ভুলবশত♥
PART_08,09
FABIYAH_MOMO🍁
ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে সাগ্রত। চোখমুখ ভারী নেশাগ্রস্ত। আমি ট্যাপের উপর থেকে হাত সরিয়ে দ্রুত একপা পিছিয়ে গেলাম। সাগ্রত চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো-
–তুমি সঙ্গে সাঙ্গু নিয়ে এসেছো কেন?
সাঙ্গু দ্বারা ইফরাকে বুঝিয়েছে। ভিন্ন নাম দিয়ে ইঙ্গিতে বলেছে। আমি ওয়াশরুমে একা একটা ছেলের সাথে। সে দরজা আটকিয়ে দিয়েছে ভেতর হতে। কি করার উদ্দেশ্য তার কোনো এসপার বুঝে উঠতে পারছিনা। এই মূহুর্তে চিৎকার করবো? ইফরা আমাকে বাচাতে আসবে? নাকি সাগ্রত মুখ চেপে বলে উঠবে- “স্নেহময়ী! স্টপ!! স্টপ! প্লিজ চিল্লাচিল্লি করো না। আমি খারাপ মতলবে আসি না।” চিন্তার চাদরে ডুবে থাকতেই সাগ্রত আমার কাছে আসলো। কাছে এসে ওর লেফট পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে আমার কপালে চালান দিলো। আমার কপাল মুছে টিস্যুটা দেখালো। টিস্যুটা হালকা ভিজে উঠেছে। তার মানে আমি সাগ্রতকে দেখেই কপালে ঘাম ছুটিয়ে ফেলেছি।সাগ্রত ত্যাড়াব্যাকা দাতে মুখ টিপে হাসছে। ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিনোদন দিয়ে দাড়িয়ে আছি। ও বিনোদন পেয়ে হাসছে। অজান্তেই আমার হাত কপালে চলে গেল। কপালে ছুয়িয়ে দেখি সত্যি আমি আচমকা ভয় পেয়ে ঘাম ঝরিয়ে ফেলেছি। এখনো ঘামের ছিটেফোঁটা কপালে বাকি। সাগ্রত ঠোঁটে হালকা হেসে বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী আমাকে ভয় পেলে চলবে না বুঝছো?? আমি ক্ষতি করার মতলবে থাকি না। ক্ষতি করলে আগেই সোজা হাত মেরে দিতাম। কিন্তু স্টিল কিছু করিনি। আই থিংক ওমন কিছু করবো না। সো ভয় পেও না স্নেহময়ী।
সাগ্রত আমাকে অভয় বানী দিলো বলে মনে হলেও সাগ্রতের প্রতি কথায় আলাদা করে “কিন্তু” লুকানো থাকে। এবারও সম্ভবত তাই হয়েছে। ওর কথার লুকানো ‘কিন্তু’টা আমি খুজে পেলাম না। সাগ্রত হঠাৎ আমার খুব কাছে চলে আসলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কপালে উষ্ণ স্পর্শ একে দিলো। ও দুহাত দিয়ে আমার বাহু চেপে ধরে আছে। কপালে ঠোট ছুয়ে দিয়েছে। কেমন গা শিরশির করছে আমার। চোখ বন্ধ করে অন্য রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। আমি ওকে বাধা দিয়ে ধাক্কা মেরে দৌড় দিবো হুশঁ আমার নেই। সাগ্রত আমায় ছেড়ে দিলো। চোখ খুলে ওর দিকে তাকাতেই সাগ্রত দরজা খুলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। আমি হতভম্বের মতো ওয়াশরুমে দাড়িয়ে আছি। সাগ্রত কেন জলদি চলে গেল জানি না আমি।
আমিও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ইফরার কাছে গেলাম। সাগ্রত ইফরার সাথে কথা বলছে। একদম স্বাভাবিক, একটু আগে আমার সাথে কান্ড কি করলো বোঝা মুশকিল! আমি আগের জায়গায় সোফাতে বসলাম। ইফরা সাগ্রতকে বলে উঠলো-
–আমি যদি আপনার বাসায় গল্পগুজব করতে আসি তাহলে খারাপ হবে? আসলে আপনাকে আমার বন্ধু হিসেবে বেশ ভালো লেগেছে।
–জ্বী আসবেন। সমস্যা নেই। আমি কারো বন্ধু হওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছি বলে এটাই অনেক। সময় করে আসবেন। চা পানি খেয়ে যাবেন।
–আচ্ছা আপনার বন্ধু নেই? একা থাকেন ফ্ল্যাটে?
–আমি একা থাকি না। খালামনি থাকেন। বর্তমানে উনি রাজশাহীতে গ্রামে গিয়েছেন। আমার বন্ধু নেই।শুধু একজন আছে। নাম স্বাধীন।
–ওহ্….আপনার বাসা কোথায়? মানে বলতে চাচ্ছি কোথা থেকে এসেছেন?
–আমি নারায়ণগঞ্জ থাকি। মিরপুর থাকছি পড়াশোনার কারনে। তা আপনি উনার কে হন?
–আমি স্নেহার বেস্টফ্রেন্ড। বলতে পারেন আমার বোন।
–বাহ্। বান্ধুবী আবার বোন?
–হুম…আমাদের মধ্যে বান্ধুবী বান্ধুবী ফিলিংস কম। বোন টাইপ ভালোবাসা বেশি। পরিবারে কে কে আছেন আপনার?
সাগ্রত সব কথার জবাব হাসিখুশি দিলেও এই প্রশ্নে সে কিছুটা চুপ হয়ে গেছে। আমি নিজেই ওর মুখ থেকে জবাবটা শুনতে চাচ্ছি। এমন পচা ছেলের বাবা-মায়ের ফোন নাম্বার পেলে বিচার দিয়ে দিতাম!! সাগ্রত মলিন হাসি দিয়ে বলে উঠলো-
–কেউ নেই,
ইফরা আরেক প্রশ্ন করতে যেয়ে চুপ হয়ে গেল। ওর আর সাগ্রতকে পরের প্রশ্ন করা হলো না, নিরবতা পালন করলো। লক্ষ করলাম, সাগ্রত এতোক্ষন চোখে চোখ রেখে উত্তর দিচ্ছিলো এখন চোখ দুটো ফ্লোরের সাদা টাইলসে নেমে গেলো। ইফরা কাজটা ঠিক করেনি সাগ্রতকে এভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার। সাগ্রত কষ্ট পেয়েছে। পেলেও ছেলেটা হাসির আড়ালে মুখ লুকিয়ে আছে। বাবা-মা যার নেই। তার দুনিয়ায় আপনজন কেউ নেই। যারা ‘আপনজন’ বলে থাকে বেশিরভাগই স্বার্থ হাসিলের উছিলায় আমার মতো মগের মুল্লুক হয়ে থাকে। সময়ে সময়ে ইউজ করে। ওর চোখ দুটো উপরে উঠছে না। নিচু হয়ে আছে। ইফরা আমার দিকে ঠোট উল্টিয়ে তাকালে আমি চোখ রাঙিয়ে চুপ হতে বলি।
–একটা কথা বলবি না চল!
ইফরা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে উঠে দাড়ালো। সাগ্রতকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে উঠলো-
–আমরা আসি। আরেকদিন আসবো। আমার একটা জরুরী কাজের কথা মনে পড়ে গেছে। এক্ষুনি যেতে হবে।
সাগ্রত চোখ উঠিয়ে তাকালো। ইফরার পেচালে খারাপ লাগলেও স্নেহার সাথে থাকতে সেই খারাপ লাগা মিইয়ে যায়।তবুও সাগ্রত ইফরাকে যেতে বারন করলো না। স্নেহা ও ইফরাকে দরজা পযর্ন্ত এগিয়ে দিলো। ওরা চলে গেলো। সাগ্রত দরজা ধরে হাসিমুখে বিদায় দিলো। দরজা লাগাতেই পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। হাটুতে মাথা লাগিয়ে বসে আছে সাগ্রত। চোখ বন্ধ করে সে স্নেহার মুখ দেখার চেষ্টা করছে। স্নেহার হাসি তার বড্ড প্রিয়।কল্পনায় স্নেহার মুখের উপর কৃত্রিম হাসি দেওয়া একটা ছবি একে নিলো। ছবিটা কি দারুন লাগছে। অসাধারণ লাগছে। কোনোভাবে যদি ছবিটা কল্পনা থেকে বাস্তবে আনা যেতো স্নেহাকে স্নেহময়ী হিসেবে বাহুডোরে রাখা যেতো। তাহলে সাগ্রতের একাকিত্বের জীবনে কেউ একজন চলে আসতো। অগোছালো জীবনকে রঙতুলির মতো রঙিন করে দিতো। সাগ্রতের ঠোঁটে তখন বাকা দাতের হাসি সারাক্ষন থাকতো। ঝলমলে চোখের উজ্জ্বলতা অন্যরকম হতো। সবই পাল্টে যেতো।
সন্ধ্যায় টিভির রুমে বই নিয়ে বসে আছি। চোখে মোটামুটি কম পাওয়ারের চশমা আটা। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছি। সাফা আপুর মামলা পুলিশ পযর্ন্ত পৌছেছে। এখন সব তদন্ত করে পুলিশ দেখবে। ফুপাজি কুমিল্লা থেকে আসতে আরো কিছুদিন টাইম নিবেন। ফুপি কান্নাকাটি অফ করলেও সুযোগ পেলে হাউমাউ করে কাদেন। আমি মাথা ঠান্ডা করার জন্য বইয়ের লাইনের উপর চোখ বুলাচ্ছি। ইফরাকে বিদায় দেওয়ার পর থেকে এই পযর্ন্ত দশবার কপালে চুমু দেওয়ার জায়গায় হাত লাগিয়েছি। আয়নায় তাকিয়ে তাকিয়ে চুমু দেওয়ার জায়গাটা বুলাই। কি যে করি! সহজ আন্ঞ্চলিক ভাষায় বলতে গেলে আমার মাথা “আউলা” হয়ে আছে। সাগ্রত…সাগ্রত… সাগ্রত!! সাগ্রত ঘুরছে! খালি সাগ্রতের কাছে আসার মুহূর্ত স্মরণ হচ্ছে। কি জাদু করে দিলো ভুলতেও পারছিনা!! হুর.. কপালে শান্তির ছোঁয়া নেই!! ছোঁয়ার নামে যেই ছোঁয়া পেয়েছি এখন দেখছি ভুলতেও পারছিনা। সাবান পানি দিয়ে ঘষলেও চুমুর জায়গা আগের মতো হবে না!! জ্বালা আর ঝামেলা!!
-চলবে🍁
-Fabiyah_Momo🍁
#ভুলবশত♥
#PART_09
#FABIYAH_MOMO🍁
ফজরের আযানে আমার ঘুম থেকে উঠার নিয়ম। আজও নিয়মমাফিক ঘুম থেকে উঠেছি। মনিং প্রেয়ার শেষে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছি। কিছু কাজ করা বাকি। কানে হেডফোন দিয়ে ল্যাপটপে কানেক্ট করে স্বাধীনকে কল করলাম। আই হোপ ঘুম থেকে উঠে গেছে ও। না উঠলে পিঠের চামড়া তুলে লবণ ঘষতেও অন্যদিকে তাকাবো না। স্বাধীন কল রিসিভ করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে আসলো। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে শক্ত মুখে বলে উঠলাম-
–স্বাধীন! চোখের ঘুম এখনো কেন ফ্রেশ লাগছে? তুমি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছো!এইগুলা ডিসিপ্লিন?
–সরি স্যার…
–সরি আমার কি সাধন করবে স্বাধীন? তুমি কবে ডিসিপ্লিনের ক্যাটাগরি বুঝবে! এগুলা তোমার কাম্য না!
–নেক্সটে খেয়াল রাখবো স্যার…কারেক্ট চারটায় ঘুম থেকে উঠবো।
–নামাজ পড়ো? মনে তো হয় না। বেনামাজী একটা! কাল রাতে কি নিয়ে ব্যস্ত ছিলে? উঠতে দেরি করলে কেন? ঘড়ি দেখছো সাড়ে ছয়টা বাজে?
–স্যার, স্নেহা ম্যামের দিকে নজর রাখছিলাম। ম্যাম রাতে ঘুমান নি। সাফা মেয়েটা লাপাতা।
–তোমাকে আমি নজর রাখতে বলেছি? আগ বাড়িয়ে কাজ করতে যাও কেন!
–সরি স্যার…
–এক কাজ করো! মুখের উপর “সরি স্যারের” নোট লাগিয়ে রাখো। কাজ তো ঠিকমতো করোই না। যা বলি!তাও উল্টোটা করে দেখাও!
–সরি স্যার…কাল রাতে হাতের বাহুতে পেইন করতেছিলো এজন্য ঘুমাতে পারিনি স্যার।
–হাতের পেইনে ঘুম হবে না,কেমন ফালতু কথা বলছো? তুমি জানো না এইসব কথা আমাদের মুখে মানায় না!
–স্যার আমার জন্য নিউ…খাপ খাওয়াতে টাইম লাগবে। মাত্র তিনমাস হইছে। স্যার…স্নেহা ম্যামের হাতের ব্যাগ প্রচুর ভারী ছিলো। এ্যাটলিস্ট দশকেজির মতো হবে। ওটা বাইকে বসে ছু মন্তর করে ফেলতে গিয়ে হাতের রগে টানা পড়েছে।
স্বাধীনের ব্যাথার প্রতি আমার কোনো চিন্তা নেই। চিন্তা হচ্ছে স্নেহময়ী প্রতি। গাধার মতো খাটাচ্ছে মেয়েটাকে। সস্তা দরে কাজের বুয়া পেলেও বাড়ির মানুষ এমন নিচু কাজ করবে না। স্নেহময়ীকে বললেও আমার কাছে কখনো আসবে না। স্বাধীনের মতো ইয়াংবয় সামান্য বাজারের ব্যাগ মাটিতে ফেলতেই হাতের রগে টানা পড়েছে তাহলে স্নেহময়ীর কি ব্যাথাট্যাথা হয়না? মেয়েটা আমাকে মুখ চিড়ে জীবনের দুঃখ বলবে না?
–স্যার…ম্যাম মোট চল্লিশ কেজির ব্যাগ নিয়ে খুড়িয়ে হাটছিলো। বৃষ্টির কারনে রাস্তায় কোনো রিকশা ছিলো না। আবার, রিকশা খুব কম ছিলো সব বুকিং।
ভাবনায় পড়ে গেলাম। স্বাধীনের কাছ থেকে পাওয়া ইনফরমেশনে বুঝছি স্নেহময়ী কামলার মতো খেটে যাচ্ছে। দুবেলা খাবার ঠিক করে খায় কিনা সন্দেহ লাগছে। তথ্য পেয়েছি ওর আপু গুম আছে, জিনিসটা ঘোলা জলের মতো লাগছে। সোজা পানির কারবার বলে মনে হচ্ছেনা। স্বাধীনকে ভিডিও কলের সংযোগ কাট করতে বলে আমার নিজস্ব মিশনে নেমে পড়লাম। আমার মুখ্য এবং আসল টার্গেট মিস্টার ড্যাশ ড্যাশ(…) অন্যকেউ। স্নেহা মাহমুদ না।
–স্যার…জরুরী একটা খবর পেয়েছি…বলতে ভুলে গেছি!! মিস্টার আজহার বিন রহমান এখন কুমিল্লায় আছে!! আপনি কমান্ড করলে স্টেপ নিবো !
–গ্রেট জব স্বাধীন! এইতো করলে কাজের কাজ ! ওয়েল ডান !
নিউজ পেয়ে সাগ্রতের চোখ চকচক করে উঠলো। যেন কতদিন ধরে সে খোশখবরটা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে!! শেষমেশ পেল!!
.
.
ইদানিং বাসার বাইরে গেলেও মনে হয় পিছন পিছন চোখ লাগিয়ে ফলো করা হচ্ছে। কিন্তু যতবার পিছনে তাকাই দেখি কেউ নেই। ফকফকা রাস্তা, কোনো সন্দেহজনক মানুষ নেই। দু-চারটাঅন্ধ ফকির, মিসকিন দেখি। এর বেশি কিছু চোখে পড়েনি। আজ লাইব্রেরি থেকে ডিপার্টমেন্টের বই এবং একপাতা কলম আনতে বেরিয়েছি। সবসময়ের মতো আজো কেউ বহু চোখ লাগিয়ে আমাকে ফলো করে যাচ্ছে। আমি কোনোক্রমেই তাকে ধরতে পারছিনা। শুধু ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা তীব্র অনুমান করছি কেউ ফলো করছে। লাইব্রেরিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে বিল দিতে গেলে দোকানদার পরিস্কার শব্দে “না” করে বলে উঠে-
–আজ আমাদের শপে ফ্রি সেলস্ অফার চলছে কয়েক ঘন্টার জন্য। আপনি সেই লাকি ঘন্টার একজন।
কিন্তু আজবের ব্যাপার হলো দোকানের বাইরে এমন কিছুর বিজ্ঞাপন বা নোটিশ বার্তা ব্যানারে টানানো হয়নি। আবার ভীড় একদমই নেই। নয়তো লাকি ঘন্টার নামে হাজারখানেক মানুষ লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতো। আর সব লাকির লিস্টে চলে আসতো। এরপর দেখা যেতো বেটার ব্যবসায় লালবাতি জ্বলেছে।
সবকিছু নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে দেখি ফুপি বাসায় নেই। পড়লো এক বাধা! সাইডব্যাগে হাত দিলাম, চাবি
নেই ফাকা! মনের ভুলে মেইন দরজার চাবি আমার বালিশের নিচে রেখে এসেছি। ব্যাগে তুলতে ভুলে গেছি। কি করি কি করি নিয়ে কতক্ষন খাম্বার মতো দাড়িয়ে থাকলেও পাশ থেকে কারোর দরজা খুলার শব্দ পেলাম। সাগ্রত দরজা খুলে আমার দিকে মিটিমিটি হাসছে। ইচ্ছা করছে কোদাল দিয়ে হাসির আমেজ বন্ধ করে দেই কিন্থু কোদাল উঠাতেই কোদাল আমাকে উঠিয়ে ফেলবে। ওই রিস্ক নিতে চাইনা। ইজ্জতের ফস্টিনস্টি ঘটে যাবে। সাগ্রত বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী বাসায় আন্টি নেই?? উহু… এক কাজ করো, ভেতরে আসো। এক কাপ গরম চা করে দেই। খেয়েদেয়ে তারপর ওয়েট করো। আন্টি এসে পড়বে।
বাইরে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে ছেলেটার বাসায় যাওয়া ঠিক হবে? জানি না। কিন্তু বাইরে এভাবে কতক্ষন দাড়িয়ে থাকা যাবে? হাইয়েস্ট আধ ঘন্টা কি একঘন্টা! ফুপি আবার সারাদিন পার করে বাসায় ফেরার অভ্যাস রাখে। তাহলে ছোটোখাটো বিপদে ফেসে যাবো। অন্যকিছু নিয়ে ভাবা-চিন্তা করতে থাকলে সাগ্রত বলে উঠে-
–কি হলো? আসো বলছি। আমি কি তোমার ক্ষতি করবো নাকি ? ভেতরে আসো! দাড়িয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার মানে হয়না।।
তাকে ঝাঝালো কন্ঠে তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বললাম-
–খবরদার! আমার দিকে অন্যভাবে নজর দিলে! আমি কিছুক্ষণ থাকবো এরপর ফুপি চলে আসলে কেটে পড়বো !
সাগ্রত হাসলো। মাথা নাড়িয়ে আমাকে ভেতরে আসতে বললো। আমি ভেতরে গেলাম। বিছানায় কালো মতো একটা ‘ডেল’ ল্যাপটপ রাখা। পাশে ফোন ও হেডফোন। আমি রীতিমতো সোফায় কুশন সরিয়ে বসলাম। ও চটপট চা-নাস্তার আয়োজন করতে লাগলো। আমাকে বলে উঠলো-
–আচ্ছা চা না দিয়ে কফি দিলে সমস্যা হবে? আমি চা বানাতে পারিনা। কফিমেকারে কফি বানাতে পারি।
বুঝলাম সাগ্রত কফি বানাতে পটু। আমি আর এক্সট্রা করে চা বানানোর মত প্রকাশ করলাম না। চুপ রইলাম। চুপটি সবকিছুর সম্মতি। সেটা বুঝলে বুঝুক না বুঝলে নেই। কফির একটা মগ সামনের টি-টেবিলে রেগে ও বেডে কফি হাতে বসলো। মগে ঠোট লাগিয়ে খেতেই আমি টেবিল থেকে মগ নিলাম। কফির ট্রিট রাত তিনটা চারটায় দিলেও আমার কৌনো সমস্যা নেই। সে চুমুক শেষে বলে উঠলো-
–আপনার বেস্টফ্রেন্ডের মতো বেশি চিনি দেইনি। কম দিয়েছি। তিতা মানুষদের চিনি বেশি খেতে নেই।
আমি মগে চুমুক দিতে গিয়ে বিষম খেলাম। আমাকে তেক্ত বলে আখ্যা দিলো? আমি একচুমুক দিলাম। খুবই শান্তভাবে আছি। কথা কম বলছি। সাগ্রত হাসি দিয়ে বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী তুমি মাইন্ড না করলে একটা কোয়েশ্চ্যান করি?
হালকা করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। সাগ্রত সম্মতি পেয়ে খুশি হলো। তথাকথিত প্রশ্ন করে বসলো-
–তোমার ফুপা কিসে জব করে?
–ব্যবসা করে। যতটুক জানি, জুটের ব্যবসা।
–ওহ…প্লেসটা কোথায়? দেখো আমি ক্যাজুয়েলি আস্ক করছি। নাথিং এল্স। বাড়িওয়ালা তো তাই….
–ফুপা নানা জেলায় ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করে। মেইন কোনো ফিল্ড প্লেস নেই।
–ওয়াও আমেজিং!! আই থিংক এতোদিনে উনার ৬৪ টা জেলা ঘুরা শেষ। কি বলো?
–জানি না। হতেও পেরে।
–প্রেম করেছো? বয়ফ্রেন্ড আছে?
–তোমার তা জেনেশুনে লাভ নেই। নিজের কাজে নিজে মনোযোগী হও।
সাগ্রত কফি হাতে উঠে দাড়ালো। ওয়ারড্রবের উপর রাখা বইয়ের একগাদা সারি দেখতে লাগলো আর থেমে থেমে কফির মগে চুমুক দিলো। কিছুকাল যাবৎ নিরবতা পালন করে সাগ্রত বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-
–স্নেহা মাহমুদ। বয়স বিশ। ২২ জুন বার্থডে। বাবা নেই। মা পালিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। ফুপির কাছে বড় হয়েছে। ভুলবশত একটা ছেলের ফাদে ফেসেছিলো।ভুলবশত একটা প্রেম হয়েছিলো, বর্তমানে প্রাক্তনের কাতারে জুয়েল পড়ে আছে। মেয়েটা তাশরীফ সাগ্রতের কাছে কফির খপ্পরে বসে আছে। কি মিস স্নেহা মাহমুদ? সব ঠিক বলেছি তো?
স্নেহার হাত থেকে কফির মগটা শব্দ করে পড়ে গেলো। কাচের মগটা ফ্লোরের আঘাতে ভেঙ্গে গেলো। স্নেহা অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গেছে….সাগ্রতের বলা কথায় ও চোয়াল ঝুলে তাকিয়ে আছে….ছেলেটা দুই মিনিটের মাথায় সব চাপা তথ্য গড়গড় করে বলে দিয়েছে… সাগ্রতের কথা শুনে স্নেহার মাথায় বড্ড বাজ পড়েছে। কে এই ছেলেটা? সিসিটিভি বা গোপন ক্যামেরা স্নেহার সাথে লাগিয়েছে নাকি? স্নেহার সাথে তার মতলবটা কি?
-চলবে
-Fabiyah_Momo