শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্ব ২৬
স্নিগ্ধময় আবেগ স্নিগ্ধ ব্যাক্তির আশেপাশেই থাকলে হয়৷ একহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন উনি৷ আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে পাশ ফিরে৷ হাজারো অনুভূতি হচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে হৃৎস্পন্দনেট ধাক ধাক শব্দ৷ আমি নির্লিপ্ত, ভাষাহীন,নির্বাক চোখে তাকিয়ে আমার তাকে দেখে চলেছি৷ উনি মুচকি হেসে আরিফ ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন আর নীতি মাথা নীচু করে হাত খুঁটছে৷
–‘ ঠিক আছো তুমি?? ‘ উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন৷ আরিফ ভাইয়া আর নীতি আমার দিকে তাকাতেই অপ্রস্তুত হয়ে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৃঢ়ভাবে বললাম,
–‘ ইয়াহ! ‘ আমার বলা কথায় সে সামনে তাকিয়ে টেবিলে হাত রেখে শান্ত সুরে আরিফ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
–‘ আমি হৃদির কাছে আপনাদের ব্যপারে সব কিছু শুনেছি৷ নীতি আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আপনি জানেন?? ‘
আরিফ ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে নীতির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,’ উনি কি সত্যি বলছে নীতি?? ‘
নীতি উত্তর না দিয়ে কেঁদে দিলো৷ উফফ! এই মেয়েটা এতো কাঁদতে পারে৷ কথায় কথায় কাঁদে৷
–‘ তোমার থেকে অত্যন্ত কম৷ ‘ ফিসফিস আওয়াজে বলতেই আমি বিষ্ময়ে হা হয়ে যাই৷ আমি নিজের মনে কথা গুলো বলছি কিন্তু সে শুনলো কি করে?? উক্ত প্রশ্ন আর করা হলো না নীতির ফুঁপিয়ে কান্নার স্বরে৷ আমি উঠে ওর কাছে যেতে গেলেই হাত ধরে ইশারায় বসতে বলেন আমাকে৷ আরিফ ভাইয়া থমথমে মুখে বললেন,
–‘ বিয়ের ডেট কবে?? তোমায় আমি বারবার ফোন করতাম নীতি একটা বার কথা বলার জন্য৷ ভালোবাসি তোমায় দোহাই দিয়ে ফেলে চলে যেতাম না৷ একটাবার ফোন উঠিয়ে বলতে তোমার পরিস্থিতি আমি নিজের সব উজাড় করে তোমার ফ্যামিলির কাছে ছুটে যেতাম৷ তারা অবশ্যই মানতেন আমার মতে৷ ‘
–‘ আপনাকে বলার সাহস হয় নি আরিফ ভাই৷ আমি তো ভীতু বরাবরের মতো তবে এখন পিছিয়ে যেতে পারছি না ভয় পেয়ে৷ আমার বড্ড কষ্ট হয় আপনার কথা ভাবলে৷ ‘
–‘ পুরাতন সিম এক্টিভ করো আমার হাজার হাজার ম্যাসেজের ভীড়ে তুমি হারিয়ে যাবে নীতি৷ তোমার অতিরিক্ত চিন্তার জন্য সব কিছু কঠিন হয়ে গেছে৷ ‘ আরিফ ভাইয়া আফসোসের সুরে বললেন৷ নীতির কান্নার পরিমাণ আরো বাড়ছে৷ আমি চুপ থাকতে না পেরে বললাম,
–‘ এখনো কিছু শেষ হয় নি ভাইয়া৷ সব আপনাদের মুঠোয় আছে৷ বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে বিয়ে তাকে করতে হবে এটার মানে তো নেই৷ আপনি নীতির বাসায় যাবেন ওর মা আর মামার সাথে কথা বলুন ইন শা আল্লাহ,আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হবে৷ ‘
–‘ যদি না মানে?? ‘ নীতি ভেজা কন্ঠে বলতেই আমি কটমট চোখে তাকালাম৷ এই মেয়েটা ডাফার৷ সব কিছুতে নিজেকে গুটিয়ে গুমরে মরবে৷ নীতির কথা শুনে উনি বললেন,
–‘ পরিণতি না হোক চেষ্টা করতে তো আর ক্ষতি নেই৷ আর মি.আরিফ প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছেন ইভেন উনার কথা অনুযায়ী ফ্যামিলি আই মিন আন্টি রাজি তাহলে সমস্যা হান্ড্রেড পার্সেন্ট থেকে টুয়েন্টি পার্সেন্টে নেমে এসেছে৷ উই উইল ডু ইট৷ ‘
উনার ভরসা পূর্ণ কথায় আমার আর নীতির মুখে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠলো৷ দুইজনের প্রিয় মানুষ দুটো একসাথেই আছে সব ঠিক হবে৷
___________________________
ঝড়ের পূর্বাভাসে আকাশে কালো মেঘ গুলো দূর থেকে উড়ে উড়ে এই ব্যস্ত শহর ঢাকার আকাশের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেলো৷ বহুদিন মেঘ বৃষ্টির অনাহারে ব্যস্ত রাস্তাঘাট ধূলিময় রাজ্যে থেকে আজ স্নিগ্ধ সতেজ হওয়ার জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় সময় গুনছে৷ শুষ্ক পরিবেশে ধূলিকণা লাগামছাড়া ভাবে ঝাপিয়ে আসছে৷ আমরা বিরক্তি নিয়ে টিএসসির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ নীতি আরিফ ভাইয়ার পাশে মুখ কাঁচুমাচু করে আর আমি উচ্ছ্বসিত চোখে সামনের ঝড়ো হাওয়া আএ ধূলিকণার প্রতিযোগিতা দেখতে ব্যস্ত৷ একটু পর আকাশ ভেঁদ করে ঝপাৎ ঝপাৎ করে বৃষ্টিরা ধূলোদের মিশিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিবে আমি সেই মূহুর্তে নিজেকে তুলে ধরবো৷ কিন্তু পাশে থাকা ব্যক্তি আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে সবার মাঝেই হাত ঠেসে ধরে কড়া নজরে তাকিয়ে বললেন,
–‘ মনের ইচ্ছা মনেই রাখো৷ প্রকাশ করতে গেলে তোমার দুনিয়া অন্ধকার করে দিবো একদম৷ ‘
–‘ আপনার হুমকি তে আমি ভয় পাই নাকি? একবার বৃষ্টিকে নামতে বলুন আমি বাঁধান ছেড়ে একছুটে চলে যাবো৷ ‘
উনি হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে ধরে রাখলেন৷ মহা মুশকিল তো! আমি নিজেকে সংযত করে ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম,
–‘ রিক্সায় ঘুরবেন? এই ঝড়ো হাওয়ায় রিক্সায় ঘুরার মতো মহৎ কাজ আর দুটো নেই৷ ঘুরবেন প্লিজ? নীতিদের বাসা গুলশান টিএসসি থেকে যেতে খুব একটা খারাপ লাগবে না৷ ‘
–‘ শর্ত নংঃ১
বৃষ্টিতে ভিজবে না
শর্ত নংঃ২
একদম ভিজবে না
শর্ত নংঃ৩
আমি যা…
উনি আমার কথা শুনে শর্ত জুড়ে দিলেন৷ আমি তৃতীয় শর্ত না শুনে উৎফুল্ল ভাবে বললাম,
–‘ আমি তিনটা না আপনার হাজার শর্তে রাজি শুধু রিক্সায় উঠার বাকি৷ এইবার তো চলুন৷ ‘
–‘ ঠিক তো?? শর্ত না শুনেই রাজি? পরে পিছপা হলে কিন্তু হবে না৷ ‘ উনি ঠোঁট বাকা করে হেসে বললেন৷ আমি বোকার মতো না শুনেই বললাম,
–‘ একবার রাজি, দুইবার রাজি, তিনবার রাজি৷ আর আমি কথার খেলাপ করি না তাই নিশ্চিন্তে থাকেন৷ ‘
–‘ ওকে, ফাইন! আমিও রাজি৷ ‘ আবারো বাকা হেসে আরিফ ভাইয়াদের কাছে গেলেন৷ আমি মহা আনন্দে লাফাচ্ছি৷ কিছুক্ষণ বাদে নীতি আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
–‘ আমার সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে৷ ‘
–‘ তুই বুঝি ঘুমিয়ে আছিস? ‘ আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম৷ নীতি রেগে তাকালেও মূহুর্তেই ঠান্ডা স্বরে বলল,
–‘ আমি ওখান থেকে বেরিয়ে আরিফ ভাইয়াদের বাসায় গিয়ে দেখি উনি বাসায় আছেন৷ জানিস, আমার তাকে দেখে মনে হয়েছে আবারো,উনাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না৷ খালাম্মা আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছেন জানিস? উনাদের ভালোবাসা দেখে আমি হতবাক৷ যখন আরিফ ভাইয়াকে বললাম উনার সাথে কথা আছে তখন উনি বিনাবাক্য বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে বললেন, ‘ আসো তোমাকে দিয়ে আসি৷ ‘ সেই কথাটা আমাকে আরো দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে৷ আমি নিজ ইচ্ছা ভয়ে ভয়ে উনাকে আমার বিয়ের কথা বলতেই টিএসসি তে নিয়ে আসেন আমায়৷ তোর কথা আর সাপোর্ট আমাকে তাকে পাওয়ার একটুকরো আশা দেখিয়েছে৷ জানি না কি হবে তবে সব কষ্টা আজ ধুয়ে মুছে গিয়েছে৷ তুই শুধু স্নিগ্ধ ভাইয়ার শুভ্র পরী না আমার লাইফের ও একজন পরী যার তেজ আর কনফিডেন্স সাহস জোগাড় করতে সক্ষম৷ ‘
প্রশংসা শুনে কি করবো ভেবে পেলাম না৷ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেমন আমার ভান্ডারে নেই তেমনি কিছু কিছু কথার জবাব দিতে চেয়েও দিতে নেই৷ আমিও দিলাম না৷
নীতি আর আরিফ ভাইয়াদের রিক্সা আমাদের সামনে৷ আমি উনার থেকে যতদূর সরে বসতে চাই উনি আরো আমার সাথে চেঁপে বসেন৷ চারদিকে ধূলোময়লার জন্য হূড তোলা৷ হাতুড়ি পিটা বাঁজখাই শব্দ আমার বুকের মাঝে হচ্ছে৷ এই বুঝি হৃৎপিন্ড বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেলো৷
–‘ শর্ত না শুনেই এই অবস্থা আর শর্ত শুনলে বোধহয় তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে নামতে৷ ‘
–‘ এক্সপ্লেইন করুন কি শর্ত আমি শুনবো এখন৷ ‘ আমি সাইডে সরে যেতে যেতে বললাম৷ কিন্তু সে যেতে না দিয়ে কোমরে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে কাট কাট গলায় বললেন,
–‘ আমি খেয়ে ফেলবো তোমায়?? আরেকটু পর তো পরেই যাবা৷ কাছে এসো বসো না হলে কিন্তু… ‘
–‘ ন..না হলে কি?? ‘ আমি ভয় পাওয়া সুরে বললাম৷ উনি মুচকি হেসে বললেন,
–‘ ওইটাও শর্তের সাথে জুড়ে দিলাম৷ ‘
আমি আর কিছু বলার আগেই উনি একটানে তার সাথে মিশিয়ে নিলেন৷ আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি৷ রিক্সায় আসার জন্য শর্ত তার উপর এমন পরিস্থিতি
আমার উপর প্রচুর ভারী পরবে৷ নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারলাম না তো????
_____________________________
পরিবেশে ঝড় উঠছে করুন ভাবে৷ এক নিমিষেই সব তছনছ করে দেওয়ার মতো শক্তি যেন ঝড়ের শক্তি৷ ভেজা মাটির সুন্দর সুবাসে ভরে উঠেছে আশপাশ৷ ছোট বসার ঘরে আমরা চারজন সাথে নীতির মা আর মামা গম্ভীর ভাবে বসে আছেন৷ নীতি একটু পর পর আমার হাত চেপে ধরছে আবার কখনো করুন চোখে তাকাচ্ছে৷ আমি অভয় দিলাম৷ আমাদের চোখাচোখির মাঝে নীতির মামা গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
–‘ নীতি তুই আগে কেন বলিস নাই?? সব ঠিক হওয়ার পর বললেই হবে নাকি! আজকালকার ছেলেমেয়ারা সব ফাউল৷ এইযে রেজিনা তোর মেয়েও তার উদাহরণ৷ ‘
আন্টি ও আমার আম্মুর মতো তাকিয়ে আছেন নীতির দিকে৷ নীতির মতো আমারো হাসফাস অবস্থা৷ ওর মামা স্নিগ্ধ স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ উনি কে?? ‘
–‘ হৃদির হাসবেন্ড৷ ‘ তার সহজ স্বীকারোক্তিতে আমার দম আরো আটকে এলো৷ হাসবেন্ড নামক শব্দটা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকাতেই আন্টি প্রশ্ন করলেন,
–‘ তোমার আম্মু তো কিছু বললো না আর নীতিও না বিয়ে কবে হলো তোমার? ‘
–‘ গতকাল হয়েছে আর তাড়াহুড়ো ঘরোয়া ভাবেই
হয়েছে তাই কাউকে জানানো হয় নি৷ ‘ উনি আবারো অকপটে বলে দিলেন৷ ছুটে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা থাকলে আমি পালিয়ে যেতাম৷ এখানে নীতির বিয়ের আলোচনা না আমার না হওয়া বিয়েকে টেনে টুনে সত্যতা দেওয়ার আসর বসেছে বুঝতে পারছি না৷ আমি সাহস জুগিয়ে বললাম,
–‘ আন্টি এইসব কথা বাদ দিন৷ আরিফ ভাইয়া সত্যি নীতিকে ভালো রাখবে৷ আর ওরা দুইজন দুজনকে ভালোবাসে৷ ‘
আমার কথায় সায় দিয়ে আরিফ ভাইয়া গলা পরিষ্কার করে বললেন,
–‘ আপনার মেয়েকে আমি সর্বোচ্চ দিয়ে আগলে রাখবো৷ আমার ব্যাপারে আপনারা জানেন আমি কেমন বা কি করি আমার ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড৷ আমার আগে প্রস্তাব নিয়ে আসা উচিৎ ছিলো কিন্তু আমি পারি নি সেটা আমার ব্যর্থতা৷ তবে এইবার আর সেও সুযোগ আমি করে দিবো না৷ নীতিকে আমার বউয়ের মর্যাদা দিতে চাই এবং তা শুধুই আপনাদের সম্মতিতে৷ আপনি ফিরিয়ে দিলে আমি কষ্ট পাবো না তবে সুখেও থাকতে পারবো না নীতিকে ছাড়া৷ ‘ আরিফ ভাইয়া একনাগাড়ে বলে দম ফেললেন৷ বাইরের ঝড়ো বাতাসের দাপট ঘরের গুমোট পরিবেশে আঘাত হানতে পারলো না৷
নীতির মামা গাই-গুই করছেন আর শাসাচ্ছেন নীতিকে৷ আরিফ ভাইয়া প্রচন্ড অসহায় চোখ করে তাকিয়ে আছেক একটুকরো আলোর আশায়৷ নীতির আম্মু উঠে দাঁড়াতেই প্রত্যেকের মন বিষিয়ে গেলো৷ শেষ রক্ষা বুঝি হলো না আর?
আমাদের দুশ্চিন্তা কমিয়ে উনি গম্ভীর ভাবেই বললেন,
–‘ আরিফ ভাবিকে নিয়ে বিকেলে বাসায় আসিস৷ তখুনি সব আলাপ-আলোচনা হবে৷ ‘
আন্টির কথায় লাফিয়ে উঠলাম আমি৷ উনি আবারো হাত চেপে ধরে কটমট চোখে তাকালেন৷ আমি দাঁত বের করর হেসে জোরে জোরেই বললাম,
–‘ আলহামদুলিল্লাহ! ‘
চলবে…
~”বোরিংনেস ঘিরে ধরছে তাই না?? সব ধূলো বালির মতো উড়ে যাবে কাল থেকেই৷ মেইন প্লটের কাহিনি ঘুরেফিরে আছে আপনাদের চাহিদা হৃদি আর স্নিগ্ধের বিয়ে রোম্যান্স৷ তবে আশেপাশের কাহিনী গুলো না আনলে কেমন লাগবে? পরিপূর্ণ একটা বাস্তবিক আর কল্পনা লেখতে গেলে কত কিছুই তো আনতে হবে৷ মেইন লিড নিয়ে তো আর সম্পূর্ণ গল্প ভরে ফেলা যায় না৷ আমি মন্তব্য পাচ্ছি না আপনাদের৷ ‘