গল্পটা_তোমারই,পর্বঃ4 অন্তিম_পর্ব
Writer :Mst_Meghla_Akter_Mim
মৌ এর বারবার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। মৌ খুব ভয় পেয়ে যায় কিন্তু মনের জোর ছিল অটুট। ভিটামিন সি আছে এমন ফল গুলো খেয়ে নিল। তারপর কিছুটা মাথা ঘুরা কমে গেলো।
.
মিস্টার নিল বিকেল পাঁচ টায় মোজাম্মেল সাহেব দের বর্ডার ক্রস করে দিলেন। নিল বুঝতে পেরেছে যে আর হয়তো মোজাম্মেল সাহেব কে দেখতে পাবেন না। শেষ বিদায় খুব কেঁদে দিলেন। এ দিকে মিম আবারো কল করছে। মিস্টার নিল কলকাতা ফিরে মৌ কে ডাকলেন – –
-উনাদের রেখে আসলাম মৌ। মিম কান্না করতেছে তোমার সাথে কথা বলার জন্য একটু কথা বলো ওদের সাথে।(নিল)
নিল মিম কে কল করে মৌ কে দিলেন – –
“হ্যালো আম্মু কেমন আছো?” – মৌ হেসে হেসে বললো যেনো কিছুই হয়নি।
“আম্মু…” – বলে মিম কান্না করছে।
-আম্মু তুমি কান্না করছো কেনো?(মৌ)
-আম্মু আপ্নার করোনা হয়েছে তাইনা?(মিম)
-“কে বললো তোমাকে? আমার তো কিছুই হয়নি। আমার ডক্টর দেখানো বাকি আছে তাই কয়েকদিন পরে যাবো।”-বলতে বলতে মৌ কাঁশতে শুরু করলো।
-এইতো আপনি কাঁশতেছেন, মিথ্যা কেনো বলছেন? আমি জানি আপ্নার কি হয়েছে। জোর আসছে তাইনা? মেডিসিন খাচ্ছেন? সিন্টম দেখা দিয়েছে তাইনা?(মিম)
মৌ হালকা কাঁদো কাঁদো হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
” না মা আমার কিছু হয়নি। I am totally fit. দোয়া করো তুমি যাতে দেশে ফিরতে পারি আর তোমার নানী আর নানুর দিকে খেয়াল রেখো।”
মৌ এর এই কথাটা যেনো তীরের মতো বিদলো মিম এর বুকে, ও কেঁদে কেঁদে বললো,
“নিজের ঠিক মতো খেয়াল রাখেন আম্মু। গরম পানি আর লেবু সবসময় খান আর আব্বু কেও খাইতে বলেন আপ্নার সাথেই তো ছিল।”
মৌ এর বুকে লাগতে শুরু করলো। ও মিম কে বললো,”আবার কাল কথা বলব নি এখন রাখি ফোন?”
“ঠিক আছে।”
মিম ফোন রেখেই নামাজে বসে পড়লো। কয়েকদিন পর ওর মা কে ফিরে পাবে কি পাবে না তা ওর জানা নেই। যদি আর না ফিরে পায়? নামাজে বসে মৌ এর প্রাণ ভিক্ষা চাইলো আর নিয়ত করলো যতদিন না মৌ এর করোনা নেগেটিভ আসবে ও রোজা রাখবে!
.
মৌ এর বুকে হালকা ব্যথা করছে। তাড়াতাড়ি করে কিছু healthy food খেয়ে নিলেন আর গরম পানি। কিছুক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হয়ে নিল কে বললেন,
” এখন অনেকটা হালকা লাগছে। মেয়েটার সাথে কথা না বলে যেনো আরো বেশি কষ্ট হচ্ছিল।”
-একটু মনের জোর রাখো তুমি। রোজ কথা বলো এখন সবার সাথে কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য মনের জোর হারিয়ে ফেলো না।(নিল)
-আমার ঘুম পাচ্ছে।(মৌ)
-ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়।(নিল)
.
।৪।
রাত দুইটার সময়ে মোজাম্মেল সাহেব নিজের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। উনার অবস্থা ভালো না, একই কথা বারবার বলে চলেছে কিন্তু কোনো আজেবাজে কথা না। কালেমা যেনো উনার মুখ থেকে যাচ্ছেই না। পুরো রাত উনাকে নিয়ে মিম, মোর্শেদা আর জ্যোৎস্না বেগম থাকলেন। সকালে ছয়টা ত্রিশ এ নিল মিম কে কল করলেন সবার খোঁজখবর নিলেন। মৌ এখনও ঘুমিয়ে আছে তা শুনে মিম চিন্তায় পড়ে গেলো।
আজকের দিন টা একটু ভালো আছে মৌ। কিন্তু রাতে হঠাৎ করেই শরীরের ডান পাশ অবশ হতে নিলো। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়ে মৌ নিল কে ডাকল। মৌ এর অবস্থা দেখে নিল এর শরীর যেনো ঠান্ডা হতে শুরু করলো। যদি কিছু হয় এই ভয় বারবার হচ্ছে। নিল তৎক্ষণাৎ গরম পানিতে পুরো দুইটা লেবু দিয়ে মৌ কে খাইতে বললো। একটু লেবুর জল খাওয়ায় কেমন যেনো লাগে কিন্তু পুরো দুইটা লেবুর জল খুব কষ্ট করে খেলো মৌ। খাবারের প্রতি অরুচি এসে গেছিল মৌ এর কিন্তু জোর করেই খাইয়ে দিলেন নিল। একটু পর কিছুটা ভাল লাগলে মৌ দোয়া পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে।
।৫।
মৌ এর হালকা শরীর খারাপ থাকলেও আজ অনেকটা ফ্রেশ লাগছে ওকে। মন টা অনেক ভালো আছে আজ। নিল নিজেও মৌ কে যা যা খাইতে দিতেন তা খাওয়া শুরু করলো কারণ নিল এর ও একটু জ্বর এসেছে।
।৬।
আজ মৌ এর কোনো মাথা ঘুরা বা সর্দি কিছুই নেই। মৌ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে আছে। বারবার উনার বাবার কথা মনে পড়ছে। কেনো যেনো বারবার উনার মনে হচ্ছে উনার বাবা হয়তো মারা যাবেন। দুপুরে সবার সাথে কথা বলেন মৌ।কিন্তু বিকেলের দিকে উনার বাবা মোজাম্মেল হক মারা যায়। খবরটা শুধু নিল কে দেয়া হয়। নিল নিজেও খুব ভেঙ্গে পড়ল মৌ এর থেকে একটু দূরে দূরে থাকতে শুরু করলো। রাতে মৌ নিল কে ডেকে বললেন,
” আমার না ভালো লাগছে না একটু বাড়িতে কল করো তো।”
-এখন কল না করি কাল কে করব নি। শরীর খারাপ লাগছে আমারও একটু ঘুমায়।(নিল)
মৌ আর কিছু বললো না। কিন্তু রাতে একটুও ঘুম আসছিল না। খারাপ স্বপ্ন দেখছিল। ওদিকে নিল সারারাত ঘুমাতে পাড়লো না। কান্না করছে উনি মৌ কে বাসায় গিয়ে কিভাবে বুঝাবে তা যেনো বুঝতেই পারছেন না।
।৭।
পুরো বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেছে। একদিকে মৌ এর চিন্তা সবার মাথায় অন্য দিকে মোজাম্মেল সাহেব পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। দুই শোক একসাথে সবার মনে এক জেকে বসলো।মোজাম্মেল সাহেবের মাটি হয়ে গেলো।
.
নিল সকালে উঠেই করোনা স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে সবকিছু বললেন আর request করলেন যাতে মৌ এর করোনা টেস্ট আজকে করেন উনারা। অনেক কষ্টে রাজি করান উনাদের কারণ আজ মাত্র সাত দিন হয়েছে মৌ এর করোনা পজিটিভ এর।
.
বিকেলে মৌ এর করোনা টেস্ট করে এসে ও সবার সাথে কথা বলার জন্য জেদ করতে শুরু করলো। নিল দিতেই চাইছিল না কিন্তু তবুও মিম কে কল করলো।
-আম্মু কেমন আছো? তোমার নানু কেমন আছে?(মৌ)
মিম কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “ভালো আছে আম্মু। করোনা টেস্ট এর রিপোর্ট তো কাল কে দিবে তাইনা?”
-হুম দোয়া করো। তোমার নানুকে একটু ফোন দাও তো।(মৌ)
মৌ এর কথা শুনে মিম দিশা যেনো হারিয়ে ফেলছে। একটু পর বললো, “আম্মু উনি ঘুমিয়ে আছে পরে কথা বলবেন।”
-ঠিক আছে।(মৌ)
মৌ মনে মনে ভাবছেন,” না এইতো মিম তো বললো আব্বা ভালো আছে আমি মিছে চিন্তা করছি।”
। ৮।
রাত দশ টা বাজে তবুও ফোন এ কোনো এসএমএস না আসা দেখে মৌ আর নিল একটু নিশ্চিত হলো। কারন করোনা পজিটিভ হলে আগেই ফোন এ এসএমএস আসে। পরের দিন রিপোর্ট গুলো নিয়ে মৌ খুব খুশি। ও আর নিল এখন পুরোপুরি নিরাপদ। অনেক খুশি নিয়ে উনার বাবার জন্য মা এর জন্য shopping করার বায়না ধরলো কিন্তু মিস্টার নিল চাইছেন তাড়াতাড়ি বাড়িতে যেতে। মৌ এমনিতেই জানে না উনার বাবা মারা গেছেন। অনেক কষ্টে মৌ কে বুঝিয়ে বাড়িতে আসার জন্য রহনা হলেন। রাস্তার মাঝে অনেকবার সবার সাথে কথা বলেছে কারো কথায় কিছু বুঝতেও পারেনি মৌ। রাত এক টায় বাড়ির দরজায় এসে ডাকলেন নিল, মিম এসে দরজা খুলে দিলো। মৌ আগে বাড়িতে ঢুকেই দৌড়ে মোজাম্মেল সাহেবের ঘরের দিকে গেলেন। কিন্তু সেখানে উনাকে না দেখে মৌ যেনো জমে গেলো।কান্না করে চিৎকার দিয়ে বললো,
“আমার বাবা কোথায়?”
সবাই চুপ করে আছেন কে কি বলবেন উনাকে কিছু বুঝতে পারছেন না।
মৌ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ পরে গেলেন আর বলছেন, “মিম তুমি তো বললে আব্বা ভালো আছে তাহলে কোথায় তোমার নানুভাই?”
মিম মৌ কে ধরলো আর সাহস করে বললো, “আম্মু নানুভাই মারা গেছেন।”
মৌ কথাটা শুনেই চিৎকার করে কান্না করে বললেন,”কোথায় আমার বাবা, আমাকে নিয়ে চলো। এই নিল আমার বাবার কাছে আমাকে নিয়ে চলো।” – মৌ নিল এর শার্ট ধরে বললেন। কিন্তু নিল কোনো উত্তর দিচ্ছে না শুধু কেঁদেই চলেছে।
মিম আস্তে করে বললো, “নানুভাই দুই দিন আগে মারা গেছেন আর উনার মাটি হয়ে গেছে।”
“কি!! তারমানে নিল তুমি জানতে! তুমি জেনেও কেনো আমায় বল নি।”
-বলে মৌ কান্না করতে শুরু করলো। পুরো বাড়িতে আবারো কান্নার রোল পরে গেলো। পুরো রাত এইভাবেই কেটে গেলো।
সকালে মোজাম্মেল সাহেবের কবরে গিয়ে অঝরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মৌ।
.
করোনা থেকে মৌ তো ঠিক মুক্তি পেয়েছিল কিন্তু হারিয়েছিল নিজের বাবা কে। এমন কি করোনা এর জন্য ই বাবা কে শেষ বারের মতো দেখতে পারলেন না মৌ আর নিল। এইভাবেই করোনা থেকে বেঁচে গেলেও মানুষ সে কয়েকদিনে জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলে। অনেকে আবার বেঁচেও ফিরে না। তাই সবাই আমরা নিরাপদ ভাবে থাকবো যাতে করোনা থেকে মুক্তি বেঁচে যাই।
সমাপ্ত
গল্পটা এইখানেই শেষ করলাম। জানিনা কেমন হয়েছে।