স্বপ্নবিলাসী,পর্ব :- ০৩

স্বপ্নবিলাসী,পর্ব :- ০৩
Writing by Nishan_Bunarjee
.
.
-:”রুমে এসে অহনা কাঁদতে কাঁদতে নিজের কাপড়ের ব্যাগ টা গুছাতে লাগলো। কাপড়ের উপরে তার চোখের জল লেপ।লেপ্টে যাচ্ছে। অহনার চলে আসা দেখে সৌমিক পেছনে পেছনে দৌড়ে রুমে ঢুকলো।

– কি করছেন? কাপড় চোপড় গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

অহনা কাপড় গোছানোতে মনযোগ দিয়ে বলল, যেখান থেকে এসেছিলাম সেখানে!

সৌমিক মিনতি করে বলল, প্লিজ এভাবে করবেন না! আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করে দেখুন যে…

সৌমিক কে থামিয়ে দিয়ে অহনা অশ্রুসিক্ত নয়নে জিজ্ঞেস করলো, কি বোঝার চেষ্টা করব সৌমিক? আমাকে কি বোঝার চেষ্টা করেছো তোমরা? আমার ভেতরটা কিভাবে দহন হচ্ছে, পুড়ে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে সেদিকে লক্ষ্য করেছ? আর তুমি কিভাবে বলে দিলা যে আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেব? আমার কি আত্মসম্মান বলে কিছুই নেই সৌমিক?

এতসব প্রশ্নের জবাবে সৌমিক কি বলবে, কি বলাটা উচিৎ সেটা সে জানে না। এগিয়ে গিয়ে সৌমিক অহনার চোখের জলটুকু মুছতে মুছতে বললো, আমি আপনার আত্মসম্মান কে আহত করতে চাইনি। আমি আর কোনো পথ খুঁজে পাইনি তাই মা-বাবার কাছে এইসব বলে ফেলেছি। দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না।

– তোমাকে ভিন্ন রকম পুরুষ ভেবেছিলাম সৌমিক। মনে হয়েছিল তুমি এই নরপশুদের পৃথিবীতে মহাপুরুষ একজন। কিন্তু তুমিও অন্যদের মতোই বের হলে। ছি সৌমিক! কিন্তু তুমি ভাবতে পারলে কিভাবে যে আমি তোমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিব? আমি তোমাদের মতো না। আমার আত্মমর্যাদা আমি রক্ষা করতে জানি।

– আমি ওটা মন থেকে বলি নি।

অহনা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, মন থেকে বলনি মানে কি?

সৌমিক বলল, আপনার চোখের অশ্রুর গভীরতা মাপতে পেরেছি। মানসম্মানের প্রতি আকুল ভালোবাসা আঁচ করতে পেরেছি। নিজের ছোট মেয়ের জীবনের জন্য চিন্তিত হতে দেখেছি। উনি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসেন। কাল যখন আসছিলাম আপনার বাবা তখন আমাকে এককোণে নিয়ে হাতজোড় করে বললেন, “বাবা আমার মেয়েটাকে তুমি আপন করে নিও। আমার মেয়েটা যদি শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসে তাহলে সমাজ তাকে, আমাদেরকে বাঁচতে দেবেনা। তিলে তিলে মেরে ফেলবে তাদের নিন্দনীয় কথাবার্তা দিয়ে। যদি অহনা শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসে বাবা আমার ছোট মেয়েকে কেউ বিয়ে করবেনা। দয়া করে বাবা আমার মেয়েটাকে তুমি মেনে নাও।”
আমি এটাও জানতাম আপনি আমাকে স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নেবেন না। কিন্তু একথা আমি আপনার বাবাকে বলতে পারিনি। উনার চোখের জল আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই উনাকে বলেছি আমি আপনাকে মেনে নেব।

– কিন্তু সৌমিক, আমি পারবোনা তোমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে। আমার দ্বারা কোনোভাবেই সম্ভব না।

– আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে বলছিনা আপনাকে…

অহনা আবারো অবাক হলো। সৌমিক বলল, আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে হবে না। আমাকে স্বামী মেনে নেয়ার অভিনয় টুকু শুধু করেন আপাতত।

অহনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, অভিনয় করতে হবে মানে?

– আমার বাবা মা চান আপনাকে বিশাল ভাইয়ের বউ করতে যেটা আপনি চাননা। আর আপনার বাবাকে কথা দিয়েছি আপনার ছোট বোনের বিয়েতে কোনো বাঁধা সৃষ্টি হতে দেবনা। আপনার ছোট বোনের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আমি আপনাকে আর বলবনা এই অভিনয় চালিয়ে যেতে। আপনি প্লিজ না করবেন না।

অহনা রীতিমতো অবাক। একটু আগে সৌমিক যা বলে আসল তার বাবা-মায়ের সামনে সেটা কি ছিল? মিথ্যে অজুহাত? সৌমিকের উপর সন্দেহ করে অনেক আফসোস করছে অহনা। পর হয়েও যে আপনের মতো আচরণ করছে তাঁকে কিভাবে এতোকিছু বলে ফেললাম। অহনা ভেতরে ভেতরেই অনেকটা অনুতপ্ত হতে লাগল।

– সরি সৌমিক! আমি তোমাকে এখনো মনে হয় বুঝতে পারলাম না। তোমার চরিত্রের উপর সন্দেহ করে আমি অনেক বড় ভুল করেছি।

– স্বাভাবিক! আপনার জায়গায় আপনার মতো যেকোনো নারী থাকলে এটাই মনে করতো। কিন্তু সত্যি বলছি আপনার মায়ের আঁচলে ঢাকা চেহারার পেছনের অশ্রুসিক্ত নয়ন, আড়ালে করে রাখা ব্যথা আমি অনুভব করতে পেরেছি। সেই কান্না আমাকে বাধ্য করে ফেলেছে আপনার বাবাকে দেয়া কথাটা রাখতে।

সৌমিকের প্রতিটা কথাই অহনার মনে দাগ কাটছে। এক আলাদা ভালোলাগা জন্ম নিচ্ছে। সহস্র-কোটি পুরুষের পৃথিবীতে এই পুরুষটাকে কেন জানি তার কাছে ভিন্ন মনে হচ্ছে। একদম আলাদা কেউ। স্বার্থের দুনিয়াতে কেউ এতটা নিঃস্বার্থ কিভাবে হয়! কিভাবে অন্যের দুঃখ কষ্টকে নিজের দুঃখ কষ্ট মনে করে! অবাক হয়ে অহনা বলে, সৌমিক কিছু জিজ্ঞেস করব মন থেকে জবাব দিবা?

– হুম, দিব। জিজ্ঞেস করেন।

– এতসব কিসের জন্য? আমাকে চেন না, জাননা। আমার বাবা মা তোমার কেউ হয়না, আমার পরিবারের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও এতো চিন্তা আমার পরিবারের জন্য! কেন সৌমিক?

শুধু অহনাই না, সৌমিকও অহনার প্রতি ভিন্ন অনুভূতি অনুভব করে। আলাদা আকর্ষণ, ভালোলাগা। নিজের প্রতি আত্মসম্মানবোধ, বিপদে না ঘাবড়ানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা, মাথা নত না করা, অহনার এইসব গুণ তাকে ভিন্ন করে। সৌমিকের কাছে এইসব গুণের কারণে অহনা প্রিয়। এখন তো সৌমিক নিজেও জানে যে জানা-অজানায় সে অহনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। সে এখন অহনার প্রতি দুর্বল। কিন্তু সৌমিক এটা কখনো মেনে নেবেনা। অহনার নজরে সৌমিক একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। এর অধিক কিছুই না। তাই সৌমিক সত্য বলতে গিয়েও থেমে গেল। মানুষ যখন সত্য বলতে পারেনা তখনই অজুহাতের আশ্রয় নেয়। সৌমিক বলল, বললাম তো! আপনার কষ্ট, আপনার সাথে হওয়া অন্যায় দেখে এসব করতে বাধ্য হয়েছি।

– এটাই কি বাস্তবতা?

সৌমিক চোখে চোখ রেখে বলতে পারলোনা যে এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, হ্যাঁ আমি সত্যিটাই বলছি।

অহনা মেনেও মানতে পারলোনা। কিন্তু কথাটাকে অবহেলা করে সে আগাতে থাকল। দরজার ওপাশে দুজন স্বামী-স্ত্রী কিন্তু এপাশে দুজন খুবই অচেনা, অজানা কেউ। বদ্ধ ঘরে কেউ বুঝতে পারেনা কতটা নিস্তব্ধতা বিদ্যমান, কতটা শূন্যতা নিহিত। বাইরে আচরণ করে যেন দুজন দুজনের খুব পরিচিত কিন্তু ভেতরে যেন কেউ কারো নয়। কিন্তু এসব শুধু অহনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সৌমিক তো উল্টো পথের পথিক। সে তো অহনাকে ভালো ই বেসে ফেলেছে। একতরফা ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা টা খুবই কষ্টের কিন্তু আনন্দেরও। কষ্টের এজন্যই কারণ আপনি জানেন আপনি তাকে ভালোবাসেন কিন্তু তাকে জানাতে পারবেননা। আপনার ভালোবাসা আপনার মাঝেই বেড়ে যাবে কিন্তু তার ছায়াটাও তার সংস্পর্শে আসবেনা। আর আনন্দের বললাম কারণ এতে ভীষণ সুখের অনুভূতি হয়। ভালোবাসা একটি সুখকর অনুভূতি। মিষ্টি মিষ্টি বেদনার অনুভূতি হয়। হারানোর কোনো ভয় থাকেনা। কারণ যে আপনার হয়নি তাকে হারাবেনই বা কিভাবে! সৌমিক দূর থেকেই ভালোবেসে যায়। বলতে চায়, বোঝাতে চায় কিন্তু সাহস দুঃসাহসে পরিণত হয় না।

অহনাকে সৌমিকের বাবা মা একদম দেখতে পারেন না। অহনা যেন তাদের চোখের কাটা। সীমাহীন ঘৃণা করেন।অহনার সাথে এমন আচরণ করেন যা কেউ পশুর সাথেও করেনা। কিন্তু এতে অহনা তাদের উপর রাগ করে না, প্রতিবাদ করে না। চুপ থাকে। বদ্ধ ঘরে অশ্রু ঝরায়। কারণ সৌমিকের সাথে তাল মিলিয়ে তাকে ছোট বোনের বিয়ে অব্দি অভিনয় করে যেতে হবে। নিজের বোনের বিয়েতে যেন কোনো বাঁধা বিপত্তি না আসে সে জন্য নিজেকে কাঁদিয়ে হলেও সবাইকে সুখে রাখতে হবে।

দুই-তিন মাস এরমধ্যেই কেটে গেছে। অহনা প্রায় রাতেই লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করতো। কিন্তু আজ রাতের কান্না সে আর লুকাতে পারেনি। অগোচরে লুকিয়ে সে যখন কাঁদছিল তখন সৌমিক রুমে এসে সবকিছু দেখে ফেলল। অহনাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বিভিন্নরকম দুশ্চিন্তা তার মাঝে ঘর করে নিল। কেন কাঁদছে অহনা, কি হয়েছে তার সাথে ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন তার মাথায় এদিক-ওদিক ঘুরতে লাগল। সে অস্থির হয়ে অহনাকে জিজ্ঞেস করলো, কাঁদছেন কেন আপনি? কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছেন কেন?

অহনা একদম অপ্রস্তুত ছিল। সৌমিক হুট করে আগমন তাকে বিচলিত করে তুলল। আড়ালে চোখের জল মুছে কষ্ট লুকোনোর চেষ্টা করল কিন্তু সৌমিক আবারো ধরে ফেলল।

– এভাবে অশ্রু লুকচ্ছেন কেন? বলুন কি হয়েছে?

অহনা আড়ালে চোখের জল মুছে নিয়ে বলল, কই নাতো! হয়নি কিছু। এমনি একটু ভালো লাগছে না আর কি।

– মা অথবা বাবা কিছু বলেছেন?

– না না! উনারা কি বলবেন!

সৌমিক জানে কিছু একটা তো হয়েছে যার কারণে অহনা কাঁদছে।
– আচ্ছা আমি কি আপনার খারাপ চেয়েছি কখনো?

সৌমিকের হুট করে করা এমন প্রশ্নে আঁতকে উঠল অহনা।
– এটা কেন বলছো সৌমিক?

– আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আপনার ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে। এমনকি আপনাকে একজন ভালো বন্ধু মনে করি। কিন্তু আপনি আমাকে বন্ধু মনে করা তো দূরে, আজও বিশ্বাস করতে পারেননি।

– এসব কি বলছ সৌমিক! যে আমার বিপদে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাকে বিশ্বাস করিনা এটা তুমি মনেই বা করলে কিভাবে?

– তাহলে বলছেন না কেন কি হয়েছে? কাঁদছেনই বা কেন?

এবার আর লুকোতে পারেনি অহনা। সত্য টা না বলে আর থাকা যাচ্ছেনা। অহনা জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলতে লাগল, সৌমিক কখনো ভাবিনি আমার সাথে এভাবে এমনকিছু ঘটে যাবে। আমি বিবাহিত হয়ে বিবাহিত হওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছি অবিরত। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, স্বপ্ন এঁকেছিলাম মনে। জীবনে অঢেল সুখ পাইনি। গরিবের সুখ দুঃখের চাইতে অনেক কম। ভেবেছিলাম একদিন তো সুখী হব। সেদিন সুখী হব যেদিন আমাকে কেউ একজন ভালোবাসবে, সহধর্মী হয়ে সহধর্মিণীর অধিকার দেবে। স্বপ্ন ভেঙে যায় জানতাম, কিন্তু জানতাম না যে স্বপ্ন এভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে যায়। এখন ভয় হয় সৌমিক ভীষণ ভয় হয়। স্বপ্ন দেখতে ভয় হয়, আগামীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় হয়।

অহনার চোখ দিয়ে আবারো অশ্রু গাল বেয়ে টপটপ করে পড়ছিল কিন্তু অহনা সেটা টের পাচ্ছিলনা। কিন্তু সৌমিক টের পাচ্ছিল যে অহনা ভালো নেই। তার মনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, ভেতরটা পুড়ে যেন ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সৌমিক এগিয়ে গিয়ে অহনার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, এসব বলতে নেই। আমি আছি আপনার পাশে আপনার বন্ধু হয়ে তাহলে চিন্তা করেন কেন? সব ঠিক করে দেব আমি।

এমনটা একটা হাত খুঁজছিল অহনা যা তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলবে আমি আছি তো! ভয় কিসের? আজ সৌমিকের হাতের স্পর্শে সেই কল্পনায় দেখা হাতের স্পর্শ অনুভব করলো অহনা। নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরলো সৌমিক কে। সৌমিকও তার অজান্তেই আগলে নিল অহনাকে। দুজন মুহূর্তের জন্য যেন সবকিছু ভুলে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিল নিজেকে নিজেতেই। অহনা সৌমিকের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছিল। কিন্তু পরপরই যেন তার জ্ঞানোদয় হয়। ছিটকে সরে এসে নিজেকে সামলে নিল অহনা। মনে মনেই সে সংকোচিত, লজ্জিত। নিজেকে সামলে নিয়ে অহনা সৌমিক কে বলল, বন্ধু যখন ভাবো তাহলে আপনি করে কেন ডাকো? তুমি করে ডাকলেই তো পার!

– আপনাকে আপনি করে ডাকলে একরকম আপনজন মনে হয়। ভালো লাগে আপনাকে আপনি করে ডাকতে। আপনাকে আমি আপনি করেই ডাকি আপাতত। একদিন নাহয় তুমি করে ডাকবো!

কথার আগাগোড়া বুঝেনা অহনা কিন্তু কথাটা যেন তার মনের তারকে নাড়া দেয়। কথাগুলো সত্যিই ভালোলাগে অহনার কাছে।

এদিকে সৌমিকের মা-বাবা অহনার প্রতিবাদকে নিজের কাছে তাদের জন্য বড় অপমান হিসেবে দেখছেন। এখন নতুন ষড়যন্ত্র আঁটছেন শ্বশুর-শাশুড়ী। তারা চান অহনার ছোট বোন মোহনার সাথে যেভাবেই হোক বড় ছেলে বিশালের বিয়ে করিয়ে দিতে। তারপর ছোট বোনকে দুঃখ-কষ্টের আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলবেন। এতে বড়বোন নিজেই তিলেতিলে পুড়ে পুড়ে ছাঁই হয়ে শেষ হয়ে যাবে। এতে অনেকাংশে তাঁরা প্রতিশোধ নিতে পারবে। তাই আজই সৌমিকের বাবা-মা কাউকে না জানিয়ে অহনার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন।

– দেখেন, আপনার বড় মেয়েকে আমার বড় ছেলের জন্য পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত বিয়ে আমার ছোট ছেলের সাথে হয়। কিন্তু তবুও আমরা মেনে নেই। চাইলে কিন্তু পারতাম সবকিছু ভেঙে দিতে, সব সম্পর্ক তছনছ করে দিতে। কিন্তু সেটা করিনি। এখন আপনার কাছে আমরা কিছু চাইতে এসেছি। এবং অবশ্যই আশা করিযে আপনারা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবেন, আমাদেরকে ফিরিয়ে দেবেননা।

অহনার বাবা একটু অবাক হলেন। কি চাইতে পারে উনারা? কি চাইতে এসেছেন এখানে? মোহনার বাবা বিনম্র ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কি দিতে পারি আপনাদেরকে? বলুন, যদি সাধ্যের মধ্যে থাকে তাহলে না করবনা।

– আমরা চাই আপনার ছোট মেয়ের সাথে আমাদের বড় ছেলের বিয়ে করাতে। আমাদের বাড়ির বউ বানাতে চাই আমরা আপনার ছোট মেয়েকে।

মোহনা, মোহনার বাবা-মা এমন দাবিতে ভীষণ অবাক। কিন্তু উনারা না করতে পারেননি। সৌমিকের বাবা মা চাপ দিচ্ছিলেন। অহনাকে বউ মেনে যে উপকার করেছেন সেটা বোঝাচ্ছিলেন। আর সেই উপকারের ঋণশোধ করতে উনারা এই বিয়েতে রাজি। কিন্তু মোহনা পারবেনা সেখানে বিয়ে করতে। নিজের জীবন এবং নিজের বড় বোনের জীবন সে নষ্ট করতে পারবেনা। মোহমা বুঝতে পারছিল যে নিশ্চয়ই তার বড় বোনের শ্বশুর শাশুড়ী কোনো ধরনের প্রতিশোধ নিতে চায় বলে বিয়েটা করতে চান। নইলে এ বাড়িতেই আবার কেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতো! মোহনা সবকিছু ফোন করে অহনাকে জানিয়ে দেয়। অহনা বুঝে ফেলে যে সৌমিকের বাবা-মায়ের উদ্দেশ্য নিতান্তই খারাপ। তাঁরা তার ছোট বোনের জীবন টা ধ্বংস করে দিতে চায়। প্রতিশোধের আগুন প্রতিশোধ নিয়ে নেভাতে চায়। অহনা চায়না এ বিয়ে হোক। কোনোভাবে চায়না হোক। কিন্তু এদিকে অহনার বাবা-মা কথা দিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজের কাঁধে চাপানো ঋণের বোঝা কম করতে চান, বিশালের সাথে মোহনার বিয়ে দিয়ে উপকারীর উপকার করতে চান।
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here