নীলকণ্ঠ,পর্ব_০২,৩

নীলকণ্ঠ,পর্ব_০২,৩
নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
পর্ব_০২

ফ্ল্যাশব্যাক – ১৫ মাস আগে ,
আম্মু দেখো এইবারের চাকরিটা আমার হয়েই যাবে । ম্যানেজার তো সেরকমই বলল ।
আমি জানি বাবা । দেরিতে হলেও চাকরি তোর হবেই । বলেছিলাম না হতাশ হতে নেই । আল্লাহ তাঁর বান্দার দোয়া ফেলে দেননা । ঠিক সময় মতো কবুল করে নেন । তাই মনোবল হারানো যাবে না । আল্লাহ তাঁর সকল বান্দার ধৈর্যের পরিক্ষা নেন ।
জ্বী আম্মু । আমি নীলাকে গিয়ে বলি । ও খুবই খুশি হবে ।
না তুই ওকে আগেই জানাস না । কনফার্ম হওয়ার পর বলিস ।
আচ্ছা । তোমার ওষুধ খাওয়া হয়েছে না । গিয়ে একটু রেস্ট নাও । আমি টিউশনটা করিয়ে আসি ।
কয়টায় আসবি ?
রাত ৮টার মাঝেই চলে আসব ।
আচ্ছা ।
আমি সৈকত ইভান নীল । আমার বয়স ৩১ পেরোলো । পরিবারের বড় ছেলে । এখনো বিয়ে থা করিনি । আর এতোক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম তিনি আমার শ্রদ্ধেয় মা । আমার বাবা মারা গেছেন যখন আমার বয়স মাত্র ৭ বছর । আমার ছোট বোন সাগরিকা ইভান নীলার বয়স তখন মাত্র দেড় বছর । আমার মা আমাদের অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছেন । সেই সময়টাতে কেউ আমাদের পাশে ছিল না । তিনি নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে আমাদের এতো বড় করেছেন । বাবার গড়িয়ে দেয়া সব স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন । এসব ভাবলেই বুকের ভেতরটা তীব্র কষ্টে হাহাকার করে । অনেক বছর ধরে চাকরি খুঁজছি কিন্তু হয়নি কখনো । এবারেরটাই হয়তো আমার শেষ ইন্টারভিউ । তবে মনে হচ্ছে চাকরিটা হয়ে যাবে । এখন কিছু টিউশন করিয়ে সংসার চালাচ্ছি । মাস শেষে হিমশিম খেতে হয় । ছোট বোনটার সব চাওয়া পূরণ করতে পারি না , মায়ের চিকিৎসা ঠিক মতো করতে পারি না । কিন্তু নীলা বা আম্মু কখনো এসব নিয়ে কিছু বলে না । কিন্তু নিজের কাছেই কষ্ট লাগে । এই দুঃখ কি সওয়া যায় ? মাঝেমধ্যে নিজেকে সবচেয়ে হতভাগা মনে হয় । এসব ভাবতে ভাবতে স্টুডেন্ট এর বাড়ি পৌঁছে গেলাম ।
সবগুলো টিউশন শেষ করে মাত্রই বেরোলাম । এখন সাড়ে সাতটা বাজে । আজ ৩ স্টুডেন্টের বাসাতেই বেতন দিয়েছে । আম্মুর ওষুধ কিনতে হবে , আবার বাসার বাজারও করতে হবে । হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো । যেই কোম্পানিতে জবের ট্রাই করেছিলাম সেখানকার ম্যানেজারের ফোন । রিসিভ করলাম ,
হ্যালো ।
………….
জ্বী , সৈকত ইভান নীল বলছি ।
……………
কী ! সত্যি বলছেন ?
……………..
আচ্ছা কবে থেকে জয়েনিং ?
……………….
কাল থেকেই । ওকে আমি সব ডকুমেন্টস নিয়ে আসব ।
অবশেষে চাকরিটা আমার হয়েছে । কি যে খুশি লাগছে । বাসার জন্য মিষ্টি নিয়ে যাই । সব কাজ শেষে বাড়িতে পৌঁছেছি । কলিংবেল বাজালাম আম্মু দরজা খুলে বলল ,
আয় বাবা ভেতরে আয় ।
আম্মু নীলাকে ডাক ।
একি বাবা এতো বাজার করেছিস কেন ? আর মিষ্টি ! নীলা নিশ্চয়ই আবার তোর কাছে বায়না করেছে । এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারি না । ছেলেটা আমার এতো কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংসার চালায় আর ওর শুধু আবদার । এটা চাই ওটা চাই । খালি চাই আর চাই ।
আহা আম্মু কাঁদছো কেন ? আর আমি কি একটা বারও বলছি নীলা আমার কাছে বায়না করেছে ? আমার চাকরিটা হয়ে গেছে আম্মু । তাই বাজার করেছি বেশি করে আর মিষ্টি এনেছি ।
বাবা সত্যি তোর চাকরি হয়েছে ।
হ্যাঁ । এবার চোখ মোছো । নীলা কই তুই ?
এই তো আমি ভাইয়া । বলো ডাকছো কেন ?
আগে মিষ্টি মুখ কর । আমার জব হয়ে গেছেরে বোন ।
ওয়াও ভাইয়া । এতো বড় একটা নিউজ ! আমার খুব ভালো লাগছে । আমি খুব খুশি ভাইয়া ।
এবার থেকে তোর যা লাগবে সব বলবি আমায় ।
হুম ।
আম্মু তুমিও খাও । হা করো ।
আরে থাম । এইতো নিয়েছি ।
এরপর থেকে আমাদের ভালো দিন আসতে লাগল । সারাদিন অফিস আর দিন শেষে আমার পরিবারের সাথে কাটানো সময় । আমার মাসিক বেতন ৭০হাজার নির্ধারিত হয় । বেশ সাচ্ছন্দেই আমার চাকরি জীবন চলছিল । ৪ মাস পর একটা মেয়ে চাকরিতে জয়েন করে । মেয়েটা বেশ আলাদা , খুব চুপচাপ । যাকে বলে ইন্ট্রোভার্ট। কিন্তু তার নামটা যথেষ্ট সুন্দর সায়রী আজাদ কণ্ঠ । কিছুদিনের মাঝেই ওর সাথে আমার বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে । আমরা কলিগের পাশাপাশি খুব ভালো ফ্রেন্ড । ওর জীবনের ঘটনাগুলো শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । মেয়েটা এইটুকু বয়সে কতটা কষ্ট সহ্য করেছে । অফিসে একমাত্র আমার সাথেই ও অনেক কথা বলতো । তবে অনেক কথাই নিজের মাঝে লুকিয়ে যেত । অফিসে আসার পর সব ঠিকই থাকতো কিন্তু যখনই ও এমডি স্যারের রুমে যেত তখনই চুপ হয়ে যেত । জিগ্যেস করেছি অনেক কিন্তু ও কথা এড়িয়ে গেছে । আমার দেখা মতে স্যার লোকটা বেশি সুবিধার না । ওনাকে ঘিরে অনেক মেয়েঘটিত ঘটনা রটেছে । আমার মনে হয় উনি কণ্ঠের সাথেও এমন কোনো আচরণ করেন । কিন্তু ও যদি চুপ থাকে আমি তো আর স্যারের বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিতে পারব না । যতই দিন যাচ্ছে ওর প্রতি একটা আলাদা টান , মায়া অনুভব করছি । আমার ওকে খুব ভালো লাগে ইনফ্যাক্ট আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু কোনোভাবেই ওকে জানানো বা বলা হয়ে ওঠেনি।এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিন। আর আমার মনে ওর জন্য অনেক সুপ্ত অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে । মেয়েটা রোজ তার নতুন নতুন গুণে আমাকে মুগ্ধ করছে । খুব পরিশ্রমী আর কর্মঠ একটি মেয়ের জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো কণ্ঠ । এককথায় সুপার উইমেন । তবে কণ্ঠ বেশ রহস্যময়ী । ওর সব কথায় , কাজে একটা কিন্তু রয়ে যায় । ওকে বুঝতে হলে প্রচুর গবেষণা করতে হবে বলে আমার মনে হয় । মেয়েটা কারো সাথে বেশি মেশে না বা কথা বলে না । আর ছেলেদের পারোতো পক্ষে এড়িয়ে চলে । যদিও জানি ওর জীবনের ঘটনা তবুও বিষয়টি খুবই অদ্ভুত লাগে । ও কি তবে খুব বেশি ঘৃণা করে ছেলেজাতকে । আমি মাঝে মাঝে ভাবি ওর হাজব্যান্ড ওর সাথে কেন এমন করল । আজকের পৃথিবীতে ওর মতো ভদ্র , সুশ্রী মেয়েকে নিজের জীবনে পাওয়াটা কত কঠিন তাও আবার জীবন সঙ্গীনি হিসেবে । আমার খুব আফসোস হয় । আবার একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে হয় ,
আচ্ছা মানুষ কি কষ্ট দেয়ার জন্য নিজের আপনজনকেই বেছে নেয় ? অথবা কেউ কি জেনেশুনে তাকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসা মানুষটার বিশ্বাস-ভরসা ধূলিসাৎ করে দিতে পারে ?
আম্মুর ডাকে আমার ধ্যান ভাঙলো । আমি চকিত হয়ে সেইদিকে তাকালাম যেখানটায় আমার আম্মু রয়েছে ।
কি হয়েছে আম্মু ? শরীর খারাপ লাগছে ? আমায় ডাকলে যে !
না বাবা । আমি ঠিক আছি । তোর সাথে কিছু কথা ছিল ।
তুমি বলো , কথা বলার জন্য অনুমতি চাইছো কেন ?
আসলে বড় হয়েছিস তো তাই ।
আমি তোমার কাছে এখনো সেই ছোট্ট নীল ।
তা বললে কি চলবে বাবা ?
আচ্ছা কী বলবে তুমি ?
আব্বু এইবার তুই বিয়েটা করে ফেল , বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে । আমার দেখা-শোনা করেই তো জীবন পার করে দিলি । এবার অন্ততপক্ষে নিজের কথাটা ভাব ।
করব তো , সময় হলে ঠিক করবো ।
এইকথা তো বিগত ৪ বছর যাবৎ শুনিয়ে আসছিস ।
নীলার বিয়েটা দিয়ে তারপর আমিও বিয়ে করব ।
যা ভালো বুঝিস ।
আর কথা বাড়াই নি আর আম্মুও বাড়ায়নি । ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম এবং একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম ।

চলবে

#নীলকণ্ঠ
#পর্ব_০৩
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
অফিসে জয়েন করেছি দুমাস মতোন হয়েছে । এই অফিসের কারোর সাথেই আমার তেমন পরিচয় নেই আবার কথাও তেমন একটা হয় না । তবে একটা মানুষের সাথে কথা না বলে থাকতে পারিনা । সেই মানুষটি হলো নীল সাহেব । ওনার কথা-বার্তা , পারসোনালিটি সবটাই আমায় মুগ্ধ করেছে । অফিসে একমাত্র ওনার সাথেই আমি অনেক কথা বলি । অফিসে ওনার প্রচুর সুনাম রয়েছে । সবটাই ঠিক ছিল শুধুমাত্র একটি বিষয় ছাড়া । আর সেটা হলো অফিসের এমডি । ওনার কথা , চাল-চলন সবটা যেন নোংরা কিছু ইঙ্গিত করে । আমি যথেষ্ট শালীনতা বজায় রেখে চললেও উনি পারেন না আমাকে চোখ দিয়ে সম্পূর্ণ গিলে খান । এতো বাজে চাহনি ওনার । নীল সাহেব হয়তো বিষয়টা আন্দাজ করতে পারেন । সে সবসময় আমাকে অফিসে আপসেট হয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করেন কিন্তু আমিই বিষয়টা এড়িয়ে যাই । কারণ আমি চাই না আমার জন্য নীল সাহেব কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ুক । উনি মানুষটা খুব ভালো । নিজের পরিবার ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না । খুব ভালোবাসেন নিজের মা আর ছোট বোনকে । তার আলোচনার মূল বিষয় তার পরিবার । এজন্য অনেকেই বিরক্ত বোধ করলেও আমার খুব ভালো লাগে । এই দেখো এতো সব ভাবতে ভাবতেই অফিসে পৌঁছে গেছি । আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে অফিসে ঢুকতে নেব ঠিক তখন ,
কণ্ঠ ……
কারো পিছু ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম । পিছনে ঘুরে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না । আমার প্রাক্তন স্বামী ডেকেছিল আমায় । আমার ভালো থাকা হয়তো তার সহ্য হচ্ছে না । তার সাথে কথা বলার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে আমার নেই । সে হয়তো আবার আমায় অপমান করতে আমার অফিস অব্দি চলে এসেছে । আমি হাটতে শুরু করলাম আর পিছু ফিরে তাকাইনি । অনেক বার ডেকেছে আমি দাঁড়াইনি । অতি দ্রুত হাটার কারণে কেবিনে ঢোকার সময় কারোর সাথে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খেলাম । তাকিয়ে দেখি নীল সাহেব আমায় আগলে ধরেছেন নয়তো আমি পড়ে গিয়ে বড়সড় রকমের একটা আঘাত পেতাম । নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম ।
কণ্ঠ আপনি ঠিক আছেন ?
জ্বী ।
কি হয়েছে আপনার ? এমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে ?
আসলে কাজের একটু প্রেসার যাচ্ছে তো তাই হয়তো টায়ার্ড দেখাচ্ছে ।
ওহ আচ্ছা ।
আমি আমার ডেস্কে যাচ্ছি নীল সাহেব ।
হ্যাঁ , নিশ্চয়ই ।
তারপর আমি আমার ডেস্কে চলে এলাম । নীল সাহেব আমার সামান্য অন্যমনস্কতাও খুব সহজেই ধরে ফেলেন । মানুষটাকে যতো দেখছি ততো মুগ্ধতায় ছেয়ে যাচ্ছি । কাজে মনোনিবেশের চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই পারছি না । আজকে কেন রাহাত এসেছিল । আমার জীবনে আবার কী অঘটন ঘটাতে চায় ও । আমায় ছেড়ে তো ও ওর নতুন বউকে নিয়ে সুখেই আছে । আজ এতোবছর পর আমাকে দেখা দেয়ার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে ?
কিছুক্ষণ পর ,
মিস কণ্ঠ আপনাকে এমডি স্যার ডাকছেন ।
জ্বী আপনি যান আমি আসছি ।
স্যার আসবো ।
আসুন মিস কণ্ঠ ।
কোনো দরকার ছিলো স্যার ?
কেন তোমায় কি সবসময় দরকারের জন্যই ডাকতে হবে ? এমনি কি তোমায় আমি ডাকতে পারি না ?
আসলে স্যার ঠিক তা নয় , আপনি ডেকেছেন তো তাই কারণ জিজ্ঞেস করলাম । কিছু মনে করবেন না প্লিজ ।
করবো না তবে একটা শর্তে ।
কি ?
আজকে আমার সাথে বাইরে লাঞ্চ করতে হবে ।
মাফ করবেন আমি বাইরের খাবার খাই না । আমি আসছি স্যার ।
আরে মিস কণ্ঠ ! আমার কথাটা তো শুনে যান ।
কোনো কথা না বলেই আমি স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম । ওনাকে ভালো করেই চিনেছি এই দুমাসে । আজ কফি , কাল লাঞ্চ , পরশু ডিনার । আর যতক্ষণ ওনার সামনে ছিলাম মাথা থেকে পা অব্দি না হয় হাজারো বার স্ক্যান করেছে । অসভ্য লোক কোথাকার ! তারপর আমার ডেস্কে বসে আবার কাজ শুরু করলাম ।
লাঞ্চের সময় ,
ব্যাস্ত নাকি ?
আরে নীল । নাহ , কিছু বলবেন ?
সবাই লাঞ্চ ব্রেকে আর আপনি এখনো কাজ করছেন ? খেয়ে নেবেন চলুন ।
আমি বাসা থেকেই এনেছি । আপনি বরং আজ আমার সাথে লাঞ্চ শেয়ার করুন ।
আমিও এনেছি । আচ্ছা একটু অপেক্ষা করুন কণ্ঠ । আমি আসছি ।
আচ্ছা ।
কিছু সময় পর ,
এইতো চলে এসেছি । আমি আজ এই চার রকমের ভর্তা আর আচার সাথে খুদের ভাত এনেছি ।
আরে এই সবতো আমার পছন্দের খাবার । আপনি বরং আপনার বক্স আমায় দিয়ে দিন । আমার বক্সটা আপনি নিন ।
আরে বিরিয়ানী যে । আমার অনেক পছন্দের । আপনার হাতের রান্না ?
জ্বী । আচ্ছা খাওয়া শুরু করুন ।
হ্যাঁ অবশ্যই । আপনিও করুন ।
অনেক মজা হয়েছে । বেশ কিছুদিন পর এতো মজার খাবার খাওয়ার সুযোগ হলো । আপনাকে ধন্যবাদ নীল । আচ্ছা এই রান্নাগুলো কে করেছেন ?
আজকের রান্নাগুলো তো খুব সহজ ছিল তাই আমিই করেছি । আম্মু তো অসুস্থ আর নীলার পরীক্ষা চলছে । আপনার হাতের রান্না কিন্তু অসাধারণ । অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছি ।
আজকে নীলের সাথে অনেক কথা বলেছি । উনি অবশ্য আমাকে সকালের কথা আবার জিজ্ঞেস করেছিলেন কিন্তু আমি বরাবরের মতো এড়িয়ে গিয়েছি । আগামী সপ্তাহে অফিস থেকে একটা ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে । কারণ বেশ অনেক দিন যাব্ৎ কাজের প্রচুর চাপ ছিল । সকলেই ক্লান্ত তাই সকলকে চাঙা করতেই এই উদ্যোগ । আমি অবশ্য যেতে চাইছিলাম না কিন্তু নীলের অনুরোধ ফেলতে পারিনি । মানুষটা খুব ভালো , যতটা দেখছি ততটা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছি । আমি যেন তার খুব আপন কেউ , আমায় নিয়ে তার চিন্তার যেন অন্ত নেই । এখন বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে । গ্রীষ্মের তীব্র উত্তাপে এই কয়টাদিন প্রকৃতি পুড়েছে । আজকের বৃষ্টি যেন শান্তির বর্ষণ হয়ে নেমেছে যা প্রকৃতির পাশাপাশি প্রতিটি হৃদয় শীতল করে দিচ্ছে । অনেক রাত হয়ে পরেছে রাতের খাবার আম্মুকে সাথে নিয়ে খেয়ে নেই আবার সকালে অফিস আছে । খেতে ইচ্ছে করছে না তবুও খেতে হবে নতুবা আমার শ্রদ্ধেয় জননী খাবেন না । আর রাতে তার অনেকগুলো ঔষধ আছে । অগত্যা খেতে যেতেই হবে ।
আম্মু এসো তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবে তো নাকি ?
তুই খেয়েছিস ?
না তোমার সাথে খাবো , আর কথা না বলে বসো দেখি ।
হুম ।
খাবার খাওয়া শেষে বারান্দায় এসে বসলাম । দেখলাম আমার ফোন বাজছে । নীল ফোন করেছেন , রিসিভ করলাম ।
কোনো দরকার নীল ?
কোনো দরকার ছাড়া বুঝি আপনাকে কল করতে পারি না কণ্ঠ ?
ঠিক তা নয় । অনেক রাত হয়েছে তো ! তাই ভেবেছিলাম হয়তো কোনো দরকার ।
খেয়েছেন ?
জ্বী আপনি ?
হুম , আসলে ঘুম আসছিল না তাই আপনাকে কল করলাম ।
সমস্যা নেই ।
এভাবে অনেকটা সময় নীলের সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিলাম । কথায় কথায় রাত ১টা পার হয়ে গিয়েছিল । তারপর ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম । তবে অনেক দিন পর এভাবে কারো সাথে মন খুলে কথা বলে নিজেকে বেশ হালকা লাগছে ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here