হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি 🌸,পর্বঃ৩,৪

হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি 🌸,পর্বঃ৩,৪
আদিলা
পর্বঃ৩

চারিদিকে বিশাল সবুজ প্রানবন্তর মাঠ… মাঠের বুকে ছোট ছোট নরম দুর্বা ঘাস.. চারদিক দিয়ে সা সা বাতাস বইছে … এর ঠিক কিছুটা দুরে একটা বেঞ্চে ইয়ামিনা মুখ ভার করে বসে আছে। কারন একটাই তার দিহানজি।।কতক্ষন ধরে বসে আছে কিন্তু তার দিহানজির আশার নামই নেয়।।।ইয়ামিনা রাগে ফুলছে মনে মনে বির বির করেই চলছে আজকে আসুক একদমই কথা বলব না উনার সাথে…হটাৎ কেউ তার সামনে হাটু গেরে বসে ইয়ামিনার সামনে এতগুলো চকোলেট ধরে।। ইয়ামিনার মুখটা খুশিতে যেন প্রসারিত হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনে ব্রু কুচকে মুখটা অন্য পাশে ফিরিয়ে নেয়…

দিহান মুচকি হেসে…. কি হলো ম্যাডাম এখনও রেগে থাকবেন।।

ইয়ামিনা এখনো মুখটা অন্য পাশে করে রেখেছে..

আচ্ছা সরি এদিখে তাকাও।।প্লিজ।।।।। এদিকে তাকিয়ে এই অদম্যকে উদ্ধার করো।।। এই অশান্ত মনটাকে শান্ত করো..

…………………

কি হলো আচ্ছা তুমি বললে এই জনসবার সামনে কান ধরে উঠ বস করতে রাজি আছি।।কি বলো করব…

ইয়ামিনা এবার বেশ রেগেমেগে বলে… আপনি জানেন আমি কতক্ষন ধরে বসে আছি আপনারর অপেক্ষায় আর আপনার এখন আসার সময় হল..

এই দেখো কান ধরে সরি বলছি। আচ্ছা যাও উঠ বস করছি পরে কিন্তু লোকে বউ পাগলা বলবে..

ইয়ামিনা ব্রুটা কিঞ্চিত প্রসারিত করে..
বউ!!!
দিহান মাথায় নাড়িয়ে মুচকি হাসে…….

ইয়ামিনা লাফিয়ে উঠে চোখেমুখে খুশির ঝলক ।। সত্যি!!! আমি যা ভাবছি সত্যি দিহানজি।। আমি ভাবতেও আরছি না..বলুন না দিহানজি আমি আপনার মুখে শুনতে চাই…

ইয়ামিনার দুগাল টেনে বলে… হ্যা একদম ঠিক ভাবছো ইয়ামনি।।বাসায় সবাই আমাদের দুজনের সম্পর্কের কথা মেনে নিয়েছে এবং আমাদের বিয়ের কথাটাও খুব শীগ্রই বিয়ের তারিখ ঠিক করবে।। এখন শুধু তোমাকে সম্পুর্ন ভাবে আমার করার পালা..

আমাকে আগে বলেননি কেন আপনি..

বলতে দিয়েছো কই এসেই তো দেখি মুখ ফুলিয়ে রেখেছো.

আমি তো ভেবেছি আন্টি আমাকে মেনে নিবে না কারন প্রথম থেকে আমাকে উনার পছন্দ ছিল না…
ওসব বাদ দাও তো ইয়ামনি বিয়ে হলে এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে…

ইয়ামিনা দুহাতে অজস্রভাবে দিহানের গাল টেনে বলে..
“ভালোবাসি পাগলা”

হটাৎ দরজার বেল বাজতেই ইয়ামিনা অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।। চোখের কোনে জ্বল গুলো চিক চিক করছে কেও দেখার আগে মুছে নেয়।।।। দরজার সামনে যেতেই দেখে একজন ডাক্তারকে দু জন সার্ভেন্ট এসে আমিরের রুমে নিয়ে যাচ্ছে… ইয়ামিনা পিছে পিছে যায়…

ড. আরিফ আমিরকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে মুখুটা কিছু মলিন করে ফেলে… তারপর জাফরা ভাবিকে সব বুঝিয়ে দেয় কোন অওষুধ কখন কিভাবে খেতে হবে লাগাতে হবে।। ইয়ামিনা চুপ করে দাড়িয়ে সেসব শুনছিল আর দেখছিল…

আমির আরিফের এমন ব্যবহারে বেশ রেগে গেলেন সে ভাল করেই জানে সে কখনও হাটতে পারবে না তারপরও ড.আরিফেরর এসব বনিতা দেখে বেশ রেগে বলে..

দেখুন ড.আরিফ আমাকে আপনি কোনো ছোট বাচ্চা ভাববেন যে আবেগের মধ্যে ভাসে আর একটু কিছুর জন্য হতাশ হয়ে যাব…
তাই আপনার এসব মিলোর ড্রামা বন্ধ করে আর বনিতা না করে সোজাসাপ্টা সত্যটা বলেন…
ড. আরিফ কাচুমাচু করে বলে…. আসলে কখনও হাটতে পারবে না তা বলতে পারব না আবার হাতটেও পারবেন তার গেরান্টিও দিতে পারবনা.. আসলে আপনার মেজর হাড্ডিতে চাপ বেশি পরায় অকাজো হয়ে পরেছে আমরা সব রকমের চেষ্টা করে দেখছি বাকিটা আল্লাহ ভরশা…
আমির এরকম উত্তর আশা করে নি.. বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে বলা হয়েছে এখন যেতে পারেন গেট লস্ট…

ইয়ামিনা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে.. ভাবছে এতকিছু হওয়ার পর একটা মানুষ কিভাবে এতটা স্ট্রোং থাকতে পারে যেখানে সে সত্যিটা জানে…ইয়ামিনার চোখে জল। কেউ দেখার আগে সেটা আড়াল করে ফেলে…

ড. আরিফ বের হলে ইয়ামিনা তার পিছু পিছু যেয়ে জিজ্ঞেস করে..
ড.সত্যি উনিকি কখনও আগের মত হাতটে পারবে না..
ড.আরিফ কিছু চিন্তিত হয়ে বলে…
উনি আগের মত হাটতে না পারার চান্সেস খুব কম বলতে গেলে ৮০%… বাকি ২০% শিওর না উনি হাটতে পারবে কিনা।। তাই উনাকে বসিয়ে না রেখে উনাকে বেশি বেশি করে হাটাতে হবে খুব যত্ন নিবে হবে…বাকিটা আল্লাহর উপর।।
ড..আরিফ চলে যায়..

ইয়ামিনার মনের চিন্তার ভোর করে উনিতো উনার ধারের কাছে আমাকে আসতে দেয় না আমি কিভাবে এত কিছু করব অনিশা মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে.. আসলে কি উনার এসবের জন্য আমি দায়..
___________

ইয়ামনা রুমে এসে জাফরা ভাবিকে দেখে তিনি আমিরকে কিছু হয়তো বুঝাচ্ছেন আর আমির বেশ গম্ভীর ভাবে শুনে চলছন ইয়ামিনার দিকে চোখ যেতে কিছুক্ষন তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়…জাফরা একবার ইয়ামিনার দিকে চেয়ে বের হয়ে আসে রুম থেকে…
আমির পাশে থাকা টেবিলের কাছ থেকে পানি নিয়ে যেন নিতে পারছে না ইয়ামিনা দৌড়ে ধরেতে গেলে…
আমির ইয়ামিনার হাত শক্ত করে ধরে দৃষ্টি পানির দিকে রেখে বলে..

আমি তোমাকে বলেছি সাহায্য করতে.. কোন সাহসে সাহায্য করতে আসো খবদার নেক্সট টাইম যেন না দেখি বলে এক ঝটকা মেরে ইয়ামিনার হাত সরিয়ে দেয়…

রুহান বলে চিতকার দেয় আমির.. রুহান দৌড়িয়ে আসে.. কিছুটা হাপাতে থাকে.. ভয়ে তার অন্তরআত্মা কেপে উঠেছিল…হাপাতে হাপাতে জি স্যার বলেন..

আমাকে ওয়াসরুমে নিয়ে যা ওয়াশ হবো.. রুহান আমির কে ধরে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয়… যাওয়ার আগে আমির পেছনে তাকিয়ে বলে..তোমাকে এই রুম কি এই বিছানাতে ঠাই দিতাম না শুধু জাফরা ভাবির কথাতে তোমাকে সহ্য করছি.. নিয়ে যা রুহান…

ইয়ামিনা এখনও ঠাই দাড়িয়ে আছে…এই লোকটা তাকে এত ঘৃণা করে কিন্তু তার অবস্থা জন্য সত্যি কি আমি দায়….
____________

রাত.. ২.০০ছুই ছুই..
ইয়ামিনার চোখে ঘুম নেই।। বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে.. ডিম লাইটের আলো রুমটাকে আভছা আলোকিত হয়ে আছে..আমির যে নিশ্চুপে চোখের জল ফেলছে ইয়ামনা সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছে।। মানুষটা যতই শক্ত থাকুক দিনে শেষযে সবাই নিজের কস্টটা ভাগকরার জন্য একটা ভরশার হাত খুজে বেড়ায়… একটা মানুষকে জড়িয়ে ধরে কস্টটের ভাগাভাগি করছে চায়.. কিন্তু সেই মানুষটাই যে আমিরের নেই ছেড়ে চলে গেছে নিজের স্বার্থের জন্য….ইয়ামিনার চোখের কোনে পানি..দুজনের চোখে যেন ঘুম নেই।। ঘুম তো তাদের প্রিয় মানুষ চুরি করে নিয়ে গেছে..
দুজনে যেন একই আত্মার মানুষ। বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ।।কিন্তু একই আত্মার হয়ে তারা এক না.. দুইটি ভিন্ন মানুষের কাছে নিজেদের ভালবাসা খুজচ্ছে..

♪♪লইয়া যাইও দিল দেশে♪♪
কইও কথা নিশিতে……..

~হলিদিয়া ফুল বনে~
আসিবো সাজি দিলও টানে…….

🍁দিল ডাকিয়া কও মোরে🍁
এক নজর দেখি বসিয়া….

🍁দিল আমার কিছু বুঝেনা🍂
~ও দিল আমার….~

চলবে… 🌸

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🌸💐

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#আদিলা
#পর্বঃ৪
_____________
বাহিরে হৈচৈ শব্দ শুনে ইয়ামিনার ঘুমটা ভেঙে যায়।। সবে মাএ চোখটা লেগেছিল।।। সারাটাক্ষনই নির্ঘুম রাত পার করে ছিল।।। হটাৎ এমন শব্দ শুনে ইয়ামিনা একটু অবাক হলো… পাশে তাকিয়ে দেখে আমির এখনও ঘুমোচ্ছে… ইয়ামিনা উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতে দেখে সারাবাড়ি সাজানো হচ্ছে.. সবাই একেক কাজে যেন ব্যাস্ত।। একেক সার্ভেন্টরা একেক কাজ করতে ব্যস্ত।।। আরুশিকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে ইয়ামিনা এগিয়ে আরুশিকে ডাকে …

ভাবী তুমি কখন এলে… আর আমাকে ডাকোনি কেন?
সবে মাএই আসলাম।। কেন কিছু হবে নাকি বাড়িটাকে এত সজ্জিত করা হচ্ছে।।
ও হ্যা ভাবি এত জামেলার মধ্যে তোমাকে কেউ হয়তো বলে নি.. আজকে তোমাদের বউ ভাত।। ভাইয়ার যেহেতু এই অবস্থা তাই অনুষ্ঠানটা এখানে করা হচ্ছে… একটু পরে সবাই চলে আসবে…

ইয়ামিনা একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে… ওহ আচ্ছা.. খেয়েছো তুমি..

হ্যা জাফরা ভাবী খাইয়ে দিয়েছে। তুমি খেয়ে নাও আমির ভাইকেও খাইয়ে দিও

ইয়ামিনা কিছু না বলে চলে আসে… রান্নাঘরে ডুকে দেখে জাফরা ভাবি রান্না করছে সাথে চার পাচজন কাজের লোক তাকে সাহায্য করছে…

ভাবি আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছি..

জাফরা একবার ইয়ামনার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে…টেবিলে খাবার দেয়া আছে খেয়ে নাও..
ইয়ামিনা কিছু না বলে কয়েক কদম যেতে জাফরার কথায় দাড়িয়ে পরে… সামনে ফিরে বলে…
কিছু বলবেন ভাবি..
একটা প্লেট হাতে দিয়ে বলে এটা আমিরকে দিয়ে আসো…ইয়ামিনা একটু অসস্তি বোধ করে … কারন আমির তাকে দেখলে আবার রেগে যাবে.. জাফরা ইয়ামিনার দিকে একপলক তাকিয়ে পরক্ষনে বলে.. যাও খেয়ে আসো আমির কে খাবার রুহান দিয়ে আসবে…
ইয়ামিনা কিছু না বলে টেবিলে বসে চুপচাপ খেয়ে নেয় … আজ সারাদিনে একবারের জন্য ইয়ামিনা রুমে যায়নি।।। ইয়ামিনা আমিরের সামনে যেতে চায় না কিন্তু কিছু যে করার নেই তাকে বার বার আমিরের কাছে যেতে হবে একটা দায়িত্বের মধ্যে আটকে আছে ইয়ামিনা… আরুশির সাথে গল্প করে রুম থেকে বের হতে জাফরা ভাবি তার হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলে… এটা আমিরকে দিয়ে আসো..
কিন্তু ভাবি..

আমি জানি চেষ্টা করে দেখলে মন্দ নয়..

ইয়ামিনা কফির মগটা হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়..রুমে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলায় আমিরকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ইয়ামিনা ধীর পায়ে বারান্দায় উকি দিয়ে দেখে আমির হুইল চেয়ারের বসে লেপটপে কাজ করছে… পরন্ত বিকেল বেলা মিষ্টি বাতাসে আমিরের এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে… ২৮ বছরের সুদর্শন যুবক… মুখে খোচা খোচা চাপ দাড়ি.. সব মেয়েদের ক্রাস আইকন ছিল… পরনে ব্ল্যাক টাউজার আর সাদা টিশার্ট…

ইয়ামিনা আমিরের সামনে কফির মগ ধরে একটু ভয়মিশ্রিত কন্ঠে বলে…
ভাবী পাঠিয়েছে.. আপনার কফি…

আমির কিছুক্ষন কফির মগের দিকে তাকিয়ে থাকে মগটা হাতে নিয়ে ইয়ামিনার গায়ে ছুড়ে মারে.. গরম কফি ইয়ামিনার হাতে পরে হাত ঝলসে গেছে অনেকক্ষানি।।
ব্যাথায় আহ করে উঠে ইয়ামিনা…
চোখ লাল করে আমির বলে… কোন সাহসে আবার এসব করতে এসেছো। কান খুলে শুনে রাখো তোমাকে এখানে বউ হিসেবে নয় তিলে তিলে শাস্তি দেয়ার জন্য বিয়ে করেছি যে কস্ট তুমি আমাকে দিয়েছো সেটা তোমাকে দুরে থেকে কিভাবে দিব.. তাই তো একদিনে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি… সো আমার সাথে কোনো রকম সেমপাথি দেখাতে আসবে না।।। নেক্সট টাইম মনে থাকে..

বলে আমির লেপটপ বন্ধ করে নিজের একহাত দিয়ে চাকা ঘুড়িয়ে রুমে চলে যায়… ইয়ামিনা এখনও ঠাই দাঁড়িয়ে আছে… ব্যাথায় হাত টনটন করছে.. কোনো রকম মগের ভাঙা টুকরো গুলো উঠিয়ে চলে যায়…

হাতে বেশ জালা করছে ইয়ামিনার কাউকে দেখাতে চায় না কিন্তু অসহ্য ভাবে হাত জ্বলছে… কল ছেড়ে হাতটা পানিতে দিয়ে রেখেছে একটু একটু আরাম লাগছে… ফর্শা হাত একদম লাল টকটক হয়ে আছে…

এমা ভাবি হাতে কি হলো এত লাল হয়ে আছে কেন..
ইয়ামিনা ধরফরিয়ে পিছে তাকায়.. আ..আসলে কফিটা হাতে একটু পরে গিয়েছল খেয়াল ছিল না…
আহারে ভাবি তুমি না খেয়াল রাখবেনা আচ্ছা আমার সাথে এসো মলম লাগিয়ে দেই…
_____________🌸

চারদিক সন্ধ্যা নেমেছে… পুরো বাড়ি লাইটিং করা হয়েছে।। বেশ ঝাকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়ি… একে একে অতিথিরা আসা শুরু করে দিয়েছে… পুরো বাড়ি ভর্তি মেহমান…. আমির ব্ল্যাক সুট পরেছে…হাতে রোলেক্সের ব্ল্যাক ওয়াচ… চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা।। কোনো হিরোর থেকে কম লাগছে না… আমির সবার সাথে কথা বলছে… হয়তো কস্ট ভুলে থাকতে চাচ্ছে সবার মাঝে কিন্তু মানুষ ওই কস্টটাকে বার বার তার সামনে তুলে ধরছে তার আপাইজ নিয়ে বেশি কথা বলছে… যেটা আমিরের সামনে কেউ বলার সাহস না করলে আশে পাশের মানুষ যে খুসুরফুসুর করছে তা ভাল করে বুঝতে পারছে…

ইয়ামিনা ব্ল্যাক শাড়ি পরেছে আমিরের সাথে মিল রেখে… সাথে ব্ল্যাক হিজাব.. হাত ভর্তি কাচের চুড়ি.. মুখে হাল্কা মেকাপ..
বাহ ভাবি তোমাকে তো আজ দারুন লাগছে।।। ভাইয়া তো তোমাকে দেখলে চোখ সরাতে পারবে না… মাশাল্লাহ… আরুশি চোখ মেরে বলে আমি ছেলে হলে তোমাকে নিয়ে এতক্ষনে পালিয়ে যেতাম..
ইয়ামিনা শুকনো হাসি দেয়…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আরু…

🌼🌼🌼
ইয়ামিনা দাঁড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছে জাফরা ভাবি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে.. অনেক বড় বড় মানুষ..বিজনেস আইকনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে..
হটাৎ কিছুটা দুরে চোখ যেতে দেখে এক জোড়া নীলাভচোখ তার তার দিকে চেয়ে আছে…ইয়ামিনার চোখের সাথে চোখাচোখি হতে আমির চোখ সড়িয়ে নেয়….

সামনের মানুষটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ইয়ামিনা সামনে তাকিয়ে যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। পা যেন ওইখানে থমকে গেছে লড়ার শক্তিটুকূ তার নেই।।চোখের কোনে অজস্র পানি থৈথৈ করছে.. একটু ধাক্কাদিলে যেন গড়িয়ে পরবে.. সেই চিরচেনা মুখ.. মুখের হাসি সব কিছুই যে একসময় তার দুনিয়া ছিল… এই তো তার দিহানজি…..মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে.. হয়তো অনেক দিন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।। চোখের নিচে কালো দাগটা স্পষ্ট… মুখে মলিন হাসি…

দি..দি…দিহা নামটাও যেন আটকে আসছে… জাবিরের ডাকে জাফরা ভাবি কিছু দুরে চলে যায়…

দিহান করুন চোখে তাকিয়ে আছে।। নিজেকে ঠিক করে বলে…কেমন আছো ইয়ামনি..

যেমনটা রেখে গিয়েছিলেন তেমনটাই আলহামদুলিল্লাহ…

দিহান ইয়ামিনার হাতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে.. চোখের কোনে তার পানি.. এই পানি যে অনেক কিছুর ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছে…
ইয়ামিনা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়…
বলেছিলেন না খুব সুখে থাকব.. দেখুন খুব সুখে আছি… অনেক ভাল আছি উনার এত ভালবাসায়…
হটাৎই পেছন থেকে আমির ইয়ামিনার হাত হেচকা টান দেয় ইয়ামিনা ব্যাথা পেলেও সেটা প্রকাশ করে না…

দিহান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়…

হেলো মি.দিহান চৌধুরী… ওয়াটস আপ..মিট মাই ওয়াইফ..

এক্সকিউজ মি বলে দিহান চলে যায়। হয়তো সবার মাঝে কান্নাটা আড়াল করতে চলে গেছে.. ইয়ামিনা এখনও দিহানের যাওয়ার পথে চেয়ে আছে…
ইয়ামিমার হাত আমির এতই শক্ত ভাবে ধরেছে ব্যাথাটা আরও প্রখর হয়ে গেছে… হাতে চুড়ি থাকায় কয়েকটা ভেঙে ইয়ামিনার হাতে গেথে গেছে…
আমির বাকা হেসে
তো কেমন লাগছে নিজের ভালবাসাকে এত কাছে পেয়েও তার কাছে যেত পারছো না।।
ইয়ামিনা কান্না ভরা চোখে আমিরের দিকে তাকায়…
আমি এটাই দেখতে চেয়েছিলাম।। আমার ভালবাসা নিস্ব করে তোমাকে ভাল কি করে থাকতে দেই।।তো মিসেস কেমন লাগল।আজকের সারপ্রাইজ..

ইয়ামিনা ঝটকা মেরে হাতটা সড়িয়ে ওইখান থেকে চলে আসে…. খুব কান্না পাচ্ছে একটা মানুষ এতটা নিচ কিভাবে হয়.. দিহানজি আপনি কি সুন্দর করে বলে গেলেন সুখে সংসার করতে কিন্তু সংসার করতে একটা ভালো মনে মানুষ দরকার হয়।।কিন্তু এই মানুষটার মধ্যে তাও নেয়।।ইয়ামিনা চোখ থেকে পানি পরছে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অনবরত মুছে চলছে…

🌸🌸🌼🌸🌸

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে কিন্তু ইয়ামিনার চোখ এখনো একজন মানুষকে খুজে চলছে… সেটা তো তার দিহানজি… ইয়ামিনা একটু সামনে যেয়ে আশেপাশে ভাল করে দেখতে থাকে হটাৎ পাশে কিছু লোক বিশ্রী কথা শুনে ইয়ামিনার শরীর ঘিনঘিন করে উঠে… পাশে তাকাতে দেখে আমির সেসব শুনেও কিছু বলছেনা ভাবলেশহীন বসে আছে… ইয়ামিনার ঘৃনা জমে লোকটার ওপর… হটাৎ লোক গুলাকে কেউ ঠাসসসস করে চড় মারে।।। ইয়ামিনা পিছে তাকিতে অবাক হয়……

চলবে…🌸🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here