শুভ্র_রঙের_প্রেম পার্টঃ০২

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
পার্টঃ০২
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)
ভরা ক্লাসরুম আর ভিসির সামনে সাদা শার্টের সেই অচেনা ব্যাক্তি আমার একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে৷ ভয়ে এক পাঁ পিছিয়ে যেতেই উনিও এগিয়ে এলেন৷ পুরো ক্লাস রুমে নীরবতা ভিসিও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে নীরব ভাবে৷ লোকটা কি আমায় থাপ্পড় মারবে?? ভেবেই গালে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললাম৷ উনার স্পর্শ আমার কঁপালে পেতেই চমকে উঠি আমি৷ আমি কাঁপা চোখে সাদা শার্ট পড়া উজ্জ্বল সাদা রঙের পুরুষটির দিকে তাকালাম৷ আমার কঁপালের ছোট কালো টিপ উনার আঙুলে৷ উনি সেটা আমার কঁপাল থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে বললেন,

–‘ ইট’স নট গুড টু ওইয়ার..!’

আমি স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছি৷ লোকটা কি আমাকে ভুলে গেছে?? ভুল করে চড় দিলাম আর সে ভুলেই গেছেন৷ ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না৷ নিজের অজান্তেই কঁপালে হাত চলে গেছে ৷ উনি আমার দিকে না তাকিয়েই আবার চলে যায় স্যারের পাশে৷ আমি নিস্তব্ধ, সমস্ত ভাবনা ভুল করে দিয়ে কেও টিপের দিকে নজর দিতে পারে ধারণার বাইরে আমার৷

–‘ উনি কি তোকে চেনেন? আর কেও এইভাবে টিপ সরিয়ে দিতে পারে ক্লাসের সামনে ভাবা যায়?? চড় মারার বদলে টিপ সরিয়ে দিলেন৷ ‘

নীতির কথায় ঘোর ভাঙলো আমার৷ সূক্ষ্ম এক ভালোলাগা হঠাৎ করে খেলে গেলো মনে৷ তবে সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে ওর দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বললাম,

–‘ চড় মারার বদলে অপমান ভরা ক্লাসের সামনে বুঝেছিস! আমি সিউর ভিসি স্যার উনার চক্রান্তের মেইন পার্ট৷ দেখলি উনার স্টুডেন্টের কঁপালে হাত দিলো আর সে তাকিয়ে সিনেমা দেখলো৷ ‘

–‘ টিপ পরা হারাম ৷ হয়তো সেইজন্যই সরিয়েছেন৷ তবে তোকে চড় কেন মারলো না?? এইটা ভাববার বিষয়৷ ‘

–‘ আমি চড় খেলে তোর ভালো লাগতো? ‘

–‘ হ্যাঁ,অবশ্যই৷ ইনোসেন্ট এক ছেলেকে চড় মারার অপরাধে তোকে চড় থেরাপি দেওয়া দরকার৷ ‘

আমি ওর পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলাম৷ তবে কথা সত্যি৷ সে কিছু বললো না কেন আমায়??

ক্লাসে বসে আছি আমরা৷ নীতি পাশে মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ আর রাহাত ফারিহার সাথে রোম্যান্টিক ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলতে ব্যাস্ত ৷ জানালা দিয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে তাকালাম৷ সাদা শার্ট পড়া সেই মানুষটা ওইদিকেই গিয়েছেন ৷ একটু আগের ঘটনা ভাবতেই কেমন যেন লাগছে৷ সবাই বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করছে৷ আমি উঁচু বেঞ্চে উঠে বসলাম নীতির মুখের সামনে ৷

–‘ কি ভাবছিস? ‘

–‘ সাদা শার্ট৷ ‘

ওর কথা শুনে দুইজনেই হেসে উঠলাম৷ সাদা শার্ট গভীর ভাবে বিচরণ করছে আমাদের মাঝে ৷ শান্ত নীরব পরিবেশ মূহুর্তেই হইচই হয়ে উঠলো৷ খিলখিল হাসিতে মেতে উঠলাম আমরা ৷ ভার্সিটি মানেই প্রাণখোলা জীবন৷ যেখানে হাসি ঠাট্টা আর এক্সামের আগে টেনশনে মরা সব মিলিয়ে উপভোগ্য জীবন৷ গত একমাস আগে সদ্য ভার্সিটি তে ওঠা তকমাটা সরিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর তকমা লাগিয়ে উচ্ছ্বাস ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি ৷ এক বছরের প্রাণ খোলা জীবনের মাঝে কেও একজন ভুলবশত এসে পড়েছিলো৷ এসেছিলো শুভ্র রঙ নিয়ে৷ ক্লাসের পরিবেশ হঠাৎ করে ঠান্ডা হলেও আমি ঠান্ডা হলাম না ৷ নিজের মতো হাসিতে ফেটে পড়ছিলাম৷ আর তখনই কেও পেছন থেকে গম্ভীর ভাবে বলল,

–‘ হেই ইউ, স্ট্যান্ড আপ৷ ‘

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি লাফিয়ে নেমে পড়লাম সামনে না ঘুরেই বললাম,

–‘ ইংরেজি বুঝি না বাংলায় বলেন! ‘

আমার কথা শুনে সারা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়লো৷ আমি নিজেও হেসে উঠলাম৷ তবে রাহাত আর নীতি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে৷ ওরা হাসছে না কেন??

–‘ স স স-সাদা শার্ট৷ ‘ রাহাত বলতেই আমি ঘুরে তাকিয়ে আরেকদফা শক খেলাম৷ এ তো সেই৷ তারমানে নতুন প্রফেসর ৷ উনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন৷ বেঞ্চের উপর হাত রেখে বললেন,

–‘ ইংরেজি নিয়ে অনার্স করে বলছো ইংরেজি পারো না? ‘

আমি উনার গালের দিকে তাকিয়ে আছি৷ রাহাত উঠে দাঁড়িয়ে আমার পাশে ঘেঁষে বলল,

–‘ দোস্ত চোয়াল বাঁকা হয় নাই৷ তুই বেঁচে গেছোস৷ শাস্তি মনে হয় কম পাবি আমি সিউর৷ ‘

আমি শুকনো ঢোক গিললাম৷ এরা ফ্রেন্ড না আরো কিছু৷ বাঘের সামনে এসে বলছে, ‘ এখানে মাংস নেই৷ ‘

–‘ আ’ম ” মেহেরাব হোসেন স্নিগ্ধ “৷ ইউর নিউ প্রফেসর৷ বাকি সবার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে শুধু তোমাদের তিনজন ছাড়া৷ ‘

নীতি উঠে মুখে হাসি টেনে ওর পরিচয় দিলো সাথে রাহাত৷ লোকটা কি আমাদের ভুলে গেছে?? এতো স্বাভাবিক কীভাবে??

–‘ তোমার নাম কি? ‘

আমি অবাক চোখে তাকালাম৷ উনি বলেন কি?? তারমানে আমাদের চেনেনই না উনি?? সাতটা দিন উনার ভয়ে লুকিয়ে ছিলাম আর সে এখন এসে বলছে, ‘ তোমার নাম কি?? ‘
দুনিয়া ঘুরছে কেন আমার?? লোকটা পাগল? না শর্ট টাইম মেমোরি লসের পেশেন্ট?? সাত দিন আগের চড় হজম করে নিলো৷ হুয়াই?? আমি উনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,

–‘ হৃদি৷ ‘

–‘ হৃদিম নিদ্রা৷ নিকনেম হৃদি! ‘

উনি সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন৷ আমি ধপ করে বসে পড়লাম৷ নাম জানলেন কি ভাবে?? নীতিও আমার সাথে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো৷ উনি অমায়িক ভাবে ক্লাস করাচ্ছেন৷ মুখে হাসি লেগেই আছে তার ৷ সব মেয়েরা তাকিয়ে আছে৷ সাদা শার্টে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে উনায় ৷ নীতি আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল,

–‘ চড় মেরে ক্রাশ খেলো রমণী৷ হাও কিউট ইয়ার৷ ‘

ওর কথা শুনে রাহাত হেসে উঠলো৷ ওদের কোনো কথাই কানে ঢুকছে না৷ স্নিগ্ধ স্যার মানে সাদা শার্ট আমাকে ভুলে গেলে নাম জানলেন কোথা থেকে?? বিরাট রহস্য৷ চিন্তার ভাজ পড়েছে আমার কঁপালে৷ ক্লাস আওয়ার কখন শেষ হয়েছে বলতেই পারবো না৷ একে এসে সবাই বের হয়ে যাচ্ছে আমি বসে আছি৷ নীতি ডাকলেও ওর সাথে যাচ্ছি না৷ চিন্তার সাগরে ডুবে উঠে বের হতেই পেছন থেকে স্যার বলে উঠলেন,,

–‘ পাঁচ মিনিটের মাঝে আমার অফিস রুমে তোমাকে একা দেখতে চাই৷ পুরোনো হিসেব তোলা আছে মনে আছে তো?? কাম ফাস্ট৷ ‘

আমি চমকে উঠলাম৷ তারমানে উনার আমাকে মনে আছেন৷ কি করবেন উনি?? তখন অচেনা ব্যাক্তি ছিলেন তবে এখন স্যার৷ ভালো ব্যবহার করে এখন কি প্রতিশোধ নিবেন আমার উপর?? ভয়ে সিটিয়ে গেলাম৷ এইদিকে নীতি আর রাহাত হলে চলে গেছে৷
আমি সব কিছু ভেবেই স্নিগ্ধ স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম৷ যা হবে দেখা যাবে৷ সাহস জোগাড় করে এগিয়ে গিয়ে সবচেয়ে বড় ভুলটা বোধহয় করেছিলাম আমি…! উনার কক্ষে ঢুকতেই…

চলবে…

~” নাম নিয়ে আমি অনেক অলস৷ মানে লেখতে বসে যেটা মাথায় আসে দিয়ে দিই৷ মুগ্ধ নাম চেঞ্জ করে স্নিগ্ধ দিয়েছি৷ আর ভুল হলে বলবেন অবশ্যই কারণ এখনো শেখার অনেক বাকি৷ ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here