হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ১৪,১৫,১৬
লেখিকাঃআদিলা
পর্বঃ১৪
পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়েছে। কিছুক্ষণ আগে ঝুম ধরে মুশলধারে বৃষ্টি নেমেছিলো।আকাশে এখনো স্বচ্ছ কিছু মেঘেদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে৷ গাছের সবুজ কচি পাতার ফাকে ফাকে বিন্দু বিন্দু পানির কোনা জমে মাঝে মাঝে গড়িয়ে পড়চ্ছে৷ বৃষ্টির সাথে হীম ধরা বাতাস পুরো রুম জুরে ঠান্ডা হয়ে আছে। হটাৎ ইয়ামিনার ঘুম ভাংতে ইয়ামিনা উঠে বসে।শরীরের প্রতিটা অংশে এখনো ব্যাথা। তারপর ইয়ামিনা উঠে বসে। সব কিছু মনে করার চেষ্টা করচ্ছে। আমির বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল। অফিসের কোনো ফাইল নিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলচ্ছে।ইয়ামিনার ডিস্টার্ব হবে ভেবেই আমির বারান্দায় এসে পড়ে।
ইয়ামিনা উঠতে চেষ্টা করচ্ছে বারং বার কিন্তু শরীর ক্লান্ত থাকায় উঠতে পারচ্ছে না।হাতের কুনুই লেগে বেডের পাশে ফুলের পটটা পড়ে গিয়ে ঝুন শব্দ করে উঠে৷ আমির শব্দ পেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসে৷
ইয়ামিনা আমিরকে এইভাবে দেখে কিছুক্ষন তব্দা মেরে বসে থাকে।বাস্তব নাকি স্বপ্ন বুঝে উঠতে পারচ্ছে না। আমির ইয়ামিনার কাছে যেয়ে বসতে বসতে অস্থীর হয়ে বলে উঠে….
তুমি ঠিক আছো। কি হয়েছে। কোথাও লেগেছে।কিছু লাগবে আমাকে ডাকোনি কেন। ইয়ামিনা গালে দুহাত রেখে আমির আরকেটু অস্থির হয়ে পড়ে।
কি হয়েছে কিছুতো বলো। খুব বেশি খারাপ লাগচ্ছে। ডক্টর ডাকবো।
কি হলো মিষ্টিপাখি কিছু বলো। আমির ইয়ামিনার উত্তর উপেক্ষা করে উঠে দাড়ায় পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ইয়ামিনার সামনে এসে বসে।ইয়ামিনা শুধু স্থীর হয়ে আমিরে কার্যকলাপ দেখে চলচ্ছে।
ইয়ামিনার চোখে পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে।মনে হয় ধাক্কা দিলে এখুনি গড়িয়ে পড়বে।
এই নাও পানিটা খাও গলাটা ভেজাও।ওয়েট আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আমির ইয়ামিনা কে পুরো টুকু পানি খাইয়ে দেয়।
ইয়ামিনা আমির দিকে এখনো দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।
ইয়ামিনা কাপা কাপা হাতে আমির হাটুর ওপর হাত রাখে। অশ্রু শিক্ত চোখে আমিরের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে আমির ইয়ামিনার রাখা হাতে উপর হাত শক্ত করে ধরে বলে….
আমি জানি তুমি কি বলবে…শুধু এতটুকু বলব তোমার এতদিনের কষ্ট ভেস্তে যায়নি মিষ্টিপাখি।এই দেখ আমি হাটতে পারচ্ছি। তুমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যেটা চেয়েছো দেখ সেটা আজ হয়েছে।
ইয়ামিনা চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়চ্ছে।খুশির পানি।ইয়ামিনা ভাবতে পারেনি আমিরকে এইভাবে দেখবে। মুখের কথা যেন মুখে এসে আটকে যাচ্ছে বার বার। খুশিতে ইয়ামিনা আমিরকে জড়িয়ে ধরে হুর হুর করে কেদে দেয়।আমির ইয়ামিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়ামিনার চুলে হাত বুলিয়ে আলতো করে চুমু দেয়। সেদিকে ইয়ামিনার কোনো খেয়ালি নেয়।সে যেটা চেয়েছে সে সেটা পেয়েছে।আমির এখন সম্পুর্ন সুস্থ। ইয়ামিনা কেদে কেটে আমিরে শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে।আমির ভেবেই অবাক হচ্ছে ইয়ামিনা উপর কাল ঘটে যাওয়া দূঘটনা মনে না নিয়ে আমির সুস্থর পেছনে পড়ে আছে।আমির যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। ইয়ামিনাকে যতই দেখচ্চে ততই ভালোবাসতে ইচ্ছে করচ্ছে। এই মেয়েকে এতটা কষ্ট দিয়েছে ভাবতেই আমিরের বুক কেপে উঠেছে।
আপনি একটু হেটে দেখান তো আমাকে। কথা শুনতে আমির চমকে ইয়ামিনার দিকে তাকায় পরক্ষনে আমির হেসে দেয়।
আচ্ছা বাবা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি।ওকে আমি হেটে দেখাচ্ছি।
আমির উঠে ইয়ামিনাকে হেটে আবার ইয়ামিনা পাশে বসে। কি বিশ্বাস হয়েছে।
ইয়ামিনার গলা যেন ধরে আসচ্ছে…. ধরা গলায় বলে আ…আমি আপনাকে বুঝাতে পারবো না আ আ আমি কতটা খুশি সত্যি এইভাবে আপনাকে কখনো দেখবো ভাবতে পারি নি। আমার সব কষ্ট যেন আপনি দূর করে দিয়েছেন।
হুম হয়েছে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। তোমার উপর অনেক দখল গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে খাবে।
ইয়ামিনা মুচকি হেসে বেড থেকে নামতে গেলে হঠাৎ আমির কিছু না বলেই ইয়ামিনাকে কোলে তুলে নেয়।
ইয়ামিনা কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। ইয়ামিনার এখন খেয়াল হয়েছে৷
ইয়ামিনা নিচে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে… দেখুন আমি যেতে পারবো। আমার তেমন লাগে নি। আপনি সবে মাএ সুস্থ হয়েছেন পায়ে প্রেশার না দেওয়া ভালো। আমাকে নামিয়ে দিন আপনার কষ্ট করতে হবে।
হুসসসস এত কথা কোথা থেকে শিখেছো। আমি একবারও বলেছি যে আমার কষ্ট হচ্ছে। এই পা দূটো এখন থেকে তোমার সেবার জন্য নিয়োজিত থাকবে সবসময়।
ইয়ামিনা আমিরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়…আর এই আমিটা যদি সবসময় আপনার সাথে না থাকি…আপনি তো এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন।।
আমিরের হাসিমাখা মুখটা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। এক অজানা ভয় আমিরে ভেতরটা দুমরে মুচরে দিচ্ছে। আমির কিছু না বলে চুপচাপ ইয়ামিনা ভেতর দিয়ে বের হয়ে আসে।।
……………………..🌸🌸
ইয়ামিনা বিছানা ঠিকঠাক করে দিচ্ছে।ইয়ামিনার ভাবতে অবাক লাগচ্ছে একটা সময় আমির এইবিছানাতে সাড়াক্ষন লেপ্টে থাকতো।ইয়ামিনা কাজ করত আর আমির ইয়ামিনার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকতো।চিন্তা করতে ইয়ামিনা ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।।
আচ্ছা শোনো…
হটাৎ আমির কন্ঠ পেয়ে ইয়ামিনা চমকে পিছে ফিরে তাকায়.. আমির একদম ফরমাল লুকে দাড়িয়ে ব্লেজারের হাতা ঠিক করচ্ছে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে। বাতাসে সেট করা চুল গুলো হাল্কা উড়চ্ছে। ইয়ামিনা হা হয়ে তাকিয়ে আছে৷ হটাৎ হুস আসতে ইয়ামিনা চোখ সড়িয়ে নেয়।
কিছু বলবেন…
হ্যা। শোনো তোমার ভার্সিটিতে পিন্সিপালের সাথে কথা বলে এসেছি।কাল থেকে নিয়মিত যাবে ভার্সিটিতে। মিস যেন না হয়।বুঝেছো কি বলেছি।
ইয়ামিনা হা হয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারচ্ছে না।ইয়ামিনা অনেক বলতে চেয়েছিল ভার্সিটিতে আবার ক্লাস করবে কিন্তু আমিরের এই অবস্থা জন্য যাওয়া হয়নি। ইয়ামিনার খুশি যেন ধরে না।
আপনি কখন বলেছেন আমি তো দেখিনি।
সেটা নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে৷এখন থেকে স্টাডিতে ফোকাস করবে অনলি।। বুঝেছো?
ইয়ামিনা আমিরে দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়।
আমির একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যেতে নিলে ইয়মিনা ডাকে পিছন ফিরে তাকায়।।
ইয়ামিনা আমির সামনে এসে স্লান হাসি দিয়ে আমির কলারে হাত দিতে আমিরে ভেতরে তলপাড় শুরু হয়ে গেছে।এক অন্যরকক ভালো লাগা কাজ করচ্ছে।চাইলে আমির ইয়ামিনার থেকে দুরে যেতে পারচ্ছে না। ইচ্ছে করচ্ছে ইয়ামিনা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার পরশ দিতে৷ এই মেয়েটা কি বুঝে না আমি কতটা দুর্বল ওর প্রতি তারপর আমার এতটা কাছে এসে আমার সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।
ইয়ামিনা আমিরে কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলে শার্টের কলারটাও ঠিক করে ভাজ করতে পারেন না। এইভাবে অফিসে গেলে কি ভাববে… খেয়াল কোথায় রাখেন…
তোমার দিকে।। আমির এক দৃষ্টিতে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে বলে দেয়।
এমন কথা ইয়ামিনা একটু অস্বস্তি বোধ করে… আমিরের কলার ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়।
আমির ইয়ামিনার অস্থীরতা বুঝতে পেরে আমির একটু হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।।।
.
.
.
.
#পর্বঃ১৫🌸
________________________🌸
কিছুটা দূরে ইয়ামিনা বেশ মজা করে ফুচকা খাচ্ছে। আজ কতদিন পর ফুচকা খাচ্ছে। জিবে পানি এসে পড়েছে। তাও আবার ফ্রি খাচ্ছে। সৌরভ ইয়ামিনা রুহি ইমতিয়াজ রাইসা ইরা খুবই ভালো ফ্রেন্ড। আজ রুহি ট্রিট দিচ্ছে। ইয়ামিনা এমনিতে ফুচকা পাগল তাই লোভ সামলাতে না পেরে সবার জোড়াজড়িতে হ্যা বলে দেয়। সৌরভ ইয়ামিনার সাথে একটু মজা করে কথা বলছে। আসলে এতদিন পড়ে এসেছে। কি বুঝে যেন সৌরভ মজা ছলে ইয়ামিনার ঘাড়ে হাত দিয়ে কথা বলছে হঠাৎ ঝরে গতিতে কেউ সৌরভের কলার ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। চোখ জোড়া যেন লাল হয়ে ফুলে আছে। এমন হওয়াতে ইয়ামিনা চমকে উঠে মুখে থেকে টুস করে ফুচকাটা পড়ে যায়।ইয়ামিনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে….
কিছুক্ষন আগে…..
আমির গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।। অস্থিরতা কিছুতেই কমচ্ছে না। আমিরের বেশ গরম লাগচ্ছে যার কারনে ব্লেজারটা খুলে গাড়ির মধ্যে রেখে দিয়েছে।আজ ইয়ামিনা এতদিন পর ভার্সিটিতে গিয়েছে। আমির নিজে দিয়ে এসেছিল। আমির মধ্যে একটা ভয় ঝেকে বসেছে ইয়ামিনাকে হারানোর কেন এই চিন্তা সেটা কি দিহান!!!
এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে টেনশনে কবে যে পাগল হয়ে যায় আল্লাহই জানে। এতবার ফোন দিচ্ছি ফোন ধরার নামই নেই। আমির নিজের মনে বির বির করেই চলচ্ছে। এদিক দিয়ে মেয়েরা আমিরকে গিলে গিলে খাচ্ছে সেদিকে আমিরের কোনো ব্রুক্ষেপই নেই। কিছুটা দুর তাকাতে আমির ফুচকার স্টোলের দিকে চোখ যায়। প্রথমে মুচকি হাসলে পরক্ষনে আমিরের চোখ দূটো লাল হয়ে আসে।
বর্তমান……
তোর সাহস কিভাবে হলো ওর গায়ে হাত দেওয়ার ওর গায়ে হাত দেওয়া অধিকার শুধু আমার। হ্যা বল খুব শখ না মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া। সৌরভের যেন দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে। ভয়ে আতকে উঠেছে। বলা নেই কোয়া মেই কেউ হুট করেই এইভাবে কলার চেপে ধরেছে।
আজব কে আপনি আমাকে এইভাবে ধরে রেখেছেন কেন। আপনার সাহস তো কম না।
ইয়ামিনা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ফুচকার বাটিটা পাশে রেখে শান্তস্বরে বলে… কি করছেন কি সবাই দেখছে। প্লিজ ওর কলারটা ছাড়ুন আর ও আমার কাজিন হয়৷ ইয়ামিনার লজ্জা শেষ কি এক অবস্থা রাস্তা মধ্যে আমির এসব শুরু করে দিয়েছে সবাই কিভাবে দেখছে কিন্তু সেদিকে আমিরের কোনো পাত্তা নেই।
আমি লাল লাল চোখ নিয়ে ইয়ামিনার দিকে তাকায় যেন এখুনি ইয়ামিনাকে খেয়ে ফেলবে…
ইয়ামিনা নিজে ভয়ে পেয়ে যায় আমিরের এমন রিয়েকশন দেখে…
কি বললে কাজিন । কাজিন বললে গায়ে হাত দিতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে৷ ওর সাহস কিভাবে হয় আর তুমি কিছু বললে না কেন। হোয়াই!!!! আমিরের চিৎকারে ইয়ামিনা কানে হাত দিয়ে ফেলে৷ ইয়ামিনা বুঝে ওঠতে পারচ্ছে না আমির এত ভাইলেন্ট হচ্ছে কেন।
আমির ছেলেটাকে কলার ছেড়ে দিয়ে জোড়ে ধাক্কা মেরে বলে… নেক্সট টাইম যেন না দেখি আমার বউয়ে গায়ে হাত দিতে। নেক্সট এই হাত আর হাতের জায়গায় থাকবে না। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড।
সৌরভ ভয়ে জমে গেছে। আমিরের এরকম চেহারা দেখে। ঝরের গতিতে মাথা উপর নিচ করে মানে হ্যা ইয়ামিনা কেন আর কারো গায়ে এমনিকি নিজের গায়ে হাত দিবে না এমন ভাবে মাথা নাড়িয়েছে সৌরভ ।।
ছাড়া পেয়ে সৌরভ দোড়।
আশেপাশে সবাই যেন আমিরের এরকম কর্মকাণ্ডে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। মেয়েদের তো জ্ঞান হারাবার উপক্রম আমিরের এই ঘায়েল করা এটিটিউড দেখে৷
ইয়ামিনা যেন এখনো আগের মত দাড়িয়ে আছে। আমির ইয়ামিনা দিকে তাকিয়ে ইয়ামিনা হাত শক্ত করে ধরে টেনে ইয়ামিনাকে নিয়ে যাচ্ছে। ইয়ামিনা অবাক চোখে শুধু আমিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মনে মনে শুধু ভাবচ্ছে এ তো দিহানজির থেকেও বেশি ডেঞ্জারাস৷ আমির ইয়ামিনাকে গাড়ি ভেতরে বসায়।।
নিজেও ড্রাইভিং সিটে যেয়ে বসে গাটি স্ট্রার্ট দেয়।মাথা একদম গরম হয়ে আগুন হয়ে আছে।
ইয়ামিনা বুঝতে পারচ্ছে রেগে আছে কিন্তু আমিরে এতটা রেগে থাকার কারন ইয়ামিনা ধরতে পারচ্ছে না।।
নিন পানিটা খান। ভালো লাগবে আপনার। ইয়ামিনা আমিরের সামনে বোতল ধরতে আমির কিছু না বলে ঢক ঢক করে বোতকের অর্ধেক পানি খেয়ে গেলে। গাড়ি আপন গতিতে চলচ্ছে। গাড়িতে বসে আমির একটাও কথা বলে নি।
.
.
.
রাতে আমির গার্ডেনে পাশে চেয়ারের উপর বসে লেপটপে কাজ করচ্ছে। । হীম করা শীতে আমির শুধু সাদা পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে রেখেছে। সু সু করে বাতাস বয়ে চলচ্ছে। বাসায় আসার পর একবারে জন্য ইয়ামিনা সাথে কথা বলে নি। ইয়ামিনার দিকে চেয়েও তাকায় নি। আমির ভালো করে জানে ইয়ামিনার মুখে তাকালে আমিরের সব রাগ পানি হয়ে যাবে। কিভাবে একটা ছেলে ওর গায়ে হাত দিয়ে কথা বলচ্ছে আর ও হেসে খেলে যাচ্ছে। কাজিন ফাজিন যেটাই হোক আমির এগূলো একদমে পছন্দ করে না ভেবেই আমিরের রাগ লাগচ্ছে৷
হঠাৎ পিছনে গরম কিছু অনুভব হচ্ছে৷ কেউ আমিরের গায়ে পরম যত্নে শোল জড়িয়ে দিয়েছে । আমির ভালো করে বুঝতে পেরেছে এটা তার মিষ্টিপাখি।
এই হীম শীতে এইভাবে বসে আছেন কেন। ঠান্ডা লাগলে পরে সেখান থেকে জ্বর হবে। ইয়ামিনা আমিরে সামনে এসে টেবিলের উপর কফির মগটা রাখে।
আমিরকে চুপ থাকতে দেখে….ইয়ামিনা নিজে থেকে বলে… কি হলো কিছুতো বলুন।।।সকালে ব্যাপার নিয়ে এখনো চিন্তা করচ্ছেন।আসলে আমারি ভুল হয়েছে আসলে আমি ওকে ভাইয়ের মতই দেখি আর ও আমার সাথে অনেক ফ্রি তাই আমিও কিছু বলিনি…
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বসতে। বেশ শান্ত গলায় বলে… তুমি সবসময় সবাইকে যে সম্পর্কে দেখছো এমন তো নয় তারাও তোমাকে সে সম্পর্কে দেখচ্ছে। ভিন্নও তো হতে পারে। আর আমি এগুলা একদম পছন্দ করি না। আর তুমি যথেষ্ট বুঝ আমার মনে হয় না এই ব্যপারে তোমাকে বুঝানো লাগবে। নেক্সট টাইম আমি এগুলা টলারেট করব না।
ইয়ামিনা চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। হয়তো ইয়ামিনা ভুল ছিল। আমির ইয়ামিনা মুখে দিকে চেয়ে আছে। কেন যেন ইয়ামিনার দিকে তাকালে চোখ সড়াতে ইচ্ছে করে না। শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।ও কি বুঝে না আমার ভালোবাসাটা। নাকি বুঝেও বুঝার চেষ্টা করছে না। নাকি দিহান…ভেবেই আমিরের বুকটা ছেদ করে ওঠে।
আচ্ছা আপনি আমার উপর এত পজেসিভ হচ্ছে কেন?
আমির এমন কথা একটা মলিন হাসি দেয়৷ আকাশে দিকে চেয়ে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়ে৷
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে…. যদি তুমি বুঝতে আহহহহ..
ইয়ামিনা আমিরের কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে…
চলো অনেক রাত হয়েছে। বেশিক্ষন থাকলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।।
জাফরা ভাবি এসে এতক্ষনে খাওয়ার জন্যে ডেকে গেছে।
.
.
.
.
খাওয়ার টেবিলে জাফরা আর ইয়ামিনা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। আমির খাচ্ছে না বসে আছে৷ ইয়ামিনা খেতে বসলে খাবে। কেন জানি ইয়ামিনা আমিরের অভ্যাস হয়ে গেছে। ইয়ামিনা ছাড়া আমিরের কিছুই ভালো লাগে না। যে জিনিসে ইয়ামিনার স্পর্শ নেই সেই জিনিসটা আমিরের ছুয়ে দেখতেও ইচ্ছে হয়না। তাই আমির এত গোছালো হয়েও ইচ্ছে করে নিজের জিনিস গুলো এলোমেলো করে রাখে যাতে ইয়ামিনা সেগুলো গুছিয়ে ঠিক জায়গায় রাখলে ইয়ামিনার স্পর্শ সেখানে থাকবে।যেই আমির নিজের একটু কিছু ওগোছালো দেখলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখতো। রাগে কেউ কথা বলতেও পর্যন্ত পারতো না সেই আমির আজ নিজের জিনিস ওলট পালট দেখলে কিছু বলে না। এক অন্য রকম প্রশান্তি কাজ করে কারনটা ইয়ামিনা। এসব ভেবে আমির নিজের মনে নিজেই হেসে চলচ্ছে। আমির চুপ করে বসে আছে।
জাফরা ভাবি একটু মজা করে বলে… ইয়ামিনা দেখোতো আমার ভাইটা কিছু খাচ্ছে। তোমার দুরত্বের বিরহ না সইতে পেয়ে খাবারও মুখে নিচ্ছে না। এই কয়েক দিনে কি অবস্থা করেছো আমার প্রিয় ভাইয়ের
এমন কথায় হকচকিয়ে উঠে ইয়ামিনা। হঠাৎ করেই ইয়ামিনার অস্থিরতা বেড়ে গেছে।
পাশ থেকে আরুশি বলে উঠে… হ্যা হ্যা ভাইয়া না বললে আমরা ঠিকই বুঝি ভাবি চোখ থেকেও দেখে না। ওগো ভাবি ভাইয়া ঠিক হয়ে গেছে বলে অবহেলা করবে তা তো হবে না। ভাইয়ার দিকে নজর রেখো।।
ইয়ামিনার এসব কথা কেমন লাগছে বার বার চোখ এদিক সেদিক নিচ্ছে। কিছু চেয়েও বলতে পারচ্ছে না।আমির আরুশির কথা শুনে মুচকি হাসচ্ছে।
সবাই ইয়ামিনা আমির কে দেখে শব্দ করে হেসে উঠে৷ জাবির বলে.. হয়েছে হয়েছে ইয়ামিনা কষ্ট করা লাগবে না তুমি গিয়ে বস।। সার্ভ করার জন্য সারভেন্টরা আছে।
ইয়ামিনা বসতে জাফরা ভাবি হটাৎ করে মাথা ঘুড়ে পড়ে যায়৷
সবাই খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে জাবির দৌড়ে যেয়ে জাফরা কে ধরে।
জাবির শক্ত করে ধরে জাফরাকে কি হয়েছে জাফরা।। এই জাফরা কি হয়েছে। জাফরা কিছু না বলাতে জাফরা কে কোলে নিয়ে জাবির রুমের দিকে চলে যায়। সবাই একটু অস্থির হয়ে পড়ে।
ভাই তুমি ভাবির পাশে থাকো আমি ড.কে কল দিয়ে আসতে বলচ্ছি।আমির অস্থির হয়ে বাহিরের দিকে চলে যায়৷ যাওয়ার সময় ইয়ানিনাকে বলে যায় ভাবির খেয়াল রাখতে। ইয়ামিনা জাফরা পাশে বসে আছে৷ তার কিছুটা দুরে আরুশি।
কিছুক্ষন আগে আবির এসে জাফরা চেকআপ শুরু করে দিয়েছে কিছুক্ষন চুপ থেকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে জাবিরের দিকে তাকায়।
কংগ্রেস মি.জাবির আপনি বাবা হতে চলেছেন।শুনেই যেন জাবিরের চোখে পানি এসে পড়ে। খুশিতে জাবিরের মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না৷ আবির কিছুক্ষন থেকে চলে যায় যাওয়ার আগে জাফরা কে নিয়ে তার কেবিনে একবার চেকআপ করে আসতে বলে।।
বাড়িতে যেন খুশির হুল্লোড় পড়ে গেছে।আমিরের খুশির ঠিকানা নেই। আমির চাচু হতে যাচ্ছে ভেবে আমিরের চোখ ভরে আসচ্ছে। আমির ইয়ামিনার কাছে যেয়ে বলে… শুনেছো মিষ্টিপাখি আমি চাচ্চু হতে চলেছি ভাবতে পারছো আমাকে কেউ চাচু বলে ডাকবে আর তোমাকে চাচি উফফ আমি তো ভাবতেই পারচ্ছি না। আমিরের চোখে মুখে খুশির ঝলক।
ইয়ামিনার এক দৃষ্টিতে আমিরে দিকে তাকিয়ে আছে। আমিরকে এতটা খুশি দেখেই ইয়ামিনার এক অন্য রকম প্রশান্তি কাজ করছে মনে। চাচু হবে বলে এত খুশি আর যখন বাবা হবে তখন ভাবতে ইয়ামিনার গাল দুটো লাল হয়ে আসে। পরক্ষনে ইয়ামিনা স্তব্ধ হয়ে যায় কি ভাবচ্ছে সে এসব না না আমি এসব কি ভাবিচ্ছি। হটাৎ এসবে মধ্যে আমির ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে।।।।।
আমি কিভাবে বোঝাবো আমি আমি আমি কতটা খুশি।ইমাজিন করতে পারছো।।
ইয়ামিনা তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু আমিরের কান্ড দেখচ্ছে মনে মনে হেসে উঠচ্ছে।
.
.
.
.
#পর্বঃ১৬🌸
_______________________🌸
ভোরের দিকে আমিরে ঘুম কিছুটা হাল্কা হয়ে আসে বুকে ভারি কিছুর অনুভব করচ্ছে ৷ মুখের মধ্যে কিছু একটা এসে বার বার বারি খাচ্ছে আমিরের। আমির চোখমেলে দেখে তার মিষ্টিপাখি ঘুমের ঘোরে তাকে জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমাচ্ছে৷ আমির মুচকি হেসে আলতো করে ইয়ামিনার নাক টেনে দেয়৷ চুল গুলো পরম যত্নে ইয়ামিনার কানে গুজে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়ামিনা আরেকটু নিজের সাথে মিষিয়ে নেয়। ইয়ামিনা ঘুমের ঘোড়ে আমিরের উপর হাত পা ছড়িয়ে দেয়। আমিরের এটাই চেয়েছিল ইয়ামিনা নিজে থেকে কাছে আসুক।ঘুমে হোক বা জেগে কাচে তো আছে আমিরে এটাই যথেষ্ট। কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি।এক দিধা দন্ডের মধ্যে আছে চেয়েও না ইয়ামিনার কাছে যেতে পারচ্ছে না। এক অন্য রকম ভয় কাজ করছে যদি এতটা কাছে এসে ইয়ামিনাকে হারিয়ে ফেলে তখন আমির বেচে থেকে মরে যাবে। এটা এই কয়েক দিনে আমির ভালো করে বুঝে গেছে।
ইয়ামিনার মাথা হাত বুলিয়ে চুলে ছোট ছোট করে অনেক গুলো ভালোবাসার পরশ দেয় আমির। আমিরের খুব করে ইচ্ছে করে ইয়ামিনাকে নিজের মত করে ভালো বাসতে।
হটাৎ ইয়ামিনার ঘুমটা ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে আমিরের মুখটা দেখে আমির তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার দিকে। ইয়ামিনার কেন জানি ভালো লাগছে এইভাবে থাকতে।আমিরের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে।। হটাৎ মনে হতে আমিরের উপর হাত দিয়ে রেখেছে আমির তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ইয়ামিনা হুরমুর কর এক লাফে উঠে পড়ে।
আমতা আমতা করচ্ছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না আমির ইয়ামিনার এমন ভঙি দেখে জোড়ে হেসে দেয়।
আ…আ..আসলে আ..আমি বলেই ইয়ামিনা ওয়াসরুমে চলে যায়।
ওয়াসরুমে এসে ইয়ামিনা জড়ে শ্বাস নিচ্ছে এত অস্থীর লাগচ্ছে কেন আমার। ইয়ামিনা কোনো রকম ফ্রেস হয়ে ওযু করে নেয়।
বের হয়ে দেখে আমির পাঞ্জাবি টুপি পড়ে আছে ইয়ামিনার দিকে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।এই কয়েক দিনে ইয়ামিনা আমিরকে নামযের প্রতি অভস্ত করে ফেলেছে।
ইয়ামিনা রুমে এসে দেখে আমির রেডি হচ্ছে।।। ইয়ামিনা আমিরকে এত নিক্ষুত ভাবে দেখচ্ছে হটাৎ হুস হতে ইয়ামিনা লজ্জা পেয়ে যায়।
আমির রেডি হতে হতে মিররের দিকে তাকিয়ে বলে… আজকে আমার আসতে লেট হবে ইমপ্রটেন্ট মিটিং আছে তারপর ওখান থেকে আবিরের কাছে যেতে হবে চেকআপের জন্য।। তুমি ঠিক মত খেয়ে নিও হেয়ালি কর না।বলে আমির বের হতে নিতে ইয়ামিনা বলে উঠে….
আপনি খেয়েছেন না খেয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন কেন…. আমাকে বলতে পারেন কিন্তু নিজের সময়…
না আমি ওখানে খেয়ে নিব তুমি চিন্তা করো না।।
একদম না আমি এত কষ্ট করে রান্না করেছি আপনি না খেয়ে আপনি একদম যেতে পারবেন না।।
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয় একদম বাচ্চাদের মত করে কথা বলছে৷।
কি হলো চলুন সব খাবেন আপনি। আমার কষ্টের কি কোনো মুল্য নেই। আমি এত কষ্ট করে রান্না করবো আপনারা না খেয়ে চলে যাবেন।এখনি যাবেন মানে এখনি।
আমির আর কি করবে শেষ মেষ ইয়ামিনা কথা উপর কথা বলতে পারে নি। কারন ইয়ামিনার কথা উপক্ষে করা তার পক্ষে সম্ভব না। বড্ড ভালোবাসি যে আমার মিষ্টি পাখিকে।
🌸
🌸
🌸
গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে ইয়ামিনা। সামনে ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করচ্ছে। চোখ দিয়ে অজর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়চ্ছে৷ কিছুতেই থামচ্ছে না। পুরো মাথা যেন ঝিম ধরেআছে।।।আর কিছুই যেন মাথায় নিতে পারচ্ছে না।সাড়া শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। পরনে শাড়িটাও ঘামে ভিজে গেছে।। নিজের চোখে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুতেই মানতে পারচ্ছে না।। কিছুক্ষন আগে আমিরের বুকে ইশিতাকে দেখে এসেছে ইয়ামিনা। কোনো রকম বাসায় এসে ইয়ামিনা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে কারো সাথে কথা না বলে।
গিয়ে শাওয়ারটা ওন করে হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।খুব কান্না করতে ইচ্ছে করচ্ছে।কিন্তু গলা যেন শুকিয়ে গেছে।সাড়া শরীর গড়িয়ে পানি পড়চ্ছে ইয়ামিনার৷
এত কষ্ট হচ্ছে কেন আমার। এত জ্বলচ্ছে কেন। উনি তো ইশিতাকে ভালোবাসতেন আমি জানি তাহলে কেন উনার বুকে ইশিতা দেখতে পারচ্ছি না। উনি তো এখন সম্পুর্ন ঠিক এটাই তো হওয়ার ছিল। সত্যি টা কেন মানতে পারচ্ছি। কাদতে কাদতে ইয়ামিনার হিচকি উঠে গেছে তারপর গলা ছেড়ে কানচ্ছে। আজ কিছুতেই কান্না থামাতে পারচ্ছে না।
কিছুক্ষন আগে………..🌸🌸
আমির মাএ মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসেছে। সারাদিন এত বিজির ফলে আমির অনেকটা টায়ার্ড হয়ে পড়েচ্ছে।বিজি থাকার কারনে ইয়ামিনার খোজ নেওয়া হয়নি।কি করছে আমার মিষ্টিপাখি খেয়েছে নাকি কিছুরই খোজ নেওয়া হয়নি। নিশ্চয়ই খাবার সব বাদ দিয়ে কাজ করচ্ছে এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কই যায় ভেবে আমির মুচকি হেসে ফোনটা বের করে ফোন দিতে নিবে এমন সময় হুরমুর করে ইশিতা আমিরের কেবিনে ঢুকে পড়ে……
হটাৎ ইশিতাকে এইভাবে দেখে আমির কিছুটা অবাক হয় সাথে বিরক্ত…
আমির পকেটে হাত দিয়ে বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে…. তুমি এখানে কি জন্যে!! তোমাকে পারমিশন কে দিয়েছে ভেতরে আশার জন্য…
ইশিতা কান্না করতে করতে বলে… কি বলছো আমাকে ভেতরে আশার জন্য পারমিশন নিতে হবে। তুমি তো বলতে আমাকে তোমার সাথে দেখা করার জন্য কারো কোনো পারমিশন নিতে হবে না।।
তো এখানে কি চাই….
কেন তুমি বুঝতে পারছো না আমার কি চাই। আমার তোমাকে চায় আমির। আমি তখন না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছিলাম রাগের মাথায় তোমাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছিলাম। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার কাছে কাম বেক করো। অনেক ভালোবাসি আমির।
আমিরের যেন রাগ ধীরে ধীরে বারচ্ছে।ইয়ামিনা ছাড়া কারো মুখে ভালোবাসা কথাটা শুনতে আমির নারাজ। কোনো রকম নিজের রাগ কন্ট্রোল করে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বেশ গম্ভীর গলায় বলে…. হয়েছে বলা নাকি বাকি আছে থাকলে তোমার ইস্টুপিট টাইপের কথা শেষ করে যেতে পারো। আর শেষ হলে গেট লস্ট!!
আমার কথা তোমার কাছে ইস্টুপিট মনে হয় এখন হবে তো। হটাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগে ইশিতা আমিরকে ঝাপটে ধরে…চকিতে আমির কয়েক পা পিছিয়ে পরে…
আর এদিকে ইয়ামিনা নিজ হাতে রান্না করেছে আমিরের জন্য। আজ ইয়ামিনার ভার্সিটি নেই তাই ভেবেছে রান্না করে আমিরের অফিসে খাবার দিয়ে আসবে। ইয়ামিনা ভালো করে জানে আমির বাহিরের তেমন কিছু খেতে পারে না। সেই মুহুর্তে ইয়ামিনাও কেবিনে ঢূকে ওদেরকে এক সাথে দেখে ফেলে। ইশিতা আমিরকে একদম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ।
ইয়ামিনা এটা দেখার পর এক মিনিট সেখানে না দাড়িয়ে দারোয়ানকে খাবার বক্সটা দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে…
আমিরের রাগ যেন চর চর করে মাথায় উঠে বসেছে৷ ইয়ামিনা ছাড়া অন্যকারো স্পর্শ আমিরের এখন অসয্য লাগে।রাগে আমিরের চোখ দুটো লাল হয়ে আসে।প্রচন্ড রাগে আমির ইশিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে গালে দুইটা চড় বসিয়ে দেয়….চিৎকার করে বলে…
এই মেয়ে সাহস কিভাবে হলো আমাকে জড়িয়ে ধরার। কিছু বলছিনা দেখে বেশি বেকে গেছিস খবরদার আমার লিমিট ক্রস করতে বাধ্য করবি না সেটা তোর জন্য ভালো হবে না।এই নিজেকে ভেবেছিসটা কি যখন ইচ্ছে হবে আমার লাইফে আসবি আবার ইচ্ছে হলে চলে যাবি।আমার ভালোবাসা এতটাই সস্তা ভেবেছিস। তোদের মত মেয়েরা শুধু সু্যোগ নিতে জানে ভালোবাসতে না।
নেক্সট আমার সামনে যেন তোকে না দেখি এর পরিনাম কি হবে তা ভালো করে জানিস। আমির বেশ জোরে গলায় বলে…. জাস্ট গেট লস্ট ইডিয়ট
ইশিতে আমিরের এমন রুপ দেখে ভয়ে চুপসে যায় কিছু বলার সাহস পায় না চুপচাপ বের হয়ে যায়।।
আমির যেন এখনো নিজেকে শান্ত করতে পারচ্ছে না রাগ লাগচ্ছে প্রচন্ড। হটাৎ কেবিনে নক করে দারোয়ান চাচা আসে।
ছোটবাবা আসমু…..
আমির ঘুরে দাড়িয়ে আছে আর আঙুল দিয়ে কপাল ঘষছে… দারোয়ান চাচার কন্ঠ শুনে বলে…
ছোট বাবা আফায় এইডা দিয়া গেসে কইসে আপনারে এই বক্স টা দিতে।।
আমির পিচে ঘুড়ে বলে… কে চাচা ইয়ামিনা
হো ছোট বাবা
ক্ষনিকে আমিরে সমস্ত রাগ যেন হাওয়া হয়ে যায়।তার মিষ্টিপাখি তার জন্য খাবার রান্না করে পাঠিয়েছে ভাবতে আমিরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে ।
আমির বক্স হাতে নেয়।চাচা আপনি যান আর এটা নেন আমির খুশি হয়ে দারোয়ানের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়।।
দারোয়ান চাচা খুশি হয়ে চলে যায়।।
তোমাকে বুঝা বড় দায় মিষ্টিপাখি।ভালোবাসি মিষ্টিপাখি আমার। আমির খুশি মনে বেস তৃপ্তি নিয়ে খাবার টা শেষ করে।
.
.
চলবে….🌸