নীলকণ্ঠ
পর্ব_০৬,০৭
নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
পর্ব_০৬
আমরা কণ্ঠকে চমকে দিতে ওর জন্মদিন উৎযাপনের সামান্য আয়োজন করেছি। সবটাই হয়েছে আমার বুদ্ধিতে। তবে এমডি স্যারকে জানানো হয়নি। যেহেতু কণ্ঠ বরাবরই তাকে অপছন্দ করে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা করা ঠিক হয়নি। কণ্ঠের চোখের কাপড় খুলে দেয়ার পর ভেবেছিলাম ও খুব খুশি হবে। কিন্তু এখন ওর চোখ-মুখের ভাব দেখে যা বুঝতে পারছি তা হলো ও মোটেও খুশি হয়নি। কিন্তু কেন? ওর হাত-পা অসম্ভব রকম কাঁপছে। চোখের বর্ণ টকটকে লাল হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই সব কিছু জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ভস্ম করে দেবে। আমি ওর কাছে এগিয়ে গেলাম এবং ডাকলাম,
‘ কণ্ঠ… ‘
‘ এসব কে করেছে নীল? ‘ ওর কম্পিত গলায় প্রশ্নটা করল।
‘ আমরা সবাই মিলে করেছি। কেন পছন্দ হয়নি? ‘ আশাহত হয়ে বললাম।
‘ কেন করলেন? কে বলেছিল এসব করতে, ‘ ও উত্তেজিত হয়ে খানিকটা চিৎকার করেই বলল।
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কী এমন হলো যে মেয়েটা এভাবে রিয়েক্ট করলো। সম্বিৎ ফিরে পেতেই আমি বললাম,
‘ কেন? কী হয়েছে? বলবে তো? ‘
‘ আপনারা সবাই শুধু আমাকে কষ্ট দিতে জানেন। যখনই সবটা ভুলে আবার নতুন সূচনা করতে চাই ঠিক তখনই আমার অতীত আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বোঝাতে চান আমার জীবনে আনন্দের কোনো স্থান নেই। কেন? কেন এমন করেন? আমি কী ক্ষতি করেছি আপনাদের? ‘ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে কণ্ঠ।
উপস্থিত সকলেই হতভম্ব হয়ে যায়। কী এমন হলো যার দরুন কণ্ঠ এহেন আচরণ করছে। আমার বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠল। আচ্ছা নিজের অজান্তেই কী ওকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম? ওর কান্নার হৃদয়বিদারক শব্দে আশপাশের পরিবেশ, বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এত কষ্ট লুকিয়ে রেখেছিল ও ওর মনে? কেউ যে এগিয়ে গিয়ে ওকে সান্ত্বনা দেবে সেই সাহসটাও কারো হচ্ছে না। আমি রেস্টুরেন্টের করিডোরের এক প্রান্তে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু মুখ থেকে একটা টু শব্দও বেরোচ্ছে না। বেশ খানিকটা সময় কণ্ঠ কাঁদল। তারপর শীলা ও মেহেক ওকে ওর কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল।
_____________
কণ্ঠের জন্মদিন ঘিরেই তার জীবনের সকল তোলপাড়ের সূচনা। তার এক জন্মদিনে তার বড় ভাই নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পরিবার ছেড়েছেন, পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। ঘটনার সমাপ্তি এটুকুতে হলেও পারত। কিন্তু ঘটনাটি সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেনি। কণ্ঠ তার আরেকটি জন্মদিনে নিজের অনাগত সন্তানদের হারিয়েছে। যদিও এর জন্য তার প্রাক্তন স্বামী দায়ী। লোকটা তার পরকিয়া সম্পর্কের জেরে কণ্ঠ যখন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কণ্ঠকে তখন বেধড়কভাবে মেরেছিল। ফলশ্রুতিতে কণ্ঠ হারায় তার অনাগত সন্তানদের। ডক্টর বলেছিলেন কণ্ঠ দুই সন্তানের জননী হবেন। হায় আফসোস! মেয়েটির মা হওয়া হয়ে উঠেনি। আবার আরেক জন্মদিনেই কণ্ঠের ডিভোর্স হয়েছিল। এই পর্যন্ত ঘটনা থেমে থাকেনি। কণ্ঠ তার প্রাণের প্রিয় পিতাকেও হারিয়েছিল তার জন্মদিন নামক এক অভিশপ্ত দিনে। সেই থেকে জন্মদিন আসলে কণ্ঠ মনমরা হয়ে থাকে। দিনটি ঘুরে ফিরে কেন বারবার আসে তার জীবনে?
_______________
কণ্ঠের মুখে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে পুরো করিডোর। প্রতিটি মানুষ এই হৃদয়বিদারক বর্ণনা শুনে শোকাহত, মর্মাহত। কেউ সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষা খুজে পায়নি। সবাই নিরবে অশ্রু বিসর্জন করছে। আমি যেন নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছি। কী করে পারলাম মেয়েটাকে এতটা কষ্ট দিতে? ও কি আমায় আদৌ ক্ষমা করবে? আমি কণ্ঠের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছি না। কণ্ঠ ছুটে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। মেহেক, শীলাসহ আরও বেশ কয়েকজন মেয়ে কলিগ ওর পিছু নিল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
_____________
কেটে গেছে দুটি মাস। তীব্র শীত জাঁকিয়ে বসেছে ঢাকা শহরে। শহরজুড়ে চলছে পৌষ পার্বণের পিঠা উৎসব। কী দারুণ একটা অনুভূতি। সেদিন কণ্ঠের কষ্টে কেঁদেছিলাম আমিও। অন্তরদহনে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য কণ্ঠ আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। ওর ভাষ্যমতে এতে আমার কোনো দোষ ছিল না। ও নাকি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছিল, তাই ও লজ্জিত। আমি বলেছিলাম, ‘ এখানে দোষটা আসলে আমাদের কারোরই ছিল না। তুমি তোমার জায়গায় নিরপরাধ আর আমি আমার জায়গায়। সব দোষটা আসলে নিয়তির। ‘ আমার কথা শুনে কণ্ঠ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিল। এরপর কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা আরো মজবুত হয়েছিল। আজকে কেন জানি এসব ভাবতে খুব ভালো লাগছে। তবে সেইদিনের সেই ঘটনা, কণ্ঠের আর্তনাদ আমার হৃদয়কে আজও কাঁদায়। মনে হয় সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। ধ্যান ভাঙলো আম্মুর ডাকে। আজ অফিস নেই, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার।
‘ নীল আব্বু। ‘
‘ কী হয়েছে আম্মু? কিছু বলবে? ‘
‘ হ্যাঁ বাবা। ‘
‘ বলে ফেল অপেক্ষা করছ কেন? ‘
‘ তুই এবার বিয়েটা করে ফেল। ‘
‘ হুম করব। ‘
‘ কবে করবি বাবা? ‘
‘ সময় হলেই করব। ‘
‘ সেই সময়টা কবে আসবে শুনি? ‘
‘ মা নীলা কোথায়? ‘
‘ কথা ঘুরাচ্ছিস? ‘
‘ নাতো।’
‘ তোকে বলে কোনো লাভ নেই। ‘
‘ আরে আম্মু। ‘
যাহ্ রাগ করে চলে গেল। আম্মুর সবসময় এককথা। বিয়ে কবে করবি? আমার আর ভালো লাগে না। আমি কতবার বলেছি নীলাকে বিয়ে দেয়ার পর নিজে বিয়ে করব। ওর লেখাপড়া শেষ হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। আশা করা যায় আগামী দুবছরের মাঝেই আমার বোনটার পড়া শেষ হবে। আমি ওর বিয়েটা খুব ধুমধাম করে দিতে চাই। তাই ওর জন্য কিছু টাকা জমিয়েছি। আমার আজকাল কেন জানি মনে হয় আমি হয়তো আর বেশি দিন বাঁচব না। তাই আমার অবর্তমানে আমার পরিবারের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা করছি। আম্মুর চিকিৎসা আর নীলার বিয়ে এই দুটো দায়িত্ব পালন করতে পারলেই আমি মুক্ত। সেই লক্ষ্যে কিছু টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করে রেখেছি। হয়তো আমি না থাকলে আর যাইহোক আমার পরিবারকে পথে নামতে হবে না। ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আমার ফোন বেজে উঠল। কণ্ঠের কল উদগ্রীব হয়ে রিসিভ করলাম।
‘ নীল…! ‘
‘ বলো কণ্ঠ। ‘
‘ আমার একটা অনুরোধ রাখবেন? প্লিজ না করবেন না। ‘
‘ সম্ভব হলে অবশ্যই রাখবো। বল তুমি। ‘
‘ অসম্ভব কিছু করতে বলব না। আপনি রাখতে পারবেন। ‘
‘ আচ্ছা বলোতো কী? ‘
‘ পৌষ পার্বণ উপলক্ষে পিঠে উৎসব চলছে। আমার পিঠে উৎসবে যেতে
খুব ইচ্ছে করছে। নিয়ে যাবেন। ‘
‘ কবে যেতে চাও? ‘
‘ আপনার আপত্তি না থাকলে আজই। ‘
‘ ঠিক আছে তুমি বের হও। আমি আসছি। ‘
‘ ধন্যবাদ নীল। ‘
‘ ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করো না প্লিজ। ‘
‘ বেশ তবে তাই হবে। ‘
‘ হুম। তাড়াতাড়ি রেডি হও। ১০ মিনিটের মাঝে আসছি। ‘
‘ আচ্ছা আসুন। ‘
__________
চলবে
#নীলকণ্ঠ
#পর্ব_০৭
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
___________
নীলের সাথে কথা বলে চট করে তৈরী হয়ে নিলাম। আজকে হালকা করে সেজেছি। চোখে গাঢ় কাজল, পুরো মুখে হালকা ফেস পাউডার এবং ঠোঁটে একটা ন্যুড কালারের ম্যাট লিপস্টিক। ব্যস! আমার সাজ সম্পন্ন। কাতানের গাঢ় নীল একটি শাড়ি পড়েছি সাথে ম্যাচিং হিজাব আর গায়ে জড়িয়ে নিয়েছি একটা কালো রঙের শাল। এতেই প্রায় ছ’ মিনিট পার করে ফেলেছি! নাহ্ এবার বেরোতে হবে। নীল হয়ত এসে পড়েছেন এবং আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। উফ্ বাইরে কী ঠান্ডা! আমার হাত-পা বুঝি জমে যাবে।
‘ মা দরজা লাগিয়ে দাও আমি আসছি। ‘ এই বলে জোরে হাক দিলাম।
‘ কোথাও যাচ্ছিস, মা। ‘
‘ মামণি একটু বের হচ্ছি। তাড়াতাড়িই ফিরে আসব। ‘
‘ আচ্ছা মা সাবধানে যাস আর বেশি রাত বাইরে কাটাস না। ‘ চিন্তিত স্বরে বললেন আম্মু।
‘ যথা আজ্ঞা মাতাজি। ‘ কিঞ্চিৎ হেসে বললাম।
গেটের বাইরে বেরিয়ে দেখি নীল সাহেব ফোনে স্ক্রল করছেন। আমি হালকা করে কাশলাম সাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু নীল তো কোনো পাত্তাই দিলেন না। কী এমন দেখছেন ফোনে? যার জন্য আমায় ওনার চোখেই পড়ল না। তারপর হেঁটে ওনার সামনে গিয়ে জোরে জোরে গলা ঝারলাম।
‘ উহুম উহুম। ‘
‘ আরে কণ্ঠ এসে পড়েছ? চল রিকশায় উঠি। ‘
‘ এসেছি তো সেই কখন। কিন্তু আপনি তো দেখলেনই না। ফোন নিয়ে ব্যস্ত কিনা! ‘ খানিকটা খোঁচা দিয়ে কথাটা বললাম। কেন যেন ওনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেয়ে রাগ হচ্ছে। ভীষণ রকমের রাগ!
‘ ওহ্ তাই বুঝি? সরি গো আর হবে না, ‘ মিষ্টি হেসে বললেন নীল।
কী মায়াময় মুখাবয়ব! কতটা স্নিগ্ধ তার হাসি! কতটা গভীর তার চোখের চাহনি! দেখলেই মনে হয় এই বুঝি কোনো মায়াজালে জড়িয়ে পরছি। আর তার মুখের এই “গো” ডাকটা শুনে শরীরজুড়ে বয়ে গেল এক অদ্ভুত অনুভূতি। মনের মাঝে লোভ জমছে। ইশ যদি রোজ এই ডাকটা শুনতে পেতাম! যদি পেতাম! ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। নীল আমায় টেনে পাড়ে নিয়ে এলেন।
‘ এই কণ্ঠ কী ভাবছো বলোতো? রিকশায় উঠবে না? ‘
‘ কিছু না চলুন। ‘
সূর্য ডুবেছে ঘণ্টাখানেক পূর্বে। অন্ধকার জেঁকে বসেছে শহরজুড়ে তবে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট, দোকানের লাইট আর বাসাবাড়ির লাইটের আলোয় আলোকিত চারিপাশ। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে স্পর্শ করছে সারা অঙ্গ। রিকশা ছুটে চলছে গন্তব্যের খোঁজে। আর পাশে বসে আছেন নীল। তবে আমাদের মাঝে আরো দু-একজন বসতে পারবে বলে মনে হয়। আচ্ছা সময়টা যদি এখানেই থমকে যেত! তবে কেমন হতো? এক কাপ চায়ের বড্ড অভাব! ভাবনার সমাপ্তি ঘটল কেননা রিকশা থেমে গেছে যার অর্থ আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছেছি। আমি নামলাম রিকশা থেকে। এই এতটা পথ আমরা একটা কথাও বলিনি। নিশ্চুপ থেকে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা অনুভব করছিলাম?
‘ কণ্ঠ চল। ‘ শান্ত স্বরে বলল নীল।
‘ হুম চলেন। ‘
আমি আশপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। হরেক পদের পিঠার স্টল রয়েছে। মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা। শীতের সময় গ্রামে যখন বেড়াতে যেতাম তখন কত পিঠা খেতাম। আর এখন তো বাসায় সেভাবে পিঠা তৈরি করাও হয় না। তাই খাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে উঠে না। চারপাশ পিঠার সুঘ্রাণে ম ম করছে। আমি পাটিসাপ্টা পিঠার স্টল দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। নীল বললেন,
‘ কী হলো থেমে গেলে যে? ‘
‘ পৌষ পার্বণের পিঠা উৎসবে এসেছি কী করতে? শুধু কি ঘুরে ঘুরে দেখব? খাব না? ‘ কপাল কুঁচকে কথাগুলো বললাম আমি।
‘ না তা হবে কেন? তা কোন পিঠে খাবে? ‘
‘ আপাতত পাটিসাপ্টা দিয়ে শুরু করব। তারপর ভেবে দেখছি আর কী টেস্ট করা যায়। ‘
‘ তবে শুরু করা যাক। ‘
আমরা পাটিসাপ্টা, ভাপাপিঠা, চিতই পিঠা, খেজুর পিঠা, দুধচিতই পিঠা, বিবিখানা পিঠাসহ আরও অনেকগুলো পিঠা টেস্ট করলাম। অসম্ভব মজা ছিল পিঠাগুলো। এত পিঠা খেয়ে ফেলেছি যে এখন হাঁটতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও খুব উপভোগ্য ছিল মুহূর্তগুলো। নীলেরও একই অবস্থা। হঠাৎ নীল বলে উঠলেন,
‘ এই কণ্ঠ একটু বিশ্রাম নেই। কী বলো? ‘
‘ ঠিক বলেছেন। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। ‘
‘ কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে তারপর চলে যাব। ‘
‘ নীল এখন কয়টা বাজে? ‘ নিষ্প্রভ কণ্ঠে বললাম আমি।
‘ সবে ৭.৪৫ বাজে। ৮ টা পর্যন্ত বসি তারপর রওনা হব। ‘
‘ ঠিক আছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নীল। ‘
‘ ধন্যবাদ কেন? ‘ খানিকটা অবাক হয়ে বললেন নীল।
‘ এত সুন্দর একটি সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্য। এটা আমার জীবনের অন্যতম একটি সুন্দর মুহূর্ত। আমার কাটানো সবচেয়ে ভালো সন্ধ্যা। ‘ উচ্ছ্বসিত হয়ে কথাগুলো বললাম।
‘ তোমাকেও ধন্যবাদ। আমাকে এত সুন্দর সময় উপভোগ করতে দেয়ার জন্য। ‘
আড্ডা চলল বেশ অনেকটা সময়। তারপর আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রিকশায় চড়লাম। এবার আমরা বেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। আগের মত আর জড়তা কাজ করছিল না। অনেক কথা বলতে বলতেই আমার বাসায় এসে পড়লাম। আমায় বাসার গেটে নামিয়ে দিয়ে নীল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। যতক্ষণ নীলকে দেখা গেল আমি তাকিয়ে দেখলাম। উনি অদৃশ্য হতেই আমি বাসায় ঢুকে গেলাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
_________
পরদিন সকালে,
এলার্মের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। সকাল ৭টা বাজে। বিছানা গুছিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কর্মব্যস্ত মানুষের আনাগোনা রাস্তায় শুরু হয়েছে। শান্ত-নিরব রাস্তায় মানুষের কোলাহল বাড়ছে। কিছুটা সময় পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা তৈরি করে আম্মুকে সাথে নিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম। আজকে নাস্তায় ফ্রোজেন পরোটা ভেজেছি আর সাথে করেছি সবজি আর ডিম ভাজি। নাস্তা শেষে এক কাপ চা খেলাম। ব্যস আর কী লাগে! খাওয়া শেষে লাঞ্চ তৈরি করে ফেললাম চট করে। আজকের লাঞ্চে করেছি ভুনা খিচুড়ি আর সাথে বিফ কারি। সব গুছিয়ে তারপর গোসল সেরে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। এই শীতের সকালে গোসল করে আসাতে ঠান্ডা কম লাগছে। ৯টায় অফিস তাই ৮.৪০ এ বেরোবো। আম্মুকে ঔষধ খাইয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আজকে কিছু ডিল সাইন হবে। তারপর রিকশা নিয়ে নিলাম, বেশ অনেকটা সময় পর অফিসে এসে পৌঁছলাম। ভাড়া দেয়ার সময় পেছন থেকে এমডি স্যার ডাকলেন আমায়।
‘ মিস সায়রী। ‘
‘ জি স্যার বলেন। ‘
‘ আপনি রোজ এমন রিকশায় করে যাতায়াত করেন কেন? ‘
‘ আমার যা সামর্থ আমি তাই করি স্যার। ‘
‘ আহা রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনি চাইলে আমি রোজ আপনাকে পিক করতে পারি কিন্তু! ‘
‘ আপনার এত কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি রিকশায় চড়েই স্বাচ্ছন্দ পাই। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন। আমি আসছি স্যার কিছু ফাইল চেক করতে হবে। একটু পরেই তো মিটিং। ‘ গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে চলে আসলাম।
‘ আচ্ছা আপনি যান। ‘ একরাশ হতাশা নিয়ে বললেন তিনি।
চলবে