পুনম,পর্বঃ১৮,১৯
আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৮
কলিং বেলের শব্দে তারিনের ঘুম ছুটে যায়….দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল দশটা বেজে গেছে। উফফ! এতবেলা পর্যন্ত কখনো ঘুমায় না তারিন। তবে আজ কেন?
চোখে হাত দিয়ে উঠে পড়ে মিতু পরক্ষনেই আবার উপর হয়ে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে।উফফ! এই মেয়েটা পুরো বাবার স্বভাব পেয়েছে।রাশেদেও বুকে ভর দিয়ে ঘুমায়। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে রাশেদ ফ্রেশ হচ্ছে। মিতু কে উঠতে বলে তারিন এলোমেলো চুলে হাত খোপা করে নেয়।দু’পার্টের স্লিপিং স্যুটটা ঠিক করে স্কার্ফটা গায়ে জরিয়ে দরজা খুলতে যায়। তখন থেকেই অনবরত কলিং বেলটা বেজে যাচ্ছে। এত অধৈর্য্য! আসছি বলে… একটানে দরজা খুলে যাকে দেখতে পায় তাকে তারিন আশা করে নি এই মুহুর্তে! মুহুর্তেই দু-চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। স্তব্ধ তারিন দরজার পাল্লাটা শক্ত করে চেপে ধরে।দরজার ওপাশে শায়লা হক ও ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। তার একমাত্র মেয়ে, বড় আদরের সন্তান। কতটা বছর হলো দেখেনা এই মুখ। তৃষ্ণার্ত হরিণের মত ঝাপিয়ে পড়ে তারিন মায়ের বুকে। হু হু করে কেঁদে ওঠে। মা.. মা.. করে চিৎকার করে ওঠে তারিন। মায়ের মুখে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দেয়।মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে চুমু খায় ঠিক ছোটবেলার মতন।শায়লা হাসে! সুখের হাসি!
শাহেদ ও মিতু তারিনের কান্নার শব্দে রুম থেকে দৌড়িয়ে আসে।অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তারিন তার মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে আর পাশে তানভীর অশ্রুসিক্ত নেত্রে দাঁড়িয়ে আছে।রাশেদের তার শাশুড়ীর মুখটা চিনতে ভুল হয় না।যেদিন ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছিল সেদিন শশুড়ের মুখ রাগে ক্রোধান্বিত থাকলেও শাশুড়ীর মুখে ছিল স্বস্তির হাসি।
রাশেদ শাশুড়ীকে সালাম করে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে,
—এতদিন পর মায়ের মনে হলো আমাদের?
শায়লার খুব ভালো লাগলো রাশেদের ব্যবহার।রাশেদ একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে মা কে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।তারিন ভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে বলে, বাবা?
—-কিচ্ছু হবে না বুবু……..বলে বোনকে আশ্বস্ত করে তানভীর।
সোফায় বসে এতক্ষণ মিতু চুুপচাপ দেখছিল মায়ের কান্না। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা চোখে চরম কৌতুহল!
রাশেদ বলে ওঠে —দেখুন তো মা চিনতে পারেন কিনা?
শায়লা মমতা ভরা চোখে চেয়ে দেখেন নিজ সন্তানের আত্মজাকে।মিতু আধো আধো স্বরে বলে ওঠে,
—-তুমি কি আমার নানুমনি?
উত্তরে শায়লা হক নাতিকে কোলে নিয়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দেন।তারিনের মুখে লেপ্টে রয়েছে এক অনাবিল স্নিগ্ধ হাসি!
তানভীর বিড়বিড় করে বলে ওঠে,
—-পুনমি, আমার পুনমি… এবার তোমার মুখের হাসির কারণ হবো আমি!
******************
পুনম অনেকক্ষণ ধরে বল্টুকে কল করে যাচ্ছে ছেলেটা রিসিভই করছে না। বিরক্তি তে কপাল কুঁচকে আসে পুনমের।ধুঁত! এই ছেলেটাকে জরুরী মুহুর্তে কখনো পাওয়া যায় না।তখনই বল্টু কল ব্যাক করে।
পুনম কল রিসিভ করে বলে ওঠে, —হ্যালো!হ্যালো! এই বল্টু শুনতে পাচ্ছিস…হ্যালো!
—- এত হ্যালো হ্যালো কেন করছিস।আমি কি কানা নাকি তোর মত…কি হয়েছে বল?
বল্টুর কন্ঠে মেজাজের ধাঁচ।
—-আরে এত রেগে আছিস কেন?
—বলতেছি, আগে বল তুই এত কল দিলি কে?
—-তোর কি কোন জানা শুনা মানে পরিচিত আইনজীবী সম্পর্কে জানা আছে?
—নেই তবে, খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি।
পুনম ফিসফিসিয়ে অনুরোধের কন্ঠে বলে,
—দেখিস দোস্ত, খুব আর্জেন্ট! এখন বল বোম হয়ে আছিস কেন?
—–আরে ঈদের পর সব বন্ধুরা মিলে ট্যুরে যাওয়ার প্লান করছি,সব ঠিক ঠাক।এখন রিমি জেদ ধরেছে তাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। আরে এত বললাম পসিবল না।তারপরও গ্যাজাইতে আছে…সে নাকি যাবে। আমরা বন্ধুরা যাব আমাদের ভার্সিটি লাইফ শেষ হওয়ার আগে সবাই একসাথে সময় কাটাতে আর সেখানে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আমি লুতুপুতু করবো।বল তুই? কারো সাথে মজা করতে পারবো ঐ চিপকুর সাথে লেগে থাকতে হবে অলটাইম।এই নিয়ে ঝগড়া বাঁধছে।
—–ও তা কোথায় যাচ্ছিস?
—-কক্সবাজার। ঈদের পরপরই। ও হ্যা ভালো কথা। তুই কিন্তু যাচ্ছিস।
—–আমি যাবো না বল্টু।
—–দেখ পুনম রিমির মত গ্যাজাবিনা।সাকিব, শিমুল, বর্ষা, নাহিদ শশী সবাই যাবে আর তুই যাবি না তা হবে না।আর বড় কথা আংকেলের কাছ থেকে পারমিশন নিছি, ডিপার্টমেন্টে টাকা জমা দিয়ে দিছি।এখন তুই না গেলে তোর ঘার যাবে।
পুনম অবাক হয়।বাবা পারমিশন দিয়ে দিলো।কই আমায় তো জিজ্ঞেস করলো না একবারও।আর টাকা দিলো কে?
—-টাকা কে দিয়েছে বল্টু? আমার কাছে আগে কেন বললি না।
—-তোর বরের শশুড়ে দিয়েছে। হয়েছে বুঝেছিস?আর আমায় পাগল কুত্তায় কামরায় নায় যে আগে তোরে বলি আর তুই সবসময়ের মত সব ভেস্তে দে…..
পুনম পুরোপুরি হতাশ হয়!এই ছেলেটা পারেও বটে। বাবার উপরও রাগ হয়,ওকে না জানিয়ে টাকা দিয়ে দিলো।বাবা এত টাকা কোথায় পেলো?
—–আমার জায়গায় রিমিকে নিয়ে যা বল্টু…আমার যেতে মন চাইছে না।
—-তানভীর ভাইয়ের মত আমারো মাঝে মাঝে মনে হয় তোর ভিতরে আসলে মন নামক কোন শব্দ আছে কিনা? তুই না যেতে চাইলেও এবার আমরা তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো, বুঝেছিস? তো ঘাউড়ামি বন্ধ কর এবার।
পুনম বুঝতে পারে কিছু বলে আর লাভ হবে না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
—-শুনলাম রিমির চাচাতো ভাই নাকি বেড়াতে আসবে ঈদের পর।চিনছিস তো কে? তোর গার্লফ্রেন্ডের উপর ফিদা যে।এখন তার কাছে ছেড়ে যাবি রিমিকে যদি…..
বল্টুর মেজাজ খারাপ হয়।কই ও তো জানে না।রিমি কেন ওকে বললো না? ঐ ছেলেটাকে একদম সহ্য করতে পারে না বল্টু তাই পুনম এই কথা বললো।এখন রিমিকে আর রেখে যাবে না।
বল্টু রাখছি বলে কল কেটে দেয়। পুনম হেসে ফেলে।বুঝুক মজা এবার।আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়…. এবার নিজের প্রেম সামলা। হুহ!
বল্টু অনবরত কল দিতে থাকে রিমিকে কিন্তু সে রিসিব করে না। কেন করবে একটু আগে কতগুলো ঝাড়ি দিয়েছে বল্টু। বল্টু নিজের চুল খামছে ধরে।মনে মনে প্রেমের চৌদ্দ গুষ্টিকে গালি দিয়ে হোন্ডার চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে, উদ্দেশ্য রিমির বাসা…..
****************
রাজু থরথর করে কাঁপছে। তার সামনে হায়দার হোসন বসে আছে।এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাসায় এসেছেন সে।আর এসেই শায়লাকে বাসায় না দেখতে পেয়ে তার মেজাজ গরম হয়ে রয়েছ। রাজু এখন এক এক করে সব খবর বলে যাচ্ছে তানভীরের। এতদিন যা করেছে সব শুনে হায়দার হোসেনের রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আসে। এত বড় স্পর্ধা! তারই ছেলে একটা ফকিন্নির জন্য জানে মরে যাচ্ছে! এর জবাব এবং শাস্তি দুটোই তানভীরের কাছ থেকে নিবে এবং দিবে!
কাজের মেয়েটি ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিলো অসহনীয় রাগে হায়দার হোসেন ট্রেসহ গ্লাস ফ্লোরে ছুরে মারেন।চিৎকার করে বলে উঠেন,….এ বাড়িতে কোন অনিয়ম চলবে না রাজু।আমার মুখোমুখি হওয়ার জন্য তোমার তানভীর স্যার কে প্রস্তুত থাকতে বলো!
কাজের মেয়েটি ভয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়…..রান্নাঘরের দিকে।
রাজু কয়েক ঢোক গিলে, তোতলাতে থাকে কথার উত্তরে সে কিছুই বলতে পারে না।রাজু টের পায় ওর হাটু কাঁপছে! ভীষণ ভয় পায় রাজু বড় স্যার কে। সে জানে তার বড় স্যার নিজ সন্তুষ্টির জন্য সব করতে পারে, সব!
পরক্ষণেই রাজু অবাক হয়ে দেখে তার বড় স্যারের রাগি মুখ হাসি মুখে পরিনত হয়েছে।কুঞ্চিত কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম হটাৎ করে উধাও হয়ে গেছে।
সদর দরজা দিয়ে তারুণ স্যারকে প্রবেশ করতে দেখে তার কারণ স্পষ্ট হলো। তারুণ এগিয়ে এসে বাবাকে জরিয়ে ধরে।হায়দার হোসেনও আনন্দের সাথে তারুণকে বুকে আগলে ধরেন। রাজু শুনতে পায় তারুণ বাবার কাছে অভিযোগ করছে, কেন পনের দিনের কথা বলে এত বেশি দিন থাকলো?আর বড় স্যারও ছেলের অভিযোগে কান ধরে স্যরি বলছেন! রাজু অবাক হতে গিয়েও অবাক হয় না।সে তার বড় স্যারকে বুঝতে পারে না।কেন সবসময় সে তানভীর স্যারের দোষ ধরেন আর তারুণ স্যারকে পশ্রয় দেন? দুইজনই তো তার সন্তান অথচ হায়দার হোসেনের আচরণে বুঝায় দুইজন দুই মায়ের সন্তান!
****************
এখন বাজে দুপুর তিনটা, লাবণ্য ঘুম ঘুম চোখে বাসার সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। লাবণ্য কেবল ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছিল এর মধ্যে তারুণ কল করে বের হতে বললো।লাবণ্য বুঝতে পারছে না এই ভর দুপুরে তারুণের মত পড়ুয়া ছেলের ওর কাছে কি কাজ? এই ছেলের এখন থাকা উচিত পড়ার টেবিলে।লাবণ্যের মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, এই ছেলে নিশ্চিত ভাতের বদলে তিনবেলা পড়া খায়! কে জানে? বড়লোকের ছেলে ভাত আদোও খায় নাকি?
তারুণকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে লাবন্য হেঁটে রাস্তার অপজিটে যায়। তারুণ ওকে দেখে হাসে।যাকে বলে ইনোসেন্ট হাসি।লাবণ্যের মনে হয় এই ছেলে সাত খুন করার পর যদি এরকম ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেয় তবে বিচারক কাঁত হয়ে যাবে কনফিউশানে!
—-কেমন আছো লাবণ্য?
—–ভালো, তা ব্রো তুমি হটাৎ? মিস করছিলে বুঝি?
তারুণ এখন আর লাবণ্যের আচরণে হতাশ হয় না।কই কেমন আছোর বিপরীতে তো ওর জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো আমি কেমন আছি? তা জানতে না চেয়ে যত উদ্ভট রকমের কথা! তারুণ রাগ করে, তবে মনে মনে।গাড়ি গেট খুলে একটা বক্স বের করে লাবণ্যর হাতে তুলে দেয় তারুণ। লাবণ্য জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালে তারুণ বলে,
—–তোমার জন্য, মেকাপ সামগ্রী!বাবা বাহির থেকে এনেছে।
লাবণ্যের মুখে হাসি ফুটে ওঠে আবার হাসি বন্ধ করে সন্দেহের চোখে বলে, —-কেন দিচ্ছো?
—–বন্ধু বলে……
লাবণ্য আবার মুচকি হাসে। আবার হাসি মিলিয়ে যায়।
তারুণ তা দেখে জানতে চায়,—-কি হলো?
—-আমি তো তোমায় কিছু দেয়নি তবে তোমার গিফট কি করে নেই?
তারুণ কিছু বলতে চায় কিন্তু তা পারে না।লাবণ্য ওর হাতে মেকাপ বক্স ধরিয়ে দিয়ে বাসার দিকে দৌড় দেয়। তারুণ চিৎকার করে বলে,—আশ্চর্য!
একটু পরেই লাবণ্য হাতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে আসে তারুণের কাছে।লাবণ্যের তারুণের এলোমেলো কোঁকড়া চুলগুলো খুব পছন্দের! ঝাকড়া কোঁকড়া চুলগুলো সবসময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কাঁধ ও মুখের উপর। লাবণ্য দু পা এগিয়ে আরো সামনে এসে দাঁড়ায়। তারুণের এলোমেলো চুলে হাত দিয়ে আরো এলোমেলো করে দিয়ে গোলাপটা কানের পাশে গুঁজে দেয়। তারুণ চরম অবাক হয়!মেয়েদের মত ওর কানে এই বদমায়েশ মেয়েটা ফুল গুঁজে দিয়েছে। অসহ্য! তারুণ চোখ গরম করে তাকায়
লাবণ্য খিলখিল করে হেসে বলে,
—-ও তারু….তুমি মেয়ে হলে না কেন বলতো? আমরা দুজন তাহলে বেস্টি হয়ে যেতাম আর অলটাইম তোমায় সাজাতাম। আরে আরে রাগ করো না….আমার তো তোমায় দেয়ার মত কিছু নেই তাই আমার গাছের ফুল দিলাম।তোমার দু হাত তো আটকা তাই কানে গুঁজে দিয়েছি ফুল। বুঝেছো?
তারুণ রাগ করতে গিয়েও হেসে দেয়।এই মেয়েটা এত দুষ্টু!লাবণ্য হেলে দুলে হেঁটে তার মেকাপ নিয়ে বাসায় যায়।সে আজ ভীষণ খুশি।যাকে বলে ঈদের মত খুশি!
*****************
সুমনের শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে।একেতো সবে জ্বর থেকে উঠেছে তার উপর রাত জেগে কাজ করা।কম ঝক্কির?সুমন রাতে একটা বড় গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে।বড়লোকেরা সারাদিন যে গাড়ি চালায় তা রাত হলে ওয়াশ করে সুমন। বেতন মোটামুটি তবে সারা রাত ভিজে কাজ করতে হয়।এই কাজটা ও নিত না কিন্তু বড় ভাইজানের কাছে টাকা চাইতে গেলে বড় ভাইজান ইদানিং আজেবাজে কথা বলে।চাকরির তো চেষ্টা করছে তা তো হচ্ছে না।তাই পকেট খরচার জন্য হলেও এই কাজ করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।মাঝে মাঝে নিজের বাবার প্রতি রাগ হয়, কেন ওর জন্য অল্প হলেও একটু সম্পত্তি রেখে গেলো না? একই বংশের ছেলে ওরা তারপরও বড় ভাইজানের কত টাকা পয়সা ওর কিচ্ছু নেই।মাঝে মাঝে জানতে মনে চায় বাবা কি এমন সমস্যায় পড়েছিল যে সব বিক্রি করে দিতে হলো?
এসব ভাবতে ভাবতে সুমন মার্কেটে প্রবেশ করে উদ্দেশ্য পাবনীর জন্য কিছু কিনবে।কি কিনবে তাই ভেবে উঠতে পারলো না? কখনো তো কারো জন্য কেনা হয়নি। পাবনীর জন্য না কিনে সুমন পাবনীর আম্মা আব্বার জন্য পাঞ্জাবি আর কাপড় কিনে ফেলে।এই কাপড় দুটো কিনে খুব স্বস্তি পায় সুমন,মনে হচ্ছে নিজের বাবা মার জন্য কিনলো। বুকের ভিতরটা জ্বলে ওঠে, বাবা মা বেঁচে থাকলে তাদের জন্য তো সুমন কিনতো! এরমধ্যেই পুনম কল করে,
—-সুমন ভাই আপনি কোথায়?
—-এই তো মার্কেটে।
—-কেনা কাটা করছেন বুঝি।তা টাকা পেলেন কোথায়? গাড়ি ঘসাঘসির টাকা বুঝি।
—তুমি জানলে কি করে পুনম?
—-আপনার নাড়ী নক্ষত্র সব জানি আমি। পাবনী মানে আমার সেজো আপা কাচের চুড়ি খুব পছন্দ করে, বুঝেছেন সুমন ভাই?….বলে কল কেটে দেয় পুনম।
উফফ!এই মেয়েটা এত ঠোঁট কাটা।এর মুখে কিছু আটকায় না।
শেষ বিকেলে পুনম ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুম থেকে উঠে দেখে ড্রয়িং রুমে বল্টু বসা বাবার সামনে।এই ছেলে হটাৎ তার বাসায় কেনো? সকালেই তো কথা হলো।চিন্তিত মুখে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে দেখতে পায়, টি টেবিলের উপর নতুন একটা এন্ড্রয়েড ফোন রাখা। আশ্চর্য হয়ে পুনম জানতে চায়, —-ফোন কোথা থেকে এলো বাবা?
চলবে,
#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৯
লাবণ্য আজ খুশিতে বাক-বাকুম! ওর মনে হচ্ছে খুশিতে আজ মরেই যাবে! না না মরে গেলে তো চলবে না।মরে গেলে এত খুশি উদযাপন করবে কে? তাছাড়া ক্লাসের শাঁকচুন্নিগুলোকেও তো দেখাতে হবে মোবাইল।ওরা এতদিন ওকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে এবার সবার দাঁত ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে তা দিয়ে যদি দাঁত না মেজেছি তবে আমি লাবণ্য নই।হুহ!
বিকালে ওর পছন্দের কতগুলো মেকাপ সামগ্রী পেলো আর সন্ধ্যায় এত দামি টাচ ফোন। অবশ্য মোবাইলটা নয়াপুর, তাতে কি? যা নয়াপুর তাহাই আমার। ইশ!কতদিনের শখ ছিল একটা এন্ড্রয়েড মোবাইলের।
কিন্তু নয়াপু এমন কটকট করে তাকিয়ে আছে কেন বল্টু ভাইয়ের দিকে?
বল্টু ভয়ে কয়েক ঢোক গিলে, ইফতার টেবিলে বসে পড়ে।ও অবশ্য চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আংকেল ইফতার না করে যেতে দিবে না।তাই এখন ইফতার টেবিলে বসে পুনমের আগুন চোখ দেখতে হচ্ছে! বল্টু চুপিসারে দীর্ঘশ্বাস ফেলে! এই তানভীর ভাইয়ের জন্য আর কত কি সহ্য করা লাগে আল্লাহ জানে?
মেজ আপা বলে উঠলো,
—– কি ব্যাপার বলতো পুনু?তুই লটারিতে এত ভালো একটা মোবাইল পেলি তারপরও মুখটা এমন শুটকির মত লটকিয়ে কেন রাখছিস?
বড় আপা উত্তরে বলে উঠলো,
—– দেখো লটারিতে পেয়েছে না আবার অন্য কোথা…..?
পুনম শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
—–বড় আপা তুমি একথা দ্বারা কি বোঝাতে চাইছো? সরাসরি কথা বলবে।এরকম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবে না।তোমার মত আমরা এত ডিপ্লোমেটিক কথা বুঝিনা!
বড় আপা আর কিছু বললো না।বাবা সামনে আছে।আবার কি না কি বলে দেয় বাবা, তখন ইষ্টির আব্বুর সামনে ছোট হতে হবে ওকে। তার থেকে এখন চুপ থাকাই ভালো!
পুনম চেয়ার ঠেলে উঠে পড়ে। সবাইকে বলে, জরুরী ফোনে কথা আছে, সেরে এক্ষুনি এসে পড়বে । বল্টু চোরাচোখে তাকায় পুনমের দিকে।বুঝতে পারে জরুরী কলটা এখন তানভীরের কাছে যাবে। বল্টু মোবাইলটা সম্পর্কে পুনমের বাসার সবাইকে বলেছে,
তাদের ভার্সিটিতে এই মোবাইল কোম্পানি থেকে লোক এসেছিল তারা একটা কুইজ প্রতিযোগিতা করেছিল কিছুদিন আগে তার লটারিতে আজকে এই মোবাইলটা পুনমের নামে সিলেক্ট হয়েছে। এই কথা সবাই অনায়াসে বিশ্বাস করে নিয়েছে কিন্তু সত্যিটা তো পুনম আর বল্টু দুজনেই জানে…….
—–হ্যালো!এসবের মানে কি? আমাকে বলুনতো….
তানভীর অবাক হলো না পুনমের প্রশ্নে।যখন কল এসেছে তখনই বুঝেছে এতক্ষণে বল্টু তার কাজ করে দিয়েছে। এখন যা করতে হবে তা হলো সম্পুর্ণ বিষয়টাকে না জানার ভান করতে হবে।
—–এই পুনমি, কিসের কথা বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা পুনমি।
—-একদম না জানার ভান করবেন না।আপনি আমাকে মোবাইল পাঠিয়েছেন কেন?
—-মোবাইল…আমি…তাও তোমাকে…কখন পাঠালাম? তুমি কি আবোল তাবোল বলছো পুনমি?
—-মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পড়েছেন এমন ভাব করছেন। আর কতবার বলেছি প্রত্যেক কথার শেষে এমন পুনমি পুনমি করবেন না। আপনি কি ভেবেছেন এসব দামি উপহার দিলেই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাবো? কখনো না…..তাই এসব ছারুন।
তানভীর পুনমের কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসে।বুঝাই যাচ্ছে রেগে বেলুন হয়ে রয়েছে তারপর আবার হাসির শব্দ শুনলে তুলকালাম বাঁধাবে।তানভীর মনোক্তি করে,এই মেয়ের এত আত্মসম্মান? ভালোবেসে কিছু দিলে কি আত্মসম্মান ছোট হয়? হয় না তো। তা একে কে বুঝাবে?
—-তুমি আমার প্রেমে পড়নি বুঝি? আমি তো দেখলাম তুমি আমাতে আঁছড়ে পড়েছো…..
—–একদম ফালতু কথা বলবেন না।
—–কিসের ফালতু? প্রেমে না পড়লে কি কাউকে ওভাবে চুমু ফুমু দেয়া যায়?বলো?
পুনম নিজের কপাল চাপড়ায়।কার সাথে কথা বলছে ও? এর সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা একই! এই মানুষটার কথা শুনে পুনমের সাড়া গা জ্বলে যায়! এই এক চুমুর জন্য পুনমের যে আরো কত কিছু সহ্য করতে হবে……
—-খুব বেশি সাহস দেখাচ্ছেন না আপনি? এত সাহস কিন্তু ভালো না বলে দিচ্ছি….
—-প্রেমে পড়ে সাহসীরা হয় ভীতু আর ভীতুরা হয় সাহসী! তাই এতে দোষের কিছু নেই।আর আমিও তো চাই তুমি একটু আধটু সাহস দেখাও। আমি যেদিন থেকে সাহসী হলাম তুমি তো সেদিন থেকে একদম মেনি বিলাই হয়ে গেছো পুনমি!
—-একেবারে পুলিশ কম্পেলেন করবো অসভ্য লোক।
—-করো করো…. আমিও তখন পুলিশকে বলবো, এই যে পুনম নামের মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছেন, একদম সহজ সরল চেহারা। আসলে এই মেয়ে মহা দুষ্টু!আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এই মেয়ে আমায় চুমু টুমু দিয়ে একাকার করে ফেলেছে! যাকে বলে পুরুষ নির্যাতন! তখন দেখি তোমার পুলিশ আমার কি করে?
—–অসভ্য!…..বলে পুনম কল কেটে দেয়।আর একটা কথাও বলবে না ও এই ফাজিলটার সাথে।কত বড় সাহস বলে কিনা আমি ওনাকে হ্যারেস করেছি! রাগে পুনমের পায়ের তালু থেকে মাথার চান্দি পর্যন্ত গরম হয়!কিড়মিড় করতে করতে ডায়িনিং টেবিলের সামনে এসে বল্টুর গালে সপাট করে একটা চড় মেরে দেয়…..
বল্টু গালে হাত দিয়ে বোকার মত তাকিয়ে থেকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,মারলি কেন আমায়?
বাবা সহ সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে…পুনম নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
—-বড় একটা মশা পড়েছিল তোর গালে।দেখতে একদম এডিস মশার মত! তাই মেরেছি।
সবাই সে কথা বিশ্বাস করলেও বল্টু ঠিকই বুঝে যায় কোন মশা পড়েছিল তার গালে।আর সে কেন মার খেলো?
***********************
সবাই খাওয়ার পর পাবনী হালকা কিছু খাবার তুলে রাখে সুমন ভাইয়ের জন্য। কেবল মানবিকতার খাতিরে এই আলাদা যত্নটুকু করে পাবনী।মায়া হয় মানুষটাকে দেখলে কিন্তু কখনো সুমন ভাইকে নিয়ে কোন নোংরা চিন্তা পাবনী করে নি।অথচ কাল বড় আপা কিভাবে নোংরা ইঙ্গিতে পাবনীকে বললো,
—–কিরে পাবনী সুমনকে দেখলাম তোর জন্য চুড়ি নিয়ে আসতে আবার তুই ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখছিস, জামা ধুয়ে দিচ্ছিস।মতলবটা কি বলতো?আমার দেবরের গলায় ঝুলে পড়তে চাইছিস?তুই যে আতুর সে কথা কি ভুলে গেছিস?তোর পায়ের পিছনে কত টাকা ঢালতে হয়…সুমনের আছে কি যে তোকে বিয়ে করে চিকিৎসা চালাবে?নাকি আমাদের ঘারে উঠতে চাইছিস?
পাবনী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল বড় আপার কথা শুনে।দু’চোখ জলে ভরে উঠেছিল কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল…..তা দেখে বড় আপা বলেছিল,
—–এত ঢঙ কোথায় পাসরে পাবনী? ভেবেছিস কি তোর কান্না দেখে গলে যাবো আর তুই আমার সংসারে ঢুকে পড়বি।সবসময় তো খুব শান্ত হয়ে সবার সামনে ঘুরিস তবে তলে তলে এত ছলাকলা কোথায় শিখলি?
ঐ মুহুর্তে বাসায় প্রবেশ করতে গিয়ে পুনম সবই শুনে ফেলে। সে কাঁধে ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগটা সোফায় ছুড়ে মেরে বড় আপার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
—-কি সমস্যা তোমার বড় আপা? তুমি কি চাইছো বলতো? ঝামেলা বাঁধাতে?সবসময় দেখে এসেছি বড় আপা শান্ত পরিবেশকে তুমি সবসময় উল্টা পাল্টা কথা বলে অশান্ত করে তুলতে।কেন? আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি বলতো?
একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখো বড় আপা আমি পুনম, পাবনী নই।যে তুমি বলবে আর আমি শুনবো।নিজের বোনকে কি করে তুমি আতুর বলতে পারো? আর রইলো কথা টাকা ঢালার।টাকা ঢাললে আমার বাবা ঢালে তাতে তোমার কি?এই ঘরে তোমার অধিকার ততটুকু যতটুকু একজন নাইওরির হয়।এর বেশি নাক গলাবে না। তাছাড়া তোমার সংসারের সাথে কবেই বা সুমন ভাই যুক্ত ছিল? তুমি আর তোমার জামাই তো তাকে এতকাল চাকরের মত দেখো এসেছো।আজ তাকে নিজের বলে দাবি করছো যে? আর বড় আপা তুমি আর তোমার জামাই খেয়াল রেখো চাকর আবার মালিক না হয়ে যায় আর মালিক চাকর? বুঝেছো?
পুনম পাবনীর হাতে ঝাকা দিয়ে বলেছিল, —সেজ আপা সবসময় এমন মুখ বুজে থাকবিনা।দেখলে মেজাজ গরম হয়! কেন বললি না তোর বড় বোন কে যে কাল সুমন ভাই এক ঝুড়ি চুড়ি এনেছিল বাসার ছোট বড় সবার জন্য! তবে তোকে কেন এসব বলতেছে?প্রতিবাদ করতে শেখ সেজ আপা! আর তোর একার জন্য যদি এনেও থাকে তবে সমস্যা কি? যে নিজে ছলাকলা করে বিয়ে করছে সে আবার অন্যকে বলে কিভাবে? মুখ খুলতে শিখ!
পাবনী কালও কিছু বলতে পারি নি না আজ বলতে পারবে।ও এরকমই! সকল কথা, কষ্ট, বেদনা,অবজ্ঞা চেপে রাখতে পারে!
***********************
তানভীর যখন মাকে নিয়ে বাসায় ফিরলো তখন রাত আটটা।বাসার পরিবেশ খুবই ঠান্ডা!এমনকি সারভেন্টদের কাজের আওয়াজও আসছেনা। তার মানে হায়দার হোসেন এসে ভালোই চোটপাট চালিয়েছে।মাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে রাজুকে খবর দেয় তানভীর। তানভীর লক্ষ্য করে রাজুর মুখ থমথমে।যেন বিপদের পাহাড় তার সঙ্গে ঘুরছে।
—-রাজু তোমার বড় স্যার কোথায়?
—-সে প্রাইভেট রুমে!
—- ও তা কার সাথে?
—–কারো সাথে না,স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছে।
—-তারুণ কোথায়?
—-ছাদে বই পড়ছে।
—শোন রাজু কেউ মারা যায় নি যে তোমার এমন মুখ করে কথা বলতে হবে।ইজি হও।কিছু মানুষকে গোমড়া মুখে মানায় না!
—-স্যার আই এম স্যরি!
—স্যরি বলার মত কিছুই হয়নি। তুমি তোমার কাজ করেছো।
রাজু বিড়বিড় করে বলে,স্যার আপনার বিপক্ষে আমার কিছুই বলতে মন চায় না।তবু বলতে হয়। আপনি শাস্তি পেলে আমার খুব কষ্ট হয়!খুব!
—-স্যার আমি ঠিক করেছি চাকরি ছেড়ে দেবো।
তানভীর অবাক হলো না। তানভীর জানে রাজু ওকে পছন্দ করে কিন্তু ওই যে কাজ…..
—-তুমি খুব ভালো একটা ছেলে রাজু।আমার সামনে অনেক কঠিন সময় …..আমি চাই তখন তুমি আমার পাশে থাকো ভাইয়ের মত।
রাজু হুট করে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো।সে তানভীর স্যারের ভাই হওয়ার যোগ্য না!কখনো না!
*********************
—–তুমি জানতে না আজ আমি আসবো তানভীর?
—-হ্যা জানতাম!
—তোমার মা একজন মানসিক রোগী। তুমি কোন সাহসে তাকে নিয়ে বের হও?
—–আপনার কাছে আমার মা মানসিক রোগি হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না।
হায়দার হোসেন লক্ষ্য করলেন তানভীর তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলছেন…যা আগে কখনো করিনি। এবং এও লক্ষ্য করলেন তার ছেলের চোখে আলাদা বিদ্যুৎ বিচ্ছুরণের ছটা।পুড়িয়ে দেবার জন্য এই বিচ্ছুরণই যথেষ্ট! হায়দার হোসেন ভিতর থেকে বিচলিত হলেন কিন্তু চোখে মুখে স্বাভাবিক থেকে ছেলের সাথে কথা বললেন,
—–ডক্টর বলেছেন তোমার মায়ের সমস্যা আছে আমি বলিনি।
তানভীর মৃদু হেসে বললো,
—–ডক্টর টা তো আপনারই নির্বাচিত করা তাই না?
—-আমি তোমার বাবা তানভীর। আমার সম্পর্কে এত খারাপ ধারণা পোষা কি ঠিক?
—-স্যরি টু সে… আপনার সম্পর্কে আমার আগে খারাপ ধারণা ছিল কিন্তু আজ থেকে শুধু ই ঘৃন্য ধারণা রাখি!
হায়দার হোসেন কি করবেন ভেবে পেল না।সামনে বসা ছেলেটা যদি তার নিজের ছেলে না হতো তবে এতক্ষণে তার লাশ পড়ে থাকতো।রাগে সারা শরীর রি রি করছে। তার মানে শায়লা সব বলে দিয়েছে তাই আজ তার ছেলে তার সাথে এই ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছে।শায়লা এর জন্য কঠিন শাস্তি পাবে। কঠিন!
—-তার মানে তুমি সব কিছু জেনে গেছো।আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কি করতে পারি আমার অবাধ্য হলে….
—আমি অপেক্ষায় রইলাম।
—-তুমি তারিনের বাসায় গিয়েছ কেন?
—আপনি আপনার মেয়েকে ভুলে যেতে পারেন কিন্তু আমি আমার বোনকে ভুলতে পারবো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি নাকি আবার পড়াশুনা শুরু করেছ চাকরির জন্য। তার কি কোন দরকার আছে? আমার যে কোন একটা অফিসে তোমাকে তো আগেই বসতে বলেছিলাম তবে বসলে না কেন?
—-আমি নিজে কিছু করতে চাইছি।
—অবাধ্য হয়েও না তানভীর!এই কার্ডটা রাখো, আমার বন্ধুর মেয়ে এই অফিসে বসে। আশা করি তোমাদের বন্ধুত্ব দারুণ হবে।
তানভীর কার্ডটা ছুঁয়েও দেখলো না। সে একই ভাবে বললো,
—-আমি আগ্রহ বোধ করছি না।
—তুমি কি চাও না তোমার মা ভালো থাকুক?
—সে এমনিতেও ভালো নেই।আশা করি আপনার প্রশ্ন শেষ হয়েছে এখন আমি উঠি।আর আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখার কথা চিন্তা ও করবেন না।কারণ এতকাল আমি চেয়েছি বলে আমাকে বন্দি করতে পেরেছেন।
তানভীর উঠে রুমের দরজা পর্যন্ত গেলে হায়দার হোসেন আবার বলে উঠলেন,
—–তুমি কি চাও না তোমার সেই বন্ধুটি ভাল থাকুক? নাকি তাও চাও না।
কথাটি শুনে তানভীরের বুকের ভিতর ধক করে ওঠে।পুনমের কিছু হলে ওর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
—-আপনি এছাড়া আর কি পারেন?কারো দূর্বলতায় আঘাত করাই তো আপনার সাহসীকতা।তবে সে আমার মায়ের মত ভীতু নয়। যে চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারবেন।
আর আপনাকে আর একটা কথা বলে রাখি তা জেনে আপনি আনন্দিত হবেন,আমি তাকে যতটা চাই সে যদি ততটা আমাকে চাইতো তবে কারো সাধ্য ছিল না আমাকে তার কাছ থেকে দূর করার! আপনার ছেলে তার পিছনে তৃষ্ণার্ত পাখির মত ঘুরে কিন্তু সে ফিরেও তাকায় না!
তানভীর আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না।সে হনহনিয়ে হেঁটে বের হয়ে যায়….যত যাই হোক তবু আর ভয় পাবে না ও এই বাবা নামক মানুষটিকে!
********************
জামাল ব্যস্ত পায়ে এসে পুনমদের দরজায় কড়া নারে।পুনম পড়ছিল। এত রাতে এত জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে উঠে এসে দেখে তার মেজ দুলাভাই কাঁদো কাঁদো মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
—-কি হয়েছে দুলাভাই?
—-তোমার আপা খুব বমি করছে। দেখো তো কি হয়েছে? আমার খুব ভয় করছে।
এতক্ষণে সবাই উঠে এসে জরো হয় মেজ আপার রুমে। দেখে মেজ আপা বালতিতে মুখ দিয়ে ওয়াক ওয়াক করছে….
মা বলে ওঠে, ঝুমা তোকে কতবার বলেছি খাওয়ার আগে বমির ঔষধ টা খাবি। তা না করে খালি বমি।
জামাল লেবু পাতা ধরে বসে ঝুমার নাকের কাছে।যদি বমি কমে।পুনমের মনে হচ্ছে এখনি তার মেজ দুলাভাই কেঁদে দিবে।কি যন্ত্রণা! এরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা।এরকম সময় বমি হয়। তবে ওতোটাও মারাত্মক অসুস্থ নয় মেজ আপা।গ্যাসের সমস্যা আছে সারাদিন হাবিজাবি খায় তাই হয়তো বমি করছে কিন্তু তার দুলাভাইর অস্থিরতা ব্যাপক। তাই
পুনম বলে ওঠে,
—-দুলাভাই আমি শুনেছি এরকম সময় স্ত্রীর বমি হলে সাথে যদি স্বামী বমি করে তবে নাকি বমি কমে যায়। বিশ্বাস করুন!
ঘরের সবাই পুনমের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকে এমনকি মেজ আপাও।তবে বাবা মুখ চেপে হাসছেন।
পুনমের কথা সত্যি করে জামাল সত্যিই বমি করতে চেষ্টা করছে!ওয়াক ওয়াক করছে। পাশ থেকে মরিচা বলে ওঠে, দুলাভাই গলায় আংগুল দেন তয় বমি আইবো।দেন দেন।
জামাল তাও দিল যদি এতে ঝুমার বমি কমে। ঝুমার বমি তো কমেছে সেই কখন! সে অবাক চোখে চেয়ে থেকে তার স্বামীর দিকে বলে ওঠে, গাধা!
চলবে,