মিঠে আলোয়,পর্ব_২
ফায়জা_করিম
ক্লাসের বাইরে এসে মিঠাইর মুখটা আনন্দে ঝলমল করে উঠল। যাহ বাবা… আপদটা মনে হয় শেষ পর্যন্ত বিদায় হয়েছে। এবার নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ফেরা যাবে।
কিন্তু পর মুহূর্তেই ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল মিঠাই। ওকে দেখেই ঝড়ের বেগে এসে হাজির হয়েছে অনন্য… আর সে এতক্ষন এখানেই ছিল।
“কেমন হলো ক্লাস… ভাল?”
“হমম..”
মনে মনে অনন্যর পিন্ডি চটকালো মিঠাই। আজব একটা চিড়িয়া, মানে আস্ত বেহায়া একটা ছেলে… এতক্ষন রাস্তায় বসিয়ে রাখার পরও কী করে কারো হুঁশ হয়না যে মেয়েটা ওকে ইগনোর করছে। না কী অনন্য বোঝার পরও পিঁপড়ার মতো ওকে কামড়ে ধরে রাখতে চাইছে… মিঠাই ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। আসলে.. আসলে ওর নামের মধ্যেই বাবা সব পেটুক গুলোকে রাস্তা দেখিয়ে রেখেছে।
অনন্য ওকে নিয়ে কাবাব কিংয়েই ঢুকল।
মেনুবুকটা ওর দিকে এগিয়ে দিতেই চোখ কপালে তুুলল মিঠাই। আশ্চর্য লোক তো.. ও কী করে গেস্ট হয়ে হোস্টের কাজ করে। মিঠাই ভদ্রতার সাথে বিষয়টা এড়াল… আস্ত উজবুক একটা।
“মিঠাই আমাকে সাহায্য করো প্লিজ,” অনন্য মেনুবুকটা উল্টেপাল্টে দেখল৷ এগুলো সব খুব কমপ্লিকেটেড ভাবে অ্যারেঞ্জ করা। কোনটায় একটা তন্দুর তো দুটো চিকেন লেগ আবার কোনটায় বাসমতি রাইস উইথ চিকেন। আমি এই পোলট্রি মুরগী গুলো একদমই খাই না আর এরা কী অবস্থা… শুধু এগুলোই খায়। ”
পোলট্রি মুরগী!… ইসস.. মাগো ভাষার কী প্রয়োগ, মিঠাইর মরে যেতে ইচ্ছে হলো। এ ছেলে তো ভয়নক খ্যাত মানে মহা খ্যাত। বাবা এর সাথে ওর বিয়ে ঠিক করলো কোন আক্কেলে?
অনন্য ততক্ষণে মেনুবুকটা আবার ওর সামনে তুলে ধরেছে। খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত মিঠাই তন্দুরি চিকেন প্ল্যাটার অর্ডার করলো দুইটা। ওর আসলে কিছুই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না এখন কিন্তু অনন্যকে সরাসরি না করে দিলে সেটা দাবানলের মতো বাবার কানে গিয়ে পৌছাবে। আর এমন খবরের রিয়্যাকশন যে খুব ভাল ফল বয়ে আনবে এটা মিঠাইয়ের চেয়ে ভাল আর কে জানে।
“মিঠাই”
“উমম…”
“তুমি কী কাউকে ভাবছ?”
অনন্যর প্রশ্নে সতর্ক হলো মিঠাই।
“হোয়াট ইয়্যু মিন বাই তুমি কাউকে ভাবছ? হু দি হেল আর ইউ আস্ক মি লাইক দ্যাট… দেখ অনন্য ডোন্ট ক্রস দি লাইন। তুমি ফ্রেন্ড থাকতে চেয়েছ আমি অ্যাগ্রি করেছি কিন্তু তারমানে কিন্তু এই নয় যে সেই সুযোগ নিয়ে তুমি আমাকে আনওয়ান্টেড কোয়েশ্চেন করতে পারো।”
“উপপপসস.. কুল বেবি, আমি জাস্ট কনভারসেশন স্টার্ট করার জন্য প্রশ্নটা করেছি। তুমি এই সিলি বিষয় নিয়ে এত হাইপার হচ্ছো কেন? ”
মিঠাই ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগটা সামলালো। আচ্ছা বেয়াদব.. আবার ওকে বেবি বলছে! স্পাইনলেস ক্যারেকটার একটা।।
“তুমি ওয়াটার বিয়ারের নাম শুনেছ, মিঠাই? ”
“না.. পোলার বিয়ারের নাম শুনেছি,” চামচে দিয়ে খাবার মুখে তুলতে তুলতে জবাব দিল মিঠাই। ও খুব তাড়াতাড়ি খেয়ে এখান থেকে ভাগতে চাইছে। এই ছেলের উপস্থিতি ওর একেবারেই সহ্য হচ্ছেনা।
“টারডিগ্রেডস বা পোলার বিয়ারের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এরা দি টাফেস্ট অ্যানিম্যাল ইন দি ওয়ার্ল্ড। ১০৫° ডিগ্রী থেকে এরা একদম জিরো ডিগ্রী টেম্পারেচরেও টিকে থাকতে পারে।”
মিঠাই ঠিক বুঝলনা অনন্য হঠাত ওর সামনে এই জ্ঞানী জ্ঞানী লেকচার কেন ঝাড়ছে, ওয়াটার বিয়ার হোক আর ফায়ার বিয়ার.. ওর এসব নিয়ে কোন আগ্রহ নেই, আর না হবে। সবচেয়ে বড়ো কথা অনন্য মানুষটা একদম ইরিটেটিং একটা ক্যারেকটার ওর কাছে।
“তুমি কী বিরক্ত হচ্ছো মিঠাই।”
“না..” যদিও মিঠাইী মন চাচ্ছিল ঠিক উল্টো কথাটা বলতে।
“বিরক্তি লাগলে বিরক্ত প্রকাশ করতে পারো… আমি কিছু মনে করবনা।”
মিঠাইর ইচ্ছে হলো একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে, আমি তোমার মতো গাধার কথায়, কাজে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছি কিন্তু বাস্তবে তো আর এমন লাগাম ছাড়া কাজ করা যায় না। তাই মাথা নেড়ে ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো ও।
“অনেক ধন্যবাদ মিঠাই, আমাকে এতোটা সময় দেয়ার জন্য। আসলে বিদেশ ভূঁইয়ে দেশী কারও সাথে সময় কাটানোর অজুহাত ছাড়তে পারলাম না, তাই একটু অভিনয় করলাম।”
“অভিনয় মানে!”
“আজ আমার জন্মদিন না। আজ ৩রা মার্চ… আমার জন্মদিন ১৭ ই জুলাই।”
আজ ৩রা মার্চ! শিট… আজ অভ্রর জন্মদিন আর আজই কিনা মিঠাই অন্য একটা মানুষের সাথে সময় কাটাচ্ছে? ভীষন রাগ হলো মিঠাইর অনন্যর উপরে আর তার চেয়েও বেশি হলো নিজের উপরে। কী করে এতো বড়ো ভুল করলো ও?
“আমি তোমাকে পৌছে দিতে পারি?” প্রসন্নচিত্তে হাসতে হাসতে কথাটা বললো অনন্য। কিন্তু মিঠাই ততক্ষনে এটমবোম্ব হয়ে গেছে।
“নো..”
“প্লিজ মিঠাই, আমার কাছে কিন্তু বাইক আছে।”
“আমি স্ট্রেঞ্জারের বাইকে উঠিনা।”
“আমি স্ট্রেঞ্জার!”
“নয়তো কী? সাথে লায়ারও।”
“উপপস.. তুমি এতো হার্ডনাট কেন বলতে পারো? আমি তো স্বীকারই করলাম যে আমি ভুল করেছি।”
“সে জন্যই আমি তোমার বাইকে চড়বো না। তুমি আমাকে মাঝ রাস্তায় নিয়ে অ্যাবিউস করবে না তার কোন ভরসা আছে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছিনা, সরি।”
মিঠাই আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু অনন্য ওকে থামিয়ে দিল।
“ওকে ফাইন, আমি তাহলে আসি। তুমি একটা ক্যাব ঠিক করে নাও।”
এই কথায় প্রচন্ড বিরক্ত লাগল মিঠাইর। অনন্য এখনি এমন ভাবে কথা বলছে যে, মনে হয় সে ওর গার্জেন.. অথচ মিঠাই তাকে এক ফোঁটাও পাত্তা দিচ্ছে না। একদমই আত্মসম্মানহীন একটা ছেলে.. ধ্যুৎ।
চলবে….