নীলকণ্ঠ,পর্ব_০৪,০৫

নীলকণ্ঠ,পর্ব_০৪,০৫
নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
পর্ব_০৪

আজকে অফিসের ট্যুর। আমরা শ্রীমঙ্গলে যাচ্ছি। যদিও ট্যুরের পেছনে একটা মহৎ উদ্দেশ্য লুকায়িত রয়েছে। আর তা হলো আমাদের অফিসের একটা শাখা কিছুদিন আগেই ওখানে খোলা হয়েছে ফলে আমাদের অনেক ক্লাইন্ট ওখানে রয়েছে। তাই আমরা একটা ডিল করতেই যাচ্ছি শ্রীমঙ্গল। যদিও সবাইকে নিয়েই যাওয়া হচ্ছে সেখানে। তাই ডিলের প্রয়োজনে যাওয়া হলেও সবার মাঝে ট্যুরের আমেজ রয়েছে। আমাদের ২৪ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুটো দলে সদস্যদের ভাগ করে নেয়া হয়েছে। অনেকেই পারিবারিক বিভিন্ন কারণে আমাদের সাথে যোগদান করতে পারেনি। তাই আমাদের সঙ্গী হিসেবে ২৪ জন অবশিষ্ট রয়েছে। আমি , এমডি স্যার ও কণ্ঠ একই দলে রয়েছি। আমি কণ্ঠকে আর আপনি বলে কথা বলি না, তুমি বলেই কথা বলি। তবে ও এখনো আপনি বলে। এতেই নাকি ওর স্বাচ্ছন্দ, তাই আমিও কিছু বলিনি। কারণ কারো কমফোর্ট জোন থেকে তাকে বের করাটা তার জন্য অস্বস্তিকর। এখন সকাল ৮টা বাজে। ৮.৪৫ মিনিটে অফিসের সামনে সকলে একত্রিত হবো। তারপর আমরা মাইক্রোবাসে করে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করব। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে কণ্ঠকে কল করলাম ,
‘ হ্যালো কণ্ঠ তুমি বেরিয়েছ? ‘
‘ নাহ্ নীল। আপনি? ‘
‘ হুম, আমি তোমার বাসার সামনে আসছি। ‘
‘ আমার ৫মিনিট লাগবে, আমি বেরোচ্ছি। ‘
‘ আচ্ছা, এসো তুমি।’
বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর আমি কণ্ঠের বাসার সামনে পৌঁছলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম। হঠাৎ পরিচিত আওয়াজ শুনতে পেয়ে, আওয়াজের উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কণ্ঠ এসেছে। ও একটা তাঁতের শাড়ি পড়েছে, সাথে ম্যাচিং হিজাব আর মুখে কোনো প্রসাধনীর চিহ্ন নেই। বেশ লাগছে ওকে। শাড়িটা গাঢ় নীল রঙের যা ওকে খুব মানিয়েছে। মেয়েটার গায়ের রঙ চাপা যার ফলে সব রঙের সাথেই ওকে মানানসই লাগে। আমি কতক্ষণ যে একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম জানা নেই। মনে হচ্ছে আমার সামনে কোনো হুর দাঁড়িয়ে আছে। কখনো কোনো মেয়েকে দেখে আমার এমনটা অনুভব হয়নি। ওই প্রথম ব্যক্তি যাকে দেখে আমার সবটা থমকে গেছে। হঠাৎ শরীরে কোনো হাতের অস্তিত্ব পেলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কণ্ঠ আমায় ডাকছে।
‘ নীল আপনার কি হয়েছে? কখন থেকে ডাকছি, আপনি কোনো সাড়াই দিচ্ছেন না। কোথায় হারিয়ে ছিলেন? ‘
‘ আরে কিছু হয়নি। খেয়াল করিনি তোমার কথা। ‘
‘ তা কোন খেয়ালে ডুবে ছিলেন শুনি। ‘
‘ তোমার খেয়ালে কণ্ঠ, ‘ কথাটা ফিসফিসিয়ে বললাম।
‘ কিছু বললেন? ‘
‘ নাহ্ কণ্ঠ। চল তাড়াতাড়ি গাড়ি মিস হয়ে যাবে। ‘
‘ হুম চলেন। ‘
____________
কিছুক্ষণ পূর্বেই আমাদের মাইক্রোবাস ছেড়ে দিয়েছে। মোট ৩টে মাইক্রো লেগেছে। আমি, কণ্ঠ একই মাইক্রোতে। এমডি আমাদের পরের গাড়িতে রয়েছেন। তবে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ কণ্ঠকে তিনি তার গাড়িতে উঠতে বলেছিলেন। কিন্তু ও কিছু উছিলা দিয়ে এই গাড়িতে রয়ে গেল। ব্যাপারটা স্যার কিছুতেই হজম করতে পারেনি যা বুঝলাম। সে যাই হোক ভালোই হয়েছে। গাড়ির ড্রাইভারের পাশের সিটে আমি বসেছি। আর কণ্ঠ, শীলা এবং মেহেক আমার পিছনের সিটে। তারপরের সিটগুলোতে কারা উঠেছে খেয়াল করিনি।
‘ আরে নীল ভাই এত চুপচাপ কেন? ‘ মেহেক বলে উঠল।
‘ এমনিই। কি বলব বল। ‘ আমি হেসে বললাম।
‘ শুনেছি আপনি অনেক ভালো গান গাইতে পারেন। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। একটা গান তো হতেই পারে। কি বল শীলা, কণ্ঠ। ‘(মেহেক)
‘ নাহ্ ! গান অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। গলা আর আগের মতো নেই। ‘(আমি)
‘ গেয়ে শুনান নীল সাহেব। দেখি আপনার গলা কতটা খারাপ হয়েছে, ‘ কণ্ঠ বলল।
‘ তবে তাই হবে কিন্তু একটা শর্ত আছে। ‘(আমি)
‘ বলে ফেলুন নীল সাহেব। শুনি আপনার শর্ত। ‘ বেশ আগ্রহদীপ্ত হয়ে কথাটা বলল কণ্ঠ।
‘ আমি গান গাইব তবে আমার সাথে একজন ফিমেল আর্টিস্ট লাগবে, ‘ বেশ হেসেই কথাটা বললাম।
‘ আমি গান টান গাইতে পারি না বাবা, ‘ মেহেক বিরক্তি নিয়েই কথাটা বলল।
‘ শীলা তুমি গাইবে আমার সাথে? ‘ আমি শীলাকে প্রশ্নটা করে বসলাম। আর মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম যাতে ওর উত্তরটি না হয়। কেননা আমার ইচ্ছে কণ্ঠের সাথেই আমি গান গাইব। আর আমি জানি ও খুব ভালো গান গাইতে জানে।
‘ নাহ্ ভাইয়া! আমি তোমার সাথে গাইব না। ‘ একপ্রকার চেচিয়ে কথাটা বলে উঠলো শীলা।
‘ থাক তোমাদের গাইতে হবে না। নীল আমিই গাইব আপনার সাথে, ‘ কণ্ঠ বলে উঠলো।
‘ আচ্ছা। আমি “রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে যায় ” গানটা গাইতে চাইছি। আজকের আবহাওয়ার সাথে বেশ জমবে এই গানটা, ‘ আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে বললাম।
‘ ঠিক আছে নীল। আপনি শুরু করুন। সবাই চুপ করে বসুন, ‘ কণ্ঠ বলল।
আমি গাইতে শুরু করলাম,
আকাশে রিমঝিম বাদল জমেছে
তোমাকে পাওয়ার মাদল বেজেছে, কণ্ঠ গাইল।
কিছু তো শোনা যায় না (আমি)
তোমাকে ছাড়া(কণ্ঠ)
প্রকৃতি নতুন সাজে সেজেছে(আমি)
তোমার আমার দেখা হয়েছে(কণ্ঠ)
কিছু তো ভেবে পাই না(আমি)
মন যে আর মানে না(কণ্ঠ)
আমার মনের কোণে কত কথা ছিল বন্দী(আমি)
মেঘের আড়াল থেকে বৃষ্টি হয়ে পড়বি(আমি)
আমরা এক সাথে দুজনে গাইলাম,
রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে যায়
তাকিয়ে দেখো না …
তুমি আমি বৃষ্টিতে ভিজে আজ
একাকার হয়ে আমরা।
আবারো,
রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে যায়
তাকিয়ে দেখো না …
তুমি আমি বৃষ্টিতে ভিজে আজ
একাকার হয়ে আমরা।
আকাশ পানে শুধু শুধু চেয়ে রই(আমি)
তোমার আমার স্মৃতি মনে(কণ্ঠ)
তোমার সাথে প্রতিটি ক্ষণ(আমি)
কবিতার মতো ছন্দময়(কণ্ঠ)
আমি গাইলাম,
এ বুকে শুধু কথা জাগে
তোমাকে নিয়ে আজি
শুধু যে তোমায় মনে পড়ে
আমারই
আমরা দুজন একসাথে আবার গেয়ে উঠলাম,
রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে যায়
তাকিয়ে দেখো না …
তুমি আমি বৃষ্টিতে ভিজে আজ
একাকার হয়ে আমরা।
করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল গাড়ির ভেতরটা। সবার কাছে খুব ভালো লেগেছে আমাদের গান। কণ্ঠের গলা মারাত্মক রকমের সুন্দর। যতক্ষণ ওর গান শুনছিলাম যেন কোনো ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা প্রচুর আবেগ দিয়ে গান গায়। পুরো রাস্তা জুড়ে সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আমাদের গাওয়া গান। প্রশংসা শুনতে শুনতে কানের পোকা বেরিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিলো। কিন্তু কণ্ঠ গান গাওয়ার পর থেকেই চুপ। পুরো যাত্রাপথে তেমন কথা বলেনি। কি হলো মেয়েটার?
কষ্ট পেয়েছে কি?

চলবে

#নীলকণ্ঠ
#পর্ব_০৫
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
_________________
বেশ কয়েক ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছলাম। বৃষ্টির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ঘটলো। এই লম্বা জার্নি শেষে একদম ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের ২৪ জন সদস্যের মাঝে তিন দম্পতি রয়েছেন। তারা আমাদের সাথে কটেজে উঠবেন না। তারা তাদের মতো করে কোনো হোটেলে উঠবেন। এমডি স্যারের এক কাজিনের বাসা রয়েছে শ্রীমঙ্গলে তাই তিনি সেখানেই উঠবেন। বাকি রইলাম আমরা ১৭ জন। যার মাঝে ৭ জন মেয়ে আমরা এবং বাকি ১০ জন ছেলে। আমরা ৪টা কটেজে উঠব। বড় কটেজ দুটোতে ৫ জন করে ছেলে সদস্যরা এবং আমরা ৭ জন থাকব ছোট কটেজ দুটোতে। আমি, মেহেক ও শীলা একসঙ্গে থাকব। ওদের সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গিয়েছি আমি। ওরা খুব মিশুক। নীল, সাগ্রত ভাই, রাহাত ভাই, সৃজন ভাই ও শিথিল ভাই একসঙ্গে থাকবেন। এখন সময় বেলা ২টা। খুব ক্ষুধা লেগেছে আমার। আবার খুব ঘুমও পাচ্ছে। কি যে এক অস্বস্তিকর অবস্থা! ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। খাওয়া শেষে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
___________
‘ নীল আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। ‘
………………
‘ কথা বলবেন না? ‘
……………..
‘ কি হলো নীল? ‘
‘ হাহাহা ‘
‘ এভাবে হাসছেন কেন? ওইদিকে কেন যাচ্ছে? চারিদিক এমন ধোঁয়াময় হয়ে যাচ্ছে কেন? আপনার শরীরে কি হয়েছে? চামড়া এমন দেখাচ্ছে কেন? ‘
‘ হাহাহা ‘
‘ নীল কোথায় আপনি, আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না। নীল ললললল……… ‘
___________
হঠাৎ ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে সময়টা বোঝার চেষ্টা করছি। ঘড়ির কাটায় এখন সময় সন্ধ্যে ৭টার কিছু বেশি। রুমে এসি চলছে তবুও আমি দরদর করে ঘামছি। মনে হচ্ছে যেন শরীরে অবিরত পানি ঢালা হচ্ছে। খুব অস্থির লাগছে। এটা আমি কি দেখলাম? কেন দেখলাম? আবার কি কোনো ঝড় আসতে চলেছে আমার জীবনে? আচ্ছা রুমে আমি একা কেন? মেহেক, শীলা কোথায়? চার ঘণ্টা হয়ে গেছে। এতোক্ষন ঘুমিয়েছি আমি? কিন্তু হঠাৎ এমন একটা দুঃস্বপ্ন কেন দেখলাম আমি? কি বিভৎস সে স্বপ্ন? এটা কি আবার কোনো ভয়ানক বিপদের সংকেত? নিজের মনকে ধাতস্থ করলাম এটা শুধুমাত্র একটা দুঃস্বপ্ন। এর সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নীল সাহেবকে কি ভয়ানক দেখাচ্ছিল যেন তার চামড়া ঝলসে গিয়েছে আর আমার দম আটকে আসছিল। যেন এক্ষুনি রূহ বেরিয়ে যাবে। আমি ফোনটা হাতে নিলাম আর মেহেককে কল করলাম। কিন্তু আশ্চর্য! ৫ বার কল করলাম রিং হলো, ধরলো না। ভাবলাম হয়তো সাইলেন্ট করা তাই শীলাকে কল করলাম। ফলাফল শূন্য ! তাকেও ফোনে পেলাম না। তাই ফোন রেখে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রুম লক করে কটেজ থেকে বেরোলাম। রিসিপশনে গিয়ে ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘ আপনি কি জানেন আমার অফিস কলিগরা কোথায়? ‘
‘ ম্যাম তারা বেশ কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছেন। ‘
‘ সবাই গিয়েছে? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ কোথায় গিয়েছেন বলতে পারবেন? ‘
‘ না। ‘
‘ ওহ্। ‘
আমি আবার কটেজে ফিরে যেতে উদ্যত হবো ঠিক তখনই ফোনটা ভাইব্রেট করলো। নীল কলটা করেছেন। দেরি না করে কল রিসিভ করলাম,
‘ কণ্ঠ তুমি রিসিপশনেই বসো। মেহেক তোমায় নিতে আসছে। ‘
‘ কিন্তু আপনি জানলেন কি করে? ‘ বেশ অবাক হয়েই প্রশ্নটা করলাম আমি।
‘ তুমি বসে থাকো আর মেহেক যা বলে তাই করো, রাখছি আমি। ‘
‘ নীল হ্যালো, হ্যালো। ‘ ধুর কেটে দিল কলটা…! ভারী অদ্ভূত মানুষ তো…! কোথায় যাবো? কেন যাবো? আর তারা সবাই কোথায়?
চিন্তায় চিন্তায় কপালের রগ দপদপ করছে। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর মেহেক এলো। ও বলল,
‘ কি গো মহারানী…! আপনার ঘুম ভাঙলো অবশেষে? ‘
‘ হ্যাঁ তা ভেঙেছে। তবে তোমরা আমায় ডাকো নাই কেন? ‘
‘ কী বলছ তুমি? ডাকি নাই মানে? তুমি তো সাড়াই দাওনি তাই তোমাকে রেখেই আমরা একটু আশপাশ ঘুরেছি। ‘
‘ কাজটা মোটেও ভালো করোনি, ‘ খানিকটা অভিমান নিয়ে কথাটা বললাম।
‘ আচ্ছা হয়েছে। মান অভিমানের পালা এখন তোলা থাক। তাড়াতাড়ি চল আমার সাথে। ‘
‘ হুম। ‘
‘ এই কোথায় যাচ্ছো? ‘
‘ কেন তুমি না তোমার সাথে আমায় যেতে বললে…! ‘
‘ এভাবে তো যাওয়া যাবে না। ‘
‘ কেন আমার ড্রেসটা কি দেখতে ভালো না? এটা চেঞ্জ করে আসব? ‘
‘ নাহ্ ড্রেস ঠিক আছে কিন্তু তুমি চোখ খোলা রেখে যেতে পারবে না। ‘
‘ তো আমি চোখ বন্ধ করে হাটব নাকি? ‘ বেশ বিস্ময় নিয়ে প্রশ্নটা করে বসলাম।
‘ আরে বোকা আমি তোমার চোখ বেধে তোমাকে ধরে ধরে নিয়ে যাব, ‘ ঠোঁটে একটা মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে কথাটা বলল মেহেক।
আমি বিরক্তিতে ভ্রু যুগল কুচকে বললাম, ‘ কেন? আমি পারব না। ‘
মেহেক খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ নীল ভাই তোমাকে কল করে ছিল? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ কিছু বলে নাই? ‘
‘ হুম বলেছে অনেক কিছু। ‘
‘ আমার কথা শুনতে বলে নাই? ‘
‘ বলেছে কিন্তু…’
‘ কোনো কিন্তু না চুপচাপ আমার কথা শুনো। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
‘ মুখ বাকাচ্ছো কেন? তোমায় মারতে নিয়ে যাচ্ছি না। হয়ে গেছে চল। ‘
‘ শক্ত করে ধরবে কিন্তু হোচট খেলে তোমার খবর আছে। ‘
‘ হাহাহা। বেশ তবে তাই হবে। ‘
মেহেকের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছি। মনে হচ্ছে সবে হাঁটতে শিখেছি। কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি। আবার একটা বিষয়ে ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে। সামান্য এইটুকু পথ চোখ বন্ধ করে হাঁটতে কতটা কষ্ট হচ্ছে। অথচ যারা অন্ধ জন্মগত ভাবেই তাদের কষ্টের কথা মনে হলেই বুকের ভেতরে হাহাকার করে ওঠে। আল্লাহ যেন কাউকেই এই কষ্টের জীবন না দেন, এই দোয়া মনে মনে করছি। হঠাৎ পথ চলা বন্ধ হলো অর্থাৎ আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছি। চোখের বাঁধন খোলার জন্য চোখে হাত দিতে যাব তার পূর্বেই কেউ আমার হাত খপ করে ধরে ফেলল। হাতটা মেহেকের নয় তা বেশ বুঝতে পারছি। শক্ত, বলিষ্ঠ কোনো পুরুষালী হাতের ছোঁয়া পেতেই শরীর বেয়ে এক শিরশিরানি অনুভূতি যেন ছুটে গেল। আমি কম্পিত গলায় কিছু বলতে যাব তার পূর্বেই সেই হাতের মালিক আকুতির স্বরে বলে উঠল,
‘ আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর কণ্ঠ। ‘
‘ নীল আপনি? ‘ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
‘ হ্যাঁ। এসো আমার সাথে। ‘
‘ মেহেক কোথায়? ‘
‘ সামনে আছে। ‘
আচ্ছা নীল কী করতে চাইছে? উত্তরের অপেক্ষায় উত্তেজনা বেড়ে চলছে। খানিকটা হাঁটার পর আমরা থামলাম। আমি এবার উচ্চ স্বরে বলেই ফেললাম,
‘ আর কতক্ষণ এভাবে। আমি বোধহয় অন্ধ হয়ে গেলাম। ‘ কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। হঠাৎ কেউ আমার চোখে বাধা কাপড় সরিয়ে দিল। অনেকটা সময় অন্ধকারময় ছিলাম বলে আলোর সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগল। এরপর সামনে যা দেখলাম তাতে রাগে, ক্ষোভে, ক্রোধে আমার শিরায় উপশিরায় যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ঝলকানি বয়ে গেল। জীবনের সবচেয়ে ঘৃণিত, জঘন্য কিছু প্রত্যক্ষ করলাম। কপালের রগে টান অনুভূত হচ্ছে। বুকের ভেতরে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা হচ্ছে। শ্বাস নিতেও হিমশিম খাচ্ছি। বুকটা হাঁপড়ের মত উঠা নামা করছে। যেন শ্বাসকষ্টের রোগী আমি। কি অদ্ভুত না…!
_________
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here