স্বপ্নবিলাসী,পর্ব :-০৪ এবং শেষ

স্বপ্নবিলাসী,পর্ব :-০৪ এবং শেষ
Writing by Nishan_Bunarjee
.
.
-:”যখন থেকে অহনা জানতে পেরেছে যে বিশালের সাথে মোহনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তখন থেকে অহনার ভেতরে উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। অহনা এমনিতেই অভিশপ্ত জীবন যাপন করছে। নিজের চোখের সামনে ছোট বোনের ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক সেটা সে দেখতে পারবেনা। নিজের কপালে হয়তো এইভাবে তিলেতিলে মরা লেখা ছিল কিন্তু ছোটবোনকে সে তিলেতিলে মরে যেতে দিতে পারেনা। অহনার জীবনটাতো দুঃখের অতল সাগরে তলিয়ে গেছে কিন্তু ছোট বোনের জীবনে আঁধার ঘনিয়ে আসতে দেবে না। কোনোভাবেই না। যেভাবেই হোক সৌমিককে জানাতে হবে এই ঘটনা। সৌমিক ই পারবে বিয়েটা ভেঙে তার ছোটবোনের জীবনটা ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করতে।

অহনা সৌমিক কে কয়েকবার ফোন করল, লাগাতার ফোন করল। কিন্তু সৌমিক ফোনই রিসিভ করলোনা। অহনা যে সৌমিকের আসার অপেক্ষা করবে সেটুকু ধৈর্য্যশক্তি তার মধ্যে এখন নেই। আজ প্রথম অহনা এতটা অস্থির হয়েছে। সে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হলো। উদ্দেশ্য সৌমিকের অফিসে যাওয়া। যতদ্রুত সম্ভব সৌমিক এই বিষয়ে অবগত করতেই হবে। নইলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে। অহনা রিকশায় করে সৌমিকের অফিসে গেল। সৌমিক প্রতিদিনের মতোই তার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু যখন অহনাকে তার অফিসে দেখল তৎক্ষনাৎ সৌমিকের চেহারার রঙ পাল্টে গেল। এর আগে অহনা কখনো সৌমিকের অফিসে এভাবে আসেনি। আর কখনো অহনাকে এতটা অস্থিরও সে দেখেনি। এমনভাবে অহনাকে চিন্তিত দেখে সৌমিক জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে আপনি আমার অফিসে? আমাকে ফোন দিলেই তো পারতেন! আর এত অস্বাভাবিকভাবে ঘামছেন কেন আপনি?

অহনা বলল, ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি রিসিভ করনি। বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হল।

– কিন্তু কেন, কি হয়েছে এমন?

– তোমার বাবা-মা আমার ছোট বোনের সাথে তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে দিতে চান। বিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান।

অহনার কথায় সৌমিক বিশ্বাস করতে পারছিলনা। তার বাবা-মা যে এতটা নিচে নেমে যাবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। সৌমিক জিজ্ঞেস করলো, আপনি যে কথাটা বলছেন সেটা কি সত্যি? আপনি কি নিশ্চিত?

– মোহনা ফোন করেছিল। সে বলল তোমার বাবা মা সেখানে গিয়ে মোহনাকে পছন্দ করে এসেছেন। বিয়ের দিন তারিখও ঠিক করে নিয়েছেন।

– কিন্তু আমি বুঝিনা আপনার বাবা মা কিভাবে রাজি হলেন এই বিয়ের জন্য?

– সেটা তো আমারো জানা নেই। আমার বাবা মা কিভাবে এটা করতে পারেন!!

সৌমিক কিছুক্ষণ কিছু একটা ভাবলো তারপর অহনাকে বললো, চলেন আমার সাথে।

– কিন্তু কোথায়?

– আগে চলেন।

সৌমিক অহনাকে নিয়ে সোজা অহনার বাবার বাড়িতেই গেল। সৌমিক আর অহনাকে দেখে খুব অবাক হলেন অহনার বাবা মা। না জানিয়ে আসাতে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার অহনা হুট করে না জানিয়ে আসা হল?

রাগে অহনা মেজাজ গরম। সে বলল, তোমরা কাউকে না জানিয়ে মোহনার বিয়ে ঠিক করে দিলেন কিভাবে? তাও আবার বিশালের সাথে যে কিনা দিনের বেলায় মদের আড্ডায় আর রাতের আধারে রাস্তায় পড়ে থাকে! বুদ্ধি কি হারিয়ে ফেলেছ তোমরা? নাকি মোহনার জীবনটাও ধ্বংস করে দিতে চান?

অহনার মা সৌমিককে ভেতরে নিয়ে বসতে দিয়ে বললেন, বাবা তোমার মা-বাবা তো বললেন যে তোমরা সবাই এ বিয়েতে রাজি। আমরা তো কথাও দিয়ে ফেলেছি।

– কি? আমাদের দুজনকে তো কিছুই জানানো হয়নি! আর আপনারাই বা কিভাবে এই বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন?

অহনার বাবা জবাবে বললেন, আমার মানসম্মান রক্ষার্থে তোমরা অনেককিছু করেছো। আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করেছ, নিজের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছ। আমার উপর অনেক উপকার বাবা তোমাদের। তাই তোমার বাবা মাকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারিনি বাবা।

অহনা কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে হয়ে সত্য কথা বলে দিতে চাচ্ছিল। এতদিন যে সে সৌমিকের বউ হওয়ার অভিনয় করে আসছে সেটা জানিয়ে দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু সৌমিক বাঁধা দিল। অহনা সত্য বলতে দিলনা। এদিকে অহনার বাবা মাকেও বোঝানো যাচ্ছে না। উনারা বিশালের সাথে মোহনার বিয়ে দেয়ার কথা দিয়ে ফেলেছেন। সৌমিক এখন একটাই পথ দেখছে। নিজের বাবা-মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বিয়েটা থামাতে হবে। নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, বিরাট সর্বনাশ।

আসার পথে অহনা সৌমিক কে জিজ্ঞেস করলো, সৌমিক তুমি তো জানো আমার বাবা মা মনে করেন যে আমাকে বউ হিসেবে মেনে নিয়ে তুমি, তোমার পরিবার তাঁদের উপর অনেক বড় উপকার করেছ। কিন্তু সত্য তো এটাই যে আমি, তুমি তো স্বামী-স্ত্রী হওয়ার অভিনয় করে আসছি। যদি এই সত্যটা বলে দিতাম তাহলে দেখতে বাবা মা বিয়েটা হতে দিতেননা। তুমি আমাকে থামালে কেন?

– সত্য বলাটাই তো সমাধান নয়। আপনার মা বাবা যদি এখন এই কথাগুলো জানেন তাহলে উনারা খুবই কষ্ট পাবে। অন্যদিকে আমার বাবা মা খুশি হবেন। ভাববেন তাদের প্রতিশোধ নেয়া সফল হয়েছে।

– এখন তাহলে কি করা সৌমিক? বিয়েটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবেনা সৌমিক!

– চিন্তা করেননা আমি সব ঠিক করে দিব!

বাসায় এসেই সৌমিক তার মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা এতটা নিচে নেমে গেলে যে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মোহনার বাবাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বিশাল ভাইয়ার সাথে মোহনার বিয়ের জন্য রাজি করে নিলে! বাহ মা বাহ!

– তাহলে ঘটনা এত তাড়াতাড়ি তোর কানে চলে আসল!

– কিন্তু কেন? কি দরকার মোহনার সাথে এমনটা করার?

-কেন? তোর ভাইয়ার বউকে তুই তোর বউ করতে পারিস তাহলে অহনার বোনকে বিশাল বিয়ে করলে সমস্যা কিসের?

– সমস্যার কথা বলছ! জানোনা বিশাল ভাইয়ার স্বভাব? মদ খেয়ে নেশায় রাস্তায় পড়ে থাকে সারাদিন। এমন ছেলেকে যেই মেয়ে বিয়ে করবে সে নিজের জীনটাই নরক বানিয়ে ফেলবে।

সৌমিকের মুখে বিশালের দুর্নাম সহ্য হয়নি তার মায়ের। ধমকের স্বরে বলে উঠেন, মুখ সামলে কথা বল সৌমিক। বিশাল তোর বড় ভাই।

– কিন্তু মা বড় হলে সত্য তো আর মিথ্যে হয়ে যায়না। মা তুমিও জানো এতে মোহনার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল ভাইয়া সারাদিন তো মদের নেশায় মাতাল থাকে। সে মোহনা কে স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা কখনো দিতে পারবেনা।

– জানি আমি। আর এটাই চাই আমি।

– কি…!

– হ্যাঁ। আমি সবকিছুর প্রতিশোধ নেব। আর তুই শুনে রাখ, এই বিয়ে যেভাবেই হোক আমি করিয়ে ছাড়বো। এতে তুই তো কি, কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা।

সৌমিক নিরুপায় হয়ে ফিরে আসে। সৌমিককে এভাবে অসহায় হয়ে থাকতে দেখে অহনা জিজ্ঞেস করল, সৌমিক তোমার মা কি বললেন? বিয়েটা ক্যান্সেল করলেন?

– না। মা উনার সিদ্ধান্তে অটল। উনি যেভাবেই হোক বিয়ে টা করাবেন।

অহনা আশাহীন হয়ে পড়লো। জিজ্ঞেস করলো, এখন কি হবে সৌমিক? প্লিজ কিছু একটা করো। তুমিই একমাত্র এই বিয়েটা থামাতে পারবে..

সৌমিকের উপর অহনার এতটা বিশ্বাস, এতটা আস্থা দেখে সৌমিক বলল, আমি বিশাল ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখবো। উনাকে বুঝিয়ে বলব যে বিয়েটা না করতে।

– প্লিজ সৌমিক তাড়াতাড়ি যা করার কর। পরে যেন দেরি না হয়ে যায়।

– আমার উপর বিশ্বাস রাখেন। আমি কথা দিচ্ছি সবকিছু ঠিক করে দিব।

অহনা সৌমিককে নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে। সৌমিকের প্রতিটা কথাই অহনার কাছে সত্য। এবারো অহনা সৌমিক কে বিশ্বাস করছে, তার উপর আস্থা রাখছে। এদিকে সৌমিক কিভাবে তার ভাইকে বিয়ে না করার জন্য রাজি করবে, কি বলে রাজি করবে সেটা বুঝতে পারছেনা।

বিশাল প্রতিদিনের মতোই আজ নেশায় মাতাল অবস্থায় বাসায় ফিরলো। নেশায় মাতাল মানুষ যে দেখতে কতটা ভয়ংকর সেটা বিশালকে দেখামাত্রই বিশ্বাস হয়ে যাবে। সৌমিক গেল বিশালের কাছে। গিয়ে অনুনয়-বিনয় করে বলল, ভাইয়া একটা কথা বলবো, রাখবা?

বিশাল মদের নেশায় মাতাল হলেও কিছুটা জ্ঞান তার মধ্যে রয়েছে। যে ব্যক্তি তার সাথে ভালোভাবে কথা বলেনা, দেখলে ঘৃণার নজরেই দেখে সে আজ তার সামনে অনুরোধের স্বরে কথা বলছে! ভীষণ অবাক হল বিশাল। ভারসাম্যহীন কণ্ঠে বলল, বল কি কথা বলতে চাস।

– ভাইয়া তুমি মাকে গিয়ে বলে দাও তুমি মোহনাকে বিয়ে করতে চাওনা।

বিশাল অবাক হয়ে বলল, কেন? আনি তো বিয়ে করতে চাই মোহনাকে। কতো সুন্দর তার চেহারা! যেন আকাশ থেকে স্বয়ং পরী নেমে এসেছে। আরে ভালোই হলো অহনার সাথে বিয়ে হয়নি। আমি এখন তার থেকেও সুন্দরী মেয়ে পেয়েছি।

কথাগুলো বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগলো বিশাল। বিশালের এমন কুৎসিত হাসি সৌমিকের দেহে কাটা দিয়ে গেল। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে সৌমিক আবারো অনুরোধ করে বলল, ভাইয়া তুমি তো সারাদিন মদের নেশায়, গাঁজার নেশায় মাতাল থাকো। একবার ভেবে দেখ মেয়েটার জীবন নষ্ট করে তুমি কি পাবে! এভা এভাবে করোনা ভাইয়া..!

– আরে ধুর তোর জীবন। আমি তো বিয়ে করবোই।

সৌমিকের সব অনুনয়-বিনয় ধুলোয় মিশে গেল। সৌমিক পারলোনা তার কথা রাখতে। ভাইকে সে বোঝাতে পারলোনা। এখন সৌমিক ভাবছে কিভাবে সে মুখ দেখাবে অহনাকে। সে যে অহনাকে কথা দিয়ে সেটা রাখতে পারেনি।

ভারাক্রান্ত মনে সৌমিক গেল অহনার কাছে। অহনার মনে জ্বেলে আছে আশার আলো। অহনা ভাবছে সৌমিক বুঝি এবার বিয়েটা ভেঙে ফেলবে, তার ভাইকে সর্বনাশ করা থেকে আটকাবে। সৌমিক কে দেখে অহনা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো, সৌমিক তোমার ভাইয়া রাজি হয়েছেন? উনি বিয়ে করবেন না তো?

সৌমিক কিছু বলার আগেই কেঁদে ফেলে। এই কান্না ভাইকে রাজি করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার জন্য নয়, প্রিয় মানুষটাকে কথা দিয়ে সে কথা রাখতে না পারার জন্য। অহনার আশার আলো নিভে যায়। ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, সৌমিক কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?

সৌমিক বলল, আমি পারিনি আপনাকে দেয়া কথাটা রাখতে। ভাইয়া আমার মুখের উপর বলে দিয়েছে সে এই বিয়ে করবে।

অহনা এবার ভীষণ বড় ধাক্কা অনুভব করলো। পায়ের নিচে থেকে যেন মাটি ফসকে গেলো। কিছুক্ষণ কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলনা সে। নিজের চোখের সামনে ছোট বোনটার জীবন বিপদে কিন্তু অহনা এতটাই অসহায় যে কিছুই করতে পারছেনা। অহনার হুঁশ ফিরল সৌমিকের কান্নাভরা বুলিতে। সৌমিক ক্ষমা চাইতে চাইতে বলল, আমাকে মাফ করে দিন আমি পারিনি আপনার বোনের জীবনটা ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচাতে।

সৌমিকের কান্না অহনাকে আরোও ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। সৌমিকের কোনো দোষ নেই তবুও সে কাঁদছে দেখে অহনা বলল, তোমার কোনো দোষ নেই সৌমিক। তুমি তো সবসময়ই আমার, আমার পরিবারের ভালো চেয়েছো। মনে হয় আমার বোনের কপালে এটাই লিখা। আর কপালের লিখন তো মুছা যায়না সৌমিক।

অহনার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। সে এখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিকট আকুল প্রার্থনা করছে যেন তার বোনের জীবনটা ধ্বংস না হয়। বিয়েটা যেন ঈশ্বর স্বয়ং ভেঙে দেন এমনটাই প্রার্থনা করছে অহনা। আসলে যখন মানুষ নিজেকে খুব অসহায় আবিষ্কার করে, চারিদিকে অন্ধকার দেখতে পায়, বিপদ কাটিয়ে উঠার পথ খুঁজে পায়না তখনই সে ঈশ্বরের নিকট আকুল প্রার্থনা করে। কখনো ঈশ্বর শুনেন আবার শুনেননা। কিন্তু ঈশ্বর বুঝি এবার অহনার প্রার্থনা স্বীকার করেছেন। পরেরদিন সকাল হতে না হতেই বাসায় পুলিশের আগমন। পুলিশকে দেখে সবাই অবাক। হুট করে পুলিশ কেন এসেছে বাসায়? সৌমিকের বাবার সাথে পুলিশের তর্কাতর্কি দেখে সৌমিক এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, স্যার কি হয়েছে, সকাল সকাল আমার বাসায়?

– বিশাল আপনার কি হয়?

– বড় ভাই। কেন?

– আমরা বড় ভাইয়ের উপর কেইস করা হয়েছে৷ সে একটা মেয়ের সাথে দুর্ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, নোংরা কাজ করার চেষ্টা করেছে। তাকে আমরা গ্রেফতার করতে এসেছি।

সৌমিক অবাক হয়ে বলল, ভুল হয়েছে আপনাদের। আমার ভাইয়া এটা করতে পারেন না স্যার।

– আমাদের কাছে সাক্ষ্য, প্রমাণ সবকিছু আছে।

পুলিশ বিশালকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল। বিশাল শুধু চিল্লাতে চিল্লাতে এটাই বলছিল, আমি কিছু করিনি। কিন্তু পুলিশ তার কথায় কর্ণপাতই করছিলনা। এতে অহনা অনেক খুশি। এখন আর এই বিয়ে আপাতত হবেনা। কেননা বিশালের উপর যে আরোপ লেগেছে তাতে কেউ তাকে বিয়েও করবেনা আর পুলিশও তাকে কখন ছাড়বে তার ঠিক নেই।

কিন্তু অহনার মন খারাপ সৌমিকের কথা ভেবে। বড় ভাইয়ের অপকর্মের কারণে তাকে অনেকটা অপমানিত হতে হবে। লোকে যখন জানবে যে বিশাল এমন অপকর্ম করেছে তখন নিন্দার বুলি সৌমিকের দিকেও ছুঁড়ে মারা হবে। এসব ভেবেই অহনার মন খারাপ। সৌমিক অহনার মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার, মন খারাপ কেন?

– তোমার ভাইয়ের এমন ঘটনায় তোমাদের অনেক বদনাম হবে তাইনা?

সৌমিক স্বাভাবিক ভাবে বলল, আরে বদনাম কিসের? মামলা মিথ্যা তাহলে বদনাম কিসের?

অহনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, মিথ্যে মানে?

– এটা আমারই একটা প্লানিং। পুলিশটা আমারই বন্ধু সুজয়। তাকে আমি সব খুলে বলেছিলাম যার কারণে সে আমার প্লানিং-এ সহায়তা করেছে।

– তাহলে তুমি আমাকে আগে এই প্লানিং-এর কথা জানাও নি কেন?

– জানাই নি কারণ বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর যদি এবারো ব্যর্থ হই! তাই ঠিক করেছিলাম সফল হলেই জানাবো।

সৌমিকের এমন কাজে অহনা যেন তার প্রেমেই পড়ে গেলো। সৌমিকের কথা শুনে অহনা তাকে জড়িয়ে ধরলো। সৌমিক যদিও অবাক কিন্তু এই মুহূর্ত টা সে হাারাতে চায়না। পরপরই অহনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করতে চাইনা। কিন্তু এবার তুমিই আমার বোনের জীবনটা বাঁচালে সৌমিক।

– এখনো কাজ শেষ হয়নি। আপনার ছোট বোন মোহনার বিয়ে ভালো পাত্রের সাথে করাতে হবে।

সৌমিক একটা ভালো পাত্রের খুঁজ করল। পাত্র দেখতে সুন্দর। মোহনার সাথে দারুণ মানাবে। খুব ধুমধামে বিয়ে হল। বিয়ের সব আয়োজন সৌমিক করেছিল। কিন্তু বিয়েতে সবাই খুশি হলেও সৌমিক খুশি হতে পারছিলনা। কারণ সে অহনাকে কথা দিয়েছিল মোহনার বিয়ের পর তাকে আর অভিনয় করতে বলবেনা। সৌমিককে এমন সুখের সময় মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে অহনা জিজ্ঞেস করলো, সৌমিক কি হয়েছে? মন খারাপ করে বসেছ কেন?

সৌমিক কতক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো এখন যদি মনের কথা অহনাকে না বলে তাহলে আর কোনোদিন বলা হবেনা। বলে ফেলাটাই উচিৎ। যা হবার দেখা যাবে।

– আমি আজ তোমাকে কিছু বলতে চাই?

-হুম বল!

– আমি আসলে সেদিন বাবা-মায়ের কাছে যখন বলেছিলাম আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি তখন সেটা মিথ্যে ছিলনা। আমি মন থেকেই বলেছিলাম। আসলে সেদিনই তোমাকে ভলোবাসতে শুরু করেছিলাম আমি। কিন্তু বলার সাহস হয়নি। আজকের পর থেকে তোমাকে তো আর আমার স্ত্রী হয়ে থাকার অভিনয় করার জন্য বলতেও পারবনা। কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

সৌমিক কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অহনার চোখে চোখ রাখার সাহস নেই তার। এদিকে অহনাও অবাক। অহনা এসে সৌমিক কে জড়িয়ে ধরে বলল, আজ তুমি আমাকে তুমি বলে ডেকেছো। ভালো তো আমিও তোমাকে বাসতাম কিন্তু কখনো সেটা বুঝতে পারিনি। আজ তোমার বলায় আমিও যেন বুঝতে পেরেছি যে আমিও তোমাকে ভালোবাসি। সত্যি বলছি সৌমিক ঈশ্বর মনে হয় নিজের হাতে এই সম্পর্ক টা গড়েছেন। আজ বুঝি আমার সব স্বপ্ন পূরণ হল।

সৌমিকও অহনাকে আগলে নিল তার বুকে। আজ সৌমিক সেই কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা পেয়েছে যার জন্য সে প্রতিদিন প্রার্থনা করতো। ঈশ্বর কখনো মন থেকে করা প্রার্থনা ফিরিয়ে দেননা। সৌমিককেও তিনি ফিরিয়ে দেননি।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here