মেঘকন্যা☁️ Part_09,10

মেঘকন্যা☁️
Part_09,10
Writer_NOVA
Part_09

মেঘরাজ্য…….

রাজদরবারে উপস্থিত সব গণ্য মান্য ব্যক্তি। রাজা সিংহাসনে চিন্তিত মুখে বসে আছেন। তিনি তার পুত্রের প্রাণ সংকট নিয়ে ভয়ে আছেন।তার হাতের পাশে একটা কবুতর।সেটা আর অন্য কোন পাখি নয়।মেঘপুত্রের পোষা পাখি কুহুকলি।কহুকলি এখন কবুতরের রূপে আছে।সে একটা অদ্ভুত পাখি।যার কিনা কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই। যেকোন পাখির রূপ সে নিতে পারে। সেনাপতি রাকিন দ্রুত পায়ে রাজ দরবারে প্রবেশ করে তলোয়ার কোষমুক্ত করে কুর্নিশ করলো।

রাকিনঃ আসালামু আলাইকুম মহারাজ।

রাজাঃ অলাইকুম আস সালাম। কোন জরুরি সংবাদ?

রাকিনঃ আমাদের কাছে গোপন সূত্রে তথ্য এসেছে, সামনে আমাদের রাজ্যে হামলা হতে পারে।খুব শীঘ্রই আমাদের মেঘরাজ্যের সাথে অঙ্গরাজ্য যুদ্ধ ঘোষণা করবে।ঐ রাজ্যের রাজার পরবর্তী পরিকল্পনা এটা।

রাজাঃ আমাদের সৈন্যদের আরো ভালো করে প্রশিক্ষণ দেও সেনাপতি রাকিন।আমাদের হেরে গেলে চলবে না।মনে রেখো হেরে যাবে তো মরে যাবে।পুরো রাজ্য ওদের অধীনে চলে গেল আমাদের মৃত্যু ছাড়া কোন গতি হবে না।

রাকিনঃ আপনি চিন্তিত হয়েন না মহারাজ। আমি যুদ্ধের জন্য আমাদের সৈন্য প্রস্তুত করে রেখেছি।

রাজাঃ চিন্তা কি আর শুধু শুধু করি সেনাপতি রাকিন?এবার যদি যুদ্ধ আরম্ভ হয় তাহলে মেঘপুত্র শরীক হতে পারবে না।পুত্র আবরার আওসাফ যদি যুদ্ধে শরীক হয় তাহলে অন্যদিকে মেঘকন্যার ক্ষতি হতে পারে। মেঘকন্যার কিছু হওয়া মানে আমার পুত্রের প্রাণ সংকট। আবার যুদ্ধে আমাদের সতর্ক না হলে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০%। একটু অসতর্ক হলেই সর্বনাশ। আমি দুদিক দিয়ে পিছলে যাচ্ছি। এদিকে গেলে ঐদিকে সর্বনাশ।ঐদিকে গেলে এদিকে সর্বনাশ।নিজের রাজ্য বা পুত্র কারোর ক্ষতি আমি চাইছি না।দুটো জিনিস আমার কাছে আমানত।তাদের আমি হারাতে চাই না।

রাকিনঃ আপনি শুধু শুধু চিন্তিত হয়ে নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি করছেন মহারাজ। আমরা আছি, আমাদের সৈন্য আছে,সাথে রাজ্যের প্রজারা আছে।সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সাথে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আছে। তিনি যদি না চান তাহলে কারো সাধ্যি নেই আমাদের ক্ষতি করার।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন,ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরি হবে।

রাজাঃ সবসময় যে শক্তি দিয়ে জয় হবে এমনটাকি কোথাও লিখা আছে সেনাপতি রাকিন?অঙ্গরাজ্যের রাজা,মন্ত্রী, সেনাপতি এমনকি প্রজারাও অনেক ধূর্ত।গত যুদ্ধে আমাদের সাথে মিথ্যে সন্ধি করে পেছন থেকে কাপুরুষের মতো আক্রমণ করেছিলো।এবার যে করবে না তার নিশ্চয়তা কি?

রাকিনঃ আপনি দুশ্চিন্তা মুক্ত হোন মহারাজ। আমরা সকল দিক দিয়ে তৈরি হয়েই যুদ্ধ ময়দানে যাবে।যেহেতু এবার মেঘপুত্র নেই সেহেতু আমাদেরকে অনেক সতর্ক হয়ে যুদ্ধ ময়দানে নামতে হবে।

মন্ত্রীঃ মহারাজ আমরা কি কোনভাবে পুত্রকে যুদ্ধের কিছু দিন আমাদের কাছে রাখতে পারি না?পুত্র না হয় পৃথিবী থেকে আমাদের পুত্রবধূকে সাথে করে রাজ্য নিয়ে আসবে।

রাজাঃ নাহ্ মন্ত্রী। এমনটা হওয়ার নয়।মেঘকন্যা ও পুত্র এখানে এলে তাদেরকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা আরো বেশি। আমরা তাদের সুবর্ণ সুযোগ করে দিবো।একসাথে দুই কাজ হাসিল করে নিতে পারবে।যুদ্ধ করার পাশাপাশি তারা কন্যা,পুত্র দুজনের ক্ষতি করে নিবে।তখন যতটুকু রাজ্য বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে সেটাও আমরা হারাবো।

রাকিনঃ শান্ত হোন মহারাজ। আপনি এসব নিয়ে চিন্তিত হয়ে নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেন না।আমার ওপর ভরসা করে সব ছেড়ে দিন।আপনি এখন কহুকলিকে নিয়ে অন্দরমহলে গিয়ে বিশ্রাম নিন।

রাজাঃ রাজ্যের ঘোর বিপদ ঘনিয়ে আসছে সেনাপতি রাকিন।আর এই সময় আমি অন্দরমহলে গিয়ে বিশ্রাম নিবো। এটা নিতান্ত হাস্যকর কথা ছাড়া কিছুই নয়।

মন্ত্রীঃ আমরা ময়ূর রাজের থেকে সাহায্য চাইতে পারি মহারাজ? উনারা নিশ্চয়ই আমাদের ফিরিয়ে দিবে না।তাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান।

রাজাঃ আমাদের গোপন সূত্র কাজে লাগিয়ে দেও।তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে আমরা তার দ্বিগুণ হারে সৈন্য নিয়োগ দিবো।

কুহুকলিঃ মহারাজ, আমাদের মেঘকন্যা ও পুত্রের সামনে ঘোর বিপদ ঘনিয়ে আসছে। ইশাল তাদের এতো সহজে ছেড়ে দিবে না।সে নতুন করে ফন্দি আঁটছে কন্যা ও পুত্রের ক্ষতি করতে।

রাজাঃ এই জন্য তো আমি আরো বেশি চিন্তিত কুহুকলি।কন্যা যদি আমাদের শক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকতো তাহলে কোন সমস্যা হতো না।এখন আল্লাহর ওপর ভরসা করা ছাড়া আমার হাতে কোন উপায় নেই। আমি এখন নামাজ পড়ে কন্যা ও পুত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবো।তছাড়া আর কিছু নয়।তিনি যদি চান সব ঠিক করে দিবেন।

পুরো রাজদরবারে কিছু মুহূর্ত পিনপিনে একটা নিরবতা বিরাজ করলো।কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে।সামনের যুদ্ধের জন্য সবার মনে ভয় ঢুকে গেছে। সাথে মেঘপুত্রের প্রাণ সংকটের ভয়ও গ্রাস করেছে।

🌨️🌨️🌨️

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।সেদিনের ঘটনার পর আমি কলেজে যায়নি।আয়িশের সাথে কোন কথা বা দেখা হয়নি।আমি নিজেকে রুমে আটকে রেখেছি কিছু দিন ধরে। আমার রুমে ঐ জ্বীনটার জ্বালাতন আরো বেড়ে গেছে। আমি তাকে কিছুতেই কাবু করতে পারছি না।ছাদে দাঁড়িয়ে মনে মনে ফন্দি আঁটেছি কিভাবে ঐ জ্বীন ব্যাটাকে ধরবো।অনেকদিন পর খোলা আকাশের নিচে এভাবে দাঁড়ালাম। দুই হাত মেলে, চোখ বন্ধ করে রইলাম।আশেপাশের পরিবেশটাকে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি।সাথে চিন্তা করছি।

আমিঃ কি করি কি করি?আমার মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না কেন?কি করবো আমি? রুমটা কি কোন হুজুর এনে বন্ধ করে দিবো?ফজর ও মাগরিবের পর নিজের শরীর বন্ধ করে রাখি।তারপরেও আমি ঐ বজ্জাত ব্যাটার জ্বালানি থেকে বাঁচতে পারছি না।তাহলে রুম বন্ধ করে কি ফায়দা হবে?আব্বিকে কি বলবো আমাকে একটা তাবিজ এনে দিতে।তারপরেও যদি এর হাত থেকে রেহাই পাই।আর ভালো লাগে না।

তখনি আমাকে পেছন থেকে শক্ত করে জাপটে ধরে চুলে কেউ মুখ গুঁজে দিলো। আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো।কাঁপা কাঁপা চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম বেশ বডি ওয়ালা একটা ছেলে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কিন্তু তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছি না। তার হাত ছুটানোর জন্য আমি হাত ধাক্কাতে লাগলাম।কিন্তু রডের মতো হাত দুটোর একটাও আমি সরাতে পারলাম না।

—-বউ ডিস্টার্ব করছো কেন?আমাকে আমার কাজ করতে দেও।তোমার চুলের স্মেল-টাতো দারুণ। কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো?স্মেল টায় আমি কিন্তু ঘোরে চলে যাচ্ছি। এখন যদি আমি রোমান্সের মুডে চলে যাই তবে আমার কোন দোষ নেই।

তার কথা শুনে আমি বরফে জমে গেছি। বলে কি এসব?তোওবা তোওবা।আল্লাহ বাঁচাও।আমি কি শ্যাম্পু লাগিয়েছি তা নাকি এই ব্যাটাকে বলবো।হু হু একটুও বলবো না।তারপরে সে শ্যাম্পু তার চুলেও ব্যবহার করবে।আমি এখনো তার হাত আমার পেটের থেকে সরানোর জন্য নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কাতে লাগলাম।কিন্তু এক চুলও নাড়াতে পারলাম না।ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম।

— শুধু শুধু নিজের শক্তিগুলো নষ্ট করে কোন লাভ নেই। আমি তোমাকে না ছারলে তুমি কখনো আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবে না।তাই ব্যর্থ চেষ্টা করো না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।আমার সাথে কুস্তি না করে শত্রুদের সাথে তো এই শক্তি ব্যয় করতে পারো।তাহলে তোমার আশেপাশে কোন শত্রু ভুলেও ঘেঁষতে
পারতো না।

আমিঃ কে কে কে আপনি?আমাকে এমন জ্বালাচ্ছেন কেন?ছাড়ুন আমায়। আমার অনেক অস্বস্তি লাগছে। আপনার শরীর এতো ঠান্ডা কেন?যার কারণে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।ওয়েট,আমি তো ছাদের দরজা আটকে রেখেছি। আপনি ভেতরে ঢুকলেন কি করে?

—আস্তে বউ।এতো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিবো কিভাবে?একে একে প্রশ্ন করো।

আমিঃ ভনিতা না করে কথার উত্তর দিন।

—নিজের বরকে চিনো না বউ।আমি আমার বউকে জ্বালাবো না তো কাকে জ্বালাবো।আমার শরীরের তাপমাত্রা ঠান্ডা তাই আমার শরীর ঠান্ডা। লাস্ট প্রশ্নের উত্তর, আমি ভেতরে কিভাবে ঢুকলাম?তুমি তো দরজা বন্ধ করে রেখেছিলে।আমার তোমার কাছে আসতে কোন দরজা লাগে না। তাহলে দরজা খোলা থাকুক বা বন্ধ থাকুক আমার কি?

আমিঃ আআআআপপপপনি কি ঐ বজ্জাত জ্বিন?আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?আমিতো একটা ছোট, কিউট বাচ্চা মেয়ে।ছোট কিউট বাচ্চা মেয়েটার সাথে কি আপনি এমন করতে পারুন বলুন তো।আপনার চেহারা দেখান না কেন?আমাকে ভয় পান নাকি?(মুখ টিপে হেসে)

—- কি-ই-ই-ই??? আমি তোমাকে ভয় পাই? তুমি আমাকে ভয় পেয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলো।আর সেখানে আমি তোমাকে ভয় পাবো?আমি কোন জ্বীন নই বউ।তুমি আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছো।তাই তোমাকে আমি জ্বালাতন করি।

আমিঃ আমি কি ক্ষতি করেছি?(অবাক হয়ে)

— আমাকে বিয়ে করেছো সাথে আমার মন চুরি করে নিয়ে গেছো।তাই তো তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও ভালো লাগে না।

🌨️🌨️🌨️

হঠাৎ আমার চোখটা আমাদের বাসার গেইটের দিকে চলে গেল। সেখানে দেখলাম কেউ আমাকে দেখে দেয়ালের আড়াল হয়ে গেলো। আমি এদিক সেদিক তাকে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু সে একবার উঁকি দিয়ে পুনরায় আড়ালে চলে গেল।

ইশাল গেইটের আড়াল থেকে মেঘা ও আবরারকে দেখে রাগে ফুঁসতে লাগলো।সে আবরারের পেছন পেছন এসেছিলো মেঘার খোঁজে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারছে না।কারণ আবরার সারা বাড়ি তার শক্তি দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

আমাকে এখন জড়িয়ে ধরে রেখেছে সে।চুলের থেকে মুখ সরিয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে বললো।

—- আল্লাহ হাফেজ বউ। আমার এখন মসজিদে মাগরিবের নামাজ পরতে যেতে হবে।

আমিঃ ওয়েট,আপনার চেহারা দেখিয়ে যান।ভয় না পেলে আপনার মুখ আমার চুলে লুকিয়ে রেখেছেন কেন?ভীতু কোথাকার?

—-নিজের মনের ভাবটা কি আমাকে দিয়ে প্রকাশ করছো বউ?নিজের উপাধিটা আমাকে কেন দিচ্ছো বল তো? এখনো তোমার সামনে আসার সময় হয়নি।তবে খুব শীঘ্রই তোমার সামনে আসবো।তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারবে না। আমি তোমার অনেক কাছের মানুষ। চিন্তা করতে থাকো কে হতে পারি?

কথাগুলো বলে সে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি পেছন ফিরে কাউকে দেখতে পেলাম না।এতটা জোরে কাউকে ধরে?এভাবে যদি আমাকে জরিয়ে না ধরতো তাহলে আমি একটু পেছনে ঘুরে তাকে দেখতে পেতাম।তবে তার শরীরের এক পাশ আমি দেখেছি।সাদা টি-শার্টের সাথে গ্রে কালার প্যান্ট।আমি শয়তানি হাসি দিয়ে সামনের গাছের আড়াল থেকে নিজের মোবাইলটা নিলাম।ভিডিও অন করে মোবাইল লুকিয়ে রেখেছিলাম।আমি জানতাম ছাদে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে নিশ্চয়ই বজ্জাত ব্যাটা আমার কাছে আসবে।

খুশি মনে মোবাইলটা হাত নিয়ে ভিডিও অন করেই মুখটা মেঘে ঢেকে গেল।কি হলো এটা? আজ তো আমি তার শরীর দেখেছি।মানে হলো তার অস্তিত্ব টের পেয়েছি।কিন্তু মোবাইলে আমি ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আমার পুরো প্ল্যানে পানি ঢেলে দিলো।ধূর,এত কষ্ট করে কি লাভ হলো?রাগে বিরবির করতে করতে রুমে চলে গেলাম।
___________

মাঝরাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে গেলাম।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ঘোর অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখতে পেলাম না।শরীর ঘামছে প্রচুর। একটু নড়াচড়া করতেই নিজের ওপর ভীষণ ভারী ওজন অনুভব করলাম। এক ফোঁটাও নড়তে পারছিলাম না।কেউ তার শরীরের অর্ধেক ভার আমার ওপর দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তার নিশ্বাস আমার গলায় আছরে পরছে।তার মাথা আমার গলার পাশে ডান কাঁধে রেখেছে। আরেক হাতে আমাকে জরিয়ে মাথার দিয়ে রেখেছে। আমি অন্ধকারে হাতড়ে তার হাতটাকে ধরতে পারলাম।শরীরে এতটুকুও শক্তি নেই যে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরাবো।

আমিঃ আমাকে কি বালিশ পেয়েছে নাকি?কি শুরু করেছে। এর হেস্তনেস্ত কবে করবো আমি।সবাই আমাকে পেয়েছেটা কি?আমার ঘুম হারাম করে নিজে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। একেই বলে ভাগ্য। আল্লাহ কবে যে আমাকে এই জ্বালাতন থেকে মুক্তি করবে।বিয়েই মানি না আমি।আর উনি এসেছেন স্বামীগিরি দেখাতে।যত্তসব ফাউল কাজকর্ম। আমি চকলেট হরলিক্স খেয়ে যা শক্তি করেছিলাম, তা বোধহয় এবার এই বজ্জাত ব্যাটার ওপর প্রয়োগ করতে করতে চলে যাবে। আমার চকলেট হরলিক্সের শক্তি😭।

অন্ধকারে তার শরীরের ভর সহ্য করা এবং কুতকুত করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আপাতত আমার কোন কাজ নেই। এই অবস্থায় ঘুমও আসবে না। আমার হয়েছে সবদিক থেকে জ্বালা।

চলবে

#মেঘকন্যা☁️
#Part_10
#Writer_NOVA

হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে মৃদুমন্দ বাতাস।পরিবেশটা বেশ লাগছে আমার কাছে। দুহাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছি।চোখ দুটো বন্ধ করে মুখটা আকাশ পানে উঠিয়ে রেখেছি।বৃষ্টির ফোঁটা গুলো আমার বন্ধ চোখের ওপর আছরে নিচে পরছে।ছাদে বসে একটা থ্রিলার উপন্যাস পরছিলাম।হঠাৎ ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নেমে গেল।বৃষ্টি দেখলে আমার হুশ থাকে না।কতক্ষণে বৃষ্টিতে ভিজবো তার চিন্তা। তাই বই রেখে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলাম।বৃষ্টির বেগ অনেকটা কমে গেছে। গাছের পাতায় চুইয়ে পরা পানিগুলো নিচের মাটি ভিজিয়ে দিচ্ছে। আম্মি দেখলে অবশ্য আচ্ছা করে বকে দিবে।সে এখন ঘুমোচ্ছে।।কিন্তু ইচ্ছে মতো আগে ভিজে তো নেই। তারপর না হয় আম্মির বকা চুপচাপ হজম করে নেয়া যাবে।

বেশ কিছু সময় ধরে একটা সুঘ্রাণ নাকে আসছে।মনে হচ্ছে কড়া পারফিউম দিয়ে কেউ আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। আজকাল আমার ভয় লাগে না। বরং মনে হয় সবসময় আমার প্রিয় মানুষটা আমার সাথে আছে।চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে পারফিউমের ঘ্রাণটা উপভোগ করছি।জানি সে অদৃশ্য হয়ে আমার কাছে এসেছে। কানের কাছে ফিসফিস করে সে বললো।

—- এতো ভিজো না মেঘকন্যা।ঠান্ডা লাগবে যে।তারপর সারা রাত আমার ঘুম হারাম করে তোমার সেবা করতে হবে।এতো বৃষ্টিবিলাসীনি হতে কে বলেছে?আমিতো বলিনি।পুরো চুপচুপা ভিজে গেছো।নিচে গিয়ে জামা-কাপড় পাল্টে নাও।জ্বর হবে তো।তুমি অসুস্থ থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না। প্লিজ লক্ষ্মীটি, আমার কথা শোনো।

আমিঃ উহু, আমি আপনার কথা মানতে রাজী নই।আমাকে বৃষ্টির ছোঁয়া গুলো অনুভব করতে দিন।আপনি শুনতে পারছেন বৃষ্টির তালে তালে কি মধূর সুর বইছে।আপনি আমাকে কি জানি বললেন?ও মনে পরেছে।মেঘকন্যা,মেঘকন্যা বলেছেন আমাকে।মেঘকন্যারা যদি এমন দিনে ঘরে বসে থাকে তাহলে কি মানায়? মেঘকন্যা তো বৃষ্টির তালে নিজেকে বিলিয়ে দিবে।

—- তুমি এখন নিজেকে বিলিয়ে দিলে রাতভর আমাকে তোমার সেবায় বিলিয়ে দিতে হবে।বউ ত্যারামী না করে ভেতরে চলো তো।

আমিঃ আমি তো এত তাড়াতাড়ি যাবো না।কমপক্ষে ১ ঘন্টা ভিজে তারপর ভেতরে যাবো।ভীষণ ভালো লাগছে আমার বৃষ্টিতে ভিজতে।আপনি তা বুঝবেন না।আমাকে বিরক্ত না করে ভাগেন তো এখান থেকে।

তাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে মনোযোগ দিলাম।অন্যের কথা শুনে আমি নিজের আনন্দ মাটি করবো নাকি।সেই যে কখন চোখ বন্ধ করেছি।এখনো খুলিনি।খুলতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে তো করছে সারাদিন যদি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম।তাহলে আমি আম্মির হাজারটা বকুনি শুনতেও রাজী।নিজেকে ময়ূরের মতো সাজিয়ে বৃষ্টির তালে তালে নাচতে ইচ্ছে করছে। আকাশটা বেশ পরিষ্কার। সাদা শুভ্র মেঘেরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। তারাও বোধগয় আমার মতো খুশি।

—তুমি কি আমার কথা শুনবে?যেচে নিজের অসুস্থতাকে ডেকে আনছো তুমি। আল্লাহ ভালো রেখেছে বলে কি ভালো লাগছে না।একটা অসুখ বাঁধিয়ে ঘরে বসে থাকার ইচ্ছে হচ্ছে। (রেগে)

আমিঃ আল্লাহ না চাইলে আমার কিছুই হবে না জনাব।আপনাকে আমার জন্য শুধু শুধু চিন্তা করতে হবে না।নিজের চরকায় তেল দিন।নিজে বৃষ্টিতে ভিজছে আর আমাকে ভিজতে মানা করছে।হু হু যান ভাগেন।আপনাকে আমি ভয় পাই নাকি।

—- আমি তো ভুলেই গিয়েছি যে তুমি সোজা কথার মানুষ নও।তোমার সাথে শুধু শুধু এতগুলো বকবক করে আমার এনার্জি নষ্ট করলাম।এবার যা করার আমি নিজেই করবো।

কোন কথা গায়ে না মেখে আমি ঠায়,দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছি।হঠাৎ মনে হলো আমার চোখে কেউ কালো ফিতে দিয়ে আটকে দিলো।আমি ফিতা টেনে খুলতে গেলে আমার দুই হাত মুচড়ে আমাকে তার নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আমি চিৎকার করতে নিলে সে তার এক আঙুল আমার ঠোঁটে ছুঁয়ে বললো।

— চুপ, একদম চুপ।কোন শব্দ করবে না। তোমার মা ঘুমিয়েছে। সে যদি উঠে যায় তাহলে তোমার কপালে নয় নম্বর বিপদ সংকেত আছে।

বৃষ্টির তোড়জোড় বেড়ে চলছে।এবার আমি ঠান্ডায় কাঁপছি। বৃষ্টির কারণে নয়।তার শরীরের তাপমাত্রার কারণে।কেন জানি মনে হচ্ছে সে আমার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু সময় পর আমি টের পেলাম শূন্যে ভাসছি।ভয়ে তার গলা দুহাতে জরিয়ে ধরলাম।তার হিম ঠান্ডা শরীরের কারণে আমার প্রচুর শীত করছে।সে আমাকে আরো শক্ত করে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।রুমে এসে নামিয়ে দিলো।আমি টান মেরে চোখের ফিতা খুলতে চাইলাম।

আমিঃ এই ফিতা খুলছে না কেন? এই সুবর্ণ সুযোগ তাকে দেখার।তাড়াতাড়ির সময় দেরী হবেই।
(মনে মনে)

— শুধু শুধু শক্তি নষ্ট করে কোন লাভ নেই। আমি আগেও বলেছি আমি না চাইলে তুমি কখনো সে কাজগুলো করতে পারবে না।আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম।তাই বলে আমাকে দেখার জন্য তোমার এই ব্যকুলতা আমাকে আবারো জানিয়ে দিলো আমি আসলেই হ্যান্ডসাম।(ভাব নিয়ে)

আমিঃ ইস,নিজের গীত গাওয়া হচ্ছে। নিজের ঢোল নিজে পিটায় লজ্জা করে না।ব্যাটা বজ্জাত। আমার ওপর অধিকার দেখায়।একবার বাগে পাই তোকে, গোবরের পানি দিয়ে গোসল করাবো।(মনে মনে)

— পারবে না।তুমি আমাকে গোবরের পানি দিয়ে গোসল করাতে পারবে না।আমাকে দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে না। তখন এসব আলতু ফালতু বুদ্ধি গুলো তোমাকে ছেড়ে পালাবে।নিজের এই ছোট্ট মাথাটাকে এতো প্রেসার দিয়ো না।এই নাও তোমার জামা।জলদী করে পাল্টে নেও।ভিজা কাপরে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবে।

আমিঃ আমি এখন জামা-কাপড় পাল্টাবো না।যখন ইচ্ছে হয় তখন পাল্টাবো।আপনি আমার রুম থেকে বের হোন তো।আপনাকে দিনকে দিন আমার শুধু বিরক্ত লাগছে।(রাগী সুরে)

—- ওহ্ তুমি বোধহয় চাইছো আমি নিজ হাতে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে দেই। এম আই রাইট বউ।আমার কোন সমস্যা নেই। আমি খুশিমনে তা করতে পারবো।
(বাঁকা হেসে)

আমিঃ আআআআমি এই কথা কখন বললাম।একদম কাছে আসবেন না।ব্যাটা লুচু কোথাকার? একটা মেয়েকে একা পেয়ে কি উল্টো পাল্টা বকছে।

—- তুমি কেন বলবে?আমি তো জানি।কারণ তোমার মনের কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পাই। এমনি তোমাকে আজ ভিজে কাপড়ে দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।তুমি যদি আমাকে একটা সুযোগ দেও তো আমি তোমার এই হেল্পটা স্বামী হিসেবে করতেই পারি।

কিন্তু আবরার মেঘার দিকে এগিয়ে আসছে।সামনে এসে এক হাতে মেঘার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আরেক হাতে যেই জামার পেছনের দিকের চেইনে হাত দিয়েছে ওমনি মেঘা দুই লাফে সেখান থেকে সরে যায়।নিজের হাতে শুকনো ড্রেস নিয়ে নিজের গায়ে জরিয়ে নেয়।ভয়ে ও শীত দুটো মিলে মেঘা ঠকঠক করে কাঁপছে।

খারুশ ব্যাটার কথা শুনে নিজের চুল নিজেরি ছিঁড়তে মন চাইছে। আমার চোখ হঠাৎ খোলা পেলাম।চোখের ফিতাটা খুলে দিয়েছে। তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।ড্রেস নিয়ে এক দৌড়ে ওয়াস রুমে চলে গেলাম।আল্লাহ, এই বদমাশ লোকটাকে একটু সুমতি দেও।মুখে যা এলো তাই বলে গেল।যদি বাই চান্স আমার ড্রেস সত্যি পাল্টে দিতো।আমি চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলাম।আর কিছু ভাবতে পারছি না।নিশ্চয়ই আমার এই কান্ড দেখে সে মিটমিট করে হাসছে আর মজা নিয়েছে।

🌨️🌨️🌨️

অঙ্গরাজ্য……..

রাজকীয় পোশাক পরে রাজপ্রাসাদের বারান্দায় থাকা দোলনায় বসে আপন মনে আপেল খাচ্ছে ইশাল।তার মনটা ভীষণ খুশি খুশি দেখাচ্ছে। তার কাঁধে থাকা সাপ টাকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বেশ কিছু সময় পর পর শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

রাজাঃ একি পুত্র তুমি এখানে আরাম করে বসে আপেল খাচ্ছো।এখন কি দোলনায় বসে দোল ও আপেল খাওয়ার সময়।তুমি এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছো কেন?এভাবে বসে থাকলে আমাদের পরাজয় নিশ্চিত।

ইশালঃ চিন্তিত হয়েন না আব্বাজান।আমি সব ঠিক করে রেখেছি।এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। আর কিছু সময় অপেক্ষা করুন।অনেক বড় ধামাকা পেতে চলছেন।

রাজাঃ এটা কি ধরনের বেয়াদবি পুত্র? সামনে আমরা মেঘরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। এর মধ্যে তোমাকে মেঘপুত্রকে পরাজিত করে কন্যাকে বিবাহ করতে হবে। পূর্ণিমা আসতে বেশি দেরী নেই।পুত্র ভুলে গেলে চলবে না। আমাবস্যা যেমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ তেমনি পূর্ণিমা আমাদের জন্য অভিশাপ স্বরূপ। এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে আমরা ধূলিসাৎ হয়ে যাবো পুত্র।

ইশালঃ আব্বাজান আপনি খামোখা এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।আমি নতুন করে গুটি সাজিয়ে ফেলেছি।

রাজাঃ কি করেছো তুমি? যার জন্য মনের সুখে আপেল গিলছো।বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছো মনে হচ্ছে। এতো আমেজ পেলে কোথায়?মনে রঙিন রঙের ছোঁয়া লেগেছে মনে হচ্ছে।

ইশালঃ আপনি কি আমার রিহিসকে দেখতে পাচ্ছেন আব্বাজান? আপনি ভালোমতো কিছু খেয়াল না করে আমাকে হাজারটা কথা শুনাতে বেশ পটু হয়ে গেছেন।

রাজাঃ তোমার রিহিস কোথায়?তুমি তাকে নিয়ে কি গুটি খেলছো।মনে রেখো পুত্র সঠিক পরিকল্পনা না করলে সেদিনের মতো আবারো মেঘকন্যার ঝাপটা খেয়ে রাজ্যে ফিরবে।তোমার জীবনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কিন্তু রিহিস।তার জীবনের সাথে তোমার জীবন জরিয়ে আছে।সুতরাং এমন কিছু করো না যার কারণে তোমার সব শক্তি ভেনিস হয়ে যায়।আর তুমি মৃত্যুর মুখে পতিত হও।

ইশালঃ আপনার কি মনে হচ্ছে না আব্বাজান, আপনি একটু বেশি বেশি ভাবছেন?আপনার পুত্রের ওপর আস্থা রাখুন।

রাজাঃ আমার পুত্র কিরকম তা আমি জানি।তাইতো আমার এতো চিন্তা হয়।তোমার মাতা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি তোমাকে কোলে পিঠে করে বড় করেছি।আমি যদি তোমাকে না চিনতে পারি তাহলে কে চিনবে বলো তো।

ইশালঃ আপনি আমার কথা না শুনে বৃত্তান্ত বর্ণনা করা শুরু করেছেন।আগে আমার কথাটা তো মনোযোগ সহকারে শুনুন।

রাজাঃ বলো আমি শুনছি।তোমার এই উদ্ভট চিন্তাধারা শুনে আমাদের বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।সবসময় উল্টো পাল্টা ভাবো।

ইশালঃ আমি আমার রিহিসকে মেঘকন্যার বাড়িতে পাঠিয়েছি।তাকে আমার পুরো শক্তি দিয়েই পৃথিবীতে রেখে এসেছি। সে এখন গিয়ে মেঘকন্যাকে দংশন করবে।দংশনে কন্যার খুব বেশি একটা সমস্যা হবে না।কিছু সময় সারা শরীর নীল থেকে আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে।

রাজাঃ তাহলে এতো কষ্ট করে কন্যাকে দংশন করার কি দরকার পুত্র? তাছাড়া কন্যাকে রক্ষা করার জন্য সর্বসময় মেঘপুত্র হাজির থাকে।এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের আড়াল করে না।মেঘপুত্রের চোখ ফাঁকি দিয়ে রিহিস যে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে তারি বা নিশ্চয়তা কি?

ইশাল তার পিতাকে টেনে নিজের পাশে দোলনায় বসিয়ে দিলো। তারপর তার চোখে চোখ রেখে বাঁকা হেসে বললো।

ইশালঃ আমাকে আপনি গর্দভ উপাধি দিন।কিন্তু আসলে গর্দভ তো আপনি আব্বাজান।

রাজাঃ মুখ সামলে কথা বলে ইশাল।আমি তোমার পিতা।তুমি ইদানীং আমার সাথে অতিরিক্ত বেয়াদবি করছো।তুমি আমার পুত্র বলে যে বারবার তোমাকে ছেড়ে দিবো এমনটা কিন্তু তুমি ভেবো না।(রেগে)

ইশালঃ মাথা ঠান্ডা করুন আব্বাজান।মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনুন।আমি এখন মেঘকন্যার কোন ক্ষতি চাইছি না।কন্যার ক্ষতি হলে আমাদের সর্বনাশ হবে।কন্যাকে সাপে কেটেছে দেখে মেঘপুত্র আবরার নিশ্চয়ই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। সে কন্যার বিষ নামিয়ে রাগে ও ক্ষোভে আমাকে খুঁজতে থাকবে। কারণ আমি তার প্রাণ প্রিয়ার ক্ষতি করতে চেয়েছি। সে তো আমাকে আর এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না।আমাকে যখন খুঁজতে বের হবে।আমি তখন উত্তরের ভয়ংকর জঙ্গলে আশ্রয় নিবো।আবরার আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসবে।তখন আমি তার প্রাণ নাশ করবো।উত্তরের জঙ্গলে চাঁদের আলো ছাড়া মেঘরাজ্যের সবাই একেবারে নিঃস্ব। আজকের রাতের আকাশটা দেখো।চাঁদ কিংবা তারার চিহ্নটুকুও নেই। চারিদিকে ঘন কালো মেঘের ছড়াছড়ি।চাইলেও আজ আবরার আমার কাছ থেকে বাঁচতে পারবে না।

রাজাঃ তোমার পরিকল্পনা পছন্দ হয়েছে পুত্র। তবে সাবধানের মার নেই। হিতের বিপরীত কিছু করো না। যার জন্য সারাজীবন পস্তাতে হয়।

ইশালঃ আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আব্বাজান।এবার আমার জিত হবেই হবে।

রাজাঃ ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো আগেই লাফিয়ো না পুত্র। পরিকল্পনায় সফল হয়ে তারপর খুশি হয়ো।

রাজা গম্ভীর মুখে রাজদরবারে চলে গেল। ইশাল মনের সুখে একটার পর একটা কামড় দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপেল খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এমনভাবে আপেল খাচ্ছে মনে হচ্ছে আপেল নয় মেঘপুত্রের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here