তোর_মনের_অরণ্যে,১৯,২০
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৯.
আরহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবি দুটোর দিকে। এতটা মিল কিভাবে থাকতে পারে। ছবি দু’টো পাশাপাশি রেখে সে সোহার মুখটা ছবির অ্যালবামে থাকা ছবির সাথে মেলাতে থাকে। এটা কি নিছক কোনো সাদৃশ্য নাকি কোনো যোগ সূত্র আছে? কিন্তু যোগ সূত্র টায় বা থাকবে কি করে। আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে হারিয়ে ফেলেছে তার এই আত্মা কে তাহলে সোহা কোথায় থেকে আসবে। আরহান এর মাথা গুলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু সম্ভব না হলেও সেই এক মুখ সেই এক চোখ সব কিছুই একই কি করে হতে পারে? আচ্ছা সে শুনে ছিল পৃথিবীতে একই দেখতে মানুষ সাতরকম থাকে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় তাহলে কি এই ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হবে? আরহান এর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে তার মাথায় আরো একটা জিনিস স্ট্রাইক করে জৈন টাইটেল। এই জৈন টাইটেল সে শুনে ছিল তার আত্মার সাথে জড়িত ছিল কিন্তু সে পুরোপুরি কিছু জানে না।
ভাবনার মাঝে দরজায় নক হতে আরহান চমকে যায়। সে তাড়াতাড়ি উঠে অ্যালবাম টা কাবার্ডে রেখে লক করে দেয়। তার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে সামনেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে আক্রম তার আত্মার আরেক অংশ। আক্রম কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরহান এর মুখেও হাসি ফোটে।
-“ভাই দরজা বন্ধ করে রুমে কি করছিলে? আক্রম ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।
-” সেই রকম কিছু না আয় বস। আরহান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে বলে ওঠে।
-“ভাই মণি দি ভীষণ ডেসপারেট হয়ে উঠছে মম ও সামলাতে পারছে না। তোমার কি আমন দা এর সাথে কথা হয়েছে?
-” না আমন এর সাথে কোনো কথা হয়নি। তবে বাপি কি বলছে মণিকা কে নিয়ে? আরহান প্রশ্ন করে ওঠে।
-” বাপি কি বলবে? তুমি তো জানো বাপি মণি দি কে কত ভালোবাসে মণি দি এর কষ্ট দেখতে পারেন না তাই বাপি ও চাইছে মণি দির সাথে আমন দা এর সম্পর্কের একটা পরিনতি দিতে।আক্রম বলে ওঠে।
-” ওহ আচ্ছা । আরহান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা ভাই আমাদের ইউনিভার্সিটি তে নাকি কয়েকদিন এর জন্য একটা নতুন প্রফেসর ম্যাডাম এসেছিল? আর রনি কে ও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সাথে প্রফেসর আকেশ আর মন্ত্রী গৌতম রাঠোর ও। আমি তো এখানে ছিলাম না তাই কিছুই জানতে পারিনি তুমি কি কিছু জানো ভাই? আক্রম বলে ওঠে।
-” আকেশ আর গৌতম কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তারা অনেক বেআইনি কাজ করেছে সেই জন্য। আর ইউনিভার্সিটি একজন ম্যাডাম এসেছিলেন তবে সেটা কিছু কাজের জন্য। কাজ শেষ সেও চলে গেছে। আরহান সোহার বিষয় বেশি এড়িয়ে গিয়ে বলে ওঠে।
-” ওহ আচ্ছা ওই জন্য এখন ইউনিভার্সিটি পুরো শান্ত হয়ে আছে। আক্রম হেসে বলে ওঠে।
-” তুই কিছু বলতে এসেছিলিস আক্কি? আরহান আক্রম এর মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে বলে ওঠে।
-“ওহ হ্যাঁ বলতে তো এসেছিলাম মম তাড়াতাড়ি নিচে ডাকছে এসো। বলেই বেরিয়ে যায় আক্রম।
আক্রম বেরিয়ে যেতেই আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই বাড়িতে থাকতে তার যেনো দিন দিন বিরক্ত লাগে। সারাক্ষণ বাড়িতে মণিকা এর চিৎকার তার ভালো লাগে না কিন্তু কি করবে শুধু মাত্র এখানে আছে কিছু স্মৃতি আর আক্রম এর জন্য। আক্রম কে ছেড়ে সে কিছুই ভাবতে পারে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
—————
চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে গটগটিয়ে ভিতরে ঢুকে আসে মণিকা। তাকে কেউ বাধা দেই না। সবাই একবার করে দেখে নিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার যে যার কাজে মন দেয়। মণিকা হনহন করে ভিতরে ঢুকে আসে তার ইচ্ছা করে সব কিছু ভেঙে গুটিয়ে দিতে। কয়েকদিন থেকে আমন এর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না সে। কেমন একটা নিজেকে গুম করে নিয়েছে হঠাৎ করেই। এমনিতেও তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই যদিও বা কারোর মারফত খোঁজ নিত সেও বন্ধ হয়ে গেছে। আমন এখন করে খুব দরকার ছাড়া অফিসে আসে না। না ঠিক মতো ইউনিভার্সিটি তে যায় আর না বাড়িতে থাকে। সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে মণিকার এই একমাস ধরে আমন কেমন একটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। অফিসের প্রত্যেকটা খবর আমন এর পি এ নিশি এর কাছে থেকে পায়। আর বাড়ির খবর দেওয়ার জন্য তো আমন এর মা আন্টি আছে। কিন্তু এই এক মাসে ঠিক মতো আমন এর খবর পেয়ে ওঠেনি। তাই আজ নিজেই সোজা অফিসে চলে এসেছে। আমন এর পি.এ নিশি এর রুমের ভিতরে ঢুকেই ডেকে ওঠে।
-“নিশি
-” ম্যাডাম মণিকা? আপনি এখানে? নিশি উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
-“আমন আজ অফিসে এসেছে? মণিকা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ইয়েস ম্যাডাম মণিকা কিছুক্ষণ আগেই অফিসে এসেছে। নিশি বলে ওঠে।
-“ওকে আমি ওর রুমে যাচ্ছি। এখন যেনো কেউ রুমে না আসে এটা তুমি দেখবে ওকে। মণিকা বলে ওঠে।
-“ইয়েস ম্যাডাম মণিকা । নিশি বলে ওঠে।
মণিকা নিশি এর রুম থেকে বেরিয়ে সোজা আমন এর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। কেবিনের বাইরে থেকে একবার দেখে নিয়ে কোনও রকম নক করা ছাড়াই ভিতরে ঢুকে যায়। আমন নিজের কাজে এতটাই মগ্ন ছিল যে সে খেয়াল করেনি কে এসেছে। সে ভেবেছে হয়তো নিশি এসেছে কোনো কিছুর আপডেট দিতে। হটাৎ করেই নিজের কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকায়। সাথে সাথে তার দপ করে জ্বলে ওঠে। এক ঝটকা দিয়ে নিজের কাঁধের থেকে হাত টা সরিয়ে দেয়। আমন এর মনে হয় তার কাঁধে একটা নোংরা কীট ছুয়ে গেছে সেই ভাবেই হাত ঝাড়া দিয়ে দেয়। ক্ষুব্ধ চোখে তাকায় আমন মণিকা এর দিকে। মণিকা আমন এর তাকানো কে গুরুত্ব না দিয়েই আরো একটু কাছে সরে যায় আমন এর দিকে।
-“এতদিন কোথায় ছিলে তুমি আমন? তোমাকে ফোনে কেনো পাচ্ছিলাম। আন্টি কে জিজ্ঞেস করেও কোনও উত্তর পাইনি তুমি কোথায় গেছো? মণিকা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” হু আর ইউ? আমন কঠিন ভাবে জিজ্ঞেস করে।
-“মানে কি আমন? মণিকা থমকে গিয়েই বলে ওঠে।
-” আমি কখন কোথায় যাবো কি করব না করব সব কি তোমাকে বলে করতে হবে? কে তুমি আমাকে প্রশ্ন করার রাইট তুমি কোথায় থেকে পাও? আমি কি তোমার বন্ধু? তোমার বয়ফ্রেন্ড? না তো ।আমাদের শুধু ফ্যামিলি সম্পর্ক সেটাও আমার সাথে নয়। তোমার সাথে আমার বিজনেস রিলেটেড চেনা জানা আছে বলতে পারো এর বেশি কিছু না। তো এখন না আমি কোনো মিটিং এ আছি তাই তোমাকে জবাব দিহি করতে আমি বাধ্য নয়। আর হ্যাঁ কারোর রুমে ঢুকতে গেলে তার পারমিশন নিতে এই মিনিমাম সেন্স টুকু থাকা উচিত। আমন কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে।
আমন এর কথা গুলো মণিকা এর গায়ে আগুন লাগানোর মত ছিল। মণিকা আগুন চোখে আমন এর দিকে তাকিয়ে আমন এর কথা গুলো হজম করার চেষ্টা করতে থাকে। আমন একবার মণিকা এর মুখের দিকে দেখে সে তার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমন সে দিকে পাত্তা না দিয়েই বলে ওঠে।
-“আর কিছু বলার না থাকলে আসতে পারো। দরজা টা ওই দিকে। আমন দরজার দিকে ইশারা করে বলে ওঠে।
মণিকা একবার আমন এর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে নিয়ে নিজের মনে মনে বলে ওঠে।
-” একবার তোমাকে নিজের করে নেই তার পরে দেখব তোমার এই অ্যাটিটিউড কোথায় থাকে, এই মণিকা মল্লিক কে অপমান করার মজা তখন বুঝবে তোমাকে আমি আমার করে নিয়ে আমার পেট বানিয়ে রাখবো।
মণিকা যেমন ভাবে এসেছিল ঠিক তেমন ভাবে বেরিয়ে যায় রুমে থেকে। মণিকা এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ে আমন। তার পরেই আনমনা হয়ে পড়ে আমন।
-“আর কতো অপেক্ষায় রাখবে ধানী লঙ্কা। তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে যে আমি নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছি। আমন নিজের মনে বলে ওঠে।
চলবে….. ❣️
#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২০.
হেড কোয়ার্টারে হাই কমিশন এর সামনে বসে আছে সোহা । তার সামনেই রাখা আছে একটা ফাইল কিন্তু সে এখনও খুলে দেখেনি । তার সামনেই পুরো কেস নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে অফিসার কর্ন। সোহা সব টা শুনে নেওয়ার পর ফাইল টা হাতে তুলে নেয়। সে এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পুরোটা দেখতে থাকে। ফাইল টা দেখার পরই তার মুখে ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে একটা বাঁকা হাসি। তার চোখ দুটো ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সোহার সামনে দাঁড়ানো কর্ন অবাক হয়ে সোহার মুখের পরিবর্তন গুলো লক্ষ করছে।
-“মিস লেডি ডন আপনি কি সব কিছু বুঝতে পেরেছেন? যদিও এই প্রশ্ন টা আমার করা ভুল হয়েছে জানি। মুচকি হেসে বলে ওঠে সুদীপ্ত ভৌমিক।
-” স্যার আমি কি এখন উঠতে পারি। সোহা পুরো প্রসঙ্গ পাল্টে বলে ওঠে।
সোহার কথা শুনেই সুদীপ্ত ভৌমিক ও কর্ন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। কারণ তাদের ভালো করেই সোহার এমন ব্যবহার জানা আছে সে এই নিয়ে কোনো কথা বলবে না।
-” ওকে । যেতে পারো তুমি। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।
-” ওহ হ্যাঁ স্যার আমার পার্টনার গুলো কেও আমার চায় সেই ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। সোহা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
-“পেয়ে যাবে ।যদিও এটা আমাকে না বলে তুমি বললেও কাজ হয়ে যেতো যাইহোক সময়ে মত পেয়ে যাবে। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।
সোহা আর কোনো কথা বলে না টেবিলের উপর থেকে ফাইল তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর এদিকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সুদীপ্ত ভৌমিক ও কর্ন। কর্ন শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, এ ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। সে মুখে কোনো দিন ও বলতে পারবে না সোহা কে যে সে তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে তাকে। এই কথাটা তার মনেই থেকে যেতে পারে।
—————
সোহা হসপিটাল এর টপ ফ্লোর এর বাম দিকের কোনার রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার চোখ মুখ একদম লাল হয়ে আছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোহা সোজা নিচে চলে আসে তার মাম্মার কেবিনে ঢুকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। কেবিনে শ্রেতা দেবী পেশেন্ট দেখেছিলেন আর তার মাঝেই সোহা ভিতরে ঢুকে গেছে কোনো দিকে না তাকিয়ে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বসে পড়ে সোহা। শ্রেতা দেবী কোনো কথা না বলে একবার সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে ওই ভাবেই তার পেশেন্ট দেখতে থাকে। রুমে যারা যারা আসছে একবার করে ডক্টর কে দেখে আর তার পিছনে বসা মেয়ে টা কেও দেখে। যদি ও সোহার মুখ দেখা যায় না চুল পড়ে ঢেকে আছে। প্রায় আধ ঘণ্টা পর পেশেন্ট দেখা শেষ হতে শ্রেতা এক হাত দিয়ে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার মুখে ছেয়ে আছে একটা প্রশান্তির হাসি। তাঁর জানা আছে সোহার মন খারাপ হলে ঠিক এই ভাবেই তার কাছে এসে বসে থাকে তাকে জড়িয়ে রেখে একদম বাচ্চাদের মত করে। সেই ছোটো থেকেই সোহা এমন কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে সেইদিন আর তাঁকে ছাড়েন না সোহা সারাদিন এই ভাবে মায়ের সাথে চিপকে থাকে সোহা। ছোটো থাকতে শ্রেতা দেবী কে প্রায় সময়ে সোহা কে নিয়ে তাকে হসপিটাল করতে হতো আর সোহা একদম চুপ চাপ মায়ের সাথে থাকতো। আর বড় হয়েও কোনো পরিবর্তন আসেনি সোহার মধ্যেই এখনও একই রকম আছে। আর যখন কেস এর জন্য বাইরে থাকে তখনও মন খারাপ হলেই ফোন করে ভিডিও কলে এক ভাবে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভেবেই মুখে হাসির রেখা আরো একটু বেড়ে যায়।
-“ডক্টর জৈন ভিতরে আসতে পারি?
-” আরে মিস্টার বোস আসুন আসুন ভিতরে আসুন। শ্রেতা দেবী তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠেন।
ডক্টর বোস ভিতরে ঢুকে দেখতে পান শ্রেতা কে পিছন থেকে জড়িয়ে কেউ বসে আছেন। এটা দেখে তিনি ও মুচকি হাসে। তিনি ভালো করেই জানে এটা কে হতে পারে। তিনি বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। ছোটো বেলা থেকে তিনি এই মেয়ে কে দেখে আসছে শুধু তাই নয় তার হাতেই এই মেয়ের জন্ম হয়েছে। শুধু মাঝের কয়েক টা বছর ছাড়া দেখে আসছে তিনি সোহা কে।গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করার পর সোহা লন্ডন ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে আসে সেই সাথে শ্রেতা দেবী ও চলে আসেন।
-“কি লিটল এঞ্জেল কেমন আছেন আপনি? মিস্টার বোস বলে ওঠেন?
সোহা রুমের মধ্যে চেনা জানা কারোর কন্ঠের আওয়াজ পেয়েই মাথা তুলে তাকায়। সামনে বসে থাকা বোস আংকেল কে দেখে তার মুখে হাসি ফোটে।
-” আরে আংকেল আপনি এখানে? কেমন আছেন? আর কবে এলেন ইন্ডিয়া? সোহা একসাথে প্রশ্ন করে ওঠে।
-” আরে আসতে আসতে এত প্রশ্ন একটা একটা করে দেই। আমি এসেছি একমাস হচ্ছে। আর দ্বিতীয় আমি ভালো আছি আর এখন তো আরো ভালো হয়ে গেছি আপনাকে দেখে লিটল এঞ্জেল। মিস্টার বোস বলে ওঠেন।
-” ওহ আমি তো লন্ডন গিয়েছিলাম এই মাসে। আর ওখানে ও খুঁজেছি আপনাকে এই জন্য পাইনি। সোহা হেসে বলে ওঠে।
-“সেই একই রয়ে গেলে এঞ্জেল,সেই ছোট্ট বেলার মত। তুমি জানো তুমি যেদিন প্রথম পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলে আমার এই দু’টো হাতের মধ্যে ছিলে। পৃথিবীতে এসেই একটু ও কান্না না করে বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলে ।তোমার মায়ের হাতে যখন তোমাকে দিয়েছিলো তোমার মুখে তখন হাসি দেখা গেছিলো। মিস্টার বোস বলে ওঠে।
সোহা বোস আংকেল এর কথা শুনে হেসে ফেলে তার মাম্মা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর শ্রেতা দেবী ও সোহা কে ধরে রাখে। সোহার জন্ম হয়েছিল লন্ডনে সেখানেই তার বেড়ে ওটা। শ্রেতাদেবীর মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন প্রথম তিনি সোহা কে কোলে নিয়েছিলেন ছোটো একটা পুতুল এর মত তার কোলে এসে হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। নার্স এসে কাপড় জড়ানো এক পুতুল তার হাতে তুলে দিয়েছিলো সেদিনই তিনি দ্বিতীয়বার মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে। আর ডক্টর বোস ছিলেন শ্রেতা দেবীর কলিগ তারা লন্ডনে একই হসপিটালে কাজ করতেন সেই সূত্রে তিনি সোহার খুব কাছের একজন। ছোটো বেলায় মায়ের সাথে হসপিটাল গিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াত গুটি গুটি পায়ে।
সোহা শ্রেতা দেবী আর মিস্টার বোস কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে বেরিয়ে যান হসপিটাল থেকে। সোহা আর শ্রেতা দেবী কিছুক্ষণ একসাথে মা মেয়ে ঘুরে বেরিয়ে একসাথে বাড়ি ফেরে, আজকেই তার মায়ের সাথে ঘুরে নিচ্ছে কারণ কালকে আবার তাকে নতুন কেস এর জন্য বাড়ি ছাড়তে হবে আবার কবে দেখা হবে কবে বাড়ি ফিরবে জানা নেই তার যতো ক্ষণ না কেস শেষ হয়ে সে তো ফিরতে পারবে না তাই মা মেয়ে একসাথে সময় কাটায় নিজেদের মতো করে।
————-
ব্যাঙ্গালোর চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ির ভিতরে বসে এক পলক উপরে থাকা সাইন বোর্ড এর দিকে তাকায়। যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস। এটা পড়ে নিয়ে মুখে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। চোখে সানগ্লাস টা লাগিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এগিয়ে যায় অফিসের ভিতরে দিকে। কোনো দিকে না তাকিয়ে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে টপ ফ্লোরে সোজা ঢুকে যায়। ওখানে থাকা সমস্ত স্টাফ এক নজরে তাকিয়ে দেখে তাদের সামনে থেকে হেঁটে যাওয়া রমনী কে।
-“হে ইউ কে আপনি? আর ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন ওটা আমন এর স্যার এর কেবিন। নিশি হঠাৎ রাস্তা আটকে বলে ওঠে।
-” টেল মি ফার্স্ট হু আর ইউ? একবার ভালো করে নিশি কে দেখে নিয়েই সেই অজানা রমণী বলে ওঠে।
-“আমি আমন স্যার এ পি.এ। বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলে ওঠে নিশি।
-” ডিরেক্টর অফ জৈন ইন্ডাস্ট্রিস। এনি মোর কোয়েশ্চেন?
নিশি না বলে মাথা নাড়তে আবারো সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কেবিনের বাইরে থেকে একবার ভিতরের দিকে তাকায়। না কিছুই দেখা যাচ্ছে না বাইরে থেকে ভিতরে। কোনো নক করা ছাড়াই ভিতরে ঢুকে যায়। এক পলক সামনে তাকিয়ে দেখে আমন ল্যাপটপে মগ্ন হয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজা লক করে দেয়।
এদিকে দরজা লক এর আওয়াজ পেয়ে আমন মাথা তুলে সামনে তাকায় দেখে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা আমন এর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আমন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তার মুখে অবাক চমক সব কিছুর এক্সপ্রেশন একসাথে দেখা যাচ্ছে।
চলবে…… ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।