আমার অপ্রিয় আমি,পর্বঃ১
রিলেশন_সিরিজ
Ipshita_Shikdar (samia)
আমি ইপশিতা হাসান। আগামীকাল আমার গায়ে হলুদ আর পরশু ধুমধাম করে আমার বিয়ে আমারই ভালোবাসার মানুষ কাব্যের সাথে। যাকে বলে ড্রিম ডেস্টিনেশন মেরেজ! সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার বাসায় এসেছিলাম তাকে সারপ্রাইজ দিতে কে জানতো আমিই জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ বা শকটা পাবো।
কাব্যের বাসার সামনেই আসতেই দেখি দারোয়ান চাচা বাড়ির প্রবেশদ্বার বা মেইন গেইট বন্ধ করে রেখেছে। কিছুটা অবাক হলাম দরজা তো কখনো বন্ধ থাকে না পরে ভাবলাম বিয়ে তো এই বাড়িতে হচ্ছে না রহমান বাড়িতে হচ্ছে তাই হয়তো। গাড়ির বেল বাজাতেই চাচা ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসলেন।
চাচাঃ মেডাম আপনি!
আমিঃ চাচা গেইট খুলেন তাড়াতাড়ি! সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরতে হবে।
চাচাঃ কিন্তু……..
আমিঃ উফফফ চাচা খোলেন তো!
চাচা আর কিছু না বলে মেইন গেইট খুলে দিলো আর আমি গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে চলে ঢুকে গেলাম বাসায়। নিচে দেখলাম মালা আমাকে দেখে কেমন যেনো অবাক চোখে তাকাচ্ছে। তার দৃষ্টিতে কিছুটা ভয়, কিছুটা আশ্চর্যও হয়তো। আমি সেদিকে বেশি ধ্যান না দিয়ে উপরে কাব্যের বেডরুমের দিকেই এগিয়ে গেলাম যা দেখলাম চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম আমারই বেস্টফ্রেন্ডের সাথে আমার হবু বর……..। আর ভাবতে পারলাম বা দেখতে পারলাম না বেড়িয়ে আসলাম সেখান থেকে। আমার প্রিয় আমিটাকে যে অপ্রিয় হতে আর দেখতে পারছিলাম না!
বুঝতে পারছি না কি করবো বা কোথায় যাবো! বাবাকে কি করে বলবো যেই ছেলেটার জন্য তাকে জোরজবরদস্তি করে রাজি করেছি সেই ছেলেটা ঠিক গায়ে হলুদের আগের দিন আমায় এভাবে ধোঁকা দিবে। নাহ! বাবা সহ্য করতে পারবে না। পাপ্পা! পাপ্পার তো মান-ইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করবো আমি? হঠাৎ মাথায় একটা পরিকল্পনা এলো। হুম, এটাই করবো আমি। কাব্যর বাসার দিকে আবার গাড়ি ঘুরালাম।
দাড়োয়ান চাচার এবার আমার গাড়ি থেকে চোখ বেড় হওয়ার উপক্রম। তার আচার আচারণে বুঝতে পারলাম সে কিছুটা হলেও জানে ভিতরে কি চলছে আর আমি কি দেখে এসেছি। মানে এটা শুধু আজকের ঘটনা না এর পূর্বেও বেশ খাণিকবার আমার আড়ালে এটা হয়েছে। ভাবতেই মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। এবার গাড়ি থেকে নেমে চাচা কিংবা কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা কাব্যর ঘরে পৌঁছালাম।
কাব্যর বেডরুমের দরজার পাশে দাঁড়াতেই দেখি আমার বেস্টফ্রেন্ড ইশা কাব্যকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি কিছু না বলেই কয়েকটা তালি দিলাম। আর তালির আওয়াজেই তারা তাদের দৃষ্টি দরজার দিকে স্থির করলো…. তারা অবাক ও স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাদের কার্যকলাপে ধ্যান না দিয়ে ইশাকে এক টানে কাব্যের বুক থেকে সরিয়ে ঠাশঠাশ দুটো চর লাগিয়ে বললাম, বেহায়া মেয়ে তোকে বেস্টফ্রেন্ড ভেবে নিজের সবটা তোর সাথে শেয়ার করতাম দেখে ভেবেছিস আমার স্বামী তোর সাথে শেয়ার করবো! ব্লাডি ফা** বিচ!
ইশা আমার কথায় কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে আমার রাগ যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।
তাই তার গাল একহাতে চেপে ধরে বললাম, ওইদিকে কি! তুই আমার কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো বলতো? মায়া লাগাচ্ছিস যাতে তোকে সাপর্ট করে। ওয়েল এখন আমি বুঝছি তুই সবসময় আমার থেকে কাব্যর খোঁজখবর কেন নিতি এন্ড কাব্যর নাম্বার, হোয়াটস এপ, এফবি আইডি কেন নিয়েছিলি যাতে কাব্যকে ফাঁসাতে পারিস তোর প্রেমের জালে তাইনা? এতোই তোর লোভ যে নিজের বোনের মতো বেস্টুকেও ছাড় দিলি না!
কাব্য আচমকা আমাকে এক টানে ইশানি থেকে ছাড়িয়ে বললো, হোয়াট আর ইউ ডুইং ইপশু! এগুলো কি বলছো ওকে তুমি…. তোমার মাথা ঠিকাছে তো!
আমি মলিন হেসে বললাম, ইয়াহ আ’ম টোটাল্লি ফাইন। নিজের বেস্টুকে আমার হবু বরের সাথে মেক আউট করতে দেখে আমার তো ভালোই থাকার কথা, তাইনা কাব্য? এন্ড প্লিজ ডোন্ট কল মি ইপশু…. এই নামটা শুধু যারা আমাকে মন থেকে ভালোবাসে তাদের জন্য। কোনো ধোঁকাবাজের জন্য নয়।
কাব্য থমথমে গলায় বললো, ওয়েট ইপশু লেট মি এক্সপ্লেইন ইট! আসলে….
কাব্য আমাকে কিছু বলতো তার আগেই ইশা তাকে থামিয়ে আবেগি স্বরে বললো, কাব্য! প্লিজ ডোন্ট….
ইশা কথাটা বলা মাত্রই কাব্যও চুপ হয়ে গেলো। আমি তাদের কার্যকলাপে জোড়ে হেসে দিলাম। মানুষ যেমন অতি সুখে কাঁদে তেমন অতি শোকে হাসেও…. কাব্য ও ইশা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি হঠাৎই হাসি থামিয়ে তাদের দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, কাব্য কতদিন ধরে চলছে এসব আমার আড়ালে? আর এটুকেই সীমাবদ্ধ নাকি বি….
আর বলতে পারলাম না তার আগেই কাব্য আমার দিকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠালো। আমি অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম কারণ যে ছেলে আমাকে সারাটা সময় আগলে রাখে সে কিনা!
—- কাব্য তুমি! তুমি আমাকে এই মেয়ের জন্য…. ওয়েল বেশ গভীর হয়েছে তো প্রেম কিন্তু জানো তো! জানো তো ইপশি নিজের বিশেষ জিনিসগুলো কারো সাথে শেয়ার করে না কারো সাথে। দরকার পড়লে জিনিসটাকেই ডিস্ট্রয় করে দেয়। তাহলে কি করবে সে এখন?
কথাটা বলে আমি চিন্তা করার ভঙ্গিমায় পুরো বেডরুম জুড়ে হাঁটতে লাগলাম। আচমকা বেডের সাইডটেবেলে রাখা ফ্রুট বাস্কেটের উপর থেকে নাইফটা নিয়ে ইশার হাত চেপে ধরলাম। তবে হাত কাটবেনা এমন ভাবেই ধরেছি।
আমিঃ ইশা বেবি নো নড়াচড়া নার্ভ কেটে গেলে কেল্লাফতে। পড়ে কিন্তু আমাকে ব্লেম করতে পারবেনা…. বলে দিলাম কিন্তু!
কাব্যঃ করছো কি তুমি ইপশু! হাত কেটে যাবে তো ইশুর….
ইশাঃ আয়ু প্লিজ সেভ মি! ইপশি পাগল হয়ে গিয়েছে…. আমাকে তার হাত থেকে বাঁচাওনা!
আমিঃ হোয়াট! আমি পাগল, তাইনা? পাগল হলে তো হাতটা কেটে ফেলা উচিত কিন্তু আমি তোর হাত কেন কাটবো দোষ কি তোর একার নাকি! (বলে ইশানির হাত ঝটকা মেরে ছেড়ে দিলাম) দোষ তো কাব্যরও। আর সবচেয়ে বড় দোষ তো আমার আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি! তাহলে যে বেশি দোষী তাকেই শাস্তি পাওয়া উচিত, রাইট!
বলেই নাইফটা আমার গলার কাছে নিতেই যাবো কাব্য এক হেচকা টানে আমার থেকে ছুরিটা নিয়ে জানালার দিকে নিক্ষেপ করলো। আমিও মৃদু হেসে বললাম, কি হলো আটকালে কেনো? ওহ আমি সুইসাইড করলে তো সবাই তোমাকে প্রথমে ব্লেম করবে কারণ তোমার বাসা উইদাউট দ্যাট লাস্ট সাক্ষাৎ তোমার সাথে…. ওকেহ, সুইসাইড করার জন্য জায়গার অভাব পড়েছে নাকি বাংলাদেশে। সো গুড বাই ডিয়ার বেস্টু এন্ড দুলাভাই!
কথাগুলো তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে আমি যেই না সামনে আগাবো কাব্য আমাকে টুশ করে কোলে তুলে সোফায় বসালো এবং ইশাকে ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললো। আর আমাকে দুহাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো, হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ড্যাম ইট! জাস্ট টেল মি!
আমিও এক সেকেন্ডে সময় না লাগিয়ে বলে ফেললাম, আমাকে এই মুহূর্তে বিয়ে করো সবার থেকে লুকিয়ে দেন আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসো!
কাব্য আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে কোলে রেখেই পাশ থেকে ফোন নিয়ে কাকে যেনো টেক্সট দিলো। তবে আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়েই তার কোলে বসে গেমস খেলছি। এমনভাবে যেনো কিছুই হয়নি।
কাব্য আমার ফোনটা হঠাৎ করেই আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো। আমি বিরক্তিপ্রকাশ করে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাতেই সে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সকাল! সকাল যে এখানে আসছেন কিছু খেয়েছিলেন কি?
আমি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার ফোন নেয়ার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু সে যা করলো…. ফোন কতক্ষণ এই হাতে তো কতক্ষণ আরেক হাতে নিচ্ছে এবং হাতটাও উচু করে রেখেছে তাই আমি নাগালও পাচ্ছি না। কারণ আমি সামান্য পাঁচ ফুট উচ্চতার মেয়ে আর এই ছেলে তো জিরাফের ন্যায় লম্বা।
শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ধস্তাধস্তি ছেড়ে রাগী গলায় বললাম, খাইনিহ! বাসায় যেয়ে খাবো এবার ফোন দে আমার নয়তো মাথা ফাটায় দিবো কুত্তা!
কাব্য মৃদু হেসে বললো, ছিহ! ছিহ! সামি বেবি এগুলো বলে না। হবু বরকে কেউ এগুলো বলতে শুনলে পচা বলবে তো পাখি, তাইনা?
আমি কাব্যর কথায় কিছু না বলে ভেঙচি কেটে আবার ফোনে গেমস খেলতে লাগলাম। এদিকে কাব্য ইপশির এমন আচারণের কারণ খুঁজতে খুঁজতে অস্থির! কারণ যতটুকু সে ইপশিকে চিনে তার ধারণামতে ইপশির এখন হয়তো চিল্লাফাল্লা এন্ড পাগলামি করতো নয়তো কাব্যকে আজীবনের মতো ছেড়ে দিয়ে চলে যেতো। কিন্তু ইপশি সেখানে কাব্যকে শুধু এই মুহূর্তে বিয়েই করতে বলছে না বরংচ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যবহার করছে নাকি ইপশির মাথায় অন্যকিছু চলছে! কাব্য তার মস্তিষ্কে এতোকিছু ভাবতে থাকলেও মুখে তার চিন্তার প্রভাব পড়তে দিচ্ছে না।
কাব্যর কোলে গেমস খেলতে খেলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাইনি। ঘুমি থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই দেখি দুপুর হয়ে গিয়েছে প্রায় এবং আশেপাশে কোথাও কাব্য নেই। তাই আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওড়না বেডে রেখে উঠে দাঁড়িয়েছি।
ঠিক তখনই কাব্য বেডরুমের দরজা খুলতে খুলতে বললো, সামি বেবি তুমি উঠছো তাহলে…. তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে…..
আর বলতে পারলো না আমার আমার দিকে তাকিয়ে। আর আমি কাব্যকে দেখেই লজ্জায় কি করবো ভেবে না পেয়ে দিলাম এক চিৎকার।
কাব্যঃ ইপশুউউউউউ! স্টপ ইট প্লিজ সোনা…. এই দেখো আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি! সি! আমি কিছুই দেখছি না। নাউ স্টপ প্লিজ।
আমিঃ এই তুই নক করে আসতে পারিস না! লুচু ছেলে একটা…. ভয় পায়িয়ে দিয়েছিলে জানো! গাঁধা কোথাকার এখন বলো কি জন্য এসেছিলা!
কাব্যঃ তো তুমি ফ্রেশ হবা দরজা লাগায় নিতে পারো না আগে। গাঁধি একটা! তাছাড়া আমি তোমার হাবি আমি দেখলে….
আমিঃ ইউউউউ!
কাব্যঃ ওকেহ সরি! সরি! যা বলতে এসেছিলাম শোনো…. সোফায় ব্যাগে একটা শাড়ি ও ওড়না রাখা আছে পড়ে একটু রেডি হয়ে এন্ড অভিয়াসলি শরীর ও চুল ঠিকভাবে ঢেকে নিচে আসো! ফাস্ট ওকেহ?
আমিঃ কিন্তু আমি তো….
কাব্যঃ জানি আমি। কুচি করা শাড়ি লেহেঙ্গা স্টাইল জাস্ট পড়বা। কোনো ঝামেলা নেই কুচি করার কিংবা অন্যকিছুর।
আমিঃ ওকেহ।
কাব্য চলে যেতেই আমি শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা পড়ে নিলাম। তারপর শাড়ি পড়ে চুলগুলো শুকিয়ে হাত খোপা করে নিলাম, মুখে হালকা পাউডার, চোখজোড়ায় ঘণ কালো কাজল ও মাশকারা এবং ঠোঁটে নিউড লিপস্টিক। ব্যাগের থেকে ওড়না পড়ে ভালোভাবে চুল ঢেকে নিলাম। নিচে নিশ্চয়ই আমাদের বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। দ্যাটস মিন সবকিছু টিল নাউ আমার প্লান অনুযায়ীই হচ্ছে….
আমি নিচে যেয়ে দেখি আমার ধারণামতেই কাব্যর বন্ধুবান্ধব ও কাজি সাহেব বসে আছেন। প্রায় পাঁচ মিনিটেই আমাদের ইসলাম সম্মত ভাবে নিকাহ হয়ে গেলো। দেন কাব্যর ফ্রেন্ড এডভোকেট নিহাম আমার ও কাব্যর সাইন নিলো পেপারে কোর্ট ম্যারেজের জন্য। তবে তারা ভিষণ অবাক আমাদের এভাবে বিয়ে করার জন্য।
—- কাব্য তুই এতো ডেস্পারেট। দুইদিন পরই তো তোদের বিয়ে দিচ্ছে ফ্যামিলি থাকে এখন এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করার দরকার কি ছিলো!
—- হ্যাঁ, কাব্য তুই জানিস আজকে এই শুক্রবারে আমার এগুলো রেডি করতে কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছে? বলা নেই শোনা নেই ম্যাসেজ দিসে আজকে দুপুরের মধ্যে কাজি নিয়ে হাজির হতে বলে দিসিছ! এতোটা পাগল তুই!
কাব্য ওদের কথায় আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, হুম! পাগল আমি আর ডেস্পারেটও আমিই!
কাব্য কথাটা যে আমাকে খোঁচা মেরে বললো তা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম। তবে কোনো রিয়েক্ট করলাম না। করার প্রয়োজনও মনে করছি না তাই নিজ কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
—- কাব্য বিয়ে শেষ তো। আমি এখন বাসায় যাবো…. সবাই ওয়েট করছে লাঞ্চের জন্য। আম্মুকে বলে আসছিলাম বারোটার মধ্যে চলে আসবো এখন তো প্রায় বারোটা। যেতে আরও সময় লাগবে।
কাব্য আমার কথা শুনে তার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই নিহাম বলে উঠলো, বুঝেছি আমরা! তুই যা ভাবিকে নিয়ে আমরা তোর জন্য অপেক্ষা করবো।
ইপশি আগের জামাকাপড় পড়ে তার ফোন নিয়ে নিচে আসতেই কাব্য তাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসে পড়লো। কাব্য বারবার ইপশির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ইপশির মাথায় কি চলছে। কিন্তু ইপশি একবারও তার দিকে না তাকিয়ে দু’কানে হেডফোন গুঁজে চোখজোড়া বন্ধ করে গান শুনতে ব্যস্ত।
—- আমার চেহারা কি আজকে নতুন দেখেছো না রূপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে যে এভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! তুমি জানো না আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার বিরক্ত লাগে সে যেই হোক!
—- উফফফ! তোমার যতসব খাচরা অভ্যাস অন্য মেয়েদের দিকে তাদের স্বামীরা তাকালে তাদের মধ্যে রোমেন্স জাগে আর তোমার বিরক্তবোধ!
ইপশির এই অভ্যাস সম্পর্কে যদিও কাব্য জ্ঞাত কিন্তু এই সিচুয়েশনে এমন রিয়েকশন….. কাব্য বারবার ধাক্কা খাচ্ছে ইপশির আচার আচারণে কিন্তু মুখে বোঝাচ্ছে না। কারণ সে কোনো স্টেপ নেয়ার আগে ইপশির মাথাত কি চলছে বুঝতে চায়।
চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম হঠাৎ গাড়ি থামায় সিটবেল্ট খুলে গাড়ির উইন্ডো দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে অবাক হই। কাব্য আমাকে আমার বাড়িতে আনেনি বরং আমার বাড়ির বেশ কিছুটা পিছনে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় এনেছে। মুহূর্তেই রাগে লাল হয়ে উঠলাম।
—- আমি বলেছিলাম না আমি বাড়ি যাবো দেন এইখানে নিয়ে আসার মানেটা কি? আম্মু, আব্বু বাসায় আমার জন্য ওয়েট করছে!
কাব্য অত্যন্ত শান্ত গলায় বললো, খেয়ে নাও তারপর আমি দিয়ে আসবো। পাঁচ মিনিট লাগবে জাস্ট এন্ড আমি মামনিকে কল করে বলে দিয়েছি।
কাব্যর কথায় আমি যেনো আরও রেগে গেলাম। একটু উঁচু গলাতেই বললাম, আমি বলছিই আমি তোমার সাথে লাঞ্চ করবো? আই জাস্ট ওয়ান্ট টু গো হোম।
আমার কথায় কাব্যর শুভ্র নাকটা হঠাৎই লালবর্ণ ধারণ করলো যা দেখে আমি ভয়ে শেষ। কারণ কাব্য শান্তশিষ্ট মানুষ হলেও হুটহাট রেগে যায় যা অত্যন্ত বাজে পর্যায়ে যেতে পারে। আমি ভয়ে ভয়ে তার চোখের দিকে তাকাতেই আমার কাধ ধরে একটানে আমাকে তার মুখের সামনে নিয়ে আসলো।
—- দেখ! কিছু বলছি না দেখে যা ইচ্ছে তাই করবি তা কিন্তু হবে না। আমি কাব্য রহমান আয়ান এন্ড ইউ নো ভেরি ওয়েল কাব্য যা বলে তাই করে। চুপচাপ লাঞ্চ করবি নট আ সিঙ্গেল ওয়ার্ড অর ইলজ জন্মের মতো বাপের বাড়ির কথা ভুলে যা!
আমার প্রাণপাখি ছুটে যায় যায় অবস্থা। কারণ কাব্য আমার জীবনে আসার পর থেকেই পাপ্পার পর সবচাইতে বেশি ভয় তাকেই পাই। কাব্য এখন রেগে আছে যেটা বলবে সেটাই করে তাই আমি কয়েকটা ঢোক গিলে তার কথায় সায় দিলাম।
—- আ-আচ্ছা খাবো তো আমি!
—- গুড! এখন চুপচাপ উঠে রেস্টুরেন্টে ঢোক আমি তোকে এই পাব্লিক প্লেসে তো কোলে নিতে পারবো না। আর নিজের হাতে খাবি এখানে তো আর….. তবে নিজের হাতে খাবি বলে যে অল্প খেয়ে উঠে যাবি তা কিন্তু না। যদি তেমন করিস তাহলে….
—- নাহ আমি সব খাবো তো।
—- হুম। চলো তাহলে!
কাব্যর সাথে রেস্টুরেন্টে যেয়ে বিনা কোনো ড্রামা খেয়ে নিলাম। তারপর কাব্য বাড়ি দিয়ে আসলো….. বাসায় যেতেই দেখলাম সবাই হাসছে আমাকে দেখে কারণটাও জানা। অন্যসময় হলে লজ্জা লাগতো আজ সে অনুভূতি হচ্ছে না কারণ বুকে পাথর রেখে আছি। সেখানে এই লজ্জানুভূতির স্থান হবে কি করে! তবে যাই হোক আমি আমার পরিকল্পনায় সফল।রুমে যেয়েই মাথা ব্যথার বাম লাগালাম কারণ মাথা ব্যথায় মনে হচ্ছে ছিঁড়ে যাচ্ছে ভিতরে। স্লিপিং পিলস খাওয়ায় কখন যে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। ঘুম ভাঙতেই অভ্যাস অনু্যায়ী প্রথমে মোবাইলটা হাতে নিলাম। দেখলাম কাব্যের তিনশোর বেশি কল…. তাতে আমার কি! ফোন সুইচ অফ করে দিলাম!
চোখজোড়া বন্ধ করে মনে মনে বললাম, কি ভেবেছিলে কাব্য এখনো সবটা আগের মতো আছে! হুম আছে। তুমি এখনো আমার আমি হয়েই আছো তবে প্রিয় আমি আর নয় আমার অপ্রিয় আমি!
চলবে,,,