কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়,২৫তম_পর্ব,২৬তম_পর্ব
মুশফিকা রহমান মৈথি
২৫তম_পর্ব
ধারা আর কিছুই বলতে পারলো না, তার আগেই তার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে দখল করে নিলো অনল। আকর্ষিক ঘটনায় মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যায় ধারার। উষ্ণ ছোয়ার আবেশের চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে তার। হৃদস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে চলেছে ধারার। শিরদাঁড়ায় যেনো উষ্ণ রক্তের প্রবাহ ছুটে যাচ্ছে। অনল তার অতৃপ্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটাতে ব্যস্ত। সময়টা থেমে গেলে হয়তো মন্দ হতো না। দুজন দুজনের আবেশে কত সময় ছিলো তারা নিজেরাও জানে না। যখন অনলের ঠোঁটের কবল থেকে মুক্তি পেলো তখন চোখজোড়া আর তুলতে পারছিলো না ধারা। রাগ তো দূরের কথা, মুখ থেকে স্বর অবধি বের হচ্ছে না তার। মাটির দিকে চোখ রেখে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো। বুকের ভেতর যেনো কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে ধারার৷ গাল দুটো টমেটোর ন্যায় লাল হয়ে আছে। ধারা লাজে রাঙা মুখটা যেনো অনলের আরো বেশি ভালো লাগছে। বাঁকা হাসি দিয়ে দুষ্টুমির স্বরে বলে,
– বড্ড বেশি বকিস তুই, এতো বকলে তো মুখ ব্যাথা হয়ে যাবে। অবশ্য এভাবে মুখ বন্ধ করতে আমার আপত্তি নেই। একচ্যুয়ালি ইট উড বি বেটার ফর মি। প্রতিবার তোর নরম ঠোঁটজোড়ার স্বাদ নিতে পারবো।
– অসভ্য পুরুষমানুষ
– হাহাহা
গগণবিদারী হাসি দিয়ে আলতো হাতে ধারার লাজের রাঙা মুখটা তুলে ধরে অনল। কপালে উষ্ণ পরশ একে ধীর স্বরে বলে,
– আর কখনো এমন ভুল হবে না। এই প্রথম আর এই শেষ। কি করবো বল, আমি তো জানতাম না তুই আমাকে ভালোবাসিস। তোকে আটকে রাখার সাহস করে উঠতে পারি নি।
– কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি। একদম ভালোবাসি না তোমায়।
অভিমানী গলায় ধারা কথাটা বলে। অনল ও নাছোড়বান্দা আজ ধারার মুখ থেকে তার মনের কথাটা বের করবেই। আরেকটু কাছে এসে ধীর গলায় বলে,
– তাহলে দিগন্তকে ফিরিয়ে দিলি কেনো?
– এম…এমনি, ও যা করেছে তার পরে ওর কাছে ফিরে যাওয়া মানে নিজের আত্নসম্মানের জলাঞ্জলি দেওয়া। তাই
– আর দিগন্ত যে বললো, তুই নাকি ওকে বলেছিস, তুই আমাকে ভালোবাসিস।
– ও.. ওতো এমনি
– সত্যি?
– হু
অনলের গরম নিঃশ্বাস ধারার মুখমন্ডলে আছড়ে পড়ছে। কথাগুলো সব গলাতেই আটকে যাচ্ছে ধারার। নিঃশ্বাস ক্রমান্বয়ে ভারী হয়ে যাচ্ছে। মুচকি হাসি দিয়ে অনল তখন বললো,
– থাক তোর আমাকে ভালোবাসা লাগবে না। আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুজনের জন্য যথেষ্ট। তোর মতো কিপটার ভালোবাসা দিয়ে কাজ নেই। হাহ। একবার ভুল করেছি বলে যে প্রতিবার করবো তার তো মানে নেই। এই যে তোকে আটকে রেখেছি সারাটাজীবন এভাবে আমার সাথে বেধে রাখবো। তুই এখন থেকে চাইলেও ছাড়া পাবি না। আমার কাছেই তোকে থাকতে হবে।
– তাহলে ফিরিয়ে দিচ্ছিলে কেনো?
– আমি দ্বিধাতে ছিলাম ধারা
– আমি কি স্ত্রী হিসেবে এতোটা অযোগ্য যে আমাকে কিছুই বলা যায় না?
– এটাই তো ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে। এই কান ধরছি।
বলে কানে হাত দেয় অনল। অনলের চোখের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো ধারা,
– ভালোবাসো আমাকে?
– খুব, তোকে হারাবার যন্ত্রণা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তোকে কতোটা ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি
অজান্তেই চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো ধারার। সুখগুলো এভাবে হাতছানি দিবে সেটা যেনো কল্পনার বাহিরে। কাঁপা স্বরে অশ্রুসিক্ত চোখে বলে সে,
– আমার মতো কলঙ্কিনী তোমাকে কিছুই দিতে পারবে না অনল ভাই। যখন আমার কাছে আসবে
– আমি তোর শরীরকে ভালোবাসি নি ধারা। আচ্ছা, একটা কথা বলতো আমি যদি কোনো বিধবা বা ডিভোর্সী কাউকে বিয়ে করতাম তবে এটাই হয়তো তাই না? ভালোবাসাটা কখনোই অন্যায় না, অন্যায়টা ভালোবাসার নামে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাটা। ভালোবাসা মানে কখনোই শারীরিক সম্পর্ক নয় ধারা। তোরা মেয়েরা এতোটা বোকা কেনো হোস বলতো? অবশ্য এটা তোদের দোষ না। মানুষ তো জীবন দিয়েও ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী করতে চায়। সেখানে শরীর তো তুচ্ছ। তোর বয়স অল্প তাই আবেগের বশে ভুল করে ফেলেছিস। আর আমি তো তোর অতীত জেনে, আমার প্রিন্সেসকে মেনেই তোকে ভালোবেসেছি। তাহলের অতীতের তেতোটুকু বাদ দিয়ে আমরা আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎটাকে সাজাতে পারি না?
– হুম পারি।
– তাহলে আর কখনো নিজেকে কলঙ্কিনী বলবি না। আমার ধারা কলঙ্কিনী নয়। আমার সাথে সারাজীবনের পথটুকু চলবি? শুধু কাগজের স্ত্রী নয়, সত্যিকারের স্ত্রী হয়ে।
অনলের কথাটা শেষ হবার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে ধারা। কাঁপা কন্ঠেই বলে উঠে,
– ভালোবাসি
একটা শব্দ অনলের হৃদয়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দিলো। ধারাকে যতটা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরা যায় ততোটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে। সকল অভিমান,রাগ যেনো গলে জল হয়ে গেলো। এখন শুধু ভালোবাসার স্নিগ্ধতা বিরাজমান নিজেদের মাঝে, এটাই তাদের নতুন পথচলার সূচনা_________
সময় বহমান, দেখতে দেখতে আরো দু মাস কেটে গেছে। ধারার পেটটা আরো খানিকটা বড় হয়েছে। এখন চলাফিরা করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। অনল তার ডিউটি সকাল সকাল নিয়ে নিয়েছে। যাতে বেশি সময় ধারাকে দেওয়া যায়। বাচ্চাটা পেটেই বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে। ডিলেভারীর সময় যত ঘনিয়ে আসছে অনলের বুকটা ততো ধরপর করছে। সারাটা রাত জেগে থাকে, এই ভয়ে যে যখন তখন পেইন উঠলে যাতে হাসপাতালে নিতে পারে। ধারাও বেশ যত্নশীল হয়ে উঠেছে। সেও চায় সুস্থভাবে বাচ্চাটার ডেলিভারি হোক। সুভাসিনী বেগম এবং রাজ্জাক সাহেবের সম্পর্কটাও বেশ ভালো হয়ে উঠেছে। এখন শুধু অপেক্ষা একটা ছোট মেহমানের বাসায় আসার।
রাত তিনটা,
বাথরুমে যাবে বিধায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে ধারার। অনল তার পাশে ঘুম। ক্লান্ত অনলের ঘুমন্ত মুখটা ধারার সবথেকে প্রিয়। এমনি সময় হলে হালকা ধাক্কা দিলেই অনলের ঘুম ভেঙ্গে যেতো। কিন্তু আজ কেনো যেনো ইচ্ছে হলো না অনলকে জাগাতে। লোকটা প্রচুর খাটাখাটুনি করে। সারাটাদিন ডিউটি করে রাতে তার জন্য জেগে থাকে, একটু ঘুম তার প্রাপ্য। আজ যেহেতু শান্তিতে ঘুমোচ্ছে, ঘুমাক না। এতোটুকুই তো পথ। ধারা একাই যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। অনলের কপালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে খাট থেকে নামে সে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বাথরুমের দিকে। সব ঠিক ই ছিলো, গোলটা বাধলো আসার সময়। বাথরুমের বিটটার দিকে আধার আলোতে চোখ যায় নি ধারার। ম্যাক্সিতে বেধে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে সে। অমনি মুখ থুবড়ে পড়ে যায় সে। আর বাথরুমের বিটটা পেটে যেয়ে লাগে। পেট নিচে করে পড়ায় অসম্ভব ব্যাথা পায় সে। চাপা আর্তনাদ করতে থাকে ধারা। আর্তনাদের শব্দ কানে যেতেই ধরফরিয়ে উঠে যায় অনল। ধরফরিয়ে উঠে বাথরুমের কাছে যেতেই দেখে রক্তে ভেসে যাচ্ছে ধারার ম্যাক্সি। পেটে হাত দিয়ে শুধু চাপা আর্তনাদ করছে ধারা। মৃত্যুকে যেনো সম্মুখে দেখছে সে। অনলের মাথাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফাঁকা হয়ে গেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে। ধারাকে এই অবস্থায় দেখে যেনো সারা শরীর হিম হয়ে গেছে তার। হাত পা কাঁপছে। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে ছুটে গেলো ধারার কাছে। তাড়াতাড়ি তাকে কোলে তুলে নিলো। চিৎকার করে সুভাসিনী বেগম এবং রাজ্জাক সাহেবকে ডাকলো সে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা চলে এলো। ধীরে ধীরে গাড়িতে বসালো ধারাকে। সুভাসিনী বেগমের কোলে ধারাকে শুইয়ে শুধু একটা কথা বললো,
– ধারা চোখ বন্ধ করবি না। একটু সময় দে।আমরা পৌছে যাবো।
বলেই ছুট লাগালো হাসপাতালের দিকে। সময়টা যেনো প্রতি মিনিট এক এক বছর লাগছে অনলের কাছে। অপেক্ষা শুধু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌছানোর।
ভোর ৪টা,
ধারাকে ওটি তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধারার ডাক্তারকে আনানো হয়েছে। তিনি ধারার পজিসন চেক করছে। বাহিরের সিটে বসে আছে অনল। হাতটা ধারার রক্তে লাল হয়ে আছে। ধারার জ্ঞান ওটিতে যাবার আগ পর্যন্ত ছিলো। অনলের হাতটা শক্ত করে ধরে ছিলো সে। চোখটা বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। অনন্যাকে নিয়ে একদিন এভাবেই হাসপাতালের বাহিরে বসে ছিলো। আজ ধারাকে নিয়ে। বুকটা কামড় দিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। বুকটা হাহাকার করছে। তখন ই ডা. ইশরাত বের হয়ে আসে। তার মুখটা আশংকায় ছোট হয়ে আছে। তার মুখ দেখেই কিছু একটা আশংকা করতে পারছে অনল। উদ্বিগ্ন হয়ে অনল তার কাছে ছুটে গেলো।
– ম্যাম কি হয়েছে? ধারার অবস্থা এখন কেমন?
– ভালো না অনল। কারোর অবস্থা ভালো না। এখনি অপারেশন করতে হবে। ব্লাড এর দরকার আছে। আর একটা কথা, বেবির পসিজন ভালো না। এখন তোমাকে ডিসিশন নিতে হবে হয় ধারা নয় বেবি।
কথাটা শুনতেই ধপ করে বসে পড়ে অনল। চোখ থেকে পানি পড়ছে। কি করবে এখন সে। এই বাচ্চাটা যে তার এবং ধারার বেঁচে থাকার একটা সূত্র ছিলো। তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত ই হয়েছে এই বাচ্চাটার জন্য। আর ধারা তো তার ভালোবাসা। কিভাবে তার প্রিন্সেস আর ধারার মধ্যে বাঁচবে সে। ডা. ইশরাত বেশ জোর গলায় বললেন,
– অনল ফাস্ট ডিসিশন নাও। উই হ্যাভ টু ওপারেট।
– ম্যাম আমি তাদের মধ্যে কিভাবে বাছবো। তারা দুজন আমার কাছে সমানভাবেই জরুরি। দুজনকেই যে আমার চাই ম্যাম। আমি বাঁচতে পারবো না ওদের ছাড়া।
– বাট আমি শিওর নই অনল। বেবির যা পজিশন আমার মনে হয় না দুজনকে বাঁচামো সম্ভব। যদি না আল্লাহ কোনো মিরাকেল করেন।
– ম্যাম আমি কাউকে চুজ করতে পারবো না। প্লিজ ম্যাম, আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন ম্যাম।
– ওকে তাহলে তুমি ফর্মে সাইন করে দাও।
বলেই তিনি ভেতরে চলে যান। একজন নার্স এসে একটা ফর্ম নিয়ে এসেছে। অনলের হাত কাঁপছে, সাইন করার সময়। সুভাসিনী বেগম তখন তার ঘাড়ে হাত দেয়। অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে অনল বলে,
– মা, আমার ধারা
– কিচ্ছু হবে না দেখিস, তুই আল্লাহ এর কাছে চা। উনি ই পারবেন তোর ধারাকে ফিরিয়ে দিতে।
সুভাসিনী বেগমের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইন করে দেয় অনল। ওটি তে অপারেশন শুরু হয়। প্রতিটা মূহুর্ত যেনো এক এক ক্রোশ সময় লাগছে অনলের কাছে। নামাযের পাটিতে বসে পাগলের মতো সে বাচ্চাটি এবং ধারার জন্য। অনলের যে দুজনকেই চাই। চারঘন্টা পর ডা.ইশরাত ওটি থেকে বের হয়। উদ্বিগ্ন হয়ে তার দিকে এগিয়ে যায় অনল। তখন ডা.ইশরাত বলেন…….
চলবে
কাগজের_তুমি_আমি
দ্বিতীয়_অধ্যায়
২৬তম_পর্ব
চারঘন্টা পর ডা.ইশরাত ওটি থেকে বের হয়। উদ্বিগ্ন হয়ে তার দিকে এগিয়ে যায় অনল। তখন ডা.ইশরাত বলেন,
– কনগ্রেচুলেশন অনল, মেয়ের বাবা হয়েছো তুমি। নার্স বেবিকে নিয়ে আসছে। বেবি সুস্থ আছে। ব্লাড লেগেছে প্রচুর বাট ইন্টার্নাল আর এক্সটার্নাল কোনো ড্যামেজ হয় নি আল্লাহর রহমতে।
– ম্যাম, আমার স্ত্রী
– অনল ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং ওকে?
– ম্যাম, ইজ সি ওকে? ও ঠিক আছে তো?
– অনল রিল্যাক্স। ঠান্ডা হও। এটা একটা মিরাকেল ই বলতে পারো। আমি ভেবেছিলাম শুধু বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে। কয তোমার স্ত্রীর প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। বাট রাখে আল্লাহ মারে কে! সে বেঁচে আছে, এখনো হোপ আছে। বাট আপাতত জ্ঞান নেই, জ্ঞান না ফিরা অবধি কিছু বলতে পারছি না। এটাও তো কম নয় বলো। আই.সি.উ তে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে ওর।
– ও বেঁচে যাবে তো?
– অনল, ডাক্তারদের ১০% চান্স মানে হিউজ ব্যাপার। প্রথমে ০% ছিলো এখন ১০% তো আছে। দোয়া করো যাতে এই ডেঞ্জার টাইমটা তার কেটে যায়। সে এক রকম কোমাতে আছে। জ্ঞান না ফেরা অবধি কিছুই বলতে পারছি না। তবে আমি হোপ ছাড়ছি না। আর আজ তোমার ওয়াইফের উইলপাওয়ারের জন্য সে বেঁচে আছে। সো তুমিও হোপ ছেড়ো না। ওকে? ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং। তোমার বেবিকে তো সামলাতে হবে নাকি?
ডা.ইশরাতের কথা শুনে ধপ করে আবার বসে পড়লো অনল। পা জোড়া যেনো জোর হারিয়ে ফেলেছে। ধারা বেঁচে আছে জেনে যতটা খুশি লাগছে যখন মনে হচ্ছে সে কোমাতে মনটা নিমিষেই দুঃখের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সত্যি ভেঙ্গে পড়ার সময় না। ধারা অন্তত বেঁচে তো আছে। এখনো আশা হারায় নি। এমন ও তো হতে পারে কিছুক্ষণ পর ই সে চোখ খুলবে, খুলে বলবে,
– অনল ভাই, আমি ফিরে এসেছি। ফিরে এসেছি তোমার কাছে। তোমার প্রিন্সেস সহ।
কথাটা ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বের হলো মন থেকে। তখন একটা নার্স সাদা তোয়ালে মোড়া একটা ছোট্ট পরীকে নিয়ে এলো অনলের কাছে। মুখে হাসি একে বললো,
– স্যার আপনার মেয়ে।
অনল বেকুবের মতো বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সুভাসিনী বেগম এবং রাজ্জাক সাহেব তার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অনুভূতিগুলো কেমন যেনো গবলেট হয়ে আছে। নতুন প্রাণের আগমণটাকে হাসিমুখে বরণ করার মতো মনটাও নেই। অনল তখন উঠে দাঁড়ায়। আস্তে করে নার্সের হাত থেকে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নেয়। একটা ছোট্ট ধারা যেনো তার কোলে ছিলো। ধারার মতো মুখ, ধারার মত নাক, কুচকুচে কালো চুল তার মাঝে শুভ্র মুখখানি। শুধু চোখ দুটো হয়েছে দিগন্তের মতো। এব্যাতীত পুরো ধারা। সহস্র চুমু দিয়ে কাঁপা কন্ঠে অনল বললো,
– প্রিন্সেস, তোমার আম্মুটা আমাকে জ্বালানো বন্ধ করলো না। দেখো না, কোথায় তুমি আসছো আমাদের হ্যাপি ফ্যামিলি হবার কথা। সে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ডোন্ট ওয়ারি। আমরা তাকে ঠিক ঘুম থেকে উঠাব দেখো। পারবো না আমরা? তোমার বাবা অনেক হোপলেস হয়ে গেছে, তুমি একটু আমার সাহস হয়ে থেকো ওকে? এখনো অনেক পথ চলা বাকি যে
বলেই বাচ্চাটাকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠে। ছেলেটাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রাজ্জাক সাহেব আর সুভাসিনী বেগম ও চোখের বাধ ছেড়ে দেয়। অনন্যার মৃত্যুর পর সুভাসিনী বেগম কখনোই অনলকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে নি। অনল কাঁদলেও আড়ালে কেঁদেছে, নয়তো শুধু ধারার সামনে। কিন্তু আজ ধারার সামনেও কাঁদার অপশন নেই, এটাকেই হয়তো নিয়তি বলে______
সময় যেতে থাকে, জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ চলছে। একদিন দুদিন করে দশটা দিন কেটে যায়। ধারার হেলথ এর ডেভেলপমেন্ট হতে থাকে। কিন্তু জ্ঞানটা এখনো ফিরে নি। অনল সারাটাদিন ধারার পাশেই বসে থাকে। ডাক্তার হবার এই এক সুবিধে, আই.সি.উ তে এলাউ করা হয়েছে। আর ও যেহেতু এই হাসপাতালেই কাজ করে তাই সমস্যা হয় নি। মেয়ের নাম রেখেছে অধরা। অনল এবং ধারার মেয়ে অধরা। সারাদিনের সব আপডেট ধারাকে বলে অনল। মেয়েকে ফাঁকে ফাঁকে দেখেও আসে। আই.সি.উ এর বাকি প্যাসেন্টরাও চায় যাতে মেয়েটা জেগে উঠে। আর অনল সে আর কাঁদে না, যতই কষ্ট হোক সে একেবারেই কাঁদে না। শুধু প্রতিক্ষা করে রয়েছে কবে তার বউটি জেগে উঠবে____
রাত ২টা,
ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির জন্য বাসায় যাওয়া হয় নি অনলের। রাতেও ক্লান্ত হয় নি আকাশ, বরং তীব্র গতিতে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা হীম বাতাসে চোখটা লেগে এসেছে অনলের। ধারার জেগে উঠার আশার আলোটা ক্ষীণ হচ্ছে আর মনটা ক্লান্ত। হঠাৎ মনে হতে লাগলো তার হাতে ধীর ছোয়া লেগেছে। তন্দ্রা কাটিয়ে চড়াক করে উঠলো অনল। মনের ভুল নাকি সত্যি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ধারার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ঘুমানোটা অভ্যেস হয়ে গেছে তার। ঘুমের মধ্যেই মনে হলো আংগুলগুলো নড়েছে। এখন এই ছোয়াটা কি ঘুমের মাঝে ভুল করেই অনুভব হলো? এক মন দিয়ে ধারার দিকে খেয়াল করলো। সময় পার হচ্ছে আর অধৈর্য হয়ে পড়েছে অনল। হুট করে মনে হলো ধারার হার্ট বিট ধুম করে কমে যাচ্ছে। পালস রেট যেন কমে যাচ্ছে। বুকটা কামড় দিয়ে উঠলো অনলের। তাড়াতাড়ি ওয়ার্ডবয়কে ডাকলো সে। অনন্যার মতো একই রকম অবস্থা হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্টস তো ধারার ঠিক ছিলো। কি হচ্ছে এটা। সময় নষ্ট না করে সি.পি.আর দিতে লাগলো অনল। না হার্ট বিট বাড়ছেই না। বরং কমেই যাচ্ছে। অনল থামলো না। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে সে। একটা সময় চিৎকার করতে লাগলো সে,
– প্লিজ ধারা, আমাকে ছেড়ে যাস না। আমি মরে যাবো। আমি সত্যি মরে যাবো। ধারা প্লিজ স্টে উইথ মি।
এটা একটা মিরাকেল, হয়তো এটা ভালোবাসার একটা কঠিন পরীক্ষা। আবার ও রাখে আল্লাহ মারে কে। তিড়িক করে চোখ মেললো ধারা। যেনো কেউ পিটিয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি অক্সিজেন লেভেল বাড়িয়ে দেয় অনল। হার্টবিট আবার ও নরমাল হয়ে উঠে ধারার। ধারা এভাবে চোখ খুলবে এটা যেনো কল্পনার বাহিরে ছিলো। অনলের এখনো হাত কাঁপছে। তার ধারা চোখ খুলেছে। তার ধারার জ্ঞান ফিরেছে। ফাইনালি, তার ধারা ফিরে এসেছে। ধারা এখনো আশেপাশের জগতে অভ্যস্ত নয়। চোখ দিয়ে আশেপাশে দেখছে আর ধাতস্থ হবার চেষ্টায় আছে সে। মিনিট বিশেক পর অক্সিজেন মাস্কটা নামিয়ে দেয় সে। অনল অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার প্রাণটা এতোক্ষণ গলায় আটকে ছিলো। আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না সে, ধারার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। এতোদিনের জমানো কষ্ট গুলো যেনো আর ধরে রাখতে পারলো না। বাহিরে বর্ষনের ন্যায় তার চক্ষুযুগল বর্ষনে ব্যস্ত। ধারার ঘাড় ভিজে যাচ্ছে। ধীর গলায় ধারা বললো,
– ছেলেমানুষের এভাবে কাঁদতে আছে?
– তুই চুপ করে থাক। বেয়াদব মেয়ে, থাপড়ে কান লাল করে দিবো তোর। জানিস কি ভয়টা পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। আমি মরে যেতাম ধারা, সত্যি বলছি। এই মনটা আর ভার নিতে পারবে না। তুই তো জানতি
– অনেক কষ্ট দিয়েছি না?
– অনেক, অনেক, অনেক। আমাকে আর কত জ্বালাবি বল তো?
– যতদিন আল্লাহ হায়াত রেখেছেন
– এভাবে জ্বালাস না, তোর সব আবদার মেনে নিবো। এভাবে ভয় দেখাস না। বয়স তো কম হলো না বল। আমার গলা শুকিয়ে এসেছিলো জানিস
নার্স কিছু বলতে যাবে, ধারা চোখ দিয়ে ইশারা করে। সে জানে তার এই পাগল প্রেমিকটা একটু এমন ই। অনলের পিঠে হাত রেখে বললো,
– তোমার প্রিন্সেস ভালো আছে তো?
ধারার কথায় উঠে বসে অনল। চোখ মুছে ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে। ধীর গলায় বলে,
– বাপকা বেটি পুরো বাপের মতো হয়েছে জানিস, সারাক্ষণ ঘুমায়। খুব তাড়াতাড়ি ইনশাআল্লাহ আমরা তার কাছে যাবো৷ আমি ওর নাম রেখেছি। অধরা।
– অধরা, তুমি জানলে কি করে?
– তোর ডাইরি তে পড়েছিলাম।
– তুমি তো মানুষ ভালো না আমার ডাইরিতে হাত দাও।
– ভালো হইছে। আর কথা বলিস না। একটু রেস্ট কর
– এতোদিন তো তাই করেছি গো, আজ একটু কথা বলতে দাও
এভাবে সারাটারাত ধীরে ধীরে কথা বললো এই দম্পতি। সকালের দিকে ধারা ঘুমালো। তবুও অনল আশ্বস্ত হতে সব রিপোর্ট আবার চেক করালো। যখন সব কিছু নরমাল হলো তখন স্বাভাবিক হলো সে। আর দুদিন হাসপাতালে রাখবে ধারাকে। আজ বিকেলেই নরমাল ওয়ার্ডে শিফট করবে। এখন আর অক্সিজেন লাগছে না ধারা। চলাফেরা হালকা হালকা করছে। ব্লিডিং হচ্ছে বলে শরীরটা দূর্বল। আজ অধরাকে নিয়ে আসবে সে ধারার কাছে। মাতৃত্বের আঁচল থেকে টানা দশটা দিন আলাদা ছিলো বচ্চাটি। দুদিন পর ডাক্তার তাকে চেকাপ করে রিলিজ দিয়ে দেওয়ায় বাসায় নিয়ে গেছিলো অনল। সুরাইয়া বেগম এবং সুভাসিনী বেগম ই দেখেছেন তাকে। এখন বাচ্চাটি তার মায়ের উষ্ণতা পাবে। মায়ের গায়ের গন্ধ ই আলাদা। সেই গন্ধ বাচ্চাদের সবচেয়ে প্রিয়। কি অদ্ভুত একটা দৃশ্যই না হবে, তার বউ এবং মেয়েকে একত্রে কাছে পাবে অনল। এতোদিনের অতৃপ্ত মনটা যেনো তৃপ্ত হবে। আর এখনো যে তার আরো একটি কাজ করা বাকি, সেটা না হয় সময় হলেই জানাবে ধারাকে।
বিকেল ৪টা,
ধারাকে নরমাল ওয়ার্ডে শিফট করা হয়েছে। অধরাকে নিয়ে এসেছে অনল। যখন অধরাকে ধারার কোলে দিলো মেয়েটা একেবারে চুপ করে গায়ের সাথে মিশে ছিলো। আগে একটা সময় ধারা বাচ্চা কোলে নিতে ভয় পেতো, এতো ছোট বাচ্চা যদি পড়ে যায়। আজ ও খুব সাবধানতার সাথে ধরলো। নরম তুলতুলে হাত পা হালকা ছুটাছুটি করছে। ধারার ভয় দেখে অনলও ধারার পেছনে বসলো। পেছন ধরলো তার পরিবারকে। ধারার যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না, যাকে বাঁচানোর এতো লড়াই তারা করেছে, সেই বাচ্চাটা আজ তার কোলে। আলতো করে চুমু খেলো অধরার কপালে। অনলের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ধন্যবাদ
– কষ্ট তো তুই করেছিস, তোকে ধন্যবাদ। আমাকে আমার প্রিন্সেস দেবার জন্য। আমার কাছে ফিরে আসার জন্য।
– তোমাকে ধন্যবাদ, আমার পাশে থাকার জন্য।
মুচকি হাসি হেসে ধারার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো অনল। আবেশে চোখে বন্ধ করে অনলের কাঁধে মাথা রাখলো। এটা যেনো পৃথিবীর সবথেকে শান্তির জায়গা। তার কোলে তার সন্তান। আর তার স্বামী তাকে আগলে রেখেছে। এই সময়টা যদি থেমে যেতো মন্দ হতো না।
সময় বহমান, দিন দিন করে মাস চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে জুলাই শেষে আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস চলে গেছে। নভেম্বর এ পা রেখেছে পৃথিবী। কার্তিক মাস শেষে অগ্রহায়ণ মাস চলে এসেছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে ব্যস্ত ঢাকা শহরে। অধরা এখন চার মাস হবে হবে করছে। মজার ব্যাপার, দেখতে দেখতে ধারা এবং অনলের বিয়ের একটা বছর হতে যাচ্ছে। এক বছর আগে এই নভেম্বরেই তাদের বিয়ে হয়েছিলো। কিন্তু স্ত্যি বলতে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটি তাদের মাঝে এখনো তৈরি হয় নি। একই রুমে তো থাকে কিন্তু তাদের মাঝে শারিরীক সম্পর্ক তৈরি হয় নি। আজকাল আজকাল অনলের মাঝে বিস্তর পরিবর্তন দেখা গেছে। হালকা হলেও ধারা উপলব্ধি করতে পারছে। আগে অনল হাসপাতালে যাবার আগে মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ খেলে ধারার কপালে চুমু খেয়ে তারপর যেতো। আসার পর ও একই তার মেয়ের সাথে খেলে, তাকে ঘুম পাড়িয়ে তারপর ধারাকে সারাটাদিনের সব কথা বলতো। মেয়েও হয়েছে বাবা পাগল, বাবা ছাড়া সে ঘুমাতেও চায় না। মেয়ে ঘুমাবার পর দুজন বারান্দায় বসে কফিহাতে জ্যোৎস্না বিলাষ করতো। কিন্তু আজকাল অনলের যেনো ধারার সাথে কথা অবধি বলার সময় হচ্ছে না। এসে মেয়েকে সময় দিয়েই শেষ। ধারা যখন নিজ থেকে কিছু বলতে যায় তখন একটা অনীহা দেখাচ্ছে। ধারা যেনো কিছুতেই বুঝে উঠছে না কি হচ্ছে। নাহ এভাবে থাকা যায় না। অনলের পরিবর্তনটা যেনো বড্ড বেশি চোখে লাগছে ধারার। রাতের খাবার পর সব গুছিয়ে রুমে আসে ধারা। অধরা তখন অনলের কোলে ঘুম। ধারাকে দেখে অধরাকে খাটে শুইয়ে দেয় অনল। এরপর বারান্দায় চলে যায়। অনলের এই কাজটা যেনো ধারার বড্ড বেশি চোখে লাগছে। সে কি কোনো ভুল করেছে! বুঝে উঠতে পারছে না। ধারাও দেরি না করে অনলের পিছু নিয়ে বারান্দায় আসলো। অনল তখন পকেটে হাত গুজে বাহিরে তাকিয়ে আছে। এবার ধারা আর আর থাকতে পারলো না। বেশ স্পষ্ট স্বরে বললো,
– অনলভাই কি হয়েছে?
– কি হবে?
অনলের নির্বিকার চিত্তে বলা কথাটা যেনো আরো মেজাজ খারাপ করিয়ে দিলো ধারার। হিনহিনে গলায় বললো,
– কি হয়েছে বুঝছো না? তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো?
– এড়িয়ে যাচ্ছি মানে?
– তুমি কদিন ধরেই দেখছি অনেক বদলে গেছো! একটু বলবে কি হয়েছে? আমি কি কোনো দোষ করেছি? আমি যেনো মূহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেছি তোমার কাছে। আমার রান্না তুমি মুখে তুলছো। রাতে ঘুমানোর সময় দেখি তুমি খাটে শুচ্ছো না, ড্রয়িং রুমে চলে যাচ্ছো। আমি কথা বলতে আসলে ঠিক মুখে কথাও বলছো না কি হয়েছে বলবে?
এবার অনল একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
– তুই বুঝতে পারবি আমি বুঝেছিলাম, আসলে লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারছি না। তুই যেহেতু সত্যিটা জানতে চাচ্ছিস আমি তাহলে বলি, আমি ক্লান্ত ধারা। আমি এই কাগজের সম্পর্কটা টানতে টানতে ক্লান্ত। আমার মুক্তি চাই। কেনো যেনো এই সম্পর্কটাকে আর ভালো লাগছে না।
– মানে?
অধীর কন্ঠে বললো ধারা। তার গলা কাঁপছে। তার সুখের সংসারটাকি এভাবে ভেঙ্গে যাবে? অনল ভাবলেশহীন ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। এবার সে একটু এগিয়ে আসলো। ধারার মুখোমুখি হয়ে বললো,
……………….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি