অন্ধকার_পল্লী,Part:৭,৮,৯

অন্ধকার_পল্লী,Part:৭,৮,৯
Tabassum_Riana
Part:৭

পরপর দুইদিন অবনী এসেছিলো আফিনকে দেখতে।আফিনের রান্না থেকে শুরু করে ওর শরীর মুছে দেয়া,নিজ হাতে খাইয়ে দেয়া সব করেছে অবনী।লোকটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে ও।লোকটার যত্ন নেয়া ওর কাছে দায়িত্ব থেকে আরো বেশি কিছু মনে হচ্ছে।আপনজন না হলে ও হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে সে অবনীর।আবার এমন কি রোজ রাতে ভিডিও কলে অবনী কে দেখেছে আফিন।আর অবনী পড়াশুনা করেছে।মাঝে মধ্যে আফিনের কথায় দুএকটা জবাব ও দিয়েছে।
দুইদিনের একটা লোকের জন্য এমন অনুভব হওয়াটা বেশ অদ্ভুত লাগে।কিন্তু অবনীর ক্ষেত্রে এমন টা হচ্ছে।না চাইতে ও আফিনকে নিজের হৃদয়ে জায়গা দিতে শুরু করেছে ও।তিনদিন এর দিন অবনী আফিনের বাসায় এলো।আজ একটু দূর্বল তারপর ও আগের থেকে ভালো আছে আফিন।আজ অবনীদের কলেজে অনুষ্ঠান ছিলো যার কারনে একটা মিষ্টি কালারের শাড়ী পরে এসেছে অবনী।আফিন রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।নুপুরের শব্দে মাথা তুলে তাকায় আফিন।পরনে শাড়ী,খোলা চুল, হালকা সাজ হাতে কিছু চুড়ি,কপালে টিপ সত্যি এতোটা অসাধারন লাগবে ভাবনাতীত ছিলো আফিনের।কখনো পরী দেখেনি আফিন কিন্তু আজ বুঝতে পারলো পরী কেমন?পরী স্বয়ং যে ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

চাঁদ ও আজ লজ্জা পাবে অবনীকে দেখে।অবনীর সৌন্দর্য লক্ষ চাঁদ তারা কে হারিয়ে দিয়েছে।

আফিনের এভাবে ওর দিকে এক নজর তাকানোয় খানিকটা লজ্জা পায় অবনী।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অবনী।আফিন উঠে দাঁড়িয়ে অবনীর দিকে এগোলো।অবনী পিছুচ্ছে আর আফিন ওর দিকে এগিয়ে আসছে।পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো অবনী।অাফিন অবনীর সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হাত রাখলো।পরীর মতো লাগছে আপনাকে।সেটাকি জানেন আপনি?আফিন মুচকি হেসে বলে উঠে।অবনী মাথা তুলে তাকায় আফিনের দিকে।অবনীর গাল নাক লাল হয়ে এসেছে।কাঁধের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলোর ফাঁকে ফর্সা কাঁধ দৃশ্যমান অবনীর।অজানতেই দুহাতে অবনীর কোমড়ে হাত রাখলো আফিন।কিছুটা কেঁপে উঠলো অবনী।লোকটাকে সরাতে হবে কিন্তু কি করে?পারছেনা যে অবনী।অবনী কে একটু উঁচু করে ওর নাকে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।অবনীর চোখ জোড়া আকস্মিকতার উচ্চতায় পৌছে গেছে।নাকে আর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অবনীর চুলে মুখ ডুবিয়ে ওর কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ালো অাফিন।অবনী সোজা দাঁড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে এসব কি করছে এই লোক?।অবনীর হৃদকম্পন খুব দ্রুত গতিতে চলছে।

স্যার আপনার রান্না!!!!!! ওদের দেখে মেয়েটি থেমে গেলো।আফিন সরে এলো অবনী থেকে।

অবনী শাড়ী ঠিক করতে করতে বেরিয়ে গেলো।পাকঘরে এসে দাঁড়ালো অবনী।রান্নায় মন দিতে হবে ওর।ওসব ভাবলে চলবেনা।কোমড়ে আঁচল গুঁজে রান্বা করতে লাগলো অবনী।সিড়ি থেকে মুগ্ধতার সাথে অবনীকে দেখছে আফিন।একদম বৌ বৌ লাগছে মেয়েটাকে।নেক্সট উইক ও আমেরিকায় যাবে।পাঁচদিনের ট্রিপ থেকে এসে অবনীকে নিজের করে নিবে আফিন।বিয়ে করে নিবে অবনীকে।কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো আফিন।নিজের রুমে চলে গেলো আফিন।অবনী রান্না সেরে খাবার নিয়ে আফিনের দিকে প্লেট ধরলো।অন্য সময় হলে খাইয়ে দিতো অবনী।প্লেট দেখে উপরে তাকালো আফিন।হা করে আছে আফিন এই মনে করে যে অবনী ওকে খাইয়ে দেবে।কি হলো প্লেট নিয়ে খেয়ে নিন খাবারটা।বলে উঠলো অবনী।না মানে খাইয়ে দেবেননা?প্রশ্ন করলো আফিন।না আপনি তো এখন সুস্থ আছেন।বলে উঠলো অবনী।অবনীর কথায় কিছুটা রাগ করে ওর হাত থেকে প্লেট নিয়ে অন্যদিকে রেখে দিলো আফিন ভাতের প্লেটটা।কি হলো?খাবেন না?রান্না ভালো লাগেনি?আবার রান্না করবো?এক নাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকে অবনী।নাহ আমি তো এখন সুস্থ খেতে হবে না আমার।অভিমানী কন্ঠে বলল আফিন।
ওহ এই কথা?প্লেটটা নিয়ে আফিনের সামনে এসে বসলো অবনী।নিন খাইয়ে দিচ্ছি।

আফিন অন্যদিকে ফিরে আছে।আরে বাবা খাইয়ে দিচ্ছি তো হা করুন।বলে উঠলো অবনী।অাফিন হালকা হেসে খাবারটা খেয়ে নিলো।বাবারে বাবা এতো রাগ আপনার?

কিছুটা মজার ছলে বলল অবনী।শুনো কাউকে আপনি করে বলিনা আমি।এতোদিন তোমাকে আপনি করে বলতে গিয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।এখন থেকে তুমি করেই বলবো তোমাকে।কি মনে করো না করো I don’t care.গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।এতক্ষন আফিনের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলে ও এবার নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসলো অবনী।আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করেই বলবেন।এবার শেষ করে নিন ভাতটা।আফিনের মুখে আরেক লোকমা ভাত তুলে দিয়ে বলল অবনী।আচ্ছা এখানে প্রতিদিন আসো সমস্যা হয়না তোমার বাসায়?খেতে খেতে বলল আফিন।নাহ আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।বলে উঠলো অবনী।Oh thats good.বলে উঠলো আফিন।সন্ধ্যা নামার আগেই বেরিয়ে পড়লো অবনী।আজ রাতে ও ল্যাপটপের সামনে বসে অবনীকে দেখছে আফিন।অার অবনী পড়ছে মাথা নিচু করে।গুনগুন করে অবনীকে শুনিয়ে গান গাইতে লাগলো আফিন “যদি বৌ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগবে গো।আফিনের গানে মাথা তুলে তাকায় অবনী।জি?কিছু বললেন?প্রশ্ন করলো অবনী।না পড়ো তুমি।বলল আফিন।অবনী চুপচাপ পড়তে লাগলো।আর আফিন একনজরে শুধু অবনীকেই দেখছে।চোখ ফেরানো দায় মেয়েটার থেকে।অবনী ও আড়চোখে আফিনকে দেখে আবার পড়ায় মনযোগ দিচ্ছে।এভাবে তিনদিন চলে গেলো।আফিন অবনীর বাসার গলির সামনে গাড়ি থামালো।অবনী বের হতেই আফিন অবনীর হাত ধরে টেনে ওর গালে চুমু একেঁ দিলো।

চোখ বড় করে ফেলল অবনী।অাফিন সরতেই অবনী বলল খুব সাহস হয়েছে আপনার?শেষমেষ রাস্তায় বলে জিভ কাঁটলো অবনী।

আফিন হেসে সামনে তাকালো। অবনী বেরিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলো।পিছনে ফিরে আফিনকে একবার দেখে নিলো অবনী।আফিন অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।বাসার একটু কাছে এগুতেই বখাটে মামুন অবনীর হাত টেনে ধরলো।সুন্দরী আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো।এই রসোগোল্লা নষ্ট হবে যে নাহলে।আসো জানু।তোমাকে অাদর দিবো অনেক।অবনী ওর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে।হঠাৎ মামুনের হাতে সজোরে লাথি বসিয়ে দিলো কেউ।মামুন অবনীর হাত ছেড়ে নিচে পড়ে গেছে।আফিন অবনীর কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে।আফিনের গার্ডরা বখাটে গুলোকে এসে মারতে লাগলো।অবনীকে বাসার গেটে ঢুকিয়ে দিলো আফিন।বাসায় যাও।বলে উঠলো আফিন।অবনী অাফিনের হাত ধরলো।আপনি আসেন।বলে উঠলো অবনী।না অবনী।তুমি বাসায় যাও।বলে চলে যেতে লাগলো আফিন।অবনী আফিনের হাত টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলো।চলুন বলে অবনী আফিনকে নিয়ে বাসায় এলো।অবনী এটা কে মা?আফিন কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন আমেনা বেগম।মা ও আমার ফ্রেন্ড।রাস্তায় বখাটে গুলো বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।বলে উঠলো অবনী।

ওহ।বলে উঠলেন আমেনা বেগম।বাবা বসো সোফায়।আফসানা যা ওনার জন্য পানি নিয়ে আয়।আমেনা বেগম বলে উঠলো।রহমত সাহেব ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন।কে বাবা তুমি?প্রশ্ন করে উঠলেন অবনীর বাবা।

বাবা রাস্তায় মামুন বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।ওর নাম আফিন আমার বন্ধু।বলে উঠলো অবনী।ওহ বলে রহমত সাহেব আফিনের দিকে তাকালো।আমেনা যাও আফিন বাবার জন্য রান্না করো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।না আঙ্কেল আমার যেতে হবে।বলে উঠলো আফিন।না বাবা বসো।বললেন রহমত সাহেব।অবনী আর আমেনা বেগম রান্না করতে চলে গেলো।রহমত সাহেব বাহিরে গেলেন কোন এক কাজে।আফসানা আফিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।আফিন আফসানার দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকালো।আমি কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনেছি।বলে উঠলো আফসানা।কি করে?প্রশ্ন করলো আফিন।আপনি আপুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন সেটা আর কেউ না দেখলে ও আমি দেখেছি।বলেই হাসলো আফসানা।ওহ তাই?প্রশ্ন করলো আফিন।হুম।আপনি যদি চান আমি কথা গুলো বাবা মার থেকে গোপন রাখতে পারি।একটা শর্ত আছে।বলে উঠলো আফসানা।কি শর্ত ভ্রু কুঁচকালো আফিন।আমি জানি আপনি আপুকে লাভ করেন। সেদিক থেকে আমি আপনার শালী।তো কিছুতো গিফট করতেই হয় শালীর মুখ বন্ধ রাখতে।কি গিফট চায় আমার কিউট শালীটা?মায়া ভরা কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফিন।আপু আমার সব চকোলেট খেয়ে ফেলে আপনি আমাকে অনেক গুলো।চকলেট গিফট করবেন।বলল আফসানা।তোমার আপুর চকোলেট পছন্দ?জিজ্ঞেস করলো আফিন।পছন্দ মানে?আপু চকোলেট পেলে বাবু হয়ে যায়।বলল আফসানা।

দুইদিন পর আমেরিকায় যাবো।তখন তোমাদের জন্য অনেক গুলো চকোলেট আনবো।বলল আফিন।অবনী থেমে গেলো আফিনের কথা শুনে।আমেরিকায় যাবেন ওনি?

চলবে

#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:৮
,
,
, আফিন অবনীকে এক ঝলক দেখলো পর্দার ফাঁকে।ভেজা চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।লাল একটি স্যালোয়ার কামিজ পরে আছে অবনী।সাদা উড়না টা আকাশে উড়ছে।গোসলের পর যদি কাউকে এতো সুন্দর লাগে তাহলে সেটা শুধুই অবনী।ওর রুপের মোহনীয়তা বড়ই গভীর।আফসানা আছে নাহলে অবনীকে ছুঁয়ে দিতে পারতো আফিন।অবনী এসে আফসানাকে বলল ওনাকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে আয়।বলে আর দাঁড়ালো না অবনী চলে এলো সেখান থেকে।আফসানা আফিনের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল চলুন।আফিন আফসানার সাথে উঠে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে পড়লো।রহমত সাহেব আফিনের পাশে এসে বসলো।আফিন কে ভীষন আদরে খাওয়ালেন রহমত সাহেব একদম নিজের ছেলের মতো।খাবার শেষে চা পান করে উঠে পড়লো আফিন।রহমত সাহেব কে বলে উঠলো আঙ্কেল আজ আসি।দুদিন পর আমার আমেরিকা যেতে হবে।
আমেরিকা যাবা।ভালো,তা কয়দিন থাকবা বাবা?প্রশ্ন করে উঠলেন রহমত সাহেব।পাঁচ দিন পর আঙ্কেল বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো অবনীর।কেউ যেন ওর গলা চেপে ধরে রেখেছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর।আফিনের দিকে আর তাকাতে পারলোনা অবনী। আফিনের দিকে তাকালে অবনীর চোখের পানি বাঁধা মানবেনা।সবার থেকে বিদায় নিয়ে অবনীর দিকে তাকায় আফিন।আসি? বলে উঠলো আফিন।অবনী মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।অবনীর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রহমত সাহেবের দিকে তাকালো আফিন। আঙ্কেল আসি?বলে উঠলো আফিন।জি বাবা আবার এসো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।আফিন বেরিয়ে গেলো।খাটে বসে আছে অবনী।কেন এমন লাগছে ওর?আফিনের চলে যাওয়াটা কেন ওকে এতো কষ্ট দিচ্ছে?ভালো মতো শ্বাস নিতে পারছেনা অবনী।মাথাটা ভার ভার লাগছে।খাটে শরীর এলিয়ে দিলো অবনী।
সন্ধ্যায় অবনী পড়তে বসেছে। ওর সামনে আফিন ভিডিও কলে ওকে দেখছে।ঘন্টাখানেক পর্যন্ত আফিন অবনীকে দেখছে আর কথা বলছে কিন্তু অবনী এ পর্যন্ত একটাবার ও আফিনের দিকে তাকায়নি।হালকা পাতলা কথার উত্তর দিয়ে গেছে।কিছুক্ষন এসব সহ্য করার পর আফিন ভ্রু কুঁচকে অবনীর দিকে তাকালো।কি প্রবলেম তোমার?ভারি গলায় প্রশ্ন করলো আফিন।বইয়ের দিকে তাকিয়ে অবনী বলতে লাগলো কোন প্রবলেম নেই।আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে অবনী।লুক এট মি!রাগী গলায় বলল আফিন।অবনী বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।অবনী লুক এট মি!!!।আজ আসার সময় ও কোন কথা বললা না?কেন?ধমক দিয়ে বলল আফিন।ভালো লাগছিলো না।মাথা ব্যাথা করছিলো।মাথা নিচু করে বলল অবনী।
,
,
,
,
,

আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে?তাকাচ্ছোনা কেন আমার দিকে?রাগী গলায়,প্রশ্ন করলো আফিন।এবার অবনী কেঁদেই দিলো।হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগলো অবনী।অবনীর কান্না দেখে আফিনের মাথা খারাপ হবার যোগাড়।অবনী বলো কি হয়েছে?ঐ ছেলে গুলো কিছু করেনি তো?বলো অবনী?প্লিজ চুপ থেকোনা ড্যম ইট আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।জাস্ট সে হোয়াট হ্যাপেনড?আপনি আমেরিকায় যাবেন বলেননি কেন আমাকে?কাঁদতে কাঁদতে বলল অবনী।আফিন এবার চরম ঝটকা খেলো।ওর জন্য কাঁদছিলো অবনী?ভাবতেই মনটা ভরে গেলো আফিনের্।আরে মাত্র পাঁচদিনের জন্যইতো?চলে আসবো তো।বলে উঠলো আফিন।না গেলে হয় না?কেঁদে প্রশ্ন করলো অবনী।আমাকে ছাড়া এ কাজ টা হবেনা।বলে উঠলো আফিন।যে কয়দিন আছি তুমি আমার সাথে কাঁটাবা।দুদিন আছি আর মাত্র।এই দুটোদিন আমার সাথে থাকবা ওকে?অবনীকে বলল আফিন।চোখ মুছে নিলো অবনী।কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল সত্যি?হুম!!! বলে উঠলো আফিন।মুচকি হেসে আফিনের দিকে তাকালো অবনী।খাবার টা কেমন হয়েছিলো?প্রশ্ন করলো অবনী।
মুরগীর কারিটা অসাম ছিলো।আর ইলিশের ঝাল কারিটা অসাধারন।ভর্তা ছিলো না একটা?গ্রিন কালার বলতে লাগলো আফিন।আফিনের গ্রীন ভর্তার কথা শুনে হেসে বলতে লাগলো অবনী।আরে পাগল ওটা সীম আর ইলিশ মাছের ভর্তা ছিলোওহ ইয়াপ সীম আর ইলিশ মাছ।বাট সব কিছুই জোস ছিলো।অবনীর দিকে তাকিয়ে নেশা ধরানো কন্ঠে বলতে লাগলো আফিন।আফিনের এই কন্ঠের পাগল অবনী।একটা শব্দই অবনীর শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ট।
,
,
,
,
,
অবনী আর কিছু বলতে পারছেনা।নিষ্পলক ভাবে আফিনকে দেখছে অবনী।আফিন অবনীকে দেখছে মন ভরে।এই দেখার তো কোন শেষ নেই।এভাবে কিছুসময় চলে গেলো।হঠাৎ আফসানা অবনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।দেখে ফেলেছি হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলল আফসানা। আফসানার কথায় ভয় পেয়ে গেলো অবনী।অবনীর গলা জড়িয়ে আফসানা হাসতে লাগলো।অাফিন ও হাসছে।অবনী অবাক চোখে আফসানা আর আফিনকে দেখছে।আফসানা এবার বলল দেখেছো জিজু আপির চেহারা দেখার মতো হয়েছে।বলেই হাসতে লাগলো আফসানা।এবার অবনীর ঘোর কাঁটলো।জ জিজু কে জিজু?অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।ঐ যে স্মার্ট ড্যাসিং ভাইয়াটা।বলে উঠলো আফসানা।চুপ থাক বেশি বুঝিস কোন জিজু টিজু না।বলে উঠলো অবনী।এভাবে হাসি রসের মাঝেই রাতটা কেঁটে গেলো অবনীদের।সকালে আফিনের কলে ঘুম ভাঙ্গলো অবনীর।ঘুমঘুম চোখে আফিনের কল রিসিভ করলো অবনী।হ্যালো!!!!!ঘুমন্ত গলায় বলল অবনী।
ঘুম এখন ও ভাঙ্গেনি?বলে উঠলো অাফিন।
উমম মাত্র উঠলাম।বসতে বসতে বলল অবনী।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি আধঘন্টার মাঝেই আসছি।বলেই কল কেঁটে দিলো আফিন।খোপা করা চুল গুলো খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।
,
,
,
,
,
অবনীকে কলেজে দিয়ে অফিসে চলে গেলো আফিন।ক্লাশের পুরোটা সময় আফিনকে ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো অবনীর।আর আফিন তো কাজে মন বসাতে পারছিলোনা।অবনীর কান্নার দৃশ্য আফিনের চোখজোড়ার সামনে ভেসে উঠলো।আফিনের গাড়ি দেখতেই অবনী দৌড়ে এলো।আফিন দরজা খুলে দিতেই অবনী ঢুকে বসে পড়লো আফিনের পাশের সিটে।অাফিন দুটো বড় চকোলেট বক্স অবনীর দিকে এগিয়ে দিলো।একটা তোমার আরেকটা আফসানার।চকলেট দেখে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা অবনী।আফিনের কোটের কলার ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো অবনী।তার আফিনের গালে চুমো একেঁ দিয়ে সরে এলো অবনী।অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে রেখেছে অবনী।বুক ভীষন জোরে কাঁপছে।ভাবছিলাম আমেরিকায় পাঁচটাদিন কি করে কাঁটাবো?বাট এখন আর চিন্তে নেই এই চুমো টা দিয়ে কাঁটিয়ে দিবো।চুমু এতো মিষ্টি হয় জানতামনা।অবনীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো আফিন।অবনী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আফিন অবনীকে দেখলো। রোদের কারনেই হোক আর লজ্জায় হোক ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে এসেছে। আফিন মুখ বাড়িয়ে অবনীর গালে গলায় ঠোঁট বুলিয়ে সরে এলো।অবনী অবাক চোখে আফিনকে দেখছে।এবার সামনে তাকালো অবনী।আফিন মুচকি হেসে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।অবনী খেয়াল করলো গাড়িটা অন্য একটা গলিতে ঢুকে পড়লো।আরে কই যাচ্ছেন আপনি?চেঁচিয়ে উঠলো অবনী।আফিন ফোন বের করে অবনীর দিকে ধরলো ড্রাইভিং এর মাঝেই।তোমার বাবাকে ফোন দাও।বলে উঠলো আফিন।কেন?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অবনী।ওনাকে বলো তুমি তোমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছো দুদিনের জন্য।বলে উঠলো আফিন।
,
,
,
,
না মা মানে?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আমার সাথে দুদিন থাকার কথা আছে তোমার।গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।আফিনের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রহমত সাহেবকে কল দিলো অবনী।
হ্যালো!!!অপর পাশ থেকে বললেন রহমত সাহেব।
হ্যা বাবা।আমি অবনী।
এটা কার নম্বর মা?বলে উঠলেন রহমত সাহেব।
বাবা এটা অন্তরার ভাইয়ের নম্বর।বলেই জিভ কাঁটলো অবনী।
হ্যা বুঝলাম।তা তুই কই অবনী?জিজ্ঞেস করলেন রহমত সাহেব।
বাবা অবনীর বাসায় দুদিন থাকতে বলছে।আমরা গ্রুপস্টাডি করবো।বলে আফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো অবনী।এতো মিথ্যা বাবার সাথে কখনোই বলেনি ও।আচ্ছা মা জলদি এসে পড়বি।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।ওকে বলেই কল কাঁটলো অবনী।আফিনের গাড়িটা একটা বাংলোর সামনে থামলো।তবে নতুন একটি বাড়ি।পুরো গাছ দিয়ে ঘেরাও করা।বিভিন্ন ফুল গাছে ভরে আছে বাংলোর আশপাশ।এটা কার বাড়ি আফিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।আমার ফার্ম হাউস এটা বলে একটু হাসলো আফিন।

চলবে

#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:৯
,
,
,
আপনার বাসাটা সত্যিই দারুন।ভীষন মনোমুগ্ধকর।আমার খুব ভালো লেগেছে।ফুল বাগানের পাশে হাঁটতে হাঁটতে কথা গুলো বলছিলো অবনী।আফিন মু্চকি হেসে অবনীকে দেখছে।এত মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো আফিন।কারোর স্পর্শ পেয়ে থমকে গেলো অবনী।বুকটার এক কোনে কেমন যেন কেঁপে উঠলো।আফিন ধীরে অবনীর হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিতে থাকলো।অবনী নড়তে পারছেনা।কেমন যেন অবশ লাগছে নিজেকে।হঠাৎ কারোর কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলো অবনী।চলো!!! বলে উঠলো আফিন।অবনী আফিনের দিকে একনজর তাকিয়ে ঘরের দিকে পা বাঁড়ালো।ঘরের ভিতরটা ভীষন সুন্দর করে সাজানো।দামি আসবাব পত্র আছে পুরো ঘর জুড়ে।পুরোঘরে চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো অবনী।আফিন অবনীর পিছে দাড়িয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।অবনী কোন কথা বলতে পারছেনা।দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে অবনী।আফিনের নিশ্বাস অবনীর কাঁধে পড়তেই কিছুটা কেঁপে উঠে আফিনের হাত খামচে ধরলো অবনী।অবনীর কাঁধের চুল গুলো সরিয়ে সেখানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আফিন।অবনী চোখ বুজে নিলো।নিজের সব ইমোশন কে সরিয়ে অবনী নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করছে।আফিন হঠাৎ থেমে গেলো অবনীর কথায়।প প্লিজ ছাড়ুন কাঁপা গলায় বলে উঠলো অবনী।
,
,
,
,
আ’ম সরি।বলে উঠলো আফিন।অবনীর দিকে আর তাকাতে পারলোনা ও।অবনীর হাত ধরে সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো আফিন।একটা রুমের সামনে অবনীকে নিয়ে দাঁড়ালো আফিন।এই দুইদিন এখানে থাকবে তুমি।অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে বলল আফিন।মাথা ঝাঁকালো অবনী।আফিন অবনীকে রেখে পাশের রুমে চলে গেলো।রুমটি বেশ গুছানো এবং বড়।অবনী রুমে ঢুকে পুরো রুমটাকে দেখে নিলো।ফ্রেশ হতে হবে কিন্তু সাথে কোন কাপড় নেই কি করবে অবনী এখন?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ালো অবনী।আলমারিটাকে ছুঁয়ে দেখে নিলো।কারুকাজ দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরোনো যুগের আলমারি এটা।আলমারির হাতল ধরে টেনে খুলতেই চোখ ছানাবড়া অবনীর।৫-৬টা শাড়ী ঝুলানো আছে আলমারিটায়।নতুন মনে হচ্ছে শাড়ী গুলোকে।সাত পাঁচ ভেবে নীল একটি শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো অবনী।ফোন বের করে দুজনের জন্য খাবারের অর্ডার দিলো আফিন।ঘরে তেমন বাজার করা নেই তাই খাবার কিনে আনতে হচ্ছে।খাট থেকে উঠে দরজার কাছে আসতেই থমকে গেলো আফিন।শাড়ীটা অবনীকে এতোটা মানাবে জানতোনা অাফিন।শাড়ীটা যেন অবনীর জন্যই তৈরি হয়েছে।অবনীকে নিয়ে আসার আগেই শাড়ী গুলো রেখে দিয়েছিলো আফিন।ভালোই করেছে।এক সুযোগে জলপরীটাকে শাড়ীতে দেখতে পাচ্ছে আফিন।আফিনের তাকানোয় খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো অবনী।আফিন অবনীকে এক নজর দেখে ওকে কোলে তুলে নিলো।
,
,
,
,
অবনীকে খাটে বসিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো আফিন।এতো মায়াবতী কেন তুমি বলতে পারো?অবনীকে বলে উঠলো আফিন।হু!!!কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো অবনী।অাফিন অবনীর একদম কাছে চলে এলো।অবনী আফিনকে দেখেই যাচ্ছে।জানো শাড়ীতে তোমাকে একদম বৌ লাগে।অবনী মুগ্ধ দৃষ্টিতে আফিনকে দেখে যাচ্ছে।আফিন কিছু না বলে অবনীর ঠোঁটজোড়ায় আলতো করে একবার চুমো দিয়ে ঠোঁট জোড়া অবনীর ঠোঁট জোড়ায় ডুবিয়ে দিলো।অবনীর চোখ বড় হয়ে গেলো।আফিন চোখ বন্ধ করে অবনীর ঠেঁটের স্বাদ উপভোগ করছে।অবনীর গলায় হাত রাখলো আফিন।আফিনের শার্টের কলার খামচে ধরে আছে অবনী।অবনীর ঠোঁটজোড়া কাঁপছে কোনমতেই আফিনের ভালোবাসার জগতে সাড়া দিতে পারছেনা অবনী।বেশকিছুক্ষন পর আফিন অবনীর থেকে সরে ওর কপালের সাথে কপাল ঠেঁকালো আফিন।চোখ বন্দ করে নিশ্বাস নিচ্ছে আফিন।আর অবনী আফিনকে দেখছে অবাক চোখে।হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় দুজনে সরে গেলো।আফিন অবনীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে।নিয়ে ফোনে মনযোগ দিলো।পাঠাও থেকে কল এসেছে।লোকটা হয়ত খাবার নিয়ে এসেছে তাই কল দিচ্ছে।আফিন ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো।অবনী আফিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।সেই সময়টায় অবনী আফিনের মাঝে ডুবে গিয়েছিলো।আফিন চলে যয়ওয়ার পর অবনী মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিলো।অবনী!!!নিচে আসো নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো
,
,
,
,
আফিনের ডাকে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলো অবনী।টেবিলের খাবারের প্যাকেট গুলো খুলে প্লেটে খাবার বাড়ছে আফিন।অবনীকে নিচে নেমে আসতে দেখে আফিন বলে উঠলো”দেখো আমার কাছ থেকে সরি এক্সপেক্ট করোনা।কারন সরি বলবো ও না আমি।মনে করোনা আমি ঘোরের মাঝেই তোমায় কিস করেছি।ইটস নট লাইক দ্যাট।আমি তোমার ঘ্রানে এতোটাই মাতাল ছিলাম যে নিজেকে আটকাতে পারিনি।সো আ’ম নট সরি।অবনীর কাছে এসে দাঁড়ালো আফিন Its the sweetest kiss ever.নেশা ধরানো কন্ঠে বলল আফিন।অবনী অবাক হয়ে আফিনকে দেখছে।খেতে বসো।অবনীর থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলো আফিন।অবনী মুচকি হেসে চেয়ারে বসে পড়লো।আফিন ওর সামনের চেয়ারে বসলো।খাবারে চামচ নাড়ছে অবনী আর আফিনকে দেখছে।লোকটার নেশায় মাতাল প্রায় ও।খুব কাছে থাকতে ইচ্ছে হয় ওর আফিনের এবং তার মাঝেই ডুবে থাকতে চায় ও।লোকটাকি পারবে তার হৃদয়ের এক কোনে অবনীকে জায়গা করে দিতে?আফিন খেতে খেতে অবনীর দিকে তাকালো।অবনী না খেয়ে আফিনের দিকে চেয়ে আছে।কি হলো খাচ্ছোনা যে?বলে উঠলো আফিন।এই তো খাচ্ছি চামচে করে একটু রাইস মুখে নিয়ে বলে উঠলো অবনী।
(ফোনে টাচের প্রব্লেম হচ্ছে আজ।তাই যতটুকু সম্ভব হয়েছে দিয়েছি)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here