গল্পটা তোমারই,পর্বঃ2

গল্পটা তোমারই,পর্বঃ2
Writer: Mst_Meghla_Akter_Mim

।২।

বাহিরে পাখির কিচিরমিচির শব্দের চেয়ে যানজটের শব্দই যেনো বেশি। ইন্ডিয়া তে আজানের ধ্বনির চেয়ে শংক্খ ধ্বনি বেশি শোনা যায়। কোথায় থেকে অস্পষ্ট আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেছে মৌ এর কানে। মৌ এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সারারাত কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছিল তার একটুও মনে নেই। ঘুম ভাঙতে ই দেখলো জোৎস্না বেগম মোজাম্মেল সাহেবের মাথা নেড়ে দিচ্ছে। মৌ তার বাবা কে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মোজাম্মেল সাহেব এইখানে এসে যেনো আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

-মা আব্বার কি হচ্ছে আবার? সারারাত ঘুমায় নি নাকি?(মৌ)

-রাত দুইটার দিকে থেকে আমায় বলতেছে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। তুই চিন্তা করিস না মা।(মৌ এর মা)

দরজায় কেউ কড়া নারার শব্দ শুনে মিস্টার নিল ঘুম থেকে জেগে যান। সবার মনেই একটা ভয় জন্ম নিয়েছে। মিস্টার নিল দরজা খুলে দেখলেন ম্যানেজার এসেছে।

-দাদা পাশের রুম টা তে এখন বউ দি কে রাখতে পারেন।(ম্যানেজার)

-Thank you দাদা ।(নিল)
.
মৌ রুম থেকে যাওয়ার আগে উনার বাবা মায়ের দিকে তাকালেন। মোজাম্মেল সাহেবের যেনো কোনো হুস নেই তার প্রাণ প্রিয় মেয়ের কি হয়েছে সেদিকে। মৌ কে যেতে দেখে মোজাম্মেল সাহেব বললেন,” মৌ কোথায় যাও তুমি?”

মৌ কান্না করতে করতে বললো, “আব্বা ডক্টর এর কাছে যাচ্ছি কিছুক্ষণ পরেই আসব।”

“জানিনা আব্বা আবার আপনাদের মাঝে আসতে পারবো কি না, ক্ষমা করে দিবেন আমায় আপনাকে করোনা এর কথা বললাম না। এমনিতেই অসুস্থ আপনি এই কথাটা আপনাকে আরো অসুস্থ করে দিবে।” – মৌ মনে মনে ভাবছে।
_____________________________

সকাল নয় টায় মিস্টার নিল উনার মেয়েকে কল করলেন।

-হ্যালো আম্মু কেমন আছো তোমরা?(নিল)

-আমরা ভালো আছি আব্বু, আপনারা কেমন আছেন?(মিম)

মিস্টার নিল মলিন কণ্ঠে বললেন,” ভালো। কোথায় আছো তুমি?”

-কলেজ এ এসেছি আব্বু। আম্মু কোথায় একটু দেন তো।(মিম)

-তোমার আম্মু ছাদে গেছে এখন বেশি কথা বলা যাবে না রাখছি।(নিল)

-আব্বু….

মিম এর কথা না শুনেই মিস্টার নিল ফোন রেখে দিলেন।

“সবাই কেমন যেনো হয়ে গেছে। আর আম্মুর ও কি একবারও কথা বলার ইচ্ছা হয় না।” – মিম অভিমানী কণ্ঠে নিজে নিজে বললো।
.
মিস্টার নিল ফোন রেখে ভাবছেন, “কি বলব তোমায় মিম? তোমরা জানলে যে কান্নাকাটি করবে।”
তারপর উনি বাহিরে গেলেন কিছু খাবার আনতে।

মৌ একা ঘরে শুয়ে আছে। মনের ভিতরে খুব ভয় করছে কখন যে কি হয়! কিন্তু তার মাঝেই হঠাৎ হোস্টেল মালিক এসে বললেন,

“এইখানে কে করোনা রোগী আছে? ম্যানেজার কেনো তাদের রেখেছো? এখনই চলে যেতে বল।”

মৌ কথাটা রুম থেকে শুনতে পেরেই শুয়া থেকে উঠে বসে। এমনিতেই করোনায় আক্রান্ত সাথে সাথে হোস্টেল মালিকের কথা শুনে আরো ভয় পেয়ে গেলো। মনের মধ্যে হতে লাগলো তাহলে কি উনাকে হাসপাতাল এ নিয়ে যাবে?

ম্যানেজার টা খুব ভালো ছিল। উনি হোস্টেল মালিক কে বললেন,” উনারা এইখানে আসার পর করোনা পজিটিভ হয়েছে আর একটা অন্য রুম এ ই তো আছেন তাহলে প্রবলেম কোথায়? আর উনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন উনাদের বিপদের সময় উনাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য স্যার।”

উনি রেগে ম্যানেজার কে বললেন, “তোমার এতো উদার হতে হবে না। এইটা আমার হোস্টেল! যদি কেউ জানে এইখানে করোনা রোগী আছে তাহলে কেউ আর এইখানে আসবে না।”

ম্যানেজার আর হোস্টেল ওনার এর মধ্যে কথা হচ্ছে এমন সময়ে নিল চলে আসলো। নিল কে আসতে দেখেই মৌ ঘর থেকে বললো,” উনারা কি বলে শুন তো।”

-কেনো কি হয়েছে?(নিল)

-হোস্টেল এর মালিক এসে কি যেনো বলতেছে।(মৌ)

-ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না, আমি দেখছি। রেস্ট নাও তুমি।(নিল)

নীল উনাদের কাছে যেতেই হোস্টেল এর মালিক বললো,”আপনার রোগী কে হাসপাতাল এ পাঠিয়ে দিন।”

-ডক্টর এর সাথে কথা বলেই রোগী কে এইখানে রেখেছি। উনারা বললেন হাসপাতাল এ isolation এ রাখার প্রয়োজন নেই।(নিল)

-উনারা যা খুশি বলুক কিন্তু আমি রাখব না উনাকে এইখানে। অন্য কোথাও নিয়ে যান।(হোস্টেল মালিক)

-এইখানে কোথায় নিয়ে যাবো ওকে আমরা? দেশে হলে এমন হতোনা, একটু সাহায্য করুন আমাদের ও তো একা একটা রুম এ আছে।(নিল)

-হুম আমিও তো সেই কথায় তখন থেকে বলে যাচ্ছি।(ম্যানেজার)

-তুমি এতো বলার কে? উনাকে রাখলে আমার ক্ষতি হবে।(হোস্টেল মালিক)

তখনই ম্যানেজার এর কাছে কল আসলো স্বাস্থ্য দফতর থেকে।

-আপনাদের হোস্টেল এ করোনা রোগী মৌ আকতার আছেন?

-জী।

-উনি আলাদা রুম এ আছেন তো?

-জী।

-তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের update দিতে থাকবেন।
.
ম্যানেজার ফোন রেখে হোস্টেল মালিক কে বললেন,”স্যার স্বাস্থ্য দফতর থেকে কল করে উনাকে এইখানে রাখতে বলেছেন। আপনি আর কোনো ঝামেলা করবেন না দয়াকরে।”

হোস্টেল মালিক আর কিছু না বলে রেগে চলে গেলেন। ম্যানেজার মুচকি হেসে মিস্টার নিল কে বললেন,” দাদা কোনো চিন্তা করবেন না তো আমি আছি না। আপনারা এইখানেই থাকবেন। ভয় করবেন না কেউ।”

-হুম দাদা।(নিল)

ম্যানেজার মৌ এর রুম এর সামনে গিয়ে বললো,” ও বউ দি কি করছেন? আপ্নার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

মৌ ঘরের দরজা একটু খুলে বললো,” দাদা ভালো আছি। কিছু হচ্ছে না এখনো। দোয়া করবেন।”

-আরে বউ দি কোনো চিন্তা করবেন না। একেবারে ঠিক হয়ে যাবেন আপনি।(ম্যানেজার)

মৌ মলিন হাসি দিলো।

মনের জোর দেয়ার মানুষও সব জায়গায় যেনো থাকে।
.
মিস্টার নিল মৌ কে খাবার দিতে আসলে মৌ উনাকে বললো, “মিম – মাহি কেমন আছে? কথা বলেছ ওদের সাথে?”

-হুম ভালো আছে ওরা তুমি চিন্তা করো না। আর কোনো সমস্যা হলেই আমায় ডাকবে।(নিল)

-হুম।(মৌ)

.
দুপুর বারো টায় মিস্টার নিল আবারো ছেলে মেয়ের কাছে ফোন করলেন। কয়েকবার ফোন বেজে চলেছে তবুও কল রিসিভ করছে না কেউ। কিছুক্ষণ পর মিম কল ব্যাক করলো – –

-এতক্ষণ কোথায় ছিলে? ফোন কাছে রাখতে হয় না? কখন কি বিপদ হয় না হয় কে জানে।(নিল)

নিল এর মুখে বিপদের কথা শুনে মিম এর বুকের মধ্যে কেমন যেনো হয়ে উঠলো।

-রান্না করছিলাম আব্বু। কেমন আছেন আপনারা? কি করছেন? খাইছেন কিছু?(মিম)

-সবাই ভালো আছি। মিম এইখানে এসে আবার আমাদের করোনা টেস্ট করতে হয়েছিল।(নিল)

মিম এর মন খুব কু ডাকছে ও তাড়াহুড়ো করে বললো,”সবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে তো?”

মিস্টার নিল কথা বলতে নিয়ে একটু আটকে গেলেন। মেয়েকে কি বলবে? সত্যি টা লুকিয়ে বললেন,” হ্যাঁ সবার ঠিক আছে রিপোর্ট।”

উনার কথায় মিম এর একটা খটকা লাগে। ও বলে,”আম্মুর সাথে একবারও কথা হয় নি আম্মু কে একটু ফোন দেন তো।”

মিস্টার নিল সত্যি গোপন করার জন্য বললেন, “এত কথা বলতে হবে না। তোমার বড় খালা মণি তোমার সাথে আছে উনাকে ফোন দাও।”

মিম মুখ ভার করে মোর্শেদা[মৌ এর বড় বোন] কে ফোন দিলেন।

_____________

প্রায় পুরো দিন গেলো মৌ এর কোনো সিন্টম দেখা দেয় নি। কিন্তু মোজাম্মেল হক এর অবস্থা অনেকটা খারাপ হয়ে এসেছে। আজকে ডক্টর এর সিরিয়াল দিয়ে এসেছে কাল ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন। মৌ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গঙ্গার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছেন। ভাবছেন,

“আজ তো সুস্থ আছি কিন্তু কাল কি হবে কিছুই জানি না।”

এমন সময়ে হঠাৎ মৌ এর মাথা ঘুরে উঠলো। কোনো মতে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর যতো দোয়া জানতো পড়তে শুরু করলো।নিল ঘরের সামনে এসে বললেন,

“কোনো সমস্যা হচ্ছে মৌ?”

-একটু মাথা ঘুরছে।(মৌ)

মিস্টার নিল কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন। মৌ যে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে তা বুঝতে পেরে মৌ কে সাহস দেয়ার জন্য বললেন, “উঠো এইযে লেবুর সরবত আর খাবার খেয়ে নাও তাহলে শরীরে জোর পাবে।”

-মিম এর আব্বু তুমি ওইসব নিয়ে যাও। আমার কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।(মৌ)

-তা বললে তো হবে না একটু খেতে হবে প্লিজ খেয়ে নাও।(নিল)
মৌ একটু খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

।৩।

আজকে প্রথম রাত মৌ একা একা এক ঘরে আছে। নিল, মৌ এর মা মেয়ের চিন্তায় দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। এইদিকে মোজাম্মেল সাহেব এর অবস্থা অবনতি হতে শুরু করলো। নিল মোজাম্মেল সাহেব এর অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন কাল কে ডক্টর দেখিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিবেন।

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here