিছু না বলে।
একটু পর রাহেলা বানু ডাক দিলেন শবনম আর প্রলয় কে খেতে বসার জন্য।
খেতে বসেই প্রলয় চিৎকার করে বললো,”এতোদিন পরে এলাম আর মা কিনা মাছ রেঁধেছো?
এখন মাছের কাঁটা বাঁছবে কে আর মাছ খাবে কে?
দূর মা,মাছই খাবো না আমি।”
প্লেটের মাছ রেখে দিয়ে আলুভাজি তুলে নিলো প্রলয়।
ঘুম থেকে উঠে অশ্রু বিন্দু দুই বোনের চোখ কপালে উঠে গেছে যেনো।পুরো রুমটা ওদের পছন্দের বার্বিডলের বড় বড় স্টিকার দিয়ে সাজানো।দুজনের দুই বিছানাতে ডলের চাদর,দুইটা সোফা ভর্তি পুতুল দিয়ে।
দুই বোন মামা মামা করে চিৎকার দিতে দিতে বের হয়ে গেলো।
প্রলয় দুপুরের খাবার খেতে বসেছে টেবিলে। দুজন গিয়ে দুই দিকে থেকে মামাকে জড়িয়ে ধরলো। যেনো বহুদিন পরে ওরা প্রাণ ফিরে পেয়েছে ওদের।
প্রলয় চিৎকার করে বললো,”আরে ছাড়,খেতে দে না রে মা,খাবারটা খেয়ে নিই আমি।”
কে শুনে কার কথা।দুজন প্রলয়ের দুই কাঁধে উঠে বসলো।তারপর বললো,”আমরা ও ভাত খাবো মামা তোমার হাতে।”
“সাত আসমানের উপর উঠে বসলে আমি কিভাবে খাওয়াবো তোদের বল?
আগে নিচে নাম,খাওয়া হলে কাঁধে উঠে বসিস।”
মামার কথামতো দুই বোন নেমে গেলো।
শবনম আবারও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটু আগে যেই মানুষটা মাছের কাঁটা বেঁছে খাবার ভয়ে প্লেট থেকে মাছ তুলে রাখলো,সেই আবার প্লেটে মাছ নিয়ে অশ্রু,বিন্দুকে যত্নসহকারে খাওয়াতে লাগলো।মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো শবনমের।
মা কোথায় আর সে কোথায়?
ইশ,যেনো পেরিয়ে গেছে কতো হাজার বছর,যুগ,শতাব্দী মা’কে ছাড়া। এভাবে তো মা ও খাইয়েছে তাকে।
অথচ আজ কতো দূরত্ব!
কি আশ্চর্য জীবন মানুষের!
নিজের স্বার্থে টান লাগলে ভুলে যায় মুহুর্তেই অতীতের সবকিছু।
মানুষ বড় স্বার্থপর, যার জলজ্যান্ত প্রমাণ সে নিজেই।
চলবে????