বর্ষার এক রাতে,পর্ব-১৪,১৫

বর্ষার এক রাতে,পর্ব-১৪,১৫
সাদিয়া
১৪

না দেখা সেই মানুষটা তাকে নিয়ে উপরে চলে গেল। ছাদ থেকে কি ফেলে দিবে? কিন্তু চাঁপ গুলি খুব ব্যথা করছে তার। মনে হচ্ছে গলায় এখনি ডেবে যাবে।

ছাদে নিয়ে গিয়ে লোকটা তার মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিল। সে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ল। প্রাণ ভরে আগে শ্বাস টেনে নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল
“কে কে আপনি?”
“….
“কে আপনি?”
ছুরির শক্ত চাঁপ গলায় পেল আবারো। চুপ হয়ে গেল তূবা। কি করবে এবার তা মাথায় আসছে না। লোকটা পিছন থেকে তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিল। হঠাৎ সামনে কিছু আলো ফুটে উঠল। সেই আলো আস্তেআস্তে বড় হয়ে দৃশ্যমান হতে লাগল।

“তূবা কে আহফিন বিয়ে করতে চায়। তূবা কি রাজি? এখনি যেন জবাব দেয়। নয়তো মেরে ফেলব আহফিন দ্বারা।”
আলোর মাঝে এমন একটা লেখা দেখে থমকে যায় তূবা। আচমকা তাকায় পিছনে। তখনো আবছা দেখছিল লোকটা কে। হঠাৎ আলো চলে এলে আহফিন কে দেখতে পেল তূবা। একটু আগের ভয় আর রাগ এক সাথে মিশে বাজে একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার। তূবা আহফিনের বুকে ধাক্কা মারে প্রচন্ড জোরে। তূবার চোখ টলমল করছে পানি তে। আহফিন তার ধাক্কা খেয়ে গিয়ে নিচে পড়ল ধপ করে। কিছু বলতে যাবে তার আগে দেখল তূবার ওমন চোখ। আহফিন ফিক করে হাসি মারল। তার এমন হাসি দেখে তূবার শরীর আরো জ্বলে উঠল। সে গিয়ে আহফিন কে টেনে তুলল। রাগে কিল ঘুষি দিতে দিতে ফুঁপিয়ে উঠল তূবা। আহফিন তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেও তূবা দিচ্ছে না। পাখির ডানা ঝাপটানোর মতো ছটফট করছে।

“আচ্ছা সরি সরি।”
“….
“সরি তো তূবা।”
“…
“এই দেখো সরি।”
আহফিন কান ধরে উঠবস করতে লাগল। তাতেও কাজ হলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তূবা। আহফিন আবার এগিয়ে গেল তূবার কাছে। বাহু ধরতেই ছিটকে সরিয়ে দিল তার হাত। বিড়বিড় করে আহফিন বলে উঠল “হায় গারমি।”
তূবা কপাল কুঁচকে রাগি চোখে তাকাল তার দিকে। আহফিন আবার বলল
“ইশশ ভয় পাইছি।”
“…
“আচ্ছা সরি তো প্রিয়তমা।”
“একদম ধরবেন না আমায়।”
“তোমাকে ধরব না তো কাকে ধরব?”
“যাকে ইচ্ছা তাকে ধরুন গিয়ে।”
“সত্যি তো?”
“…
“গেলাম তবে।”
তূবা লম্বা টানে শব্দ তুলে কাঁদতে শুরু করল। আহফিন বলল “আমার প্রেয়সী দেখি খুব রাগ করতে জানে। আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছে তো আমার। একটু মজা করতে গিয়ে এমন হবে জানলে কে করতাম বলো তো? এমন ভুল আর হবে না প্রিয়তমা।”
“এটা কে ভুল বলে? ভয়ে যদি মরে যেতাম?”
“আমি তো অন্যরকম সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”
“এমন সারপ্রাইজ নিয়ে আপনি বসে থাকেন। আমার এত অদ্ভুত সারপ্রাইজের দরকার নেই।”

তূবা চলে যেতে চাইল। আহফিন তার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো তাকে। কোমর টেনে আরো কাছে আনল তূবা কে।
“দেখুন একদম ভালো হবে না। ছাড়ুন।”
“ধরতেই এমন বলছো কেন? কি ভাবছো কিছু করব তোমায়?”
“স.সরুন তো।”
তূবা যেতে চাইলেও নড়তে পারল না মানুষটার জন্যে। আহফিনের মুখে দুষ্ট হাসির আভাস।

আহফিন তূবার দুই গালের পাশে হাত রেখে তূবার চোখের দিকে তাকাল। মুচকি হেসে তার ঠোঁটজোড়া একেবারে নিজের দখলে নিয়ে এলো। না তূবা বাঁধা দিল। আর না সে বাঁধা দিতে চায়। মানুষটার স্পর্শ তাকে সর্বোচ্ছ সুখ দেয়।

একটু পর তূবা কে ছেড়ে দিলে লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে আনল।
“তোমার লজ্জার আঁচ আজীবনেও না কমুক। এত লজ্জা পাও কেন তূবা? বুঝতে পারো না তোমার লজ্জা মাখা মুখটা দেখলে ইচ্ছা করে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখি তোমায়।”
তূবা তাকে জড়িয়ে ধরল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আহফিন তার মাথায় গভীর চুমু দিয়ে আকাশপানে তাকাল।

“তূবা কিন্তু এখনো উত্তর দেয় নি।”
“কিসের?”
“সে রাজি কি না।”
“..
“তূবা কি রাজি?”
“না আপনার মতো মানুষ কে বিয়ে না করাই ভালো। করব না বিয়ে। কি করবেন মেরে ফেলবেন?”
“আহফিনের ভয়ংকর ভালোবাসা তোমাকে ঝলসে দিতেও জানে তূবা। মৃত্যুর চেয়ে কম নয় তা। কিন্তু তুমি আমায় বিয়ে করবে তোমার ঘাড়ও করবে। না করলে জোর করে করব। হাত পা বেঁধে করব।”
“উমম বললেই হলো?”
“আলবাত হলো।”
“মুটেও না।”
“দেখতে চাও?”
“দেখান।”
“তুমি না চাইলে কি আমি তোমার ভেতরে ঢুকে কবুল বলাব?”
তূবা ফিক করে হেসে উঠল তার এই কথায়।

“আমি যখন থাকব না তখন বুঝবে। কাঁদবেও তখন।”
চোখ মুখ শক্ত করে তূবা আহফিনের দিকে তাকাল। আহফিনও ঠোঁট উল্টে অভিমানী ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য পাশে। তূবা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বুকের গভীরে ঢুকার চেষ্টা করে বলল “আমার সমস্ত মন প্রাণ আর জীবন জুরে একটাই নাম আছে। আহফিন আহফিন শুধু আহফিন। সে চলে গেলে কি আমি নিস্ব হয়ে যাবো না?”
আহফিন মুচকি হেসে তূবার চুল এলোমেলো করে দিল। বুকে এখন শান্তির জোয়ার বয়।

বিয়ের তোরজোড় করে দিয়েছে আহফিন। তূবার বাসায় একগাদা মিষ্টি ফল আরো অনেক রকম খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে সে। তূবা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
শিরিন বেগম কিছুই বুঝতে পারছেন না। বড় করে অবাক চোখ করে সে সবকিছু দেখছেন তিনি। তূবা কিছু জানায়নি। আহফিন বলল,
“আন্টি আমি তূবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। তাকে আমার খুব পছন্দ। এখন আপনার অনুমতি হলেই ফরজ কাজ সেরে নিব।”
“….

শিরিন বেগম একবার আহফিনের দিকে তাকালেন। অন্যবার তূবার দিকে। তিনি হতবাক।
“আন্টি আমি তূবার ব্যাপারে সব টা জানি এ নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। সে আমার কাছে সুখেই থাকবে ইনশাল্লাহ।”
“বাবা আমি কি কইতাম বুঝবার পারতাছি না।”
“….
“তোমরা দুইজন যহন দুইজনরে পছন্দ করো এইনে আমি কি কইতাম? তুমি বাবা দেখতে মাশাল্লা একটা চান্দের টুকরা। তূবার আব্বা মইরা যাওনের পর থেইকা আমরার দুর্দশা দেহনের মতো কেউ নাই।” বলে কেঁদে উঠলেন তিনি।
আহফিন তূবার দিকে তাকিয়ে আবার শিরিন বেগমের দিকে তাকাল।
বলল “চিন্তা করবেন না আজ থেকে এটা আমারও পরিবার। আমি আপনাদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করব।”

আহফিন কে বসিয়ে শিরিন বেগম খুব যত্নে রান্নাবান্না করে খাওয়ালেন। উনার বড় শখ ছিল একটা ছেলের কিন্তু আল্লাহ দেন নি। দিলে হয়তো জীবন অন্যরকমও হতে পারত।
আহফিন মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে তূবার বিয়ের জন্যে কিনাকাটা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ভেবেই মনে উল্লাস হচ্ছে তার।

—–
এদিকে ডাক্তার বলে দিয়েছে তুসির অপারেশন আর কিছুদিন পর করতে হবে। বড়জোর একমাস সময়। এবার হয়তো তুসি হাটতে পারবে। জন্ম থেকেই তুসি হাটতে পারে না। অথচ তার কত ইচ্ছা নিজের বোনের সাথে দৌড়ে বেড়াবে।

“এবার তুসি হাটতে পারবে দৌড়াতে পারবে। কি বলো তুসি?”
ঘাড় কাত করে তূসি আহফিন কে দেখল। পাশ থেকে তূবাও বলল “আমি আর তুসি একসাথে হাটব দৌড়াব। আর আপনি ভিডিও করবেন।”
“হ্যাঁ দুজনে তো আমাকে কামলা পেয়েছো।”
“কি বললেন?”
“কিছু না রানিসাহেবা। জো হুকুম।”
আহফিন আর তূবার কথায় তুসি হেসে উঠল। তবে মনে মনে কেন যেন শান্তি লাগছে না তার। ‘কি হবে কি হবে’ ভাবনাটা তাকে অস্থির করে তুলেছে। সত্যিই জীবনে হাটাট স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে তো? মনের খজখজানিটা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে। এমন খবর শুনেও মনের তৃপ্তি টা সে পাচ্ছে না। ভেতরে ভয় তাকে কুড়ছে কিন্তু তূবা কে তা বুঝতে না দেওয়ার চেষ্ট করে যাচ্ছে। তুসি সবটা উপরওয়ালার উপর ছেড়ে দিয়েছে এখন।

—-
এখনো তূবা কে আহফিনের বাসায় যেতে হয়। এক প্রকার বাধ্য হয়েই যেতে হয়। নয়তো আহফিন রাগ করে বসে থাকে। তূবা কত করে বলল ‘আর কিছুদিন পর বিয়েই হয়ে যাবে। এখন না আসাই ভালো।’ কে শুনে কার কথা? তারপরও যেতেই হয় তূবা কে। তূবার প্রতিদিন গিয়ে রান্না করে নিজ হাতে আহফিন কে খায়িয়ে দেয়। আহফিন যখন নামাজ পড়ে দূরে বসে তূবা তাকিয়ে থাকে। রাত হলে আহফিনের বুকে চুপটি মেরে শুয়ে ঘুমাতে হয়। এই যা তূবার কাজ। আহফিনের বক্তব্য,
“আমার বাজে অভ্যাস গুলি তো তুমি করেছো। এখন তোমার হাতে না খেলে তো আমার পেটই বড়ে না। বুকে না শুলে কেমন খালি খালি আর হাল্কা লাগে। মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় আর দামী সম্পদ টাই তো আমার মাঝে নেই। ঘুম হয় না যে তখন। এই অভ্যাস যেহেতু তুমি করিয়েছো একটু কষ্ট তো এবার করতেই হবে প্রিয়।”
আহফিনের কথায় খিল খিল করে হেসে উঠে তূবা। আর ওই মুক্তঝড়া হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় তূবার প্রেমে একঅন্ধ পুরুষ।

চলবে♥

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া

১৫
সেদিন সন্ধ্যায় তূবা আহফিনের বাড়ির দিকে রওনা দিল। প্রতিদিন বিকেল বেলাতেই চলে যায়। আজ একটু বের হতে দেরি হয়ে গেল। দেরি হলেও তাকে বের হতে হয়েছে। না হলে লোকটা খাবেও না আর সারারাত না ঘুমিয়ে তাকে ফোনের ওপাড় থেকে রাগ ঝাড়বে। তাই তূবা বের হয়েছে।

যেতে যেতে হঠাৎ সে জোরে ধাক্কা খেলো। শক্ত কিছুর সাথে মাথাটা লেগে বেশ ব্যথা পেয়েছে। রাগে ব্যথায় তূবা যেই মাথা তুলে কিছু বলতে যাবে তখনি চমকে উঠল। আবার রনি? আবার কোন বিপদ নিয়ে হাজির হয়েছে সে? চোখ মুখের অবস্থা স্বাভাবিক নয়। চিকন শ্যামলা শরীরের গলার হাড্ডির সাথে লেগে কপালে ব্যথা পেয়েছে তূবা। ইতিমধ্যে সুপারি আকার ধারনও করে ফেলেছে। তূবা মাথা থেকে হাত সরিয়ে মুখে কঠিন ভাব নিয়ে এলো। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় রনিও সেই রাস্তায় আটকে দাঁড়িয়েছে। তূবা শক্ত গলায় বলল
“পথে আটকে দাঁড়িয়েছিস কেন?”

“…

“রাস্তা ছাড়।”

“বিয়া করবি নাকি?”

“….

“যদি হইতে না দেই?”
আৎকে উঠল তূবার বুক। রনি এমনটা করবেই হয়তো। ভয়ে তূবার বুক চিপা দিল।

“কিরে যদি তোর বিয়া আমি হইতে না দেই? ওই বড়লোক সাহেব কে যদি মাইরা ফালাই? তহন? তহন কি করবি রে তূবা?”
ভয়ে তূবার হাত পা কাঁপা শুরু করে দিয়েছে। ভেতরে ভয় শিরায় শিরায় দৌড়াচ্ছে। দম টা আটকে আসছে রনির কথা শুনে। শ্বাস নিতেও সময় নিচ্ছে।

“ভয় পাইছোস?”

“….

“ভয় পাইছ না রে তূবা। তোর আর তোর হবু জামাইয়ের আমি কিছু করতাম না। তুই তো ওই বড়লোক ছেরার সাথে সুখে শান্তিতে আরামে থাকতে পারবি। আর আমি? আমি তোরে তো কিছুই দিতে পারতাম না রে। তাই আমার ভাগ্যও নাই তোরে নিজের কাছে রাহনের। তোর শান্তিই আমার শান্তি রে তূবা। তুই সুখে থাক। ভুল তো আমি আগেই করছিলাম। নিজেই নিজের কপাল খাইছি ছোডুবেলায়। বড় হয়ে তোরে হারাইলাম নিজের দোষে। তুই আমার কপালে আছিলি না রে। তোর কোনো ক্ষতি আমি করতাম না। তোরে আর বিরক্তও করতাম না রে তূবা। তুই ভালো থাক। আমার ভালোবাসা ভালো থাক এইডাই চাই আমি। আমার ভিতরের আগুন আর ভালোবাসা আমার ভিতরে লুকাইন্না থাক। তুই ভালো থাক তূবা তুই ভালো থাক।”
মুখে তাচ্ছিল্যের কষ্ট জর্জরিত হাসি আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পরছে পানি। এই প্রথম রনি কে দেখে তূবার মায়া হচ্ছে। মন টা কেমন অস্থির লাগছে রনির জন্যে। নিজের অজান্তে তূবার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। এক চোখের পানি টুপ করে পড়তেই তূবা অন্য চোখের পানি আড়াল করে নিল।

“আমার জীবনডা আইজ সার্থক হইলো রে তূবা। আমার লাইগা তোর চোখের এই দুই ফোঁডা পানি আমার জীবন ডা পূর্ণ কইরা দিছে। তোর এই দুই ফোঁডা চোখের পানি আর এই মুখ মনে কইরা দিন পাড় করতে পারবাম আমি। তূবা শুধু তোর লাইগা আমার বুক টা সারাডাক্ষণ জ্বলব রে তূবা।” কথাটা শেষ করেই রনি বাচ্চাদের মতো ঢুকরে কেঁদে উঠল। তূবা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ভেতরে খুব কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার জন্যে। চোখ বারবার ভরে আসছে। হঠাৎ তার চোখ গেল রনির বুকের দিকে। চিড়া দাগ। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। তূবা কেন যেন সহ্য করতে পারল না। দৌড়ে সামনে চলে গেল। কিছু পথ এগিয়ে থমকে দাঁড়াল। পিছন ফিরল আবার। রনি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তূবা আর নিতে পারল না এই দৃশ্য। বুকটা ব্যথায় টনটন করছে। রনির জন্যে চোখের পানি গুলি আর আটকে রাখতে পারছে না। ভেতরটা জ্বলছে খুব কষ্ট লাগছে। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তূবা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করল। বড্ড পুড়ছে মনটা রনির জন্যে!

কলিংবেলের আওয়াজে আহফিন যখন দরজা খুলল তখন তূবা কে জিজ্ঞেস করল
“আসতে এত দেরি হলো যে?”

“….

“তূবা?”
তূবা কে ভাবান্তর না দেখে আহফিন তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে এলো। তূবার চোখ মুখ ফোলা দেখেও আহফিন সাথে সাথে কিছু জিজ্ঞেস করল না। তাকে সোফায় বসিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।

“তূবা পানিটা খাও?”
আহফিনের কথায় তূবা তাকাল। চুপচাপ পানির গ্লাস টা নিয়ে অল্প পানি খেয়ে রেখে আবার আহফিনের দিকে তাকাল। আহফিনের চোখে তূবার কপালে ফোলা টা দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল “তোমার কপালে কি হয়েছে তূবা?”

“কিছু না।”

“তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?”

“কি লুকাতে যাবো? আপনি বসুন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে এসে রান্না বসাচ্ছি।”

“….

আহফিন তাকে আর কিছু বলে বিরক্ত করল না। কিন্তু হঠাৎ তূবার এমন ব্যবহার তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। কপাল কুঁচকে চিন্তিত মুখে থম মেরে বসে রইল আহফিন।

এদিকে তূবা ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে। আল্লাহ কি এমন দিল তার মাঝে যার কারণে একটা ছেলের এতটা কষ্ট নিতে হচ্ছে? রনির জীবন টা শেষ বললেই চলে আর অন্যদিকে তার প্রেমে একজন মাতাল। একটু ছাড়লেই মনে হয় অস্থির হয়ে উঠে। এই মুহূর্তে আহফিনের কথা তেমন না মনে পরলেও রনির কথা বড্ড মনে হচ্ছে। ছেলেটার জীবন শেষের মূল দায়ী কি সে? হয়তো সে নয়তো তার ভাগ্য। কিন্তু রনির জন্যে মনে টান লাগছে তার। এটাই বা কেন হচ্ছে? ওর ওই কষ্ট ভরা বুক মুখ দেখে নাকি অন্য কারণ? এত চিন্তায় তূবার মাথা চিনচিন করা শুরু করে দিয়েছে। ওমনি দরজায় টোকা পরল।
“তূবা তূবা। কি হলো? এতক্ষণ ধরে ওয়াশরুমে আছো। সব ঠিক আছে তো?”

তূবা কোনো জবাব দিল না। আহফিন আবার গলা ছেড়ে ডাকতে লাগল তাকে। তূবা বেসিনে হাল্কা ঝুঁকে মুখে পানির ঝাপটা দিল। চোখ মুখ বেয়ে সব পানির দলা বেয়ে নিচে নামতে লাগল। আহফিন ওখনো দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকছে তাকে। জবাবে সে বলল “কিছু হয় নি আমার। আসছি।”

মিনিট কয়েক পর তূবা বের হয়ে দেখতে পেল আহফিন সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তূবা তার পাশে এসে বসল।
“কি হয়েছে আপনার?”

“আমার কিছু হয়নি তূবা। তোমার কি হয়েছে সেটাই ভাবছি আমি।”

“আমার কিছু হয়নি আহফিন। আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।”

“সত্যি কিছু হয়নি তো?”

আহফিন কে মিথ্যে বলতে তূবার ভালো লাগছে না। তবুও মুখ ফুটে বলল “না।” আহফিন তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল। অনেক শক্ত হাতে ধরেছে তূবা কে। তূবা বুঝল না কিছু কিন্তু মুখে হাসি ফুটে উঠল। মনটা স্বস্তিও পাচ্ছে।

রান্না করার সময় হুট করে আহফিন এসে তূবার কোমর জড়িয়ে ধরল।
“আরে কি করছেন কি আপনি?”

“তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না।”
তূবার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে আবার বলল “জানো তূবা মুভিতে আর রোমান্টিক ভিডিও তে যখন দেখি হিরোরা এভাবে জড়িয়ে ধরে বউ কে তখন খুব আনন্দ হয়। এটা বাস্তবে একটু অনুভব করার জন্যেই ছুটে এলাম। জানো ভেতরে কতশত অনুভূতি খেলা করতে থাকে? আসলেই তো দারুণ একটা স্টেপ এটা।”

“ছাড়ুন তো ছাড়ুন। তরকারি পুরে যাবে। আর আমি কিন্তু আপনার বউ হইনি এখনো। না আপনি কোনো হিরো আর না আমি কোনো হিরোইন।”

আহফিন তূবার হাত খোঁপায় নাক ডুবিয়ে দিতে দিতে বলল,
“হিরো না হই তাই বলে যে এটা করা যাবে না এমন কোনো কথা আছে? মাঝে মাঝে বাস্তবেও কিছু স্টেপ নিয়ে ফিলিংস টা অনুভব করতে হয়। এতে ভালোবাসাও বাড়ে আর অনুভূতিও। এখন থেকে রোজ এভাবে এসে একবার জড়িয়ে ধরব।”

“আমি আপনায় খুন্তি দিয়ে দিব। ছাড়ুন। সত্যিই তরকারিটা লেগে যাচ্ছে।”

আহফিন তূবার নরম গালে চুমু দিয়ে চলে গেল। তূবা এক গাল হেসে আহফিনের দিকে তাকিয়ে রইল। যতই না করুক হাজার খানিক ভালোলাগা কাজ করেছে এতে। সব কথা যে সবসময় বলে দিতে হয় এমন কোনো কথা নেই। কিছু অনুভূতি এভাবেই অনুভব করে নিতে হয় চুপিসারে। তূবা আবারো মুচকি হাসল।

রাতে খাবার শেষ করে তূবা ব্যালকুনিতে এসে দাঁড়াল। পিছন থেকে আহফিন এসে তার ঘাড়ের চুল সরিয়ে দিয়ে সেখানে থুতনি রাখল। আর জিজ্ঞেস করল
“কি ভাবা হচ্ছে?”

“…..

“তূবা?”

“হ্যাঁ।”

“কি হয়েছে তোমার?”

“কই কিছু না তো।”

“মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও বলো তো।”

“….

“আবার?”

আহফিন তূবা কে নিজের দিকে ফিরাল। গালে হাত রাখতেই তূবা কপাল কুঁচকে নিল।
“কি হয়েছে বলো তো তূবা? অন্তত একটু আলতো করে জড়িয়ে তো ধরতে পারো?”

হঠাৎ করে তূবা বলে উঠল
“আমাদের বিয়ে কবে?”

“….

“কি হলো?”

“তুমি এটা নিয়ে চিন্তিত?”

“….

“আরে তুমি বললে কাল কেই বিয়ে করে নিব। এটা নিয়ে এত চিন্তা? দূর পাগলি?”

আহফিন তূবা কে জড়িয়ে ধরল মুচকি হেসে। তূবা তার হাত ছাড়িয়ে যেতে যেতে বলে গেল “ঘুম পেয়েছে রাতও হয়েছে ঘুমিয়ে পুড়ুন এসে।”
আহফিন স্তব্ধ হয়ে তূবার কান্ড দেখল পিছন ফিরে। সে এখন খুবি চিন্তিত তূবা কে নিয়ে। হঠাৎ কি হলো তূবার?

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here