তার_শহরের_মায়া সিজন ২ 💜,পার্ট_২,৩
Writer_Liza_moni
পার্ট_২
বিকেল গড়িয়ে আসছে।অনুর এখনো বাড়িতে আসার নাম নেই। বাড়ির সদর দরজার সামনে বসে অপেক্ষা করছেন অনুর মা।কলেজ ছুটি হয় বেলা ২ টায়।আর এখন প্রায় ৩:৫৬ বাজে।এত সময় কখনও লাগে না অনুর।২০ মিনিটেই বাড়ি এসে পৌঁছায় মেয়েটা। কিন্তু আজ এত দেরী হচ্ছে কেন তা বুঝতে পারছেন না অনুর মা।
.
.
মাহিরের সাথে হাঁটছে তো হাঁটছেই। দুই জনই চুপ করে আছে।
নিরবতা ভেঙ্গে অনু বললো,,
অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা চিন্তা করছেন হয়তো। আপনি যা বলবেন তা না হয় রাতে কলে বইলেন।
মাহির পাশ ফিরে অনুর দিকে তাকালো। হাঁটা থামিয়ে বললো,,,
“অনু আমি তোকে ভালবাসি না।এটা একটা ডেয়ার ছিল।যা পূরন করার জন্য তোর সাথে এমনটা করতে হলো।”
মাহিরের কথায় অনুর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। কেমন যেন লাগছে তার। অসহ্য মনে হচ্ছে সব কিছু।
চোখে মুখে অন্ধকারের আভা।
আপনি মজা করছেন তাই না?
না আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াস।
অনু কী বলবে আর? তার মুখের কথা হারিয়ে গেছে। অদ্ভুত তো।
আমি বাড়িতে যাবো।
তুই কি সিরিয়াস ছিলি এই সম্পর্কে?
আমার ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যাবো।
মাহির আর কিছু বললো না। বাইকের দিকে হাঁটতে লাগলো।
অনুর পা চলছে না। প্রথম প্রেম তাকে এই ভাবে ধোঁকা দিলো? তার অনুভূতি এত ঠুনকো?
.
.
অনুর বাড়ির গেটের সামনে এসে বাইক থামায় মাহির।অনু একটা ঘোরের মাঝে আছে।
বাইক থেকে নেমে গেটের ভেতরে ঢুকার সময় পেছন ফিরে মাহিরের দিকে তাকিয়ে অনু বললো,,
দিত্বীয় বার ডেয়ার খেলবেন না।
মাহির মাথা নিচু করে বাইক স্টার্ট দিল।
অনু কাতর কন্ঠে মাহিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,
থেকে যান না আমার হয়ে। আমি যে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
অনুর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। অদ্ভুত এই পৃথিবীর অদ্ভুত সব মানুষ।
সেদিনের পর থেকে মাহিরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল অনু।কার্টেসি রক্ষা করার জন্য আজ আবার কথা বললো।
,,,বর্তমান,,,
অতীতের ভাবনা থেকে বের হয়ে বেলকনি থেকে রুমে আসলো অনু।রাত এখন প্রায় ২টা বাজে। চোখ জুড়ে ঘুমেদের ভীড়। একটু ঘুমানো উচিত এখন।
বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বেশি সময় লাগলো না ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে।
.
.
অনু,এই অনু দিনের কয়টা বাজে দেখেছিস?
ঘুমন্ত অনু নড়ে চড়ে উঠলো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,,
কয়টা বাজে?
তনু জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রোদ এসে অনুর মুখের উপর পড়ে।অনু বিরক্তিকর শব্দ করে চোখের উপর হাত রাখলো।
উঠে পর।১০ টা বাজে।
অনু শোয়া থেকে উঠে চোখ ডলে তনুর দিকে তাকালো।হাই তুলে বললো তুই আজ স্কুলে যাস নাই?
তনু বিছানায় বসে বললো না।আজ ছুটি নিয়েছি। ঘুরতে যাবো।
ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে অনুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সত্যি? অনেক দিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না।
যা ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা করে নে। একটু পরেই বের হয়ে যাবো।
.
.
অনু ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।রাত জেগে থাকাটা যেনো তার বাজে অভ্যাস হয়ে গেছে। গভীর রাতকে ও তার সন্ধ্যা মনে হয়। অদ্ভুত মেয়ে।
অনু ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে এসে মুখ মুছে মায়ের কাছে রান্না ঘরে চলে গেল।
অনু কে দেখে অনুর মা বলে উঠলো,,
তুই এত দেরী করে ঘুম থেকে উঠিস কেন? রাতে নিশ্চয় দেরি করে ঘুমাস?
অনু মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,, ঘুম আসতে দেরি হয় এই জন্যই।
নিজের শরীরের দিকে দেখেছিস?দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। ঠিক মতো ঘুমায় না। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে না। নামাজ কালাম তো মনে হয় বাদ পড়েছে। এমন হলে কে বিয়ে করবে তোকে?এত শুকিয়ে গেছিস যে ফুঁ দিলে উড়ে যাবি।
মায়ের কথা শুনে অনু হাসলো।
মা অনুর হাত ধরে বললো,,
আমাকে একটা কথা বলতো সোনা।
কী কথা আম্মু?
তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?ভালোবাসিস কাউকে?
অনুর মুখটা মলিন হয়ে গেল।
হুম বাসি তো মা। অনেক ভালোবাসি। সেই অনেক দিন আগে থেকেই ভালোবাসি। বছর তিন পেরিয়ে চারে পড়বে। খুব ভালোবাসি তারে। কিন্তু সে আমার অনূভুতির মূল্য দেয়নি মা। আমার অনূভুতি নিয়ে খেলেছে।
মনে মনে কথা গুলো বললেও মুখে কিছু বললো না অনু।
ঠোঁটের কোণে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো,,
আরে আম্মু কী যে বলো না। আমি আবার কাউকে ভালোবাসবো।এটা বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় তোমার?এই সব প্রেমে আমার এলার্জি আছে।
অনুর মা সন্দিহান দৃষ্টিতে অনুর মুখের দিকে তাকালো।
শুন,,
প্রেম করিস আর যাই করিস,, ভেবে চিনতে করবি।একটি প্রবাদ আছে জানিস তো?
ভাবিয়া করিও কাজ,,,করিয়া ভাবি ও না।
আর এই যুগের ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে আমি কম দেখেছি।চার দিকে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বিচ্ছেদ,বিরহ, বেদনা,যন্ত্রনা, আর ও কত কি। আমি তোর মা হয়ে না, তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বলছি,জিদ করে ঢাকায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছিস। ভুল কিছুতে জড়িয়ে যাইস না। তাহলে সারা জীবন আফসোস করে মরবি।
আমার মতো।
বলেই অনুর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মায়ের কথা শুনে অনুর ভ্রু কুঁচকে গেলো।
তুমি কি কাউকে ভালোবাসতে আম্মু?
অনুর মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,অন্য দিন বলবো। এখন কাজ করছি।যা এখান থেকে।
.
.
অনু আর কিছু বললো না।চলে আসলো সেখান থেকে। রুমে আসার সময় অনুর চোখ পড়ে তনুর রুমের দিকে।তনু ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।অন্যরকম কথা।যাকে বলে প্রেমকথন।অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।প্রেম প্রেম খেলায় মত্ত সবাই।না জানি এর শেষ পরিণতি কী হয়?
অনু গিয়ে তনুর রুমে ঢুকলো।
তনুকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই অনু বলে উঠলো,, আমার ঘুরতে যেতে মন চাইছে না। তোর ইচ্ছে হলে যা। আমি যাবো না।
তনু কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অনু রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
.
তনু মোবাইলে কথা শেষ করে অনুর রুমে গেল। অনুর সামনে যেয়ে বলল সমস্যা নেই বনু,আমিও যাচ্ছি না। আজকে আমাকে স্কুলে যাইতে হবে। একটা মিটিং বসবে বলল টিচার্স মিটিং।
অনু মৃদু হাসল। তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
চল আমিও তোর সাথে স্কুলে যাই।ছোট ছোট বাচ্চাদের কে দেখতে খুব ভাল্লাগে।
তনু বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
ঠিক আছে।তুই তৈরি হয়েনে।
.
.
তনু,আর অনু স্কুলে যেতে যেতে প্রায় অনেক দেরি হয়ে যায়। মিটিং রুমে সবাই তনুর জন্য অপেক্ষা করছিলো।তনু যেতেই মিটিং শুরু হয়।
অনু স্কুলের বারান্দায় বসে বসে বোর হচ্ছে। কোথায় ভাবলো এখানে এসে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে মজা করবে।
কিন্তু সব শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং বসায় তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।অনু একা একা হাঁটতে লাগলো।
স্কুলের মাঠের বা দিকে একটা কাঠ বাদাম গাছ আছে। নিরিবিলি জায়গাটা দেখে অনু সেই দিকে এগিয়ে গেল।এই স্কুলটা তার নিজের ও।তার শিক্ষাজীবনের শুরু হয় এই স্কুল থেকে।
প্রায় আধঘন্টা পর তনু অনু কে কল
করে জানায় স্কুলের দিকে আসতে। টিচার্স রুমে। প্রিন্সিপাল স্যার তার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।অনু সে দিকে চললো।
পরিচিত অনেক টিচার আছেন এখনো স্কুলে।যদি ও এখনকার প্রিন্সিপাল স্যার তার শিক্ষক না। কয়েকজন সহকারি শিক্ষকই আছেন।যারা অনু কে ছোট থেকে চিনেন।
টিচার্স রুমে গিয়ে সবার সাথে দেখা করল অনু।
.
.
স্কুল থেকে ফিরে তনু দুপুরের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্লান্ত ছিল সে।
বিকেল চারটা।সূর্যের তাপ নেই এখন তেমন একটা।
অনু ছাদের দোলনায় বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে সাতকাহন পড়ছে। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। হালকা বাঁকানো চুল গুলো মৃদু বাতাসে উড়ছে। গোসলের পর চুল ছেড়ে দিয়েছে শুকানোর জন্য।আর বাঁধে নি। সাতকাহন পড়ায় মগ্ন সে।
হঠাৎ কেউ তার হাত থেকে বইটা ছো মেরে নিয়ে নিলো।অনু বেশ রেগে গেলো এই কাজে।তনু অনুর সামনে দাঁড়িয়ে বইটা উল্টে পাল্টে দেখছে।
সব সময় মজা একদম ভালো লাগে না আপু।বইটা দে। তুই না ঘুমাচ্ছিলি?এখানে আসলি কেন?
তনু অনুর পাশে গিয়ে দোলনায় বসে বললো,,
তোকে একটা সিক্রেট কথা বলি শোন,,
আমি এখন কিচ্ছু শুনবো না। তুই বইটা দে।
আরে দিচ্ছি তো।আগে আমার কথা শোন।
বিরক্ত হয়ে গেলো অনু। বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো,,
তাড়াতাড়ি বলে বইটা দিয়ে এখান থেকে যা।
তনু উঠে দাঁড়ালো। রেলিং এর কাছে যেতে যেতে বললো,,
আমার আর মাহিরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
চলবে,,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৩
#Writer_Liza_moni
প্রচন্ড ঝড়ের পর প্রকৃতি যেমন শান্ত নীরব থাকে তনুর কথা শুনে অনু ও ঠিক তেমনি শান্ত হয়ে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক কেমন রিয়েকশন করা উচিত অনু তা বুঝতে পারছে না।তাকে খুবই শান্ত দেখাচ্ছে।
অনু তনুর কাছে গিয়ে বললো,,
বিয়ে কবে?আর আমাকে কিছু জানায়নি কেন?
সারপ্রাইজ ছিল। শুধু তোর জন্য। অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,
অনেক বড় সারপ্রাইজ দিলিরে। যে সারপ্রাইজের জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম না ধন্যবাদ।
সামনের মাসেই বিয়ে। তুই একেবারে বিয়ে শেষ হলে তার পর যাবি।
অনু মুচকি হেসে বললো,,
তোর বিয়েতে আমার কত্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।কত আনন্দ হবে। অনেক মজা করবো তোর বিয়েতে। আমার একটা মাত্র বড় আপুর বিয়ে বলে কথা।
অনুর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তনু। তার পর নিজেই হেসে দেয়।
অনু ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে তনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
তো কত দিনের সম্পর্ক তোদের?
তনু ও অনুর সাথে গিয়ে দাঁড়ালো।পাশ ফিরে এক পলক অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ রাখলো আকাশে। তার পর বললো,,
১ বছর।
বাহ।আর আমি জানতে ও পারলাম না।
তুই তো ঢাকায় ছিলি। কেমনে জানবি?
সেটাই তো। কেমনে জানমু? জানানোর মতো তো কোনো মাধ্যমই নাই।
অনুর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট।তনু ঠোঁট কামড়ে হাসলো।থাক অভিমান করুক।
.
.
বিছানার ঠিক মাঝখানে কোলে বালিশ রেখে গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অনু।
উপর থেকে ও সবার উপরে রাগ করেছে। কেন তাকে জানানো হয় নি যে তনুর বিয়ে সামনের মাসের পাঁচ তারিখে।আর এক সপ্তাহ বাকি।
অদ্ভুত হলেও সত্য যে,
অনুর তেমন একটা খারাপ লাগছে না।তনু আর মাহিরের বিয়েতে। কেমন জানি খাপছাড়া মনে হচ্ছে তার কাছে।
কিশোরী বয়সের আবেগ কী তাহলে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে?
অনুইই বনু আমার রাগ করিস না জানু।
আমিই বারন করছি আম্মু আব্বু কে।যেনো তোকে না বলে বিয়ের কথা।
অনু কিছু বললো না। চুপ করে বিছানার চাদরের দিকে চেয়ে রইলো।
খারাপ লাগছে কিছুটা। তবে সেটা কে প্রকাশ করতে চায় না সে।
আগামী কাল মাহির,মাহিমা,তনু আর অনু তোরা শপিং এ যাবি।
আর অনু শোন,,
তনুর বিয়ের গয়না গুলোর সাথে তোর জন্য একটা সিম্পেল ডিজাইনের চারটা চুড়ি বানাতে দিয়েছি। দেখিস তো পছন্দ হয় কিনা তোর।
বাহ বাহ।তলে তলে তো অনেক কিছু করে ফেলছো। অথচ আমি জানি না।
তুই জেনে এমন কি মহান কাজ করে উল্টায় ফেলতি শুনি?
বাড়ির ছোট মেয়ে ছোট মেয়ের মতো থাকবি।এত রাগ জেদ আসে কই থেকে?
উঁচু গলায় বললো অনুর আম্মু।
অনু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপুইইই মিসেস আফরোজা আমারে বকা দিছে।
এর বিচার কর।
আমি আজ কে আব্বু আসলে বিচার দিবো তো।যে মিসেস আফরোজা তনু সাহেবার আম্মু আমাকে বকা দিছে।আশুক আজকে আব্বু আমি বলবো তো।
অনুর কথা শুনে মা আর তনু হাসতে হাসতে শেষ। মেয়েটার বড় হলো না। বাচ্চাই রয়ে গেল।
.
.
বেলা প্রায় দশটা হবে।শপিং মলের সামনে দাড়িয়ে আছে অনু,তনু,মাহির,মাহিমা।
সময় যত যাচ্ছে সূর্যের তাপ তত বাড়ছে।অনু ঘেমে নেয়ে একাকার খুব।অস্বস্তি লাগছে তার।
আজ শুধু অনু আর মাহিমার জন্য শপিং করবে। চাইলে তুমিও করতে পারো তনু।
সব খরচ আমার।
তনু অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
সুযোগের সদ্ব্যবহার কর অনু।যা যা কিনতে মন চাইবে সব কিনে নিবি।
অনু অবাক হয়ে তাকায় তনুর মুখের দিকে। নিজের হবু বর কে ফকির করার বুদ্ধি দিচ্ছে তার বোন। সিরিয়াসলি আপু?
যা বলছি তা কর।পারলে আমার জন্য ও কিনিস।
তনুর কান্ডে অনু ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেছে। প্রথম কোনো বউ বলছে তার বরকে একদম ফকির করে দিতে।
.
.
অনু তেমন কিছুই কিনলো না।যা কিনেছে সব তনুর জন্য।শাড়ি,চুড়ি, জুতা।সব তনুর জন্য পছন্দ করেছে সে।
গয়নার দোকানে গিয়ে মায়ের পছন্দের বানানো চুড়ি দেখে অনুর মন ছুঁয়ে গেছে।হাতে একদম ঠিকঠাক মাপে হয়েছে। মায়ের চয়েস সব সময় সুন্দর।
শপিং করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ২টা বেজে যায়। বাড়িতে এসে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করে সতেজ হয়ে যায় অনু। দুপুরের খাবার না খেয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা রাখতে যাবে এমন সময় অনুর আম্মু এসে বলে,,
এই এখন আর ঘুমাতে হবে না। আমি ভাত আনছি খেয়ে তার পর ঘুমা।
অনু বিরক্ত হয়ে বললো,,
উফফ আম্মু তুমি ও না,,
অনুর আম্মু বিছানায় বসে হাত ধুয়ে ভাত মাখিয়ে অনুর মুখের সামনে ধরতেই অনু হেসে দিলো। হোস্টেলে থাকলে এত যত্ন কেউ করে না।
মায়ের হাতে খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো
তোমরা আম্মু রা এত্ত ভালো কেন?
মেয়ের কথা শুনে হাসলেন আফরোজা।
.
.
বাড়ি সাজানোর জন্য ডেকোরেশনের লোকজন চলে এসেছে। আগামী কাল তনুর গাঁয়ে হলুদ।
দূরের আত্মীয়রা সব চলে এসেছেন।অনুর নানুর বাড়ির সবাই আগামীকাল সকালে আসবেন।মাহিরের হলুদের কাজ শেষ হলে। খালামনি দুজন মাহির দের বাড়িতে না গিয়ে অনুদের বাড়িতে চলে আসেন।অনুর ফুফু তিন জন ও সকালে চলে আসে।সব কাজিনরা মিলে তনু কে ঘিরে বসে আছে।
তনুর রুমের আলমারির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুজে তনুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আরাফাত। তনুর ফুফাতো ভাই।
অনু ছাদে ডেকোরেশন এর লোকদের দেখিয়ে দিচ্ছে ফুল কোন দিকে লাগাবে? রঙিন কাগজ কোন দিকে লাগাবে? মাতব্বরি করছে সে।এক দম স্বাভাবিক ভাবে আছে অনু। হালকা খারাপ লাগা কাজ করলে ও প্রচন্ড খারাপ লাগা তাকে কেন ছুঁতে পারছে না আজ, তা নিয়ে নিজেই অবাক হচ্ছে অনু।
.
.
এই অনুপি,,
মিষ্টি একটা কন্ঠের ডাকে অনু পেছন ফিরে তাকায়।
চার বছরের ছোট্ট পরি কে দেখে মুচকি হেসে পরিকে কোলে নিয়ে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল। কাজিন দলের সব থেকে ছোট্ট সদস্য হলো পরি। পিচ্চির নাম যেমন পরি,, পিচ্চি দেখতেও পরির মতো।
ওলে আমাল পরিটা,,কত দিন পর দেখছি পুচকিটাকে।
পরির গালে আবারো চুমু খেলো অনু।
পরি ও অনুর গালে ছোট্ট ঠোঁটের স্পর্শ করে দিয়ে বললো,,
তুমাতে কত্ত মিস কততি।
ওলে আমাল বাবুনিটা। আমি ও তো তোমাকে কত্ত মিস করছি সোনা।
তনুপির কাতে যাবো।
অনু পরি কে নিয়ে তনুর রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। তনুর রুমে এসে দেখে সব গুলো কাজিন তনু কে ঘিরে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
বাবারে বাবা।তোরা সবাই মিলে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছিস।আর আমাকে এত্ত এত্ত কাজ করতে হচ্ছে।
অনু পরি কে তনুর কোলে দিয়ে,,
নিজের রুমে চলে গেল। বাড়িতে মেহমান আসলে নিজের রুমটা আর দখলে থাকবে না তার। সকালে মায়ের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে একটা তালা জোগাড় করে রেখেছে।
নিজের থাকার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। না হলে আর রাতে ঘুমানোর চিন্তা বাদ দিতে হবে।
.
.
.
বিয়ের আমেজ বিরাজ করছে অনুদের বাড়িতে। আত্মীয় স্বজনের জন্য ঘর ভরে গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চাদের চিল্লাচিল্লিতে মুখরিত বিয়ে বাড়ি।
হলুদের ছোঁয়া নেওয়ার জন্য তৈরি তনু।
ছাদে সব কাজিনরা মিলে তনুর সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত।
সবার জোড়া জুরিতে শাড়ি পরতে বাধ্য হয় অনু। হলুদ রঙের শাড়ির সাথে হলুদ কাঁচের চুড়ি। হলুদ পাথরের ঝুমকা।খোলা চুল। ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তনু কে দেখছে।সবার ছবি তোলা শেষ হলে সে তুলবে। তনুর সাথে ছবি।
চলবে,,, 🍁