ভালোবাসি তোমাকে,পর্ব:১ম
লেখকঃ MD_Sumon_Kobir
আজ কলেজ থেকে মেসে ফেরার সময় একটা মেয়ে আমাকে ডাক দেয়।আমি তার কাছে গেলাম।সে বললো,,,,,, ভাইয়া আমি জানি আপনি গনিত অনেক ভালো পারেন। তাই আমি আপনার কাছে এসেছি একটা গনিতের সমাধান করতে। যদি একটু সাহায্য করতেন ভালো হতো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকালে দেখিয়ে দেবো।আমার এখন একটু তাড়া আছে।
মেয়েটাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।আচ্ছা ভাইয়া আপনি কোন কলেজে পড়েন যেন।
আমিঃ এই তো পলিটেকনিক এ।
মেয়েটাঃ ওহ তাহলে তো আর ভালো হলো।
আমিঃ কেন?
মেয়েটাঃ আমিও ওখানে পড়ি।
আমিঃ ও তাহলে ভালো কাল কলেজে আমার সাথে দেখা করো।
মেয়েটাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
আমিঃ তাহলে আসি এখন।
আমি ওখান থেকে মেসে চলে আসলাম।মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ অনেক কষ্ট হয়ে গেছে।খুব ক্লান্ত লাগছে।তাই ঘুম আসতে দেরি হলো না।ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকাল ৪ টা বাজে।দুপুরের খাবারও খাওয়া হয়নি আজ।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।খুব রিলাক্স ফিল করছি এখন।মেস থেকে বের হয়ে আবদুল করিম চাচার চায়ের দোকানে গেলাম চা খাওয়ার জন্য। চা খেয়ে চলে গেলাম টিউশনি করাতে। টিউশনি করিয়ে রাত ৯ টার দিকে মেসে ফিরলাম।রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান শুনে।আমি অজু করে নামাজ পড়ে নিলাম।কিছু সময় কুরআন তেলাওয়াত করলাম।প্রায় ৮টার দিকে কলেজে গেলাম।কলেজে গিয়েই খেলাম এক ধাক্কা। সেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়ায়।হাতে একটা গোলাপ রয়েছে। আমি তো ঘাবড়ে গেছি।কিন্তু না তেমন কিছুই হলো না।আমার কাছে একটাখাতা আর কলম দিয়ে বলে,,,,,,,,,এই গনিত টার সমাধান করে দেন।আর একটু বুঝিয়ে দেন।
আমিঃ হ্যা দিচ্ছি।তার আগে নাম টা কি বলো।
মেয়েটাঃ আমার নাম আফিয়া সাইয়ারা।
আমিঃ পুন্যবতী তারা তাই তো।
আফিয়াঃ হুমম। খুব সুন্দর তাই না।
আমিঃ হ্যা। কে রেখেছিল নামটা।
আফিয়াঃ আমার আম্মু রেখেছিল।
আমিঃ এই নাও তোমার গনিত।
আফিয়াঃ ধন্যবাদ ভাইয়া।প্রয়োজন হলে আবার আসবো কিন্তু।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
ওর অংকের সমাধান টা করে দিয়ে আমি ক্লাসে চলে আসলাম। ২ টা ক্লাস পরে কলেজ ছুটি হয়ে গেলো।শিক্ষক শিক্ষিকারা নাকি দাওয়াতে যাবে।আমি ক্লাস রুম থেকে বের হয়েছি।তখনি একটা ছেলে আমার সামনে এসে দাড়ায়। তার নাম সাঈদ। আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,,, কি খবর সাঈদ কোনো সমস্যা।
সাঈদঃ কিছু না ভাইয়া।
আমিঃ লেখাপড়া কেমন চলছে।
সাঈদঃ ভালো ভাইয়া।
আমিঃ মন দিয়ে লেখাপড়া করো কেমন।
সাঈদঃ জ্বি ভাইয়া।
আমিঃ ঠিক আছে। আমি তাহলে আশি।
সাঈদঃ ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ হ্যা বলো,কি বলবা?
সাঈদঃ বলছিলাম যে আফিয়া নামের মেয়েটা কি আপনার কাছ থেকে প্রতিদিন গনিত করে নেই।
আমিঃ না প্রতিদিন না।তবে মাঝে মধ্যে করবে বলেছে। কেনো কোনো সমস্যা।
সাঈদঃ না ভাইয়া তেমন কোনো সমস্যা নেই।
এই বলে একগাল হেসে দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায় আমার কাছ থেকে।আমিও চলে আসলাম। সোজা মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে বাজারে গেলাম একটা বই কেনার জন্য।বই কিনে মেসে এসে রান্নার কাজে লেগে পড়লাম।রান্না শেষ করে গোসল করে নিলাম।তারপর খাওয়া দেওয়া করে এক ঘুম।
এই ভাবে কলেজ,মেস আর আফিয়ার গণিতের সমাধান করতে করতে দিন কেটে যেতে লাগলো। একদিন কলেজ ছুটির পরে আমি আফিয়ার গনিত সমাধান করছি।আসল কথা হলো আফিয়া বিনা টাকায় প্রায়ভেট পড়ছে।প্রতিদিন একটা বা দুটো গনিত করে দিতে হয়।আফিয়া আমার পাশে বসে আছে।
হটাৎ সাঈদ নামের ছেলেটা আফিয়াকে ডাক দেয়।আফিয়া চলে যায় তার কাছে।
সাঈদ আফিয়াকে বলে,,,,, আফিয়া আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
আফিয়াঃ হ্যা বলেন।
সাঈদঃ এখানে না একটু সাইটে যেতে হবে।
আফিয়াঃ যা বলার এখানে বলেন। আমি অন্য কোথাও যেতে পারবো না।
সাঈদঃ ওকে এখানেই বলি তাহলে।
আফিয়াঃ হ্যা বলেন।
সাঈদঃ অনেক দিন ধরে বলবো বলবো করছি কিন্তু সাহস পাই নি। আজ বলতে চাই।
আফিয়াঃ হ্যা তাড়াতাড়ি বলেন।আমার কাজ আছে।
সাঈদ আর দেরি করলো না।একটা সাদা গোলাপ আফিয়ার দিকে এগিয়ে দিল।আর বললো,,,,,
সাঈদঃ আফিয়া! আমি তোমাকে ভালোবাসি। I Love You Afiya
আফিয়াঃ এই কথা বলার জন্য ডেকেছেন।
সাঈদঃ আজ আমি তোমার কাছে আমার মনের কথা ব্যক্ত করতে চাই। বলতে চাই না বলা ভালোবাসার কথা।যদি তুমি শোনো।
হে প্রিয়,অনেকে বলে, প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছি। আমি এই কথাটি নিছকই উপমা ভাবতাম, কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে কথাটি সত্য মনে হয়।কারন প্রথম দেখাতেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে দেখার পর থেকে আমার পৃথিবীটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।তোমাকে ছাড়া নিজেকে শূন্য শূন্য লাগে। আমার কল্পনা বাস্তব সবটা জুড়ে শুধু তুমিই আছো। তোমাকে অনেকবার বলতে চেয়েও বলতে পারিনি, তাই আজ বলছি ভালোবাসি তোমায়।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আফিয়া।তোমাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই।
I LOVE YOU
I Really Love You
Do You Love me.Afiya!
Please answer me.
আফিয়াঃ হুমম বুঝলাম।তবে আমি কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
সাঈদঃ হ্যা করো।
আফিয়াঃ আপনার কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন! কত দিন ধরে আমার পেছনে পড়ে আছেন।
সাঈদঃ সত্যি বলতে এর সঠিক হিসাব আমার কাছে নেই।তোমাকে দেখার পর থেকেই।
আফিয়াঃ হুম দ্বিতীয় প্রশ্ন,, মাসিক আয় কত আপনার।আমার হাত খরচ কি দিতে পারবেন তো?
সাঈদঃ ভালোবাসতে কি আয় করা লাগে।আর তোমার হাত খরচ দিতে পারবো কিনা সেটা না হয় গোপন থাকুক।
আফিয়াঃ নিজের চেহারা কখন আয়নায় দেখেছেন। কি মনে করেন নিজেকে।দেখে তো মনে হচ্ছে বস্তির ছেলে। আমার প্রতিদিন কত করে হাত খরচ লাগে জানেন ( আমাকে ডেকে বলে) এই যে সুমন ভাইয়া,, এই দেখেন ফকিরের পোলাই আমাকে প্রপোজ করেছে।এই ছেলে তুই জানিস আমি কোন বংশের মেয়ে। আমার ভরনপোষণের টাকা আছে তোর। যা ভাগ এখান থেকে।পকেটে নেই টাকা হেই আবার আইছে প্রেম নিবেদন করতে।যা ভাগ।
সাঈদকে আচ্ছা মতো অপমান আফিয়া চলে আসে। ওদিকে সাঈদ মাথা নিচু করে চলে গেলো।ও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আফিয়া বলার সুযোগ দেয় নি। আফিয়া আমার কাছে আসতেই আমি বলি,,,,,,,,,,,,,,,এটা কি করলে তুমি।এই ভাবে অপমান না করলে কি হতো না।
আফিয়াঃ আমি জানি এটা করা আমার উচিৎ হয়নি।কিন্তু কি করবো।ভালোবাসা খাটি কি নকল তাতো একটু পরিক্ষা করতে হবে। তাই না।
আমিঃ কি তুমি ওকে পরিক্ষা করছিলে। হা হা হা!
আফিয়াঃ হ্যা ভাইয়া।
আমি আফিয়ার অংক করতে লাগলাম।আফিয়া অংক করা দেখছে।প্রায় অংক শেষের পথে।তখনি একটা ছেলে এসে আমাকে বলে ভাইয়া এই চিঠিটা সাঈদ ভাইয়া দিয়েছে।
আমি চিঠিটা নিয়ে আফিয়ার কাছে দিলাম।আর পড়তে বললাম। আফিয়া পড়া শুরু করলো,,,,,
,,,,,,চিঠি,,,,,,,
প্রিয়,,,,
আমি জানি তুমি ভালো আছো।আর এটাও জানি তুমি আমাকে অপমান করে অনেক খুশি হয়েছো। তুমি আমাকে যতই অপমান করো না কেনো।তাতে আমার বিন্দু পরিমান কষ্ট হবে না।কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসার মানুষের করা অপমানও আমার কাছে এক পৃথিবী ভালোবাসার সমান।আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকেই ভালোবাসবো।তোমাতেই খুজে পেতে চাই আমার অস্তিত্ব।
শেষ একটা কথা বলি তুমি আমার জীবনের প্রথম নারী।আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
ইতি
তোমার ফকির প্রেমিক।
আফিয়া চিঠিটা পড়ে বুকে জড়িয়ে ধকর কেদে উঠে। আর বলতে থাকে আমিও তো ভালোবাসি তোমাকে। কিন্তু কি করবো বলো, তোমার বাবার টাকা আছে আর আমি তো সামান্য গেটের দারুয়ানের মেয়ে মাত্র।
তখনি আমি বলি,,,,,,,,,,,,,,কি বলছো এসব।
আফিয়াঃ হ্যা ভাইয়া ঠিকি বলছি। আমি এক গরিব পিতার সন্তান। আমি এখানে আমার এক দুঃসম্পর্কের খালার বাসায় থাকি কাজের মেয়ে হিসেবে।বাসার কাজ শেষে আমি কলেজে আসি।আর কলেজ থেকে গিয়ে কাজ করি।যার কারনে আমি গনিত করার সময় পাই না।তাই আপনার কাছ থেকে করে নেই।
আমিঃ কিন্তু সাঈদ যে তোমাকে ভালোবাসে।
আফিয়াঃ আমি জানি ও আমাকে ওর জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।
আমিঃ তুমি জানো তবুও ওকে কেন অপমান করলে।
আফিয়াঃ আমি দেখতে চেয়েছিলাম,ও কেমন প্রকৃতির ছেলে।ওকে অপমান করার পরও আমাকে আবার প্রপোজ করে কিনা।
আমিঃ ও যদি প্রপোজ না করে।
আফিয়াঃ আমি যত দুর জানি ও আমাকে আবার প্রোপোজ করবে। যদি ও আমাকে সত্যি ভালোবাসে তাহলে আমি শিওর ও আমাকে আবার প্রপোজ করবে।
আমিঃ আর যদি না করে?
আফিয়াঃ আর যদি না করে তাহলে কি আর করার। ভাববো ওর ভালোবাসায় খুদ ছিল।আর আমি ছিলাম ওর জন্য অযোগ্য।
আমিঃ হুম বুঝলাম।তুমি ওকে অনেক ভালোবাসো তাই না।
আফিয়াঃ হ্যা অনেক। যেদিন ওকে প্রথম দেখি সেই দিনই আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই।
আমিঃ তাহলে ওকে অপমান করলে কেন?
আফিয়াঃ অপমান আমি দুটো কারনে করেছি।
আমিঃ কি কি কারন।
এরপর ও আমাকে যা বলবো সেটা শুনে মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।মনে মনে হাসছিলাম আর আর ভাবছিলাম এমনও প্রেম পাগল মেয়ে এখনো দুনিয়ায় আছে।
To be continue…………