মেঘকন্যা☁️
Part_07
Writer_NOVA
পরেরদিন……
ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম।হঠাৎ আমার উন্মুক্ত ঘাড়ে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠলাম।সারা শরীর ৪৪০ ভোল্টেজে কেঁপে উঠলো। কাঁপা কাঁপা চোখে আয়নার দিকে তাকাতেই আমি আরো ৮৮০ ভোল্টেজে শক খেলাম।আমার পেছনে তো কেউ নেই। হ্যালুসিয়েশন ভেবে গুরুত্ব দিলাম না।মাথা আঁচড়াতে মনোযোগ দিলাম।এবার মনে হলো কেউ কানের মধ্যে ফুঁ দিচ্ছে। আমি চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলাম।কারণ আমার সুড়সুড়ি লাগছে।আমি খিলখিল করে হাসতেই টের পেলাম,সে আমার কানের দুলগুলোতে হালকা করে টোকা দিয়েছে যাতে করে সেটা নড়ে উঠলো।চারিদিকে ভয়ে ভয়ে তাকাতেই সারা রুমে হালকা আকাশি কালার আভা আর হিম শীতল বাতাস টের পেলাম।
আমিঃ কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার এসব দেখে ভয় করছে।এ কি!!! আমায় আয়নায় দেখা যাচ্ছে না কেন?আমি কি হাওয়া হয়ে গেলাম নাকি?আমি পাগল হয়ে যাবো।(ভয়ে ভয়ে)
মেঘার সামনে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে আবরার।সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যার কারণে মেঘা তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পারছে না।আজকাল আবরারের মেঘাকে ভয় দেখাতে ভীষণ ভালো লাগে। মেঘার ভয়ার্ত চেহারাটা ওর কাছে ভীষণ মায়াবী লাগে।মেঘা ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে।আবরার সামনে ঝুঁকে ওর মুখে ফুঁ দিয়ে বেবী চুলগুলো কানের নিচে গুঁজে দিলো।তারপর কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
আবরারঃ তোমার ভয়ার্ত মুখটা আমাকে তোমার কাছে টেনে নেই।ইচ্ছে করে সারাজীবন শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাটিয়ে দেই।যতবার তোমায় দেখি ততবার আমি প্রেমে পরে যাই।রাতে তোমার মুখটা দেখে না ঘুৃমালে ও দিনে তোমার মুখটা দেখে না উঠলে দিন-রাত দুটোই আমার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়।
হাত দুটো দিয়ে চোখ আটকে রেখেছি।আমার মনে হলো কেউ আমার মুখে ফুঁ দিয়ে চুলগুলো কানের নিচে গুঁজে দিলো। কপালে তার ঠোঁট ছুঁয়ে খুব গভীরভাবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। বুকের ভেতরটা লাগাতার ঢিপঢিপ শব্দ করে যাচ্ছে। কেউ আমার কানের সামনে এসে বললো।
—-বউ, তোমাকে কিন্তু আজ মারাত্মক সুন্দর লাগছে।অবশ্য সব দিনেই লাগে।আজ রাতে আমাকে ঘুমাতে কোন বিরক্ত করো নি বলে আরো বেশি ভালো লাগছে।
তার কন্ঠ শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার রুমে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে কথা বললো কে?আমি চোখ, মুখ খিঁচে ভৌ দৌড় মারলাম।
আমিঃ আম্মি ই-ই ই-ই। জ্বজজজজজজীননননন।আমার রুমে জ্বীন ভর করেছে।
জোরে চিৎকার দিতে দিতে কিচেনে চলে এলাম।আম্মি দৌড়ে আমার কাছে ছুটে এলো।
আম্মিঃ কি হয়েছে মেঘা?এরকম করে চিৎকার করলি কেন?আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুই ঠিক আছিস তো?কোন কিছু দেখে ভয় পেয়েছিস?(ব্যস্ত হয়ে)
আমিঃ আম্মি, জ্বীন।আমার রুমে জ্বীন আছে। আমি তার উপস্থিতি টের পাই।সে আমার মুখে ফুঁ দেয়।কখনো কপালে চুমু দেয়।
আম্মিঃ মেয়েটার মাথা গেল নাকি?কি উল্টো পাল্টা বকছে?একেবারে বাবার মতো ভিতু হচ্ছে। (মনে মনে)
আমিঃ কি বললে তুমি? আমার মাথা গেছে। আমি আব্বির মতো ভীতু।তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু শুনতে পাই না। তোমার প্রতিটা কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।
আম্মিঃ সব শুনে নিয়েছিস😐?
আমিঃ হুম আমি সব শুনেছি। যাও তোমার সাথে কোন কথা নেই। তুমি আমার বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিলে না।আমি কাউকে আর কিছু বলবো না।ঐ জ্বীনটা যদি আমাকে খেয়েও ফেলে তাও তোমাদের কিছু বলবো না।এখন চা দেও।আমার কলেজে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আম্মি আমাকে চায়ের কাপ হাত দিতেই মুখ বেঁকিয়ে চলে এলাম।পেছন থেকে কিচেনে উঁকি মারতেই শুনতে পেলাম আম্মি মনে মনে বলছে।
আম্মিঃ জ্বীন আবার মানুষ খায় কিভাবে?মেয়েটা একা থাকতে থাকতে কিরকম আজোব প্রাণী হয়ে যাচ্ছে। একা থাকে বলে ওর মনে হয় ওর আশেপাশে কেউ আছে।সারাদিন রুমে মোবাইল নিয়ে বসে না থেকে কোথায় একটু বাগানে বসবে নয়তো আমার সাথে কাজ করবে।তা করে না বরং বলে তার রুমে কেউ আছে।জ্বিনের তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই ওর রুমে সারাক্ষণ বসে থাকবে।
আমিঃ কি বললে তুমি?
আম্মিঃ তুই যাস নি?
আমিঃ থাকবো না তোমাদের বাড়ি।সবাই আমাকে ভুল ভাবছে।কিন্তু আমি জানি সবসময় আমার রুমে কেউ থাকে।যেদিন আমাকে ধরে ওদের সাথে নিয়ে যাবে সেদিন বুঝবে।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আমি অভিমান করে রুমে চলে এলাম।ডেসিং টেবিলের ওপর চায়ের কাপ রেখে, সারা রুম তন্নতন্ন করে খুঁজে কাউকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম আমার চায়ের কাপটা শূন্যে ভেসে উড়ে উড়ে সোফার দিকে যাচ্ছে। আমি ভুল দেখেছি মনে করে, চোখ ডলে আবার তাকালাম।কিন্তু না,আমি সঠিক দেখেছি। চায়ের কাপটা আপনাআপনি টি-টেবিলের ওপর শব্দ করে পরলো,অবশ্য ভাঙেনি।কাপ রাখার মৃদু শব্দ পেলাম।কিছু সময় পর পর কাপটা ওঠানামা করছে।আমরা চা খাওয়ার সময় যেমন একটু খেয়ে একটু রাখি তেমন করে চায়ের কাপ উঠছে নামছে।
🌨️🌨️🌨️
আমি চোখ দুটো বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।মনে মনে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে আবার দৌড় দিতেই দরজার কিছুটা সামনে গিয়ে আটকে গেলাম।পেছন থেকে কেউ আমার ওড়না টেনে ধরেছে।ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম ওড়নাটা সমান তালে শূন্য ভেসে আছে।আমি ওড়না জোরে টান দিয়ে দৌড়াতে গেলেই দরজায় মাঝখানে কিছুর সাথে মাথায় মৃদু বারি খাই।
আমিঃ দরজার মাঝখানে আবার এরকম লম্বা, শক্ত পিলার এলো কোথা থেকে?নিশ্চয়ই জ্বীনটা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আয়িশঃ কি রে চোখ বন্ধ করে কি বিরবির করিস?
আমিঃ তততততুইইইই কককখখখখন এএএলি?
আয়িশঃ এরকম তোলাচ্ছিস কেন?আমি কি ভূত নাকি জ্বীন? হুট করে দেখে ভয় পেয়ে যাবি।
ওর কথা শেষ হতেই আমি ওর হাতে জোরে একটা চিমটি কাটলাম।ও ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো।
আয়িশঃ মাল্টি কালার চিমটি মারলি কেন?
আমিঃ যাক বাবা। তুই তাহলে মানুষ। আমি ভাবলাম আমার রুমের জ্বিনটা আবার তোর রূপ নিয়ে আমার সামনে এলো কিনা?
আয়িশঃ কি বলছিস এসব?
আমিঃ তুই হঠাৎ আমাদের বাসায়?
আয়িশঃ তোদের বাসার সামনে দিয়ে কলেজে যাচ্ছিলাম।তাই ভাবলাম তোকেও সাথে করে নিয়ে যাই।এখানে ২ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি।দেখলাম তুই ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে রেখেছিস।তারপর আমার বুকে তোর মাথা বারি খেলো।এরপর তুই চিমটি কাটলি।কি হয়েছে আমাকে খুলে বল তো মাল্টি কালার? তোর কান্ড-কারখানা আমার সুবিধার ঠেকছে না। আন্টিও বললো একটু আগে তুই কি আজগুবি আচারণ করে এসেছিস তার সাথে।
আমিঃ আমার রুমে জ্বীন আছে আয়িশ🥶।
আয়িশঃ উল্টো পাল্টা বকিস না।
আমিঃ বিশ্বাস না হলে দেখ।আমি চায়ের কাপ ডেসিং টেবিলের ওপর রেখেছিলাম।সেটা এখন টি-টেবিলের ওপর আছে।আর আমি সিউর কাপে কোন চা নেই।
আয়িশঃ সত্যি তোর মাথা গেছে মাল্টি কালার। ডেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখ।
আমি ডেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে ফেললাম।চায়ের কাপটা সেখানেই আছে। আর পুরো কাপ চায়ে টইটম্বুর।
আয়িশঃ তুই কি দিবা স্বপ্ন দেখিস?
আমিঃ আমি সত্যি বলছি।চায়ের কাপটা টি-টেবিলের ওপর হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে গিয়েছিলো।আমি সিউর আমার রুমে জ্বীন আছে।
আয়িশঃ অসম্ভব!!! কোন পেত্নীর সাথে কখনো জ্বিন থাকতে পারে না। জ্বিন সুন্দর মেয়েদেরকে পছন্দ করে।
আমি কোমড়ে হাত রেখে রেগে আয়িশকে বললাম।
আমিঃ কি বললি তুই? আমি পেত্নী।
আয়িশঃ কেন তোর সন্দেহ আছে নাকি🤨?
আমিঃ ভালো হবে না কিন্তু। তুই আমাকে ডাইরেক্ট পেত্নী বললি।
আয়িশঃ ডাইরেক্ট বলেছি দেখে খেপে গেলি মাল্টি কালার। আচ্ছা আমি এখন ইন্ডাইরেক্টলি বলি তাহলে।এই রুমে যে মেয়েটা থাকে সে একটা পেত্নী। তার সাথে কোন জ্বীন কখনোই থাকতে পারে না।
আমিঃ আবারো??(রেগে)
আয়িশ আমার রাগকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে দুই হাত পকেটে গুঁজে রুমে ঢুকে পরলো। তারপর ধপ করে আমার খাটে হাত-পা মেলে শুয়ে পরলো।ডান হাত দিয়ে মাথাট চেপে ধরে বললো।
আয়িশঃ এক মগ কফি করে দিবি মাল্টি কালার। মাথাটা ভীষণ ধরেছে।(অনুরোধের সুরে)
আয়িশের অনুরোধের সুরটা আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দিলো।নিশ্চয়ই ওর মাথাটা ভীষণ ধরেছে। নয়তো কখনি ও আমাকে এভাবে অনুরোধ করে না।আমি চুপচাপ কিচেনে চলে গেলাম।মনের মতো করে এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম।এসে দেখি পূর্বের ন্যায় চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
আমিঃ আয়িশ তোর কফি?
আয়িশঃ ওহ্ নিয়ে চলে এসেছিস।জলদী দে।
আমিঃ ঠিক আছে কি না বলিস।যদিও আমি সব ঠিকঠাক দিয়েছি।
আয়িশঃ চিনি কম হয়েছে। (কফি মুখে দিয়ে)
আমিঃ আমিতো সব কিছু সঠিক পরিমাণে দিয়েছি।চিনি কম হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।
আয়িশঃ বিশ্বাস না হলে তুই একবার চেক করে দেখ।
আমি কফির মগটা হাতে নিয়ে কফিতে একটা চুমুক দিলাম।নাহ্, সবকিছু তো ঠিক আছে। চিনি তো কম হয়নি।আয়িশ আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে মগটা নিয়ে আমি যেদিকে ঠোঁট লাগিয়েছি সেদিক দিয়ে চুমুক দিলো।
আয়িশঃ এবার চিনি ঠিক আছে। পুরো পারফেক্ট। এতক্ষণ কম ছিলো।
আমি ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলাম।পুরো বিষয়টা বুঝতে আমার কিছু সময় লাগলো।আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আয়িশ করলোটা কি?আমার এখন নিজেরি লজ্জা লাগছে বিষয়টাই।
আয়িশঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকিস না মাল্টি কালার। মশা,মাছি তাদের বাসা ভেবে ঢুকে পরবে।কলেজে দেরী হয়ে যাচ্ছে। চল, এবার বের হই।
আমি ও আয়িশ একসাথে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।সারা রাস্তায় লজ্জায় আমি আয়িশের সাথে কথা বলিনি।ওর সাথে বাইকে উঠলে একটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।আমরা দুজন কতটা কাছে থাকি।তখন আমার মনে হয় আয়িশ আমার খুব আপন।
🌨️🌨️🌨️
ক্লাশ শেষ করে একা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার তেমন বেশি বন্ধু নেই। আফিয়া ছিলো বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু সে এখন বিয়ে করে বাবা-ভাইয়ের ভয়ে আবিরের সাথে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। আফিয়ার বিয়ের সময় যারা আমাদের সাহায্য করেছিলো সবাই আবির ও আয়িশের বন্ধু। এখন আমার একমাত্র সম্বল আয়িশ।ওকে ছাড়া নিজেকে এতিম এতিম মনে হয়। একা থাকতে থাকতে বোর লাগছে।তখনি আমার সামনে সিনিয়র ব্যাচের রেহান ভাই এসে দাঁড়ালো। তাকে আমার একটুও সহ্য হয় না।গত ৬ মাস ধরে আমার পেছনে ঘুরঘুর করছে। আয়িশের হাতে ৪/৫ বার কেলানি খেয়েও এর শিক্ষা হয়নি।
রেহানঃ মেঘা ও মেঘা।আমার মেঘা।তুমি কি জানো তোমাকে আমি কতটা পছন্দ করি। ভালোবেসে আমি দিওয়ানা হয়ে যাচ্ছি।কবে বুঝবে তুমি আমাকে?এবার আমায় গ্রহণ করে নেও।আমি যে তোমার বিরহে কাতর হয়ে পরছি।তোমাকে একদিন না দেখলে আমার হৃদস্পন্দন থেমে যায়।
আয়িশঃ তোর হৃৎস্পন্দন এবার আমি থামাবো রেহান।
আয়িশের গলার স্বর পেয়ে ভয়ে সেদিকে তাকালো রেহান ভাই। কালো শার্ট,কালো প্যান্ট পরিহিত আয়িশ, দুই হাত পকেটে গুঁজে ফুল এটিটিউড নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।এই ছেলেটা কালো পরলে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগে।ইচ্ছে করে বারবার ওর প্রেমে পরি।কিন্তু আমি তো বিবাহিত। তাই ওর দিকে আমি আর নজর দিবো না।
আয়িশঃ কি বলছিলি তুই? আমাকেও বল আমি একটু শুনি।শুধু মাল্টি কালারকে একা একা শুনাবি।এটা কি ভালো দেখায় বল।আমারও তো শুনতে ইচ্ছে করে।
(ভ্রু নাচিয়ে)
রেহানঃ সরি বড় ভাই। ভুল হয়ে গেছে। আমি সত্যি আর কখনো মেঘার আশেপাশে থাকবো না। ওর দিকে ভুলেও তাকাবো না।আপনার কথা আমি ভুলে গিয়ে ছিলাম।
আয়িশঃ আমার কথা যখন ভুলে গিয়েছিস।তাহলে তোকে মনে করার ব্যবস্থা করে দেই।চল,ঐ স্টোর রুমে। তোর সাথে আমার অনেক হিসাব বাকি আছে। তাছাড়া পুরনো কথাগুলো তো মনে করিয়ে দিতে হবে।কতদিন ধরে তুই আমার উত্তম-মধ্যম খাস না।তাই তো আমার মেঘার দিকে আবারো নজর দিয়েছিস।
“আমার মেঘা” আয়িশের মুখ থেকে এই শব্দটা শুনে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।সারা শরীরে একটা হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল।মনের মধ্যে অনেক ভালো লাগা কাজ করছে। আয়িশ তো সবসময় আমাকে মাল্টি কালার বলে ডাকে।আজ প্রথম ওর মুখ থেকে আমি মেঘা নামটা শুনলাম।তাও সে স্বীকার করেছে আমি তার মেঘা।নিজের মধ্যে এতটাই বিভোর ছিলাম আয়িশ যে আমার সামনে দিয়ে রেহানকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো তাও খেয়াল করলাম না।ধ্যান ভাংগলো কানের সামনে কারো ফিসফিস কন্ঠে।
— তুমি বিবাহিত। অন্য ছেলের দিকে তাকানো তোমার ঠিক নয়।তুমি শুধু আমার।তুমি আমার বউ।তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে পারো না।
আমি চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।ভয়ে সারা শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। তার কন্ঠে আমি স্পষ্ট রাগী ভাব খুঁজে পেলাম।তখনি আয়িশ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে স্টোর রুম থেকে বের হয়ে আমার দিকে আসছে।আমি দৌড়ে কলেজের পেছনের দিকটায় চলে এলাম।
আমিঃ এমন কেন হলো আমার সাথে? আল্লাহ কেন তুমি আমাকে অন্য কারো জন্য বানালে?আমকে প্রতি মুহুর্তে কেন মনে করিয়ে দেওয়া হয় আমি বিবাহিত। আমি মানি না ঐ বিয়ে। আমি তো তোমার কাছে এই কয়েক বছর আয়িশকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছি।কেন তুমি ওকে দিলে না?আমি কেন ওর বাম পাঁজরের হাড় হতে পারলাম না।
দুই হাত দিয়ে মুখ আটকে কান্না করছি আমি।ভেতর থেকে আসা চিৎকারগুলো গলায় এসে দলা পাকিয়ে রয়েছে ।যার কারণে চাইলেও চিৎকার করে কান্না করতে পারছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসে পরলাম।সেদিনের কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আমার জীবনটা পুরো এলোমেলো হয়ে গেলো।এক নাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছি। হঠাৎ কেউ আমাকে____
চলবে